বুটেক্স কথন | Bangladesh University of Textile -BUTex - Textile Lab | Textile Learning Blog
'বুটেক্স কথন'

মানবসভ্যতার শুরু থেকে মানুষ তাদের জীবনধারণের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস অনুভব করা শুরু করে। আর এরকম মোট পাঁচটি জিনিস মিলিয়ে হয়ে যায় মৌলিক অধিকার সকলের জন্য।এই পাচঁটি জিনিসের মধ্য থেকে বস্ত্র নিয়েই এখানে কিছু কথা তুলে ধরা হয়েছে।


সভ্যতার একদম শুরুতে কেবল লজ্জা নিবারণের জন্যই কেবল বস্ত্রের কথা কল্পনা করা হত। কিন্তু সভ্যতার উন্নতির সাথে মানুষের রুচিতেও পরিবর্তন আসে। তারা তখন থেকে শুধু লজ্জা নিবারণের জন্যই নয়, বরং নিজেকে অন্যের থেকে আলাদা এবং আকর্ষণীয় করে তোলার কথা চিন্তা করে থাকে। এজন্যই তারা নিজেরদের সুবিধামত কাপড়ের কোয়ালিটি এবং ডিজাইনে পরিবর্তন আনা শুরু করে।এই পরিবর্তন চিন্তা করা এবং এগুলো নিয়ে আরো ফলপ্রসূ কিছু করার জন্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বলে একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়।

আজকের টপিকটাও ঠিক এই বিষয়টাকে ঘিরে।  ''বুটেক্স'' হঠাৎ করে নামটা দেখলে একটু অবাক হতে হয়।

'বুটেক্স' জিনিসটা আসলে কি?

'বুটেক্স' মানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সটাইলস। 'বুটেক্স' দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র পাবলিক টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি। বুটেক্স ২০১০ সাল থেকে ভার্সিটি হিসেবে পথচলা শুরু করে। এর আগে এর নাম ছিল ঢাকা টেক্সটাইল কলেজ। বুটেক্সের আন্ডারে ছয়টি টেক্সটাইল কলেজ আছে।

বুটেক্স মানে কি গার্মেন্টস?

এই প্রসঙ্গে বলার আগে এবার একটু নজর দেয়া যাক ভার্সিটির নামের দিকে! সবাই ভাবে যে আসলে টেক্সটাইল, কিন্তু আসলে এটা টেক্সটাইলস।

এই টেক্সটাইলস হল বহুবচন।এই জিনিসটা আসলে অনেক কিছু মিন করে। টেক্সটাইলস মানে গার্মেন্টস না!এই টেক্সটাইলস দ্বারা সুতা থেকে কাপড় বানানো এবং তা রঙ করা অব্দি সব জিনিস এটার ভিতর অন্তর্ভুক্ত।
আচ্ছা তো এখানে কি কি বিষয়ে পড়ানো হয়?

টোটাল দশটি ডিপার্টমেন্ট আছে বুটেক্সে।এই দশটি ডিপার্টমেন্ট পাচঁটি ফ্যাকাল্টির অন্তর্ভুক্ত। প্রতিটি ব্যাচে দশটি ডিপার্টমেন্টে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬০০ জন।

এখন কাপড় বানানোর শুরুতে আসা যাক। ফেব্রিক বানাতে আমাদের প্রথমে দরকার হয় সুতা।'ইয়ার্ন' মানে সুতা। এই সুতা বিষয়ে  খুটিনাটি জিনিস পড়ানো হয় ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে।

সুতা থেকেই টেক্সটাইলসের সবকিছু শুরু হয় বলে ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকেই বলা হয় 'মাদার অফ টেক্সটাইলস'। এদের কাজ সুতার কোয়ালিটি কিভাবে ডেভোলপ করস যায় এই নিয়েই।

এরপর আসা যাক সুতা থেকে কাপড় বানানোতে। সুতা থেকে ফেব্রিক বানানো নিয়েই যাদের কাজ সেই ডিপার্টমেন্টের নাম 'ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট'। ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিংকে বলা হয় 'ফাদার অফ টেক্সটাইলস'। 

এদের কাজ ভাল মানের ফেব্রিক্স পাওয়ার জন্য চিন্তা করা। এই ইয়ার্ন আর ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং দুইটি ডিপার্টমেন্টই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অন্তর্ভুক্ত।

এরপর আসা যাক ফেব্রিক্সের কালারেশন প্রসঙ্গে। কাপড় ধুলে রঙ উঠে যায় এই সমস্যা সবাই কমবেশি ফেস করে। কোন ফেব্রিকে কোন ডাই ব্যবহার করতে হবে এবং কোন ডাই কাপড়ের জন্য ভাল হবে এই নিয়েই আছে 'ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং'। ডাই নিয়ে চিন্তা-ভাবনার জন্য 'ডাইস এন্ড ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং' নামে একটি ডিপার্টমেন্ট খোলা হয়েছে। এখন টেক্সটাইল মিলের বর্জ্যগুলো পরিবেশসম্মত ভাবে নিঃশেষ করার জন্য গতবছর থেকে বুটেক্সে সর্বশেষ সংযোজন করা হয়েছে 'এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং' ডিপার্টমেন্ট। ওয়েট প্রসেস,ডাইক্যাম আর এনভায়রনমেন্টাল তিনটি ডিপার্টমেন্টই টেক্সটাইল ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অন্তর্ভুক্ত।

সুতা থেকে কাপড় বানানো হল, কিন্তু তা প্রসেসিং এর মাধ্যমে পোশাক বানাতে হবে। 'এপারেল' মানে পোশাক।
গার্মেন্টস এ পোশাক রিলেটেড এইসব এর জন্য আছে 'এপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং' নামে একটি বিষয়।

এ বিষয়ের পড়ালেখার বিষয় কিভাবে গার্মেন্টস এর ফ্লোর স্পেস ইউটিলাইজ করা যায়,আর গার্মেন্টস এর কস্ট কমানো।দিনদিন মানুষের রুচির পরিবর্তন হচ্ছে। এখন মানুষ অনেকটা ফ্যাশন নির্ভর হয়ে পড়ছে। কাপড়ে নতুন নতুন ডিজাইন এইসব নিয়ে আছে 'টেক্সটাইল ফ্যাশন এন্ড ডিজাইন' এই বিষয়।

এপারেল আর ফ্যাশন ডিজাইন এই দুইটি ডিপার্টমেন্ট টেক্সটাইল ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড এপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি তে আছে।
এখন একটা কোম্পানি অথবা মিলে প্রোডাকশন কেমন হবে এইসব নিয়ে আর তার জন্য ইনভেস্টমেন্ট কেমন হবে এসব সর্বোপরি কিছু বিষয় নিয়ে আছে 'ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং'।এই বিষয়টি বাংলাদেশের ৫টি পাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে। কিন্তু বুটেক্সের আইপিই টেক্সটাইল বেইজড।
একটি কোম্পানির সবগুলো সাইট একসাথে ম্যানেজ করা এই নিয়ে আছে 'টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট' এই বিষয়।এদের কাজটা অনেক বড়। পুরো একটা অরগানাইজেশন কে হ্যান্ডেল করার গুরুদায়িত্ব এদের।

আইপিই আর ম্যানেজমেন্ট এই দুইটি ডিপার্টমেন্ট টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট এন্ড বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির আওতায় পড়ে।টেক্সটাইল রিলেটেড মেশিন এবং তার পার্টসগুলো খুব ব্যয়বহুল হয়। এসব মেশিনে আগে কোন সমস্যা হলে আগে বাহির থেকে ইঞ্জিনিয়ার আনতে অনেক খরচ পড়ত। এসব দিক চিন্তা করে বুটেক্সে সংযোজন করা হয়েছে 'টেক্সটাইল মেশিন ডিজাইন এন্ড মেইন্টেনেন্স' ডিপার্টমেন্ট।এই ডিপার্টমেন্ট সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অন্তর্ভুক্ত।
ঢাকার বাহির থেকে তাদের জন্য সু্যোগ-সুবিধা কেমন ?

বুটেক্সে মোট চারটি হল রয়েছে।এর মধ্যে তিনটি হল ছেলেদের এবং একটি হল মেয়েদের।
আসলে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এই বিষয়টাকে আলাদা আলাদা কিছু সেক্টরে ভাগ করলেও জিনিসটা বেশ ইন্টারেস্টিং!শুধুমাত্র, সুতা,  কাপড়, রং ছাড়াও টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়াল ডেভেলপমেনট এর মাধ্যমে সায়েন্টিফিক জগতে এক ধরনের বিপ্লবের  সূত্রপাত হয়েছে।স্মার্ট টেক্সটাইল নামক  এই ক্ষেত্রটি হচ্ছে, টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়াল এর ফাংশনালিটি পরিবর্তন করা। এটি ই-টেক্সটাইলস নামেও পরিচিত। কন্ডাক্টিভ ইয়ার্ন ইউজ করে ফেব্রিক বানিয়ে এটিকে প্রটেক্টিভ ক্লথিং,স্মার্ট এপারেল,সুইমিং স্যুট,হার্ট এর ইসিজি মেশিনে কন্ডাক্টিভ টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার হচ্ছে। প্রাৃকতিক দূর্যোগ মোকাবেলায়ও ব্যবহার হচ্ছে টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়াল। 'জিওটেক্সটাইলস' নামে যেটি পরিচিত। ড্রেইনেজ সিস্টেম, মাটিক্ষয় নিয়ন্ত্রণ, সয়েল সেপারেশন,বাধঁ ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব  জিওফেব্রিকক্স এর মাধ্যমে। এছাড়াও মহাকাশে স্পেসস্যুট ম্যানুফ্যাকচারিং এ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ করার সুযোগ আছে।অ্যাপল কোম্পানি তাদের আইফোন ডেভেলপমেন্ট এর জন্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের খুজছে, যাতে আইফোন আরো লাইট ওয়েট হয়।
এ সমস্ত ব্যাপার গুলো সবই টেক্সটাইল সায়েন্সের আওতাধীন। বুটেক্সে টেক্সটাইল সায়েন্স, টেক্সটাইল ম্যানুফেকচারিং অল ওভার সব কিছুই পড়ানো হয়, তাই যেকোন ডিপার্টমেন্টে পড়লেই এই যায়গাগুলোতে কাজ করার সুযোগ আছে। সব শেষে বলা যায়, টেক্সটাইল একটা ডাইভারসিফাইড ফিল্ড যেটার ব্যবহার ভূমি থেকে শুরু করে মহাকাশ পর্যন্ত আছে।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় খাত বর্তমানে পোশাক শিল্প। একজন বস্ত্রপ্রকৌশলী হওয়ার সাথে সাথে 'মেইড ইন বাংলাদেশ' ট্যাগের অংশীদার হতে পার বুটেক্সে পড়ে।


কার্টেসি এন্ড কপিরাইট  
মুহিবুল হাসান মুহিব
ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।

বুটেক্স কথন | Bangladesh University of Textile -BUTex

'বুটেক্স কথন'

মানবসভ্যতার শুরু থেকে মানুষ তাদের জীবনধারণের জন্য কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস অনুভব করা শুরু করে। আর এরকম মোট পাঁচটি জিনিস মিলিয়ে হয়ে যায় মৌলিক অধিকার সকলের জন্য।এই পাচঁটি জিনিসের মধ্য থেকে বস্ত্র নিয়েই এখানে কিছু কথা তুলে ধরা হয়েছে।


সভ্যতার একদম শুরুতে কেবল লজ্জা নিবারণের জন্যই কেবল বস্ত্রের কথা কল্পনা করা হত। কিন্তু সভ্যতার উন্নতির সাথে মানুষের রুচিতেও পরিবর্তন আসে। তারা তখন থেকে শুধু লজ্জা নিবারণের জন্যই নয়, বরং নিজেকে অন্যের থেকে আলাদা এবং আকর্ষণীয় করে তোলার কথা চিন্তা করে থাকে। এজন্যই তারা নিজেরদের সুবিধামত কাপড়ের কোয়ালিটি এবং ডিজাইনে পরিবর্তন আনা শুরু করে।এই পরিবর্তন চিন্তা করা এবং এগুলো নিয়ে আরো ফলপ্রসূ কিছু করার জন্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং বলে একটা বিষয় নিয়ে চিন্তা-ভাবনা শুরু হয়।

আজকের টপিকটাও ঠিক এই বিষয়টাকে ঘিরে।  ''বুটেক্স'' হঠাৎ করে নামটা দেখলে একটু অবাক হতে হয়।

'বুটেক্স' জিনিসটা আসলে কি?

'বুটেক্স' মানে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ টেক্সটাইলস। 'বুটেক্স' দক্ষিণ এশিয়ার একমাত্র পাবলিক টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিভার্সিটি। বুটেক্স ২০১০ সাল থেকে ভার্সিটি হিসেবে পথচলা শুরু করে। এর আগে এর নাম ছিল ঢাকা টেক্সটাইল কলেজ। বুটেক্সের আন্ডারে ছয়টি টেক্সটাইল কলেজ আছে।

বুটেক্স মানে কি গার্মেন্টস?

এই প্রসঙ্গে বলার আগে এবার একটু নজর দেয়া যাক ভার্সিটির নামের দিকে! সবাই ভাবে যে আসলে টেক্সটাইল, কিন্তু আসলে এটা টেক্সটাইলস।

এই টেক্সটাইলস হল বহুবচন।এই জিনিসটা আসলে অনেক কিছু মিন করে। টেক্সটাইলস মানে গার্মেন্টস না!এই টেক্সটাইলস দ্বারা সুতা থেকে কাপড় বানানো এবং তা রঙ করা অব্দি সব জিনিস এটার ভিতর অন্তর্ভুক্ত।
আচ্ছা তো এখানে কি কি বিষয়ে পড়ানো হয়?

টোটাল দশটি ডিপার্টমেন্ট আছে বুটেক্সে।এই দশটি ডিপার্টমেন্ট পাচঁটি ফ্যাকাল্টির অন্তর্ভুক্ত। প্রতিটি ব্যাচে দশটি ডিপার্টমেন্টে মোট শিক্ষার্থী সংখ্যা ৬০০ জন।

এখন কাপড় বানানোর শুরুতে আসা যাক। ফেব্রিক বানাতে আমাদের প্রথমে দরকার হয় সুতা।'ইয়ার্ন' মানে সুতা। এই সুতা বিষয়ে  খুটিনাটি জিনিস পড়ানো হয় ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে।

সুতা থেকেই টেক্সটাইলসের সবকিছু শুরু হয় বলে ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিংকেই বলা হয় 'মাদার অফ টেক্সটাইলস'। এদের কাজ সুতার কোয়ালিটি কিভাবে ডেভোলপ করস যায় এই নিয়েই।

এরপর আসা যাক সুতা থেকে কাপড় বানানোতে। সুতা থেকে ফেব্রিক বানানো নিয়েই যাদের কাজ সেই ডিপার্টমেন্টের নাম 'ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট'। ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিংকে বলা হয় 'ফাদার অফ টেক্সটাইলস'। 

এদের কাজ ভাল মানের ফেব্রিক্স পাওয়ার জন্য চিন্তা করা। এই ইয়ার্ন আর ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং দুইটি ডিপার্টমেন্টই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অন্তর্ভুক্ত।

এরপর আসা যাক ফেব্রিক্সের কালারেশন প্রসঙ্গে। কাপড় ধুলে রঙ উঠে যায় এই সমস্যা সবাই কমবেশি ফেস করে। কোন ফেব্রিকে কোন ডাই ব্যবহার করতে হবে এবং কোন ডাই কাপড়ের জন্য ভাল হবে এই নিয়েই আছে 'ওয়েট প্রসেস ইঞ্জিনিয়ারিং'। ডাই নিয়ে চিন্তা-ভাবনার জন্য 'ডাইস এন্ড ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং' নামে একটি ডিপার্টমেন্ট খোলা হয়েছে। এখন টেক্সটাইল মিলের বর্জ্যগুলো পরিবেশসম্মত ভাবে নিঃশেষ করার জন্য গতবছর থেকে বুটেক্সে সর্বশেষ সংযোজন করা হয়েছে 'এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং' ডিপার্টমেন্ট। ওয়েট প্রসেস,ডাইক্যাম আর এনভায়রনমেন্টাল তিনটি ডিপার্টমেন্টই টেক্সটাইল ক্যামিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অন্তর্ভুক্ত।

সুতা থেকে কাপড় বানানো হল, কিন্তু তা প্রসেসিং এর মাধ্যমে পোশাক বানাতে হবে। 'এপারেল' মানে পোশাক।
গার্মেন্টস এ পোশাক রিলেটেড এইসব এর জন্য আছে 'এপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং' নামে একটি বিষয়।

এ বিষয়ের পড়ালেখার বিষয় কিভাবে গার্মেন্টস এর ফ্লোর স্পেস ইউটিলাইজ করা যায়,আর গার্মেন্টস এর কস্ট কমানো।দিনদিন মানুষের রুচির পরিবর্তন হচ্ছে। এখন মানুষ অনেকটা ফ্যাশন নির্ভর হয়ে পড়ছে। কাপড়ে নতুন নতুন ডিজাইন এইসব নিয়ে আছে 'টেক্সটাইল ফ্যাশন এন্ড ডিজাইন' এই বিষয়।

এপারেল আর ফ্যাশন ডিজাইন এই দুইটি ডিপার্টমেন্ট টেক্সটাইল ফ্যাশন ডিজাইন এন্ড এপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টি তে আছে।
এখন একটা কোম্পানি অথবা মিলে প্রোডাকশন কেমন হবে এইসব নিয়ে আর তার জন্য ইনভেস্টমেন্ট কেমন হবে এসব সর্বোপরি কিছু বিষয় নিয়ে আছে 'ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং'।এই বিষয়টি বাংলাদেশের ৫টি পাবলিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়েই আছে। কিন্তু বুটেক্সের আইপিই টেক্সটাইল বেইজড।
একটি কোম্পানির সবগুলো সাইট একসাথে ম্যানেজ করা এই নিয়ে আছে 'টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং ম্যানেজমেন্ট' এই বিষয়।এদের কাজটা অনেক বড়। পুরো একটা অরগানাইজেশন কে হ্যান্ডেল করার গুরুদায়িত্ব এদের।

আইপিই আর ম্যানেজমেন্ট এই দুইটি ডিপার্টমেন্ট টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট এন্ড বিজনেস স্টাডিজ ফ্যাকাল্টির আওতায় পড়ে।টেক্সটাইল রিলেটেড মেশিন এবং তার পার্টসগুলো খুব ব্যয়বহুল হয়। এসব মেশিনে আগে কোন সমস্যা হলে আগে বাহির থেকে ইঞ্জিনিয়ার আনতে অনেক খরচ পড়ত। এসব দিক চিন্তা করে বুটেক্সে সংযোজন করা হয়েছে 'টেক্সটাইল মেশিন ডিজাইন এন্ড মেইন্টেনেন্স' ডিপার্টমেন্ট।এই ডিপার্টমেন্ট সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ফ্যাকাল্টির অন্তর্ভুক্ত।
ঢাকার বাহির থেকে তাদের জন্য সু্যোগ-সুবিধা কেমন ?

বুটেক্সে মোট চারটি হল রয়েছে।এর মধ্যে তিনটি হল ছেলেদের এবং একটি হল মেয়েদের।
আসলে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এই বিষয়টাকে আলাদা আলাদা কিছু সেক্টরে ভাগ করলেও জিনিসটা বেশ ইন্টারেস্টিং!শুধুমাত্র, সুতা,  কাপড়, রং ছাড়াও টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়াল ডেভেলপমেনট এর মাধ্যমে সায়েন্টিফিক জগতে এক ধরনের বিপ্লবের  সূত্রপাত হয়েছে।স্মার্ট টেক্সটাইল নামক  এই ক্ষেত্রটি হচ্ছে, টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়াল এর ফাংশনালিটি পরিবর্তন করা। এটি ই-টেক্সটাইলস নামেও পরিচিত। কন্ডাক্টিভ ইয়ার্ন ইউজ করে ফেব্রিক বানিয়ে এটিকে প্রটেক্টিভ ক্লথিং,স্মার্ট এপারেল,সুইমিং স্যুট,হার্ট এর ইসিজি মেশিনে কন্ডাক্টিভ টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার হচ্ছে। প্রাৃকতিক দূর্যোগ মোকাবেলায়ও ব্যবহার হচ্ছে টেক্সটাইল ম্যাটেরিয়াল। 'জিওটেক্সটাইলস' নামে যেটি পরিচিত। ড্রেইনেজ সিস্টেম, মাটিক্ষয় নিয়ন্ত্রণ, সয়েল সেপারেশন,বাধঁ ইত্যাদি তৈরি করা সম্ভব  জিওফেব্রিকক্স এর মাধ্যমে। এছাড়াও মহাকাশে স্পেসস্যুট ম্যানুফ্যাকচারিং এ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ করার সুযোগ আছে।অ্যাপল কোম্পানি তাদের আইফোন ডেভেলপমেন্ট এর জন্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের খুজছে, যাতে আইফোন আরো লাইট ওয়েট হয়।
এ সমস্ত ব্যাপার গুলো সবই টেক্সটাইল সায়েন্সের আওতাধীন। বুটেক্সে টেক্সটাইল সায়েন্স, টেক্সটাইল ম্যানুফেকচারিং অল ওভার সব কিছুই পড়ানো হয়, তাই যেকোন ডিপার্টমেন্টে পড়লেই এই যায়গাগুলোতে কাজ করার সুযোগ আছে। সব শেষে বলা যায়, টেক্সটাইল একটা ডাইভারসিফাইড ফিল্ড যেটার ব্যবহার ভূমি থেকে শুরু করে মহাকাশ পর্যন্ত আছে।
বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের সবচেয়ে বড় খাত বর্তমানে পোশাক শিল্প। একজন বস্ত্রপ্রকৌশলী হওয়ার সাথে সাথে 'মেইড ইন বাংলাদেশ' ট্যাগের অংশীদার হতে পার বুটেক্সে পড়ে।


কার্টেসি এন্ড কপিরাইট  
মুহিবুল হাসান মুহিব
ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়।

কোন মন্তব্য নেই: