BUTex | Environmental Science and Engineering - এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (ESE) - Textile Lab | Textile Learning Blog
Review :
Subject : Environmental Science and Engineering - এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (ESE)


সময়ে দাবিতে বুটেক্সে সর্বশেষ খোলা ডিপার্টমেন্ট হলো এটা। ২০১৮ সালেই ৪৫ তম ব্যাচ কে দিয়ে এটি চালু করা হয়। তাই এই বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা খুবই কম।
ESE কী?

আমরা সবাই জানি বর্তমানের বিশ্বের বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা পরিবেশ সংরক্ষণে কতোটা জোরালো ভূমিকা

পালন করছে। তার কারণ কী? আশা করি সবার ই জানা। আমাদের দৈনিন্দিন কাজকর্মের ফলে পরিবেশ যেভাবে দূষিত হচ্ছে, বার বার ব্যবহারের ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ যেভাবে শেষ হয়ে যাচ্ছে এভাবে চলতে পরবর্তী ৫০ বছরে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। তাই পৃথিবীকে বসবাসের যোগ্য রাখতে, পরিবেশের দূষণ কমাতে, প্রাকৃতিক সম্পদের উৎসের প্রতি নির্ভরশীল না থেকে অন্য কোন উৎসের অনুসন্ধান করতে, অব্যবহার যোগ্য সম্পদের পারফেক্ট রিসাইক্লিং এর জন্যই এই সাব্জেক্ট এর উদ্ভব।

টেক্সটাইল এ ESE এর ভূমিকা কী?

বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ এই টেক্সটাইল। ফেব্রিক কালার করার পরেও ডাইং সেকশনে অনেক রং থেকে যায়। যার তাপমাত্রা থাকে ৪০° ডিগ্রী সেলসিয়াস এরও উপরে। এই রং নদীর পানিতে ঢালা হলে পানির তাপ দূষণ হয়। এছাড়াও রং এ উপস্থিত বিষাক্ত ক্যামিকেল মানবজাতির জন্যও হুমকিস্বরূপ। পাশাপাশি ফেব্রিকে ওয়াশিং এর জন্য লাখ লাখ গ্যালন পরিষ্কার পানি ব্যবহৃত হয়। এভাবে চলতে থাকলে পানির উৎসও শেষ হয়ে যাবে।
তাই ESE ইঞ্জিনিয়ার দের মূল কাজ হলো প্রোডাকশন পরবর্তী অব্যবহৃত ম্যাটেরিয়ালস গুলা কিভাবে কাজে লাগিয়ে, রিসাইক্লিং করে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা যায় তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা। প্রতিটা ইন্ডাস্ট্রি তে ETP ( Effluent Treatment Plant) Management, Solar system management, recycling management, Biogas Plant management, water filter management ইত্যাদি এসব নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করাই এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার দের কাজ।

জব সুবিধা কেমন?

আগেই বলেছি এই সাব্জেক্ট একদম নতুন। তাই জব ডিমান্ড সবচেয়ে বেশিও এই সাব্জেক্ট এ। বর্তমান বিশ্ব পরিবেশ সংরক্ষণে অনেক বেশি সেনসিটিভ। তাই প্রতিটা ইন্ডাস্ট্রির মালিক ই পরিবেশের কথা মাথায় রেখে এই সেক্টরে ইঞ্জিনিয়ার দের অভাব অনুভব করেন। তাই জবের সুবিধাও বেশি। নিজের যোগ্যতা আর বুদ্ধি দিয়ে নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে কিভাবে অব্যবহৃত জিনিস কে পুনরায় কাজে লাগাবেন সেটা দেখাতে পারলেই আপনি হয়ে যাবেন মালিকের চোখের মধ্যমণি। এই সেক্টরে অতি দ্রুত AGM / GM হবার সম্ভাবনা বেশি। যেহেতু এটা নতুন সাব্জেক্ট তাই গ্র‍
্যাজুয়েশন পাশ করার পর ভালো রেজাল্ট কারীরা অতি সহজেই টিচিং প্রফেশনে যেতে পারবে।
এনভায়রনমেনটাল সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এ ৪৬ তম ব্যাচকে স্বাগতম।

সবশেষে যে গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্নই সবার মনে জাগে-
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার কী? টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ কী? কাপড় তো শ্রমিক বা তাতিরা বানায়। তাতি বা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার দের ডিফারেন্স কী? কেনো এদের ইন্ডাস্ট্রির মালিকরা উচ্চ বেতনে নিয়োগ দেন?

অনেকেই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার নাম শুনলেই নাক সিটকান, বলেন এইটা কোন ইঞ্জিনিয়ারিং হইল, কাপর-চোপরের আবার কিসের ইঞ্জিনিয়ারিং? শতকরা ৮০ভাগ লোকই জানেন না যে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরি মানে কাপড়-চোপরের ইঞ্জিনিয়ারিং না। এটি সম্পূর্ন ম্যানুফ্যাকচারিং বেসড একটি প্রসেস যেখানে একজন ইঞ্জিনিয়ারকে মেশিন সেট আপ থেকে শুরু করে প্রসেস কন্ট্রোল, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, ফেব্রিকের ইপিআই & পিপিআই, গিয়ার মেকানিসম এবং মেইন্টেনেন্স নিয়ে কাজ করতে হয়। স্পিনিং এর ইঞ্জিনিয়ার দের প্রোগ্রাম ইনপুট দেয়া জানতে হয়। ওয়েট প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ার দের প্রথম সারির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে হয়। নাসার বিজ্ঞানীরা যারা দীর্ঘদিন যাবত মহাকাশে মানুষ পাঠাতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা অসংখ্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার দের গবেষনায় নিযুক্ত করে স্পেস স্যুট এবং ন্যানোফাইবার, কার্বন ফাইবারের শিল্ড তৈরীর জন্য। বুলেট প্রুফ ফেব্রিক তৈরি করতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ই গবেষণার প্রয়োজন হয়। টেক্সটাইল এর প্রয়োগ কোথায় নেই?

চিকিৎসা ক্ষেত্রে হার্ট ব্লকেজ হলে হার্টে যে রিং পড়ানো হয় সেটাও প্রোটিন ফাইবার দিয়ে তৈরি। আর্টিফিশিয়াল হার্ট তৈরি করবেন বা এর লাইফ টাইম ডেভেলপ করতে চান? কাকে নিয়োগ দিবেন? সেই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার ই লাগবে।

এখন এসব কাজ কী একজন শ্রমিক বা তাতি পারবে? কাপড়ের কোয়ালিটি বাড়ানো, টেকসই করা, নতুন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ফ্যাশনের কাপড় এর ডিজাইন করা, লোয়েস্ট ম্যান পাওয়ার বা লো একাউন্ট ম্যাটেরিয়ালস দিয়ে হায়েস্ট প্রোডাকশন তৈরি করা এসব শুধু একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার ই পারেন। একারণেই একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের বেতন বেশি হয়।

তবে সত্য হলো স্টার্টিং বেতন অধিকাংশেরই বেতন ২০ থেকে ৩০ হাজার এর মধ্যে থাকে (যদি ইন্ডাস্ট্রির মালিক আপনাকে এক্সসেপশন মনে না করে কিংবা আপনি আপনার যোগ্যতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন)। যদি আপনার যোগ্যতা আপনার আপনার ডিপার্টমেন্ট এর অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে তাহলে স্টার্টিং ৬০+ হাজার বেতন দিয়েও আপনাকে মালিক হায়ার করবে। এখন আপনি যদি আশেপাশের ১০০ জনের মতই নরমাল ইঞ্জিনিয়ার হন তাহলে মালিক কেনোই বা আপনার পিছে ৫০/৬০ হাজাত টাকা ঢালবে। তাকেও ত লাভ লোকশান এসব নিয়ে বাঁচতে হয় তাই না? সুতরাং চার বছরে নিজেকে যোগ্য করে তুলুন।

এবার আসি ৬/৭ ডিজিট সম্পর্কে। শুরুতে কারো স্যালারি ই এমন থাকে না। কিন্তু টেক্সটাইল ই বাংলাদেশের একমাত্র সেক্টর যেখানে আপনি সৎ থেকে নিজের স্কিল দিয়ে, পরিশ্রম দিয়ে মাত্র ৩/৪ বছর জব করেই নিজেকে ৬ ডিজিট স্যালারির আসনে বসাতে পারবেন। বাংলাদেশের টেক্সটাইল এর আইকন মনোয়ার হোসেন পলাশ ভাই ( বাংলাদেশ সহ আরো ২/৩ টি দেশের কান্ট্রি মেনেজার) যার মান্থলি স্যালারি এট প্রেজেক্ট ৩৬ লক্ষ টাকা।

অতি সম্প্রতি বুয়েট নন-ওভেন জূট টেকনোলজী কে জিও টেক্সটাইল হিসেবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজে ব্যবহার শুরু করেছে,আগামিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়মিত বিষয় হিসেবে যখন জিও-টেক্সটাইল পড়ানো হবে তখন এই কোর্সের জন্য বাংলাদেশের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার দেরকেই শিক্ষক হিসেবে পাবেতারা। সত্যি বলতে কী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টের সাথে সব চেয়েবেশি মিল রয়েছে আইপিই ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাথে।

যাই হোক, পেশা হিসেবে অনেকের অ্যালার্জি থাকলেও বাংলাদেশে একমাত্র টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে “মেইড ইন বাংলাদেশ ” ট্যাগ এ ব্র্যান্ডিং শুরু করেছে। আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠান ( যেমন ওয়াল্টন ) দাবি করে তারা নাকি বাংলাদেশকে ব্যান্ডিং করছে, আন্তর্জাতিক হাজার হাজার ব্র্যান্ডের ভিড়ে কয়জন মানুষ ওয়াল্টন ব্যবহার করে কেউ জানে? জেনে রাখুন বিশ্বের ২য় বৃহত্তম জিন্স ব্র্যান্ড এইচ এন্ড এম শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকেই বছরে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার মুল্যের পন্য নিয়ে থাকে, আজ আমরা যারা হলিউডের মুভি দেখে অভ্যস্ত তারা কয়জনে জানি এই সব নামীদামি সেলিব্রেটিরা বাংলাদেশ এর নাম কে এক্টি ব্র্যান্ড হিসেবে জানে? ফুটবল বিশ্বকাপে গ্রেড ওয়ান জার্সি , ন্যাটোরক্যামোফ্ লেজ ড্রেস থেকে শুরু করে ডিজেল, রিবক, নাইকি, পুমা কারা নির্ভর করে না এই দেশের টেক্সটাইল প্রোডাক্ট এর উপর? আর যারা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ কে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করেছেন তারা এই দেশের ই টেক্সটইল ইঞ্জিনিয়ার রা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশ কে টেক্সটাইল সেক্টরের পরবর্তি চীন হিসেবে ঘোষনা করেছে।

BUTex | Environmental Science and Engineering - এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (ESE)

Review :
Subject : Environmental Science and Engineering - এনভায়রনমেন্টাল সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং (ESE)


সময়ে দাবিতে বুটেক্সে সর্বশেষ খোলা ডিপার্টমেন্ট হলো এটা। ২০১৮ সালেই ৪৫ তম ব্যাচ কে দিয়ে এটি চালু করা হয়। তাই এই বিষয়ে বিস্তারিত ধারণা খুবই কম।
ESE কী?

আমরা সবাই জানি বর্তমানের বিশ্বের বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি সংস্থা পরিবেশ সংরক্ষণে কতোটা জোরালো ভূমিকা

পালন করছে। তার কারণ কী? আশা করি সবার ই জানা। আমাদের দৈনিন্দিন কাজকর্মের ফলে পরিবেশ যেভাবে দূষিত হচ্ছে, বার বার ব্যবহারের ফলে প্রাকৃতিক সম্পদ যেভাবে শেষ হয়ে যাচ্ছে এভাবে চলতে পরবর্তী ৫০ বছরে পৃথিবী বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে। তাই পৃথিবীকে বসবাসের যোগ্য রাখতে, পরিবেশের দূষণ কমাতে, প্রাকৃতিক সম্পদের উৎসের প্রতি নির্ভরশীল না থেকে অন্য কোন উৎসের অনুসন্ধান করতে, অব্যবহার যোগ্য সম্পদের পারফেক্ট রিসাইক্লিং এর জন্যই এই সাব্জেক্ট এর উদ্ভব।

টেক্সটাইল এ ESE এর ভূমিকা কী?

বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ এই টেক্সটাইল। ফেব্রিক কালার করার পরেও ডাইং সেকশনে অনেক রং থেকে যায়। যার তাপমাত্রা থাকে ৪০° ডিগ্রী সেলসিয়াস এরও উপরে। এই রং নদীর পানিতে ঢালা হলে পানির তাপ দূষণ হয়। এছাড়াও রং এ উপস্থিত বিষাক্ত ক্যামিকেল মানবজাতির জন্যও হুমকিস্বরূপ। পাশাপাশি ফেব্রিকে ওয়াশিং এর জন্য লাখ লাখ গ্যালন পরিষ্কার পানি ব্যবহৃত হয়। এভাবে চলতে থাকলে পানির উৎসও শেষ হয়ে যাবে।
তাই ESE ইঞ্জিনিয়ার দের মূল কাজ হলো প্রোডাকশন পরবর্তী অব্যবহৃত ম্যাটেরিয়ালস গুলা কিভাবে কাজে লাগিয়ে, রিসাইক্লিং করে পুনরায় ব্যবহারযোগ্য করা যায় তা নিয়ে বিশ্লেষণ করা। প্রতিটা ইন্ডাস্ট্রি তে ETP ( Effluent Treatment Plant) Management, Solar system management, recycling management, Biogas Plant management, water filter management ইত্যাদি এসব নিয়ে বিচার বিশ্লেষণ করাই এনভায়রনমেন্টাল ইঞ্জিনিয়ার দের কাজ।

জব সুবিধা কেমন?

আগেই বলেছি এই সাব্জেক্ট একদম নতুন। তাই জব ডিমান্ড সবচেয়ে বেশিও এই সাব্জেক্ট এ। বর্তমান বিশ্ব পরিবেশ সংরক্ষণে অনেক বেশি সেনসিটিভ। তাই প্রতিটা ইন্ডাস্ট্রির মালিক ই পরিবেশের কথা মাথায় রেখে এই সেক্টরে ইঞ্জিনিয়ার দের অভাব অনুভব করেন। তাই জবের সুবিধাও বেশি। নিজের যোগ্যতা আর বুদ্ধি দিয়ে নতুন পদ্ধতি অবলম্বন করে কিভাবে অব্যবহৃত জিনিস কে পুনরায় কাজে লাগাবেন সেটা দেখাতে পারলেই আপনি হয়ে যাবেন মালিকের চোখের মধ্যমণি। এই সেক্টরে অতি দ্রুত AGM / GM হবার সম্ভাবনা বেশি। যেহেতু এটা নতুন সাব্জেক্ট তাই গ্র‍
্যাজুয়েশন পাশ করার পর ভালো রেজাল্ট কারীরা অতি সহজেই টিচিং প্রফেশনে যেতে পারবে।
এনভায়রনমেনটাল সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্ট এ ৪৬ তম ব্যাচকে স্বাগতম।

সবশেষে যে গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্নই সবার মনে জাগে-
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার কী? টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের কাজ কী? কাপড় তো শ্রমিক বা তাতিরা বানায়। তাতি বা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার দের ডিফারেন্স কী? কেনো এদের ইন্ডাস্ট্রির মালিকরা উচ্চ বেতনে নিয়োগ দেন?

অনেকেই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার নাম শুনলেই নাক সিটকান, বলেন এইটা কোন ইঞ্জিনিয়ারিং হইল, কাপর-চোপরের আবার কিসের ইঞ্জিনিয়ারিং? শতকরা ৮০ভাগ লোকই জানেন না যে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং চাকরি মানে কাপড়-চোপরের ইঞ্জিনিয়ারিং না। এটি সম্পূর্ন ম্যানুফ্যাকচারিং বেসড একটি প্রসেস যেখানে একজন ইঞ্জিনিয়ারকে মেশিন সেট আপ থেকে শুরু করে প্রসেস কন্ট্রোল, প্রোডাক্ট ডেভেলপমেন্ট, ফেব্রিকের ইপিআই & পিপিআই, গিয়ার মেকানিসম এবং মেইন্টেনেন্স নিয়ে কাজ করতে হয়। স্পিনিং এর ইঞ্জিনিয়ার দের প্রোগ্রাম ইনপুট দেয়া জানতে হয়। ওয়েট প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ার দের প্রথম সারির কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার হতে হয়। নাসার বিজ্ঞানীরা যারা দীর্ঘদিন যাবত মহাকাশে মানুষ পাঠাতে কাজ করে যাচ্ছেন তারা অসংখ্য টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার দের গবেষনায় নিযুক্ত করে স্পেস স্যুট এবং ন্যানোফাইবার, কার্বন ফাইবারের শিল্ড তৈরীর জন্য। বুলেট প্রুফ ফেব্রিক তৈরি করতে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ই গবেষণার প্রয়োজন হয়। টেক্সটাইল এর প্রয়োগ কোথায় নেই?

চিকিৎসা ক্ষেত্রে হার্ট ব্লকেজ হলে হার্টে যে রিং পড়ানো হয় সেটাও প্রোটিন ফাইবার দিয়ে তৈরি। আর্টিফিশিয়াল হার্ট তৈরি করবেন বা এর লাইফ টাইম ডেভেলপ করতে চান? কাকে নিয়োগ দিবেন? সেই টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার ই লাগবে।

এখন এসব কাজ কী একজন শ্রমিক বা তাতি পারবে? কাপড়ের কোয়ালিটি বাড়ানো, টেকসই করা, নতুন যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ফ্যাশনের কাপড় এর ডিজাইন করা, লোয়েস্ট ম্যান পাওয়ার বা লো একাউন্ট ম্যাটেরিয়ালস দিয়ে হায়েস্ট প্রোডাকশন তৈরি করা এসব শুধু একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার ই পারেন। একারণেই একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারের বেতন বেশি হয়।

তবে সত্য হলো স্টার্টিং বেতন অধিকাংশেরই বেতন ২০ থেকে ৩০ হাজার এর মধ্যে থাকে (যদি ইন্ডাস্ট্রির মালিক আপনাকে এক্সসেপশন মনে না করে কিংবা আপনি আপনার যোগ্যতা প্রমাণ করতে ব্যর্থ হন)। যদি আপনার যোগ্যতা আপনার আপনার ডিপার্টমেন্ট এর অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে তাহলে স্টার্টিং ৬০+ হাজার বেতন দিয়েও আপনাকে মালিক হায়ার করবে। এখন আপনি যদি আশেপাশের ১০০ জনের মতই নরমাল ইঞ্জিনিয়ার হন তাহলে মালিক কেনোই বা আপনার পিছে ৫০/৬০ হাজাত টাকা ঢালবে। তাকেও ত লাভ লোকশান এসব নিয়ে বাঁচতে হয় তাই না? সুতরাং চার বছরে নিজেকে যোগ্য করে তুলুন।

এবার আসি ৬/৭ ডিজিট সম্পর্কে। শুরুতে কারো স্যালারি ই এমন থাকে না। কিন্তু টেক্সটাইল ই বাংলাদেশের একমাত্র সেক্টর যেখানে আপনি সৎ থেকে নিজের স্কিল দিয়ে, পরিশ্রম দিয়ে মাত্র ৩/৪ বছর জব করেই নিজেকে ৬ ডিজিট স্যালারির আসনে বসাতে পারবেন। বাংলাদেশের টেক্সটাইল এর আইকন মনোয়ার হোসেন পলাশ ভাই ( বাংলাদেশ সহ আরো ২/৩ টি দেশের কান্ট্রি মেনেজার) যার মান্থলি স্যালারি এট প্রেজেক্ট ৩৬ লক্ষ টাকা।

অতি সম্প্রতি বুয়েট নন-ওভেন জূট টেকনোলজী কে জিও টেক্সটাইল হিসেবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর কাজে ব্যবহার শুরু করেছে,আগামিতে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারদের নিয়মিত বিষয় হিসেবে যখন জিও-টেক্সটাইল পড়ানো হবে তখন এই কোর্সের জন্য বাংলাদেশের টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার দেরকেই শিক্ষক হিসেবে পাবেতারা। সত্যি বলতে কী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং সাবজেক্টের সাথে সব চেয়েবেশি মিল রয়েছে আইপিই ইঞ্জিনিয়ারিং এবং মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এর সাথে।

যাই হোক, পেশা হিসেবে অনেকের অ্যালার্জি থাকলেও বাংলাদেশে একমাত্র টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররাই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে “মেইড ইন বাংলাদেশ ” ট্যাগ এ ব্র্যান্ডিং শুরু করেছে। আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠান ( যেমন ওয়াল্টন ) দাবি করে তারা নাকি বাংলাদেশকে ব্যান্ডিং করছে, আন্তর্জাতিক হাজার হাজার ব্র্যান্ডের ভিড়ে কয়জন মানুষ ওয়াল্টন ব্যবহার করে কেউ জানে? জেনে রাখুন বিশ্বের ২য় বৃহত্তম জিন্স ব্র্যান্ড এইচ এন্ড এম শুধুমাত্র বাংলাদেশ থেকেই বছরে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার মুল্যের পন্য নিয়ে থাকে, আজ আমরা যারা হলিউডের মুভি দেখে অভ্যস্ত তারা কয়জনে জানি এই সব নামীদামি সেলিব্রেটিরা বাংলাদেশ এর নাম কে এক্টি ব্র্যান্ড হিসেবে জানে? ফুটবল বিশ্বকাপে গ্রেড ওয়ান জার্সি , ন্যাটোরক্যামোফ্ লেজ ড্রেস থেকে শুরু করে ডিজেল, রিবক, নাইকি, পুমা কারা নির্ভর করে না এই দেশের টেক্সটাইল প্রোডাক্ট এর উপর? আর যারা বিশ্বের দরবারে বাংলাদেশ কে একটি ব্র্যান্ড হিসেবে পরিচিত করেছেন তারা এই দেশের ই টেক্সটইল ইঞ্জিনিয়ার রা। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বাংলাদেশ কে টেক্সটাইল সেক্টরের পরবর্তি চীন হিসেবে ঘোষনা করেছে।

কোন মন্তব্য নেই: