জিও টেক্সটাইল কি এবং জিও টেক্সটাইলের ব্যাবহার | Geo Textile - Textile Lab | Textile Learning Blog
জিও টেক্সটাইল | Geo Textile

জিও টেক্সটাইল কি ? 

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নতুন বিপ্লব জিওটেক্সটাইল , বিভিন্ন বড় বড় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্ট এ বহুল ভাবে ব্যাবহার হচ্ছে এই জিও-টেক্সটাইল । রাস্তা, বাঁধ ,নদী ভাঙ্গন , মাস ফাউন্ডেশন,পাহাড় ধ্বস ,ড্রেইনেজ, নদী-খাল ও কোস্টাল ওয়ার্ক এ ব্যাবহার হয় এই জিওটেক্সটাইল। তাহলে আজকে জানি জিওটেক্সটাইল সম্পর্কে বিস্তারিত ।

 
 

জিও টেক্সটাইল :

জিও টেক্সটাইল প্রোডাক্ট মূলত পলিস্টার, পলিপ্রপিলিন, পলিঅ্যামাইড দিয়ে তৈরি করা হয়। জিও টেক এর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় সিভিল / কনস্ট্রাকশনের কাজে। এতে মাটির বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে দূর্বল ও অকার্যকর জায়গায় ভবন নির্মাণ এর উপযোগি করে তুলে। আধুনিক সিভিল /কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে এই জিও টেক্সটাইল।

 
জিও টেক্সটাইল কি ?

জিওটেক্সটাইল’ হলো এক ধরনের টেকনিক্যাল টেক্সটাইল (দেখতে অনেকটা চালের বস্তার মতো), যা মাটির উপরিভাগে বা অভ্যন্তরে ব্যবহার করে পুরকৌশলগত (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) সুবিধা পাওয়া যায়।

জিওটেক্সটাইল এক ধরনের পলিমার ফেব্রিক যেটা বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা যেমন রাস্তা, ড্রেন, গৃহায়ন এবং বাঁধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এটা স্থাপত্য প্রকৌশলীর আরও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়।

 

জিও টেক্সটাইলের সুবিধাসমুহ ?

জিওটেক্সটাইল পণ্যের বিভিন্ন সুবিধাসমূহ নিম্নে বর্ণিত হল:-

১. জিওটেক্সটাইল দ্বারা তৈরিকৃত ফেব্রিক ওভেন ফেব্রিকের তুলনায় হালকা হয়। ফলে এটা হ্যান্ডেলিং করা সহজ হয় এবং পরিবহনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়।

২. ওয়েফট নিবেশে তৈরি ফেব্রিকের ক্ষেত্রে জিওটেক্সটাইল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা যোগ করে। জিওটেক্সটাইল এই ধরনের ফেব্রিকের ক্ষেত্রে বিদীর্ণকরণ শক্তি বৃদ্ধি করে।

 
৩. রাস্তা তৈরিতে পিচ এবং টুকরা ইট এই দুই স্তরের মাঝে জিওটেক্সটাইল ফেব্রিক ব্যবহার করলে রাস্তা বৃষ্টির পানিতে ক্ষয়ে পড়ার হাত থেকে রক্ষা পায়।

৪. মাটির দুই স্তরের পার্থক্যকারী হিসাবে জিওটেক্সটাইল বিপুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।

৫।। আর্দ্রতা প্রতিবন্ধক হিসাবে জিওটেক্সটাইলের উপকারীতা অতুলনীয়।

৬। জিও-টেক্সটাইল ড্রেইনেজ এ ভূমিকা রাখে , এজন্যে খেলার মাঠে ব্যাবহার হয়।

 
 

জিও টেক্সটাইল শীট ও ব্যাগ কথায় পাবেন ?

এটি দুই ধরনের হয়ে থাকে.

PP: polypropylene staple fiber.
PSF: polyester staple fiber Sheet. Roll. Bag.Tube.
 

পিপি = ১০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।

পি,এস,এফ= ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।

Pp = 10-50 years

PSF = 5 to 10 years

100% PP and PSF
 
জিও টেক্সটাইল জি,আস,এম (GSM) এর উপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করে থাকে। নিচে জি,এস,এম (GSM) এর লিস্ট দেওয়া হল।

1) 150gsm

2) 180gsm

3) 200gsm

4) 250gsm

5) 300gsm

6) 350gsm

7) 400gsm

8) 450gsm

9) 500gsm

10) 550gsm

11) 600gsm

 

জিও টেক্সটাইল শীট রুল হিসাবে বিক্রি হয়। প্রতি রুলে লম্বায় ১০০ মিটার থাকে।এবং প্রস্থে – ৩,৪,৫ মিটার পাওয়া যায়

 জিও টেক্সটাইল ব্যাগ পিছ হিসাবে বিক্রি হয়।

ব্যাগ গুলো বিভিন্ন মাপের হয়ে থাকে

ব্যাগ গুলো মাপ মিটার,ফিট ও কেজিতে নির্ণয় করা হয়

 
 

'নরম মাটিতে জিও টেক্সটাইল মোড়ানো বাঁধ ভূমিকম্প-প্রতিরোধী'
 

নরম মাটিতে জিও টেক্সটাইল মোড়ানো খাড়া বাঁধ ভূমিকম্প প্রতিরোধী এবং টেকশই। ভূমিকম্প অথবা ওয়েভের (সাইনসয়ডাল) সময় বাঁধের বিভিন্ন স্তরের গতিশীল গুণাবলী কি রকম পরিবর্তন হয় সেটা বিবেচনায় নিয়ে বাঁধ ডিজাইন করলে, বাঁধটি ভূমিকম্প প্রতিরোধী ও টেকশই হবে।

মঙ্গলবার বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর পুরকৌশল বিভাগ আয়োজিত 'বাংলাদেশের নরম মাটিতে ভূমিকম্প প্রতিরোধী মোড়ানো বাঁধের প্রয়োগ' র্শীষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।


আইইবি পুরকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মুনাজ আহমেদ নূরের সভাপতিত্বে এবং বিভাগের সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার অমিত কুমার চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং আইইবির সাবেক প্রেসডেন্ট আবদুস সবুর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইইবির প্রেসিডেন্ট নূরুল হুদা, আইইবি'র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নূরুজ্জামান এবং এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ খান। স্বাগত বক্তব্য দেন আইইবি'র সম্মানী সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু)।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এলজিইডির প্রকৌশলী ড. ইঞ্জিনিয়ার রিপন হোড়। মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আইইবির ভাইস-চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার জিকরুল হাসান।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, মোড়ানো বাঁধটি বিভিন্ন জিওটপেটাইল দ্বারা প্যাচানো থাকে এবং বিভিন্ন বৈশিষ্টের বালু-সিমেন্ট দ্বারা পূর্ণ করা হয়। বাঁধটি খাড়া হবার কারণে প্রচলিত বাঁধের তুলনায় দুই পাশের কৃষিজমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয় না। বাঁধটি তৈরির সময় দুই ধরনের ওভেন অথবা নন ওভেন জিওটেক্সটাইল ব্যবহার করা হয়। ফলে বাঁধটি অনেকটাই ভূমিকম্পপ্রতিরোধী হয়।


✅  বাংলাদেশের জিওটেক্সটাইল খাতে নতুন বিনিয়োগে বড় লাভের সম্ভাবনা

নদীর পাড় রক্ষা কিংবা নদীভাঙ্গন ঠেকাতে নতুন নতুন প্রকল্প এবং সড়ক-মহাসড়কের মত অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে সরকারের ব্যয় বাড়ায় জিও টেক্সটাইল পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা 

দেশে জিও টেক্সটাইলের বাজার বড় হওয়ার আশায় এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। বর্তমানে সাতটি প্রতিষ্ঠান জিও টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদন করলেও নতুন করে বিনিয়োগে এসেছে আরো দুটি প্রতিষ্ঠান। নদীর পাড় রক্ষা কিংবা নদীভাঙ্গন ঠেকাতে নতুন নতুন প্রকল্প এবং সড়ক-মহাসড়কের মত অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে সরকারের ব্যয় বাড়ায় জিও টেক্সটাইল পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে। এ চাহিদা ক্রমাগত বাড়ার আশায় নতুন বিনিয়োগ আসছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। 

এ খাতে নতুন করে বিনিয়োগ নিয়ে এসেছে কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এবং ওয়েস্টার্ন সুপিরিওর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এর মধ্যে ওয়েস্টার্ন সুপিরিওর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড স্বল্প পরিসরে উৎপাদন শুরু করেছে। আর কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ২০২২ সালের মার্চ নাগাদ উৎপাদনে যাবে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি এ লক্ষ্যে জার্মানি ভিত্তিক আউটিফা সলিউশন্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অত্যাধুনিক দুটি মেশিন ক্রয় করছে, যা আগামী মাসে জাহাজীকরণ হওয়ার কথা। প্রতিষ্ঠানটি ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।   
কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এর প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা (সিওও) শহিদুল ইসলাম টিবিএস'কে বলেন, "২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে উৎপাদনে যাওয়ার পর আমাদের কারখানায় দৈনিক ৭০-৮০ টন জিওটেক্সটাইলস উৎপন্ন হবে। কারখানায় ৫০০ জনের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।" 

তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে দুটি নন-উভেন নিডল পাঞ্চিং জিও-টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারিং প্রোডাকশন লাইন দিয়ে শুরু করলেও ভবিষ্যতে এ বিনিয়োগ দ্বিগুণ করার লক্ষ্য রয়েছে। এজন্য জার্মানি থেকে কেনা দুটি অত্যাধুনিক মেশিন লাইন আগামী মাসেই পাঠানো হবে বলে জানান শহিদুল। 

এদিকে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার পাইপলাইনে অনেক অবকাঠামো প্রকল্প থাকায় জিওটেক্সটাইলের চাহিদা দিন দিন বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সামনে এ পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। 

ওয়েস্টার্ন সুপিরিওর জুট ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার আবু হাসনাত বলেন, "আমরা এখন প্রতিদিন ছয় টন জিওটেক্সটাইল উৎপাদন করছি। উৎপাদন বাড়াতে নতুন মেশিন লাইন বসানোর কাজও চলছে। বর্তমানে আমাদের মোট বিনিয়োগ প্রায় ৩০ কোটি টাকা।" 

জিও টেক্সটাইল মূলত নন-উভেন টেক্সটাইল- যা দিয়ে উৎপাদিত জিওব্যাগ, জিওশিট ও জিওইউব দিয়ে নদীরক্ষা বাঁধ, সড়ক অবকাঠামো তৈরি, মেরামত, পাকাকরণসহ যে কোন ধরনের বাঁধ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে বহুলভাবে ব্যবহার হয় জিওব্যাগ, যা বড় বড় প্রকল্পের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। 

বিভিন্ন সূত্রমতে, কেবল পদ্মা সেতুর নদী শাসন কাজেই ব্যবহার হয়েছে এক কোটি ৪৭ লাখ জিওব্যাগ ও ৬৮ হাজার জিও টিউব।

এর মূল কাঁচামাল পলি প্রপিলিন ফাইবার বা পিপি ফাইবার ফেব্রিক থেকে তৈরি হয়। ওই ফেব্রিক দিয়ে তৈরি ব্যাগে মাটি বা বালি ভর্তি করে তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ করা হয়। এই কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। মূলত চীন, ভিয়েতনাম ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করতে হয়।  

দেশে জিও টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের টার্নওভারের তথ্যও প্রকাশ করতে চায় না। 

তবে খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের পরিমাণ কেমন হবে, তা নির্ভর করছে ওই প্রতিষ্ঠান কেমন মানের মেশিন ব্যবহার করছে, যেমন- নতুন মেশিন না রিকন্ডিশন্ড মেশিন তার ওপর। যেমন একটি রিকন্ডিশন্ড মেশিন দিয়েও উৎপাদন শুরু করা যায়, সেক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠানের হয়তো মোট বিনিয়োগের পরিমাণ হতে পারে ৮-১০ কোটি টাকা। 

অন্যদিকে, দেশের সবচেয়ে বড় জিওটেক্সটাইল প্রস্তুতকারক বিজে জিও -টেক্সটাইল লিমিটেড ও ডার্ড ফেল্ট লিমিটেড অন্তত ছয়টি মেশিন লাইন দিয়ে তাদের উৎপাদন কাজ চালাচ্ছে। 

এখাতে অন্তত ৭০০ কোটি টাকা এপর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠান দুটি। 

আর জিও টেক্সটাইলের বার্ষিক চাহিদা ১ হাজার থেকে ১২০০ কোটি টাকার। ১৯৯৫ সাল থেকে দেশে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে জিওব্যাগের ব্যবহার শুরু হলেও, পূর্বে ওই চাহিদা মেটানো হতো মূলত মালয়েশিয়া থেকে আমদানির মাধ্যমে। তবে দেশে চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধির সাথে সাথে নন-উভেন জিওটেক্সটাইলের দেশীয় উৎপাদন শুরু হওয়ার পর আমদানির উপর নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। 

বর্তমানে স্থানীয় চাহিদার প্রায় ৯৫ শতাংশের বেশি দেশের সাতটি কোম্পানির উৎপাদিত জিও টেক্সটাইল পণ্যের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।

আর রেলসহ কিছু কিছু প্রকল্পের কাজে উভেন জিও টেক্সটাইল ব্যবহার হয়, যা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন করে না। এ ধরনের  জিও টেক্সটাইল আমদানি করতে হয়, যা মোট ব্যবহারের দুই শতাংশের বেশি হবে না বলে অনুমান করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। 

সূত্র জানায়, দেশে প্রথম জিও টেক্সটাইলের বিপণন শুরু করেছিলো ডার্ড গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন জিও টেক্সটাইলের আলাদা কোম্পানির নাম ডার্ড ফেল্ট লিমিটেড, যেখানে প্রায় এক হাজার জনের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৭৫ টন।  

ডার্ড ফেল্ট এর নির্বাহী পরিচালক সৌমিত্র মুৎসুদ্দি টিবিএস'কে বলেন, বাংলাদেশে প্রথম জিও টেক্সটাইলের ব্যবসা শুরু করেছে এ প্রতিষ্ঠান এবং এপর্যন্ত দেশে অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান এটি। পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদী শাসন কাজে ব্যবহার হওয়া বিপুল পরিমাণ জিও ব্যাগ ও জিওটিউবের অর্ধেকই সরবরাহ করেছে। 

'পৃথিবীর সব দেশেই নদী রক্ষা, রিভার ট্রেনিং, বাঁধ নির্মাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে জিওটেক্সটাইলের বহুল ব্যবহার রয়েছে। এর উপকারিতার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশেও আলোচ্য কাজে জিও টেক্সটাইলের ব্যবহার বাড়বে বলে আশা করছি। ফলে দেশে এর বাজারও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে,' বলেন তিনি। 

ডার্ড গ্রুপ এর বার্ষিক টার্নওভার সম্পর্কে তিনি পরিস্কার তথ্য দিতে না পারলেও অপর একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত বছর প্রতিষ্ঠানটির টার্নওভার ছিলো ২০০ কোটি টাকার উপরে। আর ২০১৫ সালে তা ছিলো ৩২০ কোটি টাকা। 

অবশ্য এ খাতের বাজারের আকার কিংবা ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে বিপরীতমুখী বক্তব্যও রয়েছে। নাহি জিও টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের একজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বর্তমানে জিও টেক্সটাইলের যে বাজারের আকার, তা গত কয়েক বছর ধরে প্রায় একই অবস্থানে রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে চাহিদা বরং কিছুটা কমেছে। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় ক্যাপাসিটি বেশি রয়েছে। এ কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে সাতটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। 

'এ পরিস্থিতিতে নতুন করে যারা বিনিয়োগ নিয়ে আসছেন, তাদের এই অংশের মধ্যেই ভাগ বসাতে হবে, ফলে কাউকে না কাউকে হয়তো ঝরে যেতে হবে' - বলেন তিনি। 

অবশ্য এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন নতুন বিনিয়োগে আসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তারা জানান, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ এবং প্রতি বছরই নদী খনন, নদী পাড়ে বাঁধ নির্মাণ, ড্রেজিং ও নদী শাসনের মত কাজ কমবে না বরং বাড়বে। অন্যদিকে সড়কসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অবকাঠামোর কাজে স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য দিনে দিনে জিও টেক্সটাইলের ব্যবহার বাড়বে। 

দেশে জিও টেক্সটাইল উৎপাদনকারী হিসেবে শীর্ষে রয়েছে বিজে জিও- টেক্সটাইল লিমিটেড- এর নাম। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এ প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ক্ষমতা এখন সবচেয়ে বেশি। এছাড়া তাদের কারখানায় রয়েছে জিও টেক্সটাইল ব্যাগ উৎপাদনের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি।   

এর বাইরেও রাহাত জিও-টেক্সটাইল অ্যান্ড সিনথেটিক লিমিটেড, এফজি জিওটেক্সটাইল, অর্কিড জিওটেক্সটাইল ও আরএম জিওটেক্স লিমিটেড বর্তমানে পণ্য উৎপাদন করে বলে জানা গেছে।



বড় ভূমিকম্পেও ভাঙবে না বাঁধ, নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ( জিও টেক্সটাইল )

বর্তমান বিশ্বে বড় আতঙ্কের নাম ভূমিকম্প। বাংলাদেশও এ আতঙ্কের বাইরে নয়। ভূতাত্ত্বিক ও ভূমির গঠন অনুসারে বাংলাদেশ ভূকম্পনপ্রবণ অঞ্চল। বিগত ২০০ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশে আটটি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৬৯ সালে সিলেট অঞ্চলে রিখটার স্কেলে সর্বোচ্চ ৭.৬ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। একই স্থানে গত ৩০ মে সকাল থেকে অন্তত পাঁচবার কম্পন হয়। ৭ জুন সন্ধ্যা ৬টা ২৯ ও ৬টা ৩০ মিনিটে আবারও দুই দফা ভূকম্পন হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বড় কোনো ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন দফায় দফায় মৃদু কম্পন হতে পারে।

বাংলাদেশে যদি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়ক-মহাসড়কগুলো। যদিও আধুনিক যুগে সুউচ্চ ভবন কিংবা স্থাপত্য নির্মাণে ভূমিকম্প সহনশীল প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু দেশের সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমিকম্পের বিষয়টি এখনও অবহেলিত।

এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প সহনশীল সড়ক বা মহাসড়ক নির্মাণে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারি এবং তার ছাত্র প্রকৌশলী রিপন হোড়ের সমন্বয়ে গঠিত গবেষক দল। ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ছয় বছরের গবেষণায় উদ্ভাবিত ‘র‌্যাপ ফেস ইমব্যাংকমেন্ট (wrape face embankment)’ নামের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে বাঁধ, সড়ক-মহাসড়ক কিংবা রেললাইন বড় মাত্রার ভূমিকম্পেও অক্ষত থাকবে। পাশাপাশি চলমান পদ্ধতিতে নির্মাণের তুলনায় আর্থিক ব্যয় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে আসবে। সবচেয়ে আশার কথা হলো, এ প্রযুক্তি অনেক কৃষিজমি বাঁচিয়ে দেবে। মূলত, আমাদের দেশে নতুন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে দুই পাশের ব্যাপক কৃষিজমি নষ্ট হয়। ‘র‌্যাপ ফেস ইমব্যাংকমেন্ট’ প্রযুক্তি ব্যবহারে উঁচু বাঁধ বা রাস্তা নির্মাণে দুই পাশের জমির ব্যবহার অনেক কমে যাবে।

ইতোমধ্যে জাপান ও আমেরিকার শক্ত মাটিতে এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহারে সফলতা মিলেছে। তবে বাংলাদেশের মতো নরম মাটির দেশে এ প্রযুক্তি কার্যকর কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে রিপন-আনসারি উদ্ভাবিত প্রযুক্তি নরম মাটিতেও বেশ কার্যকর। ইতোমধ্যে ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় তা প্রমাণিত হয়েছে।

শুধু তা-ই নয়, তাদের গবেষণার ফলাফলকে তিনটি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক জার্নালও স্বীকৃতি দিয়েছে। সেখানে তাদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। জার্নালগুলো হলো- জিওটেকনিক্যাল অ্যান্ড জিওলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব জিওসিন্থেটিকস অ্যান্ড গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও ট্রান্সপোর্টেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার জিওটেকনোলজি।


র‌্যাপ ফেস ইমব্যাংকমেন্ট (Wrap face embankment) কী?
 
র‌্যাপ ফেস ইমব্যাংকমেন্ট বা মোড়ানো বাঁধ হলো জিও টেক্সটাইল দিয়ে মোড়ানো খাড়া বাঁধ। মোড়ানো বাঁধটি বিভিন্ন জিও টেক্সটাইল দিয়ে প্যাঁচানো থাকে এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বালু দ্বারা পূর্ণ থাকে। বাঁধটি খাড়া হবার কারণে প্রচলিত বাঁধের তুলনায় দুপাশের কৃষিজমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন হয় না। বাঁধটি বানানোর সময় দুই ধরনের যথা ওভেন অথবা ননওভেন জিওটেক্সটাইল ব্যবহার করা হয়। মোড়ানো বাঁধটি মাটির গুণাবলির পারস্পারিক অবস্থা ও ইজিএল’র ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন লেয়ারের হয়ে থাকে।
 
সার্বিক বিষয়ে কথা হয় গবেষক দলের প্রধান ও বুয়েট অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারির সঙ্গে । ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, যদিও আমাদের গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল অধিক মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল বাঁধ বা সড়ক নির্মাণ করা। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় আশার কথা হচ্ছে, এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ব্যাপক হারে কৃষিজমি রক্ষা পাবে। সরকারকেও ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হবে না। যেমন- ১০ মিটার উঁচু ও ১০ মিটার প্রশস্ত একটি বাঁধ নির্মাণে দুই পাশে দিগুণ ঢাল তৈরি করতে হয়। একপাশে ২০ মিটার ও অন্যপাশে ২০ মিটার জমির প্রয়োজন হয়। সবমিলিয়ে ৫০ মিটার। অর্থাৎ সড়ক কিংবা বাঁধ নির্মাণে পাঁচগুণ জায়গা নষ্ট হয়। কিন্তু এ প্রযুক্তিতে কোনো ঢাল নির্মাণ করতে হয় না। সরাসরি উঁচু সড়ক হয়, তাই দুই পাশের জমি বেঁচে যায়।


বুয়েট অধ্যাপক আরও বলেন, বন্যায় সাধারণ বাঁধ ভেঙে যায় বা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এ প্রযুক্তিতে তৈরি করা বাঁধ নির্মাণে জিও টেক্সটাইল ও বালুর সমন্বয়ে বেশ মজবুত কাঠামো ব্যবহার করা হয়। তাই বন্যায়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এছাড়া বর্তমানে জিও টেক্সটাইল বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। তাই এটি সহজলভ্য বলা যায়।

জিও টেক্সটাইল কী

জিও টেক্সটাইল প্রোডাক্ট মূলত পলিস্টার, পলিপ্রপিলিন, পলিঅ্যামাইড দিয়ে তৈরি হয়। জিও টেক’র সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় সিভিল/কনস্ট্রাকশন কাজে। এতে মাটির বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে দুর্বল ও অকার্যকর জায়গায় ভবন নির্মাণের উপযোগী করে তোলা হয়। আধুনিক সিভিল/কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে এ জিও টেক্সটাইল। জিও টেক্সটাইল সাধারণত মাটির বৈশিষ্ট্য উন্নয়নে যেমন- কোনো রাস্তা, বাঁধ, পাইপলাইন এবং মাটিতে বৃহৎ কোনো কাঠামো তৈরিতে ব্যবহার হয়।    

বড় ধরনের ভূমিকম্পে আপনাদের এ প্রযুক্তি কতখানি কার্যকর— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভূমিকম্পের ফলে যে ঝাঁকুনি হয় তাকে আমরা তীব্রতা বা ইনটেনসিটি বলি। এ প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা বাঁধ বা সড়ক ৭ থেকে ৮ তীব্রতার (ইনটেনসিটি) ভূমিকম্পেও অক্ষত থাকবে। সাধারণত যেকোনো মাত্রার ভূমিকম্পে সর্বোচ্চ তীব্রতা ধরা হয় ১২। সেখানে আমাদের গবেষণায় নির্মিত বাঁধ সর্বোচ্চ ৮ তীব্রতার ঝাঁকুনি নিতে সক্ষম। আমাদের ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিম ঝাঁকুনি দিয়ে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অধ্যাপক আনসারি আরও বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকায় নরম মাটির আধিক্য রয়েছে। আমাদের গবেষণায়ও নরম মাটি ব্যবহার করেছি। সেখানে আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি যে, নরম মাটিতে র‌্যাপ ফেস ইমব্যাংকমেন্ট প্রযুক্তি বেশ কার্যকর। ফলে নরম মাটির ওপর বাঁধ কিংবা রেললাইন নির্মাণে শক্ত ভিত তৈরিতে সরকারকে যে ব্যয় করতে হয়, ওটার আর প্রয়োজন হবে না। অর্থাৎ নরম মাটিতেও এ প্রযুক্তি বেশ কার্যকর বলতে পারি। যেমন- বর্তমানে পদ্মা সেতু প্রকল্পে রেললাইন স্থাপনে অধিকাংশ জায়গায় নরম মাটির কারণে প্রচুর টাকা খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে। কারণ, নরম মাটিতে ভিত মজবুত করে তারপর স্থাপনা নির্মাণ করতে হয়। পায়রা বন্দরেও স্থাপনা নির্মাণে আমরা একই অবস্থা দেখেছি। এ প্রযুক্তি আমাদের বড় অঙ্কের অর্থ সাশ্রয় করবে।

ব্যয়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাইলে অপর গবেষক প্রকৌশলী রিপন হোড় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের দেশে অর্ধ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে চার কোটি তিন লাখ টাকার মতো অর্থ খরচ হয়। সেখানে র‌্যাপ ফেস ইমব্যাংকমেন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করলে খরচ হবে এক কোটি ৮৬ লাখ টাকার মতো। অর্থাৎ খরচ ৭০ শতাংশ কমে যাচ্ছে।’

রিপন হোড় বর্তমানে এলজিইডি’র প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ২০২০ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

রিপন আরও বলেন, “আমার গবেষণার মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশের নরম মাটিতে ‘র‌্যাপ ফেস ইমব্যাংকমেন্ট’ ভূমিকম্পে কেমন আচরণ করবে, তার বিশ্লেষণ করা। আমার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারি। ভূমিকম্পের সময় অবকাঠামোর নিচের মাটি কীভাবে আচরণ করবে যা নির্ণয় খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। এটা আমার গবেষণার বড় প্রাপ্তি। ভূমিকম্পের সময় অবকাঠামোর নিচের মাটির আচরণ আমার গবেষণায় উঠে এসেছে। এটা করার জন্য সেক টেবিল টেস্ট মেশিন ও সংখ্যাগত বিষয় যাচাই করতে প্লাসিক্স থ্রিডি অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তি যদি ব্যবহার করা যায় তাহলে তিনটা উদ্দেশ্য অর্জিত হবে। প্রথমত, সাধারণ নিয়মে রাস্তা নির্মাণে বড় পরিসরে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সরকারের আর্থিক ব্যয় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে যাবে। দ্বিতীয়ত, সারাদেশে রাস্তা নির্মাণের জন্য ব্যাপক কৃষি জমি নষ্ট হয়। এটা থেকে আমাদের মুক্তি মিলবে এবং সর্বশেষ, বাঁধটি ভূমিকম্প সহনশীল হবে। বাংলাদেশ সরকারের তিনটি সংস্থা- এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে।

জিও টেক্সটাইল কি এবং জিও টেক্সটাইলের ব্যাবহার | Geo Textile

জিও টেক্সটাইল | Geo Textile

জিও টেক্সটাইল কি ? 

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং নতুন বিপ্লব জিওটেক্সটাইল , বিভিন্ন বড় বড় সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং প্রজেক্ট এ বহুল ভাবে ব্যাবহার হচ্ছে এই জিও-টেক্সটাইল । রাস্তা, বাঁধ ,নদী ভাঙ্গন , মাস ফাউন্ডেশন,পাহাড় ধ্বস ,ড্রেইনেজ, নদী-খাল ও কোস্টাল ওয়ার্ক এ ব্যাবহার হয় এই জিওটেক্সটাইল। তাহলে আজকে জানি জিওটেক্সটাইল সম্পর্কে বিস্তারিত ।

 
 

জিও টেক্সটাইল :

জিও টেক্সটাইল প্রোডাক্ট মূলত পলিস্টার, পলিপ্রপিলিন, পলিঅ্যামাইড দিয়ে তৈরি করা হয়। জিও টেক এর সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় সিভিল / কনস্ট্রাকশনের কাজে। এতে মাটির বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে দূর্বল ও অকার্যকর জায়গায় ভবন নির্মাণ এর উপযোগি করে তুলে। আধুনিক সিভিল /কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং এ বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে এই জিও টেক্সটাইল।

 
জিও টেক্সটাইল কি ?

জিওটেক্সটাইল’ হলো এক ধরনের টেকনিক্যাল টেক্সটাইল (দেখতে অনেকটা চালের বস্তার মতো), যা মাটির উপরিভাগে বা অভ্যন্তরে ব্যবহার করে পুরকৌশলগত (সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং) সুবিধা পাওয়া যায়।

জিওটেক্সটাইল এক ধরনের পলিমার ফেব্রিক যেটা বিভিন্ন ধরনের স্থাপনা যেমন রাস্তা, ড্রেন, গৃহায়ন এবং বাঁধ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এটা স্থাপত্য প্রকৌশলীর আরও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত হয়।

 

জিও টেক্সটাইলের সুবিধাসমুহ ?

জিওটেক্সটাইল পণ্যের বিভিন্ন সুবিধাসমূহ নিম্নে বর্ণিত হল:-

১. জিওটেক্সটাইল দ্বারা তৈরিকৃত ফেব্রিক ওভেন ফেব্রিকের তুলনায় হালকা হয়। ফলে এটা হ্যান্ডেলিং করা সহজ হয় এবং পরিবহনের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যায়।

২. ওয়েফট নিবেশে তৈরি ফেব্রিকের ক্ষেত্রে জিওটেক্সটাইল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাত্রা যোগ করে। জিওটেক্সটাইল এই ধরনের ফেব্রিকের ক্ষেত্রে বিদীর্ণকরণ শক্তি বৃদ্ধি করে।

 
৩. রাস্তা তৈরিতে পিচ এবং টুকরা ইট এই দুই স্তরের মাঝে জিওটেক্সটাইল ফেব্রিক ব্যবহার করলে রাস্তা বৃষ্টির পানিতে ক্ষয়ে পড়ার হাত থেকে রক্ষা পায়।

৪. মাটির দুই স্তরের পার্থক্যকারী হিসাবে জিওটেক্সটাইল বিপুল পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।

৫।। আর্দ্রতা প্রতিবন্ধক হিসাবে জিওটেক্সটাইলের উপকারীতা অতুলনীয়।

৬। জিও-টেক্সটাইল ড্রেইনেজ এ ভূমিকা রাখে , এজন্যে খেলার মাঠে ব্যাবহার হয়।

 
 

জিও টেক্সটাইল শীট ও ব্যাগ কথায় পাবেন ?

এটি দুই ধরনের হয়ে থাকে.

PP: polypropylene staple fiber.
PSF: polyester staple fiber Sheet. Roll. Bag.Tube.
 

পিপি = ১০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।

পি,এস,এফ= ৫ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করা যায়।

Pp = 10-50 years

PSF = 5 to 10 years

100% PP and PSF
 
জিও টেক্সটাইল জি,আস,এম (GSM) এর উপর ভিত্তি করে দাম নির্ধারণ করে থাকে। নিচে জি,এস,এম (GSM) এর লিস্ট দেওয়া হল।

1) 150gsm

2) 180gsm

3) 200gsm

4) 250gsm

5) 300gsm

6) 350gsm

7) 400gsm

8) 450gsm

9) 500gsm

10) 550gsm

11) 600gsm

 

জিও টেক্সটাইল শীট রুল হিসাবে বিক্রি হয়। প্রতি রুলে লম্বায় ১০০ মিটার থাকে।এবং প্রস্থে – ৩,৪,৫ মিটার পাওয়া যায়

 জিও টেক্সটাইল ব্যাগ পিছ হিসাবে বিক্রি হয়।

ব্যাগ গুলো বিভিন্ন মাপের হয়ে থাকে

ব্যাগ গুলো মাপ মিটার,ফিট ও কেজিতে নির্ণয় করা হয়

 
 

'নরম মাটিতে জিও টেক্সটাইল মোড়ানো বাঁধ ভূমিকম্প-প্রতিরোধী'
 

নরম মাটিতে জিও টেক্সটাইল মোড়ানো খাড়া বাঁধ ভূমিকম্প প্রতিরোধী এবং টেকশই। ভূমিকম্প অথবা ওয়েভের (সাইনসয়ডাল) সময় বাঁধের বিভিন্ন স্তরের গতিশীল গুণাবলী কি রকম পরিবর্তন হয় সেটা বিবেচনায় নিয়ে বাঁধ ডিজাইন করলে, বাঁধটি ভূমিকম্প প্রতিরোধী ও টেকশই হবে।

মঙ্গলবার বিকেলে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন, বাংলাদেশ (আইইবি)-এর পুরকৌশল বিভাগ আয়োজিত 'বাংলাদেশের নরম মাটিতে ভূমিকম্প প্রতিরোধী মোড়ানো বাঁধের প্রয়োগ' র্শীষক সেমিনারে বক্তারা এসব কথা বলেন।


আইইবি পুরকৌশল বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. ইঞ্জিনিয়ার মুনাজ আহমেদ নূরের সভাপতিত্বে এবং বিভাগের সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার অমিত কুমার চক্রবর্তীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক এবং আইইবির সাবেক প্রেসডেন্ট আবদুস সবুর। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আইইবির প্রেসিডেন্ট নূরুল হুদা, আইইবি'র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. নূরুজ্জামান এবং এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী আব্দুর রশীদ খান। স্বাগত বক্তব্য দেন আইইবি'র সম্মানী সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার শাহাদাৎ হোসেন (শীবলু)।

সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এলজিইডির প্রকৌশলী ড. ইঞ্জিনিয়ার রিপন হোড়। মূল প্রবন্ধের উপর আলোচনা করেন বুয়েটের অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারী। অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন আইইবির ভাইস-চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার জিকরুল হাসান।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, মোড়ানো বাঁধটি বিভিন্ন জিওটপেটাইল দ্বারা প্যাচানো থাকে এবং বিভিন্ন বৈশিষ্টের বালু-সিমেন্ট দ্বারা পূর্ণ করা হয়। বাঁধটি খাড়া হবার কারণে প্রচলিত বাঁধের তুলনায় দুই পাশের কৃষিজমি অধিগ্রহণের প্রয়োজন হয় না। বাঁধটি তৈরির সময় দুই ধরনের ওভেন অথবা নন ওভেন জিওটেক্সটাইল ব্যবহার করা হয়। ফলে বাঁধটি অনেকটাই ভূমিকম্পপ্রতিরোধী হয়।


✅  বাংলাদেশের জিওটেক্সটাইল খাতে নতুন বিনিয়োগে বড় লাভের সম্ভাবনা

নদীর পাড় রক্ষা কিংবা নদীভাঙ্গন ঠেকাতে নতুন নতুন প্রকল্প এবং সড়ক-মহাসড়কের মত অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে সরকারের ব্যয় বাড়ায় জিও টেক্সটাইল পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা 

দেশে জিও টেক্সটাইলের বাজার বড় হওয়ার আশায় এ খাতে বিনিয়োগ বাড়ছে। বর্তমানে সাতটি প্রতিষ্ঠান জিও টেক্সটাইল পণ্য উৎপাদন করলেও নতুন করে বিনিয়োগে এসেছে আরো দুটি প্রতিষ্ঠান। নদীর পাড় রক্ষা কিংবা নদীভাঙ্গন ঠেকাতে নতুন নতুন প্রকল্প এবং সড়ক-মহাসড়কের মত অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে সরকারের ব্যয় বাড়ায় জিও টেক্সটাইল পণ্যের চাহিদাও বাড়ছে। এ চাহিদা ক্রমাগত বাড়ার আশায় নতুন বিনিয়োগ আসছে বলে জানিয়েছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। 

এ খাতে নতুন করে বিনিয়োগ নিয়ে এসেছে কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এবং ওয়েস্টার্ন সুপিরিওর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। এর মধ্যে ওয়েস্টার্ন সুপিরিওর জুট ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড স্বল্প পরিসরে উৎপাদন শুরু করেছে। আর কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড ২০২২ সালের মার্চ নাগাদ উৎপাদনে যাবে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে প্রতিষ্ঠানটি এ লক্ষ্যে জার্মানি ভিত্তিক আউটিফা সলিউশন্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অত্যাধুনিক দুটি মেশিন ক্রয় করছে, যা আগামী মাসে জাহাজীকরণ হওয়ার কথা। প্রতিষ্ঠানটি ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছে।   
কনফিডেন্স ইনফ্রাস্ট্রাকচার লিমিটেড এর প্রধান পরিচালনা কর্মকর্তা (সিওও) শহিদুল ইসলাম টিবিএস'কে বলেন, "২০২২ সালের প্রথম প্রান্তিকে উৎপাদনে যাওয়ার পর আমাদের কারখানায় দৈনিক ৭০-৮০ টন জিওটেক্সটাইলস উৎপন্ন হবে। কারখানায় ৫০০ জনের বেশি মানুষের কর্মসংস্থান হবে।" 

তিনি জানান, প্রাথমিকভাবে দুটি নন-উভেন নিডল পাঞ্চিং জিও-টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারিং প্রোডাকশন লাইন দিয়ে শুরু করলেও ভবিষ্যতে এ বিনিয়োগ দ্বিগুণ করার লক্ষ্য রয়েছে। এজন্য জার্মানি থেকে কেনা দুটি অত্যাধুনিক মেশিন লাইন আগামী মাসেই পাঠানো হবে বলে জানান শহিদুল। 

এদিকে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনার পাইপলাইনে অনেক অবকাঠামো প্রকল্প থাকায় জিওটেক্সটাইলের চাহিদা দিন দিন বাড়বে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের সামনে এ পণ্য রপ্তানির সম্ভাবনাও দেখা যাচ্ছে। 

ওয়েস্টার্ন সুপিরিওর জুট ইন্ডাস্ট্রিজের জ্যেষ্ঠ ব্যবস্থাপক ইঞ্জিনিয়ার আবু হাসনাত বলেন, "আমরা এখন প্রতিদিন ছয় টন জিওটেক্সটাইল উৎপাদন করছি। উৎপাদন বাড়াতে নতুন মেশিন লাইন বসানোর কাজও চলছে। বর্তমানে আমাদের মোট বিনিয়োগ প্রায় ৩০ কোটি টাকা।" 

জিও টেক্সটাইল মূলত নন-উভেন টেক্সটাইল- যা দিয়ে উৎপাদিত জিওব্যাগ, জিওশিট ও জিওইউব দিয়ে নদীরক্ষা বাঁধ, সড়ক অবকাঠামো তৈরি, মেরামত, পাকাকরণসহ যে কোন ধরনের বাঁধ দেওয়ার ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে বহুলভাবে ব্যবহার হয় জিওব্যাগ, যা বড় বড় প্রকল্পের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। 

বিভিন্ন সূত্রমতে, কেবল পদ্মা সেতুর নদী শাসন কাজেই ব্যবহার হয়েছে এক কোটি ৪৭ লাখ জিওব্যাগ ও ৬৮ হাজার জিও টিউব।

এর মূল কাঁচামাল পলি প্রপিলিন ফাইবার বা পিপি ফাইবার ফেব্রিক থেকে তৈরি হয়। ওই ফেব্রিক দিয়ে তৈরি ব্যাগে মাটি বা বালি ভর্তি করে তা দিয়ে বাঁধ নির্মাণসহ অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ করা হয়। এই কাঁচামাল আমদানিনির্ভর। মূলত চীন, ভিয়েতনাম ও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশ থেকে এসব কাঁচামাল আমদানি করতে হয়।  

দেশে জিও টেক্সটাইল খাতে বিনিয়োগের পরিমাণ নিয়ে নির্ভরযোগ্য কোন তথ্য পাওয়া যায়নি। এছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের টার্নওভারের তথ্যও প্রকাশ করতে চায় না। 

তবে খাত সংশ্লিষ্টরা জানান, একটি প্রতিষ্ঠানের বিনিয়োগের পরিমাণ কেমন হবে, তা নির্ভর করছে ওই প্রতিষ্ঠান কেমন মানের মেশিন ব্যবহার করছে, যেমন- নতুন মেশিন না রিকন্ডিশন্ড মেশিন তার ওপর। যেমন একটি রিকন্ডিশন্ড মেশিন দিয়েও উৎপাদন শুরু করা যায়, সেক্ষেত্রে একটি প্রতিষ্ঠানের হয়তো মোট বিনিয়োগের পরিমাণ হতে পারে ৮-১০ কোটি টাকা। 

অন্যদিকে, দেশের সবচেয়ে বড় জিওটেক্সটাইল প্রস্তুতকারক বিজে জিও -টেক্সটাইল লিমিটেড ও ডার্ড ফেল্ট লিমিটেড অন্তত ছয়টি মেশিন লাইন দিয়ে তাদের উৎপাদন কাজ চালাচ্ছে। 

এখাতে অন্তত ৭০০ কোটি টাকা এপর্যন্ত বিনিয়োগ হয়েছে বলে জানায় প্রতিষ্ঠান দুটি। 

আর জিও টেক্সটাইলের বার্ষিক চাহিদা ১ হাজার থেকে ১২০০ কোটি টাকার। ১৯৯৫ সাল থেকে দেশে বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে জিওব্যাগের ব্যবহার শুরু হলেও, পূর্বে ওই চাহিদা মেটানো হতো মূলত মালয়েশিয়া থেকে আমদানির মাধ্যমে। তবে দেশে চাহিদা ক্রমাগত বৃদ্ধির সাথে সাথে নন-উভেন জিওটেক্সটাইলের দেশীয় উৎপাদন শুরু হওয়ার পর আমদানির উপর নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। 

বর্তমানে স্থানীয় চাহিদার প্রায় ৯৫ শতাংশের বেশি দেশের সাতটি কোম্পানির উৎপাদিত জিও টেক্সটাইল পণ্যের মাধ্যমে পূরণ করা সম্ভব হচ্ছে।

আর রেলসহ কিছু কিছু প্রকল্পের কাজে উভেন জিও টেক্সটাইল ব্যবহার হয়, যা দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন করে না। এ ধরনের  জিও টেক্সটাইল আমদানি করতে হয়, যা মোট ব্যবহারের দুই শতাংশের বেশি হবে না বলে অনুমান করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। 

সূত্র জানায়, দেশে প্রথম জিও টেক্সটাইলের বিপণন শুরু করেছিলো ডার্ড গ্রুপ। প্রতিষ্ঠানটির আওতাধীন জিও টেক্সটাইলের আলাদা কোম্পানির নাম ডার্ড ফেল্ট লিমিটেড, যেখানে প্রায় এক হাজার জনের কর্মসংস্থান হয়েছে এবং দৈনিক উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় ৭৫ টন।  

ডার্ড ফেল্ট এর নির্বাহী পরিচালক সৌমিত্র মুৎসুদ্দি টিবিএস'কে বলেন, বাংলাদেশে প্রথম জিও টেক্সটাইলের ব্যবসা শুরু করেছে এ প্রতিষ্ঠান এবং এপর্যন্ত দেশে অন্যতম বৃহৎ প্রতিষ্ঠান এটি। পদ্মা সেতু প্রকল্পের নদী শাসন কাজে ব্যবহার হওয়া বিপুল পরিমাণ জিও ব্যাগ ও জিওটিউবের অর্ধেকই সরবরাহ করেছে। 

'পৃথিবীর সব দেশেই নদী রক্ষা, রিভার ট্রেনিং, বাঁধ নির্মাণ, অবকাঠামো উন্নয়ন কাজে জিওটেক্সটাইলের বহুল ব্যবহার রয়েছে। এর উপকারিতার কথা বিবেচনা করে বাংলাদেশেও আলোচ্য কাজে জিও টেক্সটাইলের ব্যবহার বাড়বে বলে আশা করছি। ফলে দেশে এর বাজারও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে,' বলেন তিনি। 

ডার্ড গ্রুপ এর বার্ষিক টার্নওভার সম্পর্কে তিনি পরিস্কার তথ্য দিতে না পারলেও অপর একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, গত বছর প্রতিষ্ঠানটির টার্নওভার ছিলো ২০০ কোটি টাকার উপরে। আর ২০১৫ সালে তা ছিলো ৩২০ কোটি টাকা। 

অবশ্য এ খাতের বাজারের আকার কিংবা ভবিষ্যত সম্ভাবনা নিয়ে বিপরীতমুখী বক্তব্যও রয়েছে। নাহি জিও টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের একজন ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বর্তমানে জিও টেক্সটাইলের যে বাজারের আকার, তা গত কয়েক বছর ধরে প্রায় একই অবস্থানে রয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে চাহিদা বরং কিছুটা কমেছে। বর্তমানে চাহিদার তুলনায় ক্যাপাসিটি বেশি রয়েছে। এ কারণে প্রতিযোগিতায় টিকতে না পেরে সাতটি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তিনটি খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে। 

'এ পরিস্থিতিতে নতুন করে যারা বিনিয়োগ নিয়ে আসছেন, তাদের এই অংশের মধ্যেই ভাগ বসাতে হবে, ফলে কাউকে না কাউকে হয়তো ঝরে যেতে হবে' - বলেন তিনি। 

অবশ্য এমন বক্তব্যের সঙ্গে একমত নন নতুন বিনিয়োগে আসা প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা। তারা জানান, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ এবং প্রতি বছরই নদী খনন, নদী পাড়ে বাঁধ নির্মাণ, ড্রেজিং ও নদী শাসনের মত কাজ কমবে না বরং বাড়বে। অন্যদিকে সড়কসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন অবকাঠামোর কাজে স্থায়িত্ব বাড়ানোর জন্য দিনে দিনে জিও টেক্সটাইলের ব্যবহার বাড়বে। 

দেশে জিও টেক্সটাইল উৎপাদনকারী হিসেবে শীর্ষে রয়েছে বিজে জিও- টেক্সটাইল লিমিটেড- এর নাম। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বাংলাদেশে এ প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ক্ষমতা এখন সবচেয়ে বেশি। এছাড়া তাদের কারখানায় রয়েছে জিও টেক্সটাইল ব্যাগ উৎপাদনের অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি।   

এর বাইরেও রাহাত জিও-টেক্সটাইল অ্যান্ড সিনথেটিক লিমিটেড, এফজি জিওটেক্সটাইল, অর্কিড জিওটেক্সটাইল ও আরএম জিওটেক্স লিমিটেড বর্তমানে পণ্য উৎপাদন করে বলে জানা গেছে।



বড় ভূমিকম্পেও ভাঙবে না বাঁধ, নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন ( জিও টেক্সটাইল )

বর্তমান বিশ্বে বড় আতঙ্কের নাম ভূমিকম্প। বাংলাদেশও এ আতঙ্কের বাইরে নয়। ভূতাত্ত্বিক ও ভূমির গঠন অনুসারে বাংলাদেশ ভূকম্পনপ্রবণ অঞ্চল। বিগত ২০০ বছরের ইতিহাসে বাংলাদেশে আটটি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। এর মধ্যে ১৮৬৯ সালে সিলেট অঞ্চলে রিখটার স্কেলে সর্বোচ্চ ৭.৬ মাত্রার কম্পন অনুভূত হয়। একই স্থানে গত ৩০ মে সকাল থেকে অন্তত পাঁচবার কম্পন হয়। ৭ জুন সন্ধ্যা ৬টা ২৯ ও ৬টা ৩০ মিনিটে আবারও দুই দফা ভূকম্পন হয়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত বড় কোনো ভূমিকম্পের আগে বা পরে এমন দফায় দফায় মৃদু কম্পন হতে পারে।

বাংলাদেশে যদি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয় তাহলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়ক-মহাসড়কগুলো। যদিও আধুনিক যুগে সুউচ্চ ভবন কিংবা স্থাপত্য নির্মাণে ভূমিকম্প সহনশীল প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু দেশের সড়ক ও মহাসড়ক নির্মাণের ক্ষেত্রে ভূমিকম্পের বিষয়টি এখনও অবহেলিত।

এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশে ভূমিকম্প সহনশীল সড়ক বা মহাসড়ক নির্মাণে নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারি এবং তার ছাত্র প্রকৌশলী রিপন হোড়ের সমন্বয়ে গঠিত গবেষক দল। ২০১৪ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ছয় বছরের গবেষণায় উদ্ভাবিত ‘র‌্যাপ ফেস ইমব্যাংকমেন্ট (wrape face embankment)’ নামের নতুন প্রযুক্তি ব্যবহারে বাঁধ, সড়ক-মহাসড়ক কিংবা রেললাইন বড় মাত্রার ভূমিকম্পেও অক্ষত থাকবে। পাশাপাশি চলমান পদ্ধতিতে নির্মাণের তুলনায় আর্থিক ব্যয় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে আসবে। সবচেয়ে আশার কথা হলো, এ প্রযুক্তি অনেক কৃষিজমি বাঁচিয়ে দেবে। মূলত, আমাদের দেশে নতুন সড়ক-মহাসড়ক নির্মাণে দুই পাশের ব্যাপক কৃষিজমি নষ্ট হয়। ‘র‌্যাপ ফেস ইমব্যাংকমেন্ট’ প্রযুক্তি ব্যবহারে উঁচু বাঁধ বা রাস্তা নির্মাণে দুই পাশের জমির ব্যবহার অনেক কমে যাবে।

ইতোমধ্যে জাপান ও আমেরিকার শক্ত মাটিতে এ ধরনের প্রযুক্তির ব্যবহারে সফলতা মিলেছে। তবে বাংলাদেশের মতো নরম মাটির দেশে এ প্রযুক্তি কার্যকর কি না, তা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তবে রিপন-আনসারি উদ্ভাবিত প্রযুক্তি নরম মাটিতেও বেশ কার্যকর। ইতোমধ্যে ল্যাবরেটরি পরীক্ষায় তা প্রমাণিত হয়েছে।

শুধু তা-ই নয়, তাদের গবেষণার ফলাফলকে তিনটি বিখ্যাত আন্তর্জাতিক জার্নালও স্বীকৃতি দিয়েছে। সেখানে তাদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে। জার্নালগুলো হলো- জিওটেকনিক্যাল অ্যান্ড জিওলজিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব জিওসিন্থেটিকস অ্যান্ড গ্রাউন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ও ট্রান্সপোর্টেশন ইনফ্রাস্ট্রাকচার জিওটেকনোলজি।


র‌্যাপ ফেস ইমব্যাংকমেন্ট (Wrap face embankment) কী?
 
র‌্যাপ ফেস ইমব্যাংকমেন্ট বা মোড়ানো বাঁধ হলো জিও টেক্সটাইল দিয়ে মোড়ানো খাড়া বাঁধ। মোড়ানো বাঁধটি বিভিন্ন জিও টেক্সটাইল দিয়ে প্যাঁচানো থাকে এবং বিভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বালু দ্বারা পূর্ণ থাকে। বাঁধটি খাড়া হবার কারণে প্রচলিত বাঁধের তুলনায় দুপাশের কৃষিজমি অধিগ্রহণ করার প্রয়োজন হয় না। বাঁধটি বানানোর সময় দুই ধরনের যথা ওভেন অথবা ননওভেন জিওটেক্সটাইল ব্যবহার করা হয়। মোড়ানো বাঁধটি মাটির গুণাবলির পারস্পারিক অবস্থা ও ইজিএল’র ওপর নির্ভর করে বিভিন্ন লেয়ারের হয়ে থাকে।
 
সার্বিক বিষয়ে কথা হয় গবেষক দলের প্রধান ও বুয়েট অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারির সঙ্গে । ঢাকা পোস্টকে তিনি বলেন, যদিও আমাদের গবেষণার মূল লক্ষ্য ছিল অধিক মাত্রার ভূমিকম্প সহনশীল বাঁধ বা সড়ক নির্মাণ করা। তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সবচেয়ে বড় আশার কথা হচ্ছে, এ প্রযুক্তি ব্যবহারে ব্যাপক হারে কৃষিজমি রক্ষা পাবে। সরকারকেও ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বড় অঙ্কের অর্থ ব্যয় করতে হবে না। যেমন- ১০ মিটার উঁচু ও ১০ মিটার প্রশস্ত একটি বাঁধ নির্মাণে দুই পাশে দিগুণ ঢাল তৈরি করতে হয়। একপাশে ২০ মিটার ও অন্যপাশে ২০ মিটার জমির প্রয়োজন হয়। সবমিলিয়ে ৫০ মিটার। অর্থাৎ সড়ক কিংবা বাঁধ নির্মাণে পাঁচগুণ জায়গা নষ্ট হয়। কিন্তু এ প্রযুক্তিতে কোনো ঢাল নির্মাণ করতে হয় না। সরাসরি উঁচু সড়ক হয়, তাই দুই পাশের জমি বেঁচে যায়।


বুয়েট অধ্যাপক আরও বলেন, বন্যায় সাধারণ বাঁধ ভেঙে যায় বা ভীষণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কিন্তু এ প্রযুক্তিতে তৈরি করা বাঁধ নির্মাণে জিও টেক্সটাইল ও বালুর সমন্বয়ে বেশ মজবুত কাঠামো ব্যবহার করা হয়। তাই বন্যায়ও ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। এছাড়া বর্তমানে জিও টেক্সটাইল বাংলাদেশে উৎপাদিত হয়। তাই এটি সহজলভ্য বলা যায়।

জিও টেক্সটাইল কী

জিও টেক্সটাইল প্রোডাক্ট মূলত পলিস্টার, পলিপ্রপিলিন, পলিঅ্যামাইড দিয়ে তৈরি হয়। জিও টেক’র সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হয় সিভিল/কনস্ট্রাকশন কাজে। এতে মাটির বৈশিষ্ট্য পরিবর্তন করে দুর্বল ও অকার্যকর জায়গায় ভবন নির্মাণের উপযোগী করে তোলা হয়। আধুনিক সিভিল/কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং-এ বহুল ব্যবহৃত হচ্ছে এ জিও টেক্সটাইল। জিও টেক্সটাইল সাধারণত মাটির বৈশিষ্ট্য উন্নয়নে যেমন- কোনো রাস্তা, বাঁধ, পাইপলাইন এবং মাটিতে বৃহৎ কোনো কাঠামো তৈরিতে ব্যবহার হয়।    

বড় ধরনের ভূমিকম্পে আপনাদের এ প্রযুক্তি কতখানি কার্যকর— জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভূমিকম্পের ফলে যে ঝাঁকুনি হয় তাকে আমরা তীব্রতা বা ইনটেনসিটি বলি। এ প্রযুক্তিতে নির্মাণ করা বাঁধ বা সড়ক ৭ থেকে ৮ তীব্রতার (ইনটেনসিটি) ভূমিকম্পেও অক্ষত থাকবে। সাধারণত যেকোনো মাত্রার ভূমিকম্পে সর্বোচ্চ তীব্রতা ধরা হয় ১২। সেখানে আমাদের গবেষণায় নির্মিত বাঁধ সর্বোচ্চ ৮ তীব্রতার ঝাঁকুনি নিতে সক্ষম। আমাদের ল্যাবরেটরিতে কৃত্রিম ঝাঁকুনি দিয়ে এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।

অধ্যাপক আনসারি আরও বলেন, বাংলাদেশের অধিকাংশ এলাকায় নরম মাটির আধিক্য রয়েছে। আমাদের গবেষণায়ও নরম মাটি ব্যবহার করেছি। সেখানে আমরা প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছি যে, নরম মাটিতে র‌্যাপ ফেস ইমব্যাংকমেন্ট প্রযুক্তি বেশ কার্যকর। ফলে নরম মাটির ওপর বাঁধ কিংবা রেললাইন নির্মাণে শক্ত ভিত তৈরিতে সরকারকে যে ব্যয় করতে হয়, ওটার আর প্রয়োজন হবে না। অর্থাৎ নরম মাটিতেও এ প্রযুক্তি বেশ কার্যকর বলতে পারি। যেমন- বর্তমানে পদ্মা সেতু প্রকল্পে রেললাইন স্থাপনে অধিকাংশ জায়গায় নরম মাটির কারণে প্রচুর টাকা খরচ করতে হচ্ছে সরকারকে। কারণ, নরম মাটিতে ভিত মজবুত করে তারপর স্থাপনা নির্মাণ করতে হয়। পায়রা বন্দরেও স্থাপনা নির্মাণে আমরা একই অবস্থা দেখেছি। এ প্রযুক্তি আমাদের বড় অঙ্কের অর্থ সাশ্রয় করবে।

ব্যয়ের বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চাইলে অপর গবেষক প্রকৌশলী রিপন হোড় ঢাকা পোস্টকে বলেন, ‘আমাদের দেশে অর্ধ কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণে চার কোটি তিন লাখ টাকার মতো অর্থ খরচ হয়। সেখানে র‌্যাপ ফেস ইমব্যাংকমেন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করলে খরচ হবে এক কোটি ৮৬ লাখ টাকার মতো। অর্থাৎ খরচ ৭০ শতাংশ কমে যাচ্ছে।’

রিপন হোড় বর্তমানে এলজিইডি’র প্রধান কার্যালয়ের সিনিয়র সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) থেকে ২০২০ সালে পিএইচডি সম্পন্ন করেন।

রিপন আরও বলেন, “আমার গবেষণার মূল বিষয় ছিল বাংলাদেশের নরম মাটিতে ‘র‌্যাপ ফেস ইমব্যাংকমেন্ট’ ভূমিকম্পে কেমন আচরণ করবে, তার বিশ্লেষণ করা। আমার তত্ত্বাবধায়ক ছিলেন অধ্যাপক ড. মেহেদী আহমেদ আনসারি। ভূমিকম্পের সময় অবকাঠামোর নিচের মাটি কীভাবে আচরণ করবে যা নির্ণয় খুবই চ্যালেঞ্জিং ছিল। এটা আমার গবেষণার বড় প্রাপ্তি। ভূমিকম্পের সময় অবকাঠামোর নিচের মাটির আচরণ আমার গবেষণায় উঠে এসেছে। এটা করার জন্য সেক টেবিল টেস্ট মেশিন ও সংখ্যাগত বিষয় যাচাই করতে প্লাসিক্স থ্রিডি অ্যাপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমাদের উদ্ভাবিত এ প্রযুক্তি যদি ব্যবহার করা যায় তাহলে তিনটা উদ্দেশ্য অর্জিত হবে। প্রথমত, সাধারণ নিয়মে রাস্তা নির্মাণে বড় পরিসরে জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে সরকারের আর্থিক ব্যয় ৬০ থেকে ৭০ শতাংশ কমে যাবে। দ্বিতীয়ত, সারাদেশে রাস্তা নির্মাণের জন্য ব্যাপক কৃষি জমি নষ্ট হয়। এটা থেকে আমাদের মুক্তি মিলবে এবং সর্বশেষ, বাঁধটি ভূমিকম্প সহনশীল হবে। বাংলাদেশ সরকারের তিনটি সংস্থা- এলজিইডি, সড়ক ও জনপথ এবং বাংলাদেশ রেলওয়ে এ প্রযুক্তি ব্যবহার করতে পারবে।

কোন মন্তব্য নেই: