খাদি শিল্প | খাদি কাপড় | Khadi Fabrics - Textile Lab | Textile Learning Blog
খাদি শিল্প কি:
খাদি বা খদ্দর উপমহাদেশের হাজার বছরের ঐতিহ্য। মাটিতে গর্ত বা খাদ খুঁড়ে তাতে স্থাপনা করে এ কাপড় তৈরি করা হয়।

অনেকের মতে, খাদ থেকে তৈরি করা হয় বলে কাপড়ের নাম হয়েছে খাদি। একটি পেশাজীবী সম্প্রদায় তাঁত শিল্পের সাথে তখন জড়িত ছিলেন তাদের কে স্থানীয় ভাষায় বলা যুগী বা দেবনাথ।

ভারত উপমহাদেশে খাদির উৎপত্তি ঘটে প্রায় ৭ হাজার বছর আগে। তৎকালীন বাংলায়ও হাজার বছর আগে থেকেই খাদি শিল্পের প্রমাণ মেলে।

১২শ শতাব্দীতে মার্কো পোলোর লেখায় বাংলার খাদির জৌলুস ফুটে উঠেছে। তিনি লিখেছেন বাংলার খাদি মাকড়সার জালের চেয়েও মিহি। রোমানরাও বাংলার খাদি -মসলিনের ব্যাপক  ভক্ত ছিল। মধ্যযুগের প্রচুর মুসলিম বাংলা থেকে রোমান সাম্রাজ্য রপ্তানি হতো।

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে উপমহাদেশে ইংরেজদের যান্ত্রিক কারখানায় তৈরি কাপড় দাপট বেড়ে যায়। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বহু মানুষের জীবিকার উৎসটি। এ সময় মহাত্মা গান্ধী স্বদেশী আন্দোলনের ডাক দেন।খাদি ছিল স্বদেশী আন্দোলনের প্রধান হাতিয়ার। স্বদেশী আন্দোলনের ডাকে খাদি শিল্পীরা আবারো নতুন উদ্যমে শুরু করেন খাদি উৎপাদন।

বর্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লা অঞ্চলের খাদি মুঘল আমলেও ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে । ১৯২১ সালে গান্ধীজী খাদি শিল্পীদের উৎসাহ দিতে কুমিল্লার চান্দিনায় ভ্রমণে আসেন।

এ সময় ভারত তন্তবায় সীমিত প্রতিষ্ঠিত হয়। সমিতিটি কুমিল্লার খাদি ভারতের বিভিন্ন শহরের রপ্তানি করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।খাদি শিল্প ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রাম নোয়াখালীসহ দেশের আরও কয়েকটি অঞ্চলে। বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা ডক্টর আখতার হামীদ খান এবং রাজনীতিবিদ ফিরোজ খান নুন ও খাদির জন্য ব্যাপক অবদান রেখেছে।

১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘দি খাদি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন’। কিন্তু স্বাধীনতার পর বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও,খাদি সেই পুরনো জৌলুস আর ফেরানো যায়নি ।

কুমিল্লার চান্দিনা,মুরাদনগর ও দেবিদ্বারে এখনো শতাধিক তাঁত টিকে আছে। খাদি শিল্প প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটিকে ধরে রাখার। কিন্তু, আধুনিক যুগের যান্ত্রিক কারখানার সাথে টিকে থাকা দিন দিন অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এছাড়া খাদি তৈরির কাঁচামালের দামও অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে, এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের সরাসরি সহযোগিতা ছাড়া বিকল্প কোন উপায় নেই।

কার্পাস তুলা থেকে তৈরি হতো সুতা এবং সেই সুতা ব্যবহার করে চরকায় তৈরি হতো খাদি কাপড়। উপমহাদেশে খাদি কাপড়ের প্রচলন অনেক আগে থেকেই ছিল।তবে মহাত্মা গান্ধী যখন জনগণকে নিয়ে স্বদেশী আন্দোলন শুরু করেন তখনই এই খাদি কাপড়ের ব্যবহার বাড়তে থাকে।তাই ভারতীয় উপমহাদেশে এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মহাত্মা গান্ধীর কথা বলা হয়।

১৯২০ সালে তিনি প্রথম খাদি কাপড়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং সবার সামনে নিয়ে আসেন স্বদেশী পণ্য কে প্রতিষ্ঠা উদাহরন হিসাবে। মহাত্মা গান্ধীর চেতনাটি ছিল_স্বরাজ প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বদেশী পণ্য কে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবংখাদি কাপড় হতে পারে তার প্রধান উদাহরণ।

১৯২১ সালে কুমিল্লা চান্দিনা অঞ্চলে মহাত্মা গান্ধী আসেন এবং বিদেশী কাপড় ছেড়ে দেশে কাপড় ব্যবহারের সবাইকে আকৃষ্ট করেন। তিনি নিজে খাদি কাপড়ের চরকায় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেন

১৯৩০ সালে ভারতের কুমিল্লার (বর্তমান চান্দিনা) কাটা চরকায় সুতা ও তকলীতে কাপড় তৈরির কাজ চলতো নিখিল ভারত কার্টুর্নি পরিচালনার মাধ্যমে।  ডায়িং মাষ্টার হিসেবে কাজ করতেন শৈলেন্দ্র নাথ গুহ ।তার গ্রামের বাড়ি ছিল চট্টগ্রাম জেলায়।ঐ সময় তিনি অনেক গুরুত্ব ভূমিকা রাখেন খাদি শিল্প জন্য।

খাদি কাপড়ের আদি ঠিকানা হলো কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলায়।প্রায় এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া, কলাগাও, কুটুম্বপুর, গোবিন্দপুর, হাড়িখোলা, ভোমরকান্দি, বানিয়াচং, হারং, ছয়ঘরিয়া, বেলাশ্বর, মধ্যমতলা ও দেবিদ্বার,ভানী, ইত্যাদি গ্রাম খাদি কাপড়ের জন্য বিখ্যাত।

স্বদেশী আন্দোলন ও খাদির সম্পর্ক:

তখনকার ইংরেজ শাসন মালের সময় পুরো উপমহাদেশজুড়ে ইংরেজদের পণ্য বাজার অনেক দাপট ছিল। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে উপমহাদেশের ইংরেজদের যান্ত্রিক কারখানার কাপড় তৈরি পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন হারিয়ে যাচ্ছিল বহু মানুষের জীবিকার আয়ের উৎসটি। ঐই সময়ে মহাত্মা গান্ধী স্বদেশী আন্দোলনের ডাক দেন।

খাদি ছিল স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার স্বদেশী আন্দোলনের ডাকে খাদি শিল্পীরা প্রাণ ফিরে পায় এবং নতুন উদ্যমে শুরু করে খাদি উৎপাদন। বিদেশি পণ্য কেনা বাদ দিয়ে দেশি পণ্য ব্যবহারে আকৃষ্ট হলো। তখন মানুষ নিজেদের পোশাকের গুরুত্ব বাড়লো। খাদি কাপড় ও তার ব্যবহার শুরু করল।

খাদি আন্দোলন কী ?

উপমহাদেশে খাদি কাপড়ের প্রচলন অনেক আগে থেকে থাকলেও এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মহাত্মা গান্ধীর কথাই বলা হয় প্রথমে! কারণ ১৯২০ সালে তিনিই প্রথম স্বদেশী পণ্যকে প্রতিষ্ঠার উদাহরণ হিসেবে খাদি কাপড়কে নিয়ে আসেন সবার সামনে এবং এর গুরুত্ব তুলে ধরেন। 'স্বরাজ' প্রতিষ্ঠার জন্য স্বদেশী পণ্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং খাদি কাপড় হতে পারে এর অন্যতম উদাহরণ- এ চেতনাকেই জাগ্রত করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। এ কারণেই স্বদেশী আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত খাদি কাপড়। ১৯২১ সালে মহাত্মা কুমিল্লার চান্দিনা অঞ্চলে আসেন এবং বিদেশী কাপড় ছেড়ে দেশী কাপড় ব্যবহারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি নিজে চরকার ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণও দেন!

১৭শ শতাব্দীর দিকে ত্রিপুরা রাজ্যে খাদি কাপড় বোনাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিল প্রচুর লোক। বাংলাদেশের মধ্যে কুমিল্লা খাদি কাপড়ের জন্য বিখ্যাত জায়গা। ময়নামতি, চান্দিনা, গৌরিপুরসহ বেশ কিছু জায়গায় খাদি বুননের কাজ চলত। রঙিন খাদি কাপড়ের লুঙ্গি, শাড়ি, গামছা সেসময় ময়নামতিতে তৈরি হতো এবং দুই থেকে পাঁচ টাকার মধ্যে সেগুলো কিনতে পাওয়া যেত।

খাদি শিল্পের বর্তমান অবস্থা:

কুমিল্লা জেলার সাথে খাদিশিল্প আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। একসময় এই খাদির খুব প্রচলন ছিল। কুমিল্লায় আগে গান্ধী অভয়াশ্রমে এ খাদি তৈরি হতো। কুমিল্লা শহরের চান্দিনা উপজেলায় এখনও গান্ধীজীর স্মৃতিবিজড়িত তাঁত রয়েছে।

বর্তমানে কুমিল্লার খাদি পণ্যের বিক্রয় কেন্দ্র গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে খাদি কটেজ, খাদি হাউস, গ্রামীণ খাদি, খাদি আড়ৎ ইত্যাদি খুবই জনপ্রিয়।

খাদি কাপড়ের কোয়ালিটি অনেক ভিন্নতা রয়েছে। যেমন পাতলা মোটা চেক এবং বিভিন্ন রঙের গজ কাপড় পাওয়া যায়।খাদি কাপড়ের প্রতি গজ ৮০ থেকে ১৫০ টাকা মূল্যে আনুমানিকভাবে ধারণা করা যায়।এছাড়াও রয়েছে খাদির সাল রুমাল বেডকভার ওরনা থ্রীপিজ এবং শাড়ি ও পাওয়া যায়

বর্তমানে আমাদের দেশে খাদির পূর্বের মতো বিশুদ্ধ বৈশিষ্ট্য নেই। সেখানে খাদ ঢুকেছে। বর্তমানে যে খাদি কাপড় তৈরি হয়ে থাকে সেই কাপড়ে রয়েছে মিল এবং হাতে কাটা সুতার সমন্বয়। এখানে টানাতে ব্যবহৃত হয় মিলের সুতা।

পরিতাপের বিষয়, এত বছর পরও এ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। কারণ কাপড়ে খাদি সুতার পরিমাণ আরও কমেছে; মিলের সুতার পরিমাণ বেড়েছে।

 উপরন্তু মিলেরই এক ধরনের সুতা তৈরি হচ্ছে। ওই সুতা দিয়ে তৈরি কাপড় একেবারে খাদি কাপড়ের টেক্সচারের মতো। একে বলা হচ্ছে ‘নিব’। ফলে বাজারে এটাকেই খাদি বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা সাধারন ক্রেতার জন্য বুঝা কঠিন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের দেশে খাদি নিয়ে কাজ হচ্ছে না।

খাদি শিল্পে পরিবর্তন ও আধুনিকতার ছোঁয়া:

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদির এসেছে অনেক পরিবর্তন। এ প্রসঙ্গে আসার আগে খাদি বা খদ্দরের মৌলিক কিছু বিষয়ের জানা প্রয়োজন রয়েছে।

খাদি কাপড়ের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য হলো হাতে কাটা সুতা দিয়ে হাতে বোনা কাপড়।এই বুনন কেবল সুতি সুতায় নয়। হতে পারে এবং হয়ও রেশম, অ্যান্ডি, মুগা, তসর, উল প্রভৃতিতে। অবশ্য হ্যান্ড স্পান সুতাই কেবল নয়, থাই স্পান সুতাও হতে পারে খদ্দরের উপকরণ। পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ খাদি খুব প্রচলন রয়েছে আছে । সেখানে দেখা মিলবে বিভিন্ন ধরনের খাদি যেমন উল,সিল্ক সুতির মতো। 
আবার আমাদের এ অঞ্চলের খাদি সুতি ও রেশমি। আমাদের এখানে খাদি সিল্ক বলতে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এন্ডিকে বলা হয় খাদি সিল্ক। আসলে তা নয়।

অবশ্য আগে বিভিন্ন সুতা দিয়ে তৈরির কথা বলেছি; সেটাও এক ধরনের ব্লেন্ডিং। অবশ্য এই ব্লেন্ডিংটা অন্য রকম। এখানে এক বা একাধিক তন্তুকে মিশ্রিত করে একেবারে নতুন তুলায় পরিণত করে।সেই তুলা থেকে সুতা কাটা হচ্ছে। আর সেই মিশ্রিত সুতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে খাদি মেটেরিয়াল।আর এই মিশ্রিত সুতাতে অনেক নানা ধরনের পরিবর্তন রয়েছে।

ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এখন বেশ আধুনিক কিছু ডিজাইনে খাদি কাপড় বানানো হচ্ছে। খাদি শিল্পে নতুন কিছু আধুনিকতা ও পরিবর্তনের এসেছে। সাদামাটা রঙের খাদি কাপড় এখন বিভিন্ন রঙে ছাপা হচ্ছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজগুলোতে অনেক চাহিদা বেড়েছে খাদি কাপড়ের পোশাক। বিশ্বের উন্নত কিছু  দেশগুলোতে খাদি কাপড়ের তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে।

খাদি শিল্পে সমস্যা ও তা উত্তরনের উপায়:

বর্তমানে খাদির কাপড়ের যথেষ্ট চাহিদা না থাকলেও দেশে এবং বিদেশে অল্প অল্প খাদি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই পণ্য রপ্তানি হয়। বর্তমানে এই শিল্প টিকে থাকলেও ভবিষ্যতে এর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

১)  তুলার অপর্যাপ্ততা। খাদি কাপড় বুনতে ন্যাচারাল ফাইবার প্রয়োজন হয় যা আমাদের দেশে বিদেশ হতে আমদানি করতে হয়। অর্থাৎ আমাদের দেশে যারা খাদি কাপড় বানায় তারা সহজে সুতা পাচ্ছে না। এটা সহজলভ্য করতে হবে।

২) বর্তমানে হরেক রকমের বাহারী ডিজাইনের ভিড়ে খাদির  চাহিদার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বর্তমানে মেশিনের সাথে পাল্লা দিয়ে হস্তচালিত তাঁত দ্বারা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যতে এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে বছরে অন্তত কিছু না কিছু খাদি বা খদ্দরের জামা সকলের কেনা প্রয়োজন। এতে করে খাদি কাপড়ের চাহিদা ও যোগান বাড়তে থাকবে দিন দিন।

৩) খাদি কাপড় আমাদের দেশীয় শিল্প। অথচ পরিতাপের বিষয়, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই এটা সম্পর্কে নূন্যতম ধারনাটুকুও নেই। তাই, এই খাদি কাপড়ের ব্যাবহার বাড়াতে এটাকে তরুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।

৪) আমাদের দেশের এই শিল্পকে বিশ্ব সকলের সামনে   তুলে ধরতে হবে। বছরে অন্তত দুইটি প্রদর্শনী বা মেলার আয়োজন করতে হবে যা হবে পুরোটা খাদি শিল্প কেন্দ্রিক। এতে করে এর প্রচার ও প্রসার ঘটবে।

৫) দেশীয় বাজারে বিদেশী কাপড় বিশেষ করে ভারতীয় কাপড়ের অবাধ ব্যাবসা রোধ করতে হবে। এতে যেমন আমাদের দেশীয় কুটির পোশাক শিল্প এগিয়ে যাবে তেমনি খাদি শিল্পেরও প্রসার ঘটবে। কর্মসংস্থান এর সুযোগ ও তৈরি হবে।

৬) বর্তমানে খাদি কাপড় বানানোর কারিগরের সংকট পরিলক্ষিত। স্বল্প পরিসরে হলেও সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে খাদি কাপড় বানানোর প্রশিক্ষনের ব্যাবস্থা করতে হবে।

৭) বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এর দায়িত্বে  দেশে খাদির উন্নয়নে সঠিকভাবে পণ্য উন্নয়ন, বাজারজাতকরণ এবং প্রমোশন করতে পারত, সেই প্রতিষ্ঠানই হলো। এছাড়াও সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে এলে খাদি কাপড় সংশ্লিষ্ট  এই সমস্যাগুলো সমাধান সম্ভব।

খাদি আমাদের দেশীয় শিল্প। এর সাথে জড়িয়ে আছে আছে বাঙালীর শত বছরের আবেগ। বিদেশী সংস্কৃতির  আগ্রাসনে আমাদের নিজ দেশীয় এই শিল্প ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। সরকারের উচিত এই শিল্পের প্রতি সুনজর দেয়া।

কুমিল্লার খাদি, ইতিহাস ও সংকটঃ

কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ের রামঘাটলায় গেলেই দুপাশে দেখা মিলবে খাদি বা খদ্দর শিল্পের অনেকগুলো বিক্রয়কেন্দ্র। এছাড়া নগরীর খন্দকার প্লাজার পাশেও বেশ কয়েকটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। জেলার চান্দিনা উপজেলায় রয়েছে বেশ কিছু খাদি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। কুমিল্লার একটি অন্যতম ঐতিহ্য এই খাদি বা খদ্দর শিল্প।

জেনে নেওয়া যাক খাদি শিল্প সম্পর্কেঃ 

প্রাচীনকাল থেকে এই উপমহাদেশে হস্তচালিত তাঁত শিল্প ছিল জগদ্বিখ্যাত। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সবসময় এই তাঁতের কাপড় বিদেশেও রপ্তানি হতো। একটি পেশাজীবী সম্প্রদায় তাঁত শিল্পের সাথে তখন জড়িত ছিলেন; তাদেরকে স্থানীয় ভাষায় বলা হতো ‘যুগী’ বা ‘দেবনাথ’।

চরকায় বোনা খাদির সুতাঃ 
 
খাদির দ্রুত চাহিদার কারণে দ্রুত তাঁত চালানোর জন্য পায়ে চালিত প্যাডেলের নিচে মাটিতে গর্ত করা হতো। এই গর্ত বা খাদ থেকে যে কাপড় উৎপন্ন হতো সেই কাপড় খাদি। এভাবে খাদি নামের উৎপত্তি। ক্রমান্বয়ে এই কাপড় খাদি বা খদ্দর নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে।

কুমিল্লার খাদি যেভাবে পরিচিতি পায়ঃ

ইতিহাস বলছে, ব্রিটিশ ভারতে ১৯২১ সালের দিকে গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনের সময়কালে ঐতিহাসিক কারণে এ অঞ্চলে খাদি শিল্প দ্রুত বিস্তার লাভ ও জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তখন খাদি কাপড় তৈরি হতো রাঙ্গামাটির তুলা থেকে। জেলার চান্দিনা, দেবিদ্বার, বুড়িচং ও সদর থানায় সে সময় বাস করত প্রচুর যুগী বা দেবনাথ পরিবার। বিদেশি বস্ত্র বর্জনে গান্ধীজীর আহ্বানে সে সময় কুমিল্লায় ব্যাপক সাড়া জাগে এবং খাদি বস্ত্র উৎপাদনও বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে কুমিল্লার খাদি বস্ত্র। এই বস্ত্র জনপ্রিয়তা পায় কুমিল্লার খাদি হিসাবে।

গান্ধীজীর প্রতিষ্ঠিত অভয় আশ্রম খাদি শিল্পের প্রসারে ভূমিকা রাখেঃ 
 
গান্ধীজীর প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লার অভয় আশ্রম খাদি শিল্প প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনুশীলন চক্রের আশ্রয়স্থল হিসেবে ছদ্মবরণে প্রতিষ্ঠিত সমাজ কল্যাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভয় আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদেশি কাপড় বর্জনের ডাকে যখন ব্যাপক হারে চরকায় সুতা কাটা শুরু হয়। অভয় আশ্রম তখন সুলভে আশ্রমে তৈরি চরকা বাজারে বিক্রির পাশাপাশি নিজেরাও তৈরি করতে থাকে খাদি বস্ত্র। বিভিন্ন গ্রামে তৈরি খাদি বস্ত্রও এ সময় অভয় আশ্রমের মাধ্যমে বাজারজাত করতে শুরু করে।

খাদি কাপড়ের তৎকালীন মূল্য যেমন ছিলঃ

জানা যায়, ১৯২৬-২৭ সালে একটি ৮ হাত লম্বা ধূতি বিক্রি হতো মাত্র পাঁচসিকে দামে। সে সময় কুমিল্লা অভয় আশ্রম প্রায় ৯ লাখ টাকা মূল্যের খাদি কাপড় বিক্রি করেছিল। প্রয়াত রবীন্দ্রসংগীত বিশারদ, অভয় আশ্রমের একজন কর্মী পরিমল দত্তের লেখা থেকে জানা যায়, বিপুল চাহিদা থাকলেও অভয় আশ্রম থেকে সে চাহিদা সম্পূর্ণভাবে পূরণ হতো না।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে খাদি শিল্পের অবস্থাঃ

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় খাদি শিল্পের ছিল স্বর্ণযুগ। এর পরপরই আসে সংকটকাল। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বস্ত্রকলগুলো তখন বন্ধ। বস্ত্র চাহিদা মেটাতে আমদানি নির্ভর দেশে হস্তচালিত তাঁতের কাপড়ের ওপর প্রচুর চাপ পড়ে। দেশের বা মানুষের চাহিদার তুলনায় খাদির উৎপাদন ব্যাপক না হলেও চান্দিনা বাজারকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামগুলোতে তাঁতীরা চাদর, পর্দার কাপড়, পরার কাপড় তৈরি করতে শুরু করে।

খাদি আছে যুগযোপযোগী রূপেওঃ 
 
স্বাধীনতার আগে খাদির চাহিদা শীত বস্ত্র হিসেবেও ব্যাপক ছিল। খাদি বস্ত্রের চাহিদের সুযোগে এ অঞ্চলের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি অতীত সরকারের দেওয়া সুতা, রঙের লাইসেন্স গ্রহণের সুবাদে মুনাফা লুটে নেয় মধ্যস্বত্ব ভোগী হিসেবে। সুলভ মূল্যে সুতা ও রঙের অভাবে প্রকৃত তাঁতীরা সে সময় তাঁত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।

খাদির বর্তমান অবস্থাঃ

কুমিল্লা জেলার সাথে খাদিশিল্প আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। একসময় এই খাদির খুব প্রচলন ছিল। কুমিল্লায় আগে গান্ধী অভয়াশ্রমে এ খাদি তৈরি হতো। কুমিল্লা শহরের চান্দিনা উপজেলায় এখনও গান্ধীজীর স্মৃতিবিজড়িত তাঁত রয়েছে। বর্তমানে কুমিল্লার খাদিপণ্যের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ‘খাদি কটেজ’, ‘পূর্বাশা গিফট এন্ড খাদি’, ‘খাদি হাউজ’, ‘খাদি আড়ং’, ‘গ্রামীণ খাদি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

কুমিল্লা জেলার সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে খাদিঃ 
 
যা বললেন চান্দিনার ‘গ্রামীণ খাদি’র মালিক
কুমিল্লা জেলার চান্দিনায় অবস্থিত ‘গ্রামীণ খাদি’র সত্ত্বাধিকারী অরুণ গুহর সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে খাদির কাপড়ের যথেষ্ট চাহিদা না থাকলেও দেশে এবং বিদেশে ছোট-ছোট লটে খাদি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই পণ্য রপ্তানি হয়। বর্তমানে এই শিল্প টিকে থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে এর অস্তিত্ব নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তুলার অপর্যাপ্ততা এবং চাহিদার সীমাবদ্ধতা। বর্তমানে মেশিনের সাথে পাল্লা দিয়ে হস্তচালিত তাঁত দ্বারা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যতে এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে বছরে অন্তত একটি করে হলেও খাদি বা খদ্দরের জামা সকলের কেনা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

এছাড়াও সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে এলে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক কুমিল্লার খাদি শিল্পের একাল সেকালঃ

কুমিল্লাতেই আমার জন্ম ৷ ছোট কাল থেকেই এই জেলার বিখ্যাত অনেক কিছুর সাথেই পরিচিত হয়েছি ৷ কুমিল্লার বিখ্যাত রসমালাই, দর্শনীয় স্থান, নজরুলের বাড়ি, খাদি শিল্প, তাদের মধ্যে অন্যতম ৷হঠাৎ করে ফেইসবুকে চোখে পড়লো খাদি বাজার নামে একটি অনলাইন শপ যারা কিনা কুমিল্লার খাদি পণ্য অনলাইনে বিক্রয়ের উদ্যেগ নিয়েছে ৷ উদ্যেগটা বেশ ইউনিক মনে হলো ৷ সেই থেকে ভাবলাম একটু খাদির ইতিহাসটা তুলেই ধরি ৷

প্রাচীনকাল থেকেই এ উপমহাদেশের হস্তচালিত তাঁত শিল্প জগদবিখ্যাত ছিল। ঢাকাই মসলিনের মতো বিখ্যাত ছিল কুমিল্লার খাদি। তখন খাদি কাপড় বিদেশেও রপ্তানি হতো। এখনও হয় তবে যৎসামান্য। বর্তমানে খাদির বেডসিট, ব্লক করা থ্রীপিস, পাঞ্জাবী, ইত্যাদি ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বর্তমানে যে কাপড় খাদি নামে পরিচিত প্রথমে এটি অন্য নামে পরিচিত ছিল। কেননা খাদি কোন কাপড়ের নামও নয় সুতার নামও নয়। দেশীয় কাপড় হিসেবে এ ধরনের কাপড়ের চাহিদা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় পায়ে চালিত প্যাডেলের নীচে মাটিতে খাঁদ বা গর্ত করা হতো। এই গর্ত বা খাঁদ থেকে যে কাপড় উৎপন্ন হতো তাকেই খাদি কাপড় বলা হতো। এখন মেশিনে তৈরি এ ধরণের কাপড় ও খাদি কাপড় নামে পরিচিত। খাদি শিল্পের বিকাশে চান্দিনার শৈলেন গুহ ও তার ছেলে বিজন গুহ চান্দিনাতে আখতার হামিদ খান প্রতিষ্ঠিত”দি খাদি কো অপারেটিভ এসোসিয়েশন লিমিটেডে”র হাল ধরেন। ১৯৬৫-৬৮ সালে আখতার হামিদ খানের চেষ্টায় ভাল মানের তুলা পাওয়া যেত। ভাল তুলার অভাবে পরে উন্নতমানের খাদি তৈরি অসম্ভব হয়ে পড়ে। বর্তমানে খদ্দরের উন্নয়নে কাজ করছেন তার ছেলে অরুন গুহ। খদ্দরের উজ্জ্বলতা নেই। বাহ্যিক চাকচিক্য নেই। আছে স্বদেশ প্রেমের পরিচয়। সরকারর পৃষ্ঠ পোষকতার অভাবে খাদি শিল্প মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছেনা। খাদি নিয়ে শৈলেন গুহের বরাবরই আকুতি ছিল। তা হলো আপনারা এই খদ্দর কাপড় ব্যবহার করে খদ্দর শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখুন। সেটাই করে চলছেন অরুন গুহ।

স্বদেশী আন্দোলনের সসময় খাদি কাপড়ের চাহিদা অসম্ভব ভাবে বেড়ে যায়। তখন মানুষ বিদেশী পন্য বর্জন করে দেশীয় কাপড়ের প্রতি আর্কষ্ট হয়। বিশেষ করে মহাত্মা গান্ধীর অনুপ্রেরণায় কুমিল্লার খাদির বাজার আরো প্রসারিত হয়। চান্দিনায় মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত একটি তাঁত এখনও রয়েছে। আদি খাদি তৈরি করা হতো রাঙ্গামাটির তুলা দিয়ে। আর এখন তৈরি হয় তুলা এবং মেশিনে তৈরি সুতার মিশ্রণে। কুমিল্লা সদর, চান্দিনা, দেবিদ্ধার ও মুরাদনগরের হাজার হাজার তাঁতী এ শিল্পের প্রসারে কাজ করছে। বর্তমানে অল্প কিছু তাঁতী কোন রকমে তাদের পেশা টিকিয়ে রেখেছে। চান্দিনার বারেরা , নূরীতলা ও কলাগাঁওয়ে কিছু কিছু পরিবার তুলা থেকে সুতা বানানোর কাজ করে। খাদি শিল্পীরা ওদের নিকট থেকে সুতা কিনে খাদি তৈরি করে। তবে বর্তমানে শুধু তুলার সুতা দিয়ে খাদি উৎপাদিত হয়না। খাদি সুতার সাথে নারায়নগঞ্জ থেকে সুতা এনে সেই সুতার মিশ্রনে কারিগররা খাদি তৈরি করছে। ফলে খাদির আদি রুপ বদলে গিয়েছে এবং খাদি কাপড় পরে আগের মতো আরাম পাওয়া যায় না।

বর্তমানে দেবিদ্ধার , মুরাদনগর ও চান্দিনার তাঁতীরা কাপড় বুনায় ব্যস্ত। দেবিদ্ধারের বরকামতায় শ্রীনিবাসের ২টি , মতিলাল দেবনাথের ১টি , রনজিত দেবনাথের ৭টি ভুবন দেবনাথের ১টি, চিন্তা হরণ দেবনাথের ২টি তাঁত ছিল। বর্তমানে ভুবন দেবনাথের ১টি রনজিত দেবনাথের ৫টি চিন্তা হরণ দেবনাথের ২টি তাঁত রয়েছে। বাকীগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। কারিগড়দের পাশাপশি তাদের ছেলে -মেয়ে –বউরাও কাজ করে। কিভাবে খাদি তৈরি হয়? এ প্রশ্নের জবাবে মতিলালের বউ বল্লেন-৬০ কেজি ওজনের একেকটি গাইট এনে ভাত বা ময়দার মার দিয়ে ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে রোদে শুকিয়ে ঝরঝরা করা হয়। তারপর আরো কয়েকেটি ধাপ পেড়িয়ে গজ কাপড় উৎপাদিত হয়। বর্তমানে খাদি তৈরির সুতাসহ সব ধরণের সুতার দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দেবিদ্ধারের তাঁত শিল্প হুমকির সম্মুখিন। জানা গেছে দুই/তিন সপ্তাহের ব্যবধানে তাঁতের তেনা তৈরিতে ব্যবহৃত ৮২/১ পোড়ন সুতা বেল প্রতি ১ লাখ টাকার পরিবর্তে ১ লাখ ১২ হাজার টাকা , ৭৪/১ সুতা বেলপ্রতি ৯৮ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ লাখ ১৪ হাজার টাকট। ৬২/১ সুতা বেল ৯৪ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ লাখ ৪ হাজার টাকা। ৫৪/১ সুতা বেল প্রতি ৮৮ হাজার টাকার পরিবর্তে ৯৬ হাজার টাকা , ৪০/১ সুতা বেল প্রতি ৭০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৮৪ হাজার টাকায় বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ঈদ একই সময়ের ব্যবধানে ৮০ এর কুন সুতা পাউন্ড প্রতি ২৩০ টাকার স্থলে ২৬০ টাকা , ৬০ এর কুন সুতা পাউন্ড প্রতি ২২৫ টাকার স্থলে ২৬০ টাকা , ৫০ এর কুন সুতা ১৭১ টাকা পাউন্ড এর সবথলে ১৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে । এছাড়া ৩২ সুতা বন্ডিলের দাম ৬ শ টাকা থেকে ১৪ শ টাকা এবং রেলিং সুতা ৪০০টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১শ টাাকা করা হয়েছে। বর্তমানে বরকামতার চাদর , লুঙ্গি , থান কাপড় , ইতাদি তৈরি হয়। রনজিত দেবনাথের বাবা শশীমোহন দেবনাথ সাইতলায় ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ৭০/৭৫ বছর ধরে এ ব্যবসা চলছে। তিনি জানান-স্বাধীনতার পর পর এ ব্যবসার স্বর্ণ যুগ ছিল। মুরাদনগরের জাহাপুর , ইসলামপুর , বাখরনগরসহ সকল তাঁতীরা চায় এব্যবসার সুদিন আবার ফিরে আসুক। কিন্তু কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিও কারেণে স্বল্পপঁজির উৎপাদনকারীরা ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খাদিপাড়া আবার জেগে উঠবে।


সোর্সঃ 
Barta24 24x7 
somewhere in net ltd.

খাদি শিল্প | খাদি কাপড় | Khadi Fabrics

খাদি শিল্প কি:
খাদি বা খদ্দর উপমহাদেশের হাজার বছরের ঐতিহ্য। মাটিতে গর্ত বা খাদ খুঁড়ে তাতে স্থাপনা করে এ কাপড় তৈরি করা হয়।

অনেকের মতে, খাদ থেকে তৈরি করা হয় বলে কাপড়ের নাম হয়েছে খাদি। একটি পেশাজীবী সম্প্রদায় তাঁত শিল্পের সাথে তখন জড়িত ছিলেন তাদের কে স্থানীয় ভাষায় বলা যুগী বা দেবনাথ।

ভারত উপমহাদেশে খাদির উৎপত্তি ঘটে প্রায় ৭ হাজার বছর আগে। তৎকালীন বাংলায়ও হাজার বছর আগে থেকেই খাদি শিল্পের প্রমাণ মেলে।

১২শ শতাব্দীতে মার্কো পোলোর লেখায় বাংলার খাদির জৌলুস ফুটে উঠেছে। তিনি লিখেছেন বাংলার খাদি মাকড়সার জালের চেয়েও মিহি। রোমানরাও বাংলার খাদি -মসলিনের ব্যাপক  ভক্ত ছিল। মধ্যযুগের প্রচুর মুসলিম বাংলা থেকে রোমান সাম্রাজ্য রপ্তানি হতো।

বিংশ শতাব্দীর শুরুতে উপমহাদেশে ইংরেজদের যান্ত্রিক কারখানায় তৈরি কাপড় দাপট বেড়ে যায়। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বহু মানুষের জীবিকার উৎসটি। এ সময় মহাত্মা গান্ধী স্বদেশী আন্দোলনের ডাক দেন।খাদি ছিল স্বদেশী আন্দোলনের প্রধান হাতিয়ার। স্বদেশী আন্দোলনের ডাকে খাদি শিল্পীরা আবারো নতুন উদ্যমে শুরু করেন খাদি উৎপাদন।

বর্তমান বাংলাদেশের কুমিল্লা অঞ্চলের খাদি মুঘল আমলেও ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে । ১৯২১ সালে গান্ধীজী খাদি শিল্পীদের উৎসাহ দিতে কুমিল্লার চান্দিনায় ভ্রমণে আসেন।

এ সময় ভারত তন্তবায় সীমিত প্রতিষ্ঠিত হয়। সমিতিটি কুমিল্লার খাদি ভারতের বিভিন্ন শহরের রপ্তানি করতে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে।খাদি শিল্প ছড়িয়ে পড়ে চট্টগ্রাম নোয়াখালীসহ দেশের আরও কয়েকটি অঞ্চলে। বোর্ডের প্রতিষ্ঠাতা ডক্টর আখতার হামীদ খান এবং রাজনীতিবিদ ফিরোজ খান নুন ও খাদির জন্য ব্যাপক অবদান রেখেছে।

১৯৫২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘দি খাদি অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ এসোসিয়েশন’। কিন্তু স্বাধীনতার পর বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হলেও,খাদি সেই পুরনো জৌলুস আর ফেরানো যায়নি ।

কুমিল্লার চান্দিনা,মুরাদনগর ও দেবিদ্বারে এখনো শতাধিক তাঁত টিকে আছে। খাদি শিল্প প্রাণপণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, এই ঐতিহ্যবাহী শিল্পটিকে ধরে রাখার। কিন্তু, আধুনিক যুগের যান্ত্রিক কারখানার সাথে টিকে থাকা দিন দিন অসম্ভব হয়ে পড়ছে। এছাড়া খাদি তৈরির কাঁচামালের দামও অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে, এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারের সরাসরি সহযোগিতা ছাড়া বিকল্প কোন উপায় নেই।

কার্পাস তুলা থেকে তৈরি হতো সুতা এবং সেই সুতা ব্যবহার করে চরকায় তৈরি হতো খাদি কাপড়। উপমহাদেশে খাদি কাপড়ের প্রচলন অনেক আগে থেকেই ছিল।তবে মহাত্মা গান্ধী যখন জনগণকে নিয়ে স্বদেশী আন্দোলন শুরু করেন তখনই এই খাদি কাপড়ের ব্যবহার বাড়তে থাকে।তাই ভারতীয় উপমহাদেশে এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মহাত্মা গান্ধীর কথা বলা হয়।

১৯২০ সালে তিনি প্রথম খাদি কাপড়ের গুরুত্ব তুলে ধরেন এবং সবার সামনে নিয়ে আসেন স্বদেশী পণ্য কে প্রতিষ্ঠা উদাহরন হিসাবে। মহাত্মা গান্ধীর চেতনাটি ছিল_স্বরাজ প্রতিষ্ঠানের জন্য স্বদেশী পণ্য কে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবংখাদি কাপড় হতে পারে তার প্রধান উদাহরণ।

১৯২১ সালে কুমিল্লা চান্দিনা অঞ্চলে মহাত্মা গান্ধী আসেন এবং বিদেশী কাপড় ছেড়ে দেশে কাপড় ব্যবহারের সবাইকে আকৃষ্ট করেন। তিনি নিজে খাদি কাপড়ের চরকায় সম্পর্কে প্রশিক্ষণ দেন

১৯৩০ সালে ভারতের কুমিল্লার (বর্তমান চান্দিনা) কাটা চরকায় সুতা ও তকলীতে কাপড় তৈরির কাজ চলতো নিখিল ভারত কার্টুর্নি পরিচালনার মাধ্যমে।  ডায়িং মাষ্টার হিসেবে কাজ করতেন শৈলেন্দ্র নাথ গুহ ।তার গ্রামের বাড়ি ছিল চট্টগ্রাম জেলায়।ঐ সময় তিনি অনেক গুরুত্ব ভূমিকা রাখেন খাদি শিল্প জন্য।

খাদি কাপড়ের আদি ঠিকানা হলো কুমিল্লা জেলার চান্দিনা উপজেলায়।প্রায় এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার মাধাইয়া, কলাগাও, কুটুম্বপুর, গোবিন্দপুর, হাড়িখোলা, ভোমরকান্দি, বানিয়াচং, হারং, ছয়ঘরিয়া, বেলাশ্বর, মধ্যমতলা ও দেবিদ্বার,ভানী, ইত্যাদি গ্রাম খাদি কাপড়ের জন্য বিখ্যাত।

স্বদেশী আন্দোলন ও খাদির সম্পর্ক:

তখনকার ইংরেজ শাসন মালের সময় পুরো উপমহাদেশজুড়ে ইংরেজদের পণ্য বাজার অনেক দাপট ছিল। বিংশ শতাব্দীর শুরুতে উপমহাদেশের ইংরেজদের যান্ত্রিক কারখানার কাপড় তৈরি পরিমাণ বেড়ে যায়। তখন হারিয়ে যাচ্ছিল বহু মানুষের জীবিকার আয়ের উৎসটি। ঐই সময়ে মহাত্মা গান্ধী স্বদেশী আন্দোলনের ডাক দেন।

খাদি ছিল স্বদেশী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান হাতিয়ার স্বদেশী আন্দোলনের ডাকে খাদি শিল্পীরা প্রাণ ফিরে পায় এবং নতুন উদ্যমে শুরু করে খাদি উৎপাদন। বিদেশি পণ্য কেনা বাদ দিয়ে দেশি পণ্য ব্যবহারে আকৃষ্ট হলো। তখন মানুষ নিজেদের পোশাকের গুরুত্ব বাড়লো। খাদি কাপড় ও তার ব্যবহার শুরু করল।

খাদি আন্দোলন কী ?

উপমহাদেশে খাদি কাপড়ের প্রচলন অনেক আগে থেকে থাকলেও এর প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে মহাত্মা গান্ধীর কথাই বলা হয় প্রথমে! কারণ ১৯২০ সালে তিনিই প্রথম স্বদেশী পণ্যকে প্রতিষ্ঠার উদাহরণ হিসেবে খাদি কাপড়কে নিয়ে আসেন সবার সামনে এবং এর গুরুত্ব তুলে ধরেন। 'স্বরাজ' প্রতিষ্ঠার জন্য স্বদেশী পণ্যকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে এবং খাদি কাপড় হতে পারে এর অন্যতম উদাহরণ- এ চেতনাকেই জাগ্রত করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। এ কারণেই স্বদেশী আন্দোলনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত খাদি কাপড়। ১৯২১ সালে মহাত্মা কুমিল্লার চান্দিনা অঞ্চলে আসেন এবং বিদেশী কাপড় ছেড়ে দেশী কাপড় ব্যবহারে সবাইকে উদ্বুদ্ধ করেন। তিনি নিজে চরকার ব্যবহার সম্পর্কে প্রশিক্ষণও দেন!

১৭শ শতাব্দীর দিকে ত্রিপুরা রাজ্যে খাদি কাপড় বোনাকে পেশা হিসেবে নিয়েছিল প্রচুর লোক। বাংলাদেশের মধ্যে কুমিল্লা খাদি কাপড়ের জন্য বিখ্যাত জায়গা। ময়নামতি, চান্দিনা, গৌরিপুরসহ বেশ কিছু জায়গায় খাদি বুননের কাজ চলত। রঙিন খাদি কাপড়ের লুঙ্গি, শাড়ি, গামছা সেসময় ময়নামতিতে তৈরি হতো এবং দুই থেকে পাঁচ টাকার মধ্যে সেগুলো কিনতে পাওয়া যেত।

খাদি শিল্পের বর্তমান অবস্থা:

কুমিল্লা জেলার সাথে খাদিশিল্প আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। একসময় এই খাদির খুব প্রচলন ছিল। কুমিল্লায় আগে গান্ধী অভয়াশ্রমে এ খাদি তৈরি হতো। কুমিল্লা শহরের চান্দিনা উপজেলায় এখনও গান্ধীজীর স্মৃতিবিজড়িত তাঁত রয়েছে।

বর্তমানে কুমিল্লার খাদি পণ্যের বিক্রয় কেন্দ্র গুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কিছু বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে খাদি কটেজ, খাদি হাউস, গ্রামীণ খাদি, খাদি আড়ৎ ইত্যাদি খুবই জনপ্রিয়।

খাদি কাপড়ের কোয়ালিটি অনেক ভিন্নতা রয়েছে। যেমন পাতলা মোটা চেক এবং বিভিন্ন রঙের গজ কাপড় পাওয়া যায়।খাদি কাপড়ের প্রতি গজ ৮০ থেকে ১৫০ টাকা মূল্যে আনুমানিকভাবে ধারণা করা যায়।এছাড়াও রয়েছে খাদির সাল রুমাল বেডকভার ওরনা থ্রীপিজ এবং শাড়ি ও পাওয়া যায়

বর্তমানে আমাদের দেশে খাদির পূর্বের মতো বিশুদ্ধ বৈশিষ্ট্য নেই। সেখানে খাদ ঢুকেছে। বর্তমানে যে খাদি কাপড় তৈরি হয়ে থাকে সেই কাপড়ে রয়েছে মিল এবং হাতে কাটা সুতার সমন্বয়। এখানে টানাতে ব্যবহৃত হয় মিলের সুতা।

পরিতাপের বিষয়, এত বছর পরও এ পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি। কারণ কাপড়ে খাদি সুতার পরিমাণ আরও কমেছে; মিলের সুতার পরিমাণ বেড়েছে।

 উপরন্তু মিলেরই এক ধরনের সুতা তৈরি হচ্ছে। ওই সুতা দিয়ে তৈরি কাপড় একেবারে খাদি কাপড়ের টেক্সচারের মতো। একে বলা হচ্ছে ‘নিব’। ফলে বাজারে এটাকেই খাদি বলে চালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা সাধারন ক্রেতার জন্য বুঝা কঠিন। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি, আমাদের দেশে খাদি নিয়ে কাজ হচ্ছে না।

খাদি শিল্পে পরিবর্তন ও আধুনিকতার ছোঁয়া:

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে খাদির এসেছে অনেক পরিবর্তন। এ প্রসঙ্গে আসার আগে খাদি বা খদ্দরের মৌলিক কিছু বিষয়ের জানা প্রয়োজন রয়েছে।

খাদি কাপড়ের প্রকৃত বৈশিষ্ট্য হলো হাতে কাটা সুতা দিয়ে হাতে বোনা কাপড়।এই বুনন কেবল সুতি সুতায় নয়। হতে পারে এবং হয়ও রেশম, অ্যান্ডি, মুগা, তসর, উল প্রভৃতিতে। অবশ্য হ্যান্ড স্পান সুতাই কেবল নয়, থাই স্পান সুতাও হতে পারে খদ্দরের উপকরণ। পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশ খাদি খুব প্রচলন রয়েছে আছে । সেখানে দেখা মিলবে বিভিন্ন ধরনের খাদি যেমন উল,সিল্ক সুতির মতো। 
আবার আমাদের এ অঞ্চলের খাদি সুতি ও রেশমি। আমাদের এখানে খাদি সিল্ক বলতে একটি ভুল ধারণা প্রচলিত রয়েছে। এন্ডিকে বলা হয় খাদি সিল্ক। আসলে তা নয়।

অবশ্য আগে বিভিন্ন সুতা দিয়ে তৈরির কথা বলেছি; সেটাও এক ধরনের ব্লেন্ডিং। অবশ্য এই ব্লেন্ডিংটা অন্য রকম। এখানে এক বা একাধিক তন্তুকে মিশ্রিত করে একেবারে নতুন তুলায় পরিণত করে।সেই তুলা থেকে সুতা কাটা হচ্ছে। আর সেই মিশ্রিত সুতা দিয়ে তৈরি হচ্ছে খাদি মেটেরিয়াল।আর এই মিশ্রিত সুতাতে অনেক নানা ধরনের পরিবর্তন রয়েছে।

ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে ও যুগের সাথে তাল মিলিয়ে এখন বেশ আধুনিক কিছু ডিজাইনে খাদি কাপড় বানানো হচ্ছে। খাদি শিল্পে নতুন কিছু আধুনিকতা ও পরিবর্তনের এসেছে। সাদামাটা রঙের খাদি কাপড় এখন বিভিন্ন রঙে ছাপা হচ্ছে। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজগুলোতে অনেক চাহিদা বেড়েছে খাদি কাপড়ের পোশাক। বিশ্বের উন্নত কিছু  দেশগুলোতে খাদি কাপড়ের তৈরি পোশাক রপ্তানি হচ্ছে।

খাদি শিল্পে সমস্যা ও তা উত্তরনের উপায়:

বর্তমানে খাদির কাপড়ের যথেষ্ট চাহিদা না থাকলেও দেশে এবং বিদেশে অল্প অল্প খাদি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই পণ্য রপ্তানি হয়। বর্তমানে এই শিল্প টিকে থাকলেও ভবিষ্যতে এর অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

১)  তুলার অপর্যাপ্ততা। খাদি কাপড় বুনতে ন্যাচারাল ফাইবার প্রয়োজন হয় যা আমাদের দেশে বিদেশ হতে আমদানি করতে হয়। অর্থাৎ আমাদের দেশে যারা খাদি কাপড় বানায় তারা সহজে সুতা পাচ্ছে না। এটা সহজলভ্য করতে হবে।

২) বর্তমানে হরেক রকমের বাহারী ডিজাইনের ভিড়ে খাদির  চাহিদার সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বর্তমানে মেশিনের সাথে পাল্লা দিয়ে হস্তচালিত তাঁত দ্বারা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যতে এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে বছরে অন্তত কিছু না কিছু খাদি বা খদ্দরের জামা সকলের কেনা প্রয়োজন। এতে করে খাদি কাপড়ের চাহিদা ও যোগান বাড়তে থাকবে দিন দিন।

৩) খাদি কাপড় আমাদের দেশীয় শিল্প। অথচ পরিতাপের বিষয়, বর্তমান প্রজন্মের অনেকেই এটা সম্পর্কে নূন্যতম ধারনাটুকুও নেই। তাই, এই খাদি কাপড়ের ব্যাবহার বাড়াতে এটাকে তরুন প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে।

৪) আমাদের দেশের এই শিল্পকে বিশ্ব সকলের সামনে   তুলে ধরতে হবে। বছরে অন্তত দুইটি প্রদর্শনী বা মেলার আয়োজন করতে হবে যা হবে পুরোটা খাদি শিল্প কেন্দ্রিক। এতে করে এর প্রচার ও প্রসার ঘটবে।

৫) দেশীয় বাজারে বিদেশী কাপড় বিশেষ করে ভারতীয় কাপড়ের অবাধ ব্যাবসা রোধ করতে হবে। এতে যেমন আমাদের দেশীয় কুটির পোশাক শিল্প এগিয়ে যাবে তেমনি খাদি শিল্পেরও প্রসার ঘটবে। কর্মসংস্থান এর সুযোগ ও তৈরি হবে।

৬) বর্তমানে খাদি কাপড় বানানোর কারিগরের সংকট পরিলক্ষিত। স্বল্প পরিসরে হলেও সরকারী বা বেসরকারী উদ্যোগে খাদি কাপড় বানানোর প্রশিক্ষনের ব্যাবস্থা করতে হবে।

৭) বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড এর দায়িত্বে  দেশে খাদির উন্নয়নে সঠিকভাবে পণ্য উন্নয়ন, বাজারজাতকরণ এবং প্রমোশন করতে পারত, সেই প্রতিষ্ঠানই হলো। এছাড়াও সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে এলে খাদি কাপড় সংশ্লিষ্ট  এই সমস্যাগুলো সমাধান সম্ভব।

খাদি আমাদের দেশীয় শিল্প। এর সাথে জড়িয়ে আছে আছে বাঙালীর শত বছরের আবেগ। বিদেশী সংস্কৃতির  আগ্রাসনে আমাদের নিজ দেশীয় এই শিল্প ধীরে ধীরে হারিয়ে যাচ্ছে। সরকারের উচিত এই শিল্পের প্রতি সুনজর দেয়া।

কুমিল্লার খাদি, ইতিহাস ও সংকটঃ

কুমিল্লা শহরের প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড়ের রামঘাটলায় গেলেই দুপাশে দেখা মিলবে খাদি বা খদ্দর শিল্পের অনেকগুলো বিক্রয়কেন্দ্র। এছাড়া নগরীর খন্দকার প্লাজার পাশেও বেশ কয়েকটি বিক্রয়কেন্দ্র রয়েছে। জেলার চান্দিনা উপজেলায় রয়েছে বেশ কিছু খাদি পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান। কুমিল্লার একটি অন্যতম ঐতিহ্য এই খাদি বা খদ্দর শিল্প।

জেনে নেওয়া যাক খাদি শিল্প সম্পর্কেঃ 

প্রাচীনকাল থেকে এই উপমহাদেশে হস্তচালিত তাঁত শিল্প ছিল জগদ্বিখ্যাত। দেশের চাহিদা মিটিয়ে সবসময় এই তাঁতের কাপড় বিদেশেও রপ্তানি হতো। একটি পেশাজীবী সম্প্রদায় তাঁত শিল্পের সাথে তখন জড়িত ছিলেন; তাদেরকে স্থানীয় ভাষায় বলা হতো ‘যুগী’ বা ‘দেবনাথ’।

চরকায় বোনা খাদির সুতাঃ 
 
খাদির দ্রুত চাহিদার কারণে দ্রুত তাঁত চালানোর জন্য পায়ে চালিত প্যাডেলের নিচে মাটিতে গর্ত করা হতো। এই গর্ত বা খাদ থেকে যে কাপড় উৎপন্ন হতো সেই কাপড় খাদি। এভাবে খাদি নামের উৎপত্তি। ক্রমান্বয়ে এই কাপড় খাদি বা খদ্দর নামে প্রসিদ্ধি লাভ করে।

কুমিল্লার খাদি যেভাবে পরিচিতি পায়ঃ

ইতিহাস বলছে, ব্রিটিশ ভারতে ১৯২১ সালের দিকে গান্ধীজীর অসহযোগ আন্দোলনের সময়কালে ঐতিহাসিক কারণে এ অঞ্চলে খাদি শিল্প দ্রুত বিস্তার লাভ ও জনপ্রিয়তা অর্জন করে। তখন খাদি কাপড় তৈরি হতো রাঙ্গামাটির তুলা থেকে। জেলার চান্দিনা, দেবিদ্বার, বুড়িচং ও সদর থানায় সে সময় বাস করত প্রচুর যুগী বা দেবনাথ পরিবার। বিদেশি বস্ত্র বর্জনে গান্ধীজীর আহ্বানে সে সময় কুমিল্লায় ব্যাপক সাড়া জাগে এবং খাদি বস্ত্র উৎপাদনও বেড়ে যায়। দেশের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে পড়তে থাকে কুমিল্লার খাদি বস্ত্র। এই বস্ত্র জনপ্রিয়তা পায় কুমিল্লার খাদি হিসাবে।

গান্ধীজীর প্রতিষ্ঠিত অভয় আশ্রম খাদি শিল্পের প্রসারে ভূমিকা রাখেঃ 
 
গান্ধীজীর প্রতিষ্ঠিত কুমিল্লার অভয় আশ্রম খাদি শিল্প প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অনুশীলন চক্রের আশ্রয়স্থল হিসেবে ছদ্মবরণে প্রতিষ্ঠিত সমাজ কল্যাণ প্রতিষ্ঠান হিসেবে অভয় আশ্রম প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদেশি কাপড় বর্জনের ডাকে যখন ব্যাপক হারে চরকায় সুতা কাটা শুরু হয়। অভয় আশ্রম তখন সুলভে আশ্রমে তৈরি চরকা বাজারে বিক্রির পাশাপাশি নিজেরাও তৈরি করতে থাকে খাদি বস্ত্র। বিভিন্ন গ্রামে তৈরি খাদি বস্ত্রও এ সময় অভয় আশ্রমের মাধ্যমে বাজারজাত করতে শুরু করে।

খাদি কাপড়ের তৎকালীন মূল্য যেমন ছিলঃ

জানা যায়, ১৯২৬-২৭ সালে একটি ৮ হাত লম্বা ধূতি বিক্রি হতো মাত্র পাঁচসিকে দামে। সে সময় কুমিল্লা অভয় আশ্রম প্রায় ৯ লাখ টাকা মূল্যের খাদি কাপড় বিক্রি করেছিল। প্রয়াত রবীন্দ্রসংগীত বিশারদ, অভয় আশ্রমের একজন কর্মী পরিমল দত্তের লেখা থেকে জানা যায়, বিপুল চাহিদা থাকলেও অভয় আশ্রম থেকে সে চাহিদা সম্পূর্ণভাবে পূরণ হতো না।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে খাদি শিল্পের অবস্থাঃ

স্বাধীনতা পরবর্তী সময় খাদি শিল্পের ছিল স্বর্ণযুগ। এর পরপরই আসে সংকটকাল। যুদ্ধ বিধ্বস্ত বস্ত্রকলগুলো তখন বন্ধ। বস্ত্র চাহিদা মেটাতে আমদানি নির্ভর দেশে হস্তচালিত তাঁতের কাপড়ের ওপর প্রচুর চাপ পড়ে। দেশের বা মানুষের চাহিদার তুলনায় খাদির উৎপাদন ব্যাপক না হলেও চান্দিনা বাজারকে কেন্দ্র করে আশপাশের গ্রামগুলোতে তাঁতীরা চাদর, পর্দার কাপড়, পরার কাপড় তৈরি করতে শুরু করে।

খাদি আছে যুগযোপযোগী রূপেওঃ 
 
স্বাধীনতার আগে খাদির চাহিদা শীত বস্ত্র হিসেবেও ব্যাপক ছিল। খাদি বস্ত্রের চাহিদের সুযোগে এ অঞ্চলের কতিপয় অসাধু ব্যক্তি অতীত সরকারের দেওয়া সুতা, রঙের লাইসেন্স গ্রহণের সুবাদে মুনাফা লুটে নেয় মধ্যস্বত্ব ভোগী হিসেবে। সুলভ মূল্যে সুতা ও রঙের অভাবে প্রকৃত তাঁতীরা সে সময় তাঁত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হন।

খাদির বর্তমান অবস্থাঃ

কুমিল্লা জেলার সাথে খাদিশিল্প আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে। একসময় এই খাদির খুব প্রচলন ছিল। কুমিল্লায় আগে গান্ধী অভয়াশ্রমে এ খাদি তৈরি হতো। কুমিল্লা শহরের চান্দিনা উপজেলায় এখনও গান্ধীজীর স্মৃতিবিজড়িত তাঁত রয়েছে। বর্তমানে কুমিল্লার খাদিপণ্যের বিক্রয়কেন্দ্রগুলোর মধ্যে ‘খাদি কটেজ’, ‘পূর্বাশা গিফট এন্ড খাদি’, ‘খাদি হাউজ’, ‘খাদি আড়ং’, ‘গ্রামীণ খাদি’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

কুমিল্লা জেলার সাথে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে খাদিঃ 
 
যা বললেন চান্দিনার ‘গ্রামীণ খাদি’র মালিক
কুমিল্লা জেলার চান্দিনায় অবস্থিত ‘গ্রামীণ খাদি’র সত্ত্বাধিকারী অরুণ গুহর সাথে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে খাদির কাপড়ের যথেষ্ট চাহিদা না থাকলেও দেশে এবং বিদেশে ছোট-ছোট লটে খাদি পণ্য রপ্তানি হচ্ছে। ফ্রান্স, স্পেন, ডেনমার্ক, তুরস্কসহ বেশ কয়েকটি দেশে এই পণ্য রপ্তানি হয়। বর্তমানে এই শিল্প টিকে থাকলেও অদূর ভবিষ্যতে এর অস্তিত্ব নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, তুলার অপর্যাপ্ততা এবং চাহিদার সীমাবদ্ধতা। বর্তমানে মেশিনের সাথে পাল্লা দিয়ে হস্তচালিত তাঁত দ্বারা উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে না। ভবিষ্যতে এই শিল্প টিকিয়ে রাখতে বছরে অন্তত একটি করে হলেও খাদি বা খদ্দরের জামা সকলের কেনা প্রয়োজন বলে তিনি জানান।

এছাড়াও সরকার এবং বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানগুলো পৃষ্ঠপোষকতায় এগিয়ে এলে এই সমস্যা সমাধান সম্ভব বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক কুমিল্লার খাদি শিল্পের একাল সেকালঃ

কুমিল্লাতেই আমার জন্ম ৷ ছোট কাল থেকেই এই জেলার বিখ্যাত অনেক কিছুর সাথেই পরিচিত হয়েছি ৷ কুমিল্লার বিখ্যাত রসমালাই, দর্শনীয় স্থান, নজরুলের বাড়ি, খাদি শিল্প, তাদের মধ্যে অন্যতম ৷হঠাৎ করে ফেইসবুকে চোখে পড়লো খাদি বাজার নামে একটি অনলাইন শপ যারা কিনা কুমিল্লার খাদি পণ্য অনলাইনে বিক্রয়ের উদ্যেগ নিয়েছে ৷ উদ্যেগটা বেশ ইউনিক মনে হলো ৷ সেই থেকে ভাবলাম একটু খাদির ইতিহাসটা তুলেই ধরি ৷

প্রাচীনকাল থেকেই এ উপমহাদেশের হস্তচালিত তাঁত শিল্প জগদবিখ্যাত ছিল। ঢাকাই মসলিনের মতো বিখ্যাত ছিল কুমিল্লার খাদি। তখন খাদি কাপড় বিদেশেও রপ্তানি হতো। এখনও হয় তবে যৎসামান্য। বর্তমানে খাদির বেডসিট, ব্লক করা থ্রীপিস, পাঞ্জাবী, ইত্যাদি ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। বর্তমানে যে কাপড় খাদি নামে পরিচিত প্রথমে এটি অন্য নামে পরিচিত ছিল। কেননা খাদি কোন কাপড়ের নামও নয় সুতার নামও নয়। দেশীয় কাপড় হিসেবে এ ধরনের কাপড়ের চাহিদা দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় পায়ে চালিত প্যাডেলের নীচে মাটিতে খাঁদ বা গর্ত করা হতো। এই গর্ত বা খাঁদ থেকে যে কাপড় উৎপন্ন হতো তাকেই খাদি কাপড় বলা হতো। এখন মেশিনে তৈরি এ ধরণের কাপড় ও খাদি কাপড় নামে পরিচিত। খাদি শিল্পের বিকাশে চান্দিনার শৈলেন গুহ ও তার ছেলে বিজন গুহ চান্দিনাতে আখতার হামিদ খান প্রতিষ্ঠিত”দি খাদি কো অপারেটিভ এসোসিয়েশন লিমিটেডে”র হাল ধরেন। ১৯৬৫-৬৮ সালে আখতার হামিদ খানের চেষ্টায় ভাল মানের তুলা পাওয়া যেত। ভাল তুলার অভাবে পরে উন্নতমানের খাদি তৈরি অসম্ভব হয়ে পড়ে। বর্তমানে খদ্দরের উন্নয়নে কাজ করছেন তার ছেলে অরুন গুহ। খদ্দরের উজ্জ্বলতা নেই। বাহ্যিক চাকচিক্য নেই। আছে স্বদেশ প্রেমের পরিচয়। সরকারর পৃষ্ঠ পোষকতার অভাবে খাদি শিল্প মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারছেনা। খাদি নিয়ে শৈলেন গুহের বরাবরই আকুতি ছিল। তা হলো আপনারা এই খদ্দর কাপড় ব্যবহার করে খদ্দর শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখুন। সেটাই করে চলছেন অরুন গুহ।

স্বদেশী আন্দোলনের সসময় খাদি কাপড়ের চাহিদা অসম্ভব ভাবে বেড়ে যায়। তখন মানুষ বিদেশী পন্য বর্জন করে দেশীয় কাপড়ের প্রতি আর্কষ্ট হয়। বিশেষ করে মহাত্মা গান্ধীর অনুপ্রেরণায় কুমিল্লার খাদির বাজার আরো প্রসারিত হয়। চান্দিনায় মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতি বিজড়িত একটি তাঁত এখনও রয়েছে। আদি খাদি তৈরি করা হতো রাঙ্গামাটির তুলা দিয়ে। আর এখন তৈরি হয় তুলা এবং মেশিনে তৈরি সুতার মিশ্রণে। কুমিল্লা সদর, চান্দিনা, দেবিদ্ধার ও মুরাদনগরের হাজার হাজার তাঁতী এ শিল্পের প্রসারে কাজ করছে। বর্তমানে অল্প কিছু তাঁতী কোন রকমে তাদের পেশা টিকিয়ে রেখেছে। চান্দিনার বারেরা , নূরীতলা ও কলাগাঁওয়ে কিছু কিছু পরিবার তুলা থেকে সুতা বানানোর কাজ করে। খাদি শিল্পীরা ওদের নিকট থেকে সুতা কিনে খাদি তৈরি করে। তবে বর্তমানে শুধু তুলার সুতা দিয়ে খাদি উৎপাদিত হয়না। খাদি সুতার সাথে নারায়নগঞ্জ থেকে সুতা এনে সেই সুতার মিশ্রনে কারিগররা খাদি তৈরি করছে। ফলে খাদির আদি রুপ বদলে গিয়েছে এবং খাদি কাপড় পরে আগের মতো আরাম পাওয়া যায় না।

বর্তমানে দেবিদ্ধার , মুরাদনগর ও চান্দিনার তাঁতীরা কাপড় বুনায় ব্যস্ত। দেবিদ্ধারের বরকামতায় শ্রীনিবাসের ২টি , মতিলাল দেবনাথের ১টি , রনজিত দেবনাথের ৭টি ভুবন দেবনাথের ১টি, চিন্তা হরণ দেবনাথের ২টি তাঁত ছিল। বর্তমানে ভুবন দেবনাথের ১টি রনজিত দেবনাথের ৫টি চিন্তা হরণ দেবনাথের ২টি তাঁত রয়েছে। বাকীগুলো বন্ধ হয়ে গেছে। কারিগড়দের পাশাপশি তাদের ছেলে -মেয়ে –বউরাও কাজ করে। কিভাবে খাদি তৈরি হয়? এ প্রশ্নের জবাবে মতিলালের বউ বল্লেন-৬০ কেজি ওজনের একেকটি গাইট এনে ভাত বা ময়দার মার দিয়ে ১ ঘন্টা ভিজিয়ে রেখে রোদে শুকিয়ে ঝরঝরা করা হয়। তারপর আরো কয়েকেটি ধাপ পেড়িয়ে গজ কাপড় উৎপাদিত হয়। বর্তমানে খাদি তৈরির সুতাসহ সব ধরণের সুতার দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দেবিদ্ধারের তাঁত শিল্প হুমকির সম্মুখিন। জানা গেছে দুই/তিন সপ্তাহের ব্যবধানে তাঁতের তেনা তৈরিতে ব্যবহৃত ৮২/১ পোড়ন সুতা বেল প্রতি ১ লাখ টাকার পরিবর্তে ১ লাখ ১২ হাজার টাকা , ৭৪/১ সুতা বেলপ্রতি ৯৮ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ লাখ ১৪ হাজার টাকট। ৬২/১ সুতা বেল ৯৪ হাজার টাকার পরিবর্তে ১ লাখ ৪ হাজার টাকা। ৫৪/১ সুতা বেল প্রতি ৮৮ হাজার টাকার পরিবর্তে ৯৬ হাজার টাকা , ৪০/১ সুতা বেল প্রতি ৭০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৮৪ হাজার টাকায় বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ঈদ একই সময়ের ব্যবধানে ৮০ এর কুন সুতা পাউন্ড প্রতি ২৩০ টাকার স্থলে ২৬০ টাকা , ৬০ এর কুন সুতা পাউন্ড প্রতি ২২৫ টাকার স্থলে ২৬০ টাকা , ৫০ এর কুন সুতা ১৭১ টাকা পাউন্ড এর সবথলে ১৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে । এছাড়া ৩২ সুতা বন্ডিলের দাম ৬ শ টাকা থেকে ১৪ শ টাকা এবং রেলিং সুতা ৪০০টাকা থেকে বাড়িয়ে ১১শ টাাকা করা হয়েছে। বর্তমানে বরকামতার চাদর , লুঙ্গি , থান কাপড় , ইতাদি তৈরি হয়। রনজিত দেবনাথের বাবা শশীমোহন দেবনাথ সাইতলায় ব্যবসা শুরু করেছিলেন। ৭০/৭৫ বছর ধরে এ ব্যবসা চলছে। তিনি জানান-স্বাধীনতার পর পর এ ব্যবসার স্বর্ণ যুগ ছিল। মুরাদনগরের জাহাপুর , ইসলামপুর , বাখরনগরসহ সকল তাঁতীরা চায় এব্যবসার সুদিন আবার ফিরে আসুক। কিন্তু কাঁচামালের দাম বৃদ্ধিও কারেণে স্বল্পপঁজির উৎপাদনকারীরা ব্যবসা ছেড়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে খাদিপাড়া আবার জেগে উঠবে।


সোর্সঃ 
Barta24 24x7 
somewhere in net ltd.

কোন মন্তব্য নেই: