মার্চেন্ডাইজারের ডায়েরি*প্রফেশন: #মার্চেন্ডাইজিং
পর্ব: ১৩ (Communication)
=====================
আশা করি সবাই ভালো আছেন এবং মার্চেন্ডাইজারের ডায়েরির পর্বগুলো পড়ে উপকৃত হচ্ছেন। জানার ব্যাপারটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া এবং যার কোন শেষ নেই।যেহেতু আমার জানার ক্ষেত্রেও সীমাবদ্ধতা থাকতে পারে তাই আমার লেখা পর্বগুলোতে লেখার বাহিরেও যদি আপনারা কিছু জানেন তবে তা কমেন্ট করে জানাবেন। এতে করে আমরা সবাই উপকৃত হবো। পাশাপাশি অনুরোধ করবো আপনাদের যদি কিছুটা হলেও লেখালেখি করার অভ্যাস থাকে এবং টেক্সটাইলের যেকোন সেক্টরে জব করে থাকেন তবে তা গ্রুপে পোস্ট করার। সেটা যতো ক্ষুদ্র জানার ব্যাপারই হোক না কেনো। আর আপনি যদি লেখাগুলো কোন সিরিজের নাম দিয়ে পর্ব আকারে লিখেন তবে গ্রুপের মেম্বাররা সহজেই আপনার লেখাগুলো খুজেঁ পাবে।আমি বিশ্বাস করি এই গ্রুপে অনেকেই আমার থেকে অনেক ভালো জানেন। সুতরাং প্রত্যেকেই যদি প্রত্যেকের জানা বিষয়গুলো গ্রুপে শেয়ার করি তবে আমি বিশ্বাস করি আমাদের এই গ্রুপটি বাংলাদেশের সবচেয়ে উপযোগী টেক্সটাইল গ্রুপে পরিনত হবে। এর জন্য আপনার খুব বেশি উচ্চশিক্ষার প্রয়োজন হবে না।
যিনি মেশিন অপারেটর হিসেবে জব করেছেন তিনি যদি তার ক্ষুদ্র গন্ডি থেকেও তার জানার ব্যাপারটি শেয়ার করে তবে অন্যরা একদিকে যেমন জানতেও পারবে ঠিক তেমনি এটাও বুঝতে পারবে এই টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির জন্য আপনার কাজটুকুও ঠিক কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ। কথা আর খুব বেশি দীর্ঘ করবো না। আমাদের আজকের পর্বের বিষয় হলো Communication। একজন মার্চেন্ডাইজারের বায়ার, ফ্যাক্টরির প্রোডাকশন টিম এবং সাপ্লায়ারের সাথে কমিউনিকেশন সবচেয়ে বেশি হয়। আজকের এই পর্বে আমরা সাধারনভাবে শুধুমাত্র কমিউনিকেশন নিয়ে আলোচনা করবো।
মার্চেন্ডাইজারদের জন্য Communication হচ্ছে সবগুলো কাজের মধ্যে হৃৎপিণ্ডের মতো। একজন মার্চেন্ডাইজারের কমিউনিকেশন স্কিল যতো স্ট্রং একজন মার্চেন্ডাইজার ঠিক ততোটাই স্কিলড। আর আপনার কমিউনিকেশন যদি ঠিক থাকে তবে দেখবেন বাকি কাজগুলো এমনিতেই ঠিক হয়ে গেছে।কমিউনিকেশন নিয়ে আমার বর্তমান অফিসের টিম লিডার গোলাম মইনুদ্দিন স্যারের একটি কথা আদর্শ মনে হয়। সেটি হচ্ছে আপনি যখন কারো সাথে কমিউনিকেশন করছেন তখন মনে করবেন আপনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে কমিউনিকেশন করছেন :p ।
এখন আপনার মনে প্রশ্ন জাগতেই পারে যে এখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প আসলো কোত্থেকে আর তার ভূমিকাটাই বা কি? এখানেই হচ্ছে আসল খেলা। ডোনাল্ড ট্রাম্প হচ্ছে পৃথিবীর ক্ষমতাধর দেশ USA র প্রেসিডেন্ট যদিও তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞা আমরা ধরি যে নেই বললেই চলে। কিন্তু যখন আপনি তার সাথে কমিউনিকেশন করবেন তার মানে হচ্ছে তার পদের কারনে তাকে আপনার গুরুত্ব দিতে হচ্ছে এবং একইসাথে তাকে আপনার এমনভাবে বুঝাতে হবে যে ধরে নেন সে কিছুই জানে না। তারমানে কমিউনিকেশন করার সময় আপনাকে এমনভাবে করা লাগবে যাতে তাকে সবকিছু এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যাতে সে আপনি তাকে কি বুঝাতে চাচ্ছেন তা সে অল্প কথাতেই পুরো বুঝে যায়, তাকে যেনো আগের অতীত ইতিহাস ঘেটে সময় নষ্ট করতে না হয় যেহেতু আপনার কাছ থেকে রচনা শোনার সময় তার নেই। ঠান্ডা মাথায় আগে দুই মিনিট চিন্তা করুন যে আপনাকে যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছে কোন বিষয় উপস্থাপন করতে বলা হয় তবে আপনি কিভাবে তা উপস্থাপন করবেন। এরপর বাকি লেখাটুকু পড়তে বসুন............
Communication এর অনেক রকমফের আছে। তবে আমরা আজকের বাকি আলোচনা শুধু E-mail Communication এর ভিত্তিতেই করবো। আমার কাছে মনে হয় E-mail Communication এর জন্য পাচঁটি Words খুব গুরুত্বপূর্ণ।
প্রথম Word টি হচ্ছে Subject। মেইল কমিউনিকেশুনের জন্য সঠিক সাবজেক্ট লাইন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি মেইলের সাবজেক্ট এমন হওয়া উচিত যাতে কেউ মেইল ওপেন না করে শুধু সাবজেক্ট লাইন দেখেই বুঝতে পারে যে মেইলের ভিতরে কি লেখা থাকতে পারে। এটি শুধু আপনাকে বুঝানোর জন্য নয় বরংচ নিজের বুঝার জন্যও। আপনি কোন মেইল স্টার্ট করলে এমনভাবে সাবজেক্ট লিখবেন যাতে বছরখানেক পরেও আপনি শুধুমাত্র মেইলের সাবজেক্ট লাইন দেখেই বুঝে ফেলতে পারেন সেটি কোন প্রসঙ্গের।
দ্বিতীয় Word টি হচ্ছে Prompt। অর্থাৎ আপনার মেইল কমিউনিকেশন হতে হবে খুব চটপটে। আপনাকে কেউ মেইল করলে আপনাকে তার একটি চটপটে উত্তর দিতে হবে। ব্যাপারটা যাতে এমন না হয় যে আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করা হলে আপনি সেই কাজ শেষ করার আগ পর্যন্ত মেইলের কোন রিপ্লাই দিবেন না অথবা সেই কাজটির নির্ধারিত সময়ে শেষ না হলেও আপনি তাকে কিছু জানাবেন না। বরংচ কেউ কোন মেইল করে কিছু জানতে চাইলে আপনার উচিত হবে আপনার জানা থাকলে ঐ দিনেই তাকে মেইলের রিপ্লাই দেওয়া অথবা আপনার যদি কাজ করে তাকে জানাতে হয় তবে তার কাছে আনুমানিক সময় চেয়ে তাকে মেইলের রিপ্লাই দেওয়া।
এতে করে মেইলের সেন্ডার বুঝতে পারবে যে আপনি মেইলটি দেখেছেন এবং সেটি নিয়ে কাজ করছেন। আবার আপনি যদি নির্দিষ্ট দিনের মাঝে কাজটি শেষ করতে না পারেন তবে যখনই আপনি ব্যাপারটা বুঝতে পারবেন তখনই নিজে থেকে তাকে জানিয়ে দেওয়া যাতে করে মেইলের সেন্ডার বিরক্ত না হয়।
তৃতীয় Word টি হচ্ছে Meaningful। সবসময় লক্ষ রাখবেন মেইলের ভাষা যাতে অর্থবহ হয়। মেইল চেষ্টা করবেন তিনটি অংশে লেখার জন্য। প্রথম অংশে বিষয়বস্তু পরের অংশে সংক্ষেপে ব্যাখ্যা আর সবশেষ অংশে সমাপ্তি। আবার আমরা অনেকেই হয়তো কোন মেইলের উত্তর না পেলে পরের মেইলে শুধু লিখি "Please advise on below"। কিন্তু এক্ষেত্রে ব্যাপারটি যদি এমন হয় আপনি কোন ফেব্রিক মিলের কাছে স্যাম্পল ইয়ার্ডেজের জন্য আগের মেইলে চেয়েছেন কিন্তু তারা কোন রিপ্লাই দেয়নি সেক্ষেত্রে এভাবে লিখা যায় যে, "Please advise on below mail regarding X (Fabric Code) sample yardage ready date"। ব্যাপারটা এভাবে বলার কারন হচ্ছে যতো বেশি সিনিয়র হবেন ততো বেশি মেইল সাধারণত আসে।সবাই সবসময় সব মেইল নাও পড়ার সুযোগ পেতে পারে।
এক্ষেত্রে আপনি যাকে লিখেছেন তার আগের মেইলটি তার সিনিয়র যদি নাও পড়তে পারে তবে দ্বিতীয়ভাবে মেইলটি লিখলে উনি দেখামাত্রই সহজেই বুঝে যাবে আপনি আগের মেইলে কোন ফেব্রিক কোডের স্যাম্পল ইয়ার্ডেজ চেয়েছেন এবং সেটি পাচ্ছেন না।সেক্ষেত্রে তাকে স্ক্রল করে আগের মেইল দেখা লাগবে না এবং তিনি তার জুনিয়রকে মেইলে ইমেডিয়েট রিপ্লাই দেওয়ার জন্য পুশ করতে পারবেন।
চতুর্থ Word টি হচ্ছে Informative। মেইলে চেষ্টা করবেন রচনা না লিখে কিভাবে Information দিয়ে মেইলটিকে তথ্যবহুল করা যায়। মানুষ জেনারেল স্ট্যাটমেন্টের থেকে তথ্য দেখতে বেশি পছন্দ করে। এক্ষেত্রে তারিখ এবং সংখার ব্যবহার প্রাধান্য পাওয়া উচিত।
পঞ্চম Word টি হচ্ছে Summarized । মেইলে সবসময় চেষ্টা করবেন খুব বেশি Elaborate না করে কিভাবে সংক্ষিপ্তভাবে সবকিছু গুছিয়ে লেখা যায়। এক্ষেত্রে Excel File খুব ভালো ভূমিকা রাখতে পারে। দেখা গেলো ফ্যাক্টরি মার্চেন্ডাইজার হিসেবে আপনার অনেকগুলো স্টাইলের ডেভেলপমেন্ট নিয়ে বায়িং অফিসের সাথে কাজ করতে হচ্ছে। এখন আপনি চাইলে সবগুলো স্টাইল নিয়ে যদি মেইলের বডিতে ক্যারিফিকেশন নিতে চান তবে সেক্ষেত্রে মেইলটি একটি Essay না হলেও Paragraph হয়ে যাবে যা কিনা বারবার স্ক্রল করে করে দেখতে সবারই বিরক্ত লাগবে। অথচ এক্ষেত্রে আপনি যদি এক্সেলে সবকিছু সামারাইজড করেন তবে তা সবার জন্যই বোধগম্য হবে।
আজকে এই পর্যন্তই। সামনের মার্চেন্ডাইজারের ডায়েরির পর্বে ইনশাআল্লাহ চেষ্টা করবো আমার নতুন কোন কর্ম অভিজ্ঞতা আপনাদের সাথে শেয়ার করার জন্য। এই সিরিজের আগের পর্বের লিংকগুলো প্রথম কমেন্টে পাবেন।
আসিফ বিন আসগর
(বর্তমানে বহুজাতিক ট্রেডিং অফিসের মার্চেন্ডাইজিং বিভাগে কর্মরত)
সাবেক টেক্সটাইল স্টুডেন্ট, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন