সোডিয়াম সালফেটের সাথে ১০ অনু পানি মিশ্রিত থাকলে তাকে বলা হয় গ্লুবার লবণ। সোডিয়াম সালফেটের সংকেত হল Na2SO4
তাহলে গ্লুবার লবণের সংকেতঃ Na2SO4.10H20
✅সোডিয়াম কার্বনেটঃ
একি সোডিয়াম কার্বনেট অণুর মধ্যে দুটি সোডিয়াম পরমাণু একটি কার্বন পরমাণু এবং তিনটি অক্সিজেন পরমাণু থাকে। কস্টিক সোডার সঙ্গে কার্বন-ডাই-অক্সাইড এর বিক্রিয়ায় সোডিয়াম কার্বনেট উৎপন্ন হয়।
সোডিয়াম কার্বনেট বা কাপড় কাচার সোডার প্রকৃতি
সোডিয়াম কার্বনেট বা কাপড় কাচার সোডার প্রকৃতি নিম্নরূপ
ক) সোডিয়াম কার্বনেট হলো এসিড লবণ ও অজৈব লবণ।
খ) সোডিয়াম কার্বনেট কঠিন, স্ফটিকাকার এবং দেখতে সাদা।
গ) কাপড় কাচার সোডার কোন গন্ধ নেই
ঘ) কাপড় কাচার সোডার প্রতি অণুতে দশ অনু কেলাস জল যুক্ত থাকে।
ঙ) সোডিয়াম কার্বনেট কেলাস উদত্যাগী পদার্থ। খোলা বাতাসে রাখলে 9 অনু কেলাস জল বায়ুর মধ্যে চলে যায়, অবশিষ্ট এক অনু কেলাস জল পড়ে থাকে। তখন কেলাস গঠন ভেঙে গুঁড়ো পরিণত হয়। একেই কাপড় কাচা সোডা বলে
চ) সোডিয়াম কার্বনেটকে উত্তপ্ত করলে অনার্দ্র সোডিয়াম কার্বনেটে পরিণত হয়। অনাদ্র এই লবণকে সোডা ভস্ম বলে।
ছ) সোডিয়াম কার্বনেট জলে দ্রাব্য, জলীয় দ্রবণে ক্ষারের ধর্ম প্রকাশ পায়।
জ) সোডিয়াম কার্বনেট দ্রবণের মধ্যে দিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস চালনা করলে সোডিয়াম বাই কার্বনেট বা খাবার সোডা উৎপন্ন হয়।
ঝ) সোডিয়াম কার্বনেটকেতীব্রভাবে উত্তপ্ত করলে 786 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় গলে যায় কিন্তু বিয়োজিত হয় না।
সোডিয়াম কার্বনেটের ব্যবহারঃ
সোডিয়াম কার্বনেটের ব্যবহার নিম্নরূপ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং নানা শিল্পে সোডিয়াম কার্বনেট প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।
ক) জামা কাপড় পরিষ্কার করার জন্য প্রাচীনকাল থেকে এর ব্যবহার চলে আসছে।
খ) কস্টিক সোডা, কাচ, সাবান প্রভৃতি প্রস্তুতিতে প্রধান উপাদান হিসেবে সোডিয়াম কার্বনেট ব্যবহৃত হয়।
গ) বস্ত্র এবং কাগজ শিল্পে ব্যবহৃত হয়
ঘ) জলের খরতা দূরীকরণে ব্যবহৃত হয়।
ঙ) পরীক্ষাগারে বিকারক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
চ) সোডিয়াম কার্বনেট বেকিং পাউডার প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
✅ PH কী?
পিএইচ (PH)-এর পুরো নাম কী? --- প্রথমত এটিকে PH নয় লিখতে হবে pH.
pH শব্দসংক্ষেপটি এসেছে মূলত ফরাসি বাক্যাংশ "pouvoir hydrogène" থেকে। ইংরেজিতে অনুবাদ করলে যেটা দাঁড়ায়, power of hydrogen অথবা potential of hydrogen.
pH এর পূর্ণরূপ বলতে আমার যুক্তিতে ফরাসি নামটাকে বোঝানো উচিত বলে মনে হয়, যদিও এখন এর ইংরেজি অনুবাদই বেশি প্রচলিত।
✅ সোডিয়াম ক্লোরাইডঃ
সোডিয়াম ক্লোরাইডের গঠনঃ
প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে যে লবণ আমরা খাই তাই খাদ্য লবন। এর রাসায়নিক নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড। খাদ্য লবনের একটি অণুতে একটি সোডিয়াম পরমাণু এবং একটি ক্লোরিন পরমাণু থাকে।
সোডিয়াম ক্লোরাইডের প্রকৃতিঃ
ক) সোডিয়াম ক্লোরাইড একটি নরমাল লবণ।
খ) সাধারণ উষ্ণতায় NaCl কঠিন এবং কেলাসিত পদার্থ।
গ) খাদ্য লবন একটি অজৈব পদার্থ
ঘ) খাদ্য লবন গন্ধহীন এবং অনুদ্বায়ী পদার্থ।
ঙ) সোডিয়াম-ক্লোরাইড জলে দ্রাব্য। এর জলীয় দ্রবণে এসিড বা ক্ষারের কোন ধর্ম প্রকাশ পায় না।
চ) সোডিয়াম ক্লোরাইডের গলনাঙ্ক 160 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এবং স্ফুটনাঙ্ক 1465 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড।
ছ) এর কেলাসের আকার 6 তল বিশিষ্ট ঘনকের মত।
জ) সোডিয়াম-ক্লোরাইড একটি তড়িৎযোজী যৌগ, আয়নিত হয়। জলীয় দ্রবণে NaCl অনু সম্পূর্ণ বিয়োজিত হয়ে Na+ এবং Cl– আয়নে পরিণত হয়।
কার্বন: সংকেত, যোজনী, পারমাণবিক গুরুত্ব, বহুরূপতা, ব্যবহার
সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাদ্য লবণের ব্যবহারঃ
সোডিয়াম ক্লোরাইডের ব্যবহার নিচে উল্লেখ করা হলো
ক) খাদ্য লবন আমাদের খাদ্যের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। দেহের উপাদান হিসেবে এর প্রয়োজন আছে।
খ) কলেরা রোগীর দেহে জলের ভাগ অনেক কমে যায় বলে লবণ জলের ইনজেকশন দিতে হয়।
গ) সোডিয়াম-ক্লোরাইড জীবানুনাশক এবং পচন নিবারক, এইজন্য মাছ-মাংস প্রভৃতিতে লবণ মাখিয়ে অনেকদিন পর্যন্ত অবিকৃত রাখা যায়।
ঘ) হিম মিশ্র প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়, বরফের সঙ্গে লবণ মেশালে উষ্ণতা মাইনাস ২০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় নেমে আসে।
ঙ) চিনা মাটির বাসন পালিশ করতে ব্যবহৃত হয়।
চ) ধাতব সোডিয়াম, সোডিয়াম কার্বনেট, কস্টিক সোডা, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, ক্লোরিন, সোডিয়াম সালফেট প্রভৃতি রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
✅ কস্টিক সোডা বা সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH)ঃ
কস্টিক সোডার অণুর মধ্যে একটি সোডিয়াম পরমাণু,একটি অক্সিজেন পরমাণু এবং একটি হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে; অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত অবস্থায় হাইড্রোক্সিল (OH) মূলক রূপে বর্তমান থাকে।
সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা কস্টিক সোডার প্রকৃতিঃ
১. সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড তীব্র ক্ষার জাতীয় কঠিন পদার্থ।
২. সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড অনুদ্বায়ী গন্ধহীন পদার্থ।
৩. কস্টিক সোডা একটি অজৈব পদার্থ।
৪. বিশুদ্ধ অবস্থায় সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড দেখতে সাদা এবং স্ফটিকাকার।
৫. খোলা বাতাসে রাখলে বাতাস থেকে জলীয়বাষ্প এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে সোডিয়াম কার্বনেটে পরিণত হয়।
৬. জলে খুব দ্রুত দ্রবীভূত হয় এবং দ্রবীভূত হওয়ার সময় প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে।
৭. জলীয় দ্রবণে বা গলিত অবস্থায় সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বিয়োজিত হয়ে Na+ এবং OH– আয়ন উৎপন্ন করে।
৮. এসিডের সঙ্গে কস্টিক সোডার বিক্রিয়ায় লবণ ঐ জল উৎপন্ন হয়।
৯. কস্টিক সোডার জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী; লাল লিটমাসকে সোডা দ্রবণের নীল হয়ে যায়।
১০. দ্রবণটি সাবানের মতো পিচ্ছিল বোধ হয়।
১১. সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড দেহের সংস্পর্শে এলে দাহ এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
১২. 318 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড গলে যায়।
সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা কস্টিক সোডার ব্যবহারঃ
১. সোডিয়াম ধাতু উৎপাদনে কস্টিক সোডা ব্যবহার করা হয়।
২. তেলের সঙ্গে কস্টিক সোডা ফুঁটিয়ে সাবান প্রস্তুত করা হয়।
৩. কাগজ, রং এবং কৃত্রিম রেশম তৈরিতে কস্টিক সোডা ব্যবহার করা হয়।
৪. পেট্রোলিয়াম শোধনে এবং পরীক্ষাগারে বিকারক রূপে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়।
✅ এসিটিক অ্যাসিড কীঃ
এসিটিক অ্যাসিড ইথানোয়িক এসিড নামেও পরিচিত। এটি সি, এইচ এবং হে পরমাণু নিয়ে গঠিত। অ্যাসিটিক অ্যাসিডের আণবিক সূত্রটি C2H402 । তবে এসিটিক অ্যাসিড উপস্থাপনের সর্বাধিক সাধারণ উপায় হ'ল CH3COOH। এই সূত্রটি অ্যাসিটিক অ্যাসিড গঠন সম্পর্কে কিছু বিশদ নির্দেশ করে। এসিটিক অ্যাসিড একটি কার্বোঅক্সিলিক অ্যাসিড। এটিতে কেবল একটি কার্বোঅক্সিলিক অ্যাসিড গ্রুপ রয়েছে। এটি একটি মিথাইল গ্রুপ (-CH3 ) দ্বারা গঠিত যা কার্বোঅক্সিলিক অ্যাসিড গ্রুপের কার্বন পরমাণুর সাথে সংযুক্ত। এসিটিক অ্যাসিডের গুড় ভর প্রায় 60 গ্রাম / মোল ol
চিত্র : এসিটিক অ্যাসিডের রাসায়নিক কাঠামো
ঘরের তাপমাত্রা এবং চাপের ক্ষেত্রে এসিটিক অ্যাসিড একটি বর্ণহীন তরল এবং এটির খুব তীব্র গন্ধ থাকে। এই তরলের ফুটন্ত পয়েন্টটি প্রায় 118 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হয় পিকে এই অ্যাসিডের একটি মান প্রায় 4.76। অতএব, এসিটিক অ্যাসিড একটি দুর্বল অ্যাসিড, এবং এটি আংশিকভাবে পানিতে বিচ্ছিন্ন হয়। তবে এসিটিক অ্যাসিড পানিতে ভুল।
জলীয় দ্রবণগুলিতে এসিটিক অ্যাসিড বিচ্ছিন্ন হয়ে কার্বক্সাইলিক গ্রুপের হাইড্রোজেন পরমাণুকে এইচ + আয়ন হিসাবে প্রকাশ করে। এসিটিক অ্যাসিডের অম্লতার কারণ এটি। কার্বোঅক্সিলিক গ্রুপে –OH বন্ডের উপস্থিতির কারণে, অ্যাসিটিক অ্যাসিডের শক্ত পর্যায়ে শক্তিশালী হাইড্রোজেন বন্ধন থাকতে পারে।
এসিটিক অ্যাসিড পোলার দ্রাবক বা নন-পোলার দ্রাবকগুলির সাথে মেশাতে পারে। এসিটিক অ্যাসিডের পোলার গ্রুপটি একটি কার্বোক্সিলিক গ্রুপ। এটি মেরু দ্রাবকগুলির সাথে এসিটিক অ্যাসিডের মিশ্রণ ঘটায়। মিথাইল গ্রুপটি একটি নন-পোলার গ্রুপ এবং অ-মেরু দ্রাবকগুলির সাথে এসিটিক অ্যাসিডের মিশ্রণ ঘটায়।
এসিটিক অ্যাসিডের প্রয়োগসমূহঃ
১. ফেব্রিক নিউট্রাল করার জন্য
২. ভিনেগার উৎপাদন
৩. ধাতু অ্যাসিটেটের প্রস্তুতি
৪. রেজিনের জন্য দ্রাবক
৫. অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড উত্পাদন
৬. পলিয়েস্টার ডাইং
✅ অক্সালিক অ্যাসিডঃ
অক্সালিক অ্যাসিড একটি জৈব যৌগ এর রাসায়নিক সংকেত C₂H₂O₄। এটি সাদা স্ফটিকাকার শক্ত পদার্থ এবং পানিতে বর্ণহীন দ্রবণ তৈরি করে। এটির গাঠনিক সংকেত HOOCCOOH, এটি সাধারণ ডাইকার্বক্সিলিক অ্যাসিডের শ্রেণিবিন্যাসকে প্রতিফলিত করে। এর অ্যাসিড শক্তিমান অ্যাসিটিক অ্যাসিডের চেয়ে অনেক বেশি।
সূত্র: C2H2O4
পেষক ভর: ৯০.০৩ g/mol
ঘনত্ব: ১.৯ g/cm³
✅ ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইটঃ
এটি একটি অজৈব যৌগ যার রাসায়নিক সংকেত Ca(OCl)Cl। পানি পরিশোধন এবং ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে ক্লোরিন পাউডার অথবা ব্লিচ পাউডার নামে বাজারে পাওয়া যায়। আর্দ্র এবং অনাদ্র দুই অবস্থায় ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট পাওয়া যায়। এটা পানিতে খুব বেশি দ্রবীভূত হয় না। এর থেকে তীব্র ক্লোরিনের গন্ধ পাওয়া যায়।
বৈশিষ্ট্য
সাদা, অনিয়তাকার এবং একটি অজৈব পদার্থ ।ক্লোরিনের ঝাঁঝালো গন্ধ পাওয়া যায় ।কার্বন ডাই অক্সাইড এর সাথে বিক্রিয়ায়ক্যালসিয়াম কার্বনেট এবং ডাইক্লোরিন মনোক্সাইড উৎপন্ন করে।হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করেক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, পানি এবং ক্লোরিন গ্যাস উৎপন্ন করে।
Ca(OCl)2 + 4 HCl → CaCl2 + 2 H2O + 2 Cl2
উৎপাদন
ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের মধ্যে ক্লোরিন গ্যাস চালনা করে বাণিজ্যিক ভাবে হাইপো উৎপাদন করা হয়। বিভিন্ন ঘনত্বের ব্লিচ পাউডার পেতে কয়েক ধাপে বিক্রিয়া পরিচালনা করা হয়।
2 Cl2 + 2 Ca(OH)2 → Ca(OCl)2 + CaCl2 + 2 H2O
ব্যবহার:
জীবাণুনাশক হিসাবে, পানি বিশুদ্ধ করতে, ক্লোরোফর্ম প্রস্তুতিতে, এবং বস্ত্র বিরঞ্জন করতে ব্যবহৃত হয় ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হয় ।
✅ হাইড্রোজেন পারক্সাইডঃ
হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ যার সংকেত H2O2। বিশুদ্ধ অবস্থায় এটি বর্ণহীন তরল, পানির থেকে এর সান্দ্রতা সামান্য বেশি।
নিরাপত্তাজনিত কারণে সব সময় এটার জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। H2O2 সব থেকে সরল পারক্সাইড (যে যৌগে অক্সিজেন-অক্সিজেন একক বন্ধন থাকে) এবং এটা শক্তিশালী জারক ও বিরঞ্জক। গাঢ় H2O2 রকেটের জ্বালানীতে প্রোপেল্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে ইউনিভার্সাল ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে ব্যাবহার করা হয় ।
ক) সোডিয়াম কার্বনেট হলো এসিড লবণ ও অজৈব লবণ।
খ) সোডিয়াম কার্বনেট কঠিন, স্ফটিকাকার এবং দেখতে সাদা।
গ) কাপড় কাচার সোডার কোন গন্ধ নেই
ঘ) কাপড় কাচার সোডার প্রতি অণুতে দশ অনু কেলাস জল যুক্ত থাকে।
ঙ) সোডিয়াম কার্বনেট কেলাস উদত্যাগী পদার্থ। খোলা বাতাসে রাখলে 9 অনু কেলাস জল বায়ুর মধ্যে চলে যায়, অবশিষ্ট এক অনু কেলাস জল পড়ে থাকে। তখন কেলাস গঠন ভেঙে গুঁড়ো পরিণত হয়। একেই কাপড় কাচা সোডা বলে
চ) সোডিয়াম কার্বনেটকে উত্তপ্ত করলে অনার্দ্র সোডিয়াম কার্বনেটে পরিণত হয়। অনাদ্র এই লবণকে সোডা ভস্ম বলে।
ছ) সোডিয়াম কার্বনেট জলে দ্রাব্য, জলীয় দ্রবণে ক্ষারের ধর্ম প্রকাশ পায়।
জ) সোডিয়াম কার্বনেট দ্রবণের মধ্যে দিয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড গ্যাস চালনা করলে সোডিয়াম বাই কার্বনেট বা খাবার সোডা উৎপন্ন হয়।
ঝ) সোডিয়াম কার্বনেটকেতীব্রভাবে উত্তপ্ত করলে 786 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় গলে যায় কিন্তু বিয়োজিত হয় না।
সোডিয়াম কার্বনেটের ব্যবহারঃ
সোডিয়াম কার্বনেটের ব্যবহার নিম্নরূপ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে এবং নানা শিল্পে সোডিয়াম কার্বনেট প্রচুর পরিমাণে ব্যবহৃত হয়।
ক) জামা কাপড় পরিষ্কার করার জন্য প্রাচীনকাল থেকে এর ব্যবহার চলে আসছে।
খ) কস্টিক সোডা, কাচ, সাবান প্রভৃতি প্রস্তুতিতে প্রধান উপাদান হিসেবে সোডিয়াম কার্বনেট ব্যবহৃত হয়।
গ) বস্ত্র এবং কাগজ শিল্পে ব্যবহৃত হয়
ঘ) জলের খরতা দূরীকরণে ব্যবহৃত হয়।
ঙ) পরীক্ষাগারে বিকারক হিসাবে ব্যবহৃত হয়।
চ) সোডিয়াম কার্বনেট বেকিং পাউডার প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
✅ PH কী?
পিএইচ (PH)-এর পুরো নাম কী? --- প্রথমত এটিকে PH নয় লিখতে হবে pH.
pH শব্দসংক্ষেপটি এসেছে মূলত ফরাসি বাক্যাংশ "pouvoir hydrogène" থেকে। ইংরেজিতে অনুবাদ করলে যেটা দাঁড়ায়, power of hydrogen অথবা potential of hydrogen.
pH এর পূর্ণরূপ বলতে আমার যুক্তিতে ফরাসি নামটাকে বোঝানো উচিত বলে মনে হয়, যদিও এখন এর ইংরেজি অনুবাদই বেশি প্রচলিত।
✅ সোডিয়াম ক্লোরাইডঃ
সোডিয়াম ক্লোরাইডের গঠনঃ
প্রতিদিন খাবারের সঙ্গে যে লবণ আমরা খাই তাই খাদ্য লবন। এর রাসায়নিক নাম সোডিয়াম ক্লোরাইড। খাদ্য লবনের একটি অণুতে একটি সোডিয়াম পরমাণু এবং একটি ক্লোরিন পরমাণু থাকে।
সোডিয়াম ক্লোরাইডের প্রকৃতিঃ
ক) সোডিয়াম ক্লোরাইড একটি নরমাল লবণ।
খ) সাধারণ উষ্ণতায় NaCl কঠিন এবং কেলাসিত পদার্থ।
গ) খাদ্য লবন একটি অজৈব পদার্থ
ঘ) খাদ্য লবন গন্ধহীন এবং অনুদ্বায়ী পদার্থ।
ঙ) সোডিয়াম-ক্লোরাইড জলে দ্রাব্য। এর জলীয় দ্রবণে এসিড বা ক্ষারের কোন ধর্ম প্রকাশ পায় না।
চ) সোডিয়াম ক্লোরাইডের গলনাঙ্ক 160 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। এবং স্ফুটনাঙ্ক 1465 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড।
ছ) এর কেলাসের আকার 6 তল বিশিষ্ট ঘনকের মত।
জ) সোডিয়াম-ক্লোরাইড একটি তড়িৎযোজী যৌগ, আয়নিত হয়। জলীয় দ্রবণে NaCl অনু সম্পূর্ণ বিয়োজিত হয়ে Na+ এবং Cl– আয়নে পরিণত হয়।
কার্বন: সংকেত, যোজনী, পারমাণবিক গুরুত্ব, বহুরূপতা, ব্যবহার
সোডিয়াম ক্লোরাইড বা খাদ্য লবণের ব্যবহারঃ
সোডিয়াম ক্লোরাইডের ব্যবহার নিচে উল্লেখ করা হলো
ক) খাদ্য লবন আমাদের খাদ্যের একটি প্রয়োজনীয় উপাদান। দেহের উপাদান হিসেবে এর প্রয়োজন আছে।
খ) কলেরা রোগীর দেহে জলের ভাগ অনেক কমে যায় বলে লবণ জলের ইনজেকশন দিতে হয়।
গ) সোডিয়াম-ক্লোরাইড জীবানুনাশক এবং পচন নিবারক, এইজন্য মাছ-মাংস প্রভৃতিতে লবণ মাখিয়ে অনেকদিন পর্যন্ত অবিকৃত রাখা যায়।
ঘ) হিম মিশ্র প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়, বরফের সঙ্গে লবণ মেশালে উষ্ণতা মাইনাস ২০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড তাপমাত্রায় নেমে আসে।
ঙ) চিনা মাটির বাসন পালিশ করতে ব্যবহৃত হয়।
চ) ধাতব সোডিয়াম, সোডিয়াম কার্বনেট, কস্টিক সোডা, হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড, ক্লোরিন, সোডিয়াম সালফেট প্রভৃতি রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুতিতে ব্যবহৃত হয়।
✅ কস্টিক সোডা বা সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড (NaOH)ঃ
কস্টিক সোডার অণুর মধ্যে একটি সোডিয়াম পরমাণু,একটি অক্সিজেন পরমাণু এবং একটি হাইড্রোজেন পরমাণু থাকে; অক্সিজেন এবং হাইড্রোজেন পরমাণু যুক্ত অবস্থায় হাইড্রোক্সিল (OH) মূলক রূপে বর্তমান থাকে।
সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা কস্টিক সোডার প্রকৃতিঃ
১. সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড তীব্র ক্ষার জাতীয় কঠিন পদার্থ।
২. সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড অনুদ্বায়ী গন্ধহীন পদার্থ।
৩. কস্টিক সোডা একটি অজৈব পদার্থ।
৪. বিশুদ্ধ অবস্থায় সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড দেখতে সাদা এবং স্ফটিকাকার।
৫. খোলা বাতাসে রাখলে বাতাস থেকে জলীয়বাষ্প এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড শোষণ করে সোডিয়াম কার্বনেটে পরিণত হয়।
৬. জলে খুব দ্রুত দ্রবীভূত হয় এবং দ্রবীভূত হওয়ার সময় প্রচুর তাপ উৎপন্ন করে।
৭. জলীয় দ্রবণে বা গলিত অবস্থায় সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বিয়োজিত হয়ে Na+ এবং OH– আয়ন উৎপন্ন করে।
৮. এসিডের সঙ্গে কস্টিক সোডার বিক্রিয়ায় লবণ ঐ জল উৎপন্ন হয়।
৯. কস্টিক সোডার জলীয় দ্রবণ ক্ষারধর্মী; লাল লিটমাসকে সোডা দ্রবণের নীল হয়ে যায়।
১০. দ্রবণটি সাবানের মতো পিচ্ছিল বোধ হয়।
১১. সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড দেহের সংস্পর্শে এলে দাহ এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়।
১২. 318 ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড উষ্ণতায় সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড গলে যায়।
সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা কস্টিক সোডার ব্যবহারঃ
১. সোডিয়াম ধাতু উৎপাদনে কস্টিক সোডা ব্যবহার করা হয়।
২. তেলের সঙ্গে কস্টিক সোডা ফুঁটিয়ে সাবান প্রস্তুত করা হয়।
৩. কাগজ, রং এবং কৃত্রিম রেশম তৈরিতে কস্টিক সোডা ব্যবহার করা হয়।
৪. পেট্রোলিয়াম শোধনে এবং পরীক্ষাগারে বিকারক রূপে সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইডের ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়।
✅ এসিটিক অ্যাসিড কীঃ
এসিটিক অ্যাসিড ইথানোয়িক এসিড নামেও পরিচিত। এটি সি, এইচ এবং হে পরমাণু নিয়ে গঠিত। অ্যাসিটিক অ্যাসিডের আণবিক সূত্রটি C2H402 । তবে এসিটিক অ্যাসিড উপস্থাপনের সর্বাধিক সাধারণ উপায় হ'ল CH3COOH। এই সূত্রটি অ্যাসিটিক অ্যাসিড গঠন সম্পর্কে কিছু বিশদ নির্দেশ করে। এসিটিক অ্যাসিড একটি কার্বোঅক্সিলিক অ্যাসিড। এটিতে কেবল একটি কার্বোঅক্সিলিক অ্যাসিড গ্রুপ রয়েছে। এটি একটি মিথাইল গ্রুপ (-CH3 ) দ্বারা গঠিত যা কার্বোঅক্সিলিক অ্যাসিড গ্রুপের কার্বন পরমাণুর সাথে সংযুক্ত। এসিটিক অ্যাসিডের গুড় ভর প্রায় 60 গ্রাম / মোল ol
চিত্র : এসিটিক অ্যাসিডের রাসায়নিক কাঠামো
ঘরের তাপমাত্রা এবং চাপের ক্ষেত্রে এসিটিক অ্যাসিড একটি বর্ণহীন তরল এবং এটির খুব তীব্র গন্ধ থাকে। এই তরলের ফুটন্ত পয়েন্টটি প্রায় 118 ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড হয় পিকে এই অ্যাসিডের একটি মান প্রায় 4.76। অতএব, এসিটিক অ্যাসিড একটি দুর্বল অ্যাসিড, এবং এটি আংশিকভাবে পানিতে বিচ্ছিন্ন হয়। তবে এসিটিক অ্যাসিড পানিতে ভুল।
জলীয় দ্রবণগুলিতে এসিটিক অ্যাসিড বিচ্ছিন্ন হয়ে কার্বক্সাইলিক গ্রুপের হাইড্রোজেন পরমাণুকে এইচ + আয়ন হিসাবে প্রকাশ করে। এসিটিক অ্যাসিডের অম্লতার কারণ এটি। কার্বোঅক্সিলিক গ্রুপে –OH বন্ডের উপস্থিতির কারণে, অ্যাসিটিক অ্যাসিডের শক্ত পর্যায়ে শক্তিশালী হাইড্রোজেন বন্ধন থাকতে পারে।
এসিটিক অ্যাসিড পোলার দ্রাবক বা নন-পোলার দ্রাবকগুলির সাথে মেশাতে পারে। এসিটিক অ্যাসিডের পোলার গ্রুপটি একটি কার্বোক্সিলিক গ্রুপ। এটি মেরু দ্রাবকগুলির সাথে এসিটিক অ্যাসিডের মিশ্রণ ঘটায়। মিথাইল গ্রুপটি একটি নন-পোলার গ্রুপ এবং অ-মেরু দ্রাবকগুলির সাথে এসিটিক অ্যাসিডের মিশ্রণ ঘটায়।
এসিটিক অ্যাসিডের প্রয়োগসমূহঃ
১. ফেব্রিক নিউট্রাল করার জন্য
২. ভিনেগার উৎপাদন
৩. ধাতু অ্যাসিটেটের প্রস্তুতি
৪. রেজিনের জন্য দ্রাবক
৫. অ্যাসিটিক অ্যানহাইড্রাইড উত্পাদন
৬. পলিয়েস্টার ডাইং
✅ অক্সালিক অ্যাসিডঃ
অক্সালিক অ্যাসিড একটি জৈব যৌগ এর রাসায়নিক সংকেত C₂H₂O₄। এটি সাদা স্ফটিকাকার শক্ত পদার্থ এবং পানিতে বর্ণহীন দ্রবণ তৈরি করে। এটির গাঠনিক সংকেত HOOCCOOH, এটি সাধারণ ডাইকার্বক্সিলিক অ্যাসিডের শ্রেণিবিন্যাসকে প্রতিফলিত করে। এর অ্যাসিড শক্তিমান অ্যাসিটিক অ্যাসিডের চেয়ে অনেক বেশি।
সূত্র: C2H2O4
পেষক ভর: ৯০.০৩ g/mol
ঘনত্ব: ১.৯ g/cm³
✅ ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইটঃ
এটি একটি অজৈব যৌগ যার রাসায়নিক সংকেত Ca(OCl)Cl। পানি পরিশোধন এবং ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে ক্লোরিন পাউডার অথবা ব্লিচ পাউডার নামে বাজারে পাওয়া যায়। আর্দ্র এবং অনাদ্র দুই অবস্থায় ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট পাওয়া যায়। এটা পানিতে খুব বেশি দ্রবীভূত হয় না। এর থেকে তীব্র ক্লোরিনের গন্ধ পাওয়া যায়।
বৈশিষ্ট্য
সাদা, অনিয়তাকার এবং একটি অজৈব পদার্থ ।ক্লোরিনের ঝাঁঝালো গন্ধ পাওয়া যায় ।কার্বন ডাই অক্সাইড এর সাথে বিক্রিয়ায়ক্যালসিয়াম কার্বনেট এবং ডাইক্লোরিন মনোক্সাইড উৎপন্ন করে।হাইড্রোক্লোরিক এসিডের সাথে বিক্রিয়া করেক্যালসিয়াম ক্লোরাইড, পানি এবং ক্লোরিন গ্যাস উৎপন্ন করে।
Ca(OCl)2 + 4 HCl → CaCl2 + 2 H2O + 2 Cl2
উৎপাদন
ক্যালসিয়াম হাইড্রোক্সাইডের মধ্যে ক্লোরিন গ্যাস চালনা করে বাণিজ্যিক ভাবে হাইপো উৎপাদন করা হয়। বিভিন্ন ঘনত্বের ব্লিচ পাউডার পেতে কয়েক ধাপে বিক্রিয়া পরিচালনা করা হয়।
2 Cl2 + 2 Ca(OH)2 → Ca(OCl)2 + CaCl2 + 2 H2O
ব্যবহার:
জীবাণুনাশক হিসাবে, পানি বিশুদ্ধ করতে, ক্লোরোফর্ম প্রস্তুতিতে, এবং বস্ত্র বিরঞ্জন করতে ব্যবহৃত হয় ব্লিচিং পাউডার ব্যবহার করা হয় ।
✅ হাইড্রোজেন পারক্সাইডঃ
হাইড্রোজেন পারক্সাইড একটি রাসায়নিক যৌগ যার সংকেত H2O2। বিশুদ্ধ অবস্থায় এটি বর্ণহীন তরল, পানির থেকে এর সান্দ্রতা সামান্য বেশি।
নিরাপত্তাজনিত কারণে সব সময় এটার জলীয় দ্রবণ ব্যবহার করা হয়। H2O2 সব থেকে সরল পারক্সাইড (যে যৌগে অক্সিজেন-অক্সিজেন একক বন্ধন থাকে) এবং এটা শক্তিশালী জারক ও বিরঞ্জক। গাঢ় H2O2 রকেটের জ্বালানীতে প্রোপেল্যান্ট হিসেবে ব্যবহার করা হয়। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রিতে ইউনিভার্সাল ব্লিচিং এজেন্ট হিসেবে ব্যাবহার করা হয় ।
✅ সাবানঃ
তেল বা চর্বিকে কস্টিক সোডা বা কস্টিক পটাশ সহযোগে আর্দ্র-বিশ্লেষণ করে সোডিয়াম বা পটাশিয়াম সাবান তৈরি করা হয় । সাবান তৈরির এই বিক্রিয়াকে সাবানায়ন বিক্রিয়া বলে ।
সাবানের প্রকৃতিঃ
সাবান হলো উচ্চ আনবিক ওজন বিশিষ্ট জৈব ফ্যাটি এসিডের (যেমন স্টিয়ারিক এসিড, অলিক এসিড, পামিটিক অ্যাসিড ইত্যাদি) সোডিয়াম বা পটাশিয়াম লবণ। সাধারণ উষ্ণতায় কঠিন, জলে দ্রাব্য। সাবান এর জলীয় দ্রবণ ক্ষারীয়। জলে মিশে ফেনা উৎপন্ন করে।
সাবান তৈরির জন্য নারকেল তেল, তিলের তেল, তুলা বীজ তেল এবং প্রাণিজ চর্বি ব্যবহার করা হয়। এই তেলের সঙ্গে তীব্র ক্ষার যেমন সোডিয়াম হাইড্রোক্সাইড বা পটাশিয়াম হাইড্রোক্সাইড এর বিক্রিয়ায় সাবান উৎপন্ন হয়। এই বিক্রিয়াকে সাবানীভবন বলে।
সাবান জলে মেশালে আদ্র বিশ্লেষণ ঘটে ক্ষার উৎপন্ন করে, সেই জন্য পিচ্ছিল বোধ হয়।
✅ ডিটারজেন্টঃ
প্রথম বিশ্ব যুদ্ধোত্তর কালে তেল ও চর্বি এর অভাবে জার্মানীতে সর্বপ্রথম পেট্রোলিয়াম উপজাত থেকে ডিটারজেন্ট উদ্ভাবনের প্রয়াস নে্য়া হয় । ডিটারজেন্ট সাবানের মত একই উপায়ে ময়লা পরিষ্কার করে । ডিটারজেন্ট অণুর গঠন সাবান অণু থেকে ভিন্ন । ডিটারজেন্ট খর পানিতেও সমানভাবে কার্যকর ।
কাপড় পরিস্কার:
সাবান বা ডিটারজেন্ট লম্বা কার্বন শিকল যুক্ত অণু । দ্রবীভূত অবস্থায় এরা ঋণাত্বক চার্জ যুক্ত সাবান বা ডিটারজেন্ট আয়ন এবং ধনাত্বক চার্জ যুক্ত সোডিয়াম আয়নে বিশ্লিষ্ট হয় । সাবান বা ডিটারজেন্টের এক প্রান্ত ঋণাত্বক চার্জ যুক্ত থাকে এবং পানি কতৃক আকর্ষিত হয় । আয়নের এই অংশকে হাইড্রোফিলিক বা পানি আকর্ষি বলা হয় । অণুর অপর প্রান্ত পানি বিকর্ষি । হাইড্রোফোবিক অংশ তেল বা গ্রীজে দ্রবীভূত হয় ।
ময়লা কাপড়লে যখন সাবান বা ডিটারজেন্টসহ পানিতে ভেজানো হয় তখন হাইড্রোফোবিক অংশ কাপড়ের তেল বা গ্রীজ জাতীয় ময়লার প্রতি আকর্ষিত হয় এবং এতে দ্রবীভূত হয় । পক্ষান্তরে হাইড্রোফিলিক অংশ চতুপার্শ্বে পানির স্তরে প্রসারিত হয় । এ অবস্থায় কাপড়কে ঘষা দিলে বা মোচড়ানো হলে তেল বা গ্রীজ সম্পূর্ণরূপে হাইড্রোফিলিক অংশ দ্বারা আবৃত হয়ে পড়ে । তেল বা গ্রীজ এর চারপাশে ঋণাত্বক আধানের বলয় সৃষ্টি হয় । ফলে এগুলি সম্ভাব্য সর্বোচ্চ দুরুত্বে অবস্থান করতে চায় । এতে করে পানিতে তেল ও গ্রীজ এর অবদ্রব্য সৃষ্টি হয় এবং পানিতে ধৌত হয়ে যায় । ফলে কাপড় পরিষ্কার হয়ে যায় ।
✅ ব্লিচঃ Ca(OCl)Cl
কাপড় কাঁচার পরে অনেক সময় কাপড়ে কোনো কোনো দাগ থেকে যায় । সাবান বা ডিটারজেন্ট দিয়ে ধোয়ার পরেও এই দাগ যায় না । তখন ব্লিচ ব্যবহার করতে হয় । আমাদের দেশে সবচেয়ে প্রচলিত ব্লিচ হল ব্লিচিং পাউডার ; Ca(OCl)Cl । 40°C তাপমাত্রায় Ca(OH)2 এর মধ্যে Cl2 গ্যাস চালনা করলে ব্লিচিং পাউডার উৎপন্ন হয় ।
Ca(OH)2 + Cl2 -> {40°C} Ca(OCl)Cl + H2O
ব্লিচিং পাউডারের দাগ উঠানোর কৌশল:
ব্লিচিং পাউডার বায়ুর কার্বন-ডাই-অক্সাইড এবং পানির সাথে বিক্রিয়া করে হাইপোক্লোরাস এসিড উৎপন্ন করে । হাইপোক্লোরাস এসিড তাৎক্ষণিক বিয়োজিত হয়ে জায়মান অক্সিজেন উৎপন্ন করে । এই জায়মান অক্সিজেনের জারণ ক্রিয়ায় কাপড়ের দাগ দূর হয় । জায়মান অক্সিজেন এবং HCl এর বিক্রিয়ায় পানি ও সক্রিয় ক্লোরিন উৎপন্ন হয় । এই ক্লোরিনের জারণ ক্রিয়ায় দাগ দূর হয় ।
Ca(OCl)Cl + H2O + CO2 -> CaCO3 + CaCl2 + 2HClO
2HClO -> HCl + [O]
2HCl + [O] -> H2O + 2[Cl]
✅ গ্লিসারিনঃ
গ্লিসারল বা গ্লিসারিন হল অ্যালকোহলজাতীয় যৌগ। 1779 খ্রিস্টাব্দে বিজ্ঞানী শীলে অলিভ অয়েলের সঙ্গে লিখার্জের মিশ্রণকে উত্তপ্ত করে গ্লিসারিন যৌগটি আবিষ্কার করেন। 1811 সালে বিজ্ঞানী শেভ্রেল এই যৌগটির নাম দেন গ্লিসারল। গ্লিসারিনের একটি অণুতে তিনটি কার্বন পরমাণুর সঙ্গে পাঁচটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং তিনটি হাইড্রোক্সিল অনু যুক্ত হয়ে একটি সরল অণু গঠন করে।
গ্লিসারল বা গ্লিসারিনের উৎসঃ
১. নারকেল তেল, অলিভ অয়েল, শূকরের চর্বি প্রভৃতি উদ্ভিজ্জ তেল বা প্রাণিজ চর্বির মধ্যে একটি রাসায়নিক উপাদান হিসেবে গ্লিসারাইড বর্তমান থাকে। উদ্ভিজ্জ তেল বা প্রাণিজ চর্বিকে ক্ষার দ্রবণ দ্বারা আর্দ্র বিশ্লেষিত করলে গ্লিসারল বা গ্লিসারিন পাওয়া যায়।
২. বর্তমান সময়কালে প্রোপিলিন নামে একটি অসম্পৃক্ত হাইড্রোকার্বন থেকে গ্লিসারল তৈরি করা হয়।
গ্লিসারলের বা গ্লিসারিনের ব্যবহারঃ
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে গ্লিসারিনের ব্যবহার বিভিন্নভাবে আমরা করে থাকি। নিচে গ্লিসারিনের কয়েকটি বিশেষ ব্যবহার সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো।
১. প্লাস্টিক শিল্পে গ্লিসারোল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করা হয়।
২. নাইট্রোগ্লিসারিন, ডিনামাইট প্রভৃতি বিস্ফোরক দ্রব্য প্রস্তুত করতে গ্লিসারোল বা গ্লিসারিন ব্যবহার করা হয়।
৩. ধোঁয়াহীন বারুদ জুতার কালি ছাপার কালি তৈরি করতে গিলিসারিন ব্যবহার করা হয়।
৪. সিগারেটের তামাক নরম ও আদ্র করতে, টাইপ মেশিনের ফিতা ও চামড়াকে নরম রাখতে গ্লিসারল ব্যবহার হয়।
৫. খাদ্য দ্রব্য সংরক্ষণে গ্লিসারল ব্যবহার করা হয়।
৬. গ্লিসারিন থেকে ফরমিক এসিড প্রস্তুত করা হয়।
৭. বস্ত্রশিল্পে এর ব্যবহার আছে।
৮. গ্লিসারিন থেকে নানারকম সাবান, প্রসাধন দ্রব্য এবং ওষুধ তৈরি করা হয়।
৯. শৈত্যপ্রধান দেশে মোটরগাড়ির রেডিয়েটরের জলের সঙ্গে হিমায়করোধক হিসেবে গ্লিসারিন ব্যবহার করা হয়।
১০. অ্যালকোহল প্রস্তুতিতে গ্লিসারিনের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য।
নতুন পোস্ট ও নোট পেতে টেলিগ্রাম জয়েন করুন
গ্লিসারোল বা গ্লিসারিনের ধর্ম
প্রত্যেক পদার্থের মধ্যে গ্লিসারিনের কিছু বিশেষ ধর্ম আছে। আমরা নিচে গ্লিসারিনের ধর্ম পয়েন্ট আকারে আলোচনা করব।
১. গ্লিসারোল বা গ্লিসারিন মিষ্টি স্বাদযুক্ত বর্ণহীন গাঢ় তরল
২. গ্লিসারল হলো অ্যালকোহল সমগোত্রীয় শ্রেণীর অ্যালিফেটিক যৌগ।
৩. গ্লিসারিন জলে দ্রাব্য
৪. গ্লিসারিনের স্ফুটনাঙ্ক 290°C
৫. শুদ্ধ গ্লিসারিন একটি জলাকর্ষী পদার্থ। অর্থাৎ বিশুদ্ধ গ্লিসারলের জলের প্রতি আকর্ষণ খুব বেশি।
গ্লিসারিনের সংকেত কিঃ
গ্লিসারিনের সংকেত হলো C3H5(OH)3
সাবানীভবন কি বা কাকে বলে এবং কিভাবে ঘটে ?
বিভিন্ন উদ্ভিজ্জ তেল, প্রাণিজ তেল ও চর্বিতে, ফ্যাটি এসিডের (যেমন পামিটিক, স্টিয়ারিক ও অলিক এসিড) সঙ্গে গ্লিসারাইড যৌগরূপে যুক্ত থাকে। তীব্র ক্ষার দ্রবণের (কস্টিক সোডা দ্রবণে) সাহায্যে তেল বা চর্বি আর্দ্র বিশ্লেষণ করে গ্লিসারল পাওয়া যায়। এই বিক্রিয়াকে সাবানীভবন বলা হয়।
গ্লিসারল বা গ্লিসারিনের গঠন
গ্লিসারিনের একটি অনুর মধ্যে তিনটি কার্বন পরমাণুর সঙ্গে পাঁচটি হাইড্রোজেন পরমাণু এবং তিনটি হাইড্রোক্সিল অনু বর্তমান থাকে। নিচের চিত্রে গঠন দেওয়া হল। C3H5(OH)3
✅ ইউরিয়াঃ
অজৈব যৌগ থেকে উৎপন্ন প্রথম জৈব যৌগ ইউরিয়া। 1773 সালে বিজ্ঞানী রুলে স্তন্যপায়ী প্রাণীর মূত্রে ইউরিয়ার উপস্থিতি আবিষ্কার করেন। পরে 1828 সালে জার্মান বিজ্ঞানী ফ্রেডরিক ভোহ্লার সর্বপ্রথম অজৈব যৌগ অ্যামোনিয়াম সায়ানেটকে উত্তপ্ত করে ইউরিয়া প্রস্তুত করেন। পরীক্ষাগারে অজৈব যৌগ থেকে জৈব যৌগ প্রস্তুতির এটাই হলো প্রথম নমুনা।
ইউরিয়ার উৎসঃ
ইউরিয়ার উৎস নিয়ে আলোচনা করলাম
১. মানবদেহের এবং প্রাণীদেহের প্রোটিন বিশ্লিষ্ট হয়ে ইউরিয়া উৎপন্ন হয় এবং প্রাণীর মূত্রে এই যৌগটি পাওয়া যায়। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের দেহে প্রোটিন বিশ্লিষ্ট হয়েছে পদার্থ রূপে ইউরিয়া তৈরি হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মূত্র থেকে প্রতিদিন প্রায় ত্রিশ গ্রাম ইউরিয়া নির্গত হয়।
২. অ্যামোনিয়া থেকে ইউরিয়া উৎপাদন করা যায়। 100-200 বায়ুমন্ডলীয় চাপে নির্জল তরল অ্যামোনিয়া ও কার্বন ডাই অক্সাইডের মিশ্রণকে 200°C উষ্ণতায় উত্তপ্ত করলে প্রথমে অ্যামোনিয়াম কার্বনেট উৎপন্ন হয়, পরে উৎপন্ন অ্যামোনিয়াম কার্বনেট ইউরিয়া ও জলে বিয়োজিত হয়।
2NH3+CO2=NH2COONH4
NH2COONH4=CO(NH2)2+H2O
ইউরিয়ার ধর্মঃ
প্রথম আবিষ্কৃত অজৈব থেকে জৈব যৌগ হিসাবে ইউরিয়ার ধর্ম সম্পর্কে জানার আগ্রহ আমাদের অনেক বেশি। তাই ইউরিয়ার ধর্ম সম্বন্ধে নিচে আলোচনা করা হলো
১. ইউরিয়া একটি অ্যালিফেটিক হাইড্রোকার্বন।
২. এটি জলে দ্রাব্য।
৩. ইউরিয়ার স্ফুটনাংক 132°
৪. ইউরিয়া সাদা, কেলাসাকার কঠিন পদার্থ।
৫. ইউরিয়ার একটি অণুতে দুইটি অ্যামিনো মূলক এবং একটি কার্বলিক মূলক থাকে।
৬. স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মূত্রের একটি উপাদান হলো ইউরিয়া।
ইউরিয়ার ব্যবহারঃ
ইউরিয়ার বহুধা ব্যবহার আছে। ইউরিয়ার ব্যবহার সম্বন্ধে আলোচনা করা হলো
১. নাইট্রোজেন ঘটিত সার হিসাবে জমিতে প্রচুর পরিমাণে ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়।
২. ইউরিয়া ফরমালডিহাইড, রেজিন এবং প্লাস্টিক উৎপাদনে ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়।
৩. বিভিন্ন ওষুধ প্রস্তুতিতে বিশেষ করে কালাজ্বরের ওষুধ “ইউরিয়া স্টিবামিন”এবং ঘুমের ওষুধ “বারবিটিউরেট” প্রস্তুত করতে ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়।
৪. নাইট্রাস অ্যাসিড দূর করতে ইউরিয়া ব্যবহার করা হয়।
৫. নাইট্রো সেলুলোজ ও সেলোফেন এবং রেয়নের শিল্প প্রস্তুতিতে ইউরিয়া ব্যবহৃত হয়।
1 টি মন্তব্য:
nice
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন