কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেড | পোশাক কারখানা | মানুষের জন্য ভালোবাসা - Textile Lab | Textile Learning Blog
কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেড |  পোশাক কারখানা | মানুষের জন্য ভালোবাসা


পুরো কারখানায় ৬ হাজার ৪৬১ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে ৯৬৬ জন শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী ছোটখাটো মানুষ। ধুলাবালুমুক্ত থাকতে মুখে মুখবন্ধনী (মাস্ক) লাগিয়েছেন। মন দিয়ে একটার পর একটা টি-শার্ট বা গোল গলার গেঞ্জি উল্টেপাল্টে দেখছেন। আসলে গেঞ্জিতে ছেঁড়া- ফাটা বা সেলাইয়ে কোনো সমস্যা আছে কি না, সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। কাছে গিয়ে নাম জানতে চাইলে ইশারায় বোঝাতে চাইলেন, কথা বলতে পারেন না তিনি। এমনকি শুনতেও পান না।

গলায় ঝোলানো পরিচয়পত্র এগিয়ে দিলেন। তাঁর নাম সাজ্জাদ (বধির), পদবি কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর। নিয়োগের তারিখ ০৩-০১-২০১০। কেয়া গ্রুপের কেয়া নিট কম্পোজিট নামের পোশাক কারখানায় কাজ করেন সাজ্জাদ। তাঁর মতো অনেক শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ কাজ করেন এখানে। সংখ্যাটা শুনলে সত্যিই অবাক হতে হবে। সব মিলিয়ে ৯৬৬ জন। হ্যাঁ, ভুল পড়েননি, ৯৬৬। বছরের পর বছর ধরে অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানাটিতে কাজ করে যাচ্ছেন এই শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী শ্রমিকেরা।

গাজীপুরের কোনাবাড়ী থেকে হাতের বাঁয়ে ভাঙাচোরা সড়ক ধরে কয়েক কিলোমিটার এগোলেই  জরুন এলাকায় কেয়া নিট কম্পোজিট কারখানা। ১৯ মে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারখানার ফটকে পৌঁছাতেই কয়েকজন শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী নিরাপত্তাকর্মী আমাদের স্বাগত জানালেন। তাঁদের
সঙ্গে বেসরকারি নিরাপত্তা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও সব সময়ই থাকেন।

তিন শ বিঘা জমির ওপর কেয়া গ্রুপের বিরাট চত্বরে কেয়া নিট কম্পোজিট কারখানাটিই সবচেয়ে বড়। ৯ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট জায়গা। অপর পাশে এক ছাদের নিচে কেয়া কটন মিলস, কেয়া স্পিনিং মিলস ও কেয়া ইয়ার্ন মিলস। মাঝে ৬০ ফুট চওড়া সড়ক। সড়ক বিভাজকের ওপর কাঠবাদাম, কৃষ্ণচূড়া, চেরি ফল ও  নারকেলগাছের সারি। মিনিট কয়েক হেঁটে কারখানার মূল ফটকে পৌঁছাতেই কয়েকজন
শ্রমিককে তিন-চারটি পুরোনো সেলাই মেশিন ট্রাকে তুলতে দেখা গেল। পাশে দাঁড়ানো
কারখানার কমপ্লায়েন্স কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, তাঁরা সবাই শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী শ্রমিক।
কারখানায় শত শত শ্রমিক কাজ করছেন। তবে তাঁদের শারীরিক গড়ন দেখে পার্থক্য করার কোনো উপায় নেই। আমাদের আলোকচিত্রী জিয়া ইসলাম ছবি.তোলার প্রস্তুতি নিতেই খেয়াল করলাম, শ্রমিকেরা একে অন্যকে ইশারা ভাষায় ডাকছেন, কথা বলছেন।

সবাই যে শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী, তা কিন্তু নয়। তবে কম-বেশি সবাই ইশারা ভাষা জানেন। এমনটাই জানালেন কেয়া গ্রুপের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পরিচালক আক্কাস আলী পাঠান।

সোহেল রানা বলেন, পুরো কারখানায় ৬ হাজার ৪৬১ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে ৯৬৬ জন শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী। অন্যদিকে একই এলাকায় কেয়া গ্রুপের কেয়া কসমেটিকস কারখানায় কাজ করেন ৪৮ জন অন্ধ শ্রমিক। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের উৎপাদনক্ষমতা অন্যদের চেয়ে ভালো। বিকেল পাঁচটা বাজলেই অন্যরা কারখানা ছাড়ার জন্য ব্যস্ত হলেও প্রতিবন্ধীদের মধ্যে এই প্রবণতা নেই। প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে হলে দোভাষী লাগবে। এই কাজে পারদর্শী কারখানার অগ্নিনির্বাপণ কর্মী রাকিবুল ইসলাম। একটি কাজে কারখানার বাইরে আছেন। তাঁর আসতে মিনিট দশেক লাগবে। ততক্ষণে কারখানা ঘুরে দেখার পাশাপাশি অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার কাজটি সারতে লাগলাম।

মেশিনে গেঞ্জি সেলাইয়ের কাজ করছিলেন শেফালী বেগম। বললেন, ‘নয় বছর ধরে কারখানায় আছি। প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে কাজ করতে কোনো সমস্যা হয় না। মাঝেমধ্যে তারা রেগে যায়, তবে বুঝিয়ে বললেই শান্ত হয়।’ একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ইশারা ভাষা অনেকটাই বোঝেন বলে জানালেন তিনি। কথা প্রসঙ্গে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী মুক্তাকে ইশারায় ডাকলেন শেফালী। মুক্তা আমাদের দিকে তাকায়, আবার কাজে মন দেয়। সে সেলাই করা গেঞ্জির হাতা বা স্লিভ ওল্টানোর কাজ করে। তিন বছর ধরে কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগে কাজ করেন রোজিনা খাতুন। তাঁর পাশেই কাজ করেন
প্রতিবন্ধী শ্রমিক মুরাদ ও আবুল খায়ের।

প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে কাজ করতে কেমন লাগে জানতে চাইলে রোজিনা বলেন, ‘অনেক ভালো,
অনেক আনন্দ লাগে। ওদের ব্যবহার, চালচলন অনেক ভালো।’দোভাষী তখন আসেননি। রোজিনাকে জিজ্ঞেসক রলাম, ইশারা ভাষা জানেন কি না। বললেন, পারেন মোটামুটি। ফলে তাঁর সাহায্য নিয়ে মুরাদের সঙ্গে আলাপ। মুরাদের ভাষা বুঝিয়ে বললেন রোজিনা।  মুরাদ বিবাহিত। তাঁর দুই বাচ্চা। কারখানায় কাজ করে তাঁর যে আয়, তা দিয়ে সংসার ভালোই চলে যায়।

আমাদের আলাপচারিতা দেখে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসেন আবুল খায়ের। রোজিনার সাহায্যে কথা বলে জানা গেল, খায়ের দাখিল পাস। ২০০৯ সাল থেকে এই কারখানায় কাজ করেন। তাঁর এক মেয়ে ও দুই ছেলে। মাসে ১০ হাজার টাকার মতো মজুরি পান। এখানে কাজ করতে কোনো সমস্যা হয় না। কাজ না পেলে কী করতেন—এমন প্রশ্নে খায়ের বলেন, ‘তাহলে কষ্টে থাকতাম। হয়তো বাড়িতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটাতাম।’ ততক্ষণে দোভাষী রাকিবুল ইসলাম চলে এসেছেন। বয়সে একেবারেই তরুণ। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলাম সাজ্জাদের কাছে। দোভাষী না থাকায় একবার তাঁর সঙ্গে কথা না বলে ফিরে আসতে হয়েছে। এবার আর সমস্যা হলো না, রাকিবুল ইশারা ভাষায় বেশ পারদর্শী। আমি প্রশ্ন করছি। সেটি ইশারায় রাকিবুল সাজ্জাদকে বুঝিয়ে দেন। সাজ্জাদ আবার ইশারায় উত্তর দিলে রাকিবুল সেটি বলছেন। সাজ্জাদের বাড়ি নওগাঁয়। অষ্টম শ্রেণি পাস। তাঁরা তিন ভাই ও দুই বোন। বাবা বাসচালকের সহযোগীর কাজ করেন। সাজ্জাদ বিবাহিত। মাসে ১৩ হাজার টাকার মতো মজুরি পান। কারখানার কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে সাজ্জাদ বলেন, ‘যত দিন পারি কাজ করব। তারপর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কিছু একটা করব। সে জন্য অল্প অল্প টাকা জমাচ্ছি।’

সাজ্জাদের স্বপ্নের কথা শুনে সামনের দিকে হাঁটি আমরা। সুইং সেকশনে যেতেই সোহেল রানা বললেন,  এখানে একজন নারীশ্রমিক আছেন, যাঁর স্বামীও এই কারখানায় কাজ করেন। উভয়েই বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। রাকিবুল ইশারা ভাষায় ডাকতেই মেশিন ছেড়ে উঠে এলেন। নাম জানতে চাইলাম। তখন আমার হাতের খাতা ও কলম ইশারায় চেয়ে নিয়ে নিজেই লিখলেন, ‘শিউলী (বধির)। ২৭-০২-১২।’
স্বামীর নাম জানতে চেয়ে খাতা-কলম এগিয়ে দিলাম। এবার শিউলী ইংরেজিতে লিখলেন
‘Abdullah’ (আবদুল্লাহ)।

শিউলীরা পাঁচ বোন ও দুই ভাই। স্বামীকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। মাসে নয় হাজার টাকার
মতো মজুরি পান। কারখানার বাইরে চলতে-ফিরতে কিংবা বাজার সদাই করতে সমস্যা হয় কি না জানতে চাইলে শিউলী বলেন, ‘বাইরের লোকজনও আমাদের ভাষা বোঝে। সমস্যা হয় না।’ জানতে চাইলে আক্কাস আলী পাঠান বলেন, ‘প্রায় ১৩ বছর ধরে আমাদের কারখানায় প্রতিবন্ধীরা কাজ  করেন। এলাকার মানুষজনও সহযোগিতা করে।

দোকানদারেরা তাঁদের ভাষা শিখে ফেলেছেন। সামাজিকভাবে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
কেয়া গ্রুপের কর্মকর্তারা বললেন, কারখানাটিতে গড়ে প্রতিদিন ২ লাখ ৬০ হাজার থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টি-শার্ট উৎপাদিত হয়। ইউরোপ ও আমেরিকায় কেয়া গ্রুপের নিজস্ব ব্র্যান্ড নামেই এগুলো রপ্তানি হয়। বর্তমানে মাসে প্রায় ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে কেয়া গ্রুপ।
তুলা থেকে সুতা, সেই সুতা থেকে কাপড় তৈরি করে রং করা এবং সবশেষে পোশাক—সবই হয় একই কারখানায়।

৯৬৬ জন প্রতিবন্ধীকে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার মূল কারিগর কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল খালেক পাঠান। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গাজীপুর থেকে গুলশানে কেয়ার মূল কার্যালয়ে হাজির হলাম শেষ বিকেলে। প্রথমেই জানতে চাইলাম তাঁর উঠে আসার গল্প। আবদুল খালেক পাঠান বললেন, ১৯৭৭ সালে এসএসসি পাস করে গাজীপুরের একটি ইটভাটায় কাজ নেন। কয়েক বছর কাজ করার পর জমি ভাড়া নিয়ে নিজেই ইটভাটা দেন। সময়টা তখন ১৯৮৪ সাল হবে। একবার কাশেম কটন মিলে ইট দিতে গিয়ে কারখানাটি ঘুরে দেখলাম। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখি, টেক্সটাইল মিল করব।
১৯৯১ সালে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিলেন আবদুল খালেক। গড়লেন খালেক গার্মেন্টস অ্যান্ড নিটিং। পাঁচ বছর পর করলেন কেয়া কসমেটিকস। পরে ৩০০ বিঘা জমিরওপর কেয়া নিট কম্পোজিট কারখানা। ২০০৩ সালে কারখানাটির উৎপাদন শুরু হয়। তখন আগের পোশাক কারখানাটি বন্ধ করে দেন।

শুরুতে প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের সঙ্গে অন্য শ্রমিকদের প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ হতো। মাঝেমধ্যেই কারখানা
বন্ধ থাকত। তবে ২০০৯ সালে দুই পক্ষের মধ্যে বড় আকারে সমস্যা হলো। এমন তথ্য দিয়ে আবদুল খালেক বলেন, ‘কারখানায় নয় হাজার সাধারণ শ্রমিকের পাশাপাশি এক হাজার প্রতিবন্ধী শ্রমিক ছিল।

কারখানা বন্ধ। সবাইকে নিয়ে বৈঠকে বসলাম। সাধারণ শ্রমিকেরা বলল, প্রতিবন্ধীরা থাকলে
তারা কাজ করবে না। তখন আমি বলে দিলাম, তোমাদের সমস্যা থাকলে তোমরা কাজ না করতে
পারো। তবে আমি প্রতিবন্ধীদের রাখবই।’ কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার কথায়
সাধারণ শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে কারখানা ভাঙচুর করল। কর্মকর্তাদের মারধর করল। তারপর তিন মাস সব বন্ধ। ওই সময় প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের আমি নিয়মিত বেতন দিয়েছি। পরে প্রশাসনের সহায়তায় সাধারণ শ্রমিকেরা আপসে আসল। তখন আমি তাদের দুটি শর্ত দিলাম—এক. সবাইকে ইশারা ভাষা শিখতে হবে। দুই. প্রতিবন্ধী ও সাধারণ শ্রমিক কেউ ঝামেলা করলে দুজনকেই ছাঁটাই করা হবে। এই সিদ্ধান্তের পর আর বড় কোনো ঝামেলা হয়নি।’ প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের উৎপাদনক্ষমতা কেমন জানতে চাইলে আবদুল খালেক পাঠান বলেন, ‘তাঁরা ভালোর (সাধারণ শ্রমিক) চেয়ে ভালো। তবে তাঁদের কাউন্সেলিং করাতে হয়। সাধারণ শ্রমিকদেরও করাতে হয়। দিনের পর দিন কাজটি করেছি আমি।’ তিনি মনে করেন, উদ্যোক্তারা যদি নিজেরা সময় ও ধৈর্য নিয়ে চেষ্টা করেন, তবে প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের কর্মক্ষম করাটা খুব কঠিন কিছু না।
ভবিষ্যতে আরেকটি পোশাক কারখানা করার স্বপ্ন দেখেন আবদুল খালেক। যেখানে ৪০০-৫০০ অন্ধ শ্রমিক কাজ করবেন। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্কে আমি এমন কারখানা দেখেছি।
এটি করা সম্ভব। সে জন্য বিশেষ ডিভাইস বসানো সেলাই মেশিন লাগবে। আর প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানায়, বেক্সিমকো ফ্যাশনে ৫৭৬ জন প্রতিবন্ধী শ্রমিক কাজ করেন। এ ছাড়া ফখরুদ্দিন টেক্সটাইল, ইন্টারস্টফ, ভিন্টেজ ডেনিম স্টুডিও, ইন্টারফ্যাব, অবন্তি কালার টেক্স, ফকির ফ্যাশন, প্যান্ডোরা সোয়েটার্স, তারসিমা, ওনাস গ্রুপ, গিভেন্সি গ্রুপ, পশমী সোয়েটারে প্রতিবন্ধী শ্রমিক আছেন।

বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে আমরা প্রতিবন্ধী মানুষকে অর্থনীতিতে নিয়ে আসতে কাজ করছি। বেসরকারি সংস্থা সূচনা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আমরা একটি কর্মসূচি নিয়েছি।এর মাধ্যমে অটিজমে আক্রান্তদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে কারখানায় চাকরি দেব।’ কেয়া নিট কম্পোজিট কারখানায় থেকে দুপুরে আমরা যখন বের হই, তখন দুপুরের খাবারের ছুটি হলো।

কারখানার সামনের একটি মুদি দোকানে আমরা দাঁড়াই। পাশেই এক ফেরিওয়ালা ভ্যানগাড়িতে
করে আম বিক্রি করছেন। মিনিট কয়েক পর এক প্রতিবন্ধী শ্রমিক এসে সেই ভ্যানগাড়ির আম
দেখলেন। আম বিক্রেতার সঙ্গে ইশারা ভাষায় দাম জানতে চাইলেন। আম বিক্রেতাও কিছু একটা বললেন।
শামীম তালুকদার নামের ওই আম বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলাম, আপনি কি প্রতিবন্ধীদের ভাষা বোঝেন? বললেন, ‘কিছু কিছু তো বুঝি। না বুঝলে ব্যবসা করুম ক্যামনে?’

সত্যিই তো, মানুষ চেষ্টা করলে কী না পারে!

সোর্সঃ
প্রথম আলোর প্রতিবেদন

কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেড | পোশাক কারখানা | মানুষের জন্য ভালোবাসা

কেয়া নিট কম্পোজিট লিমিটেড |  পোশাক কারখানা | মানুষের জন্য ভালোবাসা


পুরো কারখানায় ৬ হাজার ৪৬১ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে ৯৬৬ জন শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী ছোটখাটো মানুষ। ধুলাবালুমুক্ত থাকতে মুখে মুখবন্ধনী (মাস্ক) লাগিয়েছেন। মন দিয়ে একটার পর একটা টি-শার্ট বা গোল গলার গেঞ্জি উল্টেপাল্টে দেখছেন। আসলে গেঞ্জিতে ছেঁড়া- ফাটা বা সেলাইয়ে কোনো সমস্যা আছে কি না, সেটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। কাছে গিয়ে নাম জানতে চাইলে ইশারায় বোঝাতে চাইলেন, কথা বলতে পারেন না তিনি। এমনকি শুনতেও পান না।

গলায় ঝোলানো পরিচয়পত্র এগিয়ে দিলেন। তাঁর নাম সাজ্জাদ (বধির), পদবি কোয়ালিটি ইন্সপেক্টর। নিয়োগের তারিখ ০৩-০১-২০১০। কেয়া গ্রুপের কেয়া নিট কম্পোজিট নামের পোশাক কারখানায় কাজ করেন সাজ্জাদ। তাঁর মতো অনেক শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী নারী-পুরুষ কাজ করেন এখানে। সংখ্যাটা শুনলে সত্যিই অবাক হতে হবে। সব মিলিয়ে ৯৬৬ জন। হ্যাঁ, ভুল পড়েননি, ৯৬৬। বছরের পর বছর ধরে অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে কারখানাটিতে কাজ করে যাচ্ছেন এই শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী শ্রমিকেরা।

গাজীপুরের কোনাবাড়ী থেকে হাতের বাঁয়ে ভাঙাচোরা সড়ক ধরে কয়েক কিলোমিটার এগোলেই  জরুন এলাকায় কেয়া নিট কম্পোজিট কারখানা। ১৯ মে সকাল সাড়ে ১০টার দিকে কারখানার ফটকে পৌঁছাতেই কয়েকজন শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী নিরাপত্তাকর্মী আমাদের স্বাগত জানালেন। তাঁদের
সঙ্গে বেসরকারি নিরাপত্তা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানের কর্মীরাও সব সময়ই থাকেন।

তিন শ বিঘা জমির ওপর কেয়া গ্রুপের বিরাট চত্বরে কেয়া নিট কম্পোজিট কারখানাটিই সবচেয়ে বড়। ৯ লাখ ২০ হাজার বর্গফুট জায়গা। অপর পাশে এক ছাদের নিচে কেয়া কটন মিলস, কেয়া স্পিনিং মিলস ও কেয়া ইয়ার্ন মিলস। মাঝে ৬০ ফুট চওড়া সড়ক। সড়ক বিভাজকের ওপর কাঠবাদাম, কৃষ্ণচূড়া, চেরি ফল ও  নারকেলগাছের সারি। মিনিট কয়েক হেঁটে কারখানার মূল ফটকে পৌঁছাতেই কয়েকজন
শ্রমিককে তিন-চারটি পুরোনো সেলাই মেশিন ট্রাকে তুলতে দেখা গেল। পাশে দাঁড়ানো
কারখানার কমপ্লায়েন্স কর্মকর্তা সোহেল রানা বলেন, তাঁরা সবাই শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী শ্রমিক।
কারখানায় শত শত শ্রমিক কাজ করছেন। তবে তাঁদের শারীরিক গড়ন দেখে পার্থক্য করার কোনো উপায় নেই। আমাদের আলোকচিত্রী জিয়া ইসলাম ছবি.তোলার প্রস্তুতি নিতেই খেয়াল করলাম, শ্রমিকেরা একে অন্যকে ইশারা ভাষায় ডাকছেন, কথা বলছেন।

সবাই যে শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী, তা কিন্তু নয়। তবে কম-বেশি সবাই ইশারা ভাষা জানেন। এমনটাই জানালেন কেয়া গ্রুপের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী পরিচালক আক্কাস আলী পাঠান।

সোহেল রানা বলেন, পুরো কারখানায় ৬ হাজার ৪৬১ জন শ্রমিক কাজ করেন। তাঁদের মধ্যে ৯৬৬ জন শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী। অন্যদিকে একই এলাকায় কেয়া গ্রুপের কেয়া কসমেটিকস কারখানায় কাজ করেন ৪৮ জন অন্ধ শ্রমিক। তিনি বলেন, প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের উৎপাদনক্ষমতা অন্যদের চেয়ে ভালো। বিকেল পাঁচটা বাজলেই অন্যরা কারখানা ছাড়ার জন্য ব্যস্ত হলেও প্রতিবন্ধীদের মধ্যে এই প্রবণতা নেই। প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলতে হলে দোভাষী লাগবে। এই কাজে পারদর্শী কারখানার অগ্নিনির্বাপণ কর্মী রাকিবুল ইসলাম। একটি কাজে কারখানার বাইরে আছেন। তাঁর আসতে মিনিট দশেক লাগবে। ততক্ষণে কারখানা ঘুরে দেখার পাশাপাশি অন্য শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলার কাজটি সারতে লাগলাম।

মেশিনে গেঞ্জি সেলাইয়ের কাজ করছিলেন শেফালী বেগম। বললেন, ‘নয় বছর ধরে কারখানায় আছি। প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে কাজ করতে কোনো সমস্যা হয় না। মাঝেমধ্যে তারা রেগে যায়, তবে বুঝিয়ে বললেই শান্ত হয়।’ একসঙ্গে কাজ করতে গিয়ে ইশারা ভাষা অনেকটাই বোঝেন বলে জানালেন তিনি। কথা প্রসঙ্গে কয়েক হাত দূরে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রবণ ও বাক্প্রতিবন্ধী মুক্তাকে ইশারায় ডাকলেন শেফালী। মুক্তা আমাদের দিকে তাকায়, আবার কাজে মন দেয়। সে সেলাই করা গেঞ্জির হাতা বা স্লিভ ওল্টানোর কাজ করে। তিন বছর ধরে কোয়ালিটি কন্ট্রোল বিভাগে কাজ করেন রোজিনা খাতুন। তাঁর পাশেই কাজ করেন
প্রতিবন্ধী শ্রমিক মুরাদ ও আবুল খায়ের।

প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে কাজ করতে কেমন লাগে জানতে চাইলে রোজিনা বলেন, ‘অনেক ভালো,
অনেক আনন্দ লাগে। ওদের ব্যবহার, চালচলন অনেক ভালো।’দোভাষী তখন আসেননি। রোজিনাকে জিজ্ঞেসক রলাম, ইশারা ভাষা জানেন কি না। বললেন, পারেন মোটামুটি। ফলে তাঁর সাহায্য নিয়ে মুরাদের সঙ্গে আলাপ। মুরাদের ভাষা বুঝিয়ে বললেন রোজিনা।  মুরাদ বিবাহিত। তাঁর দুই বাচ্চা। কারখানায় কাজ করে তাঁর যে আয়, তা দিয়ে সংসার ভালোই চলে যায়।

আমাদের আলাপচারিতা দেখে আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসেন আবুল খায়ের। রোজিনার সাহায্যে কথা বলে জানা গেল, খায়ের দাখিল পাস। ২০০৯ সাল থেকে এই কারখানায় কাজ করেন। তাঁর এক মেয়ে ও দুই ছেলে। মাসে ১০ হাজার টাকার মতো মজুরি পান। এখানে কাজ করতে কোনো সমস্যা হয় না। কাজ না পেলে কী করতেন—এমন প্রশ্নে খায়ের বলেন, ‘তাহলে কষ্টে থাকতাম। হয়তো বাড়িতে ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে কাটাতাম।’ ততক্ষণে দোভাষী রাকিবুল ইসলাম চলে এসেছেন। বয়সে একেবারেই তরুণ। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে গেলাম সাজ্জাদের কাছে। দোভাষী না থাকায় একবার তাঁর সঙ্গে কথা না বলে ফিরে আসতে হয়েছে। এবার আর সমস্যা হলো না, রাকিবুল ইশারা ভাষায় বেশ পারদর্শী। আমি প্রশ্ন করছি। সেটি ইশারায় রাকিবুল সাজ্জাদকে বুঝিয়ে দেন। সাজ্জাদ আবার ইশারায় উত্তর দিলে রাকিবুল সেটি বলছেন। সাজ্জাদের বাড়ি নওগাঁয়। অষ্টম শ্রেণি পাস। তাঁরা তিন ভাই ও দুই বোন। বাবা বাসচালকের সহযোগীর কাজ করেন। সাজ্জাদ বিবাহিত। মাসে ১৩ হাজার টাকার মতো মজুরি পান। কারখানার কর্মকর্তারা তাঁর সঙ্গে ভালো ব্যবহার করেন। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী জানতে চাইলে সাজ্জাদ বলেন, ‘যত দিন পারি কাজ করব। তারপর গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কিছু একটা করব। সে জন্য অল্প অল্প টাকা জমাচ্ছি।’

সাজ্জাদের স্বপ্নের কথা শুনে সামনের দিকে হাঁটি আমরা। সুইং সেকশনে যেতেই সোহেল রানা বললেন,  এখানে একজন নারীশ্রমিক আছেন, যাঁর স্বামীও এই কারখানায় কাজ করেন। উভয়েই বাক্ ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী। রাকিবুল ইশারা ভাষায় ডাকতেই মেশিন ছেড়ে উঠে এলেন। নাম জানতে চাইলাম। তখন আমার হাতের খাতা ও কলম ইশারায় চেয়ে নিয়ে নিজেই লিখলেন, ‘শিউলী (বধির)। ২৭-০২-১২।’
স্বামীর নাম জানতে চেয়ে খাতা-কলম এগিয়ে দিলাম। এবার শিউলী ইংরেজিতে লিখলেন
‘Abdullah’ (আবদুল্লাহ)।

শিউলীরা পাঁচ বোন ও দুই ভাই। স্বামীকে নিয়ে ভাড়া বাড়িতে থাকেন। মাসে নয় হাজার টাকার
মতো মজুরি পান। কারখানার বাইরে চলতে-ফিরতে কিংবা বাজার সদাই করতে সমস্যা হয় কি না জানতে চাইলে শিউলী বলেন, ‘বাইরের লোকজনও আমাদের ভাষা বোঝে। সমস্যা হয় না।’ জানতে চাইলে আক্কাস আলী পাঠান বলেন, ‘প্রায় ১৩ বছর ধরে আমাদের কারখানায় প্রতিবন্ধীরা কাজ  করেন। এলাকার মানুষজনও সহযোগিতা করে।

দোকানদারেরা তাঁদের ভাষা শিখে ফেলেছেন। সামাজিকভাবে কোনো সমস্যা হচ্ছে না।’
কেয়া গ্রুপের কর্মকর্তারা বললেন, কারখানাটিতে গড়ে প্রতিদিন ২ লাখ ৬০ হাজার থেকে ২ লাখ ৭০ হাজার টি-শার্ট উৎপাদিত হয়। ইউরোপ ও আমেরিকায় কেয়া গ্রুপের নিজস্ব ব্র্যান্ড নামেই এগুলো রপ্তানি হয়। বর্তমানে মাসে প্রায় ৭০ লাখ মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি করে কেয়া গ্রুপ।
তুলা থেকে সুতা, সেই সুতা থেকে কাপড় তৈরি করে রং করা এবং সবশেষে পোশাক—সবই হয় একই কারখানায়।

৯৬৬ জন প্রতিবন্ধীকে কর্মক্ষম করে গড়ে তোলার মূল কারিগর কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল খালেক পাঠান। তাঁর সঙ্গে কথা বলতে গাজীপুর থেকে গুলশানে কেয়ার মূল কার্যালয়ে হাজির হলাম শেষ বিকেলে। প্রথমেই জানতে চাইলাম তাঁর উঠে আসার গল্প। আবদুল খালেক পাঠান বললেন, ১৯৭৭ সালে এসএসসি পাস করে গাজীপুরের একটি ইটভাটায় কাজ নেন। কয়েক বছর কাজ করার পর জমি ভাড়া নিয়ে নিজেই ইটভাটা দেন। সময়টা তখন ১৯৮৪ সাল হবে। একবার কাশেম কটন মিলে ইট দিতে গিয়ে কারখানাটি ঘুরে দেখলাম। তখন থেকেই স্বপ্ন দেখি, টেক্সটাইল মিল করব।
১৯৯১ সালে স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিলেন আবদুল খালেক। গড়লেন খালেক গার্মেন্টস অ্যান্ড নিটিং। পাঁচ বছর পর করলেন কেয়া কসমেটিকস। পরে ৩০০ বিঘা জমিরওপর কেয়া নিট কম্পোজিট কারখানা। ২০০৩ সালে কারখানাটির উৎপাদন শুরু হয়। তখন আগের পোশাক কারখানাটি বন্ধ করে দেন।

শুরুতে প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের সঙ্গে অন্য শ্রমিকদের প্রায়ই ঝগড়া-বিবাদ হতো। মাঝেমধ্যেই কারখানা
বন্ধ থাকত। তবে ২০০৯ সালে দুই পক্ষের মধ্যে বড় আকারে সমস্যা হলো। এমন তথ্য দিয়ে আবদুল খালেক বলেন, ‘কারখানায় নয় হাজার সাধারণ শ্রমিকের পাশাপাশি এক হাজার প্রতিবন্ধী শ্রমিক ছিল।

কারখানা বন্ধ। সবাইকে নিয়ে বৈঠকে বসলাম। সাধারণ শ্রমিকেরা বলল, প্রতিবন্ধীরা থাকলে
তারা কাজ করবে না। তখন আমি বলে দিলাম, তোমাদের সমস্যা থাকলে তোমরা কাজ না করতে
পারো। তবে আমি প্রতিবন্ধীদের রাখবই।’ কেয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান বলেন, ‘আমার কথায়
সাধারণ শ্রমিকেরা উত্তেজিত হয়ে কারখানা ভাঙচুর করল। কর্মকর্তাদের মারধর করল। তারপর তিন মাস সব বন্ধ। ওই সময় প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের আমি নিয়মিত বেতন দিয়েছি। পরে প্রশাসনের সহায়তায় সাধারণ শ্রমিকেরা আপসে আসল। তখন আমি তাদের দুটি শর্ত দিলাম—এক. সবাইকে ইশারা ভাষা শিখতে হবে। দুই. প্রতিবন্ধী ও সাধারণ শ্রমিক কেউ ঝামেলা করলে দুজনকেই ছাঁটাই করা হবে। এই সিদ্ধান্তের পর আর বড় কোনো ঝামেলা হয়নি।’ প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের উৎপাদনক্ষমতা কেমন জানতে চাইলে আবদুল খালেক পাঠান বলেন, ‘তাঁরা ভালোর (সাধারণ শ্রমিক) চেয়ে ভালো। তবে তাঁদের কাউন্সেলিং করাতে হয়। সাধারণ শ্রমিকদেরও করাতে হয়। দিনের পর দিন কাজটি করেছি আমি।’ তিনি মনে করেন, উদ্যোক্তারা যদি নিজেরা সময় ও ধৈর্য নিয়ে চেষ্টা করেন, তবে প্রতিবন্ধী শ্রমিকদের কর্মক্ষম করাটা খুব কঠিন কিছু না।
ভবিষ্যতে আরেকটি পোশাক কারখানা করার স্বপ্ন দেখেন আবদুল খালেক। যেখানে ৪০০-৫০০ অন্ধ শ্রমিক কাজ করবেন। আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিউইয়র্কে আমি এমন কারখানা দেখেছি।
এটি করা সম্ভব। সে জন্য বিশেষ ডিভাইস বসানো সেলাই মেশিন লাগবে। আর প্রতিবন্ধীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে।’

তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ জানায়, বেক্সিমকো ফ্যাশনে ৫৭৬ জন প্রতিবন্ধী শ্রমিক কাজ করেন। এ ছাড়া ফখরুদ্দিন টেক্সটাইল, ইন্টারস্টফ, ভিন্টেজ ডেনিম স্টুডিও, ইন্টারফ্যাব, অবন্তি কালার টেক্স, ফকির ফ্যাশন, প্যান্ডোরা সোয়েটার্স, তারসিমা, ওনাস গ্রুপ, গিভেন্সি গ্রুপ, পশমী সোয়েটারে প্রতিবন্ধী শ্রমিক আছেন।

বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে আমরা প্রতিবন্ধী মানুষকে অর্থনীতিতে নিয়ে আসতে কাজ করছি। বেসরকারি সংস্থা সূচনা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আমরা একটি কর্মসূচি নিয়েছি।এর মাধ্যমে অটিজমে আক্রান্তদের আমরা প্রশিক্ষণ দিয়ে কারখানায় চাকরি দেব।’ কেয়া নিট কম্পোজিট কারখানায় থেকে দুপুরে আমরা যখন বের হই, তখন দুপুরের খাবারের ছুটি হলো।

কারখানার সামনের একটি মুদি দোকানে আমরা দাঁড়াই। পাশেই এক ফেরিওয়ালা ভ্যানগাড়িতে
করে আম বিক্রি করছেন। মিনিট কয়েক পর এক প্রতিবন্ধী শ্রমিক এসে সেই ভ্যানগাড়ির আম
দেখলেন। আম বিক্রেতার সঙ্গে ইশারা ভাষায় দাম জানতে চাইলেন। আম বিক্রেতাও কিছু একটা বললেন।
শামীম তালুকদার নামের ওই আম বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলাম, আপনি কি প্রতিবন্ধীদের ভাষা বোঝেন? বললেন, ‘কিছু কিছু তো বুঝি। না বুঝলে ব্যবসা করুম ক্যামনে?’

সত্যিই তো, মানুষ চেষ্টা করলে কী না পারে!

সোর্সঃ
প্রথম আলোর প্রতিবেদন

1 টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

আসসালামুআলাইকুম, স্যার আমি মোঃ রাজু আহম্মেদ, একজন শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী,, আমি 2013 তে ssc 2015 তে HSC এবং bbs এর ২য় বছর পযন্ত পরেছি। স্যার আমার একটা জবের ভীষণ প্রয়োজন। দয়া করে আপনারা আমার একটা জবের ব্যবস্থা করতে পারলে আমি কৃতঙ্গ থাকব। ০১৭০১৬৮০৮৫৫