ফোর-এ ইয়ার্ন ডায়িং | 4A Yarn Dyeing Limited | Team Group - Textile Lab | Textile Learning Blog

ফোর-এ ইয়ার্ন ডায়িং | 4A Yarn Dyeing Limited | Team Group

ফোর-এ ইয়ার্ন ডায়িং | 4A Yarn Dyeing Limited | Team Group

ঢাকার অদূরে সাভারের বাইপাইল-ইপিজেডের কাছেই কারখানাটি। মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে গালিচার মতো সবুজ ঘাস। সারি সারি দেশি-বিদেশি ফুল-ফলের গাছ। যেন ছবির মতো সাজানো একখণ্ড আঙিনা। চারপাশ বেশ পরিপাটি, নিরিবিলি আর খোলামেলা। রয়েছে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস। এরই মাঝখানে বুক টান করে দাঁড়িয়ে আছে একটি বহুতল ভবন। হঠাৎ তাকিয়ে বোঝার উপায় নেই এটি কোনো পোশাক কারখানা। বলছিলাম টিম গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠান ফোর-এ ইয়ার্ন ডায়িং লিমিটেডের কথা। যে কারখানায় কাউকে ছোট বা বড় হিসেবে দেখা হয় না। যেখানে মালিক-শ্রমিক সবাই সমান। কর্মপরিবেশও নিরাপদ এবং শ্রমিকবান্ধব।

এরই মধ্যে পরিবেশবান্ধব কারখানা হিসেবে সুখ্যাতি কুড়িয়েছে ফোর-এ ইয়ার্ন ডায়িং। কারখানাটিতে ৮৪ লাইনে সাত হাজারের বেশি শ্রমিক কাজ করেন। গ্যাস-বিদ্যুতের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে কারখানায় বসানো হয়েছে সোলার প্যানেল বা সৌরবিদ্যুৎ। যেখানে ৩০০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে, যা কারখানায় মোট ব্যবহৃত বিদ্যুতের ২৫ শতাংশ। ছুটির দিনগুলোতে উৎপাদিত বিদ্যুৎ যোগ হচ্ছে জাতীয় গ্রিডে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) কর্তৃক লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (এলইইডি) সনদ পেয়েছে কারখানাটি।

ফোর-এ ইয়ার্ন ডায়িং কারখানার প্রত্যেক শ্রমিক প্রতিষ্ঠানটি নিজেদের বলেই জানেন। কারণ, প্রতিষ্ঠান থেকে শ্রমিকদের দেওয়া হচ্ছে নানা সুবিধা। রয়েছে বার্ষিক নির্দিষ্ট হারে ইনক্রিমেন্ট, শতভাগ উৎসব বোনাস, মাসের শুরুতেই বেতনের ব্যবস্থা। মাসের মাঝামাঝি সময়ে কোনো শ্রমিকের কাছে টাকা না থাকলেও তাকে নিত্যপণ্যের সংকটে ভুগতে হবে না।

কারখানার শ্রমিকদের সুবিধার্থে চালু করা হয়েছে একটি সুপার শপ। যেখানে বাজারের চেয়ে ৩০ শতাংশ কম দামে ভালো মানের পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে। নগদ টাকায় বাজার নয়, সবকিছু বাকিতেই নিতে পারবেন শ্রমিকেরা। মাস শেষে এসব বাজারের টাকা সমন্বয় করে বেতন দেওয়া হয়। প্রায় ১৫০ রকমের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য রয়েছে শপটিতে। এ সবকিছুই করা হয়েছে অলাভজনকভাবে।

শ্রমিকদের শিশুসন্তানদের নিরাপদ স্বাস্থ্যসেবার কথা মাথায় রেখে গড়ে তোলা হয়েছে চাইন্ড ডে কেয়ার বা শিশু দিবাযত্ন কেন্দ্র। যেখানে প্রায় ৩০ জন শিশু থাকছে সকাল-সন্ধ্যা। রয়েছে দু’বেলা নাশতা, গোসল, ঘুমানো ও খেলার ব্যবস্থা। শ্রমিকের স্বাস্থ্যঝুঁকির কথা বিবেচনায় নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র। চিকিৎসক ও নার্সদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রে নিয়মিত চিকিৎসা নিচ্ছেন শ্রমিকরা। আগামী বছর থেকে সব শ্রমিকের একসঙ্গে খাবারের ব্যবস্থা করতে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন একটি ভবন। এটি ক্যান্টিন হিসেবে ব্যবহার করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

ওই কারখানার টেকনিক্যাল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত সাথী আক্তার রেনু। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, আমি কারখানাটিতে শুরু থেকেই আছি। এ প্রতিষ্ঠানের বেতন দিয়েই প্রায় ১৭ লাখ টাকা খরচ করে জমি কিনেছি। স্বামী-সন্তান নিয়ে বেশ ভালো আছি। এখানে কোনো শ্রমিককে শ্রমিকের চোখে দেখা হয় না। সবাইকে সম্মান দেওয়া হয়। মালিক ও কারখানার কর্মকর্তারা শ্রমিকদের সবসময় আপন চোখে দেখেন।

লিপি খাতুন নামে একজন বলেন, আমার বেতনের একটা অংশ গ্রামের বাড়ি পাঠাতে হয়। এ কারণে মাসের শেষ দিকে আমার কাছে কোনো টাকা থাকে না। একসময় মাসের শেষ দিনগুলোতে হাটবাজার করতে বেশ বেগ পেতে হতো । এখন বাজারের চেয়ে কম দামে পণ্য কিনি, সেটাও আবার বাকিতে কেনা যায়। সব মিলিয়ে এখানে সুযোগ-সুবিধা অনেক। বাড়তি টেনশনও নেই। বেশ ভালো আছি পরিবার নিয়ে। আমার মতো অন্য শ্রমিকরাও ভালো আছেন। আমাদের কারখানায় কোনো শ্রমিক অসন্তোষও নেই।

বর্তমান কর্মপরিবেশ ও সার্বিক অবস্থা বিষয়ে ফোর-এ ইয়ার্ন ডায়িং লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আব্দুল্লাহ হিল রাকিব জাগো নিউজকে বলেন, আমার শ্রমিক বাঁচলে উৎপাদন আসবে। যেখানে শ্রমিক অসুস্থ বা অপুষ্টিতে থাকবে সেখানে কোনো কাজই টেকসই হবে না। তাই শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও পুষ্টির কথা মাথায় রেখে আমরা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ও সুপার শপ করেছি। স্বাস্থ্যকেন্দ্রে টিম ফার্মা থেকে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে, সুপার শপ থেকে ৩০ শতাংশ ছাড়ে ভালো মানের নিত্যপণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে।

তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারক সমিতি-বিজিএমইএ পরিচালক আব্দুল্লাহ হিল রাকিব বলেন, কারখানার প্রত্যেক শ্রমিকের শিশুসন্তানের জন্য দিবাযত্ন কেন্দ্র আছে, সেখানে খাবারের ব্যবস্থা আছে। গর্ভবতী মায়েদের জন্য দিনে দুবার বিশ্রামের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। তাদের পুষ্টি চাহিদা পূরণে রয়েছে ওষুধ ও খাবারের ব্যবস্থাও। কারখানায় কর্মরত সবাই সমান। এ দৃষ্টিভঙ্গি আমাদের এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা জোগায়। আমরা এগিয়ে যাচ্ছি, আগামী দিনগুলোতে এ অগ্রগতি অব্যাহত রাখতে চাই।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিশ্বের নামি দামি বিভিন্ন ব্র্যান্ডের জন্য জ্যাকেট তৈরি করে ফোর-এ ইয়ার্ন ডায়িং। এছাড়া বরফে স্কেটিং করার পোশাকও তৈরি করা হয় সেখানে। পরিবেশবান্ধব এ কারখানার রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা দিন দিন বাড়ছে বলে জানা গেছে।

২০০৯ সালে টিম গ্রুপের এমডি আবদুল্লাহ হিল রাকিব কারখানাটি কিনে নেন। শুরুতে সোয়েটার তৈরি করলেও পরে শুরু হয় জ্যাকেট তৈরির কাজ। পুরো কারখানায় ব্যবহার করা হয় বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী বাতি। আছে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা। সেই পানি কারখানার বাথরুমগুলোতে ব্যবহার করা হয়।

টিম গ্রুপের মোট ছয়টি পোশাক কারখানা রয়েছে। এছাড়া আছে বায়িং হাউজ ও ওষুধ কোম্পানিসহ একাধিক প্রতিষ্ঠান। শ্রমিক ও আশপাশের পরিবারের শিশুদের পড়ালেখার সুবিধার্থে আগামী দিনে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনাও রয়েছে বলে জানিয়েছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।

কোন মন্তব্য নেই: