গার্মেন্টস একটি ইংরেজী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ পোষাক এবং ফ্যাক্টরি শব্দের অর্থ কারখানা। সুতরাং গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি শব্দের অর্থ হল পোষাক তৈরীর কারখানা। আবার এ্যাপারেলস অর্থও পোষাক। অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে। এদেশে গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬০ সালে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৩০০০ (তিন হাজার) মত গার্মেন্টস শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রায় ২০ লক্ষ শ্রমিক নিয়োজিত আছেন।
বাংলাদেশের রপ্তানী আয়ের অধিকাংশ গার্মেন্টস শিল্প হতে আসে। এই কারণে সরকারীভাবে এই শিল্পের প্রতি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। মানব সভ্যতার কথা চিন্তা করলে দেখা যায় যে, সভ্যতাক্রম বিকাশে পোষাক একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা দখল করে আছে। আবার মানুষের মৌলিক চাহিদার কথা চিন্তা করলেও দেখা যায় যে অন্নের পরেই বস্ত্র বা পোষাকের কথা চিন্তা করা হয়।
পোষাকের এই প্রয়োজনীয়তা ধনী দরিদ্র সবার কাছে সমান। সভ্যতার আধুনিকীকরণের জন্য মানুষ বিভিন্ন ডিজাইন অনুযায়ী পোষাক ব্যবহার করে থাকে। পোষাকের প্রয়োজনীয়তা যত বৃদ্ধি পাচ্ছে তার সাথে সাথে নতুন নতুন পোষাক শিল্প গড়ে উঠছে এবং আমাদের দেশের অসংখ্য শিক্ষিত,অর্ধ শিক্ষিত বেকার যুবক ও যুব মহিলাদের কর্মের ও অন্নের সংস্থান হচ্ছে।
বাংলাদেশের গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে প্রধানত শার্ট, ট্রাউজার,জ্যাকেট, জগিং স্যুট, পেন্টি, গেঞ্জী, ব্রা ইত্যাদি বেশী পরিমাণে তৈরী হচ্ছে। এ সকল পোষাক বিশ্বেও বিভিন্ন দেশে রপ্তানী করা হয়। তবে মূলত আমেরিকা, কানাডা, ইউসি ও ইউরোপীয় দেশ সমূহে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে রপ্তানী করা হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ হতে অস্ট্রেলিয়া, বেলজিয়াম, জার্মান, ফ্রান্স, হংকং, জাপান, নরওয়ে, নেদারল্যান্ড, সুইডেন, সুইজারল্যান্ড প্রভৃতি দেশসমূহে পোষাক রপ্তানী করা হয়। আধুনিক যুগের পোষাক পরিচ্ছদ পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার সাথে শ্রম সহকারে পরিকল্পনার মাধ্যমে কৌশল কাটিয়ে পোষাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানকে গার্মেন্টস বলা হয়।
গার্মেন্টস ডিভিসন : উৎপাদনের উপর ভিত্তি করে গার্মেন্টসকে আবার চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে, রেগুলার গার্মেন্টস, ইরেগুলার গার্মেন্টস, আউটওয়্যার গার্মেন্টস, ইনওয়্যার গার্মেন্টস।
রেগুলার গার্মেন্টস : যে সমস্ত গার্মেন্টস বা পোষাক শিল্পে উৎপাদন ভিত্তিক অর্থাৎ বিদেশী বায়ারদের অর্ডার সিট অনুযায়ী পোষাক প্রস্ত্তত না করে আমাদের দেশীয় চাহিদা অনুযায়ী পোষাক প্রস্ত্তত করে তাহাকে রেগুলার গার্মেন্টস বলা হয়ে থাকে। শহরের বিভিন্ন মহল্লায় এই প্রকার গার্মেন্টস দেখা যায়।
ইরেগুলার গার্মেন্টস : যে সমস্ত গার্মেন্টস শুধু বিদেশী বায়ারদের অর্ডার সিট অনুযায়ী পোষাক প্রস্ত্তত করে থাকে, অন্য পোষাক প্রস্ত্তত করে না, তাহাকে ইরেগুলার গার্মেন্টস বলা হয়ে থাকে।
আউটওয়্যার গার্মেন্টস :- যে সমস্ত গার্মেন্টস এ বা পোষাক শিল্পে পোষাকের উপরের পোষাক তৈরী করে থাকে, তাহাকে আউটওয়্যার গার্মেন্টস বলা হয়ে থাকে। যেমন : কোট,জ্যাকেট, সুইটার ইত্যাদি।
ইনওয়্যার গার্মেন্টস : যে সমস্ত গার্মেন্টস এ বা পোষাক শিল্পে পোষাকের ভিতরের পোষাক তৈরী করে থাকে, তাহাকে ইনওয়্যার গার্মেন্টস বলা হয়ে থাকে। যেমন : গেঞ্জি, জাইঙ্গা, ব্রেসিয়ার, পেন্টি ইত্যাদি। এছাড়া ফেব্রিক্স (কাপড়) এর উপর ভিত্তি করে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরীকে দুইভাবে ভাগ করা হয়েছে যেমন-ওভেন ফ্যাক্টরী ও নীট ফ্যাক্টরী। ওভেন ফ্যাক্টরীতে সাধারণত শার্ট, প্যান্ট, জ্যাকেট ইত্যাদি তৈরী করা হয় ও নীট ফ্যাক্টরীতে এই ধরনের সাধারণত নীট (গেঞ্জী) জাতীয় কাপড় দিয়ে জাঙ্গিয়া, পেন্টি ইত্যাদি তৈরী করা হয়ে থাকে।
উৎপাদন : গার্মেন্টস শিল্পে উৎপাদন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কেননা উৎপাদনকে কেন্দ্র করে গার্মেন্টস শিল্পের সকল কার্যক্রম পরিচালিত হয়। তাই উৎপাদনের কৌশল হিসেবে এর অভ্যন্তরকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে। নমুনা শাখা (Pattern Section), কর্তন শাখা, সেলাই শাখা, সমাপ্তি শাখা (Finishing Section)।
নমুনা শাখা (Pattern Section) : এই শাখায় বায়ারের দেয়া নির্দিষ্ট নমুনা সীট অনুযায়ী প্রত্যেকটি পোষাকের বিভিন্ন অংশের জন্য মোটা কাগজের উপর নমুনা তৈরী করে নমুনা অনুযায়ী কাপড় কেটে পরীক্ষামূলকভাবে একটি পোষাক তৈরি করা হয়। সম্পূর্ণ পোষাকটি তৈরি করার পর বায়ার কর্তৃক পরীক্ষিত হয়। বায়ারের পছন্দ হলে তৈরিকৃত নমুনা অনুযায়ী চূড়ান্ত উৎপাদনের নির্দেশ দেওয়া হয়।
যেমন একটি পকেটে নমুনা দেওয়া আছে লম্বা ৬ ইঞ্চি বেটে ৪ ইঞ্চি। এখন এই নির্দিষ্ট নমুনা অনুযায়ী পেন্সিলের সাহায্যে মোটা কাগজের উপর ড্রইং করার পর কাচি বা মেশিনের সাহায্যে দাগ অনুযায়ী কাটতে হয়। তা হলে একটি পকেটের নমুনা তৈরি হয়। আবার একটি করার এর জন্য দুটি নমুনা তৈরি করতে হয়। ফেব্রিক কলার কাটতে হলে নির্দিষ্ট নমুনা হতে ১/২ইঞ্চি বেশি কাটতে হয়। কলার ইন্টারলাইনিং কাটতে হলে নমুনা হতে ১/৮ ইঞ্চি কম কাটতে হয়। এছাড়াও নমুনা সীট এ যা উল্লেখ থাকবে সেই অনুযায়ী কোন প্রকার এলাওয়েন্স না দিয়েও নমুনা তৈরি করা যায়,সঠিক নমুনা বলা হয়ে থাকে যেহেতু নমুনা অনুযায়ী পোষাক তৈরি করা হয় সেহেতু নমুনাকে গার্মেন্টেসের ‘আত্মা’ বলা হয়। কর্তন শাখা (Cutting Section) এই শাখা নমুনা অনুযায়ী হালকা কাগজের উপর ড্রইং করা হয়। একে মার্কিং বলা হয়। যে কাগজের উপর ড্রইং করা হয় তাকে মার্কিং পেপার এবং যে ব্যক্তি ড্রইং করে তাহাকে মার্কারম্যান বলা হয়। অতপর টেবিলের উপর কাপড় বিছানো হয়। বিছানো কাপড়ের উপর Marker Lay করে Lay pin এর সাহায্যে এর আটকানো হয় এবং মেশিনের সাহায্যে Lay Drawing অনুযায়ী কেটে Numbering ও Bundling করে Sewing Section এ পাঠানো হয়, একে Cutting Gi Output বলে। সেলাই শাখা (Sewing Section ) Sewing বলতে কাপড় সেলাই করাকে বুঝিয়ে থাকে। এই সেকশন কাটিং সেকশন হতে কাটা কাপড় গ্রহণ করে থাকে।
একে Sewing এর Input বলে। ইনপুট করার পর লাইন শিপ পোষাকের স্টাইল অনুযায়ী মেশিন লে আউট করে থাকে।
এই পদ্ধতিতে একটি পোষাকের কাজ বিভিন্ন শ্রেণীতে বিন্যস্ত করা এবং দ্রুত উৎপাদন সম্ভব হয়। সুইং শেষ কাপড়সমূহ সমাপ্তি শাখায় পাঠানো হয়, (Finishing Section) অর্থ কাজ শেষ করা। এই সেকশন সুইং সেকশন সেলাই কাপড় গ্রহণ করে ফিনিশিং এর ইনপুট করার পর প্রথমে সুতা কাটা হয়, তারপর পোষাক বাচাই করে আইরন, ফোল্ডিং ও পলিব্যাগ কার্টন করা হয়। ফিনিশিং কাজের একটি ধারাবাহিকতা রয়েছে। যেমন : কোয়ালিটি ইন্সপেকশন, ওয়াশ, আইরন, ফোল্ডিং, পলিব্যাগ, আসর্ট, কার্টন পরে বায়ার কর্তৃক শেষ ইন্সপেকশন হয়ে থাকে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন