ইপিজেডের জন্য কিছু শ্রম আইন | Bangladeshi EPZ Labour Law - Textile Lab | Textile Learning Blog
ডাক্তার এবং নার্স: ইপিজেডের জন্য
ইপিজেডের প্রত্যেকটি কারখানার জন্য নিজস্ব ডাক্তার বা নার্স প্রয়োজন আছে কি না?

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা-৩৭ অনুযায়ী প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে ইপিজেডের হাসপাতালের সদস্যপদ গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া ইপিজেড শ্রম আইনের অন্য কোথাও ডাক্তার বা নার্সের বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ নেই।

তাই এটা বলা যায়, যে সকল প্রতিষ্ঠানসমূহ ইপিজেডের হাসপাতালের সদস্যপদ গ্রহণ করবেন, তাদের জন্য নিজস্ব মেডিকেল রুম বা ডাক্তার বা নার্সের প্রয়োজন নেই।

তবে যদি বেপজা কর্তৃপক্ষ কোন নোটিশ বা গেজেটের বা বিধিমালার মাধ্যমে পরবর্তীতে কোন ডাক্তার বা নার্সের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানান তবে সেক্ষেত্রে ডাক্তার বা নার্সের প্রয়োজন হতে পারে।

কিন্তু বর্তমান ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী কোন আলাদা ডাক্তার বা নার্সের প্রয়োজন নেই। 

এছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান যদি চায় তাদের নিজস্ব সুবিধার জন্য আলাদা ডাক্তার বা নার্স রাখবেন সেক্ষেত্রে রাখতে পারবেন কিন্তু তাহা আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক নয়।

তাই প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে ইপিজেড হাসপাতালের সদস্যপদ নিতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে কিন্তু তাদের নিজস্ব ডাক্তার বা নার্স রাখার প্রয়োজন নেই।

কত ভাবে প্রতিষ্ঠানের সাথে কর্মীর সম্পর্ক ছিন্ন হতে পারে: ইপিজেডের জন্য

একটা প্রতিষ্টানের সাথে যখন কোন কর্মীর সম্পর্ক শুরু হয় সেটা খুব সুন্দরভাবে হয় কিন্ত শেষটা কেমন হয় তা নিয়ে কেউ খুব একটা বেশি মাথা গামায় না।

৭ ভাবে  ইপিজেডের একজন কর্মীর সাথে প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক ছিন্ন হতে পারে:

১। "ছাটাই" শ্রম আইনের ১৯ ধারা অনুযায়ী একজন কর্মীকে ছাটাই করে এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে।

২।"ডিসচার্জ" শ্রম আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী একজন কর্মীকে অব্যাহত শারীরিক সমস্যার কারনে চাকুরী হতে ডিসচার্জ করতে পারেন।

৩। "বরখাস্ত" শ্রম আইনের ২১(১) ধারা অনুযায়ী অসাদচারনের কারনে যে কোন কর্মীকে বরখাস্ত যাবে।

৪।"টার্মিনেশন" শ্রম আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী কোন কর্মীকে কোন কারন ব্যাখ্যা করা ছাড়া সরাসরি চাকুরী থেকে অব্যাহতি প্রদান করা সম্ভব।

৫।"পদত্যাগ" কোন কর্মী নিজ ইচ্ছায় ২৩ ধারা অনুযায়ী চাকুরী থেকে ইস্তফা প্রদান করতে পারেন।

৬। "অবসর" একজন কর্মী ৬০ বছর পূর্ন করার পরে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করতে হবে অথবা চাকুরীর বয়স ২৫ বছর পূর্ন করার পরে সেচ্ছায় চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করতে পারবেন ৩০ দিনের পূর্ববতী নোটিশ প্রদান করে।

৭। "মৃত্যু" কোন কর্মীর মৃত্যুর ফলে ধারা-১৮ অনুযায়ী তার প্রতিষ্ঠানের সাথে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়।



 প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ প্রাপ্তিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন: ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম অধ্যাদেশের ধারা- ২৫ অনুযায়ী একজন কর্মীকে বরখাস্ত করলে তিনি ইপিজের মধ্যের প্রভিডেন্টের অর্থ প্রাপ্ত হইবেন যাহা ইতিপূর্বে নিষেধ ছিল।

কিন্তু সমস্যা হল কতদিন কাজ করার পরে বরখাস্ত হলে তিনি মালিকের অংশ পাবেন?

উত্তরটা হবে চাকুরীর বয়স তিন বছর হলে উভয় অংশ পাবেন এবং চাকুরীর বয়স তিন বছরের কম এবং ২ বছরের বেশি হলে মালিকের অর্থের ৫০% প্রাপ্ত হবেন।

 
তাহলে এখন বেপজার মধ্যে থাকা সকল প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিধিমালা পরিবর্তন করতে হবে নিন্মরুপ ভাবে:

১। তিন বছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ে কাজ করিলে এবং নিজ ইচ্ছায় চাকুরী ত্যাগ বা ইস্তফা প্রদান করিলে বা বরখাস্তকৃত হলে মালিকের শতভাগ জমাকৃত অর্থসহ সকল অর্থ প্রাপ্ত হইবেন।

২। তিন বছরের কম এবং দুই বছরের বেশি সময় কাজ করিলে এবং নিজ ইচ্ছায় চাকুরী ত্যাগ বা ইস্তফা প্রদান করিলে বা বরখাস্তকৃত হলে মালিকের অংশের অর্ধেক এবং কর্মীর টাকার সম্পূর্ণ অংশ পাইবেন।

৩। দুই বছরের কম কাজ করিলে এবং নিজ ইচ্ছায় চাকুরী ত্যাগ বা ইস্তফা প্রদান করিলে বা বরখাস্তকৃত হলে মালিকের অংশ ছাড়া শুধুমাত্র নিজ অংশের অর্থ প্রাপ্ত হইবেন।

৪। ছাঁটাই,ডিসচার্জ বা টার্মিনেইট হলে কোন কর্মী মালিকের অংশসহ উভয় অংশই প্রাপ্ত হবেন।

৫। কোন কর্মীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার উত্তরাধিকারী উভয় পক্ষের অর্থ প্রাপ্ত হবেন।

এখন থেকে বেপজার মধ্যে থাকা প্রতিষ্ঠান সমূহকে উপরের ৫টি নিয়মে প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা পরিশোধ  পরিশোধ করতে হবে।




 মৃত্যুজনিত সুবিধা:ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম অধ্যাদেশ ২০১৯ এর ধারা-১৮ অনুযায়ী কোন কর্মীকে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ খুব ভাল ভাবে বুঝতে হলে আপনাকে চারটি জিনিস ভাল ভাবে লক্ষ্য করতে হবে।

১। কর্মীর চাকুরীর বয়স ১ বছরের বেশি হতে হবে।

২। চাকুরীরত থাকাকালীন অবস্থায় মৃত্যুবরন।

৩। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরন।

৪। কর্মকালীন দুর্ঘটনার কারনে পরর্বতীতে মৃত্যুবরন।

প্রথমত, আপনাকে বুঝতে হবে, কে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ পাবে এবং কে পাবে না?

যে ব্যক্তির চাকুরীর বয়স অবিচ্ছিন্নভাবে অন্তত ১ বছরের অধিকাল হয়েছে তিনিই শ্রম অধ্যাদেশের ১৮ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ পাইবার অধিকারী হইবেন।

চাকুরীর বয়স যদি কোন কারনে ১ বছরের বেশি না হয়, কোন ভাবেই ১৮ ধারার ক্ষতিপূরণ পাবে না।

প্রথম শর্তপূরন হলে, আপনাকে অন্য তিনটি শর্ত বিবেচনায় আনতে হবে।

১। চাকুরীরত থাকা অবস্থায়।

চাকুরীরত ব্যপারটা কি আসলে?

আপনি একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন কিন্তু আপনি কর্মঘন্টার বাহিরে বা ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে যে কোন ভাবে মারা গেলে।

প্রতিবছর বা ছয় মাসের অধিক সময়ের কাজের জন্য ১ টি করে বেসিক পাবে আপনার পোষ্য।

২। কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরন।

আপনি একজন কর্মী কর্ম ঘন্টার মধ্যে কর্মস্থালে বা কর্মস্থলের বাহিরে অফিসের কাজে থাকা অবস্থায় যে কোন ভাবে মৃত্যুবরন করলে।

আপনার পোষ্যরা প্রতিবছর বা ছয় মাসের অধিক সময় কাজের জন্য ৪৫ দিন করে মজুরি পাবেন।

৩। কর্মকালীন দুর্ঘটনা কারনে পরর্বতীতে মৃত্যুবরন।

আপনি একজন কর্মী কাজ করতে গিয়ে আহত হলেন এবং পরর্বতীতে ১ বা ২ মাস পরে মারা গেলেন।

আপনার পোষ্য ৬ মাস বা ১ বছর কাজের জন্য ৪৫ দিন করে মজুরী পাবেন।

সবার শেষে আপনাকে লক্ষ্য করতে হবে এই লাইনটি

"এই অর্থ মৃত শ্রমিক চাকুরী হইতে অবসর গ্রহন করিলে যে অবসরজনিত সুবিধা প্রাপ্ত হইতেন, তাহার অতিরিক্ত হিসাবে প্রদেয় হইবে।"

তার অর্থ হল একজন মৃত শ্রমিকের পোষ্য  ১৮ ধারার ক্ষতিপূরণ পাইবেন এবং তার অতিরিক্ত হিসাবে শ্রম অধ্যাদেশের ধারা-২৪ অনুযায়ী প্রতিবছর কাজের জন্য ৪৫ দিনের বেসিক পাইবেন।



কর্মীকে অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে তা কমানো যাবে কি না: ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-১৯২ অনুযায়ী কোন কর্মীকে ইতিপূর্বে প্রদত্ত অধিক কোন সুবিধা কমানো যাবে না।

ধারা-১৯২ এ বলা আছে "এই আইন প্রবর্তনের সময় কোন শ্রমিক যে মালিকের অধীন যে সকল অধিকার বা  সুযোগ-সুবিধা ভোগ করিতেছিলেন সেই মালিকের অধীন যতদিন কর্মরত থাকিবেন ততদিন সেই সকল অধিকার বা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করিবেন,যদি না তাহার উক্ত অধিকার বা সুযোগ-সুবিধা এই আইন বা তদধীন প্রনীত বিধি বা প্রবিধানের অধীন প্রদত্ত অধিকার ও সুযোগ সুবিধা হইতে অধিকতর অনুকূল হয়।"

উক্ত ধারাতে স্পষ্ট করে বলা আছে যে কোন বর্তমান কর্মীর অধিক সুযোগ-সুবিধা কমানো যাবে না।

অনেক প্রতিষ্ঠান প্রায়ই সুবিধা কমিয়ে দিয়ে থাকেন।উক্ত ক্ষেএে কর্মী আদালতে অভিযোগ করতে পারবে।



ছুটি:ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা-০৯,৩০,৪১,৪২,৫০,৫১,৫২ এবং ৫৩ অনুযায়ী ছুটি মোট আট প্রকার যথাঃ-

১। নৈমেত্তিক ছুটি

ইপিজেড আইনের ধারা-৫০ অনুযায়ী নৈমেত্তিক ছুটি হবে ১০ দিন এবং পূর্ন মজুরীতে একজন শ্রমিক এই ছুটি ভোগ করতে পারবেন।

২। অসুস্থতা ছুটি

ইপিজেড আইনের ধারা-৫১ অনুযায়ী অসুস্থতা ছুটি হবে ১৪ দিন এবং পূর্ন বেতনে একজন শ্রমিক এই ছুটি ভোগ করতে পারবেন। পূর্বে শ্রমিক অর্ধেক বেতনে উক্ত ছুটি ভোগ করতেন।

৩। অর্জিত ছুটি

প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য শ্রমিক একদিনের ছুটি পাবেন যা নগদায়ন করা যাবে কিন্তু নগদায়নের নিয়ম ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দিবে।

৪। ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি

ধারা-৪১ অনুযায়ী যদি কোন শ্রমিক সাপ্তাহিক ছুটি না পায় তবে ধারা-৪২ অনুযায়ী পরর্বতী ৬ দিনের মধ্যে তাকে ক্ষতিপূরণমূলক সমপরিমান ছুটি দিতে হবে।

৫। মাতৃত্বকালীন ছুটি

মোট ১৬ সপ্তাহ ছুটি ভোগ করতে পারবেন একজন নারী শ্রমিক যদি তাহার দুটি সন্তান জীবিত না থাকে এবং চাকুরীর বয়স ৬ মাস হতে হবে।

৬। উৎসব ছুটি

ধারা-৫৩ অনুযায়ী কর্মী ১১ দিন উৎসব ছুটি ভোগ করিতে পারিবেন এবং কোন কারনে কর্মীকে উৎসব ছুটির জন্য কাজ করাতে একদিনের জন্য দুইদিন মজুরীসহ ছুটি দিতে হবে।

৭। সাপ্তাহিক ছুটি 

ধারা- ৪১ অনুয়ায়ী শ্রমিক সপ্তাহে ১ দিন সাপ্তাহিক ছুটি পাইবেন এবং ইহার জন্য কর্মীকে মজুরী প্রদান করা হবে।

৮। সাধারন ছুটি

ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানের জন্য সাধারন ছুটি ঘোষণা করতে পারবে।



সার্ভিস বেনিফিট:ইপিজেডের জন্য

বেপজা নির্দেশনা অনুযায়ী ইপিজেডের মধ্যে কোন প্রকার সার্ভিস বেনিফিটের ব্যবস্থা ছিল না।

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা-২৩ (৪) অনুযায়ী সকল স্থায়ী শ্রমিকে সার্ভিস বেনিফিট প্রদান করতে হবে।

কেবল মাএ স্থায়ী শ্রমিকগন সার্ভিস বেনিফিট প্রাপ্য হবেন কিন্তু কোন অস্থায়ী শ্রমিক সার্ভিস বেনিফিট প্রাপ্য হবেন না।

কোন স্থায়ী শ্রমিক কোন প্রতিষ্ঠানে ৫ বছর বা বেশি এবং ১০ বছরের কম সময় কাজ করলে প্রতি বছর কাজের জন্য ১৫ দিন করে মূল মজুরী প্রাপ্য হবেন।

এছাড়াও ১০ বছর বা বেশি সময় স্থায়ী ভাবে কাজ করলে প্রতিবছর কাজের জন্য ৩০ দিনের মূল মজুরী প্রাপ্য হবেন।

ইপিজেডের শ্রম আইনের নিয়ম অনুযায়ী গ্রাচুয়িটি প্রদানের কোন প্রকার ব্যবস্থা নেই।

আর যে সকল প্রতিষ্ঠানে গ্রাচুয়িটি চালু আছে তাদেরকে গ্রাচুয়িটি এবং সার্ভিস বেনিফিট দুটিই দিতে হবে আলাদাভাবে।

যেহেতু ২৩(৫) ধারাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৩ ধারাতে প্রাপ্ত সকল সুযোগ সুবিধা অন্যান্য সুযোগ সুবিধার অতিরিক্ত হবে।



উৎসব ছুটির জন্য ক্ষতিপূরণ:ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৫৩ ধারা অনুযায়ী একজন কর্মীকে প্রতি বছর ১১ দিন উৎসব ছুটি প্রদান করতে হবে।

তবে অনেক ক্ষেত্রে নানা বিধ কারনে প্রতিষ্ঠান কর্মীকে উৎসব ছুটি প্রদান করতে পারে না।

উক্ত ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কর্মীকে ৩০ দিনের মধ্যে ২ দিনের মজুরিসহ ছুটি প্রদান করতে বলা হয়েছে।


প্রশ্ন হল মজুরি কি আলাদাভাবে প্রদান করতে হবে কি না?

ইপিজেড শ্রম আইনের ৫৩ ধারা অনুযায়ী শুধুমাএ ছুটির দুই দিনের নিয়মিত মজুরি প্রদান করতে হবে এবং কোন প্রকার অতিরিক্ত মজুরি প্রদান করতে হবে না।

এছাড়াও অনেকেই ছুটি প্রদান না করে, শুধুমাএ মজুরি প্রদান করে থাকে।

ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি প্রদান বাধ্যতামূলক এবং উক্ত ছুটির জন্য মজুরি প্রদান  করাও বাধ্যতামূলক।


অনুপস্থিতির জন্য কর্তন: ইপিজেডের জন্য

ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা-৫৮ অনুযায়ী কর্মীর কর্তব্য কাজে অনুপস্থিতির জন্য মূল মজুরী থেকে অর্থ কর্তন করা যাবে।

কাজে অনুপস্থিতি মূলত দুই প্রকার হতে পারে যেমন:-

১। আংশিক (১ ঘন্টা বা ৫ বা ১০ মিনিট)।

২। সমস্ত দিনের জন্য (৮ ঘন্টা বা এক দিন)।

ইপিজেড শ্রম আইনের নিয়ম অনুযায়ী উভয় ক্ষেত্রেই মজুরী কর্তনের নিয়ম একই রকমের হবে।

মূল বেতন / উক্ত মাসে যত দিন তত দিয়ে ভাগ করতে হবে।

এখন প্রশ্ন হল উক্ত মাসে যত দিন তত দিন দিয়ে ভাগ করতে হবে কেন?

কারন হল ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-২(২৩) অনুযায়ী    "পজ্ঞিকা মাস বা বৎসর অর্থ গ্রেগরিয়ান পজ্ঞিকা মাস বা বৎসর"

বাংলাদেশ শ্রম আইনে ৩০ দিয়ে ভাগ করতে হয় কারন দুটি - 

১। বাংলাদেশ শ্রম আইনে মাসের সংজ্ঞা দেয়া নেই।

২। বিধি-১১৫ তে ৩০ দিয়ে ভাগ করার কথা বলা আছে।

কিন্তু ইপিজেড শ্রম আইনে সংজ্ঞা দেয়া থাকাতে সুবিধা হয়েছে তাই উক্ত মাসে যত দিন তত দিন দিয়ে ভাগ করতে হবে।

তোতা মিয়া ৮২০০ টাকা বেতনে একটা কারখানায় কাজ করেন যার মূল মজুরী ৪৫০০ টাকা।

মার্চ মাসে সে কোন একদিন নির্ধারিত সময়ের ২ ঘন্টা পরে কাজে যোগদান করলেন।

তার মজুরী কিভাবে কর্তন করা হবে।
৪৫০০/৩১= ১৪৫ টাকা।

ঘন্টার টাকা বের করতে হবে।
১৪৫/৮=১৮ টাকা

দুই ঘন্টার টাকা বের করতে হবে।
১৮*২=৩৬ টাকা।

উক্তরুপ ভাবে মজুরী কর্তন করতে হবে।



অর্জিত ছুটির নগদায়ন: ইপিজেডের জন্য

ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ অনুযায়ী অর্জিত ছুটি নগদায়ন করা যাবে।

অর্জিত ছুটির নগদায়নের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে যেমনঃ

১। কর্মী অব্যয়িত ছুটি ভোগ করবে অথবা নগদায়ন করবে। কর্মীর ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে এবং মালিক কিছুই চাপিয়ে দিতে পারবেন না।

২। কর্মীকে সর্বশেষ বছরের অর্জিত ছুটি জমা রাখিয়া, তার বাকি অব্যয়িত ছুটি ভোগ করতে পারবেন।

উদাহরণঃ

মাহবুব XYZ প্রতিষ্ঠানে তিন বছর চাকুরী করেন যথাক্রমে ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯।

এখন মাহবুব যদি ছুটি নগদায়ন করতে চায়, সেক্ষেত্রে সে ২০১৯ সালের কোন ছুটি ২০২০ সালে নগদায়ন করতে পারবেন না।

তিনি ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে যদি কোন ছুটি পাওনা থাকেন, তবে তিনি উক্ত ছুটি নগদায়ন করতে পারবেন।

ছুটি নগদায়নের ক্ষেত্রে যে মাসে নগদায়নের অর্থ প্রদান  করা হবে, তার আগের মাসের মোট প্রাপ্ত মজুরিকে ৩০ দিয়ে ভাগ করতে হবে।

মোট মজুরি অর্থ "মূল মজুরি+বাড়ি ভাড়া+চিকিৎসা ভাতা"

তাহলে এক দিনের মজুরি পাওয়া যাবে এবং তাকে অব্যয়িত ছুটির দিন দিয়ে গুন করতে হবে। তাহলেই পাওয়া যাবে পরিশোধযোগ্য অর্থের পরিমান।

৩। আরেকটি বিষয় বলে নেয়া ভাল ছুটির নগদায়ের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত মোট মজুরির কথা বলা হয়েছে। অথাৎ কোন প্রকার অনুপস্থিতির জন্য কর্তন থাকলে উক্ত অর্থ বাদ দিয়ে মোট প্রাপ্ত মজুরি গননা করতে হবে।



মাস্টার রোল কি : ইপিজেডের জন্য

মাস্টার রোল একটা সাধারন খাতা।

খাতাটির অসাধারন কিছু গুরুত্ব আছে।

ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-১৬ তে মাস্টার রোল নামক পদার্থের সাথে পরিচিত হবেন।

ইপিজেড শ্রম আইনের অধীন লে-অফ নামক যে বিষয়টি আছে তার সাথে মাস্টার রোল বিষয়টি বিস্তৃতভাবে জড়িত।

লক্ষ্য করে থাকবেন যে যখন কোন প্রতিষ্ঠান লে-অফ থাকে, তখন কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মী বা রক্ষনাবেক্ষন বিভাগের কর্মীদেরকে সম্পদ দেখাশোনার জন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কাজ করতে হয়।

ধারা-১৭ অনুযায়ী লে-অফ চলাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মী এবং লে-অফকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের হাজিরা সংরক্ষনের জন্য যে খাতা সংরক্ষন করা হয় তাকেই মাস্টার রোল বলে।



৮ ঘন্টা কাজ করানো কিন্তু ১ ঘন্টা আহার এবং বিশ্রামের বিরতি প্রদান না করা: ইপিজেডের জন্য

অনেক প্রতিষ্ঠানে একটা রেওয়াজ চালু আছে, প্রতিদিন  কর্মীকে ৮ ঘন্টা কাজ করাবে কিন্তু ৩০ মিনিট আহার এবং বিশ্রামের সময় প্রদান করে।

কিন্তু বাকি ৩০ মিনিট বিরতি প্রদান না করে, ৩০ মিনিট পূর্বেই প্রতিষ্ঠানে ছুটি প্রদান করেন।

অথাৎ ৮ : ৩০ মিনিট পরে অফিস ছুটি দিয়ে দেয়া হয় এবং শ্রমিকদের বলা হয় বাকি ৩০ মিনিট বিরতি বাসায় ভোগ করার জন্য।

উক্ত ধরনের কার্যক্রম বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনে ধারা-৩৯ অনুযায়ী বে-আইনী।

কারন কি?

ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৩৯(ক) এবং (খ) অনুযায়ী বিরতি প্রদান না করা।

ধারা-৩৯(ক) অনুযায়ী:

এক টানা ৬ ঘন্টা কাজ করালে ১ ঘন্টা বিরতি প্রদান করতে হবে।

এখানে লক্ষ্য করেন প্রতিটি কর্মীকে ৬ ঘন্টা কাজ করানোর পরে ৩০ মিনিট বিরতি দেয়া হচ্ছে।

ধারা-৩৯ অনুযায়ী কোন কর্মী ৫ এবং ৬ ঘন্টা অধিক সময় কোন কর্মী কাজ করতে বাধ্য থাকিবে না যদি ৫ ঘন্টা কাজ করার পরে ৩০ মিনিট এবং ৬ ঘন্টা কাজ করার পরে ১ ঘন্টা বিরতি না দিলে।

কোন প্রতিষ্ঠান আবার আইনকে ফাকি দেয়ার জন্য ৫ ঘন্টা কাজ করার পরে ৩০ মিনিট বিরতি দেন কিন্তু মোট ৬ ঘন্টা ৩০ হওয়ার পরে বাকী ৩০ মিনিট বিরতি আর দেয়া হয় না।

যাহা ধারা-৩৯ অনুযায়ী স্পষ্ট অপরাধ, কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মী মোট ৬ ঘন্টা করার পর মোট ১ ঘন্টা বিরতি না পেলে তিনি আর কাজ করিতে বাধ্য থাকিবেন না।



চাকুরীর বয়স গননার নিয়ম: ইপিজেডের জন্য

কোন কর্মীকে বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ২য় অধ্যায় অনুযায়ী কোন ক্ষতিপূরণ বা সুবিধা প্রদানের ক্ষেএে উক্ত কর্মীর চাকুরীর বয়স গননা করা একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়।

চাকুরীর বয়স গননার ক্ষেএে কিছু ভুল ধারনা আছে।

অনেকের ভুল ধারনা বাস্তবে ২৪০ দিন উপস্থিত থাকলেই তা ১ বছর হিসাবে গননা করা হবে।

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-১৩(১) এ বলা আছে

"কোন শ্রমিক কোন প্রতিষ্ঠানে পূর্ববর্তী (১২) বার পজ্ঞিকা মাসে বাস্তবে অন্তত ২৪০ দিন বা ১২০ দিন কাজ করিয়া থাকেন,তা হলে তিনি যথাক্রমে ১ বছর বা ৬ মাস প্রতিষ্ঠানে অবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করিয়াছেন বলিয়া গন্য হবে"

এখানে দুটি শর্ত লক্ষ্য করতে হবে,

১। পূর্ববর্তী ১২ পজ্ঞিকা মাসে।
২। বাস্তবে অন্তত ২৪০ দিন কাজ করিয়া থাকেন।

দিপ্তি XYZ কোম্পানিতে ৪ বছর ১০ মাস ২৫ দিন কাজ করেন।তারপরে তিনি ব্যক্তিগত কারন দেখিয়ে চাকুরী থেকে পদত্যাগ করে।

এখন প্রশ্ন হল ধারা ১৩ অনুযায়ী দিপ্তির চাকুরীর বয়স ৫ বছর হবে কি না?

উত্তর হল না।

কারন ধারা-১৩(১) অনুযায়ী দুটি শর্ত পূরন হতে হবে।

১। পূর্ববর্তী ১২ পজ্ঞিকা মাসে।

২। বাস্তবে অন্তত ২৪০ দিন কাজ করিয়া থাকেন।

দিপ্তির ক্ষেএে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল।তিনি ২য় শর্তটি পূরন করেছে ২৪০ দিনে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু যে দিনে চাকুরী ছাড়ছেন।

তার ১২ পজ্ঞিকা মাস পূর্ন হয়নি।

অনেকে ভুল ধরতে চেষ্টা করবেন কিন্তু লক্ষ্য করুন যোগদানের তারিখ থেকে যোগদানের তারিখ ১২ পজ্ঞিকা মাস হিসাব করে তার মধ্যে ২৪০ দিন কাজের দিন হিসাব করুন।

তবে আর আমার কথাগুলো ভুল মনে হবে না।

অনেকের কাছে মনে হবে ৬ মাসের বেশি কাজ করলে এক বছর বিবেচনা করতে হবে, আইনে বলা আছে।

হ্যা,শুধুমাএ তা ধারা-১৮ এর ক্ষেএে অন্য কোন ক্ষেএে না।

আর বাস্তবিক কাজের দিনের জন্য ধারা-১৩(২) এ উল্লেখিত দিনগুলোকে গননায় আনতে হবে।



অবসর: ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ২৪ ধারাতে অবসর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ২৪ ধারা অনুযায়ী কোন শ্রমিকের বয়স ৬০ হলে তিনি স্বাভাবিকভাবে অবসর গ্রহন করবেন।

যদি কোন কর্মীর চাকুরীর বয়স ২৫ বছর পূর্ন হয় তবে তিনি স্বেচ্ছায় তার অবসরের সম্ভাব্য ৩০ দিন পূর্বে লিখিত নোটিশ দিয়ে অবসরে যেতে পারবেন।

এখানে দুটি বিষয় মাথায় রাখা ভাল:

১. কর্মীর নিজের বয়স।

২. কর্মীর চাকুরীর বয়স।

চাকুরীর বয়স এবং কর্মীর বয়স নির্ধারণ করার জন্য কর্মীর নিজ সার্ভিস বুকে চুড়ান্ত প্রমান হিসাবে বিবেচনা করা হবে।

কোন কর্মী তার চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করলে বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ২৪ ধারা অনুযায়ী প্রতি পূর্ন বছর কাজের জন্য ৪৫ দিনের মূল মজুরী পাইবেন।

কোন মালিক যদি মনে করেন অবসরের পরে কোন কর্মীকে নিয়োগ প্রদান করবেন সেক্ষেএে উক্ত কর্মীকে চুক্তিভিত্তিক হিসাবে নিয়োগ করতে পারবেন।



পদত্যাগ: ইপিজেডের জন্য

কোন শ্রমিকের চাকুরী হইতে পদত্যাগের বিষয়ে ইপিজেড শ্রম আইনের ২৩ ধারাতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

শ্রম আইনের ধারা-২৩ (১) ও (২) অনুযায়ী কর্মীকে চাকুরী থেকে পদত্যাগের ক্ষেএে নোটিশ প্রদান করতে হবে।

শ্রম আইনের ধারা-২৩(১) অনুযায়ী কোন স্থায়ী শ্রমিক চাকুরী থেকে পদত্যাগ করতে চাইলে তাকে ৩০ দিনের নোটিশ প্রদান করতে হবে।

অথবা

তাৎক্ষণিক পদত্যাগের ক্ষেএে ৩০ দিনের মূল মজুরী প্রদান করে পদত্যাগ করতে হবে।

অস্থায়ী বা অন্য কোন শ্রমিকের ক্ষেএে শ্রম আইনের ধারা-২৩(২) অনুযায়ী যে সকল অস্থায়ী শ্রমিকগন তারা ১৫ দিনের নোটিশ বা মজুরী প্রদান করে পদত্যাগ করতে পারবেন।



ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি: ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী দুটি ধারাতে ক্ষতিপূরনমূলক ছুটির কথা বলা আছে।

ইপিজেড শ্রম আইনের ৪২ ধারাতে বলা আছে ক্ষতিপূরণমূলক সাপ্তাহিক ছুটির বিষয়ে।

কোন কর্মী যদি তার প্রাপ্য ১ দিন সাপ্তাহিক ছুটি থেকে বঞ্চিত হন তবে তাকে পরবর্তী ৬ দিনের মধ্যে ১ দিনের ছুটি প্রদান করতে হবে।

অন্য দিকে, ৫৩ ধারাতে উৎসব ছুটির বিষয়ে বলা আছে, উৎসব ছুটির দিনে কোন কর্মীকে কাজ করতে বলা হলে তাকে মজুরীসহ ২ দিনের ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি প্রদান করতে হবে।

তবে উৎসব ছুটির বিনিময়ে ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ইতিপূর্বে ইপিজেড নির্দেশিনাতে বলা ছিল, যদি কোন কর্মী ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি ভোগ না করে, 

তাকে তার ছুটির বিনিময়ে অর্থ প্রদান করা হলে,উক্ত কর্মীকে ক্ষতিপূরণমূলক উৎসব ছুটি প্রদান প্রয়োজন হবে না।

কিন্তু ২০১৯ সালের ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণমূলক ছুটির বিনিময়ে শুধু অর্থ প্রদান করলে তা বে-আইনি হবে।

মজুরী এবং ছুটি দুটিই প্রদান বাধ্যতামূলক, তাই ছুটির বিনিময়ে শুধু মাএ অর্থ প্রদান গ্রহনযোগ্য নয়।



অর্জিত ছুটি জমা রাখা যাবে কি না: ইপিজেডের জন্য

ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৫২ অনুযায়ী কোন অর্জিত  ছুটি জমা রাখা যাবে না কারন বাংলাদেশ শ্রম আইনের ধারা-১১৭ এর মত ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৫২ তে ছুটি জমা রাখার কোন নিয়মের কথা উল্লেখ নেই।

তাই ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী কোন অর্জিত ছুটি জমা রাখা যাবে না।

একজন কর্মীকে প্রাপ্ত ছুটি হয় ভোগ করতে হবে অথবা নগদায়ন করতে হবে এবং এর কোন বিকল্প নেই।

তবে যে সকল প্রতিষ্ঠান বেপজা নিদের্শনা- ১ ও ২ অনুযায়ী পূর্ব থেকেই ছুটি জমানোর অধিকার দিয়ে আসছেন তারা উক্ত সুবিধা বন্ধ করতে পারবেন না।

ইপিজেড আইনের ধারা-১৯২ অনুযায়ী বর্তমান আইনের থেকে পূর্ববতী কোন অনুকূল সুবিধা কমানো যাবে না।



উৎসব বোনাস: ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ শ্রম আইনের মত ইপিজেড শ্রম আইনে উৎসব বোনাসের ব্যবস্থা আছে।

ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৫৩ অনুযায়ী একজন কর্মী  স্থায়ী হলে উৎসব বোনাস পাবেন।

যেহেতু ইপিজেড শ্রম আইনে বলা আছে স্থায়ী কর্মীগন উৎসব বোনাস পাবেন, তার অর্থ হল যেহেতু কোন কর্মী ৩ মাসের মধ্যে স্থায়ী হওয়া সম্ভব,

তাই ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী ৩ মাস কাজ করেও উৎসব বোনাস পাওয়া যাবে।

প্রতি বছরে একজন কর্মী দুইবার তার নিজ ধর্মের অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে দুটি উৎসব বোনাস পাবেন।

বোনাসের পরিমান হবে বেসিকের সমান, কোন অবস্থাতেই এটা বেসিকের বেশি বা কম হবে না।



বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমা: ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা-৩৬ অনুযায়ী যদি কোন প্রতিষ্ঠানে ২৫ জন স্থায়ী কর্মী নিয়োজিত থাকেন তবে উক্ত প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমা চালু করতে হবে।

গ্রুপ বীমা চালু করার পূর্বে কিছু বিষয়ে লক্ষ্য করতে হবে।

১. গ্রুপ বীমার পরিমান কত টাকা হবে।

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনে বাধ্যতামূলকভাবে গ্রুপ বীমা চালু করার কথা বলা হয়েছে কিন্তু কত টাকা ক্ষতিপূরণ বীমা থেকে পাওয়া যাবে তা নিদিষ্ট করা নেই।

এটা হতে পারে ১০,০০০/-, ৫০,০০০/- বা ১,০০,০০০/-, যে কোন পরিমান।

২. কোন বিষয়গুলো বীমার আওতায় আসবে।

মৃত্যু এবং স্থায়ী অক্ষমতার ক্ষেত্রে বীমার টাকা পরিশোধ করতে হবে।

স্থায়ী অক্ষমতা বলতে কি বুঝায়?

স্থায়ী অক্ষমতা বুঝাতে ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-২(৫৩) অনুসরণ করতে হবে।

ধারা-২(৫৩) তে বলা হয়েছে প্রথম তফসিলের ১০০% ক্ষতিপূরণ প্রদানকারী বিষয়গুলোকে শতভাগ স্থায়ী অক্ষমতা হিসাবে বিবেচিত হবে।

তাই নিন্মের ৬টি বিষয়কে বীমার আওতায় আনতে হবে  স্থায়ী অক্ষমতা হিসাবে।

১. উভয় হাত হারানো বা উপরের অংশ হইতে কাটিয়া ফেলা।

২. এক হাত বা পা হারানো।

৩. উভয় চোখের দৃষ্টি শক্তি হারানো।

৪. উভয় পা বা উরু কাটিয়া ফেলা,এক পা বা উরু কাটিয়া ফেলা বা যেকোন পা হারানো।

৫. মুখাবয়বের মারাত্মক বিকৃতি।

৬. সম্পূর্ণ বধিরতা।

এছাড়াও মৃত্যু আলাদাভাবে এর সাথে যুক্ত হবে।

সর্বমোট সাতটি বিষয়কে বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমার আওতায় আনতে হবে।



মালিক তার ইচ্ছা অনুযায়ী ছুটি দিয়ে, অর্জিত ছুটি থেকে সমন্বয় করতে পারবে কি না: ইপিজেডের জন্য

ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ অনুযায়ী মালিক তার সুবিধাজনক দিন বা তারিখে কোন কর্মী বা কর্মীদেরকে ছুটি দিয়ে উক্ত ছুটির দিনকে অর্জিত ছুটির সাথে সমন্বয় করতে পারবে না।

বেপজা কর্তৃক প্রকাশিত অফিস আদেশের ৭(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে-

 "মালিক তাহার সুবিধামত কোন নিদিষ্ট দিন ও তারিখ নির্ধারণপূর্বক কোন শ্রমিক অথবা শ্রমিকদের ছুটি প্রদান করিয়া পরবর্তীতে অব্যয়িত অর্জিত ছুটির সহিত সমন্বয় করিতে পারিবেন না।"

তার অর্থ হল কর্মী ছুটি ভোগ করবে অথবা নগদায়ন করবে কিন্তু মালিক ইচ্ছা করে তার উপরে কিছু চাপিয়ে দিতে পারবেন না।



উৎসব বোনাস: ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ শ্রম আইনের মত ইপিজেড শ্রম আইনে উৎসব বোনাসের ব্যবস্থা আছে।

ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৫৩ অনুযায়ী একজন কর্মী  স্থায়ী হলে উৎসব বোনাস পাবেন।

যেহেতু ইপিজেড শ্রম আইনে বলা আছে স্থায়ী কর্মীগন উৎসব বোনাস পাবেন, তার অর্থ হল যেহেতু কোন কর্মী ৩ মাসের মধ্যে স্থায়ী হওয়া সম্ভব,

তাই ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী ৩ মাস কাজ করেও উৎসব বোনাস পাওয়া যাবে।

প্রতি বছরে একজন কর্মী দুইবার তার নিজ ধর্মের অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে দুটি উৎসব বোনাস পাবেন।

বোনাসের পরিমান হবে বেসিকের সমান, কোন অবস্থাতেই এটা বেসিকের বেশি বা কম হবে না।

অনুপস্থিতির জন্য কর্তন:ইপিজেডের জন্য

ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা-৫৮ অনুযায়ী কর্মীর কর্তব্য কাজে অনুপস্থিতির জন্য মূল মজুরী থেকে অর্থ কর্তন করা যাবে।

কাজে অনুপস্থিতি মূলত দুই প্রকার হতে পারে যেমন:-

১। আংশিক (১ ঘন্টা বা ৫ বা ১০ মিনিট)।

২। সমস্ত দিনের জন্য (৮ ঘন্টা বা এক দিন)।

ইপিজেড শ্রম আইনের নিয়ম অনুযায়ী উভয় ক্ষেত্রেই মজুরী কর্তনের নিয়ম একই রকমের হবে।

মূল বেতন / উক্ত মাসে যত দিন তত দিয়ে ভাগ করতে হবে।

এখন প্রশ্ন হল উক্ত মাসে যত দিন তত দিন দিয়ে ভাগ করতে হবে কেন?

কারন হল ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-২(২৩) অনুযায়ী    
"পজ্ঞিকা মাস বা বৎসর অর্থ গ্রেগরিয়ান পজ্ঞিকা মাস বা বৎসর"

বাংলাদেশ শ্রম আইনে ৩০ দিয়ে ভাগ করতে হয় কারন দুটি -
 
১। বাংলাদেশ শ্রম আইনে মাসের সংজ্ঞা দেয়া নেই।

২। বিধি-১১৫ তে ৩০ দিয়ে ভাগ করার কথা বলা আছে।

কিন্তু ইপিজেড শ্রম আইনে সংজ্ঞা দেয়া থাকাতে সুবিধা হয়েছে তাই উক্ত মাসে যত দিন তত দিন দিয়ে ভাগ করতে হবে।

তোতা মিয়া ৮২০০ টাকা বেতনে একটা কারখানায় কাজ করেন যার মূল মজুরী ৪৫০০ টাকা।

মার্চ মাসে সে কোন একদিন নির্ধারিত সময়ের ২ ঘন্টা পরে কাজে যোগদান করলেন।

তার মজুরী কিভাবে কর্তন করা হবে।
৪৫০০/৩১= ১৪৫ টাকা।

ঘন্টার টাকা বের করতে হবে।
১৪৫/৮=১৮ টাকা

দুই ঘন্টার টাকা বের করতে হবে।
১৮*২=৩৬ টাকা।

উক্তরুপ ভাবে মজুরী কর্তন করতে হবে।


চাকুরীর বয়স গননার নিয়ম

কোন কর্মীকে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২য় অধ্যায় অনুযায়ী কোন ক্ষতিপূরণ বা সুবিধা প্রদানের ক্ষেএে উক্ত কর্মীর চাকুরীর বয়স গননা করা একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়।

চাকুরীর বয়স গননার ক্ষেএে কিছু ভুল ধারনা আছে।

অনেকের ভুল ধারনা বাস্তবে ২৪০ দিন উপস্থিত থাকলেই তা ১ বছর হিসাবে গননা করা হবে।

বাংলাদেশ শ্রম আইনের ধারা-১৪(১) এ বলা আছে

"কোন শ্রমিক কোন প্রতিষ্ঠানে পূর্ববর্তী (১২) বার পজ্ঞিকা মাসে বাস্তবে অন্তত ২৪০ দিন বা ১২০ দিন কাজ করিয়া থাকেন,তা হলে তিনি যথাক্রমে ১ বছর বা ৬ মাস প্রতিষ্ঠানে অবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করিয়াছেন বলিয়া গন্য হবে"

এখানে দুটি শর্ত লক্ষ্য করতে হবে,

১। পূর্ববর্তী ১২ পজ্ঞিকা মাসে।
২। বাস্তবে অন্তত ২৪০ দিন কাজ করিয়া থাকেন।

দিপ্তি XYZ কোম্পানিতে ৪ বছর ১০ মাস ২৫ দিন কাজ করেন।তারপরে তিনি ব্যক্তিগত কারন দেখিয়ে চাকুরী থেকে পদত্যাগ করে।

এখন প্রশ্ন হল ধারা ১৪ অনুযায়ী দিপ্তির চাকুরীর বয়স ৫ বছর হবে কি না?

উত্তর হল না।

কারন ধারা-১৪(১) অনুযায়ী দুটি শর্ত পূরন হতে হবে।

১। পূর্ববর্তী ১২ পজ্ঞিকা মাসে।
২। বাস্তবে অন্তত ২৪০ দিন কাজ করিয়া থাকেন।

দিপ্তির ক্ষেএে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল।তিনি ২য় শর্তটি পূরন করেছে ২৪০ দিনে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু যে দিনে চাকুরী ছাড়ছেন।

তার ১২ পজ্ঞিকা মাস পূর্ন হয়নি।

অনেকে ভুল ধরতে চেষ্টা করবেন কিন্তু লক্ষ্য করুন যোগদানের তারিখ থেকে যোগদানের তারিখ ১২ পজ্ঞিকা মাস হিসাব করে তার মধ্যে ২৪০ দিন কাজের দিন হিসাব করুন।

তবে আর আমার কথাগুলো ভুল মনে হবে না।

অনেকের কাছে মনে হবে ৬ মাসের বেশি কাজ করলে এক বছর বিবেচনা করতে হবে, আইনে বলা আছে।

হ্যা,শুধুমাএ তা ধারা-১৯ এবং ২(১০) এর ক্ষেএে অন্য কোন ক্ষেএে না।

আর বাস্তবিক কাজের দিনের জন্য ধারা-১৪(২) এ উল্লেখিত দিনগুলোকে গননায় আনতে হবে।

:::দৈনিক ওভার টাইম:::

প্রশ্নটা কি কখনও করেছেন যে একজন কর্মী  দৈনিক কত ঘন্টা ওভার টাইম করতে পারেন।

ধারা-১০০ অনুযায়ী কোন "শ্রমিক দৈনিক ১০ ঘন্টা পর্যন্তও কাজ করিতে পারিবেন"।

ধারা-১০০ এর কোথাও কিন্ত বলা হয় নাই যে এটা আহার বা বিশ্রামের সময়সহ বা উহা ছাড়া।

২০১৮ সালের সংশোধনী অনুযায়ী  "ধারা-১০১ এর অধীন কর্মীর আহার ও বিশ্রামের ব্যতীত ইহা যেন ১০ ঘন্টার অধিক সম্প্রসারিত না হয়।

তাই এখন থেকে প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে ওভার টাইম করানো যাবে।

যে সকল প্রতিষ্ঠানে আহার এবং বিশ্রামের সময়সহ কর্ম সময় ৮ ঘন্টা সেই সকল প্রতিষ্ঠান দৈনিক ৩ ঘন্টা ওভার টাইম করাতে পারবেন।

তবে সেক্ষেত্রে আবার বছরন্তে ৫৬ ঘন্টার গড় সীমা যেন অতিক্রম না করে,সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।

কিন্ত আহার এবং বিশ্রামের সময়সহ যে সকল প্রতিষ্ঠানের কর্ম সময় ৯ ঘন্টা তারা এখন ২ ঘন্টা করে ওভার টাইম করাতে পারবেন।

ইপিজেডের জন্য কিছু শ্রম আইন | Bangladeshi EPZ Labour Law

ডাক্তার এবং নার্স: ইপিজেডের জন্য
ইপিজেডের প্রত্যেকটি কারখানার জন্য নিজস্ব ডাক্তার বা নার্স প্রয়োজন আছে কি না?

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা-৩৭ অনুযায়ী প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে ইপিজেডের হাসপাতালের সদস্যপদ গ্রহণ করতে হবে।

এছাড়া ইপিজেড শ্রম আইনের অন্য কোথাও ডাক্তার বা নার্সের বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ নেই।

তাই এটা বলা যায়, যে সকল প্রতিষ্ঠানসমূহ ইপিজেডের হাসপাতালের সদস্যপদ গ্রহণ করবেন, তাদের জন্য নিজস্ব মেডিকেল রুম বা ডাক্তার বা নার্সের প্রয়োজন নেই।

তবে যদি বেপজা কর্তৃপক্ষ কোন নোটিশ বা গেজেটের বা বিধিমালার মাধ্যমে পরবর্তীতে কোন ডাক্তার বা নার্সের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানান তবে সেক্ষেত্রে ডাক্তার বা নার্সের প্রয়োজন হতে পারে।

কিন্তু বর্তমান ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী কোন আলাদা ডাক্তার বা নার্সের প্রয়োজন নেই। 

এছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান যদি চায় তাদের নিজস্ব সুবিধার জন্য আলাদা ডাক্তার বা নার্স রাখবেন সেক্ষেত্রে রাখতে পারবেন কিন্তু তাহা আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক নয়।

তাই প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে ইপিজেড হাসপাতালের সদস্যপদ নিতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে কিন্তু তাদের নিজস্ব ডাক্তার বা নার্স রাখার প্রয়োজন নেই।

কত ভাবে প্রতিষ্ঠানের সাথে কর্মীর সম্পর্ক ছিন্ন হতে পারে: ইপিজেডের জন্য

একটা প্রতিষ্টানের সাথে যখন কোন কর্মীর সম্পর্ক শুরু হয় সেটা খুব সুন্দরভাবে হয় কিন্ত শেষটা কেমন হয় তা নিয়ে কেউ খুব একটা বেশি মাথা গামায় না।

৭ ভাবে  ইপিজেডের একজন কর্মীর সাথে প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক ছিন্ন হতে পারে:

১। "ছাটাই" শ্রম আইনের ১৯ ধারা অনুযায়ী একজন কর্মীকে ছাটাই করে এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে।

২।"ডিসচার্জ" শ্রম আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী একজন কর্মীকে অব্যাহত শারীরিক সমস্যার কারনে চাকুরী হতে ডিসচার্জ করতে পারেন।

৩। "বরখাস্ত" শ্রম আইনের ২১(১) ধারা অনুযায়ী অসাদচারনের কারনে যে কোন কর্মীকে বরখাস্ত যাবে।

৪।"টার্মিনেশন" শ্রম আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী কোন কর্মীকে কোন কারন ব্যাখ্যা করা ছাড়া সরাসরি চাকুরী থেকে অব্যাহতি প্রদান করা সম্ভব।

৫।"পদত্যাগ" কোন কর্মী নিজ ইচ্ছায় ২৩ ধারা অনুযায়ী চাকুরী থেকে ইস্তফা প্রদান করতে পারেন।

৬। "অবসর" একজন কর্মী ৬০ বছর পূর্ন করার পরে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করতে হবে অথবা চাকুরীর বয়স ২৫ বছর পূর্ন করার পরে সেচ্ছায় চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করতে পারবেন ৩০ দিনের পূর্ববতী নোটিশ প্রদান করে।

৭। "মৃত্যু" কোন কর্মীর মৃত্যুর ফলে ধারা-১৮ অনুযায়ী তার প্রতিষ্ঠানের সাথে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়।



 প্রভিডেন্ট ফান্ডের অর্থ প্রাপ্তিতে প্রয়োজনীয় পরিবর্তন: ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম অধ্যাদেশের ধারা- ২৫ অনুযায়ী একজন কর্মীকে বরখাস্ত করলে তিনি ইপিজের মধ্যের প্রভিডেন্টের অর্থ প্রাপ্ত হইবেন যাহা ইতিপূর্বে নিষেধ ছিল।

কিন্তু সমস্যা হল কতদিন কাজ করার পরে বরখাস্ত হলে তিনি মালিকের অংশ পাবেন?

উত্তরটা হবে চাকুরীর বয়স তিন বছর হলে উভয় অংশ পাবেন এবং চাকুরীর বয়স তিন বছরের কম এবং ২ বছরের বেশি হলে মালিকের অর্থের ৫০% প্রাপ্ত হবেন।

 
তাহলে এখন বেপজার মধ্যে থাকা সকল প্রতিষ্ঠানকে তাদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের বিধিমালা পরিবর্তন করতে হবে নিন্মরুপ ভাবে:

১। তিন বছর বা তার চেয়ে বেশি সময়ে কাজ করিলে এবং নিজ ইচ্ছায় চাকুরী ত্যাগ বা ইস্তফা প্রদান করিলে বা বরখাস্তকৃত হলে মালিকের শতভাগ জমাকৃত অর্থসহ সকল অর্থ প্রাপ্ত হইবেন।

২। তিন বছরের কম এবং দুই বছরের বেশি সময় কাজ করিলে এবং নিজ ইচ্ছায় চাকুরী ত্যাগ বা ইস্তফা প্রদান করিলে বা বরখাস্তকৃত হলে মালিকের অংশের অর্ধেক এবং কর্মীর টাকার সম্পূর্ণ অংশ পাইবেন।

৩। দুই বছরের কম কাজ করিলে এবং নিজ ইচ্ছায় চাকুরী ত্যাগ বা ইস্তফা প্রদান করিলে বা বরখাস্তকৃত হলে মালিকের অংশ ছাড়া শুধুমাত্র নিজ অংশের অর্থ প্রাপ্ত হইবেন।

৪। ছাঁটাই,ডিসচার্জ বা টার্মিনেইট হলে কোন কর্মী মালিকের অংশসহ উভয় অংশই প্রাপ্ত হবেন।

৫। কোন কর্মীর মৃত্যুর ক্ষেত্রে তার উত্তরাধিকারী উভয় পক্ষের অর্থ প্রাপ্ত হবেন।

এখন থেকে বেপজার মধ্যে থাকা প্রতিষ্ঠান সমূহকে উপরের ৫টি নিয়মে প্রভিডেন্ট ফান্ডের সুবিধা পরিশোধ  পরিশোধ করতে হবে।




 মৃত্যুজনিত সুবিধা:ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম অধ্যাদেশ ২০১৯ এর ধারা-১৮ অনুযায়ী কোন কর্মীকে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।

মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ খুব ভাল ভাবে বুঝতে হলে আপনাকে চারটি জিনিস ভাল ভাবে লক্ষ্য করতে হবে।

১। কর্মীর চাকুরীর বয়স ১ বছরের বেশি হতে হবে।

২। চাকুরীরত থাকাকালীন অবস্থায় মৃত্যুবরন।

৩। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরন।

৪। কর্মকালীন দুর্ঘটনার কারনে পরর্বতীতে মৃত্যুবরন।

প্রথমত, আপনাকে বুঝতে হবে, কে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ পাবে এবং কে পাবে না?

যে ব্যক্তির চাকুরীর বয়স অবিচ্ছিন্নভাবে অন্তত ১ বছরের অধিকাল হয়েছে তিনিই শ্রম অধ্যাদেশের ১৮ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ পাইবার অধিকারী হইবেন।

চাকুরীর বয়স যদি কোন কারনে ১ বছরের বেশি না হয়, কোন ভাবেই ১৮ ধারার ক্ষতিপূরণ পাবে না।

প্রথম শর্তপূরন হলে, আপনাকে অন্য তিনটি শর্ত বিবেচনায় আনতে হবে।

১। চাকুরীরত থাকা অবস্থায়।

চাকুরীরত ব্যপারটা কি আসলে?

আপনি একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন কিন্তু আপনি কর্মঘন্টার বাহিরে বা ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে যে কোন ভাবে মারা গেলে।

প্রতিবছর বা ছয় মাসের অধিক সময়ের কাজের জন্য ১ টি করে বেসিক পাবে আপনার পোষ্য।

২। কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরন।

আপনি একজন কর্মী কর্ম ঘন্টার মধ্যে কর্মস্থালে বা কর্মস্থলের বাহিরে অফিসের কাজে থাকা অবস্থায় যে কোন ভাবে মৃত্যুবরন করলে।

আপনার পোষ্যরা প্রতিবছর বা ছয় মাসের অধিক সময় কাজের জন্য ৪৫ দিন করে মজুরি পাবেন।

৩। কর্মকালীন দুর্ঘটনা কারনে পরর্বতীতে মৃত্যুবরন।

আপনি একজন কর্মী কাজ করতে গিয়ে আহত হলেন এবং পরর্বতীতে ১ বা ২ মাস পরে মারা গেলেন।

আপনার পোষ্য ৬ মাস বা ১ বছর কাজের জন্য ৪৫ দিন করে মজুরী পাবেন।

সবার শেষে আপনাকে লক্ষ্য করতে হবে এই লাইনটি

"এই অর্থ মৃত শ্রমিক চাকুরী হইতে অবসর গ্রহন করিলে যে অবসরজনিত সুবিধা প্রাপ্ত হইতেন, তাহার অতিরিক্ত হিসাবে প্রদেয় হইবে।"

তার অর্থ হল একজন মৃত শ্রমিকের পোষ্য  ১৮ ধারার ক্ষতিপূরণ পাইবেন এবং তার অতিরিক্ত হিসাবে শ্রম অধ্যাদেশের ধারা-২৪ অনুযায়ী প্রতিবছর কাজের জন্য ৪৫ দিনের বেসিক পাইবেন।



কর্মীকে অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে তা কমানো যাবে কি না: ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-১৯২ অনুযায়ী কোন কর্মীকে ইতিপূর্বে প্রদত্ত অধিক কোন সুবিধা কমানো যাবে না।

ধারা-১৯২ এ বলা আছে "এই আইন প্রবর্তনের সময় কোন শ্রমিক যে মালিকের অধীন যে সকল অধিকার বা  সুযোগ-সুবিধা ভোগ করিতেছিলেন সেই মালিকের অধীন যতদিন কর্মরত থাকিবেন ততদিন সেই সকল অধিকার বা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করিবেন,যদি না তাহার উক্ত অধিকার বা সুযোগ-সুবিধা এই আইন বা তদধীন প্রনীত বিধি বা প্রবিধানের অধীন প্রদত্ত অধিকার ও সুযোগ সুবিধা হইতে অধিকতর অনুকূল হয়।"

উক্ত ধারাতে স্পষ্ট করে বলা আছে যে কোন বর্তমান কর্মীর অধিক সুযোগ-সুবিধা কমানো যাবে না।

অনেক প্রতিষ্ঠান প্রায়ই সুবিধা কমিয়ে দিয়ে থাকেন।উক্ত ক্ষেএে কর্মী আদালতে অভিযোগ করতে পারবে।



ছুটি:ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা-০৯,৩০,৪১,৪২,৫০,৫১,৫২ এবং ৫৩ অনুযায়ী ছুটি মোট আট প্রকার যথাঃ-

১। নৈমেত্তিক ছুটি

ইপিজেড আইনের ধারা-৫০ অনুযায়ী নৈমেত্তিক ছুটি হবে ১০ দিন এবং পূর্ন মজুরীতে একজন শ্রমিক এই ছুটি ভোগ করতে পারবেন।

২। অসুস্থতা ছুটি

ইপিজেড আইনের ধারা-৫১ অনুযায়ী অসুস্থতা ছুটি হবে ১৪ দিন এবং পূর্ন বেতনে একজন শ্রমিক এই ছুটি ভোগ করতে পারবেন। পূর্বে শ্রমিক অর্ধেক বেতনে উক্ত ছুটি ভোগ করতেন।

৩। অর্জিত ছুটি

প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য শ্রমিক একদিনের ছুটি পাবেন যা নগদায়ন করা যাবে কিন্তু নগদায়নের নিয়ম ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দিবে।

৪। ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি

ধারা-৪১ অনুযায়ী যদি কোন শ্রমিক সাপ্তাহিক ছুটি না পায় তবে ধারা-৪২ অনুযায়ী পরর্বতী ৬ দিনের মধ্যে তাকে ক্ষতিপূরণমূলক সমপরিমান ছুটি দিতে হবে।

৫। মাতৃত্বকালীন ছুটি

মোট ১৬ সপ্তাহ ছুটি ভোগ করতে পারবেন একজন নারী শ্রমিক যদি তাহার দুটি সন্তান জীবিত না থাকে এবং চাকুরীর বয়স ৬ মাস হতে হবে।

৬। উৎসব ছুটি

ধারা-৫৩ অনুযায়ী কর্মী ১১ দিন উৎসব ছুটি ভোগ করিতে পারিবেন এবং কোন কারনে কর্মীকে উৎসব ছুটির জন্য কাজ করাতে একদিনের জন্য দুইদিন মজুরীসহ ছুটি দিতে হবে।

৭। সাপ্তাহিক ছুটি 

ধারা- ৪১ অনুয়ায়ী শ্রমিক সপ্তাহে ১ দিন সাপ্তাহিক ছুটি পাইবেন এবং ইহার জন্য কর্মীকে মজুরী প্রদান করা হবে।

৮। সাধারন ছুটি

ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানের জন্য সাধারন ছুটি ঘোষণা করতে পারবে।



সার্ভিস বেনিফিট:ইপিজেডের জন্য

বেপজা নির্দেশনা অনুযায়ী ইপিজেডের মধ্যে কোন প্রকার সার্ভিস বেনিফিটের ব্যবস্থা ছিল না।

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা-২৩ (৪) অনুযায়ী সকল স্থায়ী শ্রমিকে সার্ভিস বেনিফিট প্রদান করতে হবে।

কেবল মাএ স্থায়ী শ্রমিকগন সার্ভিস বেনিফিট প্রাপ্য হবেন কিন্তু কোন অস্থায়ী শ্রমিক সার্ভিস বেনিফিট প্রাপ্য হবেন না।

কোন স্থায়ী শ্রমিক কোন প্রতিষ্ঠানে ৫ বছর বা বেশি এবং ১০ বছরের কম সময় কাজ করলে প্রতি বছর কাজের জন্য ১৫ দিন করে মূল মজুরী প্রাপ্য হবেন।

এছাড়াও ১০ বছর বা বেশি সময় স্থায়ী ভাবে কাজ করলে প্রতিবছর কাজের জন্য ৩০ দিনের মূল মজুরী প্রাপ্য হবেন।

ইপিজেডের শ্রম আইনের নিয়ম অনুযায়ী গ্রাচুয়িটি প্রদানের কোন প্রকার ব্যবস্থা নেই।

আর যে সকল প্রতিষ্ঠানে গ্রাচুয়িটি চালু আছে তাদেরকে গ্রাচুয়িটি এবং সার্ভিস বেনিফিট দুটিই দিতে হবে আলাদাভাবে।

যেহেতু ২৩(৫) ধারাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৩ ধারাতে প্রাপ্ত সকল সুযোগ সুবিধা অন্যান্য সুযোগ সুবিধার অতিরিক্ত হবে।



উৎসব ছুটির জন্য ক্ষতিপূরণ:ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৫৩ ধারা অনুযায়ী একজন কর্মীকে প্রতি বছর ১১ দিন উৎসব ছুটি প্রদান করতে হবে।

তবে অনেক ক্ষেত্রে নানা বিধ কারনে প্রতিষ্ঠান কর্মীকে উৎসব ছুটি প্রদান করতে পারে না।

উক্ত ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান কর্মীকে ৩০ দিনের মধ্যে ২ দিনের মজুরিসহ ছুটি প্রদান করতে বলা হয়েছে।


প্রশ্ন হল মজুরি কি আলাদাভাবে প্রদান করতে হবে কি না?

ইপিজেড শ্রম আইনের ৫৩ ধারা অনুযায়ী শুধুমাএ ছুটির দুই দিনের নিয়মিত মজুরি প্রদান করতে হবে এবং কোন প্রকার অতিরিক্ত মজুরি প্রদান করতে হবে না।

এছাড়াও অনেকেই ছুটি প্রদান না করে, শুধুমাএ মজুরি প্রদান করে থাকে।

ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি প্রদান বাধ্যতামূলক এবং উক্ত ছুটির জন্য মজুরি প্রদান  করাও বাধ্যতামূলক।


অনুপস্থিতির জন্য কর্তন: ইপিজেডের জন্য

ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা-৫৮ অনুযায়ী কর্মীর কর্তব্য কাজে অনুপস্থিতির জন্য মূল মজুরী থেকে অর্থ কর্তন করা যাবে।

কাজে অনুপস্থিতি মূলত দুই প্রকার হতে পারে যেমন:-

১। আংশিক (১ ঘন্টা বা ৫ বা ১০ মিনিট)।

২। সমস্ত দিনের জন্য (৮ ঘন্টা বা এক দিন)।

ইপিজেড শ্রম আইনের নিয়ম অনুযায়ী উভয় ক্ষেত্রেই মজুরী কর্তনের নিয়ম একই রকমের হবে।

মূল বেতন / উক্ত মাসে যত দিন তত দিয়ে ভাগ করতে হবে।

এখন প্রশ্ন হল উক্ত মাসে যত দিন তত দিন দিয়ে ভাগ করতে হবে কেন?

কারন হল ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-২(২৩) অনুযায়ী    "পজ্ঞিকা মাস বা বৎসর অর্থ গ্রেগরিয়ান পজ্ঞিকা মাস বা বৎসর"

বাংলাদেশ শ্রম আইনে ৩০ দিয়ে ভাগ করতে হয় কারন দুটি - 

১। বাংলাদেশ শ্রম আইনে মাসের সংজ্ঞা দেয়া নেই।

২। বিধি-১১৫ তে ৩০ দিয়ে ভাগ করার কথা বলা আছে।

কিন্তু ইপিজেড শ্রম আইনে সংজ্ঞা দেয়া থাকাতে সুবিধা হয়েছে তাই উক্ত মাসে যত দিন তত দিন দিয়ে ভাগ করতে হবে।

তোতা মিয়া ৮২০০ টাকা বেতনে একটা কারখানায় কাজ করেন যার মূল মজুরী ৪৫০০ টাকা।

মার্চ মাসে সে কোন একদিন নির্ধারিত সময়ের ২ ঘন্টা পরে কাজে যোগদান করলেন।

তার মজুরী কিভাবে কর্তন করা হবে।
৪৫০০/৩১= ১৪৫ টাকা।

ঘন্টার টাকা বের করতে হবে।
১৪৫/৮=১৮ টাকা

দুই ঘন্টার টাকা বের করতে হবে।
১৮*২=৩৬ টাকা।

উক্তরুপ ভাবে মজুরী কর্তন করতে হবে।



অর্জিত ছুটির নগদায়ন: ইপিজেডের জন্য

ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ অনুযায়ী অর্জিত ছুটি নগদায়ন করা যাবে।

অর্জিত ছুটির নগদায়নের ক্ষেত্রে কিছু শর্ত মেনে চলতে হবে যেমনঃ

১। কর্মী অব্যয়িত ছুটি ভোগ করবে অথবা নগদায়ন করবে। কর্মীর ইচ্ছার উপরে নির্ভর করে এবং মালিক কিছুই চাপিয়ে দিতে পারবেন না।

২। কর্মীকে সর্বশেষ বছরের অর্জিত ছুটি জমা রাখিয়া, তার বাকি অব্যয়িত ছুটি ভোগ করতে পারবেন।

উদাহরণঃ

মাহবুব XYZ প্রতিষ্ঠানে তিন বছর চাকুরী করেন যথাক্রমে ২০১৭, ২০১৮ এবং ২০১৯।

এখন মাহবুব যদি ছুটি নগদায়ন করতে চায়, সেক্ষেত্রে সে ২০১৯ সালের কোন ছুটি ২০২০ সালে নগদায়ন করতে পারবেন না।

তিনি ২০১৭ এবং ২০১৮ সালে যদি কোন ছুটি পাওনা থাকেন, তবে তিনি উক্ত ছুটি নগদায়ন করতে পারবেন।

ছুটি নগদায়নের ক্ষেত্রে যে মাসে নগদায়নের অর্থ প্রদান  করা হবে, তার আগের মাসের মোট প্রাপ্ত মজুরিকে ৩০ দিয়ে ভাগ করতে হবে।

মোট মজুরি অর্থ "মূল মজুরি+বাড়ি ভাড়া+চিকিৎসা ভাতা"

তাহলে এক দিনের মজুরি পাওয়া যাবে এবং তাকে অব্যয়িত ছুটির দিন দিয়ে গুন করতে হবে। তাহলেই পাওয়া যাবে পরিশোধযোগ্য অর্থের পরিমান।

৩। আরেকটি বিষয় বলে নেয়া ভাল ছুটির নগদায়ের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত মোট মজুরির কথা বলা হয়েছে। অথাৎ কোন প্রকার অনুপস্থিতির জন্য কর্তন থাকলে উক্ত অর্থ বাদ দিয়ে মোট প্রাপ্ত মজুরি গননা করতে হবে।



মাস্টার রোল কি : ইপিজেডের জন্য

মাস্টার রোল একটা সাধারন খাতা।

খাতাটির অসাধারন কিছু গুরুত্ব আছে।

ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-১৬ তে মাস্টার রোল নামক পদার্থের সাথে পরিচিত হবেন।

ইপিজেড শ্রম আইনের অধীন লে-অফ নামক যে বিষয়টি আছে তার সাথে মাস্টার রোল বিষয়টি বিস্তৃতভাবে জড়িত।

লক্ষ্য করে থাকবেন যে যখন কোন প্রতিষ্ঠান লে-অফ থাকে, তখন কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মী বা রক্ষনাবেক্ষন বিভাগের কর্মীদেরকে সম্পদ দেখাশোনার জন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কাজ করতে হয়।

ধারা-১৭ অনুযায়ী লে-অফ চলাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মী এবং লে-অফকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের হাজিরা সংরক্ষনের জন্য যে খাতা সংরক্ষন করা হয় তাকেই মাস্টার রোল বলে।



৮ ঘন্টা কাজ করানো কিন্তু ১ ঘন্টা আহার এবং বিশ্রামের বিরতি প্রদান না করা: ইপিজেডের জন্য

অনেক প্রতিষ্ঠানে একটা রেওয়াজ চালু আছে, প্রতিদিন  কর্মীকে ৮ ঘন্টা কাজ করাবে কিন্তু ৩০ মিনিট আহার এবং বিশ্রামের সময় প্রদান করে।

কিন্তু বাকি ৩০ মিনিট বিরতি প্রদান না করে, ৩০ মিনিট পূর্বেই প্রতিষ্ঠানে ছুটি প্রদান করেন।

অথাৎ ৮ : ৩০ মিনিট পরে অফিস ছুটি দিয়ে দেয়া হয় এবং শ্রমিকদের বলা হয় বাকি ৩০ মিনিট বিরতি বাসায় ভোগ করার জন্য।

উক্ত ধরনের কার্যক্রম বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনে ধারা-৩৯ অনুযায়ী বে-আইনী।

কারন কি?

ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৩৯(ক) এবং (খ) অনুযায়ী বিরতি প্রদান না করা।

ধারা-৩৯(ক) অনুযায়ী:

এক টানা ৬ ঘন্টা কাজ করালে ১ ঘন্টা বিরতি প্রদান করতে হবে।

এখানে লক্ষ্য করেন প্রতিটি কর্মীকে ৬ ঘন্টা কাজ করানোর পরে ৩০ মিনিট বিরতি দেয়া হচ্ছে।

ধারা-৩৯ অনুযায়ী কোন কর্মী ৫ এবং ৬ ঘন্টা অধিক সময় কোন কর্মী কাজ করতে বাধ্য থাকিবে না যদি ৫ ঘন্টা কাজ করার পরে ৩০ মিনিট এবং ৬ ঘন্টা কাজ করার পরে ১ ঘন্টা বিরতি না দিলে।

কোন প্রতিষ্ঠান আবার আইনকে ফাকি দেয়ার জন্য ৫ ঘন্টা কাজ করার পরে ৩০ মিনিট বিরতি দেন কিন্তু মোট ৬ ঘন্টা ৩০ হওয়ার পরে বাকী ৩০ মিনিট বিরতি আর দেয়া হয় না।

যাহা ধারা-৩৯ অনুযায়ী স্পষ্ট অপরাধ, কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মী মোট ৬ ঘন্টা করার পর মোট ১ ঘন্টা বিরতি না পেলে তিনি আর কাজ করিতে বাধ্য থাকিবেন না।



চাকুরীর বয়স গননার নিয়ম: ইপিজেডের জন্য

কোন কর্মীকে বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ২য় অধ্যায় অনুযায়ী কোন ক্ষতিপূরণ বা সুবিধা প্রদানের ক্ষেএে উক্ত কর্মীর চাকুরীর বয়স গননা করা একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়।

চাকুরীর বয়স গননার ক্ষেএে কিছু ভুল ধারনা আছে।

অনেকের ভুল ধারনা বাস্তবে ২৪০ দিন উপস্থিত থাকলেই তা ১ বছর হিসাবে গননা করা হবে।

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-১৩(১) এ বলা আছে

"কোন শ্রমিক কোন প্রতিষ্ঠানে পূর্ববর্তী (১২) বার পজ্ঞিকা মাসে বাস্তবে অন্তত ২৪০ দিন বা ১২০ দিন কাজ করিয়া থাকেন,তা হলে তিনি যথাক্রমে ১ বছর বা ৬ মাস প্রতিষ্ঠানে অবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করিয়াছেন বলিয়া গন্য হবে"

এখানে দুটি শর্ত লক্ষ্য করতে হবে,

১। পূর্ববর্তী ১২ পজ্ঞিকা মাসে।
২। বাস্তবে অন্তত ২৪০ দিন কাজ করিয়া থাকেন।

দিপ্তি XYZ কোম্পানিতে ৪ বছর ১০ মাস ২৫ দিন কাজ করেন।তারপরে তিনি ব্যক্তিগত কারন দেখিয়ে চাকুরী থেকে পদত্যাগ করে।

এখন প্রশ্ন হল ধারা ১৩ অনুযায়ী দিপ্তির চাকুরীর বয়স ৫ বছর হবে কি না?

উত্তর হল না।

কারন ধারা-১৩(১) অনুযায়ী দুটি শর্ত পূরন হতে হবে।

১। পূর্ববর্তী ১২ পজ্ঞিকা মাসে।

২। বাস্তবে অন্তত ২৪০ দিন কাজ করিয়া থাকেন।

দিপ্তির ক্ষেএে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল।তিনি ২য় শর্তটি পূরন করেছে ২৪০ দিনে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু যে দিনে চাকুরী ছাড়ছেন।

তার ১২ পজ্ঞিকা মাস পূর্ন হয়নি।

অনেকে ভুল ধরতে চেষ্টা করবেন কিন্তু লক্ষ্য করুন যোগদানের তারিখ থেকে যোগদানের তারিখ ১২ পজ্ঞিকা মাস হিসাব করে তার মধ্যে ২৪০ দিন কাজের দিন হিসাব করুন।

তবে আর আমার কথাগুলো ভুল মনে হবে না।

অনেকের কাছে মনে হবে ৬ মাসের বেশি কাজ করলে এক বছর বিবেচনা করতে হবে, আইনে বলা আছে।

হ্যা,শুধুমাএ তা ধারা-১৮ এর ক্ষেএে অন্য কোন ক্ষেএে না।

আর বাস্তবিক কাজের দিনের জন্য ধারা-১৩(২) এ উল্লেখিত দিনগুলোকে গননায় আনতে হবে।



অবসর: ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ২৪ ধারাতে অবসর নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ২৪ ধারা অনুযায়ী কোন শ্রমিকের বয়স ৬০ হলে তিনি স্বাভাবিকভাবে অবসর গ্রহন করবেন।

যদি কোন কর্মীর চাকুরীর বয়স ২৫ বছর পূর্ন হয় তবে তিনি স্বেচ্ছায় তার অবসরের সম্ভাব্য ৩০ দিন পূর্বে লিখিত নোটিশ দিয়ে অবসরে যেতে পারবেন।

এখানে দুটি বিষয় মাথায় রাখা ভাল:

১. কর্মীর নিজের বয়স।

২. কর্মীর চাকুরীর বয়স।

চাকুরীর বয়স এবং কর্মীর বয়স নির্ধারণ করার জন্য কর্মীর নিজ সার্ভিস বুকে চুড়ান্ত প্রমান হিসাবে বিবেচনা করা হবে।

কোন কর্মী তার চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করলে বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ২৪ ধারা অনুযায়ী প্রতি পূর্ন বছর কাজের জন্য ৪৫ দিনের মূল মজুরী পাইবেন।

কোন মালিক যদি মনে করেন অবসরের পরে কোন কর্মীকে নিয়োগ প্রদান করবেন সেক্ষেএে উক্ত কর্মীকে চুক্তিভিত্তিক হিসাবে নিয়োগ করতে পারবেন।



পদত্যাগ: ইপিজেডের জন্য

কোন শ্রমিকের চাকুরী হইতে পদত্যাগের বিষয়ে ইপিজেড শ্রম আইনের ২৩ ধারাতে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

শ্রম আইনের ধারা-২৩ (১) ও (২) অনুযায়ী কর্মীকে চাকুরী থেকে পদত্যাগের ক্ষেএে নোটিশ প্রদান করতে হবে।

শ্রম আইনের ধারা-২৩(১) অনুযায়ী কোন স্থায়ী শ্রমিক চাকুরী থেকে পদত্যাগ করতে চাইলে তাকে ৩০ দিনের নোটিশ প্রদান করতে হবে।

অথবা

তাৎক্ষণিক পদত্যাগের ক্ষেএে ৩০ দিনের মূল মজুরী প্রদান করে পদত্যাগ করতে হবে।

অস্থায়ী বা অন্য কোন শ্রমিকের ক্ষেএে শ্রম আইনের ধারা-২৩(২) অনুযায়ী যে সকল অস্থায়ী শ্রমিকগন তারা ১৫ দিনের নোটিশ বা মজুরী প্রদান করে পদত্যাগ করতে পারবেন।



ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি: ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী দুটি ধারাতে ক্ষতিপূরনমূলক ছুটির কথা বলা আছে।

ইপিজেড শ্রম আইনের ৪২ ধারাতে বলা আছে ক্ষতিপূরণমূলক সাপ্তাহিক ছুটির বিষয়ে।

কোন কর্মী যদি তার প্রাপ্য ১ দিন সাপ্তাহিক ছুটি থেকে বঞ্চিত হন তবে তাকে পরবর্তী ৬ দিনের মধ্যে ১ দিনের ছুটি প্রদান করতে হবে।

অন্য দিকে, ৫৩ ধারাতে উৎসব ছুটির বিষয়ে বলা আছে, উৎসব ছুটির দিনে কোন কর্মীকে কাজ করতে বলা হলে তাকে মজুরীসহ ২ দিনের ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি প্রদান করতে হবে।

তবে উৎসব ছুটির বিনিময়ে ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

ইতিপূর্বে ইপিজেড নির্দেশিনাতে বলা ছিল, যদি কোন কর্মী ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি ভোগ না করে, 

তাকে তার ছুটির বিনিময়ে অর্থ প্রদান করা হলে,উক্ত কর্মীকে ক্ষতিপূরণমূলক উৎসব ছুটি প্রদান প্রয়োজন হবে না।

কিন্তু ২০১৯ সালের ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণমূলক ছুটির বিনিময়ে শুধু অর্থ প্রদান করলে তা বে-আইনি হবে।

মজুরী এবং ছুটি দুটিই প্রদান বাধ্যতামূলক, তাই ছুটির বিনিময়ে শুধু মাএ অর্থ প্রদান গ্রহনযোগ্য নয়।



অর্জিত ছুটি জমা রাখা যাবে কি না: ইপিজেডের জন্য

ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৫২ অনুযায়ী কোন অর্জিত  ছুটি জমা রাখা যাবে না কারন বাংলাদেশ শ্রম আইনের ধারা-১১৭ এর মত ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৫২ তে ছুটি জমা রাখার কোন নিয়মের কথা উল্লেখ নেই।

তাই ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী কোন অর্জিত ছুটি জমা রাখা যাবে না।

একজন কর্মীকে প্রাপ্ত ছুটি হয় ভোগ করতে হবে অথবা নগদায়ন করতে হবে এবং এর কোন বিকল্প নেই।

তবে যে সকল প্রতিষ্ঠান বেপজা নিদের্শনা- ১ ও ২ অনুযায়ী পূর্ব থেকেই ছুটি জমানোর অধিকার দিয়ে আসছেন তারা উক্ত সুবিধা বন্ধ করতে পারবেন না।

ইপিজেড আইনের ধারা-১৯২ অনুযায়ী বর্তমান আইনের থেকে পূর্ববতী কোন অনুকূল সুবিধা কমানো যাবে না।



উৎসব বোনাস: ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ শ্রম আইনের মত ইপিজেড শ্রম আইনে উৎসব বোনাসের ব্যবস্থা আছে।

ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৫৩ অনুযায়ী একজন কর্মী  স্থায়ী হলে উৎসব বোনাস পাবেন।

যেহেতু ইপিজেড শ্রম আইনে বলা আছে স্থায়ী কর্মীগন উৎসব বোনাস পাবেন, তার অর্থ হল যেহেতু কোন কর্মী ৩ মাসের মধ্যে স্থায়ী হওয়া সম্ভব,

তাই ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী ৩ মাস কাজ করেও উৎসব বোনাস পাওয়া যাবে।

প্রতি বছরে একজন কর্মী দুইবার তার নিজ ধর্মের অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে দুটি উৎসব বোনাস পাবেন।

বোনাসের পরিমান হবে বেসিকের সমান, কোন অবস্থাতেই এটা বেসিকের বেশি বা কম হবে না।



বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমা: ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা-৩৬ অনুযায়ী যদি কোন প্রতিষ্ঠানে ২৫ জন স্থায়ী কর্মী নিয়োজিত থাকেন তবে উক্ত প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমা চালু করতে হবে।

গ্রুপ বীমা চালু করার পূর্বে কিছু বিষয়ে লক্ষ্য করতে হবে।

১. গ্রুপ বীমার পরিমান কত টাকা হবে।

বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনে বাধ্যতামূলকভাবে গ্রুপ বীমা চালু করার কথা বলা হয়েছে কিন্তু কত টাকা ক্ষতিপূরণ বীমা থেকে পাওয়া যাবে তা নিদিষ্ট করা নেই।

এটা হতে পারে ১০,০০০/-, ৫০,০০০/- বা ১,০০,০০০/-, যে কোন পরিমান।

২. কোন বিষয়গুলো বীমার আওতায় আসবে।

মৃত্যু এবং স্থায়ী অক্ষমতার ক্ষেত্রে বীমার টাকা পরিশোধ করতে হবে।

স্থায়ী অক্ষমতা বলতে কি বুঝায়?

স্থায়ী অক্ষমতা বুঝাতে ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-২(৫৩) অনুসরণ করতে হবে।

ধারা-২(৫৩) তে বলা হয়েছে প্রথম তফসিলের ১০০% ক্ষতিপূরণ প্রদানকারী বিষয়গুলোকে শতভাগ স্থায়ী অক্ষমতা হিসাবে বিবেচিত হবে।

তাই নিন্মের ৬টি বিষয়কে বীমার আওতায় আনতে হবে  স্থায়ী অক্ষমতা হিসাবে।

১. উভয় হাত হারানো বা উপরের অংশ হইতে কাটিয়া ফেলা।

২. এক হাত বা পা হারানো।

৩. উভয় চোখের দৃষ্টি শক্তি হারানো।

৪. উভয় পা বা উরু কাটিয়া ফেলা,এক পা বা উরু কাটিয়া ফেলা বা যেকোন পা হারানো।

৫. মুখাবয়বের মারাত্মক বিকৃতি।

৬. সম্পূর্ণ বধিরতা।

এছাড়াও মৃত্যু আলাদাভাবে এর সাথে যুক্ত হবে।

সর্বমোট সাতটি বিষয়কে বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমার আওতায় আনতে হবে।



মালিক তার ইচ্ছা অনুযায়ী ছুটি দিয়ে, অর্জিত ছুটি থেকে সমন্বয় করতে পারবে কি না: ইপিজেডের জন্য

ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ অনুযায়ী মালিক তার সুবিধাজনক দিন বা তারিখে কোন কর্মী বা কর্মীদেরকে ছুটি দিয়ে উক্ত ছুটির দিনকে অর্জিত ছুটির সাথে সমন্বয় করতে পারবে না।

বেপজা কর্তৃক প্রকাশিত অফিস আদেশের ৭(৩) অনুচ্ছেদে বলা আছে-

 "মালিক তাহার সুবিধামত কোন নিদিষ্ট দিন ও তারিখ নির্ধারণপূর্বক কোন শ্রমিক অথবা শ্রমিকদের ছুটি প্রদান করিয়া পরবর্তীতে অব্যয়িত অর্জিত ছুটির সহিত সমন্বয় করিতে পারিবেন না।"

তার অর্থ হল কর্মী ছুটি ভোগ করবে অথবা নগদায়ন করবে কিন্তু মালিক ইচ্ছা করে তার উপরে কিছু চাপিয়ে দিতে পারবেন না।



উৎসব বোনাস: ইপিজেডের জন্য

বাংলাদেশ শ্রম আইনের মত ইপিজেড শ্রম আইনে উৎসব বোনাসের ব্যবস্থা আছে।

ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৫৩ অনুযায়ী একজন কর্মী  স্থায়ী হলে উৎসব বোনাস পাবেন।

যেহেতু ইপিজেড শ্রম আইনে বলা আছে স্থায়ী কর্মীগন উৎসব বোনাস পাবেন, তার অর্থ হল যেহেতু কোন কর্মী ৩ মাসের মধ্যে স্থায়ী হওয়া সম্ভব,

তাই ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী ৩ মাস কাজ করেও উৎসব বোনাস পাওয়া যাবে।

প্রতি বছরে একজন কর্মী দুইবার তার নিজ ধর্মের অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে দুটি উৎসব বোনাস পাবেন।

বোনাসের পরিমান হবে বেসিকের সমান, কোন অবস্থাতেই এটা বেসিকের বেশি বা কম হবে না।

অনুপস্থিতির জন্য কর্তন:ইপিজেডের জন্য

ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা-৫৮ অনুযায়ী কর্মীর কর্তব্য কাজে অনুপস্থিতির জন্য মূল মজুরী থেকে অর্থ কর্তন করা যাবে।

কাজে অনুপস্থিতি মূলত দুই প্রকার হতে পারে যেমন:-

১। আংশিক (১ ঘন্টা বা ৫ বা ১০ মিনিট)।

২। সমস্ত দিনের জন্য (৮ ঘন্টা বা এক দিন)।

ইপিজেড শ্রম আইনের নিয়ম অনুযায়ী উভয় ক্ষেত্রেই মজুরী কর্তনের নিয়ম একই রকমের হবে।

মূল বেতন / উক্ত মাসে যত দিন তত দিয়ে ভাগ করতে হবে।

এখন প্রশ্ন হল উক্ত মাসে যত দিন তত দিন দিয়ে ভাগ করতে হবে কেন?

কারন হল ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-২(২৩) অনুযায়ী    
"পজ্ঞিকা মাস বা বৎসর অর্থ গ্রেগরিয়ান পজ্ঞিকা মাস বা বৎসর"

বাংলাদেশ শ্রম আইনে ৩০ দিয়ে ভাগ করতে হয় কারন দুটি -
 
১। বাংলাদেশ শ্রম আইনে মাসের সংজ্ঞা দেয়া নেই।

২। বিধি-১১৫ তে ৩০ দিয়ে ভাগ করার কথা বলা আছে।

কিন্তু ইপিজেড শ্রম আইনে সংজ্ঞা দেয়া থাকাতে সুবিধা হয়েছে তাই উক্ত মাসে যত দিন তত দিন দিয়ে ভাগ করতে হবে।

তোতা মিয়া ৮২০০ টাকা বেতনে একটা কারখানায় কাজ করেন যার মূল মজুরী ৪৫০০ টাকা।

মার্চ মাসে সে কোন একদিন নির্ধারিত সময়ের ২ ঘন্টা পরে কাজে যোগদান করলেন।

তার মজুরী কিভাবে কর্তন করা হবে।
৪৫০০/৩১= ১৪৫ টাকা।

ঘন্টার টাকা বের করতে হবে।
১৪৫/৮=১৮ টাকা

দুই ঘন্টার টাকা বের করতে হবে।
১৮*২=৩৬ টাকা।

উক্তরুপ ভাবে মজুরী কর্তন করতে হবে।


চাকুরীর বয়স গননার নিয়ম

কোন কর্মীকে বাংলাদেশ শ্রম আইনের ২য় অধ্যায় অনুযায়ী কোন ক্ষতিপূরণ বা সুবিধা প্রদানের ক্ষেএে উক্ত কর্মীর চাকুরীর বয়স গননা করা একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়।

চাকুরীর বয়স গননার ক্ষেএে কিছু ভুল ধারনা আছে।

অনেকের ভুল ধারনা বাস্তবে ২৪০ দিন উপস্থিত থাকলেই তা ১ বছর হিসাবে গননা করা হবে।

বাংলাদেশ শ্রম আইনের ধারা-১৪(১) এ বলা আছে

"কোন শ্রমিক কোন প্রতিষ্ঠানে পূর্ববর্তী (১২) বার পজ্ঞিকা মাসে বাস্তবে অন্তত ২৪০ দিন বা ১২০ দিন কাজ করিয়া থাকেন,তা হলে তিনি যথাক্রমে ১ বছর বা ৬ মাস প্রতিষ্ঠানে অবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করিয়াছেন বলিয়া গন্য হবে"

এখানে দুটি শর্ত লক্ষ্য করতে হবে,

১। পূর্ববর্তী ১২ পজ্ঞিকা মাসে।
২। বাস্তবে অন্তত ২৪০ দিন কাজ করিয়া থাকেন।

দিপ্তি XYZ কোম্পানিতে ৪ বছর ১০ মাস ২৫ দিন কাজ করেন।তারপরে তিনি ব্যক্তিগত কারন দেখিয়ে চাকুরী থেকে পদত্যাগ করে।

এখন প্রশ্ন হল ধারা ১৪ অনুযায়ী দিপ্তির চাকুরীর বয়স ৫ বছর হবে কি না?

উত্তর হল না।

কারন ধারা-১৪(১) অনুযায়ী দুটি শর্ত পূরন হতে হবে।

১। পূর্ববর্তী ১২ পজ্ঞিকা মাসে।
২। বাস্তবে অন্তত ২৪০ দিন কাজ করিয়া থাকেন।

দিপ্তির ক্ষেএে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল।তিনি ২য় শর্তটি পূরন করেছে ২৪০ দিনে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু যে দিনে চাকুরী ছাড়ছেন।

তার ১২ পজ্ঞিকা মাস পূর্ন হয়নি।

অনেকে ভুল ধরতে চেষ্টা করবেন কিন্তু লক্ষ্য করুন যোগদানের তারিখ থেকে যোগদানের তারিখ ১২ পজ্ঞিকা মাস হিসাব করে তার মধ্যে ২৪০ দিন কাজের দিন হিসাব করুন।

তবে আর আমার কথাগুলো ভুল মনে হবে না।

অনেকের কাছে মনে হবে ৬ মাসের বেশি কাজ করলে এক বছর বিবেচনা করতে হবে, আইনে বলা আছে।

হ্যা,শুধুমাএ তা ধারা-১৯ এবং ২(১০) এর ক্ষেএে অন্য কোন ক্ষেএে না।

আর বাস্তবিক কাজের দিনের জন্য ধারা-১৪(২) এ উল্লেখিত দিনগুলোকে গননায় আনতে হবে।

:::দৈনিক ওভার টাইম:::

প্রশ্নটা কি কখনও করেছেন যে একজন কর্মী  দৈনিক কত ঘন্টা ওভার টাইম করতে পারেন।

ধারা-১০০ অনুযায়ী কোন "শ্রমিক দৈনিক ১০ ঘন্টা পর্যন্তও কাজ করিতে পারিবেন"।

ধারা-১০০ এর কোথাও কিন্ত বলা হয় নাই যে এটা আহার বা বিশ্রামের সময়সহ বা উহা ছাড়া।

২০১৮ সালের সংশোধনী অনুযায়ী  "ধারা-১০১ এর অধীন কর্মীর আহার ও বিশ্রামের ব্যতীত ইহা যেন ১০ ঘন্টার অধিক সম্প্রসারিত না হয়।

তাই এখন থেকে প্রতিদিন ২ ঘন্টা করে ওভার টাইম করানো যাবে।

যে সকল প্রতিষ্ঠানে আহার এবং বিশ্রামের সময়সহ কর্ম সময় ৮ ঘন্টা সেই সকল প্রতিষ্ঠান দৈনিক ৩ ঘন্টা ওভার টাইম করাতে পারবেন।

তবে সেক্ষেত্রে আবার বছরন্তে ৫৬ ঘন্টার গড় সীমা যেন অতিক্রম না করে,সে দিকে লক্ষ রাখতে হবে।

কিন্ত আহার এবং বিশ্রামের সময়সহ যে সকল প্রতিষ্ঠানের কর্ম সময় ৯ ঘন্টা তারা এখন ২ ঘন্টা করে ওভার টাইম করাতে পারবেন।

কোন মন্তব্য নেই: