Belle Isabella Boutique | বাংলাদেশি মেয়ে ইফ্ফাতের আমেরিকান ক্লোদিং ব্র্যান্ড | বেল ইসাবেলা - Textile Lab | Textile Learning Blog
Belle Isabella Boutique | বাংলাদেশি মেয়ে ইফ্ফাতের আমেরিকান ক্লোদিং ব্র্যান্ড | বেল ইসাবেলা
সফল উদ্যোক্তা : আমেরিকায় পোশাক ব্রান্ড বানিয়ে সফল বাংলাদেশী জেরিন; মাসে আয় করেন ৩৩ লক্ষ টাকা!
 বাংলাদেশি মেয়ের ইফ্ফাতের আমেরিকান ব্র্যান্ড: 

মার্কিন মুলুকে ‘বেল ইসাবেলা’ নামে একটি বুটিক ব্র্যান্ড আত্মপ্রকাশ করেছে এক বছর আগে। যাত্রার প্রথম বছরেই দেশটির বাজারে উপস্থিতিও জানান দিয়েছে ব্র্যান্ডটি। ব্যবসার ব্যাপ্তি ছোট হলেও তাদের মাসিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪০ শতাংশ। সম্প্রতি বুটিক ব্র্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠার ১২তম মাসে এসে তাঁর মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ৩৩লক্ষ টাকা।

আমাদের গল্প বেল ইসাবেলার ব্যবসা নিয়ে নয়, বরং তার প্রতিষ্ঠাতা ইফ্ফাত জেরিনকে নিয়ে। ইফ্ফাতের বেড়ে ওঠা ঢাকায়। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও   উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। এরপর এমবিবিএস করেন কিশোরগঞ্জের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে যখন তাঁর ইন্টার্নশিপ চলছিল, তখনই স্বামীর সঙ্গে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে।

ইফ্ফাত জেরিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের একজন মেডিকেল গ্র্যাজুয়েটের ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য খুব কঠিন। অনেক পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তার হিসেবে এখানে কাজের সুযোগ মেলে। সময় ও টাকার বিনিয়োগও করতে হয় অনেক। আমার স্বামীও তখন এই চেষ্টায় ছিল।।
ভিনদেশে থিতু হওয়ার কঠিন সময়ের মধ্যেই জন্ম হয় ইফ্ফাতের মেয়ে ইসাবেলার। সন্তান জন্ম, মাতৃত্বকালীন সবকিছু সামলানো, নিজের ক্যারিয়ার   বাঁচানোর চেষ্টা—সব মিলিয়ে মুষড়ে পরেন ইফ্ফাত। তখনই সিদ্ধান্ত নেন পরিস্থিতি নিয়ে হাহুতাশ না করে গঠনমূলক কিছু করবেন। শুরু করেন ফ্যাশন ব্লগিং।

ইফ্ফাত বলেন, ‘আমার মা-বাবা শৌখিন মানুষ। পরিবারে আমরা বরাবর সাজগোজকে প্রাধান্য দিয়েছি। নতুন পোশাক কেনা, পরা, সেটা নিয়ে ছবি তোলা ছিল আমার প্রিয় কাজ। এ নিয়েই ব্লগিং শুরু করলাম।’

কিন্তু বলতে যত সহজ, ব্লগিং শুরুর কাজটি তত সহজ ছিল না। রীতিমতো ওয়েব ডিজাইনিং  শিখতে হলো ইফ্ফাতকে । তিনি যেমনটি বলেন, ‘সে সময় ইউটিউবই ছিল আমার সেরা বন্ধু, ইউটিউব দেখেই নিজে নিজে ওয়েবপেজ ডিজাইন করি, তৈরি করি আমার ব্লগ সাইট।’

শুধু নিজের সাজগোজ নয়, আশপাশের প্রতিবেশকেও ইফ্ফাত সাজিয়ে ফেলেন পরম নিপুণতায়। এই দক্ষতা তখন খুব কাজে দিল। নিজেকে সাজিয়ে সুন্দর ছবি তুলে ইফ্ফাত যে ব্লগ পোস্ট দিতেন, ফেসবুক- ইনস্টাগ্রামে তা সহজেই নজর কাড়ল অনেক মানুষের।

ইফ্ফাত বলেন, ‘আমি নিছকই শখের বশে শুরু করেছিলাম। কাজটা খুব উপভোগও করছিলাম। এর মধ্যে আমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেজগুলোয় বিভিন্ন ব্র্যান্ড থেকে যোগাযোগ শুরু করল, আমি যেন আমার ফ্যাশন ব্লগিংয়ে তাদের পণ্য ব্যবহার করি। এভাবে কিছু বোঝার আগেই ফ্যাশন ব্লগ থেকে আমার আয় হতে থাকল’।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইফ্ফাতের মতো এমন অনেক ফ্যাশন ব্লগার আছেন। তাঁদের আয়ও কম নয়। কিন্তু সে পথে স্থায়ী হতে চাননি ইফ্ফাত; বরং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন খাতকে ভেতর থেকে জানার চেষ্টা করলেন, অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের মতো করে কিছু শুরু করার কথা ভাবলেন।

ইফ্ফাত বলেন, ‘যতই তাদের জানছিলাম, ততই বুঝতে পারছিলাম এখানে আমি ভালো করব। আমার উচ্চাকাঙ্ক্ষাও ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে নিজের একটা বুটিক ব্র্যান্ড শুরু করা সহজ কথা নয়। এখানে লাইসেন্সসহ পণ্যের জোগানদাতা খুঁজে পেতে হয়, ব্যবসার অনেক খুঁটিনাটিও জানতে হয়। এদিকে আমার সংসারের কাজ আছে, সন্তানের দেখভাল করা, আর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন তো আছেই।’


এত কিছু সামলে আবার যখন রাতে কিছুটা ফুরসত পাওয়া যেত, ইফ্ফাত মনোযোগী হতেন তাঁর স্বপ্নের কাজে। এভাবে একটু একটু করে দাঁড়াল ইফ্ফাতের ব্র্যান্ড বেল ইসাবেলা, যা বাংলায় ‘সুন্দরী ইসাবেলা।।
ইফ্ফাত বলেন, ‘আমার কাপড় আসে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে, সেলাই হয় টেক্সাসে। মজার কথা হচ্ছে, এই কাজগুলো যাঁরা করে দেন, তাঁদের কাউকেই আমি সামনাসামনি দেখিনি। ফোনেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ। করোনাকালে সারা বিশ্বের  ব্যবসা-বাণিজ্যে যখন মন্দা, আমার ইসাবেলা এগিয়ে যাচ্ছে জোরেশোরে।’
বেল ইসাবেলার সঙ্গে ইফ্ফাতের মেয়ে ইসাবেলাও বড় হয়ে উঠেছে। এখন তার বয়স প্রায় তিন বছর। মায়ের সঙ্গে পণ্যের ছবি তুলে সেও হয় মডেল। ইফ্ফাত যোগ করেন, ‘বেল ইসাবেলা শতভাগ অনলাইনে ব্যবসা করে। আমার সঙ্গে চারজন স্থায়ী কর্মী আছেন। 

তাঁরা অনলাইনে অর্ডার নেওয়া এবং সেগুলো শিপমেন্ট করার ব্যবস্থা করেন। এর বাইরে একটা বিপণন প্রতিষ্ঠান ইসাবেলার বিপণনসংক্রান্ত কাজ করে দেয়।’

ইফ্ফাতের স্বপ্ন তাঁর ফ্যাশন লাইনে যুক্ত হবে বাংলাদেশি জামদানি বা নকশিকাঁথার ফোঁড়, এমনকি পোশাক তৈরি হবে বাংলাদেশের কোনো পোশাক কারখানায়। এভাবেই আপাদমস্তক বাংলাদেশের রঙে রাঙাতে চান যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফ্যাশন ব্র্যান্ডকে।

ওয়েবসাইটঃ 

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো 
মাকসুদা আজীজ
(প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২১)

Belle Isabella Boutique | বাংলাদেশি মেয়ে ইফ্ফাতের আমেরিকান ক্লোদিং ব্র্যান্ড | বেল ইসাবেলা

Belle Isabella Boutique | বাংলাদেশি মেয়ে ইফ্ফাতের আমেরিকান ক্লোদিং ব্র্যান্ড | বেল ইসাবেলা
সফল উদ্যোক্তা : আমেরিকায় পোশাক ব্রান্ড বানিয়ে সফল বাংলাদেশী জেরিন; মাসে আয় করেন ৩৩ লক্ষ টাকা!
 বাংলাদেশি মেয়ের ইফ্ফাতের আমেরিকান ব্র্যান্ড: 

মার্কিন মুলুকে ‘বেল ইসাবেলা’ নামে একটি বুটিক ব্র্যান্ড আত্মপ্রকাশ করেছে এক বছর আগে। যাত্রার প্রথম বছরেই দেশটির বাজারে উপস্থিতিও জানান দিয়েছে ব্র্যান্ডটি। ব্যবসার ব্যাপ্তি ছোট হলেও তাদের মাসিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৪০ শতাংশ। সম্প্রতি বুটিক ব্র্যান্ডটির প্রতিষ্ঠাতা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জানিয়েছেন, প্রতিষ্ঠার ১২তম মাসে এসে তাঁর মাসিক আয় দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ডলার যা বাংলাদেশী টাকায় ৩৩লক্ষ টাকা।

আমাদের গল্প বেল ইসাবেলার ব্যবসা নিয়ে নয়, বরং তার প্রতিষ্ঠাতা ইফ্ফাত জেরিনকে নিয়ে। ইফ্ফাতের বেড়ে ওঠা ঢাকায়। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল ও কলেজ থেকে মাধ্যমিক ও   উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন। এরপর এমবিবিএস করেন কিশোরগঞ্জের জহুরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজে। ২০১২ সালের ডিসেম্বরে যখন তাঁর ইন্টার্নশিপ চলছিল, তখনই স্বামীর সঙ্গে চলে যান যুক্তরাষ্ট্রে।

ইফ্ফাত জেরিন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের একজন মেডিকেল গ্র্যাজুয়েটের ক্যারিয়ার শুরু করার জন্য খুব কঠিন। অনেক পরীক্ষার মাধ্যমে ডাক্তার হিসেবে এখানে কাজের সুযোগ মেলে। সময় ও টাকার বিনিয়োগও করতে হয় অনেক। আমার স্বামীও তখন এই চেষ্টায় ছিল।।
ভিনদেশে থিতু হওয়ার কঠিন সময়ের মধ্যেই জন্ম হয় ইফ্ফাতের মেয়ে ইসাবেলার। সন্তান জন্ম, মাতৃত্বকালীন সবকিছু সামলানো, নিজের ক্যারিয়ার   বাঁচানোর চেষ্টা—সব মিলিয়ে মুষড়ে পরেন ইফ্ফাত। তখনই সিদ্ধান্ত নেন পরিস্থিতি নিয়ে হাহুতাশ না করে গঠনমূলক কিছু করবেন। শুরু করেন ফ্যাশন ব্লগিং।

ইফ্ফাত বলেন, ‘আমার মা-বাবা শৌখিন মানুষ। পরিবারে আমরা বরাবর সাজগোজকে প্রাধান্য দিয়েছি। নতুন পোশাক কেনা, পরা, সেটা নিয়ে ছবি তোলা ছিল আমার প্রিয় কাজ। এ নিয়েই ব্লগিং শুরু করলাম।’

কিন্তু বলতে যত সহজ, ব্লগিং শুরুর কাজটি তত সহজ ছিল না। রীতিমতো ওয়েব ডিজাইনিং  শিখতে হলো ইফ্ফাতকে । তিনি যেমনটি বলেন, ‘সে সময় ইউটিউবই ছিল আমার সেরা বন্ধু, ইউটিউব দেখেই নিজে নিজে ওয়েবপেজ ডিজাইন করি, তৈরি করি আমার ব্লগ সাইট।’

শুধু নিজের সাজগোজ নয়, আশপাশের প্রতিবেশকেও ইফ্ফাত সাজিয়ে ফেলেন পরম নিপুণতায়। এই দক্ষতা তখন খুব কাজে দিল। নিজেকে সাজিয়ে সুন্দর ছবি তুলে ইফ্ফাত যে ব্লগ পোস্ট দিতেন, ফেসবুক- ইনস্টাগ্রামে তা সহজেই নজর কাড়ল অনেক মানুষের।

ইফ্ফাত বলেন, ‘আমি নিছকই শখের বশে শুরু করেছিলাম। কাজটা খুব উপভোগও করছিলাম। এর মধ্যে আমার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের পেজগুলোয় বিভিন্ন ব্র্যান্ড থেকে যোগাযোগ শুরু করল, আমি যেন আমার ফ্যাশন ব্লগিংয়ে তাদের পণ্য ব্যবহার করি। এভাবে কিছু বোঝার আগেই ফ্যাশন ব্লগ থেকে আমার আয় হতে থাকল’।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ইফ্ফাতের মতো এমন অনেক ফ্যাশন ব্লগার আছেন। তাঁদের আয়ও কম নয়। কিন্তু সে পথে স্থায়ী হতে চাননি ইফ্ফাত; বরং তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ফ্যাশন খাতকে ভেতর থেকে জানার চেষ্টা করলেন, অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে তিনি নিজের মতো করে কিছু শুরু করার কথা ভাবলেন।

ইফ্ফাত বলেন, ‘যতই তাদের জানছিলাম, ততই বুঝতে পারছিলাম এখানে আমি ভালো করব। আমার উচ্চাকাঙ্ক্ষাও ছিল। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশে নিজের একটা বুটিক ব্র্যান্ড শুরু করা সহজ কথা নয়। এখানে লাইসেন্সসহ পণ্যের জোগানদাতা খুঁজে পেতে হয়, ব্যবসার অনেক খুঁটিনাটিও জানতে হয়। এদিকে আমার সংসারের কাজ আছে, সন্তানের দেখভাল করা, আর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন তো আছেই।’


এত কিছু সামলে আবার যখন রাতে কিছুটা ফুরসত পাওয়া যেত, ইফ্ফাত মনোযোগী হতেন তাঁর স্বপ্নের কাজে। এভাবে একটু একটু করে দাঁড়াল ইফ্ফাতের ব্র্যান্ড বেল ইসাবেলা, যা বাংলায় ‘সুন্দরী ইসাবেলা।।
ইফ্ফাত বলেন, ‘আমার কাপড় আসে লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে, সেলাই হয় টেক্সাসে। মজার কথা হচ্ছে, এই কাজগুলো যাঁরা করে দেন, তাঁদের কাউকেই আমি সামনাসামনি দেখিনি। ফোনেই তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ। করোনাকালে সারা বিশ্বের  ব্যবসা-বাণিজ্যে যখন মন্দা, আমার ইসাবেলা এগিয়ে যাচ্ছে জোরেশোরে।’
বেল ইসাবেলার সঙ্গে ইফ্ফাতের মেয়ে ইসাবেলাও বড় হয়ে উঠেছে। এখন তার বয়স প্রায় তিন বছর। মায়ের সঙ্গে পণ্যের ছবি তুলে সেও হয় মডেল। ইফ্ফাত যোগ করেন, ‘বেল ইসাবেলা শতভাগ অনলাইনে ব্যবসা করে। আমার সঙ্গে চারজন স্থায়ী কর্মী আছেন। 

তাঁরা অনলাইনে অর্ডার নেওয়া এবং সেগুলো শিপমেন্ট করার ব্যবস্থা করেন। এর বাইরে একটা বিপণন প্রতিষ্ঠান ইসাবেলার বিপণনসংক্রান্ত কাজ করে দেয়।’

ইফ্ফাতের স্বপ্ন তাঁর ফ্যাশন লাইনে যুক্ত হবে বাংলাদেশি জামদানি বা নকশিকাঁথার ফোঁড়, এমনকি পোশাক তৈরি হবে বাংলাদেশের কোনো পোশাক কারখানায়। এভাবেই আপাদমস্তক বাংলাদেশের রঙে রাঙাতে চান যুক্তরাষ্ট্রের একটি ফ্যাশন ব্র্যান্ডকে।

ওয়েবসাইটঃ 

তথ্যসূত্রঃ প্রথম আলো 
মাকসুদা আজীজ
(প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২১)

কোন মন্তব্য নেই: