ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি এবং পরিবেশ বিপর্যয় | Fashion Industry - Textile Lab | Textile Learning Blog
পরিবেশ বিপর্যয় এবং ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি :

আমরা এমন একটা বিশ্বে বাস করি, যেখানে প্রয়োজনের তুলনায় বহুগুণ বেশি পোশাক উৎপাদন করা হয়। আর একবিংশ শতকে এসে গার্মেন্টসের জঞ্জালে ভরে উঠেছে পৃথিবী। চাপ পড়ছে তুলা উৎপাদন আর সুতার ওপর। বিশ্বে যত কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, তার ১০ শতাংশের বেশি আসছে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি থেকে। ফ্যাশন পলিউশন বা পোশাকের মাধ্যমে পরিবেশদূষণ পরিবেশবাদীদের কপালের ভাঁজকে আরও গভীর করেছে। এমনিতেই বিশ্ব দিন দিন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। আর সেখানে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। পরিবেশদূষণের যত কারণ, তার মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে পোশাকশিল্প। ফাস্ট ফ্যাশনের ধারণা এই পরিবেশদূষণের মাত্রাকে গতিশীল করেছে। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি ২০০০ সালে গড়ে দুটি কালেকশন বের করত।

একটি পোশাকের সর্বোচ্চ জীবনকাল গড়ে তিন বছর। পোশাক পুরোনো মলিন হয়ে যায়। ছিঁড়ে যায়। চলতি ট্রেন্ডের সঙ্গে যায় না। আপিন যদি একটা পোশাক ৯ মাস বেশি পরেন, তাহলেই ওই পোশাকের মাধ্যমে কার্বন উৎপাদন আর ওই পোশাকের পেছনে ব্যবহৃত পানির অপচয় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

২০১১ সালে গড়ে পাঁচটি কালেকশনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় ভোক্তাদের। এ ক্ষেত্রে ক্লোদিং ব্র্যান্ড জারা সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। তারা বছরে ২৪টি কালেকশন বের করে। এইচঅ্যান্ডএম ১২ থেকে ১৬টি কালেকশন বের করে। ফাস্ট ফ্যাশনের ফলে ওয়ার্ডরোব নতুন জামায় ভরে উঠছে। কিন্তু পৃথিবী হয়ে উঠছে বসবাসের অনুপযোগী। এমন অবস্থায় সাধারণ ভোক্তা হিসেবে আমাদের করণীয় থেকেই যায়।
ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে আমাদের ছোট ছোট উদ্যোগ ভবিষ্যতের বিশ্বকে বাঁচাতে হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। প্রথমত, ‘গার্মেন্ট লাইফটাইম’ বাড়ানো। মানে এক পোশাক বেশি দিন পরা। পোশাকের আয়ু বাড়ানো। একটি পোশাকের সর্বোচ্চ জীবনকাল গড়ে তিন বছর। পোশাক পুরোনো মলিন হয়ে যায়। ছিঁড়ে যায়। চলতি ট্রেন্ডের সঙ্গে যায় না। আপিন যদি একটা পোশাক ৯ মাস বেশি পরেন, তাহলেই ওই পোশাকের মাধ্যমে কার্বন উৎপাদন আর ওই পোশাকের পেছনে ব্যবহৃত পানির অপচয় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। যতটা সম্ভব কম পোশাক কিনুন। কোথাও ছিঁড়ে গেলে, ফেঁসে গেলে সেলাই বা রিফু করে নিন। আর পরতে ইচ্ছে না করলে বন্ধুদের সঙ্গে বদলে নিন। ১৯৮০-এর দশকে মানুষ যে পরিমাণ পোশাক কিনত, এখন তার পাঁচ গুণ পোশাক কেনে। ২০০০ সালে মানুষ যত পোশাক ভোগ করত, ২০১৪ সালে তার ৬০ শতাংশ বেশি পোশাক ভোগ করে। মনে রাখতে হবে আমরা যতটা পোশাক কিনি, মোটাদাগে ওই পোশাক তার আকৃতির সমান পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যদিও এর নেতিবাচক প্রভাবের সঙ্গে আরও নানা কিছু জড়িত।


ফাস্ট ফ্যাশনের দৌরাত্ম্য বাড়িয়ে কিছু ব্র্যান্ড আর সেই ব্র্যান্ডের আড়ালের মানুষগুলোর পকেটে এসে ধরা দিয়েছে মিলিয়ন ডলার। পরিমিতিবোধের মাত্রা ছড়িয়ে পড়ছে সীমাহীনতায়। একটি পোশাকের গড় আয়ুকাল কমছে তো কমছেই। বিশ্ব একটু একটু পরিণত হচ্ছে ফ্যাশন বর্জ্যের ভাগাড়ে। ক্রমশ বেড়ে চলেছে কার্বন। এসবের বিপরীতে আবার শুরু হয়েছে স্লো ফ্যাশন, ইকো ফ্রেন্ডলি ফ্যাশন, সীমিত পরিসরে আপসাইক্লিং আর রিসাইক্লিং, থ্রিফট শপ-এ রকম সব মুভমেন্ট। আলো ফেলা যাক ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির অম্লমধুর পরিপ্রেক্ষিত ও আমাদের কী করণীয়, সেদিকে।

আপনি ভাবছেন, আপনার টাকায় আপনি ফ্যাশন করবেন। আপনি ফাস্ট ফ্যাশনে আগ্রহী। আপনার এক পোশাকের একটা ছবি সামাজিক মাধ্যমে আপলোড করার পর আপনার আর সেটি পরতে ইচ্ছে করে না। তারকারা তো এক পোশাক দুবার পরলেই ‘খবর’ হয়ে যান! এভাবে ফাস্ট ফ্যাশনের ফ্যালাসিতে বুঁদ হয়ে পড়েছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রি বেড়েছে হু হু করে। তাতে সমস্যা কোথায়? সমস্যা আছে। ফাইবার টু ফ্যাশন ডট কম এই বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পোশাক যে কাপড় দিয়ে তৈরি হয়, সেটি উৎপাদনে অনেক প্রাকৃতিক শক্তি, জায়গা আর পানি খরচ হয়। সুতি কাপড় বিশ্বের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কাপড়গুলোর একটি। একটা সুতির টি-শার্ট বানাতে যে পরিমাণ কাপড় লাগে, সেটির জন্য প্রয়োজনীয় তুলা উৎপাদন করতে ২০ হাজার লিটার পানি খরচ হয়। বিশ্বে যত পানি ব্যবহৃত হয়, তার শতকরা ২০ ভাগ খরচ হয়ে যায় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে। এর সঙ্গে রয়েছে এনার্জি-প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম। এসব দিয়ে উৎপাদিত পোশাক দ্রুতই বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে। তা ল্যান্ডফিল করে, বায়ুদূষণ, মাটিদূষণ, পানিদূষণ করে নানাভাবে পরিবেশদূষণে অবদান রাখছে। ওয়ার্ল্ডওয়াইড রেসপনসিবল অ্যাক্রিডিটেড প্রোডাকশন (ডব্লিউআরএপি) জানাচ্ছে, প্রতিবছর যুক্তরাজ্যে ১৪০ মিলিয়ন পাউন্ড বা ১ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকার জামাকাপড় ফেলে দেওয়া হয়। আর সেগুলো কেবল ল্যান্ডফিল করে।

আমরা যখন কোনো জামাকাপড় ফেলে দিই, তখন আসলে কী হয়? এর উত্তর জানিয়ে ‘হোয়াই ক্লোদস আর হার্ড টু রিসাইকেল’ শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিবিসি। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭৩ শতাংশ পোশাক হয় পুড়িয়ে ফেলা হয়, নতুবা ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হয় বা আবর্জনা হিসেবে ল্যান্ডফিলে জমা হয়। ১২ শতাংশ পোশাক ডাউনসাইকেলড হয়ে ম্যাট্রেস, ক্লিনিং ক্লোদস, পাপোশ, লুসনি বা অন্যান্য কম দামের নানা কিছুতে পরিণত হয়। শতকরা মাত্র ১ ভাগ আপসাইকেলড হয়ে নতুন কাপড়ে পরিণত হয়। প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের কাপড় ফেলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশি অর্থমূল্যে যার দাম দাঁড়ায় ৮ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা।
        



২০৫০ সালের মধ্যে ভোক্তার চাহিদা মেটাতে বর্তমানে যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, তার তিন গুণ প্রাকৃতিক সম্পদের প্রয়োজন হবে। এই নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনার অন্যতম সমাধানের নাম টেকসই ফ্যাশনশিল্প।

 ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) গবেষণা মতে, প্রতিবছর পোশাকশিল্প কারখানায় পোশাক ও তুলা ধোয়া ও রং করার কাজে ১ হাজার ৫০০ বিলিয়ন লিটার পানি ব্যবহার করা হয়। কারখানাগুলো ব্যবহারের পর এই বিষাক্ত পানি নদী আর খালে ফেলে দেয়। ২০৩০ সালের মধ্যে ফ্যাশনশিল্পের জন্য গ্রিনহাউস গ্যাস এবং বর্জ্য নিঃসরণ বৃদ্ধি পাবে ৬০ শতাংশ। ২০৫০ সালের মধ্যে ভোক্তার চাহিদা মেটাতে বর্তমানে যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, তার তিন গুণ প্রাকৃতিক সম্পদের প্রয়োজন হবে। এই নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনার অন্যতম সমাধানের নাম টেকসই ফ্যাশনশিল্প।

কেবল ১৫ বছরে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ। কাপড়ের দামও কমে চলে এসেছে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে। কাপড়ের দাম এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে কম। আবার নিম্নমধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্তের আয়ও বেড়েছে। সব মিলিয়ে একটা বড় শ্রেণি ১৫ বছর আগেও যে পরিমাণ পোশাক ব্যবহার করত, এখন করে তার দ্বিগুণ। ফলে এখন ফ্যাশন থেকে সৃষ্ট বর্জ্যের পরিমাণও অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ। আগে মানুষ একটা পোশাক যে পরিমাণ ব্যবহার করত, এখন তার শতকরা ৪০ ভাগও করে না। একটা পোশাকের গড় আয়ু দুই বছর দুই মাস। আর সেটি গড়ে ৭ থেকে ১০ বার পরা হয়।

প্যাটাগোনিয়া নামে একটি কোম্পানি আছে, যারা ভোক্তাদের ছেঁড়া বা পুরোনো পোশাক সেলাই করে নতুন করে দেয়। আবার কখনো কখনো ভোক্তাকে তার চাহিদা অনুযায়ী পুরোনো পোশাকের বদলে নতুন পোশাক দেয়। নুডি জিনস আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে মিলে ভোক্তাদের জিনস বিনা পয়সায় সেলাই করে পাঠিয়ে দেয়। ডিপপ গড়েই উঠেছে সেকেন্ড হ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে কেন্দ্র করে। ডিপপ পুরোনো জামাকাপড়গুলোকে চ্যারিটি শপগুলোতে পাঠানোর বদলে সেগুলো নতুন করে তোলে। ভ্যালু যোগ করে। সেগুলো আবার নতুনের মতো বিক্রি হয়। দ্বিতীয়, তৃতীয়, এমনকি চতুর্থবারের মতোও জামাকাপড় নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় ডিপপে এসে। ফ্রেঞ্চ কোম্পানির মাইসনক্লেও আরেকটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান। এর উদ্যোক্তা মা মেয়ে। তাঁরা জামাকাপড় সব হাতে সেলাই করেন। অন্যদিকে টিআরএমট্যাব নামের জুতার কোম্পানিটি পুরোনো জামাকাপড়, চামড়া দিয়ে জুতা বানায়। এতে ল্যান্ডফিলের পরিমাণ কমে।

বাংলাদেশেও এ ধরনের রিসাইক্লিং ও আপসাইক্লিং শুরু হয়েছে।


Ref: News letter, news paper, Google.
Zahidul Haque MSS in HRD(JU), MBA-HRM,PGD-HRM


ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি এবং পরিবেশ বিপর্যয় | Fashion Industry

পরিবেশ বিপর্যয় এবং ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি :

আমরা এমন একটা বিশ্বে বাস করি, যেখানে প্রয়োজনের তুলনায় বহুগুণ বেশি পোশাক উৎপাদন করা হয়। আর একবিংশ শতকে এসে গার্মেন্টসের জঞ্জালে ভরে উঠেছে পৃথিবী। চাপ পড়ছে তুলা উৎপাদন আর সুতার ওপর। বিশ্বে যত কার্বন নিঃসরণ হচ্ছে, তার ১০ শতাংশের বেশি আসছে গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি থেকে। ফ্যাশন পলিউশন বা পোশাকের মাধ্যমে পরিবেশদূষণ পরিবেশবাদীদের কপালের ভাঁজকে আরও গভীর করেছে। এমনিতেই বিশ্ব দিন দিন বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠছে। আর সেখানে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। পরিবেশদূষণের যত কারণ, তার মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে পোশাকশিল্প। ফাস্ট ফ্যাশনের ধারণা এই পরিবেশদূষণের মাত্রাকে গতিশীল করেছে। ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি ২০০০ সালে গড়ে দুটি কালেকশন বের করত।

একটি পোশাকের সর্বোচ্চ জীবনকাল গড়ে তিন বছর। পোশাক পুরোনো মলিন হয়ে যায়। ছিঁড়ে যায়। চলতি ট্রেন্ডের সঙ্গে যায় না। আপিন যদি একটা পোশাক ৯ মাস বেশি পরেন, তাহলেই ওই পোশাকের মাধ্যমে কার্বন উৎপাদন আর ওই পোশাকের পেছনে ব্যবহৃত পানির অপচয় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।

২০১১ সালে গড়ে পাঁচটি কালেকশনের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয় ভোক্তাদের। এ ক্ষেত্রে ক্লোদিং ব্র্যান্ড জারা সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে। তারা বছরে ২৪টি কালেকশন বের করে। এইচঅ্যান্ডএম ১২ থেকে ১৬টি কালেকশন বের করে। ফাস্ট ফ্যাশনের ফলে ওয়ার্ডরোব নতুন জামায় ভরে উঠছে। কিন্তু পৃথিবী হয়ে উঠছে বসবাসের অনুপযোগী। এমন অবস্থায় সাধারণ ভোক্তা হিসেবে আমাদের করণীয় থেকেই যায়।
ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে আমাদের ছোট ছোট উদ্যোগ ভবিষ্যতের বিশ্বকে বাঁচাতে হতে পারে গুরুত্বপূর্ণ নিয়ামক। প্রথমত, ‘গার্মেন্ট লাইফটাইম’ বাড়ানো। মানে এক পোশাক বেশি দিন পরা। পোশাকের আয়ু বাড়ানো। একটি পোশাকের সর্বোচ্চ জীবনকাল গড়ে তিন বছর। পোশাক পুরোনো মলিন হয়ে যায়। ছিঁড়ে যায়। চলতি ট্রেন্ডের সঙ্গে যায় না। আপিন যদি একটা পোশাক ৯ মাস বেশি পরেন, তাহলেই ওই পোশাকের মাধ্যমে কার্বন উৎপাদন আর ওই পোশাকের পেছনে ব্যবহৃত পানির অপচয় ৩০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। যতটা সম্ভব কম পোশাক কিনুন। কোথাও ছিঁড়ে গেলে, ফেঁসে গেলে সেলাই বা রিফু করে নিন। আর পরতে ইচ্ছে না করলে বন্ধুদের সঙ্গে বদলে নিন। ১৯৮০-এর দশকে মানুষ যে পরিমাণ পোশাক কিনত, এখন তার পাঁচ গুণ পোশাক কেনে। ২০০০ সালে মানুষ যত পোশাক ভোগ করত, ২০১৪ সালে তার ৬০ শতাংশ বেশি পোশাক ভোগ করে। মনে রাখতে হবে আমরা যতটা পোশাক কিনি, মোটাদাগে ওই পোশাক তার আকৃতির সমান পরিবেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যদিও এর নেতিবাচক প্রভাবের সঙ্গে আরও নানা কিছু জড়িত।


ফাস্ট ফ্যাশনের দৌরাত্ম্য বাড়িয়ে কিছু ব্র্যান্ড আর সেই ব্র্যান্ডের আড়ালের মানুষগুলোর পকেটে এসে ধরা দিয়েছে মিলিয়ন ডলার। পরিমিতিবোধের মাত্রা ছড়িয়ে পড়ছে সীমাহীনতায়। একটি পোশাকের গড় আয়ুকাল কমছে তো কমছেই। বিশ্ব একটু একটু পরিণত হচ্ছে ফ্যাশন বর্জ্যের ভাগাড়ে। ক্রমশ বেড়ে চলেছে কার্বন। এসবের বিপরীতে আবার শুরু হয়েছে স্লো ফ্যাশন, ইকো ফ্রেন্ডলি ফ্যাশন, সীমিত পরিসরে আপসাইক্লিং আর রিসাইক্লিং, থ্রিফট শপ-এ রকম সব মুভমেন্ট। আলো ফেলা যাক ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রির অম্লমধুর পরিপ্রেক্ষিত ও আমাদের কী করণীয়, সেদিকে।

আপনি ভাবছেন, আপনার টাকায় আপনি ফ্যাশন করবেন। আপনি ফাস্ট ফ্যাশনে আগ্রহী। আপনার এক পোশাকের একটা ছবি সামাজিক মাধ্যমে আপলোড করার পর আপনার আর সেটি পরতে ইচ্ছে করে না। তারকারা তো এক পোশাক দুবার পরলেই ‘খবর’ হয়ে যান! এভাবে ফাস্ট ফ্যাশনের ফ্যালাসিতে বুঁদ হয়ে পড়েছে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রি। ব্র্যান্ডগুলোর বিক্রি বেড়েছে হু হু করে। তাতে সমস্যা কোথায়? সমস্যা আছে। ফাইবার টু ফ্যাশন ডট কম এই বিষয়ে একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। পোশাক যে কাপড় দিয়ে তৈরি হয়, সেটি উৎপাদনে অনেক প্রাকৃতিক শক্তি, জায়গা আর পানি খরচ হয়। সুতি কাপড় বিশ্বের ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত কাপড়গুলোর একটি। একটা সুতির টি-শার্ট বানাতে যে পরিমাণ কাপড় লাগে, সেটির জন্য প্রয়োজনীয় তুলা উৎপাদন করতে ২০ হাজার লিটার পানি খরচ হয়। বিশ্বে যত পানি ব্যবহৃত হয়, তার শতকরা ২০ ভাগ খরচ হয়ে যায় ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে। এর সঙ্গে রয়েছে এনার্জি-প্রাকৃতিক এবং কৃত্রিম। এসব দিয়ে উৎপাদিত পোশাক দ্রুতই বর্জ্যে পরিণত হচ্ছে। তা ল্যান্ডফিল করে, বায়ুদূষণ, মাটিদূষণ, পানিদূষণ করে নানাভাবে পরিবেশদূষণে অবদান রাখছে। ওয়ার্ল্ডওয়াইড রেসপনসিবল অ্যাক্রিডিটেড প্রোডাকশন (ডব্লিউআরএপি) জানাচ্ছে, প্রতিবছর যুক্তরাজ্যে ১৪০ মিলিয়ন পাউন্ড বা ১ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকার জামাকাপড় ফেলে দেওয়া হয়। আর সেগুলো কেবল ল্যান্ডফিল করে।

আমরা যখন কোনো জামাকাপড় ফেলে দিই, তখন আসলে কী হয়? এর উত্তর জানিয়ে ‘হোয়াই ক্লোদস আর হার্ড টু রিসাইকেল’ শিরোনামে রিপোর্ট প্রকাশ করেছে বিবিসি। সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৭৩ শতাংশ পোশাক হয় পুড়িয়ে ফেলা হয়, নতুবা ভাগাড়ে ফেলে দেওয়া হয় বা আবর্জনা হিসেবে ল্যান্ডফিলে জমা হয়। ১২ শতাংশ পোশাক ডাউনসাইকেলড হয়ে ম্যাট্রেস, ক্লিনিং ক্লোদস, পাপোশ, লুসনি বা অন্যান্য কম দামের নানা কিছুতে পরিণত হয়। শতকরা মাত্র ১ ভাগ আপসাইকেলড হয়ে নতুন কাপড়ে পরিণত হয়। প্রতিবছর ১০০ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের কাপড় ফেলে দেওয়া হয়। বাংলাদেশি অর্থমূল্যে যার দাম দাঁড়ায় ৮ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা।
        



২০৫০ সালের মধ্যে ভোক্তার চাহিদা মেটাতে বর্তমানে যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, তার তিন গুণ প্রাকৃতিক সম্পদের প্রয়োজন হবে। এই নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনার অন্যতম সমাধানের নাম টেকসই ফ্যাশনশিল্প।

 ইন্টারন্যাশনাল ফিন্যান্স করপোরেশনের (আইএফসি) গবেষণা মতে, প্রতিবছর পোশাকশিল্প কারখানায় পোশাক ও তুলা ধোয়া ও রং করার কাজে ১ হাজার ৫০০ বিলিয়ন লিটার পানি ব্যবহার করা হয়। কারখানাগুলো ব্যবহারের পর এই বিষাক্ত পানি নদী আর খালে ফেলে দেয়। ২০৩০ সালের মধ্যে ফ্যাশনশিল্পের জন্য গ্রিনহাউস গ্যাস এবং বর্জ্য নিঃসরণ বৃদ্ধি পাবে ৬০ শতাংশ। ২০৫০ সালের মধ্যে ভোক্তার চাহিদা মেটাতে বর্তমানে যে পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ আছে, তার তিন গুণ প্রাকৃতিক সম্পদের প্রয়োজন হবে। এই নেতিবাচক প্রভাব কমিয়ে আনার অন্যতম সমাধানের নাম টেকসই ফ্যাশনশিল্প।

কেবল ১৫ বছরে ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে উৎপাদন বেড়েছে দ্বিগুণ। কাপড়ের দামও কমে চলে এসেছে মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে। কাপড়ের দাম এখন যেকোনো সময়ের চেয়ে কম। আবার নিম্নমধ্যবিত্ত আর মধ্যবিত্তের আয়ও বেড়েছে। সব মিলিয়ে একটা বড় শ্রেণি ১৫ বছর আগেও যে পরিমাণ পোশাক ব্যবহার করত, এখন করে তার দ্বিগুণ। ফলে এখন ফ্যাশন থেকে সৃষ্ট বর্জ্যের পরিমাণও অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় সর্বোচ্চ। আগে মানুষ একটা পোশাক যে পরিমাণ ব্যবহার করত, এখন তার শতকরা ৪০ ভাগও করে না। একটা পোশাকের গড় আয়ু দুই বছর দুই মাস। আর সেটি গড়ে ৭ থেকে ১০ বার পরা হয়।

প্যাটাগোনিয়া নামে একটি কোম্পানি আছে, যারা ভোক্তাদের ছেঁড়া বা পুরোনো পোশাক সেলাই করে নতুন করে দেয়। আবার কখনো কখনো ভোক্তাকে তার চাহিদা অনুযায়ী পুরোনো পোশাকের বদলে নতুন পোশাক দেয়। নুডি জিনস আরও বেশ কয়েকটি কোম্পানির সঙ্গে মিলে ভোক্তাদের জিনস বিনা পয়সায় সেলাই করে পাঠিয়ে দেয়। ডিপপ গড়েই উঠেছে সেকেন্ড হ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিকে কেন্দ্র করে। ডিপপ পুরোনো জামাকাপড়গুলোকে চ্যারিটি শপগুলোতে পাঠানোর বদলে সেগুলো নতুন করে তোলে। ভ্যালু যোগ করে। সেগুলো আবার নতুনের মতো বিক্রি হয়। দ্বিতীয়, তৃতীয়, এমনকি চতুর্থবারের মতোও জামাকাপড় নতুন করে প্রাণ ফিরে পায় ডিপপে এসে। ফ্রেঞ্চ কোম্পানির মাইসনক্লেও আরেকটি ব্যতিক্রমী প্রতিষ্ঠান। এর উদ্যোক্তা মা মেয়ে। তাঁরা জামাকাপড় সব হাতে সেলাই করেন। অন্যদিকে টিআরএমট্যাব নামের জুতার কোম্পানিটি পুরোনো জামাকাপড়, চামড়া দিয়ে জুতা বানায়। এতে ল্যান্ডফিলের পরিমাণ কমে।

বাংলাদেশেও এ ধরনের রিসাইক্লিং ও আপসাইক্লিং শুরু হয়েছে।


Ref: News letter, news paper, Google.
Zahidul Haque MSS in HRD(JU), MBA-HRM,PGD-HRM


কোন মন্তব্য নেই: