টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি পরিচিতি - ডিবিএল গ্রুপ | DBL Group - Textile Lab | Textile Learning Blog
ডিবিএল গ্রুপ | DBL Group 
 

তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, সিরামিক টাইলস, সেমিকন্ডাকটর ডিজাইন (ভিএলএসআই), ফার্মাসিউটিক্যালস, সুইং থ্রেড, ডায়িং ফাইবার অ্যান্ড ইয়ার্ন, আইসিটি, টেলিকমিউনিকেশন প্রভৃতি খাতের করপোরেট সংস্থা ডিবিএল গ্রুপ। ১৯৯১ সালে পথচলা শুরু করে এই গ্রুপটি। বর্তমানে এই গ্রুপের অধীনে প্রায় ২৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ডিবিএল গ্রুপে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৩৩ হাজার মানুষ। বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ ৪৫ দশমিক ৫০ কোটি ডলার। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বে সুনাম রয়েছে ডিবিএলের। এ কারণে কেয়ার, ডিইজি, আইএফসি, জিআইজেড, আইএলও, ইউনিসেফের মতো অনেক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে গ্রুপটি। জাতিসংঘের সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছে তারা। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রোগ্রাম ইউএন গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট ও দি বিজনেস কল টু অ্যাকশনের (বিসিটিএ) স্বীকৃতিও পেয়েছে।

সুনির্দিষ্ট দর্শন, সুপরিকল্পিত কর্মপন্থা ও মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত ডিবিএল গ্রুপ। এখানে কর্মরত সব কর্মী এ মূল্যবোধ নিজেদের মধ্যে ধারণ করেন, চর্চা করেন। সব সময় এ নীতিবোধ মেনে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। কর্তৃপক্ষ ও কর্মীর মধ্যে তাই স্বচ্ছ ও সুদৃঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান। এখানে ব্যবসায় নৈতিকতা মেনে চলা হয়। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা হয়। সহকর্মীদের কাজ ও দায়িত্বের ব্যাপারেও অবগত থাকেন একেকজন কর্মী। সততার সঙ্গে জবাবদিহির চর্চা চালু রয়েছে গ্রুপটির সব প্রতিষ্ঠানে। সবচেয়ে বড় বিষয়, কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা হয় এখানে উন্নত পদ্ধতি ও পরীক্ষিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করা হয়।

ডিবিএল গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানে করপোরেট গভর্নেন্সের চর্চা করা হয়। বিশেষ করে সহযোগীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে, অনুপ্রেরণা দিয়ে লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চায় তারা। একইসঙ্গে দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। পণ্য ও সেবার গুণগত মান ও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে গ্রাহক, সহযোগী এবং স্টেকহোল্ডারদের চাহিদা পূরণে সচেষ্ট তারা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ধরে রাখা তাদের অন্যতম মিশন। তাই টেকসই ও বহুমুখী গ্রুপ হিসেবে স্বকীয়তা বজায় রেখে বিশ্বমানের সেবা দিতে বদ্ধপরিকর গ্রুপটি। শুধু তা-ই নয়, সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দেয় তারা।

গ্রুপটিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল ওয়াহেদ। বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাতে সুপরিচিত তিনি। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করে ১৯৮২ সালে কনস্ট্রাকশন ব্যবসায় আসেন। ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এতিমখানা প্রভৃতির প্রতি তার দরদ অতুলনীয়। সুবক্তা হিসেবেও তার সুনাম রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন এমএ রহিম।

Abdul Wahed
Chairman

M. A. Rahim
Vice Chairman


M. A. Jabbar
Managing Director

M. A. Quader
Deputy Managing Director & Group CEO

ব্যবস্থাপনা টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন এমএ জব্বার। কম্পিউটার সায়েন্সে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসেন। ডিবিএল গ্রুপে মার্কেটিং ডিরেক্টর হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তার উদ্ভাবনী শক্তি ও দক্ষতা গ্রুপটিকে অনন্য স্থানে নিয়ে গেছে। পরিচালনা পর্ষদে আরও রয়েছেন এমএ কাদের।

কর্মীদের জ্ঞানচর্চা ও দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে যোগ্য করে গড়ে তুলতে আগ্রহী কর্তৃপক্ষ। কর্মীদের সমস্যা সমাধানে বিশেষ আগ্রহী তারা। কর্মীরা যেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন, সেজন্য নিয়মিত প্রণোদনা দেওয়া হয়। এখানে ভিন্ন মত, কাজ ও অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করা হয়। একজন কর্মী যেন আরেকজন কর্মীর পাশে থাকেন, সে বিষয়ে মোটিভেট করা হয় সবাইকে। তাদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ উপহার দিয়ে চলেছে ডিবিএল গ্রুপ। কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতা, কর্মীদের দায়িত্ববোধ গ্রুপটিকে তাই শীর্ষস্থানীয় করে তুলেছে।
সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসেবা নিশ্চিত করা হয় ডিবিএল গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানে। প্রযুক্তিসেবায় এ গ্রুপের পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোও অন্য প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এগিয়ে। ২০১৪ সালে বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সঙ্গে এন্টারপ্রাইজ চুক্তি করে গ্রুপটি। এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে মাইক্রোসফটের লাইসেন্সিং সল্যুশন প্রোভাইডার (এলএসপি) টেক ওয়ান গ্লোবাল প্রাইভেট লিমিটেড ডিবিএল গ্রুপের জন্য সফটওয়্যার সরবরাহ করছে। এছাড়া মাইক্রোসফটের বিভিন্ন টিউটোরিয়াল সেটআপ ও বিভিন্ন প্রযুক্তিসেবা দেয়। বাংলাদেশের অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাইক্রোসফটের এটাই প্রথম চুক্তি।

ডিবিএল গ্রুপের অর্জনঃ 

অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে ডিবিএল গ্রুপ। এরই কয়েকটি:

১. এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড, ২০১৮

২. ন্যাশনাল এক্সপোর্ট ট্রফি

৩. সুপারব্র্যান্ডস অ্যাওয়ার্ড-২০১৮

৪. ফিফথ এইচএসবিসি ক্লাইমেট অ্যাওয়ার্ডস-২০১৭

৫. আইসিকিউসিসি গোল্ড অ্যাওয়ার্ড-২০১৭

৬. আইসিএমএবি বেস্ট করপোরেট অ্যাওয়ার্ড-২০১৬

৭. এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৪ ও ২০১৬

৮. এইচঅ্যান্ডএম সাসটেইন্যাবিলিটি অ্যাওয়ার্ড-২০১৬

৯. আইসিকিউসিসি গোল্ড অ্যান্ড সিলভার অ্যাওয়ার্ডস-২০১৬

১০. ওয়ার্ল্ড টেক্সটাইল অ্যাওয়ার্ডস: ইন্টারন্যাশনাল টেক্সটাইল ফার্ম অব দি ইয়ার-২০১৬

১১. ওয়ার্ল্ড টেক্সটাইল অ্যাওয়ার্ডস: স্পিনার অব দি ইয়ার-২০১৬

১২. সাসটেইন্যাবল পারফরমার অন ওয়েস্ট ওয়াটার
ম্যানেজমেন্ট, ডিক্যাথলন-২০১৬

১৩. সাসটেইন্যাবল পারফরমার অন এইচআরপি,
ডিক্যাথলন-২০১৫ ও ২০১৬

১৪. আইসিএসবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড: গোল্ড-২০১৫

১৫. বেস্ট ওয়েস্টওয়াটার ম্যানেজমেন্ট অ্যাওয়ার্ড,
ডিক্যাথলন-২০১৫

১৬. ওয়ার্ল্ড টেক্সটাইল অ্যাওয়ার্ড-২০১৫

১৭. সিপিআইটু টপ ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০১৪

১৮. জেবিসিসিআই বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৪

১৯. সোশ্যাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৪

চার ভাইয়ের ৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসাঃ 

ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম, চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহেদ, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ কাদের এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার। 

বাবার দেওয়া ৬০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে নিজেদের পুরোনো বাড়িকে ছোট্ট কারখানায় রূপান্তর করলেন চার ভাই। কিনলেন ৩৭টি সেলাই মেশিন। কয়েক দিন সকাল-বিকেল আশপাশের বিভিন্ন কারখানা ফটকে দাঁড়িয়ে জোগাড় করলেন শতাধিক শ্রমিক। অন্য কারখানা থেকে ঠিকায় কাজ (সাবকন্ট্রাক্টটিং) আনলেন। পোশাক তৈরির পর ডেলিভারি হলো। বছর দুয়েক এভাবেই চলল। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করেও দুই বছরে লাভের মুখ দেখলেন না চার ভাই।

মুনাফা না হলেও পণ্যের মান ও সময়মতো তা বুঝিয়ে দিয়ে অল্প দিনেই দু-চারজন ক্রেতার সুনজরে পড়লেন চার ভাই। ফলে ১৯৯৩ সালে যুক্তরাজ্যের এক ক্রেতার কাছ থেকে সরাসরি ক্রয়াদেশ পেলেন তাঁরা। তিন হাজার পিস পলো শার্ট। তারপর চার ভাইকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২৯ বছরের ব্যবধানে পোশাকশিল্পের শীর্ষ রপ্তানিকারকদের অন্যতম তাঁরা।

১৯৯১ সালে ঢাকার ১০২ গ্রিন রোডে ছোট কারখানা দিয়ে শুরু করা সেই প্রতিষ্ঠানটি আজকের দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড বা ডিবিএল গ্রুপ। আর সেই চার ভাই হলেন আবদুল ওয়াহেদ, এম এ জব্বার, এম এ রহিম ও এম এ কাদের। তাঁরা যথাক্রমে ডিবিএল গ্রুপের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), ভাইস চেয়ারম্যান ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি)।

পোশাক দিয়ে শুরু হলেও গত ২৯ বছরের ব্যবসায় সিরামিক টাইলস, তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ ও ড্রেজিং ব্যবসায় নাম লিখিয়েছে ডিবিএল। আগামী বছর তারা দেশে ওষুধ ব্যবসায়ও আসছে। সব মিলিয়ে ডিবিএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বর্তমানে ২৪টি। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ৩৬ হাজার কর্মী। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গ্রুপের বার্ষিক লেনদেন ছিল প্রায় ৬০ কোটি মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার সমান। এর মধ্যে তৈরি পোশাক ব্যবসা থেকেই এসেছে ৯০ শতাংশ অর্থ। সব মিলিয়ে গ্রুপটির বিনিয়োগের পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।

ডিবিএল নামের সঙ্গে ‘মুক্তিযুদ্ধ’

চার ভাইয়ের বাবা আবদুল মতিনের ট্রেডিং ব্যবসা ছিল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা থেকে নোয়াখালীর চাটখিলের গ্রামের বাড়িতে চলে যায় পুরো পরিবার। আবদুল ওয়াহেদ (গ্রুপের চেয়ারম্যান) যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। সে সময় তাঁকে ধরতে আলবদর বাহিনীর লোকজন গ্রিন রোডের বাসায় মাঝেমধ্যেই অভিযান চালাত।

অক্টোবরে গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে আসে পুরো পরিবার। তখন করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া পরিবারের বড় ছেলে আবদুল কুদ্দুস দুলালও ছিলেন। ১৪ ডিসেম্বর সকালে আলবদর বাহিনী গ্রিন রোডের বাসা থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। ১৭ ডিসেম্বর রায়ের বাজারে বধ্যভূমিতে আবদুল কুদ্দুস দুলালের মৃতদেহ পাওয়া যায়। পরে আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আবদুল কুদ্দুস দুলালের নামেই প্রতিষ্ঠান শুরু করেন ছোট চার ভাই। সেটি আজও ধরে রেখেছেন তাঁরা। এম এ জব্বার বলেন, ‘দুলাল ভাইয়ের নামেই আমরা ব্যবসা শুরু করি। সেটিই আমাদের মূল স্পিরিট। আমাদের এক ভাই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, সেই বিষয়টি সব সময় আমাদের চার ভাইকে দেশের জন্য নতুন কিছু করতে উদ্বুদ্ধ করে।’

ডিবিএল গ্রুপের শুরুর গল্প আরেকটু

যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮৯ সালে দেশে ফেরেন এম এ জব্বার। শুরুতে বাবার ব্যবসায় বসলেন। বছরখানেক পর সেটি মন দিয়ে করলেন। তারপর বাকি তিন ভাইয়ের সঙ্গে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা শুরু করলেন। সম্ভাবনা থাকায় তৈরি পোশাক ও চামড়ার ব্যবসা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললেন। শেষ পর্যন্ত নিজেদের বাড়িতেই ছোট পোশাক কারখানা করার মনস্থির করলেন। তত দিনে পাশের আরেকটি বাসায় তাঁরা বসবাস করেন। চাচাতো এক ভাই পোশাকের ব্যবসায় জড়িত থাকায় কাজটি কিছুটা সহজ হলো।

কারখানা চালুর পর ঠিকায় ক্রয়াদেশ আনা থেকে শুরু করে উৎপাদন—শেষ পর্যন্ত চার ভাই কঠোর পরিশ্রম করছেন। তবে দিনের পর দিন লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে একসময় হতাশা পেয়ে বসে তাঁদের। তখন বাবা আবদুল মতিন ও মা জিন্নাতের নেসা পাশে এসে দাঁড়ান। এম এ জব্বার স্মৃতিচারণা করলেন এভাবে, ‘ব্যবসায় নিয়ে আমরা চার ভাই মাঝেমধ্যেই উদ্বিগ্ন হয়ে যেতাম। কারণ, এটি ঠিকমতো কাজ করছিল না। এই ব্যবসা করা যাবে না—এমন কথাও মনে হয়েছে। তবে মা–বাবা আমাদের সব সময় সাহস দিতেন। তখন বোনেরাও নানাভাবে সহায়তা করেছেন।’


সরাসরি ক্রয়াদেশ পাওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে ভিত শক্ত হতে থাকে ডিবিএলের। ব্যবসা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কারখানাও ওপর দিকে উঠতে থাকল। তারপর ১৯৯৯ সালে গাজীপুরের কাশিমপুরে বড় বিনিয়োগ করলেন চার ভাই। সেখানে ধাপে ধাপে পোশাক কারখানার পাশাপাশি নিটিং, ডায়িং, অল ওভার প্রিন্ট সেকশন চালু করলেন তাঁরা।

সে সময় অধিকাংশ পোশাক ব্যবসায়ী তাঁদের কারখানায় ভারতীয় ও কোরিয়ান মেশিন ব্যবহার করতেন। তাতে খরচ কম পড়ত, সহজেই বিনিয়োগ উঠে আসত। তবে ডিবিএল কাশিমপুরের কারখানার জন্য ইউরোপের সর্বশেষ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি আনলেন। তাতে প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ বেশি হলেও পণ্যের মানের দিক এগিয়ে গেল চার ভাইয়ের ব্যবসা।

পশ্চাৎমুখী শিল্প বা ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্তই ডিবিএলের ব্যবসা আজকের উচ্চতায় পৌঁছতে সহায়তা করেছে বলে মনে করেন এম এ জব্বার। হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমরা যখন কাশিমপুরে বড় বিনিয়োগে গেলাম তখন অনেকেই বলেন, এত বিনিয়োগ কেন করছ? তোমরা কি বিনিয়োগের অর্থ তুলে আনতে পারবে? কিন্তু আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। দীর্ঘদিন পোশাক সেলাই করার পর আমাদের মনে হয়েছিল, ক্রেতাদের সহায়তা দেওয়ার জন্য ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে বিনিয়োগ করতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত আমাদের ব্যবসার টার্নিং পয়েন্ট।’

টি–শার্ট ও পলো টি–শার্টের মতো সস্তা পোশাক দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে মধ্য ও উচ্চ মূল্যের পোশাক উৎপাদন করছে ডিবিএল। বাচ্চাদের পোশাকও করে তারা। নিজেদের ডিজাইন সেন্টারে পোশাকের নকশা করে ক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ আনছে। এ ছাড়া ব্যবহৃত ও পুরান কাপড় থেকে সুতা ও কাপড় উৎপাদনের কাজ করছে ডিবিএল গ্রুপ।

২০০৮ সালে হঠাৎ করে ডিবিএল গ্রুপের ভাইয়েরা চিন্তা করতে থাকেন ব্যবসা কীভাবে টেকসই (সাসটেইনেবল) করা যায়। বহু চিন্তাভাবনার পর তাঁরা একটা পরিকল্পনা করলেন। তিন বছর পর সেটির অংশ হিসেবে ক্লিনার প্রোডাকশন প্রকল্প নিলেন।

 সেটির অধীনে কাপড় রং করার পুরো প্রক্রিয়ায় পানির ব্যবহার কমিয়ে আনলেন। আগে যেখানে এক কেজি কাপড় ডায়িংয়ে দেড় শ লিটার পানি লাগত, সেটি নেমে এল ৬০ লিটারে। একইভাবে তাঁরা ডায়িং মেশিনের তাপমাত্রা ১০০ থেকে ৬০ ডিগ্রিতে নামিয়ে আনার পাশাপাশি রাসায়নিক ব্যবহার হ্রাস করলেন ব্যাপকভাবে।

ডিবিএলের কর্মীর সংখ্যা বর্তমানে ৩৬ হাজার। এম এ জব্বার বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের আমরা পরিবারের সদস্য হিসেবেই মনে করি। শুরু থেকেই ব্যবসার ভবিষ্যতের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা করেছি। ২০০৮ সালে যখন মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেল, তখন আমরা কারখানায় বন্ধন নামে মুদি দোকান দিলাম।

 সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরাসরি পাইকার কিংবা কারখানা থেকে কিনে এনে সেই দামেই বিক্রি করা হয়। কর্মীরা বাকিতে পণ্য নিয়ে যান। পরে তাঁর বেতনের সঙ্গে সেই অর্থ সমন্বয় করা হয়। আমাদের প্রতিটি কারখানাতেই এই ব্যবস্থা আছে। এটি এখন আমাদের স্ট্যান্ডার্ড হয়ে গেছে।’

ড্রেজিং ব্যবসায়ও আছে ডিবিএলঃ 

ডিবিএলের এমডি এম এ জব্বার বলেন, ‘ইথিওপিয়া থেকে তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায়। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধরতে আফ্রিকার এই দেশে কারখানা করেছি আমরা। তবে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য শ্রেষ্ঠ জায়গা।’

দেশে নতুন করে বড় ধরনের বিনিয়োগে যাচ্ছে ডিবিএল। শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে নতুন পোশাক কারখানা ও কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য কারখানা করবে তারা।

পোশাকশিল্পে নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা কতটুকু। জানতে চাইলে ডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরে আমরা রপ্তানি করেছি ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। আর শীর্ষস্থানে থাকা চীন করছে ১৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। ফলে এখনো বাংলাদেশের বড় ধরনের সম্ভাবনা আছে। তা ছাড়া তৈরি পোশাকে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সবদিক দিয়েই বাংলাদেশ বর্তমানে উপযুক্ত জায়গা।’

ভিন্ন জগতে যাত্রাঃ 

পোশাকের ব্যবসা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক কারখানা করেছে ডিবিএল। তো কারখানা নির্মাণের সময় দেখা গেল, সময়মতো টাইলস দিতে পারছে না সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। নতুন সমস্যা। সমাধান কী? তখন ভাবতে ভাবতে নিজেরাই সিরামিক টাইলস কারখানা করার পরিকল্পনা করলেন চার ভাই। যেই ভাবা সেই কাজ।


টাইলসের বাজারের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে গাজীপুরের মাওনায় ৩০ একর জমির ওপর ডিবিএল সিরামিক কারখানা নির্মাণ করে। উৎপাদন শুরু হয় ২০১৭ সালের এপ্রিলে। কারখানাটির উৎপাদন সক্ষমতা দিনে ৪৫ হাজার বর্গমিটার টাইলস। দেশের বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি শিগগিরই তারা টাইলস রপ্তানিতেও যাবে।
|
ওষুধ ব্যবসায় আসার পেছনেও এমন এক গল্প আছে। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে চার ভাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে সহযোগিতা করেন। একবার ঢাকা মেডিকেল পরিদর্শনে গেলেন চার ভাই। বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরতে ঘুরতে তাঁদের মনে হলো, রোগীরা সঠিক ওষুধ পাচ্ছে না। নামীদামি ওষুধ কোম্পানিগুলো বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে না। তখনই ভালো কিছু ওষুধ উৎপাদনের চিন্তা মাথায় ঢুকে গেল চার ভাইয়ের।

আমরা যখন কাশিমপুরে বড় বিনিয়োগে গেলাম, তখন অনেকেই বলেন, এত বিনিয়োগ কেন করছ? তোমরা কি বিনিয়োগের অর্থ তুলে আনতে পারবে? কিন্তু আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। ...সেই সিদ্ধান্তই আমাদের ব্যবসার টার্নিং পয়েন্ট।
এম এ জব্বার বলেন, ‘কাশিমপুরে ওষুধ কারখানার কাজ চলছে। আশা করছি, আগামী বছরের অক্টোবরে আমরা ডিবিএল ফার্মাসিউটিক্যালসের উৎপাদনে যেত পারব।’

সিরামিকের পাশাপাশি ইতিমধ্যে ড্রেজিং ব্যবসায় নেমেছে ডিবিএল। বর্তমানে ছয়টি ড্রেজিং মেশিন আছে তাদের। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস যন্ত্রের জন্য চিপ তৈরি করতে ভিএলএসআই ডিজাইন সেন্টার করেছে ডিবিএল, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন খাত। সেখানে ৫০ জন তরুণ প্রকৌশলী কাজ করেন। চলতি বছর ডিবিএলের হাত ধরে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড পুমা বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে। ঢাকার বনানী ১১ নম্বর সড়কে পুমার বিক্রয়কেন্দ্রে স্পোর্টসওয়্যার, জুতা ইত্যাদি পাওয়া যায়। পোশাক, সিরামিক টাইলস, ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি খেলাধুলায় বিনিয়োগ করেছে ডিবিএল। বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিপিএল) দল চিটাগাং ভাইকিংসের মালিকানায় আছে তারা।

চার ভাইয়ের বন্ধনঃ 

শুরু থেকেই চার ভাই ব্যবসা করেছেন। কখনো আলাদা হওয়ার কথা ভাবেননি। একসঙ্গে ব্যবসা করাটাই শক্তি বলে মনে করেন চার ভাই। এমনটাই বলেন এম এ জব্বার। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের বাবা-চাচারা একসঙ্গে ব্যবসা করেছেন। আমরা দেখেছি, চাচা বাবাকে কীভাবে সম্মান করেন। আমার ভাইদের মধ্যে প্রথম থেকেই ছাড় দেওয়ার মনোভাব ছিল। কে কম নেবে, কে বেশি নেবে সেটি নিয়ে কেউ কখনোই ভাবেনি। যার যতটুকু দরকার সে ততটুকুই নিয়েছে। আর প্রত্যেকেই একসঙ্গে থাকার সুবিধা বোঝে ও বিশ্বাস করে, একসঙ্গে ব্যবসা করাটাই শক্তি।’

সবশেষে এম এ জব্বারের কাছে জানতে চাইলাম ব্যবসার শীর্ষস্থানে পৌঁছে আপনারা কি তৃপ্ত? বলেন, ‘তৃপ্ত কি না জানি না। তবে আমরা মনে করি, আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে। আমরা করতে পারি। দেশের জন্য আমাদের সেই দায়বদ্ধতা আছে।’


একনজরে ডিবিএলঃ 

প্রতিষ্ঠাঃ ১৯৯১

প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাঃ ২৪টি

কর্মসংস্থানঃ ৩৬ হাজার

বার্ষিক লেনদেনঃ ৬০ কোটি ডলার

রপ্তানির গন্তব্যঃ ৪০ দেশ

মূল ব্যবসাঃ তৈরি পোশাক

সহযোগী ব্যবসাঃ
সিরামিক টাইলস
ড্রেজিং, তথ্যপ্রযুক্তি
ওষুধ (আগামী বছর বাজারে আসবে)
পুমা (পরিবেশক), ক্রিকেট দল চিটাগাং ভাইকিংস

বিনিয়োগঃ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি

সাফল্যের মূলমন্ত্রঃ
ঠিকভাবে কাজ করা
জবাবদিহি
দায়বদ্ধতা

কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর ডিবিএল নিয়েঃ 

১। ডিবিএল এর পূর্ণঅর্থ কি?
উত্তরঃ দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড।

২।কত সালে ডিবিএল নির্মিত হয়?
উত্তরঃ ১৯৮৫ সালে।

৩।কত সালে ডিবিএল এ নিটিং চালু হয়?
উত্তরঃ ১৯৯১ সালে।

৪।নিটিং প্রধানের(cpo)নাম কি?Dgm,sr.Manager এর নাম কি?
উত্তরঃ সাদেকুর রহমান,রাসেদ আলম।

৫।আমাদের চেয়ারম্যান স্যারের নাম কি?
উত্তরঃ আব্দুল ওয়াহেদ স্যার।

৬।দুলাল সাব কত সালে শহীদ হন?
উত্তরঃ ১৯৭১ সালে।

৭।জিপিকিউ ডিপার্টমেন্ট এর ম্যানেজারের নাম কি?
উত্তরঃ জনাব হাসান ইমাম স্যার

৮।EOM এর পুর্নরুপ কি?ইহার শর্ত কি?
উত্তরঃ employ of the month

৯।SOP কি?
উত্তরঃ এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।

১০।জিপিকিউ ট্রেনিং এর বিষয় বস্তুগুলো কিছিল?
উত্তরঃ ৫এস,পিপিই,ইয়ার্ন কাউন্ট লট ও ব্র্যান্ড, গুরুত্বপুর্ন বায়ারগণ, ফেব্রিকের সমস্যা, রিপটিং কিভাবে করতে হবে, গ্রেডিং

১১।সুতার জন্য কিকি সমস্যা হয়?৩টি কি কী?
উত্তরঃ পাট্টা,ন্যাপস,স্লাব

১২।মাতৃত্ব কালীন ছুটি কয়দিন?
উত্তরঃ তিন মাস বাইসদিন

১৩।নিটিং কাপড়ে কি কি সমস্যা পাওয়া যায়?
উত্তরঃ ইয়ার্ন পাট্টা ,স্লাব,ন্যাপস ইত্যাদি।

১৪।আমাদের ফায়ার বিগ্রেড কোথায় আছে?
উত্তরঃ ডিবিএল এর পশ্চিম পাশে।

১৫।আগুন লাগলে করণীয় কি?
উত্তরঃ নিয়মশৃঙ্খলা মেনে ফ্লোর হতে ফায়ারডোর দিয়ে বাইরে বহির্গমন করতে হবে।

১৬।4 point system কি?
উত্তরঃ ফেব্রিক ইন্সপেকশন পদ্ধতি ।

১৭।ডায়িং ইউনিটের নাম কি?
উত্তরঃ মায়মোন

১৮।স্পিনিং ইউনিটের নাম কি?
উত্তরঃ মতিন স্পিনিং।

CONTACT DBL
Address:
Capita South Avenue Tower, 6th Floor House 50, Road 03, Gulshan Avenue, Dhaka 1212, Bangladesh
Telephone: +880-2-58817735-6
Fax: +880-2-58817737
Email: info@dbl-group.com


E Recruitment  System 

একজন ফ্রেশার টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আপনি যদি সিভি ড্রপ করতে চান তবে আপনাদের জন্য তাদের একটি সুন্দর ব্যবস্থা আছে, আপনি চাইলে অনলাইনে সিভি ড্রপ করে রাখতে পারেন 

তাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে উপরে দিকে ক্লিক করে ক্যারিয়ার অপশনে ক্লিক করে অনলাইনে CVBank এ সিভি ড্রপ করে রাখতে পারেন 


সিভি ব্যাংকের লিংকঃ

টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি পরিচিতি - ডিবিএল গ্রুপ | DBL Group

ডিবিএল গ্রুপ | DBL Group 
 

তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, সিরামিক টাইলস, সেমিকন্ডাকটর ডিজাইন (ভিএলএসআই), ফার্মাসিউটিক্যালস, সুইং থ্রেড, ডায়িং ফাইবার অ্যান্ড ইয়ার্ন, আইসিটি, টেলিকমিউনিকেশন প্রভৃতি খাতের করপোরেট সংস্থা ডিবিএল গ্রুপ। ১৯৯১ সালে পথচলা শুরু করে এই গ্রুপটি। বর্তমানে এই গ্রুপের অধীনে প্রায় ২৩টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

ডিবিএল গ্রুপে কর্মরত রয়েছেন প্রায় ৩৩ হাজার মানুষ। বার্ষিক লেনদেনের পরিমাণ ৪৫ দশমিক ৫০ কোটি ডলার। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বহির্বিশ্বে সুনাম রয়েছে ডিবিএলের। এ কারণে কেয়ার, ডিইজি, আইএফসি, জিআইজেড, আইএলও, ইউনিসেফের মতো অনেক আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে কাজ করছে গ্রুপটি। জাতিসংঘের সহস্রাব্দের উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রায় (এসডিজি) নিজেদের সম্পৃক্ত রেখেছে তারা। ইতোমধ্যে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রোগ্রাম ইউএন গ্লোবাল ইমপ্যাক্ট ও দি বিজনেস কল টু অ্যাকশনের (বিসিটিএ) স্বীকৃতিও পেয়েছে।

সুনির্দিষ্ট দর্শন, সুপরিকল্পিত কর্মপন্থা ও মূল্যবোধের ওপর প্রতিষ্ঠিত ডিবিএল গ্রুপ। এখানে কর্মরত সব কর্মী এ মূল্যবোধ নিজেদের মধ্যে ধারণ করেন, চর্চা করেন। সব সময় এ নীতিবোধ মেনে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। কর্তৃপক্ষ ও কর্মীর মধ্যে তাই স্বচ্ছ ও সুদৃঢ় সম্পর্ক বিদ্যমান। এখানে ব্যবসায় নৈতিকতা মেনে চলা হয়। সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করা হয়। সহকর্মীদের কাজ ও দায়িত্বের ব্যাপারেও অবগত থাকেন একেকজন কর্মী। সততার সঙ্গে জবাবদিহির চর্চা চালু রয়েছে গ্রুপটির সব প্রতিষ্ঠানে। সবচেয়ে বড় বিষয়, কথা ও কাজের মধ্যে সামঞ্জস্য রাখা হয় এখানে উন্নত পদ্ধতি ও পরীক্ষিত প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কাজ সম্পন্ন করা হয়।

ডিবিএল গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানে করপোরেট গভর্নেন্সের চর্চা করা হয়। বিশেষ করে সহযোগীদের ক্ষমতায়নের মাধ্যমে, অনুপ্রেরণা দিয়ে লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে চায় তারা। একইসঙ্গে দক্ষতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। পণ্য ও সেবার গুণগত মান ও ধারাবাহিকতা বজায় রেখে গ্রাহক, সহযোগী এবং স্টেকহোল্ডারদের চাহিদা পূরণে সচেষ্ট তারা। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ধরে রাখা তাদের অন্যতম মিশন। তাই টেকসই ও বহুমুখী গ্রুপ হিসেবে স্বকীয়তা বজায় রেখে বিশ্বমানের সেবা দিতে বদ্ধপরিকর গ্রুপটি। শুধু তা-ই নয়, সমাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকে পরিবেশের ওপর গুরুত্ব দেয় তারা।

গ্রুপটিতে চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন আবদুল ওয়াহেদ। বাংলাদেশের টেক্সটাইল খাতে সুপরিচিত তিনি। আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশ নেন। বিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করে ১৯৮২ সালে কনস্ট্রাকশন ব্যবসায় আসেন। ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, এতিমখানা প্রভৃতির প্রতি তার দরদ অতুলনীয়। সুবক্তা হিসেবেও তার সুনাম রয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ভাইস চেয়ারম্যানের দায়িত্বে রয়েছেন এমএ রহিম।

Abdul Wahed
Chairman

M. A. Rahim
Vice Chairman


M. A. Jabbar
Managing Director

M. A. Quader
Deputy Managing Director & Group CEO

ব্যবস্থাপনা টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন এমএ জব্বার। কম্পিউটার সায়েন্সে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা সম্পন্ন করে দেশে ফিরে আসেন। ডিবিএল গ্রুপে মার্কেটিং ডিরেক্টর হিসেবে কর্মজীবনে প্রবেশ করেন। তার উদ্ভাবনী শক্তি ও দক্ষতা গ্রুপটিকে অনন্য স্থানে নিয়ে গেছে। পরিচালনা পর্ষদে আরও রয়েছেন এমএ কাদের।

কর্মীদের জ্ঞানচর্চা ও দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে যোগ্য করে গড়ে তুলতে আগ্রহী কর্তৃপক্ষ। কর্মীদের সমস্যা সমাধানে বিশেষ আগ্রহী তারা। কর্মীরা যেন পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে পারেন, সেজন্য নিয়মিত প্রণোদনা দেওয়া হয়। এখানে ভিন্ন মত, কাজ ও অভিজ্ঞতার মূল্যায়ন করা হয়। একজন কর্মী যেন আরেকজন কর্মীর পাশে থাকেন, সে বিষয়ে মোটিভেট করা হয় সবাইকে। তাদের নিরাপদ ও স্বাস্থ্যসম্মত কর্মপরিবেশ উপহার দিয়ে চলেছে ডিবিএল গ্রুপ। কর্তৃপক্ষের দূরদর্শিতা, কর্মীদের দায়িত্ববোধ গ্রুপটিকে তাই শীর্ষস্থানীয় করে তুলেছে।
সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসেবা নিশ্চিত করা হয় ডিবিএল গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানে। প্রযুক্তিসেবায় এ গ্রুপের পোশাক খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোও অন্য প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের তুলনায় এগিয়ে। ২০১৪ সালে বিশ্বখ্যাত প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফটের সঙ্গে এন্টারপ্রাইজ চুক্তি করে গ্রুপটি। এ চুক্তির আওতায় বাংলাদেশে মাইক্রোসফটের লাইসেন্সিং সল্যুশন প্রোভাইডার (এলএসপি) টেক ওয়ান গ্লোবাল প্রাইভেট লিমিটেড ডিবিএল গ্রুপের জন্য সফটওয়্যার সরবরাহ করছে। এছাড়া মাইক্রোসফটের বিভিন্ন টিউটোরিয়াল সেটআপ ও বিভিন্ন প্রযুক্তিসেবা দেয়। বাংলাদেশের অ্যাপারেল ইন্ডাস্ট্রিতে কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মাইক্রোসফটের এটাই প্রথম চুক্তি।

ডিবিএল গ্রুপের অর্জনঃ 

অনেক পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে ডিবিএল গ্রুপ। এরই কয়েকটি:

১. এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড, ২০১৮

২. ন্যাশনাল এক্সপোর্ট ট্রফি

৩. সুপারব্র্যান্ডস অ্যাওয়ার্ড-২০১৮

৪. ফিফথ এইচএসবিসি ক্লাইমেট অ্যাওয়ার্ডস-২০১৭

৫. আইসিকিউসিসি গোল্ড অ্যাওয়ার্ড-২০১৭

৬. আইসিএমএবি বেস্ট করপোরেট অ্যাওয়ার্ড-২০১৬

৭. এইচএসবিসি এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৪ ও ২০১৬

৮. এইচঅ্যান্ডএম সাসটেইন্যাবিলিটি অ্যাওয়ার্ড-২০১৬

৯. আইসিকিউসিসি গোল্ড অ্যান্ড সিলভার অ্যাওয়ার্ডস-২০১৬

১০. ওয়ার্ল্ড টেক্সটাইল অ্যাওয়ার্ডস: ইন্টারন্যাশনাল টেক্সটাইল ফার্ম অব দি ইয়ার-২০১৬

১১. ওয়ার্ল্ড টেক্সটাইল অ্যাওয়ার্ডস: স্পিনার অব দি ইয়ার-২০১৬

১২. সাসটেইন্যাবল পারফরমার অন ওয়েস্ট ওয়াটার
ম্যানেজমেন্ট, ডিক্যাথলন-২০১৬

১৩. সাসটেইন্যাবল পারফরমার অন এইচআরপি,
ডিক্যাথলন-২০১৫ ও ২০১৬

১৪. আইসিএসবি ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড: গোল্ড-২০১৫

১৫. বেস্ট ওয়েস্টওয়াটার ম্যানেজমেন্ট অ্যাওয়ার্ড,
ডিক্যাথলন-২০১৫

১৬. ওয়ার্ল্ড টেক্সটাইল অ্যাওয়ার্ড-২০১৫

১৭. সিপিআইটু টপ ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড-২০১৪

১৮. জেবিসিসিআই বিজনেস এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৪

১৯. সোশ্যাল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড-২০১৪

চার ভাইয়ের ৫ হাজার কোটি টাকার ব্যবসাঃ 

ডিবিএল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান এম এ রহিম, চেয়ারম্যান আবদুল ওয়াহেদ, উপব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ কাদের এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ জব্বার। 

বাবার দেওয়া ৬০ লাখ টাকা পুঁজি নিয়ে নিজেদের পুরোনো বাড়িকে ছোট্ট কারখানায় রূপান্তর করলেন চার ভাই। কিনলেন ৩৭টি সেলাই মেশিন। কয়েক দিন সকাল-বিকেল আশপাশের বিভিন্ন কারখানা ফটকে দাঁড়িয়ে জোগাড় করলেন শতাধিক শ্রমিক। অন্য কারখানা থেকে ঠিকায় কাজ (সাবকন্ট্রাক্টটিং) আনলেন। পোশাক তৈরির পর ডেলিভারি হলো। বছর দুয়েক এভাবেই চলল। কিন্তু কঠোর পরিশ্রম করেও দুই বছরে লাভের মুখ দেখলেন না চার ভাই।

মুনাফা না হলেও পণ্যের মান ও সময়মতো তা বুঝিয়ে দিয়ে অল্প দিনেই দু-চারজন ক্রেতার সুনজরে পড়লেন চার ভাই। ফলে ১৯৯৩ সালে যুক্তরাজ্যের এক ক্রেতার কাছ থেকে সরাসরি ক্রয়াদেশ পেলেন তাঁরা। তিন হাজার পিস পলো শার্ট। তারপর চার ভাইকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ২৯ বছরের ব্যবধানে পোশাকশিল্পের শীর্ষ রপ্তানিকারকদের অন্যতম তাঁরা।

১৯৯১ সালে ঢাকার ১০২ গ্রিন রোডে ছোট কারখানা দিয়ে শুরু করা সেই প্রতিষ্ঠানটি আজকের দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড বা ডিবিএল গ্রুপ। আর সেই চার ভাই হলেন আবদুল ওয়াহেদ, এম এ জব্বার, এম এ রহিম ও এম এ কাদের। তাঁরা যথাক্রমে ডিবিএল গ্রুপের চেয়ারম্যান, ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), ভাইস চেয়ারম্যান ও উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি)।

পোশাক দিয়ে শুরু হলেও গত ২৯ বছরের ব্যবসায় সিরামিক টাইলস, তথ্যপ্রযুক্তি, টেলিযোগাযোগ ও ড্রেজিং ব্যবসায় নাম লিখিয়েছে ডিবিএল। আগামী বছর তারা দেশে ওষুধ ব্যবসায়ও আসছে। সব মিলিয়ে ডিবিএল গ্রুপের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বর্তমানে ২৪টি। এসব প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন ৩৬ হাজার কর্মী। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে গ্রুপের বার্ষিক লেনদেন ছিল প্রায় ৬০ কোটি মার্কিন ডলার, যা দেশীয় মুদ্রায় ৫ হাজার ১০০ কোটি টাকার সমান। এর মধ্যে তৈরি পোশাক ব্যবসা থেকেই এসেছে ৯০ শতাংশ অর্থ। সব মিলিয়ে গ্রুপটির বিনিয়োগের পরিমাণ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি।

ডিবিএল নামের সঙ্গে ‘মুক্তিযুদ্ধ’

চার ভাইয়ের বাবা আবদুল মতিনের ট্রেডিং ব্যবসা ছিল। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ঢাকা থেকে নোয়াখালীর চাটখিলের গ্রামের বাড়িতে চলে যায় পুরো পরিবার। আবদুল ওয়াহেদ (গ্রুপের চেয়ারম্যান) যোগ দেন মুক্তিযুদ্ধে। সে সময় তাঁকে ধরতে আলবদর বাহিনীর লোকজন গ্রিন রোডের বাসায় মাঝেমধ্যেই অভিযান চালাত।

অক্টোবরে গ্রাম থেকে ঢাকায় ফিরে আসে পুরো পরিবার। তখন করাচি বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য ভর্তি হওয়া পরিবারের বড় ছেলে আবদুল কুদ্দুস দুলালও ছিলেন। ১৪ ডিসেম্বর সকালে আলবদর বাহিনী গ্রিন রোডের বাসা থেকে তাঁকে ধরে নিয়ে যায়। ১৭ ডিসেম্বর রায়ের বাজারে বধ্যভূমিতে আবদুল কুদ্দুস দুলালের মৃতদেহ পাওয়া যায়। পরে আজিমপুর কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়।

মুক্তিযুদ্ধে শহীদ আবদুল কুদ্দুস দুলালের নামেই প্রতিষ্ঠান শুরু করেন ছোট চার ভাই। সেটি আজও ধরে রেখেছেন তাঁরা। এম এ জব্বার বলেন, ‘দুলাল ভাইয়ের নামেই আমরা ব্যবসা শুরু করি। সেটিই আমাদের মূল স্পিরিট। আমাদের এক ভাই মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হয়েছেন, সেই বিষয়টি সব সময় আমাদের চার ভাইকে দেশের জন্য নতুন কিছু করতে উদ্বুদ্ধ করে।’

ডিবিএল গ্রুপের শুরুর গল্প আরেকটু

যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা শেষ করে ১৯৮৯ সালে দেশে ফেরেন এম এ জব্বার। শুরুতে বাবার ব্যবসায় বসলেন। বছরখানেক পর সেটি মন দিয়ে করলেন। তারপর বাকি তিন ভাইয়ের সঙ্গে নতুন কিছু করার পরিকল্পনা শুরু করলেন। সম্ভাবনা থাকায় তৈরি পোশাক ও চামড়ার ব্যবসা নিয়ে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বললেন। শেষ পর্যন্ত নিজেদের বাড়িতেই ছোট পোশাক কারখানা করার মনস্থির করলেন। তত দিনে পাশের আরেকটি বাসায় তাঁরা বসবাস করেন। চাচাতো এক ভাই পোশাকের ব্যবসায় জড়িত থাকায় কাজটি কিছুটা সহজ হলো।

কারখানা চালুর পর ঠিকায় ক্রয়াদেশ আনা থেকে শুরু করে উৎপাদন—শেষ পর্যন্ত চার ভাই কঠোর পরিশ্রম করছেন। তবে দিনের পর দিন লাভের মুখ দেখতে না পেয়ে একসময় হতাশা পেয়ে বসে তাঁদের। তখন বাবা আবদুল মতিন ও মা জিন্নাতের নেসা পাশে এসে দাঁড়ান। এম এ জব্বার স্মৃতিচারণা করলেন এভাবে, ‘ব্যবসায় নিয়ে আমরা চার ভাই মাঝেমধ্যেই উদ্বিগ্ন হয়ে যেতাম। কারণ, এটি ঠিকমতো কাজ করছিল না। এই ব্যবসা করা যাবে না—এমন কথাও মনে হয়েছে। তবে মা–বাবা আমাদের সব সময় সাহস দিতেন। তখন বোনেরাও নানাভাবে সহায়তা করেছেন।’


সরাসরি ক্রয়াদেশ পাওয়ার পর থেকেই ধীরে ধীরে ভিত শক্ত হতে থাকে ডিবিএলের। ব্যবসা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে কারখানাও ওপর দিকে উঠতে থাকল। তারপর ১৯৯৯ সালে গাজীপুরের কাশিমপুরে বড় বিনিয়োগ করলেন চার ভাই। সেখানে ধাপে ধাপে পোশাক কারখানার পাশাপাশি নিটিং, ডায়িং, অল ওভার প্রিন্ট সেকশন চালু করলেন তাঁরা।

সে সময় অধিকাংশ পোশাক ব্যবসায়ী তাঁদের কারখানায় ভারতীয় ও কোরিয়ান মেশিন ব্যবহার করতেন। তাতে খরচ কম পড়ত, সহজেই বিনিয়োগ উঠে আসত। তবে ডিবিএল কাশিমপুরের কারখানার জন্য ইউরোপের সর্বশেষ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতি আনলেন। তাতে প্রাথমিকভাবে বিনিয়োগ বেশি হলেও পণ্যের মানের দিক এগিয়ে গেল চার ভাইয়ের ব্যবসা।

পশ্চাৎমুখী শিল্প বা ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে বিনিয়োগ করার সিদ্ধান্তই ডিবিএলের ব্যবসা আজকের উচ্চতায় পৌঁছতে সহায়তা করেছে বলে মনে করেন এম এ জব্বার। হাসতে হাসতে বলেন, ‘আমরা যখন কাশিমপুরে বড় বিনিয়োগে গেলাম তখন অনেকেই বলেন, এত বিনিয়োগ কেন করছ? তোমরা কি বিনিয়োগের অর্থ তুলে আনতে পারবে? কিন্তু আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। দীর্ঘদিন পোশাক সেলাই করার পর আমাদের মনে হয়েছিল, ক্রেতাদের সহায়তা দেওয়ার জন্য ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজে বিনিয়োগ করতে হবে। সেই সিদ্ধান্ত আমাদের ব্যবসার টার্নিং পয়েন্ট।’

টি–শার্ট ও পলো টি–শার্টের মতো সস্তা পোশাক দিয়ে শুরু করলেও বর্তমানে মধ্য ও উচ্চ মূল্যের পোশাক উৎপাদন করছে ডিবিএল। বাচ্চাদের পোশাকও করে তারা। নিজেদের ডিজাইন সেন্টারে পোশাকের নকশা করে ক্রেতাদের কাছ থেকে ক্রয়াদেশ আনছে। এ ছাড়া ব্যবহৃত ও পুরান কাপড় থেকে সুতা ও কাপড় উৎপাদনের কাজ করছে ডিবিএল গ্রুপ।

২০০৮ সালে হঠাৎ করে ডিবিএল গ্রুপের ভাইয়েরা চিন্তা করতে থাকেন ব্যবসা কীভাবে টেকসই (সাসটেইনেবল) করা যায়। বহু চিন্তাভাবনার পর তাঁরা একটা পরিকল্পনা করলেন। তিন বছর পর সেটির অংশ হিসেবে ক্লিনার প্রোডাকশন প্রকল্প নিলেন।

 সেটির অধীনে কাপড় রং করার পুরো প্রক্রিয়ায় পানির ব্যবহার কমিয়ে আনলেন। আগে যেখানে এক কেজি কাপড় ডায়িংয়ে দেড় শ লিটার পানি লাগত, সেটি নেমে এল ৬০ লিটারে। একইভাবে তাঁরা ডায়িং মেশিনের তাপমাত্রা ১০০ থেকে ৬০ ডিগ্রিতে নামিয়ে আনার পাশাপাশি রাসায়নিক ব্যবহার হ্রাস করলেন ব্যাপকভাবে।

ডিবিএলের কর্মীর সংখ্যা বর্তমানে ৩৬ হাজার। এম এ জব্বার বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের আমরা পরিবারের সদস্য হিসেবেই মনে করি। শুরু থেকেই ব্যবসার ভবিষ্যতের পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদের ভবিষ্যৎ নিয়েও চিন্তা করেছি। ২০০৮ সালে যখন মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে গেল, তখন আমরা কারখানায় বন্ধন নামে মুদি দোকান দিলাম।

 সেখানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য সরাসরি পাইকার কিংবা কারখানা থেকে কিনে এনে সেই দামেই বিক্রি করা হয়। কর্মীরা বাকিতে পণ্য নিয়ে যান। পরে তাঁর বেতনের সঙ্গে সেই অর্থ সমন্বয় করা হয়। আমাদের প্রতিটি কারখানাতেই এই ব্যবস্থা আছে। এটি এখন আমাদের স্ট্যান্ডার্ড হয়ে গেছে।’

ড্রেজিং ব্যবসায়ও আছে ডিবিএলঃ 

ডিবিএলের এমডি এম এ জব্বার বলেন, ‘ইথিওপিয়া থেকে তৈরি পোশাকের বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যায়। সে জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজার ধরতে আফ্রিকার এই দেশে কারখানা করেছি আমরা। তবে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য শ্রেষ্ঠ জায়গা।’

দেশে নতুন করে বড় ধরনের বিনিয়োগে যাচ্ছে ডিবিএল। শ্রীহট্ট অর্থনৈতিক অঞ্চলে ও মিরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগ করছে প্রতিষ্ঠানটি। সেখানে নতুন পোশাক কারখানা ও কাঁচামাল উৎপাদনের জন্য কারখানা করবে তারা।

পোশাকশিল্পে নতুন বিনিয়োগের সম্ভাবনা কতটুকু। জানতে চাইলে ডিবিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘বিশ্বে পোশাক রপ্তানিতে দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে আছে বাংলাদেশ। গত অর্থবছরে আমরা রপ্তানি করেছি ৩ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। আর শীর্ষস্থানে থাকা চীন করছে ১৫ হাজার ৮০০ কোটি ডলার। ফলে এখনো বাংলাদেশের বড় ধরনের সম্ভাবনা আছে। তা ছাড়া তৈরি পোশাকে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে সবদিক দিয়েই বাংলাদেশ বর্তমানে উপযুক্ত জায়গা।’

ভিন্ন জগতে যাত্রাঃ 

পোশাকের ব্যবসা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে একের পর এক কারখানা করেছে ডিবিএল। তো কারখানা নির্মাণের সময় দেখা গেল, সময়মতো টাইলস দিতে পারছে না সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। নতুন সমস্যা। সমাধান কী? তখন ভাবতে ভাবতে নিজেরাই সিরামিক টাইলস কারখানা করার পরিকল্পনা করলেন চার ভাই। যেই ভাবা সেই কাজ।


টাইলসের বাজারের সম্ভাব্যতা যাচাই শেষে গাজীপুরের মাওনায় ৩০ একর জমির ওপর ডিবিএল সিরামিক কারখানা নির্মাণ করে। উৎপাদন শুরু হয় ২০১৭ সালের এপ্রিলে। কারখানাটির উৎপাদন সক্ষমতা দিনে ৪৫ হাজার বর্গমিটার টাইলস। দেশের বাজারে সরবরাহের পাশাপাশি শিগগিরই তারা টাইলস রপ্তানিতেও যাবে।
|
ওষুধ ব্যবসায় আসার পেছনেও এমন এক গল্প আছে। সামাজিক দায়বদ্ধতার অংশ হিসেবে চার ভাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে দীর্ঘদিন ধরে সহযোগিতা করেন। একবার ঢাকা মেডিকেল পরিদর্শনে গেলেন চার ভাই। বিভিন্ন ওয়ার্ড ঘুরতে ঘুরতে তাঁদের মনে হলো, রোগীরা সঠিক ওষুধ পাচ্ছে না। নামীদামি ওষুধ কোম্পানিগুলো বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে না। তখনই ভালো কিছু ওষুধ উৎপাদনের চিন্তা মাথায় ঢুকে গেল চার ভাইয়ের।

আমরা যখন কাশিমপুরে বড় বিনিয়োগে গেলাম, তখন অনেকেই বলেন, এত বিনিয়োগ কেন করছ? তোমরা কি বিনিয়োগের অর্থ তুলে আনতে পারবে? কিন্তু আমরা আত্মবিশ্বাসী ছিলাম। ...সেই সিদ্ধান্তই আমাদের ব্যবসার টার্নিং পয়েন্ট।
এম এ জব্বার বলেন, ‘কাশিমপুরে ওষুধ কারখানার কাজ চলছে। আশা করছি, আগামী বছরের অক্টোবরে আমরা ডিবিএল ফার্মাসিউটিক্যালসের উৎপাদনে যেত পারব।’

সিরামিকের পাশাপাশি ইতিমধ্যে ড্রেজিং ব্যবসায় নেমেছে ডিবিএল। বর্তমানে ছয়টি ড্রেজিং মেশিন আছে তাদের। এ ছাড়া বিভিন্ন ইলেকট্রনিকস যন্ত্রের জন্য চিপ তৈরি করতে ভিএলএসআই ডিজাইন সেন্টার করেছে ডিবিএল, যা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের নতুন খাত। সেখানে ৫০ জন তরুণ প্রকৌশলী কাজ করেন। চলতি বছর ডিবিএলের হাত ধরে বিশ্বখ্যাত ব্র্যান্ড পুমা বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করেছে। ঢাকার বনানী ১১ নম্বর সড়কে পুমার বিক্রয়কেন্দ্রে স্পোর্টসওয়্যার, জুতা ইত্যাদি পাওয়া যায়। পোশাক, সিরামিক টাইলস, ড্রেজিংয়ের পাশাপাশি খেলাধুলায় বিনিয়োগ করেছে ডিবিএল। বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগের (বিপিএল) দল চিটাগাং ভাইকিংসের মালিকানায় আছে তারা।

চার ভাইয়ের বন্ধনঃ 

শুরু থেকেই চার ভাই ব্যবসা করেছেন। কখনো আলাদা হওয়ার কথা ভাবেননি। একসঙ্গে ব্যবসা করাটাই শক্তি বলে মনে করেন চার ভাই। এমনটাই বলেন এম এ জব্বার। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের বাবা-চাচারা একসঙ্গে ব্যবসা করেছেন। আমরা দেখেছি, চাচা বাবাকে কীভাবে সম্মান করেন। আমার ভাইদের মধ্যে প্রথম থেকেই ছাড় দেওয়ার মনোভাব ছিল। কে কম নেবে, কে বেশি নেবে সেটি নিয়ে কেউ কখনোই ভাবেনি। যার যতটুকু দরকার সে ততটুকুই নিয়েছে। আর প্রত্যেকেই একসঙ্গে থাকার সুবিধা বোঝে ও বিশ্বাস করে, একসঙ্গে ব্যবসা করাটাই শক্তি।’

সবশেষে এম এ জব্বারের কাছে জানতে চাইলাম ব্যবসার শীর্ষস্থানে পৌঁছে আপনারা কি তৃপ্ত? বলেন, ‘তৃপ্ত কি না জানি না। তবে আমরা মনে করি, আমাদের আরও অনেক কিছু করার আছে। আমরা করতে পারি। দেশের জন্য আমাদের সেই দায়বদ্ধতা আছে।’


একনজরে ডিবিএলঃ 

প্রতিষ্ঠাঃ ১৯৯১

প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাঃ ২৪টি

কর্মসংস্থানঃ ৩৬ হাজার

বার্ষিক লেনদেনঃ ৬০ কোটি ডলার

রপ্তানির গন্তব্যঃ ৪০ দেশ

মূল ব্যবসাঃ তৈরি পোশাক

সহযোগী ব্যবসাঃ
সিরামিক টাইলস
ড্রেজিং, তথ্যপ্রযুক্তি
ওষুধ (আগামী বছর বাজারে আসবে)
পুমা (পরিবেশক), ক্রিকেট দল চিটাগাং ভাইকিংস

বিনিয়োগঃ ৬ হাজার কোটি টাকার বেশি

সাফল্যের মূলমন্ত্রঃ
ঠিকভাবে কাজ করা
জবাবদিহি
দায়বদ্ধতা

কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর ডিবিএল নিয়েঃ 

১। ডিবিএল এর পূর্ণঅর্থ কি?
উত্তরঃ দুলাল ব্রাদার্স লিমিটেড।

২।কত সালে ডিবিএল নির্মিত হয়?
উত্তরঃ ১৯৮৫ সালে।

৩।কত সালে ডিবিএল এ নিটিং চালু হয়?
উত্তরঃ ১৯৯১ সালে।

৪।নিটিং প্রধানের(cpo)নাম কি?Dgm,sr.Manager এর নাম কি?
উত্তরঃ সাদেকুর রহমান,রাসেদ আলম।

৫।আমাদের চেয়ারম্যান স্যারের নাম কি?
উত্তরঃ আব্দুল ওয়াহেদ স্যার।

৬।দুলাল সাব কত সালে শহীদ হন?
উত্তরঃ ১৯৭১ সালে।

৭।জিপিকিউ ডিপার্টমেন্ট এর ম্যানেজারের নাম কি?
উত্তরঃ জনাব হাসান ইমাম স্যার

৮।EOM এর পুর্নরুপ কি?ইহার শর্ত কি?
উত্তরঃ employ of the month

৯।SOP কি?
উত্তরঃ এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া।

১০।জিপিকিউ ট্রেনিং এর বিষয় বস্তুগুলো কিছিল?
উত্তরঃ ৫এস,পিপিই,ইয়ার্ন কাউন্ট লট ও ব্র্যান্ড, গুরুত্বপুর্ন বায়ারগণ, ফেব্রিকের সমস্যা, রিপটিং কিভাবে করতে হবে, গ্রেডিং

১১।সুতার জন্য কিকি সমস্যা হয়?৩টি কি কী?
উত্তরঃ পাট্টা,ন্যাপস,স্লাব

১২।মাতৃত্ব কালীন ছুটি কয়দিন?
উত্তরঃ তিন মাস বাইসদিন

১৩।নিটিং কাপড়ে কি কি সমস্যা পাওয়া যায়?
উত্তরঃ ইয়ার্ন পাট্টা ,স্লাব,ন্যাপস ইত্যাদি।

১৪।আমাদের ফায়ার বিগ্রেড কোথায় আছে?
উত্তরঃ ডিবিএল এর পশ্চিম পাশে।

১৫।আগুন লাগলে করণীয় কি?
উত্তরঃ নিয়মশৃঙ্খলা মেনে ফ্লোর হতে ফায়ারডোর দিয়ে বাইরে বহির্গমন করতে হবে।

১৬।4 point system কি?
উত্তরঃ ফেব্রিক ইন্সপেকশন পদ্ধতি ।

১৭।ডায়িং ইউনিটের নাম কি?
উত্তরঃ মায়মোন

১৮।স্পিনিং ইউনিটের নাম কি?
উত্তরঃ মতিন স্পিনিং।

CONTACT DBL
Address:
Capita South Avenue Tower, 6th Floor House 50, Road 03, Gulshan Avenue, Dhaka 1212, Bangladesh
Telephone: +880-2-58817735-6
Fax: +880-2-58817737
Email: info@dbl-group.com


E Recruitment  System 

একজন ফ্রেশার টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে আপনি যদি সিভি ড্রপ করতে চান তবে আপনাদের জন্য তাদের একটি সুন্দর ব্যবস্থা আছে, আপনি চাইলে অনলাইনে সিভি ড্রপ করে রাখতে পারেন 

তাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে উপরে দিকে ক্লিক করে ক্যারিয়ার অপশনে ক্লিক করে অনলাইনে CVBank এ সিভি ড্রপ করে রাখতে পারেন 


সিভি ব্যাংকের লিংকঃ

কোন মন্তব্য নেই: