টেক্সটাইল ইন্ড্রাস্ট্রি পরিচিতি - সায়হাম গ্রুপ | Saiham Textile Mills - Textile Lab | Textile Learning Blog
সায়হাম গ্রুপ
 
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বনেদী গ্রুপ সায়হাম। গ্রুপটির স্বত্বাধিকারী সায়হাম পরিবার। পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ওই পরিবারের সদস্যরা। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আধুনিক শিল্প-কারখানা নির্মাণ করে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার জন্য গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেছেন তারা। এর মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, দূর হবে এলাকার দারিদ্র্য এমনই মনে করে এই পরিবার। ব্যবসায় নৈতিকতা, ন্যায়পরায়ণতা ও সততার কারণে দেশজুড়ে তাদের সুনাম রয়েছে। বস্ত্র, তথ্যপ্রযুক্তি ও নির্মাণ খাতে গ্রুপটি ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে।

গ্রুপটির কারখানাগুলো রয়েছে সায়হাম নগরে। হবিগঞ্জের নয়াপাড়ায় এই সায়হাম নগর অবস্থিত। প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ এই এলাকাটি। এর অবস্থান হবিগঞ্জের নোয়াপাড়ায়।

সায়হাম গ্রুপের পথচলা শুরু হয় স্বপ্নদ্রষ্টা সৈয়দ সাঈদউদ্দিন আহমেদের হাত ধরে, ১৯৫২ সালে। তখন তিনটি প্রতিষ্ঠানের

মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এগুলো হলো- সফ্কো রাইস মিলস, সাইদউদ্দিন টিম্বার ইন্ডাস্ট্রি ও স্ট্যান্ডার্ড প্রিন্টিং প্রেস। ১৯৮২ সালে তার ছেলেরা সায়হাম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নামে একটি আধুনিক কম্পোজিট টেক্সটাইল কারখানা প্রতিষ্ঠা করে। শুরু থেকেই এই কারখানায় উন্নতমানের কাপড় তৈরি করা হয়। এখানকার উৎপাদিত কাপড়ের একটি বড় অংশ রফতানিও করা হয়। পরের বছরগুলোয় এ তালিকায় যুক্ত হয় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ফলে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে সায়হাম নগর।


বর্তমানে সায়হাম গ্রুপে প্রায় ৮ হাজার মানুষ কর্মরত রয়েছেন। দেশ ও দেশের বাইরে ব্যবসা পরিচালনায় ব্যবস্থাপনা পর্ষদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান রয়েছে। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন এসএকেএম সেলিম। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ব্যবস্থাপনা টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন সৈয়দ এবিএম হুমায়ুন। প্রায় ৩৪ বছর ধরে টেক্সটাইল ও স্পিনিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছেন। পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ সাদেক আহমেদ। পরিচালনা পর্ষদে আরও রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার কাশফিয়া নাহরিন, প্রফেসর ড. নাইমা মুয়াজ্জেম, মোমেনা বেগম, সৈয়দ সাবাব আহমেদ ও মোহাম্মদ মোফাচ্ছেল আলী। শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সুসম্পর্ক বিরাজমান। কর্মীদের সব ধরনের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি তাদের কল্যাণ সাধনে কর্তৃপক্ষ বেশ আন্তরিক। তাদের সুস্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা হয়। ব্যয়বহুল জীবনযাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য প্রতি বছর বেতনভাতা বাড়ানো হয় এই গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানে। এমনকি কর্মীদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য আর্থিক সহায়তা করে থাকে সায়হাম গ্রুপ।

স্থানীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এই গ্রুপ প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এজন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান ও ছাত্রবৃত্তিসহ বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে সহযোগিতা করে আসছে। এছাড়া খেলাধুলা, বিভিন্ন সামাজিক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে গ্রুপটি সহায়তা করে থাকে।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে গুণগতমানে সেরা পণ্য সরবরাহ করা গ্রুপটির ব্যবসায়িক নীতি। পণ্য উৎপাদনের বেলায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও উদ্ভাবনী কৌশল অবলম্বন করা হয়। উৎপাদন ও পণ্যের গুণগতমান বাড়ানোর লক্ষ্যে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পুরনো যন্ত্রপাতি কিংবা মেশিনের সংস্কার, পরিবর্তন ও প্রতিস্থাপন করা হয়। ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে পণ্যের দাম রাখা হয়। আরও আছে সেবার মানোন্নয়ন। গ্রুপের সব অঙ্গপ্রতিষ্ঠান একই নীতি অনুসরণ করে থাকে। তাই গ্রাহকদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক

রয়েছে তাদের। বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ব্যবসায়িক অংশীদার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে।

 

অঙ্গপ্রতিষ্ঠানঃ

সায়হাম মাল্টিফাইবার টেক্সটাইলস লিমিটেড (স্পিনিং ইউনিট)

৩০ হাজার স্পিন্ডেলস উৎপাদন করে। প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালে। সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, জাপান, চীন ও ইতালি থেকে আমদানি করা হয়েছে এর যন্ত্রপাতি। কার্ডেড মানের সুতা উৎপাদন করা হয় এখানে।

সায়হাম মাল্টি ফাইবার টেক্সটাইলস লিমিটেড (ননওভেন ইউনিট)

প্রস্তাবিত এই প্রতিষ্ঠানটি শিগগিরই পথচলা শুরু করবে। এখানে দৈনিক ১০ মেট্রিক টন ননওভেন টেক্সটাইলস উৎপাদন করা হবে।

 

সায়হাম জুট মিলস

প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। দিনে ২০ মেট্রিক টন পাটের সুতা উৎপাদন করে সায়হাম জুট মিলস। শতভাগ রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান এটি। মিসর, আলজেরিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, ইরান, মিয়ানমার ও তুরস্কে রফতানি হয় তাদের পণ্য।

এছাড়া সায়হাম টেকনোলজিস নামে আরও একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের।

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা ব্যবসার অপরিহার্য উপাদান। এসব সমস্যা মোকাবিলা করে সম্মানের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে চলেছে সায়হাম গ্রুপ।


৪০ বছর পর বাবার স্বপ্ন পূরণ করলেন হবিগঞ্জের ফয়সল

দীর্ঘ ৪০ বছর পর বাবার দেখে যাওয়া স্বপ্ন পূরণ করলেন হবিগঞ্জের অ্যাডভোকেট সৈয়দ মো. ফয়সল। অনেক ছড়াই উতরাই আর ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে একের পর এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে বাস্তবায়ন করা হয় ৪০ বছর পূর্বে প্রকাশ করা পিতার স্বপ্ন।

আজ থেকে ৪০ বছর পূর্বে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের তৎকালীন এমএলএ সৈয়দ সঈদ উদ্দিন স্বপ্ন দেখেছিলেন তার গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করবেন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে তিনি ছেলে অ্যাডভোকেট সৈয়দ মো. ফয়সল এর হাতে তুলে দেন তার স্বাক্ষর করা একটি চেক ও সেই সময়কার একটি জীপ গাড়ীর চাবি। আর এর পর থেকেই সৈয়দ মো. ফয়সল চিন্তা করেন ব্যবসা করার কথা।

কিন্তু কি ব্যবসা করবেন এমনটি নিয়ে ভাবতে ভাবতে চলে যায় বেশ কিছু দিন। পরে তিনি ঢাকার গাজীপুরে ক্রয় করেন ৬ একর জমি। সেখানে অল্পস্বল্প কিছু কাজও করেন। কিন্তু পিতার স্বপ্ন ছিল তার গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করার। তাৎক্ষণিক তিনি সিদ্ধান্ত নেন গাজীপুরের জমি বিক্রি করে তার নিজ গ্রাম হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামে জমি ক্রয় করে কোন একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন। সেই চিন্তা থেকে নিজ এলাকায় জমি ক্রয় করে নামমাত্র কয়েকজন শ্রমিককে দিয়ে গড়ে তুলেন সায়হাম টেক্সটাইল মিলস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এরপর আর পিছু ফিরে থাকাতে হয়নি সৈয়দ মো. ফয়সলের। গড়ে তুলেন একের পর এক শিল্প প্রতিষ্ঠান যা বর্তমানে সায়হাম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিয়ে রূপান্তরিত হয়।

দেশের শতভাগ রপ্তানীমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান সায়হাম গ্রুপ অব ইন্ড্রাষ্ট্রিজ পরিবেশ ও নিরাপত্তার বিষয়ে আপোষহীন। সায়হাম পরিবারের প্রত্যেকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে এক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নত দেশের মানদণ্ডকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো বাতাস, শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য ডে কেয়ার, শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভেতরে বাগান গড়ে তুলা, চলাচলের জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত রাস্তা, প্রত্যেকটি ইউনিটকে সর্বশেষ কম্পিউটারাইজড হিসাবে গড়ে তোলা, এন্ট্রি স্মুকিং জোন, আকস্মিক বিপদে ব্যবহারের জন্য প্রায় ৮ লাখ গ্যালন পানি ভূগর্ভস্থে প্রতিনিয়ত জমা রাখা, ৪০ বছরের মধ্যে একদিনও শ্রমিক আন্দোলন হয়নি যথা সময়ে বেতন-ভাতা পরিশোধ না করা বা শ্রমিক ছাটাইয়ের অভিযোগে।

এই চল্লিশ বছরে কোন শ্রমিকের একটি টাকাও বকেয়া নেই সায়হামের কাছে। এছাড়া ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত পানিকে (ইটিপি)’র মাধ্যমে কয়েকটি পর্যায়ে পরিশোধিত করে পরিবেশকে অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না বলে জানান শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ।

বাহিরে বিশাল বিশাল বাগান, যেখানে রয়েছে পরিবেশ বান্ধব গাছ, সুপ্রশস্ত রাস্তা, বুঝার কোনো উপায় নেই ভেতরে কাজ করছে হাজার হাজার নারী পুরুষ শ্রমিক। প্রত্যেক শ্রমিকের প্রবেশ ও বহিগর্মণ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কম্পিউটারে। বিশাল শিল্প এলাকার ভেতরে বাহিরে কোথাও ধূমপানের কোনো সুযোগ নেই, সাথে সাথে এলার্ম বেজে উঠার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে।


১৯৮১ সালে ৬ একর জমিতে গড়ে উঠা সায়হাম টেক্সটাইল মিলস এখন বহুগুণ বেড়ে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তিতে ভরপুর এক পরিপূর্ণ শিল্প গ্রুপ। সুতা তৈরি থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি পোশাক তৈরি হয় সেখানে। যা দেশে নয় বিদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। ১৯৮১ সালে গড়ে তুলা সায়হাম শিল্প প্রতিষ্ঠান ১৯৮৮ সালে শেয়ার মার্কেটের তালিকাভুক্ত হয়।

দেশের বাজারে পণ্য বিক্রি করা হলেও ১৯৯১ সাল থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করে। ২০০২ সাল থেকে শতভাগ রপ্তানি মুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত হয় সায়হাম গ্রুপ। তখন ৩৫ হাজার স্পিন্ডল বিশিষ্ট সায়হাম কটন মিলস গড়ে তুলা হয়। ২০০৬ সালে গড়ে তুলা হয় ৩১ হাজার স্পিন্ডল বিশিষ্ট ফয়সল স্পিনিং মিলস, ২০০৯ সালে সায়হাম নীট কম্পোজিট গড়ে তুলা ছিল সায়হাম পরিবারের অন্যতম স্বপ্নের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি এতোটাই পরিবেশ বান্ধব ও নিরাপত্তাবেষ্টিত যে প্রতিষ্ঠানটি এউএসজিবিসি গ্রিন প্রজেক্ট এর স্বীকৃতি পায়। গ্রিন প্রজেক্ট স্বীকৃতি পাওয়া প্রতিষ্ঠান রয়েছে বাংলাদেশে হাতে গুনা কয়েকটি। এর মধ্যে সায়হাম গ্রুপ অন্যতম। যেখানে কর্মরত রয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক। আর সেই সাথে নয়াপাড়া হয়ে উঠে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মধ্যে একটি আধুনিক শহর। বর্তমান এই সায়হাম গ্রুপকে কেন্দ্র করে ওই এলাকাসহ সমগ্র উপজেলায় গড়ে উঠে ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত ইন্ডাস্ট্রি।

২০১১ সালটিও ছিল সায়হাম পরিবারের জন্য মাইল ফলক। রাইট শেয়ারের মাধ্যমে প্রায় ৩১ হাজার স্পিন্ডল বিশিষ্ট মিলাঞ্জ ইউনিট সুতার মিল, ৩৩ হাজার স্পিন্ডাল বিশিষ্ট সায়হাম কটন মিলস ইউনিট-২ গড়ে উঠে এ বছরই। শিল্প মালিকদের যেখানে ঢাকামুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় সেখানে ১৯৮১ সালেই সায়হাম শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল গ্রাম মুখী। শিল্প মালিকদের কেউ কেউ তখন টিপ্পনী দিয়েছিল যে, খারাপ কোনো মতলবে শিল্প প্রতিষ্ঠানটি গ্রামে গড়ে তুলা হয়েছে।

তবে সায়হাম শিল্প গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ফয়সল জানালেন ভিন্ন কথা। তার বাবা সৈয়দ সঈদ উদ্দিনের উদ্দেশ্যই ছিল তিনি তার গ্রামকে শহর বানাবেন। গ্রামের মানুষকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করে তুলবেন। কথায় নয় কাজে তিনি প্রমাণ করে গিয়েছেন। ৪০ বছর পর আজ গ্রামকে শহর বানানোর যে কথা রাষ্ট্র বলে আসছে, তা সৈয়দ সঈদ উদ্দিন ৪০ বছর আগেই অনুধাবন করেছিলেন। ৪০ বছর আগ থেকে যদি সৈয়দ সঈদ উদ্দিনের মতো করে শিল্প মালিকরা নিজেদের এলাকায় একেকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতেন, তাহলে আজ বাংলাদেশের কোনটি গ্রাম, কোনটি শহর তা বুঝতে কষ্ট হতো। বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যেত।

হবিগঞ্জের সাংবাদিকদের সাথে একটি দিন কাটাতে সায়হাম পরিবারের অন্যতম দুই পরিচালক সৈয়দ মো. ইশতিয়াক আহমেদ ও সৈয়দ মো. শাফকাত বিদেশ সফর বাতিল করেন। দীর্ঘদিন যাবত সাংবাদিকদের সাথে সময় কাটানো হয় না এমন আগ্রহ থেকে সকাল থেকেই অপেক্ষা করে আসছিলেন সৈয়দ মো. ফয়সল। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে যখন সায়হাম শিল্প এলাকায় হবিগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিকরা গিয়ে পৌঁছেন তখন সৈয়দ মো. ফয়সল, তার দুই ছেলে ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মো. ইশতিয়াক আহমেদ ও সৈয়দ মো. শাফকাত আহমেদ সকলকে অভ্যর্থনা জানান।

সৈয়দ মো. ইশতিয়াক প্রথমেই সাংবাদিকদের নিয়ে যান তার নেতৃত্বাধীন মিল কারখানায়। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখান বিশাল কর্মযজ্ঞ। পরে সৈয়দ মো. ফয়সল সাংবাদিকদের নিয়ে যান তাদের বিশাল বাড়িতে। যেখানে রয়েছে ফুল ও ফলের বাগান।

সাংবাদিকদের নিয়ে এক সাথে দুপুরের খাবারে অংশ গ্রহণের সময় বয়োবৃদ্ধ শিল্পপতি সৈয়দ মো. ফয়সল সাংবাদিকের খাবারের খোঁজ খবর নেন। দুপুরের পর সৈয়দ মো. শাফকাত আহমেদ নিয়ে যান তার নেতৃত্বাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ঘুরে ঘুরে শিল্প প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য কর্মযজ্ঞ দেখিয়ে তিনি জানালেন, আসলে এক দুই দিনে সবকিছু দেখানো সম্ভব নয়। হাতের ইশারায় এদিক ওদিক দিয়ে তিনি জানান দিলেন আরও অনেক কিছু আছে, যা সময়ের অভাবে দেখানো, বুঝানো সম্ভব হচ্ছে না।

সর্বশেষ তিনি নিয়ে গেলেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পানি কিভাবে পরিশোধিত করা হয় তা দেখানোর জন্য। জানালেন প্রতি ৩ মাস পরপর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পরিশোধিত পানি পরীক্ষা করার নিয়ম রয়েছে। যেহেতু আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ রপ্তানিমুখী সেহেতু পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রতি মাসে তা পরীক্ষা করা হয়। শুধু তাই নয় বৈদেশিক ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক এবং আমাদের নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকে প্রতিদিন দুইবার করে শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পানি পরিশোধিত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হয়। এর আপডেটও জানাতে হয়।

তিনি জানান, আমরা শিল্প প্রতিষ্ঠান করে টাকা রুজি করব, এর অর্থ তো এই নয় যে, অন্যের জন্য আমার শিল্প প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, মাছ, সাপ, ব্যাঙ, হাস মুরগী, পশু পাখি বা অন্য কোনো প্রাণীর জন্য মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে, কৃষকের চাষাবাদের জন্য আমার শিল্প প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবন্ধক হবে। আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত পানিতে কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারছেন, পশু পাখি হাঁস মুরগী পানি পান করছে, পরিশোধিত পানিতে মাছ চাষ হচ্ছে।

✅সায়হাম গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়সল শীর্ষ করদাতা নির্বাচিত

২০১৮-১৯ কর বছরে দীর্ঘ সময় আয়কর প্রদানকারী করদাতা নির্বাচিত হওয়ায় দেশের বৃহৎ রপ্তানিমূখী শিল্পগ্রুপ সায়হাম গ্রুপের কর্ণদার আলহাজ্ব সৈয়দ মোঃ ফয়সলকে সেরা করদাতার সম্মাননা পত্র দেয়া হয়েছে।

গত ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার হোটেল রেডিসনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল সৈয়দ মোঃ ফয়সলের হাতে সেরা করদাতার ক্রেষ্ট এবং টেক্সকার্ড ও সম্মাননা পত্র তুলে দেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এম মসিউর রহমান, অর্থমন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী এম এইচ মাহমুদ ও এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সহ অর্থ মন্ত্রনালয় ও রাজস্ব বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সৈয়দ মোঃ ফয়সল এর নেতৃত্বে সায়হাম টেক্সটাই মিলস্ লিঃ ১৯৮১ সালে জয়েন্ট স্টক কোম্পানীতে তালিকাভূক্ত হয়। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থার আর্থিক সহায়তায় হবিগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল মাধবপুরের নয়াপাড়া গ্রামে মাত্র ৫শ জনবল নিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস সায়হাম টেক্সটাইল মিলস লিঃ যাত্রা শুরু করে।

তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ এর উদ্বোধন করেন। যার উৎপাদিত পণ্য ছিল শাটিং, স্যুটিং, শাড়ী, ড্রেস মেটেরিয়ালস এবং বেডশীট। পণ্যের গুনগত মানের কারণে পরবর্তীতে দেশ ও বিদেশে সায়হাম টেক্সটাইলের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।

পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে হামিদা বস্ত্র শিল্প নামে একটি উইভিং মিল স্থাপন করা হয়। ১৯৮৮ সালে সায়হাম টেক্সটাইল মিলস্ লিঃ শেয়ার মার্কেটে তালিকাভূক্ত হয়।

১৯৯০ সালে সায়হাম স্পিনিং ইউনিট নামে রপ্তানিমূখী একটি সুতার মিল যাত্রা শুরু করে, যা ১৯৯১ সালে উৎপাদনে যায়।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬-৯৭ সালে খুলনার মংলায় সায়হাম সিমেন্ট ফ্যাক্টরী স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০২ সালে ৩৫ হাজার স্পিন্ডল বিশিষ্ট শতভাগ রপ্তানিমূখী সায়হাম কটন মিলস্ লিঃ নামে সুতার মিল স্থাপন করা হয়।

উক্ত মিলের সুতার গুনগতমানের সুনাম দেশ ও বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিপুল চাহিদার কারণে ২০০৬ সালে ৩১ হাজার স্পিন্ডল বিশিষ্ট শতভাগ রপ্তানিমূখী ফয়সল স্পিনিং মিলস্ লিঃ নামে আরও একটি সুতার মিল স্থাপন করা হয়।

সৈয়দ মোঃ ফয়সল ২০০৯ সালে শতভাগ রপ্তানিমূখী সায়হাম নীট কম্পোজিট লিঃ নামে আরও একটি নতুন মিল চালু করেন। যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় তিন মিলিয়ন পিস।


২০১১ সালে সায়হাম টেক্সটাইল মিলস্ লিঃ ৩০ হাজার ৯শ ৬০ স্পিন্ডল বিশিষ্ট মিলাঞ্জ ইউনিট নামে শতভাগ রপ্তানিমূখী নতুন সুতার মিলের যাত্রা শুরু করে এবং একই বছরে সায়হাম কটন মিলস্ লিঃ ৩৩ হাজার স্পিন্ডল বিশিষ্ট সায়হাম কটন মিলস্ লিঃ (ইউনিট-২) শতভাগ রপ্তানিমূখী আরও একটি সুতার মিলের যাত্রা শুরু হয়।

২০১৪ সালে রাজধানীর গুলশান-১ এ পরিবেশ বান্ধব ১৪ তলা ও ৩টি বেজমেন্ট বিশিষ্ট “সায়হাম টাওয়ার” ভবন নির্মাণ শুরু হয় যা ২০১৭ সালে সম্পন্ন হয়। পরিবেশ বান্ধব এ টাওয়ারটি ‘কোর এন্ড শেল’ ক্যাটাগরিতে ‘লীড এনসি ভিথ্রি” প্লাটিনাম’ স্বীকৃতি দিয়েছে ইউএসজিবিসি, যা বাংলাদেশে প্রথম।

ব্যাংকের অর্থায়নে ফয়সল স্পিনিং মিলস্ লিঃ (ইউনিট-২) ২০১৮ সালে ৪৩ হাজার ২শ স্পিন্ডেল বিশিষ্ট নতুন সুতার মিল সায়হাম গ্রুপে সংযোজন হয়। ২০১৯ সালে সায়হাম স্যুট নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করে সায়হাম গ্রুপ। বর্তমানে এই গ্রুপে নারী পুরুষ মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। যার প্রায় ৭৫% স্থানীয়।

প্রতিষ্টাকালীন অনুন্নত যোগায়োগ ব্যবস্থা সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিল্পস্থাপন ঝুকিপূর্ণ জেনেও গ্রুপের কর্ণদার সৈয়দ মোঃ ফয়সল সহ তাঁর পরিবার শিল্পস্থাপনে অনগ্রসর নয়াপাড়া সহ হবিগঞ্জ জেলাকে এগিয়ে নিতে সব কয়টি মিল হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার নয়াপাড়ায় স্থাপন করেন।

তাদের এ প্রচেষ্টায় বর্তমানে এই অঞ্চলটি শিল্প নগরীতে পরিনত হয়েছে। এলাকায় শিল্পস্থাপনের পথপ্রদর্শক সৈয়দ মোঃ ফয়সলের প্রতিষ্টিত সায়হাম গ্রুপকে অনুসরন করে বর্তমানে মাধবপুর সহ এ অঞ্চলে দেশের বৃহৎ কর্পোরেট শিল্পগ্রুপ গুলো শিল্প প্রতিষ্টান গড়ে তুলেছে।

সমাপনী শিক্ষার্থীদের শেষ মুহুর্তে করনীয়

সৈয়দ মোঃ ফয়সল জন্মলগ্ন থেকে সায়হাম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন, বর্তমানে তিনি সায়হাম গ্রুপের চেয়ারম্যান।

আগামীতে সায়হাম গ্রুপ ডেনিমস্, ফার্মাসিউটিক্যালস্ খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে এলাকার বেকারত্ব হ্রাস, কর্মসংস্থান সৃষ্টি সহ সর্বোপরি আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।

বর্তমানে এই গ্রুপ রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন তথা সরকারী কোষাগারে কর প্রদানের মাধ্যমে দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখছে।

এলাকায় শিল্পস্থাপনের পাশাপাশি আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে সায়হাম গ্রুপ। শিক্ষা বিস্তারে কলেজ, হাইস্কুল, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, এতিমখানা, মসজিদ ও দৃষ্ঠিনন্দন ঈদগাঁ স্থাপন সহ শিক্ষার মানোন্নয়নে আর্থিক অনুদান প্রদান করে আসছে সায়হাম গ্রুপ।

এলাকার কৃতি, দ্ররিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। প্রতি বছর সায়হাম গ্রুপ বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা শিবির করে অসংখ্য মানুষের সেবা করে আসছে। সায়হাম গ্রুপের চক্ষু শিবিরে হবিগঞ্জ জেলা ছাড়াও পার্শ¦বর্তী ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার লোকজনও সেবা নিতে আসে।

প্রতি বছর মাধবপুর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে শীতার্থ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে আসছে সায়হাম গ্রুপ। এছাড়া প্রতি রমজান মাসে মাধবপুর উপজেলার অধিকাংশ মসজিদে মাসব্যাপী ইফতারির আয়োজন ছাড়াও দরিদ্র কয়েক সহস্রাধিক মানুষের মধ্যে সারা মাসের ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা সহ নানা ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এর কার্যক্রম আরো বিস্তৃত করার কথা জানান গ্রুপের উদ্যোক্তারা।


Head Office:
Saiham Tower
House # 34, Road # 136, Block # SE (C )-1
Gulshan-1, Dhaka-1212

Phone : +88-02-222263323, +88-02-222262284, +88-02-222287441

Fax : +88-02-222294607

E-Mail : share@saiham.com

Manufacturing Complex:
Noyapara, Saiham Nagar, Madhabpur, Habiganj

টেক্সটাইল ইন্ড্রাস্ট্রি পরিচিতি - সায়হাম গ্রুপ | Saiham Textile Mills

সায়হাম গ্রুপ
 
সিলেটের ঐতিহ্যবাহী বনেদী গ্রুপ সায়হাম। গ্রুপটির স্বত্বাধিকারী সায়হাম পরিবার। পরিচালনার সঙ্গে জড়িত ওই পরিবারের সদস্যরা। বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে আধুনিক শিল্প-কারখানা নির্মাণ করে অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখার জন্য গ্রুপটি প্রতিষ্ঠা করেছেন তারা। এর মধ্য দিয়ে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, দূর হবে এলাকার দারিদ্র্য এমনই মনে করে এই পরিবার। ব্যবসায় নৈতিকতা, ন্যায়পরায়ণতা ও সততার কারণে দেশজুড়ে তাদের সুনাম রয়েছে। বস্ত্র, তথ্যপ্রযুক্তি ও নির্মাণ খাতে গ্রুপটি ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে।

গ্রুপটির কারখানাগুলো রয়েছে সায়হাম নগরে। হবিগঞ্জের নয়াপাড়ায় এই সায়হাম নগর অবস্থিত। প্রাকৃতিক গ্যাসে সমৃদ্ধ এই এলাকাটি। এর অবস্থান হবিগঞ্জের নোয়াপাড়ায়।

সায়হাম গ্রুপের পথচলা শুরু হয় স্বপ্নদ্রষ্টা সৈয়দ সাঈদউদ্দিন আহমেদের হাত ধরে, ১৯৫২ সালে। তখন তিনটি প্রতিষ্ঠানের

মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করেন তিনি। এগুলো হলো- সফ্কো রাইস মিলস, সাইদউদ্দিন টিম্বার ইন্ডাস্ট্রি ও স্ট্যান্ডার্ড প্রিন্টিং প্রেস। ১৯৮২ সালে তার ছেলেরা সায়হাম টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড নামে একটি আধুনিক কম্পোজিট টেক্সটাইল কারখানা প্রতিষ্ঠা করে। শুরু থেকেই এই কারখানায় উন্নতমানের কাপড় তৈরি করা হয়। এখানকার উৎপাদিত কাপড়ের একটি বড় অংশ রফতানিও করা হয়। পরের বছরগুলোয় এ তালিকায় যুক্ত হয় বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। ফলে দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগ অঞ্চলে পরিণত হয়েছে সায়হাম নগর।


বর্তমানে সায়হাম গ্রুপে প্রায় ৮ হাজার মানুষ কর্মরত রয়েছেন। দেশ ও দেশের বাইরে ব্যবসা পরিচালনায় ব্যবস্থাপনা পর্ষদের দীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও জ্ঞান রয়েছে। চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন এসএকেএম সেলিম। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে প্রায় ২০ বছর ধরে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। ব্যবস্থাপনা টিমের নেতৃত্বে রয়েছেন সৈয়দ এবিএম হুমায়ুন। প্রায় ৩৪ বছর ধরে টেক্সটাইল ও স্পিনিং ব্যবসার সঙ্গে জড়িত আছেন। পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ সাদেক আহমেদ। পরিচালনা পর্ষদে আরও রয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার কাশফিয়া নাহরিন, প্রফেসর ড. নাইমা মুয়াজ্জেম, মোমেনা বেগম, সৈয়দ সাবাব আহমেদ ও মোহাম্মদ মোফাচ্ছেল আলী। শ্রমিক কর্মচারীদের সঙ্গে ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের সুসম্পর্ক বিরাজমান। কর্মীদের সব ধরনের সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি তাদের কল্যাণ সাধনে কর্তৃপক্ষ বেশ আন্তরিক। তাদের সুস্বাস্থ্যের প্রতি খেয়াল রাখা হয়। ব্যয়বহুল জীবনযাত্রার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নেয়ার জন্য প্রতি বছর বেতনভাতা বাড়ানো হয় এই গ্রুপের সব প্রতিষ্ঠানে। এমনকি কর্মীদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য আর্থিক সহায়তা করে থাকে সায়হাম গ্রুপ।

স্থানীয় আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে এই গ্রুপ প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করে চলেছে। এজন্য বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আর্থিক অনুদান ও ছাত্রবৃত্তিসহ বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে সহযোগিতা করে আসছে। এছাড়া খেলাধুলা, বিভিন্ন সামাজিক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠানে গ্রুপটি সহায়তা করে থাকে।

অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে গুণগতমানে সেরা পণ্য সরবরাহ করা গ্রুপটির ব্যবসায়িক নীতি। পণ্য উৎপাদনের বেলায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার ও উদ্ভাবনী কৌশল অবলম্বন করা হয়। উৎপাদন ও পণ্যের গুণগতমান বাড়ানোর লক্ষ্যে একটা নির্দিষ্ট সময় পর পুরনো যন্ত্রপাতি কিংবা মেশিনের সংস্কার, পরিবর্তন ও প্রতিস্থাপন করা হয়। ক্রেতার সাধ্যের মধ্যে পণ্যের দাম রাখা হয়। আরও আছে সেবার মানোন্নয়ন। গ্রুপের সব অঙ্গপ্রতিষ্ঠান একই নীতি অনুসরণ করে থাকে। তাই গ্রাহকদের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদি সম্পর্ক

রয়েছে তাদের। বিশ্বাস ও আস্থার সম্পর্ক গড়ে উঠেছে ব্যবসায়িক অংশীদার ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের সঙ্গে।

 

অঙ্গপ্রতিষ্ঠানঃ

সায়হাম মাল্টিফাইবার টেক্সটাইলস লিমিটেড (স্পিনিং ইউনিট)

৩০ হাজার স্পিন্ডেলস উৎপাদন করে। প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১৭ সালে। সুইজারল্যান্ড, জার্মানি, জাপান, চীন ও ইতালি থেকে আমদানি করা হয়েছে এর যন্ত্রপাতি। কার্ডেড মানের সুতা উৎপাদন করা হয় এখানে।

সায়হাম মাল্টি ফাইবার টেক্সটাইলস লিমিটেড (ননওভেন ইউনিট)

প্রস্তাবিত এই প্রতিষ্ঠানটি শিগগিরই পথচলা শুরু করবে। এখানে দৈনিক ১০ মেট্রিক টন ননওভেন টেক্সটাইলস উৎপাদন করা হবে।

 

সায়হাম জুট মিলস

প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৪ সালে। দিনে ২০ মেট্রিক টন পাটের সুতা উৎপাদন করে সায়হাম জুট মিলস। শতভাগ রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠান এটি। মিসর, আলজেরিয়া, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া, স্পেন, ইরান, মিয়ানমার ও তুরস্কে রফতানি হয় তাদের পণ্য।

এছাড়া সায়হাম টেকনোলজিস নামে আরও একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের।

এ কথা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ঝুঁকি ও অনিশ্চয়তা ব্যবসার অপরিহার্য উপাদান। এসব সমস্যা মোকাবিলা করে সম্মানের সঙ্গে ব্যবসা পরিচালনা করে চলেছে সায়হাম গ্রুপ।


৪০ বছর পর বাবার স্বপ্ন পূরণ করলেন হবিগঞ্জের ফয়সল

দীর্ঘ ৪০ বছর পর বাবার দেখে যাওয়া স্বপ্ন পূরণ করলেন হবিগঞ্জের অ্যাডভোকেট সৈয়দ মো. ফয়সল। অনেক ছড়াই উতরাই আর ঘাতপ্রতিঘাত পেরিয়ে একের পর এক প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলে বাস্তবায়ন করা হয় ৪০ বছর পূর্বে প্রকাশ করা পিতার স্বপ্ন।

আজ থেকে ৪০ বছর পূর্বে হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামের তৎকালীন এমএলএ সৈয়দ সঈদ উদ্দিন স্বপ্ন দেখেছিলেন তার গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করবেন। সেই স্বপ্নকে বাস্তবায়ন করতে তিনি ছেলে অ্যাডভোকেট সৈয়দ মো. ফয়সল এর হাতে তুলে দেন তার স্বাক্ষর করা একটি চেক ও সেই সময়কার একটি জীপ গাড়ীর চাবি। আর এর পর থেকেই সৈয়দ মো. ফয়সল চিন্তা করেন ব্যবসা করার কথা।

কিন্তু কি ব্যবসা করবেন এমনটি নিয়ে ভাবতে ভাবতে চলে যায় বেশ কিছু দিন। পরে তিনি ঢাকার গাজীপুরে ক্রয় করেন ৬ একর জমি। সেখানে অল্পস্বল্প কিছু কাজও করেন। কিন্তু পিতার স্বপ্ন ছিল তার গ্রামকে শহরে রূপান্তরিত করার। তাৎক্ষণিক তিনি সিদ্ধান্ত নেন গাজীপুরের জমি বিক্রি করে তার নিজ গ্রাম হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার নয়াপাড়া গ্রামে জমি ক্রয় করে কোন একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলবেন। সেই চিন্তা থেকে নিজ এলাকায় জমি ক্রয় করে নামমাত্র কয়েকজন শ্রমিককে দিয়ে গড়ে তুলেন সায়হাম টেক্সটাইল মিলস নামে একটি প্রতিষ্ঠান। এরপর আর পিছু ফিরে থাকাতে হয়নি সৈয়দ মো. ফয়সলের। গড়ে তুলেন একের পর এক শিল্প প্রতিষ্ঠান যা বর্তমানে সায়হাম গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিয়ে রূপান্তরিত হয়।

দেশের শতভাগ রপ্তানীমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান সায়হাম গ্রুপ অব ইন্ড্রাষ্ট্রিজ পরিবেশ ও নিরাপত্তার বিষয়ে আপোষহীন। সায়হাম পরিবারের প্রত্যেকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানে এক্ষেত্রে বিশ্বের উন্নত দেশের মানদণ্ডকেই প্রাধান্য দিয়ে থাকে। পর্যাপ্ত প্রাকৃতিক আলো বাতাস, শ্রমিকদের সন্তানদের জন্য ডে কেয়ার, শিল্প প্রতিষ্ঠানের ভেতরে বাগান গড়ে তুলা, চলাচলের জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠানের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত রাস্তা, প্রত্যেকটি ইউনিটকে সর্বশেষ কম্পিউটারাইজড হিসাবে গড়ে তোলা, এন্ট্রি স্মুকিং জোন, আকস্মিক বিপদে ব্যবহারের জন্য প্রায় ৮ লাখ গ্যালন পানি ভূগর্ভস্থে প্রতিনিয়ত জমা রাখা, ৪০ বছরের মধ্যে একদিনও শ্রমিক আন্দোলন হয়নি যথা সময়ে বেতন-ভাতা পরিশোধ না করা বা শ্রমিক ছাটাইয়ের অভিযোগে।

এই চল্লিশ বছরে কোন শ্রমিকের একটি টাকাও বকেয়া নেই সায়হামের কাছে। এছাড়া ওই শিল্প প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত পানিকে (ইটিপি)’র মাধ্যমে কয়েকটি পর্যায়ে পরিশোধিত করে পরিবেশকে অক্ষুণ্ণ রাখার ব্যাপারে কোনো ছাড় দেয়া হচ্ছে না বলে জানান শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক পক্ষ।

বাহিরে বিশাল বিশাল বাগান, যেখানে রয়েছে পরিবেশ বান্ধব গাছ, সুপ্রশস্ত রাস্তা, বুঝার কোনো উপায় নেই ভেতরে কাজ করছে হাজার হাজার নারী পুরুষ শ্রমিক। প্রত্যেক শ্রমিকের প্রবেশ ও বহিগর্মণ নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কম্পিউটারে। বিশাল শিল্প এলাকার ভেতরে বাহিরে কোথাও ধূমপানের কোনো সুযোগ নেই, সাথে সাথে এলার্ম বেজে উঠার ব্যবস্থা রয়েছে সেখানে।


১৯৮১ সালে ৬ একর জমিতে গড়ে উঠা সায়হাম টেক্সটাইল মিলস এখন বহুগুণ বেড়ে আধুনিক ও উন্নত প্রযুক্তিতে ভরপুর এক পরিপূর্ণ শিল্প গ্রুপ। সুতা তৈরি থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি পোশাক তৈরি হয় সেখানে। যা দেশে নয় বিদেশে রপ্তানি করা হয়ে থাকে। ১৯৮১ সালে গড়ে তুলা সায়হাম শিল্প প্রতিষ্ঠান ১৯৮৮ সালে শেয়ার মার্কেটের তালিকাভুক্ত হয়।

দেশের বাজারে পণ্য বিক্রি করা হলেও ১৯৯১ সাল থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠানটি আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ করে। ২০০২ সাল থেকে শতভাগ রপ্তানি মুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রতিষ্ঠিত হয় সায়হাম গ্রুপ। তখন ৩৫ হাজার স্পিন্ডল বিশিষ্ট সায়হাম কটন মিলস গড়ে তুলা হয়। ২০০৬ সালে গড়ে তুলা হয় ৩১ হাজার স্পিন্ডল বিশিষ্ট ফয়সল স্পিনিং মিলস, ২০০৯ সালে সায়হাম নীট কম্পোজিট গড়ে তুলা ছিল সায়হাম পরিবারের অন্যতম স্বপ্নের একটি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি এতোটাই পরিবেশ বান্ধব ও নিরাপত্তাবেষ্টিত যে প্রতিষ্ঠানটি এউএসজিবিসি গ্রিন প্রজেক্ট এর স্বীকৃতি পায়। গ্রিন প্রজেক্ট স্বীকৃতি পাওয়া প্রতিষ্ঠান রয়েছে বাংলাদেশে হাতে গুনা কয়েকটি। এর মধ্যে সায়হাম গ্রুপ অন্যতম। যেখানে কর্মরত রয়েছে ১০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক। আর সেই সাথে নয়াপাড়া হয়ে উঠে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মধ্যে একটি আধুনিক শহর। বর্তমান এই সায়হাম গ্রুপকে কেন্দ্র করে ওই এলাকাসহ সমগ্র উপজেলায় গড়ে উঠে ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত ইন্ডাস্ট্রি।

২০১১ সালটিও ছিল সায়হাম পরিবারের জন্য মাইল ফলক। রাইট শেয়ারের মাধ্যমে প্রায় ৩১ হাজার স্পিন্ডল বিশিষ্ট মিলাঞ্জ ইউনিট সুতার মিল, ৩৩ হাজার স্পিন্ডাল বিশিষ্ট সায়হাম কটন মিলস ইউনিট-২ গড়ে উঠে এ বছরই। শিল্প মালিকদের যেখানে ঢাকামুখী প্রবণতা লক্ষ্য করা যায় সেখানে ১৯৮১ সালেই সায়হাম শিল্প প্রতিষ্ঠান ছিল গ্রাম মুখী। শিল্প মালিকদের কেউ কেউ তখন টিপ্পনী দিয়েছিল যে, খারাপ কোনো মতলবে শিল্প প্রতিষ্ঠানটি গ্রামে গড়ে তুলা হয়েছে।

তবে সায়হাম শিল্প গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. ফয়সল জানালেন ভিন্ন কথা। তার বাবা সৈয়দ সঈদ উদ্দিনের উদ্দেশ্যই ছিল তিনি তার গ্রামকে শহর বানাবেন। গ্রামের মানুষকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করে তুলবেন। কথায় নয় কাজে তিনি প্রমাণ করে গিয়েছেন। ৪০ বছর পর আজ গ্রামকে শহর বানানোর যে কথা রাষ্ট্র বলে আসছে, তা সৈয়দ সঈদ উদ্দিন ৪০ বছর আগেই অনুধাবন করেছিলেন। ৪০ বছর আগ থেকে যদি সৈয়দ সঈদ উদ্দিনের মতো করে শিল্প মালিকরা নিজেদের এলাকায় একেকটি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতেন, তাহলে আজ বাংলাদেশের কোনটি গ্রাম, কোনটি শহর তা বুঝতে কষ্ট হতো। বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যেত।

হবিগঞ্জের সাংবাদিকদের সাথে একটি দিন কাটাতে সায়হাম পরিবারের অন্যতম দুই পরিচালক সৈয়দ মো. ইশতিয়াক আহমেদ ও সৈয়দ মো. শাফকাত বিদেশ সফর বাতিল করেন। দীর্ঘদিন যাবত সাংবাদিকদের সাথে সময় কাটানো হয় না এমন আগ্রহ থেকে সকাল থেকেই অপেক্ষা করে আসছিলেন সৈয়দ মো. ফয়সল। বুধবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে যখন সায়হাম শিল্প এলাকায় হবিগঞ্জে কর্মরত সাংবাদিকরা গিয়ে পৌঁছেন তখন সৈয়দ মো. ফয়সল, তার দুই ছেলে ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মো. ইশতিয়াক আহমেদ ও সৈয়দ মো. শাফকাত আহমেদ সকলকে অভ্যর্থনা জানান।

সৈয়দ মো. ইশতিয়াক প্রথমেই সাংবাদিকদের নিয়ে যান তার নেতৃত্বাধীন মিল কারখানায়। ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখান বিশাল কর্মযজ্ঞ। পরে সৈয়দ মো. ফয়সল সাংবাদিকদের নিয়ে যান তাদের বিশাল বাড়িতে। যেখানে রয়েছে ফুল ও ফলের বাগান।

সাংবাদিকদের নিয়ে এক সাথে দুপুরের খাবারে অংশ গ্রহণের সময় বয়োবৃদ্ধ শিল্পপতি সৈয়দ মো. ফয়সল সাংবাদিকের খাবারের খোঁজ খবর নেন। দুপুরের পর সৈয়দ মো. শাফকাত আহমেদ নিয়ে যান তার নেতৃত্বাধীন শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোতে।

দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ঘুরে ঘুরে শিল্প প্রতিষ্ঠানের উল্লেখযোগ্য কর্মযজ্ঞ দেখিয়ে তিনি জানালেন, আসলে এক দুই দিনে সবকিছু দেখানো সম্ভব নয়। হাতের ইশারায় এদিক ওদিক দিয়ে তিনি জানান দিলেন আরও অনেক কিছু আছে, যা সময়ের অভাবে দেখানো, বুঝানো সম্ভব হচ্ছে না।

সর্বশেষ তিনি নিয়ে গেলেন শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পানি কিভাবে পরিশোধিত করা হয় তা দেখানোর জন্য। জানালেন প্রতি ৩ মাস পরপর পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে পরিশোধিত পানি পরীক্ষা করার নিয়ম রয়েছে। যেহেতু আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানটি শতভাগ রপ্তানিমুখী সেহেতু পরিবেশ অধিদপ্তর থেকে প্রতি মাসে তা পরীক্ষা করা হয়। শুধু তাই নয় বৈদেশিক ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক এবং আমাদের নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকে প্রতিদিন দুইবার করে শিল্প প্রতিষ্ঠানের বর্জ্য পানি পরিশোধিত হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করতে হয়। এর আপডেটও জানাতে হয়।

তিনি জানান, আমরা শিল্প প্রতিষ্ঠান করে টাকা রুজি করব, এর অর্থ তো এই নয় যে, অন্যের জন্য আমার শিল্প প্রতিষ্ঠানটি ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে, মাছ, সাপ, ব্যাঙ, হাস মুরগী, পশু পাখি বা অন্য কোনো প্রাণীর জন্য মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়াবে, কৃষকের চাষাবাদের জন্য আমার শিল্প প্রতিষ্ঠানটি প্রতিবন্ধক হবে। আমাদের শিল্প প্রতিষ্ঠানের পরিশোধিত পানিতে কৃষকরা চাষাবাদ করতে পারছেন, পশু পাখি হাঁস মুরগী পানি পান করছে, পরিশোধিত পানিতে মাছ চাষ হচ্ছে।

✅সায়হাম গ্রুপের চেয়ারম্যান সৈয়দ ফয়সল শীর্ষ করদাতা নির্বাচিত

২০১৮-১৯ কর বছরে দীর্ঘ সময় আয়কর প্রদানকারী করদাতা নির্বাচিত হওয়ায় দেশের বৃহৎ রপ্তানিমূখী শিল্পগ্রুপ সায়হাম গ্রুপের কর্ণদার আলহাজ্ব সৈয়দ মোঃ ফয়সলকে সেরা করদাতার সম্মাননা পত্র দেয়া হয়েছে।

গত ১৪ নভেম্বর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ঢাকার হোটেল রেডিসনে এক অনাড়ম্বর অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল সৈয়দ মোঃ ফয়সলের হাতে সেরা করদাতার ক্রেষ্ট এবং টেক্সকার্ড ও সম্মাননা পত্র তুলে দেন।

এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অর্থ বিষয়ক উপদেষ্টা ড. এম মসিউর রহমান, অর্থমন্ত্রনালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও সাবেক পররাষ্ট্র মন্ত্রী এম এইচ মাহমুদ ও এনবিআরের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন সহ অর্থ মন্ত্রনালয় ও রাজস্ব বোর্ডের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

সৈয়দ মোঃ ফয়সল এর নেতৃত্বে সায়হাম টেক্সটাই মিলস্ লিঃ ১৯৮১ সালে জয়েন্ট স্টক কোম্পানীতে তালিকাভূক্ত হয়। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থার আর্থিক সহায়তায় হবিগঞ্জ জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল মাধবপুরের নয়াপাড়া গ্রামে মাত্র ৫শ জনবল নিয়ে দেশের সর্ববৃহৎ কম্পোজিট টেক্সটাইল মিলস সায়হাম টেক্সটাইল মিলস লিঃ যাত্রা শুরু করে।

তৎকালীন শিল্পমন্ত্রী এয়ার ভাইস মার্শাল সুলতান মাহমুদ এর উদ্বোধন করেন। যার উৎপাদিত পণ্য ছিল শাটিং, স্যুটিং, শাড়ী, ড্রেস মেটেরিয়ালস এবং বেডশীট। পণ্যের গুনগত মানের কারণে পরবর্তীতে দেশ ও বিদেশে সায়হাম টেক্সটাইলের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে।

পরবর্তীতে ১৯৮৬ সালে হামিদা বস্ত্র শিল্প নামে একটি উইভিং মিল স্থাপন করা হয়। ১৯৮৮ সালে সায়হাম টেক্সটাইল মিলস্ লিঃ শেয়ার মার্কেটে তালিকাভূক্ত হয়।

১৯৯০ সালে সায়হাম স্পিনিং ইউনিট নামে রপ্তানিমূখী একটি সুতার মিল যাত্রা শুরু করে, যা ১৯৯১ সালে উৎপাদনে যায়।

এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৯৬-৯৭ সালে খুলনার মংলায় সায়হাম সিমেন্ট ফ্যাক্টরী স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ২০০২ সালে ৩৫ হাজার স্পিন্ডল বিশিষ্ট শতভাগ রপ্তানিমূখী সায়হাম কটন মিলস্ লিঃ নামে সুতার মিল স্থাপন করা হয়।

উক্ত মিলের সুতার গুনগতমানের সুনাম দেশ ও বিদেশে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিপুল চাহিদার কারণে ২০০৬ সালে ৩১ হাজার স্পিন্ডল বিশিষ্ট শতভাগ রপ্তানিমূখী ফয়সল স্পিনিং মিলস্ লিঃ নামে আরও একটি সুতার মিল স্থাপন করা হয়।

সৈয়দ মোঃ ফয়সল ২০০৯ সালে শতভাগ রপ্তানিমূখী সায়হাম নীট কম্পোজিট লিঃ নামে আরও একটি নতুন মিল চালু করেন। যার উৎপাদন ক্ষমতা প্রায় তিন মিলিয়ন পিস।


২০১১ সালে সায়হাম টেক্সটাইল মিলস্ লিঃ ৩০ হাজার ৯শ ৬০ স্পিন্ডল বিশিষ্ট মিলাঞ্জ ইউনিট নামে শতভাগ রপ্তানিমূখী নতুন সুতার মিলের যাত্রা শুরু করে এবং একই বছরে সায়হাম কটন মিলস্ লিঃ ৩৩ হাজার স্পিন্ডল বিশিষ্ট সায়হাম কটন মিলস্ লিঃ (ইউনিট-২) শতভাগ রপ্তানিমূখী আরও একটি সুতার মিলের যাত্রা শুরু হয়।

২০১৪ সালে রাজধানীর গুলশান-১ এ পরিবেশ বান্ধব ১৪ তলা ও ৩টি বেজমেন্ট বিশিষ্ট “সায়হাম টাওয়ার” ভবন নির্মাণ শুরু হয় যা ২০১৭ সালে সম্পন্ন হয়। পরিবেশ বান্ধব এ টাওয়ারটি ‘কোর এন্ড শেল’ ক্যাটাগরিতে ‘লীড এনসি ভিথ্রি” প্লাটিনাম’ স্বীকৃতি দিয়েছে ইউএসজিবিসি, যা বাংলাদেশে প্রথম।

ব্যাংকের অর্থায়নে ফয়সল স্পিনিং মিলস্ লিঃ (ইউনিট-২) ২০১৮ সালে ৪৩ হাজার ২শ স্পিন্ডেল বিশিষ্ট নতুন সুতার মিল সায়হাম গ্রুপে সংযোজন হয়। ২০১৯ সালে সায়হাম স্যুট নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠানের যাত্রা শুরু করে সায়হাম গ্রুপ। বর্তমানে এই গ্রুপে নারী পুরুষ মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়েছে। যার প্রায় ৭৫% স্থানীয়।

প্রতিষ্টাকালীন অনুন্নত যোগায়োগ ব্যবস্থা সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিল্পস্থাপন ঝুকিপূর্ণ জেনেও গ্রুপের কর্ণদার সৈয়দ মোঃ ফয়সল সহ তাঁর পরিবার শিল্পস্থাপনে অনগ্রসর নয়াপাড়া সহ হবিগঞ্জ জেলাকে এগিয়ে নিতে সব কয়টি মিল হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলার নয়াপাড়ায় স্থাপন করেন।

তাদের এ প্রচেষ্টায় বর্তমানে এই অঞ্চলটি শিল্প নগরীতে পরিনত হয়েছে। এলাকায় শিল্পস্থাপনের পথপ্রদর্শক সৈয়দ মোঃ ফয়সলের প্রতিষ্টিত সায়হাম গ্রুপকে অনুসরন করে বর্তমানে মাধবপুর সহ এ অঞ্চলে দেশের বৃহৎ কর্পোরেট শিল্পগ্রুপ গুলো শিল্প প্রতিষ্টান গড়ে তুলেছে।

সমাপনী শিক্ষার্থীদের শেষ মুহুর্তে করনীয়

সৈয়দ মোঃ ফয়সল জন্মলগ্ন থেকে সায়হাম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসাবে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছেন, বর্তমানে তিনি সায়হাম গ্রুপের চেয়ারম্যান।

আগামীতে সায়হাম গ্রুপ ডেনিমস্, ফার্মাসিউটিক্যালস্ খাতে বিনিয়োগের মাধ্যমে এলাকার বেকারত্ব হ্রাস, কর্মসংস্থান সৃষ্টি সহ সর্বোপরি আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা অব্যাহত রাখবে।

বর্তমানে এই গ্রুপ রপ্তানির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন তথা সরকারী কোষাগারে কর প্রদানের মাধ্যমে দেশের আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নে বিরাট অবদান রাখছে।

এলাকায় শিল্পস্থাপনের পাশাপাশি আর্থসামাজিক অবস্থার উন্নয়নেও ব্যাপক ভূমিকা রাখছে সায়হাম গ্রুপ। শিক্ষা বিস্তারে কলেজ, হাইস্কুল, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, এতিমখানা, মসজিদ ও দৃষ্ঠিনন্দন ঈদগাঁ স্থাপন সহ শিক্ষার মানোন্নয়নে আর্থিক অনুদান প্রদান করে আসছে সায়হাম গ্রুপ।

এলাকার কৃতি, দ্ররিদ্র ও মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে শিক্ষাবৃত্তি প্রদান এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য। প্রতি বছর সায়হাম গ্রুপ বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা শিবির করে অসংখ্য মানুষের সেবা করে আসছে। সায়হাম গ্রুপের চক্ষু শিবিরে হবিগঞ্জ জেলা ছাড়াও পার্শ¦বর্তী ব্রাহ্মনবাড়িয়া জেলার লোকজনও সেবা নিতে আসে।

প্রতি বছর মাধবপুর উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়নে শীতার্থ মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করে আসছে সায়হাম গ্রুপ। এছাড়া প্রতি রমজান মাসে মাধবপুর উপজেলার অধিকাংশ মসজিদে মাসব্যাপী ইফতারির আয়োজন ছাড়াও দরিদ্র কয়েক সহস্রাধিক মানুষের মধ্যে সারা মাসের ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা সহ নানা ধরনের অবকাঠামোগত উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার পাশাপাশি ভবিষ্যতে এর কার্যক্রম আরো বিস্তৃত করার কথা জানান গ্রুপের উদ্যোক্তারা।


Head Office:
Saiham Tower
House # 34, Road # 136, Block # SE (C )-1
Gulshan-1, Dhaka-1212

Phone : +88-02-222263323, +88-02-222262284, +88-02-222287441

Fax : +88-02-222294607

E-Mail : share@saiham.com

Manufacturing Complex:
Noyapara, Saiham Nagar, Madhabpur, Habiganj

1 টি মন্তব্য:

Md.Kamrul Hasan বলেছেন...

আমি সায়হাম চাকরী করতে চাই সায়হাম অনেক শুনাম সব দিকে।