জেনে নিন গ্রীন ফেক্টরি সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর | Garments Green Factory - Textile Lab | Textile Learning Blog
পরিবেশ রক্ষায় সবুজ কারখানার (গ্রীন ফেক্টরির) ভূমিকা কতটুকু ?
উত্তরঃ
পরিবেশ রক্ষার জন্যই এ ধরনের কারখানা তৈরির উদ্যোগ। শুধু মুনাফাভিত্তিক ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে বের হয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করেই সবুজ কারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে। কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমিয়ে বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরির কোনো বিকল্প নেই।

একটি সবুজ কারখানা নির্মাণে কী পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়?

উত্তরঃ
কারখানার ব্যাপ্তি ও আয়তনের ওপর নির্ভর করে বিনিয়োগের পরিমাণ। তবে মোটা দাগে বলা যায় যে, একটি সবুজ বা পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণ করতে সাধারণ মানের কারখানার তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি অর্থ খরচ করতে হয়। তবে প্লাটিনাম বা উন্নতমানের কারখানা তৈরিতে অনেক সময় ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- বৈশ্বিক অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক খাতের জন্য এটি একটি টেকসই দৃষ্টিভঙ্গি, যা বাংলাদেশের পোশাক খাতকে প্রশংসনীয় স্থানে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে।

সবুজ কারখানা স্থাপন করলে রপ্তানিতে কোনো সুবিধা পাওয়া যায়?

উত্তরঃ 
সারাবিশ্বই এখন পরিবেশ রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা সবাই জানি, বস্ত্র বা পোশাক খাত বিশ্বে অন্যতম পরিবেশ দূষণকারী শিল্প। এ ক্ষেত্রে ক্রেতার সবসময়ই আগ্রহ থাকে যতটুকু সম্ভব সাসটেইনেবল সোর্সিং করার। তাই সাধারণ মানের কারখানার চেয়ে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া বা পণ্যের প্রতি তাদের আগ্রহ একটু বেশিই থাকে। কিন্তু ক্রেতারা তাদের ওপর সামাজিক দায়বদ্ধতা বা চাপের কারণে পরিবেশবান্ধব পোশাক সোর্সিং করতে যতটা আগ্রহ দেখায়, ন্যায্য দাম দেওয়ার ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই অনাগ্রহ দেখায়। এর ভেতরেও সাধারণ কারখানার তুলনায় দর-কষাকষিতে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা যায়।

শ্রমিকদের জন্য কী সুবিধা রয়েছে এ ধরনের কারখানায়?

উত্তরঃ
গঠন প্রক্রিয়ার কারণেই সবুজ কারখানার শ্রমিকরা উন্নত স্বাস্থ্যসম্মত নির্মল পরিবেশে কাজ করে। এখানে কার্বন ডাই-অক্সাইডের সর্বোচ্চ পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে শ্রমিকদের মাঝে ক্লান্তিভাব তুলনামূলকভাবে কম হয়। চারদিকে খোলামেলা ও গাছপালা থাকায় প্রয়োজনে সবুজের দিকে তাকিয়েও তারা চোখের ক্লান্তি দূর করতে পারে। গাছের জন্য পরিবেশও কিছুটা ভালো থাকে। তা ছাড়া লাইটিং, বাতাস সরবরাহসহ অন্যান্য কর্মপরিবেশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হওয়ায় সবসময় প্রশান্তিদায়ক কর্মপরিবেশ বজায় থাকে।

✅  কারখানা স্থাপনে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় কিনা?

উত্তরঃ
মূলধন ব্যয়ের উচ্চহার এবং বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে অনেক সময় সবুজ কারখানা নির্মাণ করা ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে লাভজনক হয় না। এ ছাড়া এসব কারখানা তৈরিতে যেসব বিশেষ ধরনের যন্ত্রপাতি বা উপাদান প্রয়োজন হয়, তা অনেকাংশেই বাংলাদেশে অনুপস্থিত। সরকারের নীতিতে সবুজ কারখানা তৈরিতে এসব যন্ত্রপাতিতে বিশেষ ছাড় না থাকায় বেশি শুল্ক্ক দিয়ে আমদানি করতে হয়। শেষে দেখা যায়, পরিবেশবান্ধব উপাদানে বেশি খরচ হচ্ছে। এসব পণ্যের শুল্ক্ক আরও কম হওয়া দরকার ছিল।

সরকারের কী ধরনের নীতি সহায়তা দরকার?

উত্তরঃ 
সরকারের উচিত সাধারণ শিল্পের সুদহার থেকে অন্তত চার শতাংশ কমে পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরিতে মূলধন সরবরাহ করা এবং দেশের সব ব্যাংক যেন এই সবুজ তহবিল সহজে বিতরণ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করা। বর্তমানে বেশিরভাগ ব্যাংকই এই ঋণ দিতে আগ্রহী নয়। সেই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বিদ্যুৎ-গ্যাসের কর্তৃপক্ষসহ সরকারের অন্য দপ্তরগুলোরও উচিত ভবিষ্যতের স্বার্থে পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরিতে সহায়ক নীতি তৈরি করা।

লিড সনদের সুবিধা কি? 

উত্তরঃ 
লিড সনদের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবেশ সুরক্ষা এবং সবুজ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সাশ্রয়ী উৎপাদন। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদেশি বড় ব্র্যান্ড এবং ক্রেতার আস্থা বাড়ে এতে। ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষিতে এগিয়ে থাকা যায়। দেশের এবং পোশাক খাতেরও ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়ে। এসব কারখানায় সাধারণত দুর্ঘটনা হয় না। প্রাকৃতিক আলো-বাতাসেই চলে উৎপাদন। কারখানার ভেতর সার্বক্ষণিক সহনীয় তাপমাত্রা থাকে। কাজের পরিবেশ থাকে নিরাপদ, আনন্দদায়ক ও স্বাস্থ্যসম্মত। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের সুবিধায় পানি, বিদ্যুৎ কম খরচ হয়। বর্জ্য নিঃসরণ কম হওয়ায় এর শোধন প্রক্রিয়ার ব্যয়ও কম হয়। সর্বোপরি দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদন ব্যয় কমে আসে। এ ছাড়া সবুজ কারখানায় উৎপাদিত পোশাকের গায়ে একটি গ্রিন ট্যাগ থাকে। সচেতন ভোক্তাদের কাছে এর উচ্চ কদর রয়েছে।

লিড সনদ পাওয়ার প্রক্রিয়া কি? 

উত্তরঃ 
কোনো উদ্যোক্তা লিড মানের কারখানা করতে চাইলে প্রথমে ইউএসজিবিতে নিবন্ধন নিতে হয়। তারপর ইউএসজিবি একটি নির্মাণ কোড দেয়। এই কোডেই স্থাপত্য, প্রকৌশলসহ সব নকশা থাকে। নির্মাণসামগ্রীর তালিকা, মান এবং কোন উৎস থেকে কোন সামগ্রী সংগ্রহ করতে হবে- সেটিও থাকে। ইউএসজিবির নিবন্ধিত উপদেষ্টার নিবিড় তত্ত্বাবধানে নির্মাণকাজ এগোতে থাকে। সময়ে সময়ে তদারকি করে ইউএসজিবি পরিদর্শক দল। অর্থাৎ অনেক ব্যয় এবং কাঠখড় পুড়িয়েই অবশেষে মেলে লিড সনদ।

ইউএসজিবিসির ওয়েবসাইট ঘেঁটে জানা যায়, সাধারণ একটি কারখানার তুলনায় লিড সনদ পাওয়া কারখানার জ্বালানি সাশ্রয় ২৪ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ। পানির ব্যবহার কম হয় ৪০ শতাংশ। বর্জ্য উৎপাদন কম হয় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত। রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কম হয় ১৩ শতাংশ। একটি রেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে কারখানার নকশা, নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ পর্যবেক্ষণের পর লিড সনদ দেওয়া হয়। ছোট বিষয়কেও গুরুত্ব দিয়ে বিশ্নেষণ করা হয়। যেমন, শুধু কারখানার অবস্থান সূচকেই ২৬ রেটিং পয়েন্ট বিবেচনা করা হয়। স্থানীয়দের সহজ যাতায়াত, পরিবহন ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক আলো-বাতাস ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায়ও পয়েন্ট রয়েছে।

এরকম ১১০ পয়েন্টের মধ্যে ৮০ পয়েন্টের ওপরের কারখানাকে প্লাটিনাম সনদ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে প্লাটিনাম সনদ পাওয়া কারখানা ৪৩টি। ১০০ পয়েন্টও পেয়েছে একটি কারখানা। তবে ব্যবসায়িক কৌশল হিসেবে কারখানাটির নাম প্রকাশ করা হয়নি। রেটিং পয়েন্ট ৬০ হলে গোল্ড ক্যাটাগরির সনদ দেয় ইউএসজিবি। এ ক্যাটাগরিতে ৭৮ পয়েন্ট পেয়েছে দেশের একটি কারখানা। তবে কারখানাটির নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। দেশে গোল্ড ক্যাটাগরির কারখানার সংখ্যা ৯২টি। সিলভার ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে রেটিং পয়েন্ট ৫০ থেকে ৫৯ এর মধ্যে। দেশে এই মানের কারখানা ৯টি। এ ছাড়া শুধু লিড সনদ পাওয়া কারখানার সংখ্যা চারটি।

পোশাক শিল্প ছাড়া অন্য খাতের জন্য কি লিড সার্টিফিকেট গ্রহনযোগ্য? 

উত্তরঃ
পোশাক খাতের বাইরে চামড়াজাত পণ্য এবং বৈদ্যুতিক ফ্যান তৈরির দুটি কারখানা লিড সনদ পেয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গ্রিন অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছে এপেক্স ফুটওয়্যার। পোশাকসহ ছয়টি ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। অন্য খাতগুলো হচ্ছে- প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, চা শিল্প, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক ও ওষুধ শিল্প। অর্থাৎ পোশাকের বাইরে অন্যান্য খাতেও সবুজ কারখানা গড়ে উঠছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক ড. আবদুল মোতালিব সমকালকে বলেন, পোশাকের বাইরে অন্যান্য খাতেও সবুজের এই বিপ্লব ছড়িয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে যেসব শিল্পে বিভিন্ন রাসায়নিকের ব্যবহার আছে, সেসব শিল্পকে সবুজ প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প, ওষুধ, প্লাস্টিক শিল্পের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

সবুজ কারখানা নির্মাণে কি কি সুবিধা দিচ্ছে সরকার ?

উত্তরঃ
পরিবেশ রক্ষায় সবুজ কারখানা নির্মাণে উৎসাহিত করছে সরকার। চলতি অর্থবছর পোশাক খাতে করপোরেট কর ১২ শতাংশ। এর মধ্যে সুবজ কারখানা হিসেবে সনদপ্রাপ্ত কারখানার জন্য এ হার ১০ শতাংশ। স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাস্টেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোর্শেদ মিল্লাত সমকালকে বলেন, সবুজ প্রযুক্তি শিল্পকারখানায় অর্থায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪০০ কোটি টাকার একটি তহিবল আছে। স্বল্প সুদে এই তহবিল থেকে ঋণ পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। উদ্যোক্তাদের যদি আরও অর্থের প্রয়োজন হয়, সে জন্য ২০ কোটি ডলারের সংস্থান রাখা আছে। ঋণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ করা হয়েছে। তবে এত সুবিধা দেওয়ার পরও ৩০ শতাংশ ঋণ অবণ্টিত আছে। কারণ, অনেক উদ্যোক্তা হয়তো এই সুবিধা সম্পর্কে জানেন না।

তথ্যসূত্রঃ সমকাল পত্রিকা

জেনে নিন গ্রীন ফেক্টরি সংক্রান্ত কিছু প্রশ্নের উত্তর | Garments Green Factory

পরিবেশ রক্ষায় সবুজ কারখানার (গ্রীন ফেক্টরির) ভূমিকা কতটুকু ?
উত্তরঃ
পরিবেশ রক্ষার জন্যই এ ধরনের কারখানা তৈরির উদ্যোগ। শুধু মুনাফাভিত্তিক ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে বের হয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কথা চিন্তা করেই সবুজ কারখানা নির্মাণ করা হচ্ছে। কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমিয়ে বাসযোগ্য পৃথিবী গড়ার লক্ষ্যে পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরির কোনো বিকল্প নেই।

একটি সবুজ কারখানা নির্মাণে কী পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করতে হয়?

উত্তরঃ
কারখানার ব্যাপ্তি ও আয়তনের ওপর নির্ভর করে বিনিয়োগের পরিমাণ। তবে মোটা দাগে বলা যায় যে, একটি সবুজ বা পরিবেশবান্ধব কারখানা নির্মাণ করতে সাধারণ মানের কারখানার তুলনায় প্রায় ২০ শতাংশ বেশি অর্থ খরচ করতে হয়। তবে প্লাটিনাম বা উন্নতমানের কারখানা তৈরিতে অনেক সময় ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ব্যয় বৃদ্ধি পেতে পারে। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- বৈশ্বিক অর্থনীতি ও ব্যবসায়িক খাতের জন্য এটি একটি টেকসই দৃষ্টিভঙ্গি, যা বাংলাদেশের পোশাক খাতকে প্রশংসনীয় স্থানে উন্নীত করতে সক্ষম হয়েছে।

সবুজ কারখানা স্থাপন করলে রপ্তানিতে কোনো সুবিধা পাওয়া যায়?

উত্তরঃ 
সারাবিশ্বই এখন পরিবেশ রক্ষার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে। আমরা সবাই জানি, বস্ত্র বা পোশাক খাত বিশ্বে অন্যতম পরিবেশ দূষণকারী শিল্প। এ ক্ষেত্রে ক্রেতার সবসময়ই আগ্রহ থাকে যতটুকু সম্ভব সাসটেইনেবল সোর্সিং করার। তাই সাধারণ মানের কারখানার চেয়ে পরিবেশবান্ধব উৎপাদন প্রক্রিয়া বা পণ্যের প্রতি তাদের আগ্রহ একটু বেশিই থাকে। কিন্তু ক্রেতারা তাদের ওপর সামাজিক দায়বদ্ধতা বা চাপের কারণে পরিবেশবান্ধব পোশাক সোর্সিং করতে যতটা আগ্রহ দেখায়, ন্যায্য দাম দেওয়ার ক্ষেত্রে ঠিক ততটাই অনাগ্রহ দেখায়। এর ভেতরেও সাধারণ কারখানার তুলনায় দর-কষাকষিতে কিছুটা সুবিধাজনক অবস্থায় থাকা যায়।

শ্রমিকদের জন্য কী সুবিধা রয়েছে এ ধরনের কারখানায়?

উত্তরঃ
গঠন প্রক্রিয়ার কারণেই সবুজ কারখানার শ্রমিকরা উন্নত স্বাস্থ্যসম্মত নির্মল পরিবেশে কাজ করে। এখানে কার্বন ডাই-অক্সাইডের সর্বোচ্চ পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করা হয়। ফলে শ্রমিকদের মাঝে ক্লান্তিভাব তুলনামূলকভাবে কম হয়। চারদিকে খোলামেলা ও গাছপালা থাকায় প্রয়োজনে সবুজের দিকে তাকিয়েও তারা চোখের ক্লান্তি দূর করতে পারে। গাছের জন্য পরিবেশও কিছুটা ভালো থাকে। তা ছাড়া লাইটিং, বাতাস সরবরাহসহ অন্যান্য কর্মপরিবেশ আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী হওয়ায় সবসময় প্রশান্তিদায়ক কর্মপরিবেশ বজায় থাকে।

✅  কারখানা স্থাপনে কোনো সমস্যায় পড়তে হয় কিনা?

উত্তরঃ
মূলধন ব্যয়ের উচ্চহার এবং বিনিয়োগের পরিমাণ বেশি হওয়ার কারণে অনেক সময় সবুজ কারখানা নির্মাণ করা ব্যবসায়িক দৃষ্টিকোণ থেকে লাভজনক হয় না। এ ছাড়া এসব কারখানা তৈরিতে যেসব বিশেষ ধরনের যন্ত্রপাতি বা উপাদান প্রয়োজন হয়, তা অনেকাংশেই বাংলাদেশে অনুপস্থিত। সরকারের নীতিতে সবুজ কারখানা তৈরিতে এসব যন্ত্রপাতিতে বিশেষ ছাড় না থাকায় বেশি শুল্ক্ক দিয়ে আমদানি করতে হয়। শেষে দেখা যায়, পরিবেশবান্ধব উপাদানে বেশি খরচ হচ্ছে। এসব পণ্যের শুল্ক্ক আরও কম হওয়া দরকার ছিল।

সরকারের কী ধরনের নীতি সহায়তা দরকার?

উত্তরঃ 
সরকারের উচিত সাধারণ শিল্পের সুদহার থেকে অন্তত চার শতাংশ কমে পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরিতে মূলধন সরবরাহ করা এবং দেশের সব ব্যাংক যেন এই সবুজ তহবিল সহজে বিতরণ করতে পারে, সে ব্যবস্থা করা। বর্তমানে বেশিরভাগ ব্যাংকই এই ঋণ দিতে আগ্রহী নয়। সেই সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং বিদ্যুৎ-গ্যাসের কর্তৃপক্ষসহ সরকারের অন্য দপ্তরগুলোরও উচিত ভবিষ্যতের স্বার্থে পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরিতে সহায়ক নীতি তৈরি করা।

লিড সনদের সুবিধা কি? 

উত্তরঃ 
লিড সনদের উদ্দেশ্য হচ্ছে পরিবেশ সুরক্ষা এবং সবুজ প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে সাশ্রয়ী উৎপাদন। উদ্যোক্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বিদেশি বড় ব্র্যান্ড এবং ক্রেতার আস্থা বাড়ে এতে। ক্রেতাদের সঙ্গে দর কষাকষিতে এগিয়ে থাকা যায়। দেশের এবং পোশাক খাতেরও ব্র্যান্ড ইমেজ বাড়ে। এসব কারখানায় সাধারণত দুর্ঘটনা হয় না। প্রাকৃতিক আলো-বাতাসেই চলে উৎপাদন। কারখানার ভেতর সার্বক্ষণিক সহনীয় তাপমাত্রা থাকে। কাজের পরিবেশ থাকে নিরাপদ, আনন্দদায়ক ও স্বাস্থ্যসম্মত। নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের সুবিধায় পানি, বিদ্যুৎ কম খরচ হয়। বর্জ্য নিঃসরণ কম হওয়ায় এর শোধন প্রক্রিয়ার ব্যয়ও কম হয়। সর্বোপরি দীর্ঘমেয়াদে উৎপাদন ব্যয় কমে আসে। এ ছাড়া সবুজ কারখানায় উৎপাদিত পোশাকের গায়ে একটি গ্রিন ট্যাগ থাকে। সচেতন ভোক্তাদের কাছে এর উচ্চ কদর রয়েছে।

লিড সনদ পাওয়ার প্রক্রিয়া কি? 

উত্তরঃ 
কোনো উদ্যোক্তা লিড মানের কারখানা করতে চাইলে প্রথমে ইউএসজিবিতে নিবন্ধন নিতে হয়। তারপর ইউএসজিবি একটি নির্মাণ কোড দেয়। এই কোডেই স্থাপত্য, প্রকৌশলসহ সব নকশা থাকে। নির্মাণসামগ্রীর তালিকা, মান এবং কোন উৎস থেকে কোন সামগ্রী সংগ্রহ করতে হবে- সেটিও থাকে। ইউএসজিবির নিবন্ধিত উপদেষ্টার নিবিড় তত্ত্বাবধানে নির্মাণকাজ এগোতে থাকে। সময়ে সময়ে তদারকি করে ইউএসজিবি পরিদর্শক দল। অর্থাৎ অনেক ব্যয় এবং কাঠখড় পুড়িয়েই অবশেষে মেলে লিড সনদ।

ইউএসজিবিসির ওয়েবসাইট ঘেঁটে জানা যায়, সাধারণ একটি কারখানার তুলনায় লিড সনদ পাওয়া কারখানার জ্বালানি সাশ্রয় ২৪ থেকে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ। পানির ব্যবহার কম হয় ৪০ শতাংশ। বর্জ্য উৎপাদন কম হয় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত। রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় কম হয় ১৩ শতাংশ। একটি রেটিং সিস্টেমের মাধ্যমে কারখানার নকশা, নির্মাণ, পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ পর্যবেক্ষণের পর লিড সনদ দেওয়া হয়। ছোট বিষয়কেও গুরুত্ব দিয়ে বিশ্নেষণ করা হয়। যেমন, শুধু কারখানার অবস্থান সূচকেই ২৬ রেটিং পয়েন্ট বিবেচনা করা হয়। স্থানীয়দের সহজ যাতায়াত, পরিবহন ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক আলো-বাতাস ও জীববৈচিত্র্য রক্ষায়ও পয়েন্ট রয়েছে।

এরকম ১১০ পয়েন্টের মধ্যে ৮০ পয়েন্টের ওপরের কারখানাকে প্লাটিনাম সনদ দেওয়া হয়। বাংলাদেশে প্লাটিনাম সনদ পাওয়া কারখানা ৪৩টি। ১০০ পয়েন্টও পেয়েছে একটি কারখানা। তবে ব্যবসায়িক কৌশল হিসেবে কারখানাটির নাম প্রকাশ করা হয়নি। রেটিং পয়েন্ট ৬০ হলে গোল্ড ক্যাটাগরির সনদ দেয় ইউএসজিবি। এ ক্যাটাগরিতে ৭৮ পয়েন্ট পেয়েছে দেশের একটি কারখানা। তবে কারখানাটির নাম প্রকাশ করা হচ্ছে না। দেশে গোল্ড ক্যাটাগরির কারখানার সংখ্যা ৯২টি। সিলভার ক্যাটাগরির ক্ষেত্রে রেটিং পয়েন্ট ৫০ থেকে ৫৯ এর মধ্যে। দেশে এই মানের কারখানা ৯টি। এ ছাড়া শুধু লিড সনদ পাওয়া কারখানার সংখ্যা চারটি।

পোশাক শিল্প ছাড়া অন্য খাতের জন্য কি লিড সার্টিফিকেট গ্রহনযোগ্য? 

উত্তরঃ
পোশাক খাতের বাইরে চামড়াজাত পণ্য এবং বৈদ্যুতিক ফ্যান তৈরির দুটি কারখানা লিড সনদ পেয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গ্রিন অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনীত হয়েছে এপেক্স ফুটওয়্যার। পোশাকসহ ছয়টি ক্যাটাগরিতে এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। অন্য খাতগুলো হচ্ছে- প্রক্রিয়াজাত খাদ্য, চা শিল্প, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক ও ওষুধ শিল্প। অর্থাৎ পোশাকের বাইরে অন্যান্য খাতেও সবুজ কারখানা গড়ে উঠছে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব লেদার ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির অধ্যাপক ড. আবদুল মোতালিব সমকালকে বলেন, পোশাকের বাইরে অন্যান্য খাতেও সবুজের এই বিপ্লব ছড়িয়ে দিতে হবে। বিশেষ করে যেসব শিল্পে বিভিন্ন রাসায়নিকের ব্যবহার আছে, সেসব শিল্পকে সবুজ প্রযুক্তি ব্যবহারে গুরুত্ব দিতে হবে। এ ক্ষেত্রে চামড়া ও চামড়াজাত শিল্প, ওষুধ, প্লাস্টিক শিল্পের কথা উল্লেখ করেন তিনি।

সবুজ কারখানা নির্মাণে কি কি সুবিধা দিচ্ছে সরকার ?

উত্তরঃ
পরিবেশ রক্ষায় সবুজ কারখানা নির্মাণে উৎসাহিত করছে সরকার। চলতি অর্থবছর পোশাক খাতে করপোরেট কর ১২ শতাংশ। এর মধ্যে সুবজ কারখানা হিসেবে সনদপ্রাপ্ত কারখানার জন্য এ হার ১০ শতাংশ। স্বল্প সুদে ঋণ সুবিধাও দেওয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাস্টেইনেবল ফাইন্যান্স বিভাগের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার মোর্শেদ মিল্লাত সমকালকে বলেন, সবুজ প্রযুক্তি শিল্পকারখানায় অর্থায়নে বাংলাদেশ ব্যাংকের ৪০০ কোটি টাকার একটি তহিবল আছে। স্বল্প সুদে এই তহবিল থেকে ঋণ পাচ্ছেন উদ্যোক্তারা। উদ্যোক্তাদের যদি আরও অর্থের প্রয়োজন হয়, সে জন্য ২০ কোটি ডলারের সংস্থান রাখা আছে। ঋণ প্রক্রিয়া অত্যন্ত সহজ করা হয়েছে। তবে এত সুবিধা দেওয়ার পরও ৩০ শতাংশ ঋণ অবণ্টিত আছে। কারণ, অনেক উদ্যোক্তা হয়তো এই সুবিধা সম্পর্কে জানেন না।

তথ্যসূত্রঃ সমকাল পত্রিকা

কোন মন্তব্য নেই: