ইসলাম গার্মেন্টস লিমিটেড
বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি গার্মেন্টশিল্প। আমাদের পোশাকশিল্পের সুখ্যাতি রয়েছে বিশ্বের সব দেশে। দেশের বেকার সমস্যার সমাধান, কর্মসংস্থান ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এ শিল্পের অবদান অতুলনীয়। বিশেষ করে ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প গড়ে ওঠায় প্রতিযোগিতামূলক বাজারে বাংলাদেশের অবস্থান ওপরের দিকে। এ অবস্থান তৈরির পেছনে ইসলাম গার্মেন্টস লিমিটেড রয়েছে প্রথম সারিতে।
ইসলাম গার্মেন্টস লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৮৫ সালে। ১৯৮৬ সালে ১০০টি মেশিন নিয়ে এর যাত্রা শুরু। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে উইভিং, নিটিং, ডায়িং, ওভেন ও নিট ফ্যাব্রিকস ফিনিশিংসহ অ্যাপারেল পণ্য প্রস্তুত করে আসছে। গুণগত দিকটি বজায় রেখে উন্নতমানের পণ্য সঠিক সময়ে ক্রেতার কাছে সরবরাহ করা প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য। সহজ ভাষায়, পণ্যের মান নিশ্চিত করা ইসলাম গার্মেন্টস লিমিটেডের প্রধান উদ্দেশ্য।
বাংলাদেশের পোশাক খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে ইসলাম গার্মেন্টসের। সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন ধারণা উপহার দিচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। এখানে উদ্ভাবনী শক্তিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। একই সঙ্গে ক্রেতার সন্তুষ্টি অর্জনে চেষ্টার কোনো ত্রুটি নেই এখানে। সংগত কারণে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জার্মানি, নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়ামের মতো উন্নত দেশে রফতানি হয় তাদের পণ্য। বিখ্যাত ব্র্যান্ডগুলোর নাম দেখুন: ওয়ালমার্ট, অট্টো ভেরসেন্ড, ব্রেলেন, এম অ্যান্ড এস মোড, হে বে, জেলারস, জাস্টিন এলেন প্রভৃতি।
প্রতিষ্ঠানটির সার্বিক ব্যবস্থাপনা ঈর্ষণীয়। তিনজনের মালিকানায় গড়ে তোলা হয়েছে ইসলাম গার্মেন্টস। তারা হলেন এম শফিকুল ইসলাম, মো. আতিকুল ইসলাম ও হাসনাতারা ইসলাম। ইসলাম গার্মেন্টস প্রসঙ্গে অবধারিতভাবে চলে আসে মো. আতিকুল ইসলামের নাম। তিনি বিজিএমইএ, বিকেএমইএ ও বিটিএমএ’র সদস্য। দেশের পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারিং এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনে (বিজিএমইএ) সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। সিআইপির মর্যাদা পেয়েছেন বেশ কয়েকবার। কর্মীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।
উৎপাদনঃ
উইভিং ডিভিশন: প্রতিদিন ১৫ হাজার গজ কাপড় উৎপাদন করে
নিটিং ডিভিশন: প্রতিদিন চার হাজার কেজি
ইয়ার্ন ডায়িং: দুই হাজার কেজি প্রতিদিন
গার্মেন্ট: ওভেন গার্মেন্ট প্রতিদিন আট হাজার ৫০০ পিস টপস ও বটমস উৎপাদন করে
নিট গার্মেন্ট: ১৪ হাজার পিস কাপড়
উৎপাদন করে। এর মধ্যে রয়েছে টি-শার্ট, পোলো ও বটমস
ওভেন ডায়িং: ফ্যাব্রিক ডায়িং, প্রিন্টিং ও
ফিনিশিং ২০ হাজার গজ।
ওয়াশিংঃ
পোশাককে আরামদায়ক ও ফ্যাশনেবল করার চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে ইসলাম গার্মেন্টসের। পোশাকের ত্বক যেন কর্কশ না হয়, যেন ফোস্কা না পড়ে সেদিকে নজর দেওয়া হয়। পোশাককে যথাসম্ভব মসৃণ করার চেষ্টা করা হয়। একই সঙ্গে পোশাকটি যেন আগের নির্ধারিত মাপের তুলনায় ছোট কিংবা বড় না হয়ে যায়, সেদিকেও খেয়াল রাখা হয়। ইসলাম গার্মেন্টসে ওয়াশিংয়ের জন্য রয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি। এর মধ্যে রয়েছে ডায়িং মেশিন, হাইড্রো এক্সট্রাক্টর, গার্মেন্টস ড্রায়ার, বয়লার, স্যাম্পল ওয়াশিং মেশিন, ওয়াটার পাম্প প্রভৃতি। প্রসঙ্গত, ১৯৮৮ সালের আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে ওয়াশিং হতো না। তখনকার দিনে তৈরি পোশাককে হংকংয়ে পাঠানো হতো। ওয়াশিং শেষে ফিনিশিং ও প্যাকেজিংয়ের জন্য পুনরায় দেশে ফিরিয়ে আনা হতো।
যন্ত্রপাতিঃ
সর্বাধুনিক প্রযুক্তির মেশিন রয়েছে এখানে। ইসলাম গার্মেন্টসে সিঙ্গেল নিডল প্লেন মেশিন রয়েছে ৬৮০ সেট। ডাবল নিডল চেইন স্টিচ রয়েছে ৩০ সেট। ডাবল নিডল লক স্টিচ চার সেট। ওভারলক ফোর থ্রেড ৮৬ সেট। ফ্ল্যাট লক ৫০ সেট। কানসাই স্পেশাল ১০ সেট। ফিড অব দ্য আর্ম ১৬ সেট। বার ট্যাক ২৫ সেট। বাটন হোল ৩৩ সেট। বাটন স্টিচ ৩৭ সেট। ফিউজিং মেশিন এক সেট। মেটাল ডিটেক্টর দুই সেট। পিকট এজিং তিন সেট। ভেলক্রো অ্যাটাচমেন্ট দুই সেট।
অর্জনঃ
বেস্ট ভেন্ডর অ্যাওয়ার্ড (ওয়ালমার্ট): ২০০৩ থেকে ২০০৫ ও ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত সাতবার পুরস্কারটি অর্জন করেছে প্রতিষ্ঠানটি। সময়মতো পণ্য সরবরাহ, উন্নত মান, ডিজাইন প্রভৃতি বিবেচনায় প্রতিবছর পুরস্কার দিয়ে আসছে ওয়ালমার্ট।
পণ্যের ক্ষেত্রে উদ্ভাবনী ধারণা প্রবর্তনের পাশাপাশি করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতায়ও নতুনত্ব সৃষ্টি করেছেন ইসলাম গার্মেন্টসের কর্ণধার মো. আতিকুল ইসলাম। তার চেষ্টায় দেশে প্রথমবারের মতো ২০১০ সালে ‘গর্ব: গাও প্রাণ খুলে গাও’ নামে এক সঙ্গীত প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। তার প্রচেষ্টায় এমন আয়োজন সম্ভব করে বিজিএমইএ কর্তৃপক্ষ। এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থানের পোশাককর্মীরা।
রতন কুমার দাস
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন