রিয়াজউদ্দিন: বাংলাদেশের প্রথম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক | Reaz Garments - Textile Lab | Textile Learning Blog
রিয়াজউদ্দিন: বাংলাদেশের প্রথম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক | Reaz Garments  

১৯৭৮ সালের ২৮ জুলাই রিয়াজউদ্দিন ফরাসি ক্রেতা হল্যান্ডার ফ্রঁসের কাছে দশ হাজার শার্ট রপ্তানি করেন।
মোহাম্মদ রিয়াজউদ্দিন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম পথিকৃৎ। ছবি: সংগৃহীত
প্রথম মানুষ হিসেবে যে তিন ব্যক্তি সর্বপ্রথম চাঁদে নিজেদের পদচিহ্ন এঁকেছেন তাদের কথা আমাদের সকলেরই জানা।  অ্যাপোলো-১১ এর সেই তিন নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স ও এডউইন অলড্রিন কিন্তু তাদের ওয়ার্ল্ড গুডউইল ট্যুরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও এসেছিলেন। তারা নেমেছিলেন তেজগাঁও বিমানবন্দরে। 

সেদিন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই তিন নভোচারীর জন্য আয়োজন করা হয়েছিল এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। শত শত মানুষের উল্লাস ও চিৎকারের ভিড়ের মধ্যে সেদিন রিয়াজউদ্দিন নামের একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীও ছিলেন, যিনি নিজের দোকান 'রিয়াজ স্টোর' এ বানানো তিনটি শার্ট নিয়ে গিয়েছিলেন তিন নভোচারীকে শুভেচ্ছা জানাতে। 

সেদিন রিয়াজউদ্দিনের উপহার তারা গ্রহণ করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনজনের কাছ থেকে ধন্যবাদ ও প্রশংসামিশ্রিত একটি চিঠিও পান রিয়াজউদ্দিন।  

সেই বিশেষ দিনে বাকি সবাই যখন চাঁদে পা রাখা তিনজন নভোচারীকে প্রত্যক্ষ করার খুশি বুকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলো, তখন রিয়াজউদ্দিনের মনে ছিল অন্য চিন্তা। রিয়াজউদ্দিন স্বপ্ন দেখছিলেন নিজের ব্যবসাকে বৈদেশিক বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার। তিনি ভাবছিলেন যদি এই তিন আমেরিকান নভোচারী তার বানানো শার্টের প্রশংসা করতে পারেন তাহলে তা হয়তো অন্য পশ্চিমা নাগরিকদের কাছেও সমাদৃত হবে।   

১৯৭৮ সালের ২৮ জুলাই ফ্রান্সে ১০ হাজার রিয়াজ শার্ট রপ্তানি করার মধ্য দিয়ে রিয়াজউদ্দিনের স্বপ্ন পূরণের যাত্রা শুরু হয়। এভাবেই রিয়াজউদ্দিন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক হয়ে ওঠেন।   

রিয়াজউদ্দিন তার পারিবারিক গার্মেন্টস ব্যবসায়ে যোগ দেন ১৯৫৮ সালে। করাচি থেকে কাপড় ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র এনে তারা বিক্রি করতেন। দুই বছর পরে তিনি ও তার ভাতিজা মাইজুদ্দিন মিলে চকবাজারে 'রিয়াজ স্টোর' চালু করেন। তারা দেশীয় বাজারে পুরুষের শার্ট, নারীদের লেগিংস, তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি শুরু করেন। তৎকালীন উর্দু রোডে তাদের ফ্যাক্টরিতে সারাদিন আটটি সেলাই মেশিন চলতো অর্ডার পাওয়া কাপড় বানানোর কাজে। 

ফ্যাক্টরিতে কর্মরত নারীরা। ছবি: সংগৃহীত

রিয়াজ স্টোরে বিশেষ কিছু উন্নতমানের শার্ট তৈরি হতো যা বানানোর জন্য তিনি মারওয়াড়ি বণিকদের কাছ থেকে এক ধরণের জাপানি কাপড় সংগ্রহ করতেন। কয়েক বছরের মধ্যেই সারা দেশে রিয়াজ স্টোরের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোরসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক জেলায় তাদের ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। ভোক্তার চাহিদা মেটাতে সেলাই মেশিনের সংখ্যা ৮টি থেকে ২০টিতে বাড়ানো হয়। 

রিয়াজউদ্দিনের ছোট ছেলে সালাউদ্দিন জানালেন সেদিনের কথা, "তখন আমাদের এতটাই জনপ্রিয়তা ছিল যে সরকার আমার বাবাকে নিজের বানানো শার্ট নিয়ে তিন নভোচারির কাছে যেতে দিয়েছিল।" 

সালাউদ্দিন আরও জানালেন যে ষাটের দশকে একটি রিয়াজ শার্টের সর্বোচ্চ দাম ছিল ১০০ টাকা এবং সমাজের সবচেয়ে ধনী শ্রেণির লোকেরাই এই শার্ট পরতেন। সে সময়ে কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ছিল তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নাম। তিন নভোচারীর প্রশংসা পাওয়ার পর রিয়াজউদ্দিন বেশ কয়েকবার করাচিতে যান রিয়াজ শার্ট রপ্তানি করা যায় কিনা সে সুযোগ খুঁজে বের করতে।

কিন্তু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ তার পরিকল্পনাকে থামিয়ে দেয়। তখন চকবাজারের অন্যসব দোকানপাটের সঙ্গে সঙ্গে রিয়াজউদ্দিনের টেইলরিং শপ এবং ফ্যাক্টরিও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পুড়িয়ে দেয়। 

স্বাধীনতার পর রিয়াজউদ্দিন নতুন করে তার ব্যবসা শুরু করেন, ১৯৭৩ এ তিনি এর নাম দেন রিয়াজ গার্মেন্টস লিমিটেড এবং স্বাধীন বাংলার প্রথম তৈরি পোশাক কারখানা হিসেবে স্বীকৃতি পান। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রিয়াজউদ্দিন তখন ব্যাংকিং ও বাজারজাতকরণ শাখাটি পরিচালনা করতে শুরু করেন এবং কারখানা ও উৎপাদনের দায়িত্ব থাকে মাইজুদ্দিনের হাতে।  

এই নতুন আরম্ভের জন্য তারা বেছে নেন এক সৃজনশীল বিজ্ঞাপন। নিজেদের 'মেইড ইন বাংলাদেশ' থিমকে ছড়িয়ে দিতে রিয়াজ শার্ট একটি বাইসাইকেল রেসে অর্থায়ন করে। কলকাতার মোহনবাগান ক্লাবের খেলোয়াড়রা যখন বাংলাদেশে আসেন, তাদের রিয়াজ শার্ট উপহার দেওয়া হয়। মোহনবাগানের  জনপ্রিয় খেলোয়াড় চুনি গোস্বামির ছবি ও তার  প্রশংসাসম্বলিত একটি পোস্টার তখন সংবাদপত্রে ছাপা হয়। নায়করাজ রাজ্জাক হিসেবে পরিচিত কিংবদন্তি অভিনেতা আবদুর রাজ্জাককে রিয়াজ শার্টের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়।  

১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ও শিল্প মেলায় রিয়াজ শার্টের একটি প্যাভিলিয়ন দেয়া হয় এবং তা পরিদর্শকদের কাছে বেশ সমাদৃত হয়েছিল।  পরের বছর রিয়াজউদ্দিন ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশ(টিসিবি) এর কাছে রিয়াজ শার্ট রপ্তানি করার ব্যাপারে রাজি করাতে চেষ্টা করেন। বেশিরভাগ কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই নিরাশ হয়ে ফিরলেও টেএক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের সচিব ইদ্রিস তাকে আশার আলো দেখান। এরপর রিয়াজ শার্টের নমুনা ফ্রান্সে পাঠানো হয়। রিয়াজ পণ্যের উন্নত মান দেখে তারা কিনতে আগ্রহী হন।   

এর পরেই রিয়াজউদ্দিনকে উর্দু রোডে দেড় কাঠা জমির উপর তার ফ্যাক্টরি বর্ধিত করতে হয়। সেলাই মেশিনের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয় এবং তাকে আরও কর্মী নিতে হয়।   

১৯৭৭ সালে, স্বপ্নদ্রষ্টা এই ব্যবসায়ী সেলাইয়ের কাজে মেয়েদের নিয়োগের উদ্যোগ নেন। তার ছেলে সালাউদ্দিন বলেন, 'আমাদের এলাকায় প্রচুর বেকার নারী ছিল, আমার বাবা চাইছিলেন এসব নারীদের কোনো আয়রোজগারের উৎসের সঙ্গে যুক্ত করতে। শুরুতে বাবা খুব একটা ইতিবাচক সাড়া পেলেন না, পরিবারগুলোর তখন ভয় পাচ্ছিল যে তাদের  মেয়েদেরকে চাকরি করতে দিলে পরিবারের সুনাম নষ্ট হবে,' ছেলে সালাউদ্দিন জানালেন।

সামাজিক এই মতামতের মোকাবেলা করতেই রিয়াজউদ্দিন তার বড়মেয়ে ফাতেমা বেগমকে বুঝিয়েশুনিয়ে রাজি করালেন ফ্যাক্টরিতে কাজ করার জন্য। ফাতেমা তখন মাত্র ম্যাট্রিক পাশ করেছে, বাবার কথায় রাজি হয়ে গেলেন তিনি। মাসে ১০০ টাকা বেতন দেখে আশেপাশের মেয়েরাও আগ্রহী হয়ে উঠল। প্রথমে ৫ জন নারী রিয়াজ গার্মেন্টসে কর্মচারী হিসেবে যোগ দিলেন।  

২৮ জুলাই ১৯৭৮ সালে, রিয়াজউদ্দিন ১০ হাজার রিয়াজ শার্ট ফরাসি ক্রেতা হলান্ডার ফ্রঁসের কাছে রপ্তানী করলেন। শার্টের ওই চালানের ফরাসী মুদ্রায় দাম ছিল ১৩ মিলিয়ন ফ্রা, বাংলাদেশী টাকায় যা ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা। পরের মাসেই খবরের কাগজে রিয়াজউদ্দিনের ছবি ছাপা হল, এক বক্স রিয়াজ শার্ট উপহার দিচ্ছেন টিসিবির চেয়ারম্যান মুনির উজ জামানকে যা একইসঙ্গে তার এগিয়ে যাওয়ার স্মারকও। পরবর্তী সময়ে রিয়াজ গার্মেন্টস ৯ হাজার শার্টের জন্য পুর্নব্যবহারযোগ্য এলসি সুবিধা পেল।   

ওই একই বছর রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা দেখে শিল্পপতি নুরুল কাদের খান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার দাইয়ো কোম্পানির সঙ্গে মিলে চট্টগামের কালুরঘাটে প্রতিষ্ঠিত করলেন দেশ গার্মেন্টস, যা ছিল দেশের প্রথম শ্ভাতগ রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা। 

পরের দুই বছরে আরও তিনটি রপ্তানি অর্ডার পায় রিয়াজ  গার্মেন্টস- ৮০ হাজার, ৯০ হাজার ও ১ লক্ষ ১০ হাজার শার্টের অর্ডার। ফ্যাক্টরিতে চার লাইন সিঙ্গারের প্যাডেলসহ পায়ে চালিত মেশিন চালু করা হয়।   

সৃজনশীল বিজ্ঞাপন প্রচারে বিনিয়োগ করেন রিয়াজউদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

১৯৯৮ সালে গাজীপুরের বোর্ডবাজারে তৈরি হয় পাঁচ হাজার শার্ট তৈরির ক্ষমতাসম্পন্ন রিয়াজ এক্সপোর্ট অ্যাপারেল। আর চকবাজারের ফ্যাক্টরির উৎপাদন ক্ষমতা ছিল তিন হাজার।  রিয়াজের সঙ্গে তখন ২০০ জন স্থানীয় আর ক'জন দক্ষিণ কোরিয়ান ও শ্রীলঙ্কার টেকনিশিয়ান কর্মরত ছিল। 


২০০৮ সাল পর্যন্ত রিয়াজ শার্ট রপ্তানি হয়েছে বিশ্বের দশটিরও বেশি দেশে, যার মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড এবং জার্মানির মত দেশ। তাদের বার্ষিক রপ্তানি আয় গিয়ে দাঁড়ায় ৩০ কোটি টাকায়। 

সালাউদ্দিন জানালেন, "রিয়াজ গার্মেন্টস অনেক বেশি পরিমাণে স্কুলের ইউনিফর্ম বানিয়েছে, তাই আমরা ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে তেমন যুক্ত হতে পারিনি। বিখ্যাত ব্র্যান্ড জর্জের (যা পরে ওয়ালমার্ট কিনে নেয়) সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছিল। প্রতি মাসে আমরা দুই থেকে তিন লাখ পিস স্কুলের ইউনিফর্ম রপ্তানি করেছি।"

রিয়াজউদ্দিনের জন্ম ১৯৩৪ সালের ৩ অক্টোবর। তিনি মারা যান ২০০৫ সালের ৫ এপ্রিল। মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রী, দুই কন্যা ও চার পুত্র রেখে গেছেন। রিয়াজউদ্দিনের মৃত্যুর পর রিয়াজ গার্মেন্টস মাত্র তিন বছর টিকে ছিল। 

এর কারণ ব্যাখ্যা করলেন রিয়াজউদ্দিনের ছেলে সালাউদ্দিন, "আমাদের এক বায়ারের একটি ব্যর্থ প্রজেক্ট এবং দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের ওপর দশ কোটি টাকারও বেশি দায় এসে পড়ে। এই বোঝা ভালোমতোই চেপে বসে আমাদের উপর।" 

তাছাড়া তখনো পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যাপক ওঠানামা ছিল। রিয়াজ পরিবারের মনে হয়েছিল এই সময়ে সবাই যখন ব্যাংক থেকে বড় বড় ঋণ নিচ্ছে তখন তারা ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন না।   

"এমনকি জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাড়িতে এসে প্রয়োজনীয় সহায়তা করার আশ্বাস দিলেও আমাদের মা চাননি যে তার সন্তানরা ব্যাংক ঋণ ইত্যাদি নিয়ে সারাক্ষণ শঙ্কিত থাকুক", জানালেন সালাউদ্দিন। রিয়াজ গার্মেন্টস বন্ধের বিনিময়ে ঋণ শোধ হয়ে যায় তখন। 

নিজের  বংশধরদের রিয়াজউদ্দিন সবসময় পরামর্শ দিয়ে গেছেন ব্যাংকের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে, আয় বুঝে ব্যয় করতে এবং মেশিনের যত্ন নিতে ও কর্মীদের যত্ন নিতে। 

সালাউদ্দিন বললেন, "আমার বাবা ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ। তিনি নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে ফ্যাক্টরির প্রসার চাননি। তার খ্যাতির মধ্যে কোন দাগ নেই। তাই তার স্ত্রী চেয়েছিলেন সেটি যেন বজায় থাকে।" 
রিয়াজউদ্দিন তৃতীয় শ্রেণীর পরে আর পড়াশোনা করেননি, কিন্তু কেউ তাকে অশিক্ষিত বলতে পারবেনা। তিনি সবকিছুই  পড়তে পারতেন। স্মৃতি হাতড়ে সালাউদ্দিন বলেন যে তার বাবা নিজের জন্য প্রাইভেট শিক্ষক রেখেছিলেন ইংরেজি শিক্ষার জন্য। প্রতি রাতেই তাকে দেখা যেত হয় পড়ছেন নয়তো কিছু লিখছেন।    

তিনি একজন ভাল সংগঠকও ছিলেন। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশন রিয়াজউদ্দিনকে তাদের প্রথম বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছিল।  

রিয়াজউদ্দিন নিজের সব সন্তানকে নিজের ব্যবসায়ে যুক্ত করলেও বর্তমানে শুধুমাত্র সালাউদ্দিন সেই ধারা বজায় রেখেছেন। বর্তমানে সালাউদ্দিন এএসকে অ্যাপারেল অ্যান্ড টেক্সটাইলস সোর্সিং লিমিটেড নামে একটি বায়িং হাউজ চালান। তিনি 'বুনন' নামের একটি টেক্সটাইল বিষয়ক সংগঠন এরও পরামর্শদাতা। 

রিয়াজ গার্মেন্টস আজ আর নেই, কিন্তু এই পরিবারের কাছে এখনো তার লাইসেন্সটি রয়ে গেছে।

"যদি আল্লাহ চায়, আমি হয়তো আবারও কোনো একদিন রিয়াজ  শার্ট এর উৎপাদন শুরু করবো" বলে ইতি টানেন সালাউদ্দিন।

লেখাঃ
সাদিকুর রহমান

রিয়াজউদ্দিন: বাংলাদেশের প্রথম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক | Reaz Garments

রিয়াজউদ্দিন: বাংলাদেশের প্রথম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক | Reaz Garments  

১৯৭৮ সালের ২৮ জুলাই রিয়াজউদ্দিন ফরাসি ক্রেতা হল্যান্ডার ফ্রঁসের কাছে দশ হাজার শার্ট রপ্তানি করেন।
মোহাম্মদ রিয়াজউদ্দিন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতের অন্যতম পথিকৃৎ। ছবি: সংগৃহীত
প্রথম মানুষ হিসেবে যে তিন ব্যক্তি সর্বপ্রথম চাঁদে নিজেদের পদচিহ্ন এঁকেছেন তাদের কথা আমাদের সকলেরই জানা।  অ্যাপোলো-১১ এর সেই তিন নভোচারী নীল আর্মস্ট্রং, মাইকেল কলিন্স ও এডউইন অলড্রিন কিন্তু তাদের ওয়ার্ল্ড গুডউইল ট্যুরের অংশ হিসেবে বাংলাদেশেও এসেছিলেন। তারা নেমেছিলেন তেজগাঁও বিমানবন্দরে। 

সেদিন হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে এই তিন নভোচারীর জন্য আয়োজন করা হয়েছিল এক নাগরিক সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। শত শত মানুষের উল্লাস ও চিৎকারের ভিড়ের মধ্যে সেদিন রিয়াজউদ্দিন নামের একজন গার্মেন্টস ব্যবসায়ীও ছিলেন, যিনি নিজের দোকান 'রিয়াজ স্টোর' এ বানানো তিনটি শার্ট নিয়ে গিয়েছিলেন তিন নভোচারীকে শুভেচ্ছা জানাতে। 

সেদিন রিয়াজউদ্দিনের উপহার তারা গ্রহণ করেছিলেন এবং পরবর্তীতে তিনজনের কাছ থেকে ধন্যবাদ ও প্রশংসামিশ্রিত একটি চিঠিও পান রিয়াজউদ্দিন।  

সেই বিশেষ দিনে বাকি সবাই যখন চাঁদে পা রাখা তিনজন নভোচারীকে প্রত্যক্ষ করার খুশি বুকে নিয়ে বাড়ি ফিরছিলো, তখন রিয়াজউদ্দিনের মনে ছিল অন্য চিন্তা। রিয়াজউদ্দিন স্বপ্ন দেখছিলেন নিজের ব্যবসাকে বৈদেশিক বাজারে ছড়িয়ে দেওয়ার। তিনি ভাবছিলেন যদি এই তিন আমেরিকান নভোচারী তার বানানো শার্টের প্রশংসা করতে পারেন তাহলে তা হয়তো অন্য পশ্চিমা নাগরিকদের কাছেও সমাদৃত হবে।   

১৯৭৮ সালের ২৮ জুলাই ফ্রান্সে ১০ হাজার রিয়াজ শার্ট রপ্তানি করার মধ্য দিয়ে রিয়াজউদ্দিনের স্বপ্ন পূরণের যাত্রা শুরু হয়। এভাবেই রিয়াজউদ্দিন স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক হয়ে ওঠেন।   

রিয়াজউদ্দিন তার পারিবারিক গার্মেন্টস ব্যবসায়ে যোগ দেন ১৯৫৮ সালে। করাচি থেকে কাপড় ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র এনে তারা বিক্রি করতেন। দুই বছর পরে তিনি ও তার ভাতিজা মাইজুদ্দিন মিলে চকবাজারে 'রিয়াজ স্টোর' চালু করেন। তারা দেশীয় বাজারে পুরুষের শার্ট, নারীদের লেগিংস, তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য পণ্য বিক্রি শুরু করেন। তৎকালীন উর্দু রোডে তাদের ফ্যাক্টরিতে সারাদিন আটটি সেলাই মেশিন চলতো অর্ডার পাওয়া কাপড় বানানোর কাজে। 

ফ্যাক্টরিতে কর্মরত নারীরা। ছবি: সংগৃহীত

রিয়াজ স্টোরে বিশেষ কিছু উন্নতমানের শার্ট তৈরি হতো যা বানানোর জন্য তিনি মারওয়াড়ি বণিকদের কাছ থেকে এক ধরণের জাপানি কাপড় সংগ্রহ করতেন। কয়েক বছরের মধ্যেই সারা দেশে রিয়াজ স্টোরের সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। চট্টগ্রাম, সিলেট, যশোরসহ বিভিন্ন বাণিজ্যিক জেলায় তাদের ডিলার নিয়োগ দেয়া হয়। ভোক্তার চাহিদা মেটাতে সেলাই মেশিনের সংখ্যা ৮টি থেকে ২০টিতে বাড়ানো হয়। 

রিয়াজউদ্দিনের ছোট ছেলে সালাউদ্দিন জানালেন সেদিনের কথা, "তখন আমাদের এতটাই জনপ্রিয়তা ছিল যে সরকার আমার বাবাকে নিজের বানানো শার্ট নিয়ে তিন নভোচারির কাছে যেতে দিয়েছিল।" 

সালাউদ্দিন আরও জানালেন যে ষাটের দশকে একটি রিয়াজ শার্টের সর্বোচ্চ দাম ছিল ১০০ টাকা এবং সমাজের সবচেয়ে ধনী শ্রেণির লোকেরাই এই শার্ট পরতেন। সে সময়ে কোরিয়া, সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ড ছিল তৈরি পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য নাম। তিন নভোচারীর প্রশংসা পাওয়ার পর রিয়াজউদ্দিন বেশ কয়েকবার করাচিতে যান রিয়াজ শার্ট রপ্তানি করা যায় কিনা সে সুযোগ খুঁজে বের করতে।

কিন্তু ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ তার পরিকল্পনাকে থামিয়ে দেয়। তখন চকবাজারের অন্যসব দোকানপাটের সঙ্গে সঙ্গে রিয়াজউদ্দিনের টেইলরিং শপ এবং ফ্যাক্টরিও পাকিস্তানি সেনাবাহিনী পুড়িয়ে দেয়। 

স্বাধীনতার পর রিয়াজউদ্দিন নতুন করে তার ব্যবসা শুরু করেন, ১৯৭৩ এ তিনি এর নাম দেন রিয়াজ গার্মেন্টস লিমিটেড এবং স্বাধীন বাংলার প্রথম তৈরি পোশাক কারখানা হিসেবে স্বীকৃতি পান। প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে রিয়াজউদ্দিন তখন ব্যাংকিং ও বাজারজাতকরণ শাখাটি পরিচালনা করতে শুরু করেন এবং কারখানা ও উৎপাদনের দায়িত্ব থাকে মাইজুদ্দিনের হাতে।  

এই নতুন আরম্ভের জন্য তারা বেছে নেন এক সৃজনশীল বিজ্ঞাপন। নিজেদের 'মেইড ইন বাংলাদেশ' থিমকে ছড়িয়ে দিতে রিয়াজ শার্ট একটি বাইসাইকেল রেসে অর্থায়ন করে। কলকাতার মোহনবাগান ক্লাবের খেলোয়াড়রা যখন বাংলাদেশে আসেন, তাদের রিয়াজ শার্ট উপহার দেওয়া হয়। মোহনবাগানের  জনপ্রিয় খেলোয়াড় চুনি গোস্বামির ছবি ও তার  প্রশংসাসম্বলিত একটি পোস্টার তখন সংবাদপত্রে ছাপা হয়। নায়করাজ রাজ্জাক হিসেবে পরিচিত কিংবদন্তি অভিনেতা আবদুর রাজ্জাককে রিয়াজ শার্টের ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়।  

১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের প্রথম কৃষি ও শিল্প মেলায় রিয়াজ শার্টের একটি প্যাভিলিয়ন দেয়া হয় এবং তা পরিদর্শকদের কাছে বেশ সমাদৃত হয়েছিল।  পরের বছর রিয়াজউদ্দিন ট্রেডিং কর্পোরেশন অফ বাংলাদেশ(টিসিবি) এর কাছে রিয়াজ শার্ট রপ্তানি করার ব্যাপারে রাজি করাতে চেষ্টা করেন। বেশিরভাগ কর্মকর্তাদের কাছ থেকেই নিরাশ হয়ে ফিরলেও টেএক্সটাইল মন্ত্রণালয়ের সচিব ইদ্রিস তাকে আশার আলো দেখান। এরপর রিয়াজ শার্টের নমুনা ফ্রান্সে পাঠানো হয়। রিয়াজ পণ্যের উন্নত মান দেখে তারা কিনতে আগ্রহী হন।   

এর পরেই রিয়াজউদ্দিনকে উর্দু রোডে দেড় কাঠা জমির উপর তার ফ্যাক্টরি বর্ধিত করতে হয়। সেলাই মেশিনের সংখ্যাও দ্বিগুণ হয় এবং তাকে আরও কর্মী নিতে হয়।   

১৯৭৭ সালে, স্বপ্নদ্রষ্টা এই ব্যবসায়ী সেলাইয়ের কাজে মেয়েদের নিয়োগের উদ্যোগ নেন। তার ছেলে সালাউদ্দিন বলেন, 'আমাদের এলাকায় প্রচুর বেকার নারী ছিল, আমার বাবা চাইছিলেন এসব নারীদের কোনো আয়রোজগারের উৎসের সঙ্গে যুক্ত করতে। শুরুতে বাবা খুব একটা ইতিবাচক সাড়া পেলেন না, পরিবারগুলোর তখন ভয় পাচ্ছিল যে তাদের  মেয়েদেরকে চাকরি করতে দিলে পরিবারের সুনাম নষ্ট হবে,' ছেলে সালাউদ্দিন জানালেন।

সামাজিক এই মতামতের মোকাবেলা করতেই রিয়াজউদ্দিন তার বড়মেয়ে ফাতেমা বেগমকে বুঝিয়েশুনিয়ে রাজি করালেন ফ্যাক্টরিতে কাজ করার জন্য। ফাতেমা তখন মাত্র ম্যাট্রিক পাশ করেছে, বাবার কথায় রাজি হয়ে গেলেন তিনি। মাসে ১০০ টাকা বেতন দেখে আশেপাশের মেয়েরাও আগ্রহী হয়ে উঠল। প্রথমে ৫ জন নারী রিয়াজ গার্মেন্টসে কর্মচারী হিসেবে যোগ দিলেন।  

২৮ জুলাই ১৯৭৮ সালে, রিয়াজউদ্দিন ১০ হাজার রিয়াজ শার্ট ফরাসি ক্রেতা হলান্ডার ফ্রঁসের কাছে রপ্তানী করলেন। শার্টের ওই চালানের ফরাসী মুদ্রায় দাম ছিল ১৩ মিলিয়ন ফ্রা, বাংলাদেশী টাকায় যা ছিল ৪ লাখ ২৭ হাজার টাকা। পরের মাসেই খবরের কাগজে রিয়াজউদ্দিনের ছবি ছাপা হল, এক বক্স রিয়াজ শার্ট উপহার দিচ্ছেন টিসিবির চেয়ারম্যান মুনির উজ জামানকে যা একইসঙ্গে তার এগিয়ে যাওয়ার স্মারকও। পরবর্তী সময়ে রিয়াজ গার্মেন্টস ৯ হাজার শার্টের জন্য পুর্নব্যবহারযোগ্য এলসি সুবিধা পেল।   

ওই একই বছর রপ্তানির বিপুল সম্ভাবনা দেখে শিল্পপতি নুরুল কাদের খান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার দাইয়ো কোম্পানির সঙ্গে মিলে চট্টগামের কালুরঘাটে প্রতিষ্ঠিত করলেন দেশ গার্মেন্টস, যা ছিল দেশের প্রথম শ্ভাতগ রপ্তানিমুখী পোশাক কারখানা। 

পরের দুই বছরে আরও তিনটি রপ্তানি অর্ডার পায় রিয়াজ  গার্মেন্টস- ৮০ হাজার, ৯০ হাজার ও ১ লক্ষ ১০ হাজার শার্টের অর্ডার। ফ্যাক্টরিতে চার লাইন সিঙ্গারের প্যাডেলসহ পায়ে চালিত মেশিন চালু করা হয়।   

সৃজনশীল বিজ্ঞাপন প্রচারে বিনিয়োগ করেন রিয়াজউদ্দিন। ছবি: সংগৃহীত

১৯৯৮ সালে গাজীপুরের বোর্ডবাজারে তৈরি হয় পাঁচ হাজার শার্ট তৈরির ক্ষমতাসম্পন্ন রিয়াজ এক্সপোর্ট অ্যাপারেল। আর চকবাজারের ফ্যাক্টরির উৎপাদন ক্ষমতা ছিল তিন হাজার।  রিয়াজের সঙ্গে তখন ২০০ জন স্থানীয় আর ক'জন দক্ষিণ কোরিয়ান ও শ্রীলঙ্কার টেকনিশিয়ান কর্মরত ছিল। 


২০০৮ সাল পর্যন্ত রিয়াজ শার্ট রপ্তানি হয়েছে বিশ্বের দশটিরও বেশি দেশে, যার মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, আয়ারল্যান্ড এবং জার্মানির মত দেশ। তাদের বার্ষিক রপ্তানি আয় গিয়ে দাঁড়ায় ৩০ কোটি টাকায়। 

সালাউদ্দিন জানালেন, "রিয়াজ গার্মেন্টস অনেক বেশি পরিমাণে স্কুলের ইউনিফর্ম বানিয়েছে, তাই আমরা ফ্যাশন ইন্ডাস্ট্রিতে তেমন যুক্ত হতে পারিনি। বিখ্যাত ব্র্যান্ড জর্জের (যা পরে ওয়ালমার্ট কিনে নেয়) সাথে আমাদের চুক্তি হয়েছিল। প্রতি মাসে আমরা দুই থেকে তিন লাখ পিস স্কুলের ইউনিফর্ম রপ্তানি করেছি।"

রিয়াজউদ্দিনের জন্ম ১৯৩৪ সালের ৩ অক্টোবর। তিনি মারা যান ২০০৫ সালের ৫ এপ্রিল। মৃত্যুর সময় তিনি স্ত্রী, দুই কন্যা ও চার পুত্র রেখে গেছেন। রিয়াজউদ্দিনের মৃত্যুর পর রিয়াজ গার্মেন্টস মাত্র তিন বছর টিকে ছিল। 

এর কারণ ব্যাখ্যা করলেন রিয়াজউদ্দিনের ছেলে সালাউদ্দিন, "আমাদের এক বায়ারের একটি ব্যর্থ প্রজেক্ট এবং দেউলিয়া হয়ে যাওয়ার কারণে আমাদের ওপর দশ কোটি টাকারও বেশি দায় এসে পড়ে। এই বোঝা ভালোমতোই চেপে বসে আমাদের উপর।" 

তাছাড়া তখনো পর্যন্ত তৈরি পোশাক শিল্পে ব্যাপক ওঠানামা ছিল। রিয়াজ পরিবারের মনে হয়েছিল এই সময়ে সবাই যখন ব্যাংক থেকে বড় বড় ঋণ নিচ্ছে তখন তারা ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবেন না।   

"এমনকি জনতা ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুল ইসলাম বাড়িতে এসে প্রয়োজনীয় সহায়তা করার আশ্বাস দিলেও আমাদের মা চাননি যে তার সন্তানরা ব্যাংক ঋণ ইত্যাদি নিয়ে সারাক্ষণ শঙ্কিত থাকুক", জানালেন সালাউদ্দিন। রিয়াজ গার্মেন্টস বন্ধের বিনিময়ে ঋণ শোধ হয়ে যায় তখন। 

নিজের  বংশধরদের রিয়াজউদ্দিন সবসময় পরামর্শ দিয়ে গেছেন ব্যাংকের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতে, আয় বুঝে ব্যয় করতে এবং মেশিনের যত্ন নিতে ও কর্মীদের যত্ন নিতে। 

সালাউদ্দিন বললেন, "আমার বাবা ছিলেন একজন সাধারণ মানুষ। তিনি নিজের ক্ষমতার বাইরে গিয়ে ফ্যাক্টরির প্রসার চাননি। তার খ্যাতির মধ্যে কোন দাগ নেই। তাই তার স্ত্রী চেয়েছিলেন সেটি যেন বজায় থাকে।" 
রিয়াজউদ্দিন তৃতীয় শ্রেণীর পরে আর পড়াশোনা করেননি, কিন্তু কেউ তাকে অশিক্ষিত বলতে পারবেনা। তিনি সবকিছুই  পড়তে পারতেন। স্মৃতি হাতড়ে সালাউদ্দিন বলেন যে তার বাবা নিজের জন্য প্রাইভেট শিক্ষক রেখেছিলেন ইংরেজি শিক্ষার জন্য। প্রতি রাতেই তাকে দেখা যেত হয় পড়ছেন নয়তো কিছু লিখছেন।    

তিনি একজন ভাল সংগঠকও ছিলেন। বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারারস অ্যান্ড এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশন রিয়াজউদ্দিনকে তাদের প্রথম বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করেছিল।  

রিয়াজউদ্দিন নিজের সব সন্তানকে নিজের ব্যবসায়ে যুক্ত করলেও বর্তমানে শুধুমাত্র সালাউদ্দিন সেই ধারা বজায় রেখেছেন। বর্তমানে সালাউদ্দিন এএসকে অ্যাপারেল অ্যান্ড টেক্সটাইলস সোর্সিং লিমিটেড নামে একটি বায়িং হাউজ চালান। তিনি 'বুনন' নামের একটি টেক্সটাইল বিষয়ক সংগঠন এরও পরামর্শদাতা। 

রিয়াজ গার্মেন্টস আজ আর নেই, কিন্তু এই পরিবারের কাছে এখনো তার লাইসেন্সটি রয়ে গেছে।

"যদি আল্লাহ চায়, আমি হয়তো আবারও কোনো একদিন রিয়াজ  শার্ট এর উৎপাদন শুরু করবো" বলে ইতি টানেন সালাউদ্দিন।

লেখাঃ
সাদিকুর রহমান

কোন মন্তব্য নেই: