ডেনিম জিন্সের বিবর্তন ইতিহাস | Denim Jeans Evaluation - Textile Lab | Textile Learning Blog

ডেনিম জিন্সের বিবর্তন ইতিহাস | Denim Jeans Evaluation

ডেনিম জিন্সের বিবর্তন ইতিহাস | Denim
Factory,

আধুনিকতার সাথে ফ্যাশনের যেমন গভীর এবং সরাসরি সম্পর্ক আছে, ফ্যাশন পরিবর্তনের সাথে পোশাকেরও আছে তেমনি অঙ্গাঅঙ্গি সম্পর্ক। আর সে কারণেই দশক বা শতাব্দীর বিভাজনে পোশাকের ভিন্নতার কারণে ফ্যাশনের পরিবর্তনও হয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। আধুনিক যুগে পোশাক-পরিচ্ছদ আভিজাত্য এবং রুচিবোধের অন্যতম ধারক-বাহক হিসেবে কাজ করে। আবার এই পোশাকের বিবর্তনের ফলে ফ্যাশনের পরিবর্তন হয় এবং ফ্যাশন পরিবর্তনের সাথে সাথে রুচিবোধেরও পরিবর্তন ঘটে।

আধুনিক যুগে পোশাক-পরিচ্ছদের ক্ষেত্রে ডেনিম জিন্স তেমনি একটি গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ। এ যুগের সকল বয়সী মানুষের কাছে, বিশেষ করে কিশোর ও তরুণ বয়সের সকলের কাছে জিন্স মানেই অপ্রতিস্থাপনযোগ্য ব্যবহার্য বস্তু। জিন্সের প্রতি সবার একটি মোহ কাজ করে। আর এ কারণেই বোধহয় একই জিন্স আমরা দিনের পর দিন পরিধান করে ঘুরে বেড়াতেও দ্বিধাবোধ করি না।

 জিন্সের উৎপত্তির শুরুর সময় থেকে অদ্যাবধি এর আবেদন একটুও কমে যায়নি। বরং দিন দিন এর চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু প্রথমদিকের জিন্স এবং আজকের জিন্স কিন্তু সেই একই জিন্স নেই। 

সময়ের সাথে সাথে, ভৌগলিক অবস্থানের উপর নির্ভর করে এবং ব্যবহারের উপর ভিত্তি করে জিন্সে এসেছে অনেক পরিবর্তন। জিন্সের এই বিবর্তন এবং ফ্যাশনের উপর এর প্রভাব নিয়েই এই লেখা।

খনি শ্রমিকদের জন্যই জিন্সের জন্মঃ 

বাণিজ্যিকভাবে প্রথম জিন্সের দেখা পাওয়া যায় ক্যালিফোর্নিয়ার গোল্ড রাশ পরবর্তী সময়ে। এ সময়ে জিন্স ছিলো মূলত সোনার খনি শ্রমিকদের পরিধেয়। খনিতে কাজ করার সময় শক্ত এবং রুক্ষ বস্তুর সাথে শ্রমিকদের পোশাক, বিশেষ করে প্যান্টের ঘর্ষণ হতো। ফলে কয়েকদিনের মধ্যেই প্যান্টের জায়গায় জায়গায় ছিড়ে ফুটিফাটা হয়ে যেত। এই সমস্যা থেকে শ্রমিকদের মুক্তি দিতেই জিন্স প্যান্টের উদ্ভব।

শ্রমিকদের পোশাক তৈরিতে জ্যাকব ডেভিস ছিলেন তখন অন্যতম। তিনি আরেকজন ব্যবসায়ী লেভি স্ট্রসের সাথে মিলে ধাতব রিভেটযুক্ত জিন্স তৈরি করতে শুরু করেন। লেভি স্ট্রস ডেভিসকে জিন্সের কাপড় অর্থাৎ ডেনিম কাপড় সরবরাহ করতেন। ধাতব রিভেট যুক্ত করা হলো প্যান্টের সেসব স্থানে, যেখানে ঘর্ষণ হয় বেশি। এখনো আমাদের জিন্স প্যান্টে এই ধাতব রিভেট লাগানো থাকে। জিন্সের শুরুটা হলো মূলত এভাবেই শ্রমিকদের পরিধেয় প্যান্ট হিসেবে। কিন্তু সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে এটি এখনকার মানুষের একটি অপরিহার্য পরিধেয় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।

পুরুষদের জন্য পশ্চিমা জিন্স (১৯২০ থেকে ১৯৩০)
১৯২০ থেকে ১৯৩০ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে জিন্স ছিলো শুধুমাত্র পুরুষ শ্রমিকদের পোশাক, বিশেষ করে কাউবয়, খনি শ্রমিক। এসব জিন্সের মূল উদ্দেশ্য ছিলো এই যে, এগুলো যেন পরিধান এবং প্রতিদিনের রুক্ষ ব্যবহারের জন্য শক্তিশালী হয়। তবে তখনো কেবল শ্রমিক গোষ্ঠীর জন্যে, বিশেষত পুরষ শ্রমিকদের জন্যেই এই জিন্স তৈরি করা হতো। ১৯৩০ সালে Vogue ম্যাগাজিনে ডেনিম জিন্সের উপর প্রতিবেদন পাওয়া যায়। এই প্রতিবেদন থেকে অনুমান করা হয়, শুধু পুরুষ শ্রমিকদের জন্যই জিন্স তৈরি হলেও, নারীদের জন্যেও স্বল্প পরিমাণে জিন্স তৈরি করা শুরু হয়েছিলো এ সময়ে।

বলা হয়ে থাকে, ১৯৩০ সালের পর থেকেই ব্লু জিন্সের বিস্তৃতি শ্রমিকদের মধ্যে থেকে সাধারণ মানুষ এবং অভিজাত মানুষের মধ্যে বৃদ্ধি পেতে থাকে। একইসাথে নারীদের জন্যেও জিন্স তৈরি করা শুরু হয়।


ব্যাড বয় জিন্সের আবির্ভাবঃ 

এই জিন্সের সময়কাল শুরু হয়েছিলো ১৯৫০ সালের শুরু দিকে। জিন্সের এরূপ নামকরণ আসলে একটু প্রশ্নবোধক। মূলত এই সময়ে জিন্স তরুণ সমাজের কাছে এক অভ্যুত্থানের অবলম্বন হয়ে দাঁড়িয়েছিলো। সেসময়ে নামকরা বিপ্লবী তরুণ অভিনেতা, কিংবা পপ তারকারা তাদের পরিধেয় পোশাক হিসেবে বেছে নিয়েছিলো জিন্সকে। সেসময়ের তরুণদের আদর্শের অন্যতম উৎস ছিলো তারকাদের পোশাক-পরিচ্ছদ অনুকরণ করা। তরুণ অভিনেতা জেমস ডিন, মার্লন ব্রান্ডো তাদের সিনেমাতে জিন্স ব্যবহার করতে শুরু করেন। ফলে তরুণেরা সেই ফ্যাশনের অনুকরণে জিন্স পরা শুরু করে।

এভাবেই জিন্স সাধারণ মানুষের কাতারে পরিচিত লাভ করতে থাকে। এর আগে জিন্স ছিলো মূলত শ্রমিকদের পোশাক। কাজেই সাধারণ মানুষের কাছে জিন্স পরিহিত মানুষ মাত্রেই শ্রমিক হিসেবে পরিচিতি পেতো। কিন্তু ১৯৫০ সালের পর বিভিন্ন সিনেমাতে জিন্সের ব্যবহার এবং সেটার অনুকরণের কারণে জিন্সের প্রতি সাধারণ মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পাল্টে যেতে শুরু করে। এজন্যই এ সময়ে জিন্সকে দ্রোহমূলক জিন্স হিসেবে চিহ্নিত করা হয়ে থাকে।

মজার ব্যাপার হলো, এই ব্যাড বয় জিন্সের উত্তেজক ভাবের কারণে সেসময়ে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এটিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। হালকা ওয়াশ করা, কিছুটা রঙচটা এবং কালো বা ধূসর বর্ণের এই জিন্সগুলো তৈরি করতো মূলত লিভাইস, লী এবং র‍্যাংলার কোম্পানি। এগুলোও ছিলো সাধারণত পুরুষের পরিধেয় জিন্স। কারণ ১৯৫০ আগপর্যন্ত নারীরা ডেনিম জিন্স উল্লেখযোগ্যভাবে পরিধান করা শুরু করেনি।

হিপ্পি জিন্স স্টাইলঃ

হিপ্পি যুগের শুরু হয়েছিলো ১৯৬০ সালের পর থেকে। তারুণ্যে উদ্দীপ্ত হয়ে ভালোবাসাকে মুক্ত করে দেয়ার যে আন্দোলন আমেরিকাতে চলেছিলো ১৯৬০ এর পরে, একেই হিপ্পি যুগ বলে। হিপ্পি যুগেও ডেনিম জিন্সের ছিলো এক অনবদ্য ভূমিকা। বিশেষ করে ডেনিমের ব্লু জিন্স ছিলো হিপ্পি জনগোষ্ঠীর নৈমিত্তিক পরিধেয়। সেসময়ে মুক্ত চিন্তাধারাকে প্রকাশ করতে অন্য সব পোশাক পরিচ্ছদের থেকে জিন্স ছিলো সবচেয়ে বেশি গ্রহণযোগ্য।

এই যুগে জিন্সের স্টাইলে আরো পরিবর্তন আসতে শুরু করে। কারণ মুক্ত চিন্তাধারাকে প্রকাশ করতে ১৯৫০ এর ধূসর, রঙচটা জিন্সতো আর ব্যবহার করা যায় না। হিপ্পিদের জিন্স হতে হবে এমন কিছু যা তাদের নিজেদের সৃজনশীলতা এবং ব্যক্তিত্বকে তুলে ধরে। হিপ্পি জিন্সে প্রথম এমব্রয়ডারি করা নকশা দেখতে পাওয়া যায়। এই জিন্স ছিলো সাধারণত উজ্জ্বল বর্ণের। কখনো কখনো স্টোন ওয়াশিং ইফেক্ট, রাইনোস্টোন এবং প্যাচ পকেটের ব্যবহারও হতো হিপ্পি জিন্সে।

হিপ্পি যুগের জিন্সের মধ্যে জনপ্রিয় ছিলো ‘বেল বটম ফ্লেয়ার্স’ (Bell bottom flares) এবং ‘লো রাইজ হিপ হাগার্স’ (Low rise hip huggers)। বেল বটম জিন্সের ক্ষেত্রে জিন্স প্যান্টের দুই পায়ের নিচের অংশ ছিলো অপেক্ষাকৃত বেশি ঢিলা, অর্থাৎ বেল বা ঘন্টার মতো। অন্যদিকে লো রাইজ হিপের ক্ষেত্রে জিন্স প্যান্টের হিপের অংশটি অপেক্ষাকৃত বেশি আটসাট। টেক্সটাইলে রাইজ (Rise) বলতে বোঝায় প্যান্টের দুই পায়ের সংযোগ বিন্দু থেকে কোমর পর্যন্ত দূরত্ব। কাজেই লো রাইজ জিন্সের ক্ষেত্রে এই দূরত্ব কম। ছবিতে দেখলেই ব্যাপারটা ভালোভাবে বোঝা যাবে।

বেল বটম জিন্সঃ 

একই সময়ে ডাবল ডেনিমের আবির্ভাব শুরু হয় এবং ডেনিমের জ্যাকেট তৈরিও শুরু হয়। ডাবল ডেনিম বলতে বোঝায় যখন টপ এবং বটম আইটেম দুটোই ডেনিমের তৈরি। অর্থাৎ, ডেনিমের জ্যাকেট বা শার্ট এর সাথে ডেনিমের প্যান্ট বা ট্রাউজার। এটা বিশেষ করে নারীদের জন্যেই পরিচিত হতে থাকে সে সময়ে।

জিন্স আমেরিকানা এবং ডিজাইনার জিন্সের উৎপত্তি
১৯৬০ সালে আমেরিকাতে যে উল্টো সংস্কৃতির আন্দোলন শুরু হয়েছিলো, অর্থাৎ হিপ্পি যুগের শুরু হয়েছিলো, সেখানে ডেনিমের ছিলো অন্যরকম অবদান। কিন্তু ডেনিম জিন্সের প্রভাব সাধারণ আমেরিকান সংস্কৃতিতেও পড়েছিলো। এই জিন্স মূলত ১৯৭০ এর পরে আমেরিকার স্বচ্ছ লিঙ্গবিভেদ প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিলো। অর্থাৎ, নারীদের জন্য একরকম জিন্স, পুরুষের জন্যে অন্যরকম। এসময়ে নারীদের জন্য ডেনিমের স্কার্ট ও ডেনিম ভেস্ট এর ব্যবহার শুরু হয়।

জিন্স আমেরিকানা এবং ডিজাইনার জিন্সের উৎপত্তি
১৯৬০ সালে আমেরিকাতে যে উল্টো সংস্কৃতির আন্দোলন শুরু হয়েছিলো, অর্থাৎ হিপ্পি যুগের শুরু হয়েছিলো, সেখানে ডেনিমের ছিলো অন্যরকম অবদান। কিন্তু ডেনিম জিন্সের প্রভাব সাধারণ আমেরিকান সংস্কৃতিতেও পড়েছিলো। এই জিন্স মূলত ১৯৭০ এর পরে আমেরিকার স্বচ্ছ লিঙ্গবিভেদ প্রকাশ করতে সক্ষম হয়েছিলো। অর্থাৎ, নারীদের জন্য একরকম জিন্স, পুরুষের জন্যে অন্যরকম। এসময়ে নারীদের জন্য ডেনিমের স্কার্ট ও ডেনিম ভেস্ট এর ব্যবহার শুরু হয়।

জিন্স আমেরিকানাঃ

জিন্স আমেরিকানার পরবর্তীতে, ১৯৮০ সালে ডিজাইনার জিন্সের আবির্ভাব ঘটে। ১৫ বছর বয়সী ব্রুক শিল্ডস নামক মডেল তখন কেলভিন ক্লেইনের জিন্স পরিহিত ছবি বাণিজ্যিক বিজ্ঞাপনে প্রকাশ করে। এরপর থেকে ফ্যাশন ডিজাইনারদের চোখ পড়ে ডেনিমের উপর। তারা তাদের ডিজাইনের ক্ষেত্রে এরপর জিন্সকেও গুরুত্ব দিয়েছে। এ সময়ের ডিজাইনার জিন্সের মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো কেলভিন ক্লেইন, জর্ডাক, গ্লোরিয়া ভ্যান্ডারবিল্টসহ আরো কিছু প্রতিষ্ঠান।

এই জিন্সগুলো ছিলো সাধারণত স্টোন ওয়াশ, এসিড ওয়াশ করা কিংবা রিপড জিন্স। একইসাথে জিন্স প্যান্টের পায়ের পরিধি ছোট হয়ে আসে, বিশেষ করে নারীদের জন্য।

হিপ হপ জিন্স বা ব্যাগি জিন্সঃ

১৯৯০ সালের পর থেকে জিন্স ফ্যাশনে আবার পরিবর্তন আসতে শুরু করে। এ সময়ে জিন্স ফ্যাশনের ক্ষেত্রে পপ সংগীতের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। সময়ের হিসেবে এই সময়কে বলা হয় 'গ্রাঞ্জ' যুগ। গ্রাঞ্জ মূলত একধরনের রক সঙ্গীত যেখানে ধীরগলায় গান গাওয়া হয়, গিটারের আওয়াজও থাকে কর্কশ। 

কার্পেন্টার জিন্স (কাঠমিস্ত্রিদের পোশাকের মত) এবং জিন্সের আপদমস্তক পোশাকের প্রচলনও শুরু হয় এ সময়ে। এগুলো অনেকটা শ্রমিকদের পরিহিত ওভারল পোশাকের মতো দেখতে। কিন্তু এই জিন্সসমূহ তরুণীদের মধ্যে বেশি প্রচলিত ছিলো। হিপহপ সংস্কৃতির কল্যাণে পুরুষদের মধ্যেও এই ব্যাগি জিন্সের প্রচলন শুরু হয় এ সময়।

স্কিনি জিন্সের উৎপত্তিঃ 

স্কিনি জিন্স ২০০০ সালের প্রথমদিকে সবার নজরে আসে। ব্রিটনি স্পিয়ার্স কিংবা ক্রিস্টিনা আগুইলেরাদের মতো পপ তারকারা স্কিনি জিন্সকে পরিচিত করান। স্কিনি জিন্সের ক্ষেত্রেও এদের রাইজ, অর্থাৎ জিন্সের দুই পায়ের সংযোগস্থল থেকে কোমর পর্যন্ত দূরত্ব ছিলো খুবই কম। 

কাজেই উপরের দিকে এটি যথেষ্ট আটসাট ছিলো। যেহেতু তরুণ প্রজন্ম পপ তারকা কিংবা অভিনেতাদের ফ্যাশনকে অনুকরণ করে, সেহেতু স্কিনি জিন্সও সাধারণ মানুষের ফ্যাশনে পরিণত হতে শুরু করে। তবে স্কিনি জিন্স বিশেষ করে নারীদের জন্যই উপযুক্ত ছিলো। পুরুষদের জিন্সের ক্ষেত্রে তেমন একটা পরিবর্তন এই সময়ে লক্ষ্য করা যায়নি।

স্ট্রেস স্কিনি জিন্সঃ 

২০০০ সালের মাঝামাঝি কিংবা শেষের দিকে স্কিনি জিন্সেও পরিবর্তন আসে। স্কিনি জিন্সে স্ট্রেচিং ইফেক্ট যুক্ত করা হয়। অর্থাৎ জিন্সের স্ট্রেচ প্যান্ট বিশেষ করে। এই জিন্সে মূল ফেব্রিকের সুতার সাথে ইলাস্টিক সুতা বা লায়ক্রা (lycra) ব্যবহার করা হয়। এর ফলে জিন্সে একপ্রকার স্থিতিস্থাপক প্রভাব তৈরি হয় এবং এটি পরতেও বেশ যুতসই। পুরুষদের জিন্সেও লায়ক্রা ব্যবহৃত হতে থাকে। এখনো বেশিরভাগ জিন্সেই লায়ক্রা ব্যবহার করা হয়।

২০০০ সালের শুরুর দিকে নারীদের জন্য বয়ফ্রেন্ড জিন্স নামক জিন্সেরও সন্ধান পাওয়া যায়।

২০১০ সাল থেকে বর্তমান সময়ের জিন্স ফ্যাশন
২০০০ সালের পর থেকে জিন্স ফ্যাশনের পরিবর্তন হতে হতে এখন বর্তমান সময়ে জিন্স সাধারণ মানুষের কাছে একপ্রকার অপরিহার্য বস্তু হয়ে উঠেছে। এখনকার ফ্যাশনে জিন্স সব কিছুর মাঝেই নিজের স্বকীয়তা ধরে রেখেছে খুবই গুরুত্বের সাথে। শুরুর দিকে ডেনিম জিন্স ঢিলাঢালা ছিলো কিংবা অপেক্ষাকৃত পুরু ফেব্রিক দিয়ে তৈরি হতো। শ্রমিকদের সাথে যেন প্যান্ট যুতসই হয় সেকারণেই এই ব্যবস্থা। কিন্তু বর্তমান সময়ে জিন্সের এই ঢিলেঢালা ভাব নেই। এখনকার সময়ে জিন্সে লায়ক্রা ব্যবহার করার পাশাপাশি প্যান্টের আটসাট ফিটিংও লক্ষ্য করা যায়।

২০০০ সালের দিকে জিন্সের যে ব্যাগি সংস্করণ ছিলো, ২০১০ সালের পরের দিকে সেটি আস্তে আস্তে ফ্যাশন থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। এটা আসলে ফ্যাশন চক্রেরই প্রভাব বলা চলে। ফ্যাশন চক্র অনুযায়ী কোনো ফ্যাশন সামগ্রী প্রাথমিকভাবে স্বল্প সংখ্যক মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হলেও মধ্যবর্তী একটা সময়ে এটির বিপণন হয় সর্বাধিক। কিন্তু ফ্যাশন সবসময় একই স্থানে এবং একই বস্তুতে বেশিদিন স্থায়ী হয় না। ফলে আস্তে আস্তে ফ্যাশন সামগ্রীর নিম্নমুখিতা দেখা যায়। ব্যাগি জিন্সের ক্ষেত্রেও সেরকমই হয়েছে। ব্যাগি জিন্সের স্থানে চলে এলো স্ট্রেইট কাট জিন্স। তবে তখনো পুরুষদের জিন্সের ক্ষেত্রে পরিবর্তনটা খুবই ধীর। নারীদের জিন্সেই পরিবর্তনটা বেশি চোখে পড়ার মতো। এ কথা অনস্বীকার্য যে, নারীদের জন্যে স্কিনি জিন্স এখনো মানানসই।

২০০০ সালের পরে জিন্সের ক্ষেত্রে ফেডিং ইফেক্ট ছিলো অন্যতম। সাধারণ ইন্ডিগো ডাই (বা রঙ) করা জিন্সের ঘর্ষণ প্রতিরোধক্ষমতা বেশ কম। এ কারণেই আমাদের সাধারণ ব্লু জিন্স কিছুদিন ব্যবহারের পর ঘর্ষণের জায়গাগুলো থেকে রঙ চটে গিয়ে সাদা হতে শুরু করে। ডিজাইনাররা এটিকেই জিন্সের নতুন ট্রেন্ড হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করলেন। সাধারণ ব্লু জিন্স বা ব্লাক জিন্সে ফেডিং ইফেক্ট বা রঙচটা ভাব ফুটিয়ে তোলা শুরু হলো। সেই সাথে জিন্সে চোখে পড়ার মতো অংশগুলোতে ফোল্ডিং ইফেক্ট বা হালকা ভাঁজ দেয়াও শুরু হলো।

স্লিটিং বা টর্ন জিন্সঃ 

হাল আমলের জিন্সের মধ্যে কিছু কিছু জিন্সে ফ্যাশন ট্রেন্ড হিসেবে স্লিটিং বা টর্নিং ইফেক্ট যুক্ত করা হচ্ছে। সাধারণ জিন্স প্যান্টে স্লিটিং করার কারণে এর সাময়িক চাহিদাও বেড়েছে খুব দ্রুত। এখনকার অধিকাংশ জিন্স প্যান্টেই এই স্লিটিং ইফেক্ট স্বল্প পরিমাণে পাওয়া যাবে। জিন্স প্যান্টের উপর আলাদাভাবে ডেনিমের টুকরা যুক্ত করেও বিভিন্ন পরিবর্তন আনা হচ্ছে। জিন্সের উপর এমব্রয়ডারি করেও আনা হচ্ছে বৈচিত্র্য। এছাড়া লেজার এনগ্রেভিংয়ের মাধ্যমে ফেডিং ইফেক্ট কিংবা সুনির্দিষ্ট ডিজাইনও বর্তমান জিন্সকে আকর্ষণীয় করে তুলছে। সাধারণ প্যান্টের বাইরেও হাফ প্যান্ট কিংবা থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টের ক্ষেত্রেও এখন জিন্সের চাহিদা অত্যধিক।

জিন্সের আবিষ্কার হয়েছিলো মূলত খনি শ্রমিকদের চাহিদার উপর ভিত্তি করে। কিন্তু যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে জিন্স প্রবেশ করেছে সাধারণ মানুষ এবং পরবর্তীতে অভিজাত মানুষের ফ্যাশনে। সর্বোপরি তরুণদের ফ্যাশনের ক্ষেত্রে জিন্সকে বাদ দিয়ে অন্য কিছু কল্পনা করা একটু কঠিন। কিন্তু সেই শ্রমিকদের জিন্স তো আর এ যুগের ফ্যাশনের উপকরণ হতে পারে না। তাই ধাপে ধাপে জিন্স পরিবর্তন হয়েছে। আর সেই সাথে পরিবর্তন হয়েছে জিন্স ফ্যাশনের।

কোন মন্তব্য নেই: