পাট - জুট : গ্লোবাল সুপারপ্ল্যান্ট | Jute - Textile Lab | Textile Learning Blog
পাট: বৈশ্বিক সুপারপ্ল্যান্ট!

পাটের হাত ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুতর টেকসই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। জীবাণু ধ্বংসক্ষম ‘অলৌকিক’ এই উদ্ভিদটি সম্ভবত হতে চলেছে পরবর্তী বৈশ্বিক ‘সুপারপ্ল্যান্ট’—কেননা এই উদ্ভিদটি একইসাথে ভোজ্য, বাস্তবসম্মত এবং ফ্যাশনদুরস্ত।


ঢাকার কমলাপুরে নিজের ফ্ল্যাটে বসে নিশাত তুলি তার করা সাম্প্রতিক কিছু পোশাকের ডিজাইন নিয়ে কথা বলেন। ২৬ বছর বয়সি নিশাত তুলি একজন উদীয়মান ফ্যাশন ডিজাইনার। তার ঝোঁক মূলত পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে পোশাক তৈরির দিকে। বিশেষ করে পাটের দিকেই তার ঝোঁকটা বেশি। তার মতে, পাটই হবে বস্ত্রশিল্পের ভবিষ্যৎ। 

তিনি জানান, একসময় যা ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃষিশস্য, সেই পাটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। 

নিশাতের সাম্প্রতিক ডিজাইন করা পোশাকটি শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর চিত্রকর্ম থেকে অনুপ্রাণিত। এ পোশাকে তিনি পাটের ব্যবহার করেছেন। 

তিনি জানান, পরিবেশগত ইস্যুগুলো দিন দিন আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

২০১৫ সালে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মোবারক আহমদ খান জীবাণু ধ্বংসে সক্ষম 'জুট পলিমার' শিট তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। পরিবেশবান্ধব এ শিট পলিথিনজাত পণ্যের পরিবর্তে ব্যবহার করা সম্ভব।

ঐতিহাসিকভাবে, পাট ২০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বস্ত্র ও খাদ্য উভয়েরই প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। লিখিতভাবে প্রথম পাটের উল্লেখ পাওয়া ১ম শতাব্দীতে, প্লিনি দ্য এল্ডার-এর লেখায়। এই রোমান লেখক ও দার্শনিক তাঁর বই 'দ্য ন্যাচারাল হিস্ট্রি'-তে উদ্ভিদটির বংশের নাম, করকরাস (Chorchorus) উল্লেখ করেছেন। সেইসাথে পাটের উপকারিতা এবং আলেকজান্দ্রিয়ার অধিবাসীরা কীভাবে উদ্ভিদটির কচি পাতা খেত, সে বর্ণনা দিয়েছেন।

২০১৫ সালে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মোবারক আহমেদ খান আবিস্কার করেন জুট পলিমার শিট। আশা করা হচ্ছে এই পলিমার শিট ব্যবহৃত হবে পলিথিনের পরিবর্তে।

তিনি লিখেছেন, আন্ত্রিক রোগবালাই, চুল পড়া এবং ছুলির দাগ সারানোর উত্তম দাওয়াই হিসেবে কাজ করে পাট পাতা।

এখন মিশরীয়রা পাট পাতা কুচি করে কেটে, রসুন দিয়ে ভেড়ার মাংস রান্না করে। জনপ্রিয় এ খাবারের নাম মোলোখিয়া। সাইপ্রাসেও টমেটো স্টু-তে পাট পাতা কুচি কুচি করে কেটে দেওয়া হয়। থাইল্যান্ডেও পাট পাতা দিয়ে রান্না করা 'বাই পো' খুব জনপ্রিয় খাবার। সিয়েরা লিওনে 'ফুফু' নামক পুডিংয়ের সাথে পাট পাতা দিয়ে সেদ্ধ করা হয়। ধারণা করা হয়, পশ্চিম আফ্রিকা থেকে দাস পাচারের সময় পাটও ছড়িয়ে পড়ে বহির্বিশ্বে। পশ্চিম আফ্রিকার বাইরে সম্ভবত ক্যারিবিয়ান দ্বীপ হাইতিতে প্রথম পাটের পদার্পণ ঘটে। এ দ্বীপে নীল কাঁকড়া, পাট পাতা ও লেবুর রস দিয়ে তৈরি 'লুলু' নামের খাবার অত্যন্ত জনপ্রিয়।

ঢাকার নিশাত তুলির মতো অন্যান্য ডিজাইনারদের মধ্যেও পাটের জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার বাড়ছে। 

দড়ি, বড় ট্রান্সপোর্ট ব্যাগ ও ভারী ঝুড়ি তৈরিতে পাটের আঁশ ব্যবহারের ইতিহাস বহু পুরনো। এসব পণ্যরূপে পাট প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপের বাজারগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতে, ১৫৯০ সালে, মোগল সম্রাট আকবর 'আইন-ই-আকবরী'তে উল্লেখ করেন, ঘোড়াঘাট প্রদেশে—বর্তমানে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল—রেশম উৎপন্ন হয় এবং এখানকার অধিবাসীরা চটের তৈরি এক ধরনের পোশাক পরে। ইউরোপীয়রা পাট থেকে হেসিয়ান নামে এক ধরনের চট তৈরি করত। এ চট আজও স্তা, মাদুর এবং জাল তৈরির জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আনুমানিক ১ বিলিয়ন বা তারও বেশি হেসিয়ান চট পাতা হয়েছিল বেলজিয়াম ও ফ্রান্সের ট্রেঞ্চে।

উদ্ভিদবিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে, করকরাস ক্যাপসুলারিস, অর্থাৎ সাদা পাট থেকে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের আঁশ পাওয়া যায়। তবে করকরাস ওলিটোরিয়াস বা তোষা পাট বেশি পরিমাণে জন্মে। উভয় প্রজাতিই ভোজ্য পাট ও পাটের আঁশের প্রধান উৎস, এবং দুই প্রজাতির পাতাই ১০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। 

ব্রাজিল থেকে ভিয়েতনাম, এল সালভাদর থেকে শুরু করে প্রতিটি নিরক্ষীয় আফ্রিকান রাষ্ট্রের উষ্ণ, আর্দ্র, বৃষ্টিপ্রবণ আবহাওয়ায় বিস্তর পাট জন্মায়। তবে পাট চাষের জন্য পূর্ব ভারতীয় উপমহাদেশের গাঙ্গেয় বদ্বীপের চেয়ে অনুকূল পরিবেশ আর হয় না। 

দুটি শক্তিশালী নদী, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ এবং ভারতের একটি অংশকে নিয়ে গঠিত এই সবুজ ত্রিভুজটি পৃথিবীর সবচেয়ে উর্বর জায়গাগুলোর একটি। হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে এই পুষ্টিবাহী জলপথগুলো গোলকধাঁধাতুল্য নালা, খাল, জলাশয় এবং নদীর সাথে এসে মিশেছে। প্রতিটি জলা অঞ্চল পাট চাষের জন্য রীতিমতো স্বর্গভূমি। আকারে আইসল্যান্ড, বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি রাজ্যের সমান এই বদ্বীপে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন মানুষের বাস।

বাংলাদেশে পাটের ওপর ২৫ মিলিয়ন মানুষের জীবিকা নির্ভর করে। প্রতি বসন্তে কোটি কোটি করকরাস ক্যাপসুলারিস ও করকরাস ওলিটোরিয়াসের বীজ বপন করা হয়। প্রথম বৃষ্টিপাতের সাথে সাথে বীজ অঙ্কুরিত হয়। এ উদ্ভিত অত্যন্ত দ্রুত (দিনে প্রায় ২ সেন্টিমিটার) বাড়ে। বসন্তের শেষ দিকে গোটা বদ্বীপকে সবুজ হ্রদের মতো দেখায়। গ্রীষ্মের মৌসুমি পাট গাছ তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে। কোন ধরনের কৃত্রিম সার বা কীটনাশক ছাড়াই পাট গাছ ৩ মিটারের বেশি লম্বা হয়।

মোবারক আহমেদ খান লতিফ বাওয়ানি জুট মিলে উৎপাদন অগ্রগতি দেখছেন। পলিমার শিট থেকে প্রতিদিন ১০০০,০০০ সোনালী ব্যাগ তৈরি হয় এই মিলে

জলাভূমিতে বোনা বীজ বসন্তে অঙ্কুরিত হয়। ফসল কাটা হয় গ্রীষ্মের শেষ দিকে। পানিতে জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়ানোর পর আশগুলো রোদে শুকানো হয়। পাট চাষে কোনও কীটনাশক বা কৃত্রিম সার ব্যবহার করা হয় না।

ফসল কাটার সময় হলে শ্রমিকরা পানিতে দাঁড়িয়ে কাস্তে দিয়ে পাট গাছ কেটে নেয়। তারপর ছোট ছোট আঁটি বেঁধে আঁটিগুলো টেনে কম পানিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পাটগুলো ১০ থেকে ৩০ দিন রেখে পচানো হয়। এ প্রক্রিয়াকে জাগ দেওয়া বলে। আঁশগুলো নরম হয়ে এলে পানিতে দাঁড়িয়ে শ্রমিকরা আঁশ ছাড়িয়ে নেয়। আঁশ ছাড়ানোর পর আঁশ ও গাছের কাষ্ঠল অংশগুলো আলাদাভাবে শুকিয়ে নেওয়া হয়। 

পাটের আঁশ থেকে হ্যান্ডব্যাগ, হ্যামক, হ্যাটসহ শতাধিক জিনিস তৈরি করা যায়। পাটের তৈরি কাপড় ত্বককে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়। পাটের কাষ্ঠল অংশ, অর্থাৎ শোলা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আঁশ থেকে দড়িও তৈরি করা যায়। বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে পাট এমনই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে যে দেশটির জাতীয় প্রতীকেও এর পাতা ঠাঁই পেয়ে গেছে। বাংলাদেশে এমনকি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ও রয়েছে। এমনকি ৬ মার্চকে পাট দিবস হিসেবেও পালন করা হয়।

১৯৫০-এর দশকে, বাজারের ব্যাগ ও জিনিসপত্রের মোড়ক হিসেবে স্বল্পমূল্য পলিথিন ব্যবহার হতে শুরু হওয়ার পর থেকে পাটের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। পাট রপ্তানির জায়গা দখল করে নেয় পলিথিন। ১৯৮০-র দশকের দিকে বাংলাদেশি কৃষকরা পাট খেতে অন্যান্য অর্থকরী ফসল চাষ করতে আরম্ভ করে।

পাটজাত দ্রব্যের কারখানাগুলোর অর্ডার কমে আসতে থাকায় কারখানাগুলো শ্রমিকদের ছাঁটাই করতে শুরু করে। লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। ১৯৮৮ সালের বন্যায় গোটা দেশের অর্ধেকটাই পানির নিচে তলিয়ে যায়। ফলে আরও সঙিন হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। এ বন্যার ধাক্কায় বন্ধ হয়ে বাংলাদেশের প্রথম ও বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিল। 

কৃষকরা পাট বিক্রি করতে পারছিল না। তাই তারা তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে শহরে পাড়ি জমায় ভাগ্য বদলের আশায়।

১৯৭০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে প্রতি রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করে বাড়তে থাকে। সে সময় এ শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৪,০০০ মানুষ থাকত। মনে হচ্ছিল পাট চাষিদের দিন বুঝি ফুরিয়ে এসেছে।

প্লাস্টিকের আগ্রাসনে পাটের চাহিদা তলানিতে নেমে আসে। এখন পাটের থলে ও দড়ি বানানোর কারখানাও কমে এসেছে। 

তবে ক্ষ ফ্যাশন পাটজাত পোশাক উৎপন্ন করছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আমির রঙ্গন অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পাট থেকে কাপড় তৈরি করেন। ২০০৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের প্রথম ও বৃহত্তম পাটজাত পোশাক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন। পাটের পোশাকগুলো 'কিছুটা ঘন' ছিল, কারণ এগুলো 'শীতপ্রবণ দেশে রপ্তানি করা হতো। পরে রঙ্গন পাশ্চাত্য ধাঁচের ফ্যাশন শোগুলোতে পাটের পোশাক উপস্থাপন করেন এবং তার এই কর্ম জাতীয় টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের পাতায় ঠাঁই করে নেয়।

এ কাজের জন্য তিনি পরিচিতি লাভ করেন।

রঙ্গন এখন তার উৎপাদন দক্ষতা বাংলাদেশের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ভাগ করে নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশিরা পাটকে ফ্যাশনেবল মনে করত না। তাই পাট থেকে বানানো পোশাকের ফ্যাশন শো আয়োজন করে এর বহুমুখী ব্যবহার সম্পর্কে সবাইকে জানাতে পারি।'

গত ছয় বছর ধরে রঙ্গন নিজের তৈরি পাটের পোশাক পরছেন। ২০২০ সালের জাতীয় পাট মেলায় নিজের পাটের পোশাকের প্রদর্শনী করেন। 

২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ার জন্য যেসব গ্যাস দায়ী হবে, তার ১০-১৫ শতাংশই হবে প্লাস্টিকের উৎপাদন ও পোড়ানোর কারণে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বদ্বীপগুলোর উচ্চতা খুব বেশি নয়—তাই বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হবে অত্যন্ত নেতিবাচক। জলবায়ু পরিবর্তনেও পাট উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, এক হেক্টর পাট খেত প্রায় ১৩.6 টন কার্বন ডাই অক্সাইড টেনে নেয় এবং বায়ুমণ্ডলে ১০ টন অক্সিজেন ফিরিয়ে দেয়। প্রতি হেক্টর পাটখেতে প্রায় 10 মিলিয়ন পাতা ঝরে পড়ে। এসব ঝরে পড়া পাতা পচে মাটির সাথে মিশে জমির উর্বরতা বাড়ায়। পাট আসলে জমিকে এত বেশি উৎপাদনশীল করে তোলে যে পাট চাষের পরপরই সেই একই জমিতে ধান চাষ করা যায়।

কাঠের বদলে পাট ব্যবহার করলে বনভূমি ধ্বংসের পরিমাণও কমানো সম্ভব। বন উজাড়ের প্রধান তিন কারণ হলো গবাদি পশু পালন, সয়াবিন চাষ ও পাম-তেল উৎপাদন। এ তালিকার চতুর্থ স্থানটি দখল করে রেখেছে কাঠ ও কাগজজাত পণ্য। প্রতি বছর বিশ্বে যত গাছ কাটা হয়, তার ১০ শতাংশই কাটা হয় কাঠ ও কাগজজাত পণ্যের কারণে। বহু কাঠের পণ্যকে প্রতিস্থাপন করার ক্ষমতা আছে পাটের। শোলা থেকে কার্বন কাগজের জন্য কয়লা পাওয়া যায়। এটি দিয়ে এমনকি প্রসাধনী ও প্রিন্টারের কালিও তৈরি করা হয়। বেশিরভাগ গাছ প্রাপ্তবয়স্ক হতে যেখানে ১০ বছরের বেশি সময় নেয় সেখানে পাট সময় নেয় মাত্র কয়েক মাস।

মিশর ও ফিলিস্তিনে পাটের পাতা দিয়ে খাবার মলোখিয়া খুবই জনপ্রিয় ডিশ

Bangla Tribune: জার্মানিতে রফতানি হচ্ছে পাট পাতার চা

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পাটের বহুমুখী ব্যবহার উদ্ভাবনের জন্য নানা ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। মন্ত্রণালয়টি ছাত্রছাত্রীদের হাতে পাট দিয়ে তৈরি বইয়ের ব্যাগ সরবরাহ করার পরামর্শ দিয়েছে। বাংলাদেশ হাইওয়ে বিভাগ জিওজুট ব্যবহার করতে অনুরোধ করেছে। সস্তা এই জাল মাটির ক্ষয় রোধ করে। মন্ত্রণালয় জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার প্রতিষ্ঠিত করেছে, যা রঙ্গনের মতো পাটজাত পণ্যের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করছে।

বাংলাদেশ পাট সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম এ ধরনের পদক্ষেপকে সমর্থন করেন। ইতিমধ্যে বিশ্বের পাটের দুই-তৃতীয়াংশ রপ্তানি করে যে দেশ, সে দেশের পাট বাণিজ্য বাড়ানোর দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত। 

কাইয়ুম বলেন, পলিথিন ব্যাগ সমাজের ক্যান্সার। নদীর তলদেশে পলিথিন ব্যাগ জমে আছে। এসব ব্যাগ কখনোই পচবে না। এগুলো নদীর গভীরতা কমিয়ে দিচ্ছে, মাছকে বিষাক্ত করছে।

কাইয়ুম একটি বৈশ্বিক সমাধানের প্রচারনা চালাচ্ছেন। ফোর্ড ও টয়োটার মতো বৃহৎ অটোমোবাইল কোম্পানিগুলো ভারী কার্পেট ও আসন তৈরি করতে প্রতি বছর ১০০,০০০ টন পাট ব্যবহার করে। দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানিতে এখন কাঁচের ফাইবার তৈরি করতে এবং গাড়ির দরজা বানাতেও পাট ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ তারপরও অটোমোবাইল শিল্পে ব্যবহৃত পাটের মাত্র ১০ শতাংশ আসে বাংলাদেশ থেকে।

বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগ্রহী, তার বিস্তর প্রমাণ রয়েছে। নদীর তীরবর্তী গ্রামীণ অঞ্চলে ভ্রমণ করা মানেই হলো পাটের বৈচিত্র্য ও বিবর্তনের সাক্ষী হওয়া। নদীতীরের রেস্তোঁরাগুলোতে মানুষ পাটের কুশনে বসে খাওয়াদাওয়া করে। বাড়িতে কার্পেট, আলমারি ময়লা ফেলার ঝুড়ি এবং খেলনায়ও পাটের উপস্থিতি রয়েছে। পাটের কার্পেট ছিঁড়ে গেলে সেটি পচিয়ে জৈবসার বানানো যায়। 

লতিফ বাওয়ানি জুট মিল পাটের শিট উৎপাদন করে। কোম্পানিটি দৈনিক ১০০,০০০ 'সোনালি ব্যাগ' বানায়। 

অবশেষে পাটে বিনিয়োগের সুফলও বোধহয় পাওয়া যাচ্ছে। ২০১০ সালে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর জন্য বাধ্যতামূলক পাট প্যাকেজিং আইন চালু করা হয়। শিল্প পণ্য, কৃষি পণ্য, চাল, পেঁয়াজ ও অন্যান্য প্রধান খাদ্যদ্রব্য পাটের ব্যাগে বহন করার আইন করা হয়। শুরুর দিকে আইনটি প্রত্যাশিত ফল দিতে পারেনি। তবে নানা বাধা কাটিয়ে উদ্যোগটি এখন ভালো ফল দিচ্ছে। পলিথিন এখনও জনপ্রিয় থাকলেও রসুন, ডাল, মরিচ, হলুদ ও ধনিয়া বীজও এখন পাটের ব্যাগে প্যাকেট করার আইন করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী এই আইনটি কীভাবে সফল হতে পারে, সে ব্যাপারে পরামর্শ ইকো বাংলা জুট-এর পরিচালক ও শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক মোহাম্মদ সবুজ হোসেনের। বাংলাদেশ, মরক্কো এবং ফ্রান্সসহ ৬০০টি দেশ ইতিমধ্যে প্লাস্টিকের মুদি ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছে। এই প্লাস্টিকের ব্যাগের বিকল্প ভোক্তাদের সামনে হাজির করতে হবে, নইলে নিষেধাজ্ঞায় কোনও কাজ হবে না।

কাইয়ূম চেীধুরীর চিত্রকর্ম অবলম্বনে বানানো পাটের কাপড়ে তৈরি পোশাক

মোহাম্মদ সবুজ হোসেনের মতে এই বিকল্প হতে পারে পাট। তিনি জানান, '৯০ শতাংশ প্যাকেজিং উপকরণ এবং প্রায় সমস্ত মুদি বস্তার বদলে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।'

তিনি দুভাবে পাট কেনেন—সরাসরি বাজারে গিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে, অথবা বাংলাদেশের দুশোরও বেশি জুট মিল থেকে তৈরি পোশাক এবং সুতা আকারে। হোসেনের ইকো বাংলা পাটের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় নিত্য নতুন নাম যোগ হচ্ছে—পাটের তৈরি বাগানের জাল, পাটের ইয়োগা ব্যাগ, পাটের ঝুড়ি। এসব পণ্য প্লাস্টিকের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ডেনমার্ক, পানামা ও মেক্সিকোতে রপ্তানি হচ্ছে। গত এক দশক ধরে প্রতি বছর পাট রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। সুতি পোশাকের পর পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেই সবচেয়ে বেশি আয় হচ্ছে বাংলাদেশের।

তবে পলিথিনের সাথে পাল্লা দিতে প্রযুক্তির ছোঁয়া দিয়ে পাট খাতকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিশ্বের মোট প্লাস্টিকের বাজারের এক-তৃতীয়াংশ দখল করে রেখেছে পলিথিন। প্লাস্টিকের মোড়ক থেকে শুরু করে সার্জিক্যাল গ্লাভস পর্যন্ত সর্বত্রই পলিথিনের ব্যবহার রয়েছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মোবারক আহমদ খান জীবাণু ধ্বংসে সক্ষম 'জুট পলিমার' আবিষ্কার করেন, যা অনেক পলিথিনজাত পণ্যের জায়গা নিতে পারে।

কেবল ঢাকা শহরেই প্রতি মাসে ৪১০ মিলিয়ন পলিথিনের মুদি ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। লতিফ বাওয়ানী জুট মিল ২০২০ সালের মধ্যে সোনালি ব্যাগের উৎপাদন বাড়িয়ে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের মাত্রা কমিয়ে আনতে চায়। ধারণা করা হচ্ছে ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্ব বাজার এই ব্যাগ ও অন্যান্য বায়োপ্লাস্টিকের জন্য ৭৭ বিলিয়ন ডলারের বাজার সৃষ্টি হবে।

করোনাকালে সোনালি ব্যাগের অন্যরকম এবং জরুরি ব্যবহারও লক্ষ করা গেছে। এ সময় পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট-এর (পিপিই) চাহিদা তুঙ্গে উঠে যায়। এ সরঞ্জামগুলোর বেশিরভাগই প্লাস্টিকের তৈরি। মোবারক আহমদ খান পাটের সেলুলোজ থেকে একটি নতুন ধরনের প্রটেক্টিভ গিয়ার তৈরি করেন। জিনিসটা তৈরি করার জন্য চিংড়ি ও কাঁকড়ার সেলুলোজ থেকে প্রাপ্ত সেলুলোজ চিটোসান ব্যবহার করা হয়েছে। খানের এ নতুন পলিমারের প্রসারণশক্তি পলিথিনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি। বোনাস হিসেবে চিটোসানে অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ কারণে পুড়ে যাওয়া অঙ্গ ড্রেসিং করতে এবং বিভিন্ন ধরনের ওষুধে এটি ব্যবহৃত হয়। পাট থেকে তৈরি এই পিপিই সাত দিনের মধ্যে পানিতে অথবা গরম সাবান পানিতে মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে দ্রবীভূত হয়ে যায়। বহির্বিশ্বে এখনই আবিষ্কারটি নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হচ্ছে।

পাট দিয়ে তৈরি টিন

মোবারক আহমদ খান সম্প্রতি পাটের সাহায্যে জুট-টিন উদ্ভাবন করেছেন। আয়রন শিটের চেয়ে জুট-টিন অনেক বেশি হালকা ও শক্তিশালী, শব্দনিরোধক। এতে মরচেও পড়ে না। জুট-টিন দিয়ে আসবাব, মোবাইল ক্লিনিক কিংবা অন্যান্য বাণিজ্যিক ভবনও তৈরি করা যাবে—ইট ও কংক্রিটের দরকার হবে না। পাটের হাত ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুতর টেকসই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। জীবাণু ধ্বংসক্ষম 'অলৌকিক' এই উদ্ভিদটি সম্ভবত হতে চলেছে পরবর্তী বৈশ্বিক 'সুপারপ্ল্যান্ট'—কেননা এই উদ্ভিদটি একইসাথে ভোজ্য, বাস্তবসম্মত এবং ফ্যাশনদুরস্ত।

[ত্রিস্তান রাদারফোর্ডের ফিউচার'স গোল্ডেন ফাইবার অবলম্বনে]

পাট - জুট : গ্লোবাল সুপারপ্ল্যান্ট | Jute

পাট: বৈশ্বিক সুপারপ্ল্যান্ট!

পাটের হাত ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুতর টেকসই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। জীবাণু ধ্বংসক্ষম ‘অলৌকিক’ এই উদ্ভিদটি সম্ভবত হতে চলেছে পরবর্তী বৈশ্বিক ‘সুপারপ্ল্যান্ট’—কেননা এই উদ্ভিদটি একইসাথে ভোজ্য, বাস্তবসম্মত এবং ফ্যাশনদুরস্ত।


ঢাকার কমলাপুরে নিজের ফ্ল্যাটে বসে নিশাত তুলি তার করা সাম্প্রতিক কিছু পোশাকের ডিজাইন নিয়ে কথা বলেন। ২৬ বছর বয়সি নিশাত তুলি একজন উদীয়মান ফ্যাশন ডিজাইনার। তার ঝোঁক মূলত পরিবেশবান্ধব উপাদান দিয়ে পোশাক তৈরির দিকে। বিশেষ করে পাটের দিকেই তার ঝোঁকটা বেশি। তার মতে, পাটই হবে বস্ত্রশিল্পের ভবিষ্যৎ। 

তিনি জানান, একসময় যা ছিল বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কৃষিশস্য, সেই পাটের ব্যবহার দিন দিন বাড়ছে। 

নিশাতের সাম্প্রতিক ডিজাইন করা পোশাকটি শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর চিত্রকর্ম থেকে অনুপ্রাণিত। এ পোশাকে তিনি পাটের ব্যবহার করেছেন। 

তিনি জানান, পরিবেশগত ইস্যুগুলো দিন দিন আরও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।

২০১৫ সালে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মোবারক আহমদ খান জীবাণু ধ্বংসে সক্ষম 'জুট পলিমার' শিট তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। পরিবেশবান্ধব এ শিট পলিথিনজাত পণ্যের পরিবর্তে ব্যবহার করা সম্ভব।

ঐতিহাসিকভাবে, পাট ২০০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে বস্ত্র ও খাদ্য উভয়েরই প্রধান উপাদান হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে এসেছে। লিখিতভাবে প্রথম পাটের উল্লেখ পাওয়া ১ম শতাব্দীতে, প্লিনি দ্য এল্ডার-এর লেখায়। এই রোমান লেখক ও দার্শনিক তাঁর বই 'দ্য ন্যাচারাল হিস্ট্রি'-তে উদ্ভিদটির বংশের নাম, করকরাস (Chorchorus) উল্লেখ করেছেন। সেইসাথে পাটের উপকারিতা এবং আলেকজান্দ্রিয়ার অধিবাসীরা কীভাবে উদ্ভিদটির কচি পাতা খেত, সে বর্ণনা দিয়েছেন।

২০১৫ সালে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মোবারক আহমেদ খান আবিস্কার করেন জুট পলিমার শিট। আশা করা হচ্ছে এই পলিমার শিট ব্যবহৃত হবে পলিথিনের পরিবর্তে।

তিনি লিখেছেন, আন্ত্রিক রোগবালাই, চুল পড়া এবং ছুলির দাগ সারানোর উত্তম দাওয়াই হিসেবে কাজ করে পাট পাতা।

এখন মিশরীয়রা পাট পাতা কুচি করে কেটে, রসুন দিয়ে ভেড়ার মাংস রান্না করে। জনপ্রিয় এ খাবারের নাম মোলোখিয়া। সাইপ্রাসেও টমেটো স্টু-তে পাট পাতা কুচি কুচি করে কেটে দেওয়া হয়। থাইল্যান্ডেও পাট পাতা দিয়ে রান্না করা 'বাই পো' খুব জনপ্রিয় খাবার। সিয়েরা লিওনে 'ফুফু' নামক পুডিংয়ের সাথে পাট পাতা দিয়ে সেদ্ধ করা হয়। ধারণা করা হয়, পশ্চিম আফ্রিকা থেকে দাস পাচারের সময় পাটও ছড়িয়ে পড়ে বহির্বিশ্বে। পশ্চিম আফ্রিকার বাইরে সম্ভবত ক্যারিবিয়ান দ্বীপ হাইতিতে প্রথম পাটের পদার্পণ ঘটে। এ দ্বীপে নীল কাঁকড়া, পাট পাতা ও লেবুর রস দিয়ে তৈরি 'লুলু' নামের খাবার অত্যন্ত জনপ্রিয়।

ঢাকার নিশাত তুলির মতো অন্যান্য ডিজাইনারদের মধ্যেও পাটের জনপ্রিয়তা ও ব্যবহার বাড়ছে। 

দড়ি, বড় ট্রান্সপোর্ট ব্যাগ ও ভারী ঝুড়ি তৈরিতে পাটের আঁশ ব্যবহারের ইতিহাস বহু পুরনো। এসব পণ্যরূপে পাট প্রশান্ত মহাসাগরের বিভিন্ন দ্বীপের বাজারগুলোতে ছড়িয়ে পড়ে। ভারতে, ১৫৯০ সালে, মোগল সম্রাট আকবর 'আইন-ই-আকবরী'তে উল্লেখ করেন, ঘোড়াঘাট প্রদেশে—বর্তমানে বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চল—রেশম উৎপন্ন হয় এবং এখানকার অধিবাসীরা চটের তৈরি এক ধরনের পোশাক পরে। ইউরোপীয়রা পাট থেকে হেসিয়ান নামে এক ধরনের চট তৈরি করত। এ চট আজও স্তা, মাদুর এবং জাল তৈরির জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় আনুমানিক ১ বিলিয়ন বা তারও বেশি হেসিয়ান চট পাতা হয়েছিল বেলজিয়াম ও ফ্রান্সের ট্রেঞ্চে।

উদ্ভিদবিজ্ঞানের ভাষায় বলতে গেলে, করকরাস ক্যাপসুলারিস, অর্থাৎ সাদা পাট থেকে সবচেয়ে উৎকৃষ্ট মানের আঁশ পাওয়া যায়। তবে করকরাস ওলিটোরিয়াস বা তোষা পাট বেশি পরিমাণে জন্মে। উভয় প্রজাতিই ভোজ্য পাট ও পাটের আঁশের প্রধান উৎস, এবং দুই প্রজাতির পাতাই ১০ সেন্টিমিটার লম্বা হয়। 

ব্রাজিল থেকে ভিয়েতনাম, এল সালভাদর থেকে শুরু করে প্রতিটি নিরক্ষীয় আফ্রিকান রাষ্ট্রের উষ্ণ, আর্দ্র, বৃষ্টিপ্রবণ আবহাওয়ায় বিস্তর পাট জন্মায়। তবে পাট চাষের জন্য পূর্ব ভারতীয় উপমহাদেশের গাঙ্গেয় বদ্বীপের চেয়ে অনুকূল পরিবেশ আর হয় না। 

দুটি শক্তিশালী নদী, গঙ্গা ও ব্রহ্মপুত্র দ্বারা পরিবেষ্টিত বাংলাদেশের দুই-তৃতীয়াংশ এবং ভারতের একটি অংশকে নিয়ে গঠিত এই সবুজ ত্রিভুজটি পৃথিবীর সবচেয়ে উর্বর জায়গাগুলোর একটি। হাজার হাজার কিলোমিটার পথ পারি দিয়ে এই পুষ্টিবাহী জলপথগুলো গোলকধাঁধাতুল্য নালা, খাল, জলাশয় এবং নদীর সাথে এসে মিশেছে। প্রতিটি জলা অঞ্চল পাট চাষের জন্য রীতিমতো স্বর্গভূমি। আকারে আইসল্যান্ড, বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেনটাকি রাজ্যের সমান এই বদ্বীপে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন মানুষের বাস।

বাংলাদেশে পাটের ওপর ২৫ মিলিয়ন মানুষের জীবিকা নির্ভর করে। প্রতি বসন্তে কোটি কোটি করকরাস ক্যাপসুলারিস ও করকরাস ওলিটোরিয়াসের বীজ বপন করা হয়। প্রথম বৃষ্টিপাতের সাথে সাথে বীজ অঙ্কুরিত হয়। এ উদ্ভিত অত্যন্ত দ্রুত (দিনে প্রায় ২ সেন্টিমিটার) বাড়ে। বসন্তের শেষ দিকে গোটা বদ্বীপকে সবুজ হ্রদের মতো দেখায়। গ্রীষ্মের মৌসুমি পাট গাছ তরতর করে বেড়ে উঠতে থাকে। কোন ধরনের কৃত্রিম সার বা কীটনাশক ছাড়াই পাট গাছ ৩ মিটারের বেশি লম্বা হয়।

মোবারক আহমেদ খান লতিফ বাওয়ানি জুট মিলে উৎপাদন অগ্রগতি দেখছেন। পলিমার শিট থেকে প্রতিদিন ১০০০,০০০ সোনালী ব্যাগ তৈরি হয় এই মিলে

জলাভূমিতে বোনা বীজ বসন্তে অঙ্কুরিত হয়। ফসল কাটা হয় গ্রীষ্মের শেষ দিকে। পানিতে জাগ দিয়ে আঁশ ছাড়ানোর পর আশগুলো রোদে শুকানো হয়। পাট চাষে কোনও কীটনাশক বা কৃত্রিম সার ব্যবহার করা হয় না।

ফসল কাটার সময় হলে শ্রমিকরা পানিতে দাঁড়িয়ে কাস্তে দিয়ে পাট গাছ কেটে নেয়। তারপর ছোট ছোট আঁটি বেঁধে আঁটিগুলো টেনে কম পানিতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পাটগুলো ১০ থেকে ৩০ দিন রেখে পচানো হয়। এ প্রক্রিয়াকে জাগ দেওয়া বলে। আঁশগুলো নরম হয়ে এলে পানিতে দাঁড়িয়ে শ্রমিকরা আঁশ ছাড়িয়ে নেয়। আঁশ ছাড়ানোর পর আঁশ ও গাছের কাষ্ঠল অংশগুলো আলাদাভাবে শুকিয়ে নেওয়া হয়। 

পাটের আঁশ থেকে হ্যান্ডব্যাগ, হ্যামক, হ্যাটসহ শতাধিক জিনিস তৈরি করা যায়। পাটের তৈরি কাপড় ত্বককে সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে সুরক্ষা দেয়। পাটের কাষ্ঠল অংশ, অর্থাৎ শোলা জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। আঁশ থেকে দড়িও তৈরি করা যায়। বাংলাদেশের সংস্কৃতির সাথে পাট এমনই ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে যে দেশটির জাতীয় প্রতীকেও এর পাতা ঠাঁই পেয়ে গেছে। বাংলাদেশে এমনকি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ও রয়েছে। এমনকি ৬ মার্চকে পাট দিবস হিসেবেও পালন করা হয়।

১৯৫০-এর দশকে, বাজারের ব্যাগ ও জিনিসপত্রের মোড়ক হিসেবে স্বল্পমূল্য পলিথিন ব্যবহার হতে শুরু হওয়ার পর থেকে পাটের জনপ্রিয়তা কমতে থাকে। পাট রপ্তানির জায়গা দখল করে নেয় পলিথিন। ১৯৮০-র দশকের দিকে বাংলাদেশি কৃষকরা পাট খেতে অন্যান্য অর্থকরী ফসল চাষ করতে আরম্ভ করে।

পাটজাত দ্রব্যের কারখানাগুলোর অর্ডার কমে আসতে থাকায় কারখানাগুলো শ্রমিকদের ছাঁটাই করতে শুরু করে। লক্ষ লক্ষ মানুষ বেকার হয়ে পড়ে। ১৯৮৮ সালের বন্যায় গোটা দেশের অর্ধেকটাই পানির নিচে তলিয়ে যায়। ফলে আরও সঙিন হয়ে ওঠে পরিস্থিতি। এ বন্যার ধাক্কায় বন্ধ হয়ে বাংলাদেশের প্রথম ও বিশ্বের বৃহত্তম পাটকল আদমজী জুট মিল। 

কৃষকরা পাট বিক্রি করতে পারছিল না। তাই তারা তাদের সম্পত্তি বিক্রি করে শহরে পাড়ি জমায় ভাগ্য বদলের আশায়।

১৯৭০ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে প্রতি রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ করে বাড়তে থাকে। সে সময় এ শহরে প্রতি বর্গকিলোমিটারে ৪৪,০০০ মানুষ থাকত। মনে হচ্ছিল পাট চাষিদের দিন বুঝি ফুরিয়ে এসেছে।

প্লাস্টিকের আগ্রাসনে পাটের চাহিদা তলানিতে নেমে আসে। এখন পাটের থলে ও দড়ি বানানোর কারখানাও কমে এসেছে। 

তবে ক্ষ ফ্যাশন পাটজাত পোশাক উৎপন্ন করছে। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক আমির রঙ্গন অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পাট থেকে কাপড় তৈরি করেন। ২০০৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশের প্রথম ও বৃহত্তম পাটজাত পোশাক প্রদর্শনীর আয়োজন করেছিলেন। পাটের পোশাকগুলো 'কিছুটা ঘন' ছিল, কারণ এগুলো 'শীতপ্রবণ দেশে রপ্তানি করা হতো। পরে রঙ্গন পাশ্চাত্য ধাঁচের ফ্যাশন শোগুলোতে পাটের পোশাক উপস্থাপন করেন এবং তার এই কর্ম জাতীয় টেলিভিশন ও সংবাদপত্রের পাতায় ঠাঁই করে নেয়।

এ কাজের জন্য তিনি পরিচিতি লাভ করেন।

রঙ্গন এখন তার উৎপাদন দক্ষতা বাংলাদেশের ১২টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে ভাগ করে নিচ্ছেন।

তিনি বলেন, 'বাংলাদেশিরা পাটকে ফ্যাশনেবল মনে করত না। তাই পাট থেকে বানানো পোশাকের ফ্যাশন শো আয়োজন করে এর বহুমুখী ব্যবহার সম্পর্কে সবাইকে জানাতে পারি।'

গত ছয় বছর ধরে রঙ্গন নিজের তৈরি পাটের পোশাক পরছেন। ২০২০ সালের জাতীয় পাট মেলায় নিজের পাটের পোশাকের প্রদর্শনী করেন। 

২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বাড়ার জন্য যেসব গ্যাস দায়ী হবে, তার ১০-১৫ শতাংশই হবে প্লাস্টিকের উৎপাদন ও পোড়ানোর কারণে। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে বদ্বীপগুলোর উচ্চতা খুব বেশি নয়—তাই বাংলাদেশের ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব হবে অত্যন্ত নেতিবাচক। জলবায়ু পরিবর্তনেও পাট উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে পারে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার মতে, এক হেক্টর পাট খেত প্রায় ১৩.6 টন কার্বন ডাই অক্সাইড টেনে নেয় এবং বায়ুমণ্ডলে ১০ টন অক্সিজেন ফিরিয়ে দেয়। প্রতি হেক্টর পাটখেতে প্রায় 10 মিলিয়ন পাতা ঝরে পড়ে। এসব ঝরে পড়া পাতা পচে মাটির সাথে মিশে জমির উর্বরতা বাড়ায়। পাট আসলে জমিকে এত বেশি উৎপাদনশীল করে তোলে যে পাট চাষের পরপরই সেই একই জমিতে ধান চাষ করা যায়।

কাঠের বদলে পাট ব্যবহার করলে বনভূমি ধ্বংসের পরিমাণও কমানো সম্ভব। বন উজাড়ের প্রধান তিন কারণ হলো গবাদি পশু পালন, সয়াবিন চাষ ও পাম-তেল উৎপাদন। এ তালিকার চতুর্থ স্থানটি দখল করে রেখেছে কাঠ ও কাগজজাত পণ্য। প্রতি বছর বিশ্বে যত গাছ কাটা হয়, তার ১০ শতাংশই কাটা হয় কাঠ ও কাগজজাত পণ্যের কারণে। বহু কাঠের পণ্যকে প্রতিস্থাপন করার ক্ষমতা আছে পাটের। শোলা থেকে কার্বন কাগজের জন্য কয়লা পাওয়া যায়। এটি দিয়ে এমনকি প্রসাধনী ও প্রিন্টারের কালিও তৈরি করা হয়। বেশিরভাগ গাছ প্রাপ্তবয়স্ক হতে যেখানে ১০ বছরের বেশি সময় নেয় সেখানে পাট সময় নেয় মাত্র কয়েক মাস।

মিশর ও ফিলিস্তিনে পাটের পাতা দিয়ে খাবার মলোখিয়া খুবই জনপ্রিয় ডিশ

Bangla Tribune: জার্মানিতে রফতানি হচ্ছে পাট পাতার চা

বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় পাটের বহুমুখী ব্যবহার উদ্ভাবনের জন্য নানা ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। মন্ত্রণালয়টি ছাত্রছাত্রীদের হাতে পাট দিয়ে তৈরি বইয়ের ব্যাগ সরবরাহ করার পরামর্শ দিয়েছে। বাংলাদেশ হাইওয়ে বিভাগ জিওজুট ব্যবহার করতে অনুরোধ করেছে। সস্তা এই জাল মাটির ক্ষয় রোধ করে। মন্ত্রণালয় জুট ডাইভারসিফিকেশন প্রমোশন সেন্টার প্রতিষ্ঠিত করেছে, যা রঙ্গনের মতো পাটজাত পণ্যের ব্যবসায়ীদের সহযোগিতা করছে।

বাংলাদেশ পাট সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাইয়ুম এ ধরনের পদক্ষেপকে সমর্থন করেন। ইতিমধ্যে বিশ্বের পাটের দুই-তৃতীয়াংশ রপ্তানি করে যে দেশ, সে দেশের পাট বাণিজ্য বাড়ানোর দায়িত্ব তার ওপর ন্যস্ত। 

কাইয়ুম বলেন, পলিথিন ব্যাগ সমাজের ক্যান্সার। নদীর তলদেশে পলিথিন ব্যাগ জমে আছে। এসব ব্যাগ কখনোই পচবে না। এগুলো নদীর গভীরতা কমিয়ে দিচ্ছে, মাছকে বিষাক্ত করছে।

কাইয়ুম একটি বৈশ্বিক সমাধানের প্রচারনা চালাচ্ছেন। ফোর্ড ও টয়োটার মতো বৃহৎ অটোমোবাইল কোম্পানিগুলো ভারী কার্পেট ও আসন তৈরি করতে প্রতি বছর ১০০,০০০ টন পাট ব্যবহার করে। দক্ষিণ কোরিয়া ও জার্মানিতে এখন কাঁচের ফাইবার তৈরি করতে এবং গাড়ির দরজা বানাতেও পাট ব্যবহার করা হচ্ছে। অথচ তারপরও অটোমোবাইল শিল্পে ব্যবহৃত পাটের মাত্র ১০ শতাংশ আসে বাংলাদেশ থেকে।

বাংলাদেশ যে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আগ্রহী, তার বিস্তর প্রমাণ রয়েছে। নদীর তীরবর্তী গ্রামীণ অঞ্চলে ভ্রমণ করা মানেই হলো পাটের বৈচিত্র্য ও বিবর্তনের সাক্ষী হওয়া। নদীতীরের রেস্তোঁরাগুলোতে মানুষ পাটের কুশনে বসে খাওয়াদাওয়া করে। বাড়িতে কার্পেট, আলমারি ময়লা ফেলার ঝুড়ি এবং খেলনায়ও পাটের উপস্থিতি রয়েছে। পাটের কার্পেট ছিঁড়ে গেলে সেটি পচিয়ে জৈবসার বানানো যায়। 

লতিফ বাওয়ানি জুট মিল পাটের শিট উৎপাদন করে। কোম্পানিটি দৈনিক ১০০,০০০ 'সোনালি ব্যাগ' বানায়। 

অবশেষে পাটে বিনিয়োগের সুফলও বোধহয় পাওয়া যাচ্ছে। ২০১০ সালে প্লাস্টিকের ব্যবহার কমানোর জন্য বাধ্যতামূলক পাট প্যাকেজিং আইন চালু করা হয়। শিল্প পণ্য, কৃষি পণ্য, চাল, পেঁয়াজ ও অন্যান্য প্রধান খাদ্যদ্রব্য পাটের ব্যাগে বহন করার আইন করা হয়। শুরুর দিকে আইনটি প্রত্যাশিত ফল দিতে পারেনি। তবে নানা বাধা কাটিয়ে উদ্যোগটি এখন ভালো ফল দিচ্ছে। পলিথিন এখনও জনপ্রিয় থাকলেও রসুন, ডাল, মরিচ, হলুদ ও ধনিয়া বীজও এখন পাটের ব্যাগে প্যাকেট করার আইন করা হয়েছে।

বিশ্বব্যাপী এই আইনটি কীভাবে সফল হতে পারে, সে ব্যাপারে পরামর্শ ইকো বাংলা জুট-এর পরিচালক ও শীর্ষস্থানীয় রপ্তানিকারক মোহাম্মদ সবুজ হোসেনের। বাংলাদেশ, মরক্কো এবং ফ্রান্সসহ ৬০০টি দেশ ইতিমধ্যে প্লাস্টিকের মুদি ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছে। এই প্লাস্টিকের ব্যাগের বিকল্প ভোক্তাদের সামনে হাজির করতে হবে, নইলে নিষেধাজ্ঞায় কোনও কাজ হবে না।

কাইয়ূম চেীধুরীর চিত্রকর্ম অবলম্বনে বানানো পাটের কাপড়ে তৈরি পোশাক

মোহাম্মদ সবুজ হোসেনের মতে এই বিকল্প হতে পারে পাট। তিনি জানান, '৯০ শতাংশ প্যাকেজিং উপকরণ এবং প্রায় সমস্ত মুদি বস্তার বদলে এটি ব্যবহার করা যেতে পারে।'

তিনি দুভাবে পাট কেনেন—সরাসরি বাজারে গিয়ে কৃষকদের কাছ থেকে, অথবা বাংলাদেশের দুশোরও বেশি জুট মিল থেকে তৈরি পোশাক এবং সুতা আকারে। হোসেনের ইকো বাংলা পাটের রপ্তানিযোগ্য পণ্যের তালিকায় নিত্য নতুন নাম যোগ হচ্ছে—পাটের তৈরি বাগানের জাল, পাটের ইয়োগা ব্যাগ, পাটের ঝুড়ি। এসব পণ্য প্লাস্টিকের সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ডেনমার্ক, পানামা ও মেক্সিকোতে রপ্তানি হচ্ছে। গত এক দশক ধরে প্রতি বছর পাট রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১ বিলিয়ন ডলার আয় করছে। সুতি পোশাকের পর পাটজাত পণ্য রপ্তানি করেই সবচেয়ে বেশি আয় হচ্ছে বাংলাদেশের।

তবে পলিথিনের সাথে পাল্লা দিতে প্রযুক্তির ছোঁয়া দিয়ে পাট খাতকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিশ্বের মোট প্লাস্টিকের বাজারের এক-তৃতীয়াংশ দখল করে রেখেছে পলিথিন। প্লাস্টিকের মোড়ক থেকে শুরু করে সার্জিক্যাল গ্লাভস পর্যন্ত সর্বত্রই পলিথিনের ব্যবহার রয়েছে। ২০১৫ সালে বাংলাদেশি বিজ্ঞানী মোবারক আহমদ খান জীবাণু ধ্বংসে সক্ষম 'জুট পলিমার' আবিষ্কার করেন, যা অনেক পলিথিনজাত পণ্যের জায়গা নিতে পারে।

কেবল ঢাকা শহরেই প্রতি মাসে ৪১০ মিলিয়ন পলিথিনের মুদি ব্যাগ ব্যবহৃত হয়। লতিফ বাওয়ানী জুট মিল ২০২০ সালের মধ্যে সোনালি ব্যাগের উৎপাদন বাড়িয়ে পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারের মাত্রা কমিয়ে আনতে চায়। ধারণা করা হচ্ছে ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্ব বাজার এই ব্যাগ ও অন্যান্য বায়োপ্লাস্টিকের জন্য ৭৭ বিলিয়ন ডলারের বাজার সৃষ্টি হবে।

করোনাকালে সোনালি ব্যাগের অন্যরকম এবং জরুরি ব্যবহারও লক্ষ করা গেছে। এ সময় পারসোনাল প্রটেক্টিভ ইকুইপমেন্ট-এর (পিপিই) চাহিদা তুঙ্গে উঠে যায়। এ সরঞ্জামগুলোর বেশিরভাগই প্লাস্টিকের তৈরি। মোবারক আহমদ খান পাটের সেলুলোজ থেকে একটি নতুন ধরনের প্রটেক্টিভ গিয়ার তৈরি করেন। জিনিসটা তৈরি করার জন্য চিংড়ি ও কাঁকড়ার সেলুলোজ থেকে প্রাপ্ত সেলুলোজ চিটোসান ব্যবহার করা হয়েছে। খানের এ নতুন পলিমারের প্রসারণশক্তি পলিথিনের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ বেশি। বোনাস হিসেবে চিটোসানে অ্যান্টিভাইরাল বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এ কারণে পুড়ে যাওয়া অঙ্গ ড্রেসিং করতে এবং বিভিন্ন ধরনের ওষুধে এটি ব্যবহৃত হয়। পাট থেকে তৈরি এই পিপিই সাত দিনের মধ্যে পানিতে অথবা গরম সাবান পানিতে মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে দ্রবীভূত হয়ে যায়। বহির্বিশ্বে এখনই আবিষ্কারটি নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা হচ্ছে।

পাট দিয়ে তৈরি টিন

মোবারক আহমদ খান সম্প্রতি পাটের সাহায্যে জুট-টিন উদ্ভাবন করেছেন। আয়রন শিটের চেয়ে জুট-টিন অনেক বেশি হালকা ও শক্তিশালী, শব্দনিরোধক। এতে মরচেও পড়ে না। জুট-টিন দিয়ে আসবাব, মোবাইল ক্লিনিক কিংবা অন্যান্য বাণিজ্যিক ভবনও তৈরি করা যাবে—ইট ও কংক্রিটের দরকার হবে না। পাটের হাত ধরে বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে গুরুতর টেকসই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছে। জীবাণু ধ্বংসক্ষম 'অলৌকিক' এই উদ্ভিদটি সম্ভবত হতে চলেছে পরবর্তী বৈশ্বিক 'সুপারপ্ল্যান্ট'—কেননা এই উদ্ভিদটি একইসাথে ভোজ্য, বাস্তবসম্মত এবং ফ্যাশনদুরস্ত।

[ত্রিস্তান রাদারফোর্ডের ফিউচার'স গোল্ডেন ফাইবার অবলম্বনে]

কোন মন্তব্য নেই: