বিদেশী বায়ার খোঁজার আধুনিক পদ্ধতি এবং সহজ গাইডলাইন
আপনার কি রপ্তানি যোগ্য পণ্য রয়েছে? খুব সহজেই আপনার পণ্যটি বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে চাচ্ছেন? সঠিক নিয়মে সবগুলো ধাপ মেনে চললে পণ্য রপ্তানি করা খুব একটা কঠিন ব্যাপার নয়। হয়তো আপনি ইতিমধ্যেই পণ্য রপ্তানি করছেনও। তবে পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে সবসময় যে ব্যাপারটি সবচাইতে বেশি অগ্রাধিকার পায় সেটি হলো পণ্যের ক্রেতা বা বিদেশী বায়ার । আপনার ব্যবসা সফলতা তখনি পাবেন যখন রপ্তানিক্ষেত্রে বিদেশী বায়ার এর সংখ্যা সারা বিশ্বে আরো অনেক বৃদ্ধি পাবে। এখন প্রশ্ন হলো, রপ্তানি পণ্যের ক্রেতা খুঁজে পাবেন কীভাবে?
বিদেশী বায়ার বা ক্রেতা নির্বাচন করা এবং খুঁজে পাওয়া একটি লম্বা প্রক্রিয়া। নানান রকম ধাপ মিলে পুরো প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হয়। চলুন, রপ্তানি পণ্যের ক্রেতা খুঁজে নেওয়ার সেই ধাপগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা যাক।
এক্সপোর্ট মার্কেটিং এর ধাপ সমুহঃ
এক্সপোর্ট মার্কেটিং বা রপ্তানি বাণিজ্য বলতে মূলত, বিদেশে প্রচারণা, ব্র্যান্ডিং এবং বিজ্ঞাপন পরিচালনার মাধ্যমে কোন একটি পণ্য বা সেবার ক্রেতা অথবা আমদানিকারক খুঁজে বের করাকে বোঝায়। এই পদ্ধতির মূল লক্ষ্যই থাকে লিড জেনারেট করা। বায়ারের কাছে পণ্যকে আকর্ষণীয়ভাবে তুলে ধরা, তার ডকুমেন্ট সাজানো, মূল্য তৈরি করা এবং প্রচারণা- এই সবগুলো দিকের মিশ্রণেই রপ্তানি বিপণন গড়ে ওঠে।
সম্ভাব্য বাজার, পণ্য, লজিস্টিক সংক্রান্ত সহায়তা, টাকা পরিশোধের পদ্ধতি, পণ্য শিপমেন্টের ঝুঁকি ইত্যাদি সংক্রান্ত গবেষণা করাই এক্সপোর্ট মার্কেটিং-এর প্রধান উপাদান। রপ্তানি বিপণনের ক্ষেত্রে আপনার পণ্যটিকে অবশ্যই রপ্তানি উপযোগী হতে হবে। এছাড়া বায়ার পাওয়ার জন্য সম্ভাব্য সবগুলো বাজার সম্পর্কে বিশ্লেষণও করতে হবে।
সাধারণত, রপ্তানি বিপণনের মাধ্যমে লিড জেনারেশন করা হলেও, সেখান থেকে যথাযথ পর্যালোচনার মাধ্যমে সম্ভাব্য বায়ারকে খুঁজে পাওয়া সম্ভব হয়।
টার্গেট মার্কেট বা সম্ভাব্য বাজার বিশ্লেষণ
টার্গেট মার্কেট বলতে সেই বাজারকে বোঝায় যেখানে বা যেই বাজারের ক্রেতাদের কাছে আপনি আপনার পণ্য বা সেবা বিক্রি করতে পারবেন আশা করছেন। যদি কোন নির্দিষ্ট একটি বাজারে আপনার পণ্যের চাহিদা থেকে থাকে এবং সেখানে আপনি পণ্য রপ্তানি করতে সক্ষম হন, তাহলে সেটাকে টার্গেট মার্কেট ধরে কাজ করা উচিত।
ক) মার্কেটের কার্যকারিতা নিশ্চিত করুনঃ
প্রথমেই নির্দিষ্ট কোন একটি বাজার আপনার পণ্যের রপ্তানি এবং ব্যবসার জন্য কার্যকরি হবে কিনা তা নির্ধারণের ক্ষেত্রে-
পণ্যের মান এবং টেকসইতা নিশ্চিত করুন
ব্যবসায়িক অঞ্চল বিশ্লেষণ করুন
সম্ভাব্য ক্রেতার প্রোফাইল ও অবস্থান বিশ্লেষণ করুন
বাজারের সম্ভাব্য ত্রুটিগুলো বিচার করুন
মার্কেটিং-এর কৌশল সম্পর্কে ভাবুন
খ) নির্ধারিত বাজারে প্রবেশ করুনঃ
মার্কেট পেনিট্রেশন বা প্রবেশ বলতে আপনার নির্ধারিত বাজারে বিক্রি হওয়া পণ্য বা সেবার শতকরা হিসাবকে বোঝায়। (নির্ধারিত বাজারের কত শতাংশ আপনার পণ্য কিংবা সেবা ক্রয় করছে- এভাবে দিলে মনেহয় আরো একুরেট হয়) এই হিসাবের মাধ্যমে আপনার পক্ষে খুব সহজেই বিক্রি হওয়া পণ্য বা সেবার পরিমাণ বোঝা সম্ভব হবে। আপনার টার্গেট মার্কেট ব্যবসার উপযোগী হলে, সেক্ষেত্রে দ্রুত যথাযথ বাজারগুলোকে চিহ্নিত ও সেখানে প্রবেশ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে নির্দিষ্ট মার্কেটে প্রবেশ করতে আপনি-
পণ্যের প্রচারণা বাড়াতে পারেন
ডিস্ট্রিবিউশন চ্যানেলের জন্য শক্তিশালী মাধ্যম তৈরি করতে পারেন
পণ্যের মান বাড়াতে পারেন
ঝুঁকি এবং বৃদ্ধি সম্পর্কে জানতে পারেন
পণ্যে ভিন্নতা ও নতুনত্ব নিয়ে আসতে পারেন
গ) সঠিক পদ্ধতি ব্যবহার
বাজারের কার্যকরিতা এবং বাজারে প্রবেশের ফলাফলের কথা মাথায় রেখে যথাযথ বিদেশী বায়ার খোঁজার জন্য আপনি প্রচলিত এবং ডিজিটাল- দুই ধরণের পদ্ধতিই অবলম্বন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে কোন পদ্ধতি বেশি কাজ করবে তা বুঝতে হলে এই দুই ধরণের পদ্ধতি সম্পর্কেই জানতে হবে আপনাকে।
বিদেশী বায়ার খোঁজার প্রচলিত পদ্ধতি
১. বৈদেশিক দূতাবাস
বৈদেশিক দূতাবাসের সাথে ভালো সম্পর্ক স্থাপন করুন এবং সম্ভাব্য ক্রেতার সাথে যোগাযোগ করার জন্য ভ্রমণ করুন।
২. ট্রেড ফেয়ার বা বাণিজ্য মেলা
বৈদেশিক নানাবিধ মেলায় আপনার পণ্যকে তুলে ধরুন। এটি আপনার সেবা বা পণ্যকে সবার মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হতে সাহায্য করবে।
৩. রপ্তানিকারকদের ডিরেক্টরি
রপ্তানিকারকদের সাথে যোগাযোগের জন্য থাকা ডিরেক্টরিতে নিজের নাম সংযুক্ত করার চেষ্টা করুন এবং ডিরেক্টরির সাহায্যে অন্যদের সাথে যোগাযোগ করুন। এখানে আপনার নাম থাকলে বিদেশী বায়াররা আপনাকে এখানে খুঁজে পাবে।
৪. চেম্বার অব কমার্স
চেম্বার অব কমার্সে আরো অনেক ব্যবসায়ীদের সাথে যোগাযোগ এবং সেখান থেকে নানাবিধ তথ্য ও সহযোগিতা পাওয়ার সম্ভব।
৫. ব্যবসায়িক সংঘ
প্রতিটি দেশেই ব্যবসায়িক কিছু সংঘ কাজ করে থাকে। বিদেশী বায়ার পাওয়ার ক্ষেত্রে এবং পণ্যের প্রচারণায় তাদের সাথে সংযুক্ত হোন।
৬. বিদেশি এজেন্সি
সম্পূর্ণ নতুন দেশে ব্যবসা প্রসারে বিদেশি এজেন্সিগুলোর সহায়তা নিন। এতে করে কম সময়ে ও কম খরচে আপনি অনেকটা দূর এগিয়ে যেতে পারবেন।
৭. আধুনিক পদ্ধতি
ডিজিটাল মার্কেটিং
বৈশ্বিক অগ্রগতির এই সময়ে বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনলাইন ডিরেক্টরিতে প্রবেশ এবং ওয়েবসাইট তৈরি অত্যন্ত জরুরী হয়ে পড়েছে। তাই দেরী না করে পরিচিতি ও গ্রহণযোগ্যতা পেতে এই কাজগুলো করে ফেলুন।
১. ওয়েবসাইট তৈরি
২. অনলাইন বিজনেস ডিরেক্টরিতে নাম অন্তর্ভূক্তিকরণ
৩. লিংকডইন এবং গুগলে ব্যবসায়িক পেইজ তৈরি
৪. কনটেন্ট মার্কেটিং
পণ্য বা সেবা ক্রয়ের আগে বায়ার পণ্য বা কোম্পানির অবস্থান এবং মান যাচাই করতে অনলাইন রিভিউ দেখে থাকেন। তাই যথাযথ সময়ে পণ্য এবং প্রতিষ্ঠানের রিভিউ প্রদান করুন।
প্রোডাক্ট রিভিউ
কোম্পানি রিভিউ
গ্লোবাল বিটুবি মার্কেটপ্লেস
অনলাইন শোরুম যেকোনো পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেকগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই গ্লোবাল বিটুবি মার্কেটপ্লেসে প্রবেশ করুন।
অনলাইন শোরুমে পণ্যের তথ্য প্রদান
স্বীকৃত অনলাইন শোরুম তৈরি
বিদেশী বায়ার এর সাথে যোগাযোগ এবং চুক্তি স্থাপন
উপরোক্ত তিনটি পদ্ধতির মধ্য দিয়ে যাওয়ার পর খুব সহজেই আপনি এবং আপনার পণ্য কাঙ্ক্ষিত ক্রেতার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে। বায়ারের সাথে যোগাযোগের পর তার সাথে হৃদ্যতামূলক সম্পর্ক গড়ে তোলার চেষ্টা করুন। এতে করে ক্রেতার সাথে আপনার ব্যবসায়িক সম্পর্ক দৃঢ় হবে এবং আপনি ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হবেন।
নিজের পণ্য বা সেবা নিয়ে আপনি শতভাগ নিশ্চিত? সবগুলো ধাপ পার করে এসে যথাযথ বাজার এবং বিদেশী বায়ার চিহ্নিত করে ফেলছেন? তাহলে আর অপেক্ষা কীসের! দ্রুত নিজের পণ্যকে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছে দিন এবং বায়ারের সংখ্যা বৃদ্ধি করুন।
1 টি মন্তব্য:
Great post indeed. Thanks.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন