⛔ ৮ ঘন্টা কাজ করানো কিন্তু ১ ঘন্টা আহার এবং বিশ্রামের বিরতি প্রদান না করা:::ইপিজেডের জন্য
অনেক প্রতিষ্ঠানে একটা রেওয়াজ চালু আছে, প্রতিদিন কর্মীকে ৮ ঘন্টা কাজ করাবে কিন্তু ৩০ মিনিট আহার এবং বিশ্রামের সময় প্রদান করে।
কিন্তু বাকি ৩০ মিনিট বিরতি প্রদান না করে, ৩০ মিনিট পূর্বেই প্রতিষ্ঠানে ছুটি প্রদান করেন।
অথাৎ ৮ : ৩০ মিনিট পরে অফিস ছুটি দিয়ে দেয়া হয় এবং শ্রমিকদের বলা হয় বাকি ৩০ মিনিট বিরতি বাসায় ভোগ করার জন্য।
উক্ত ধরনের কার্যক্রম বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনে ধারা-৩৯ অনুযায়ী বে-আইনী।
কারন কি?
ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৩৯(ক) এবং (খ) অনুযায়ী বিরতি প্রদান না করা।
ধারা-৩৯(ক) অনুযায়ী:
এক টানা ৬ ঘন্টা কাজ করালে ১ ঘন্টা বিরতি প্রদান করতে হবে।
এখানে লক্ষ্য করেন প্রতিটি কর্মীকে ৬ ঘন্টা কাজ করানোর পরে ৩০ মিনিট বিরতি দেয়া হচ্ছে।
ধারা-৩৯ অনুযায়ী কোন কর্মী ৫ এবং ৬ ঘন্টা অধিক সময় কোন কর্মী কাজ করতে বাধ্য থাকিবে না যদি ৫ ঘন্টা কাজ করার পরে ৩০ মিনিট এবং ৬ ঘন্টা কাজ করার পরে ১ ঘন্টা বিরতি না দিলে।
কোন প্রতিষ্ঠান আবার আইনকে ফাকি দেয়ার জন্য ৫ ঘন্টা কাজ করার পরে ৩০ মিনিট বিরতি দেন কিন্তু মোট ৬ ঘন্টা ৩০ হওয়ার পরে বাকী ৩০ মিনিট বিরতি আর দেয়া হয় না।
যাহা ধারা-৩৯ অনুযায়ী স্পষ্ট অপরাধ, কোন প্রতিষ্ঠানের কর্মী মোট ৬ ঘন্টা করার পর মোট ১ ঘন্টা বিরতি না পেলে তিনি আর কাজ করিতে বাধ্য থাকিবেন না।
⛔ছুটি: ইপিজেডের জন্য
বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন শ্রম অধ্যাদেশ ২০১৯ এর ধারা-০৯,৩০,৪১,৪২,৫০,৫১,৫২ এবং ৫৩ অনুযায়ী ছুটি মোট আট প্রকার যথাঃ-
১। নৈমেত্তিক ছুটি
ইপিজেড অধ্যাদেশের ধারা-৫০ অনুযায়ী নৈমেত্তিক ছুটি হবে ১০ দিন এবং পূর্ন মজুরীতে একজন শ্রমিক এই ছুটি ভোগ করতে পারবেন।
২। অসুস্থতা ছুটি
ইপিজেড অধ্যাদেশের ধারা-৫১ অনুযায়ী অসুস্থতা ছুটি হবে ১৪ দিন এবং পূর্ন বেতনে একজন শ্রমিক এই ছুটি ভোগ করতে পারবেন। পূর্বে শ্রমিক অর্ধেক বেতনে উক্ত ছুটি ভোগ করতেন।
৩। অর্জিত ছুটি
প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য শ্রমিক একদিনের ছুটি পাবেন যা নগদায়ন করা যাবে কিন্তু নগদায়নের নিয়ম ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ঠিক করে দিবে।
৪। ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি
ধারা-৪১ অনুযায়ী যদি কোন শ্রমিক সাপ্তাহিক ছুটি না পায় তবে ধারা-৪২ অনুযায়ী পরর্বতী ৬ দিনের মধ্যে তাকে ক্ষতিপূরণমূলক সমপরিমান ছুটি দিতে হবে।
৫। মাতৃত্বকালীন ছুটি
মোট ১৬ সপ্তাহ ছুটি ভোগ করতে পারবেন একজন নারী শ্রমিক যদি তাহার দুটি সন্তান জীবিত না থাকে এবং চাকুরীর বয়স ৬ মাস হতে হবে।
৬। উৎসব ছুটি
ধারা-৫৩ অনুযায়ী কর্মী ১১ দিন উৎসব ছুটি ভোগ করিতে পারিবেন এবং কোন কারনে কর্মীকে উৎসব ছুটির জন্য কাজ করাতে একদিনের জন্য দুইদিন মজুরীসহ ছুটি দিতে হবে।
৭। সাপ্তাহিক ছুটি
ধারা- ৪১ অনুয়ায়ী শ্রমিক সপ্তাহে ১ দিন সাপ্তাহিক ছুটি পাইবেন এবং ইহার জন্য কর্মীকে মজুরী প্রদান করা হবে।
৮। সাধারন ছুটি
ইপিজেড শ্রম অধ্যাদেশ অনুযায়ী ইপিজেড কর্তৃপক্ষ ইপিজেডের প্রতিষ্ঠানের জন্য সাধারন ছুটি ঘোষণা করতে পারবে।
⛔ মাতৃত্বকালীন ছুটিঃ ইপিজেডের জন্য
পৃথিবীতে সবচেয়ে জনপ্রিয় শব্দগুলোর যদি একটা তালিকা করা হয় তবে আমার মনে হয় "মা" শব্দটা তালিকার সবার উপরে থাকবে জনপ্রিয়তার দিক দিয়ে,আর অবশ্যই সেটার কারন ব্যাখ্যা করার কোন মানে হয় না,যে "মা" শব্দটা পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় শব্দ কেন।
ঠিক একইভাবে একজন "মাকে" যদি আপনি বলেন যে আপনার জীবনের সৃষ্ট সময় কোনটা সেই মা আপনার মুখের দিকে তাকিয়ে মৃদু হেসে বলে দিবে আমি যেদিন মাতৃত্ববরন করেছিলাম।
কিন্ত একটা মায়ের জন্য মাতৃত্ববরন করা খুব কষ্টের কারন হয়ে উঠে যখন সেই মা হয় কর্মজীবি মা। যদিও বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনে যথেষ্ট পরিমানে চেষ্টা করা হয়েছে, একজন নারীকে প্রসূতিকালীন সময়ে নিরাপত্তা প্রদানের জন্য কিন্ত এটা একজন সরকারি কর্মজীবি নারী সুবিধার তুলনায় অনেক কম মনে হয়।
এবার কথা হল মাতৃত্বকালীন ছুটি
★ কোন শ্রমিক পাবে?
★ছুটি কত দিন পাবে?
★কোন নারী পাবেন না?
★স্থায়ী শ্রমিক হতে হবে কি না?
এবং
★ প্রসূতি কল্যান সুবিধা পেতে হলে একজন নারীকে প্রতিষ্ঠানে কতদিন কাজ করতে হবে?
★ মাতৃত্বকালীন ছুটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত যেকোন নারী শ্রমিক পাবে।অনেকে বলেন অস্থায়ী নারী শ্রমিকরা পাবে না শুধু স্থায়ীরা পাবে কিন্ত ধারনাটা সঠিক না কারন ধারা ৩০(১) বলা আছে যেঃ
"প্রত্যেক মহিলা শ্রমিক তাহার মালিকের নিকট হইতে তাহার সন্তান প্রসবের সম্ভাব্য তারিখের অব্যবহিত পূর্ববতী আট সপ্তাহ এবং সন্তান প্রসবের অব্যবহিত পরবর্তী আট সপ্তাহের জন্য প্রসূতি কল্যান সুবিধা পাইবার অধিকারী হইবেন"।
★কোন নারী পাবেন না?
আপনি একজন নারী,আপনি প্রতিষ্ঠানে ৬ মাস কাজ করেছেন কিন্ত তারপরও আপনি প্রসূতিকালীন সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে পারেন যদি আপনার দুটি সন্তান জীবিত থাকে।
তার মানে কি আপনার তৃতীয় সন্তান জন্মের সময় আপনি কোন ছুটি পাবেন না।আপনি যদি মহিলা হন তবে হতাশ হবেন না কারন আপনার জন্য ছুটি ব্যবস্থা আছে কিন্ত
*সেটা কত দিন?
*আর কি ভাবেই বা সেটা দেয়া হবে?
প্রথম কথা হল কতদিন উত্তরটা হল ১১২ দিন কিন্ত কেন ধারা ২৯(২) পড়লে আপনি বুঝতে পারবেন তাই আর বর্ননা করলাম না।
ধারা ৩০(২) যে নারীর দুই বা ততোধিক সন্তান জীবিত থাকে সে প্রসূতি কল্যান সুবিধা পাবে না তবে সে কোন ছুটি পাইবার অধিকারী হইলে তাহা পাইবেন।
★ যদিও ইতিমধ্যে এটা উল্লেখ করা হয়েছে যে সন্তান প্রসবের ঠিক পূর্বে ৮ সপ্তাহ এবং ঠিক পরে ৮ সপ্তাহ মাতৃত্বকালীন ছুটি পাইবেন এবং হিসাবটা হলঃ
(৮*৭)=৫৬ দিন।
(৫৬*২)=১১২ দিন।
আপনারা কেউ লক্ষ্য করেছেন কি না,যে মাতৃত্বকালীন ছুটির মধ্যে যদি অন্যকোন ছুটি থাকে তাহলে ইহা মাতৃত্বকালীন ছুটি হিসাবে গন্য হবে।
এখন প্রসূতি কল্যান সুবিধা অধ্যায়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ধারা নিয়ে আমি আলোচনা করছি এবং আপনাদের একটু বিশেষ মনযোগ আশা করছি।
★ ★ প্রসূতি কল্যান সুবিধা পেতে হলে একজন নারীকে প্রতিষ্ঠানে কতদিন কাজ করতে হবে?
উত্তরটা খুব সোজা মাএ ৬ মাস কিন্ত আসল সমস্যাটা এখানে না,আসেন একটু গল্প করে সমস্যাটা বের করি।
সুমনা মারাত্মক সুন্দরী এক মহিলা,আপনারা অনেকে ভাবছেন সুন্দরী আবার মারাত্মক হয় কিভাবে,হয় রে পাগলা হয়।এই সুমনাকে দেখার জন্য এলাকার কত ছেলের যে গায়ের রং কালো হয়ে গেল রাস্তায় দাড়িয়ে থাকতে থাকতে তার খবরকে রাখে।যাই হোক সুমনা বিয়ে করল পরে একটা চাকুরীও নিল একটা মুঠো ফোন কোম্পানিতে ২০১৫ সালের জানুয়ারি মাসের ১ তারিখে,সুমনা তার মালিকে মে মাসের ৪ তারিখে জানাল যে তার EDD (Expected Date of Delivery)সম্ভাব্য সন্তান প্রসাবের সময় জুলাইয়ের ১ তারিখে।এখন সে মাতৃত্বকালীন ছুটি চায় কিন্ত মালিক তাকে বলেন যে আপনার চাকুরীর বয়স মাএ ৪ মাস ৪ দিন,অতএব আপনি কোন ছুটি পাবেন না।
★ ৪ মাস ৪ দিন কাজ করে সুমনা কি আসলেই কোন মাতৃত্বকালীন ছুটি পাবে না?
ক্লাসে হয়তো বা আমার মত অনেকে পেছনের বেঞ্চি থেকে বাঘের মত গর্জন দিয়ে বলবেন না স্যার পাবেনা কিন্ত আশার কথা হল যে সুমনা সবকিছুই পাবে।
১৩(১) ধারার একটা লাইন তুলে দিয়ে তরজমা করলে হবে।
"তবে শর্ত থাকে যে,কোন মাহিলা উক্তরুপ সুবিধা পাইবেন না যদি না তাহার মালিকের অধীন (তাহার সন্তান প্রসবের অব্যবহিত (ঠিক) পূর্বে অন্যুন ছয় মাস কাজ করিয়া থাকেন)
Bracket এর মধ্যে পড়েন,তার মানে বলা হয়েছে সন্তান প্রসাবের ঠিক পূর্বে ৬ মাস কাজ করতে হবে।
এবার দেখি হিসাবটা কিভাবে হয়ঃ
জানুয়ারির ১ তারিখ থেকে মে মাসের ৪ তারিখ পর্যন্ত ৪ মাস ৪ দিন প্লাস ৫৬ দিন মাতৃত্বকালীন ছুটি সব মিলিয়ে ৬ মাস হয়।
আমি জানি অনেকের মনের কোনে একটা প্রশ্ন উকি দিচ্ছে আর সেটা হল ৫৬ দিনতো মহিলা ছুটিতে থাকবে তবে এটা কিভাবে কর্মকালীন দিন হয়।
এবার চলেন ধারা ১৩ থেকে ঘুরে আসি,ধারা ১৩(১)(২)(ঘ) অনুসারন করলে আপনি বুঝতে পারবেন কেন ছুটির দিনগুলোকে কর্মকালীন দিন হিসাবে গননা করা হবে।তারপরও আমি কিছু লাইন তুলে দিলাম বোঝার জন্যঃ
১৩(২)"কোন শ্রমিকের বাস্তবে কাজ করার দিন গননার ক্ষেএে নিন্মলিখিত দিনগুলোও গননায় আনা হইবে, যথা-
ঘ)মহিলা শ্রমিকের ক্ষেএে,অনধিক ষোল সপ্তাহ পর্যন্ত প্রসূতি ছুটি।
উক্ত ধারার জন্যই সুমনার ছুটির দিনগুলোকে কর্মকালীন দিন হিসাবে গর্ননা করা হবে।
আমি আমার সেরাটা দিয়ে সুমনার কেসের প্যাঁচ খোলার চেষ্টা করেছি তবে জানিনা আপনারা বুঝতে পরেছেন কি না তবে যদি আপনি বুঝতে না পারেন তবে তিন চার বার পোড়লে নিশ্চিত বুঝতে পারবেন।
⛔ টার্মিনেশন (Termination): ইপিজেডের জন্য
বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম অধ্যাদেশ ২০১৯ সবচেয়ে বহুল ব্যবহারিত ধারা হল ধারা-২২।
কোন মালিক কোন স্থায়ী বা অন্য কর্মীকে বিনা কারনে চাকুরী থেকে ধারা-২২ অনুযায়ী অব্যাহতি প্রদান করতে পারেন।
যেকোন স্থায়ী কর্মীকে টার্মিনেইট করার জন্য ১২০ দিনের নোটিশ প্রদান করতে হবে অথবা ১২০ দিনের মূল মজুরী টাকা প্রদান করতে হবে।
অন্য কর্মীদের টার্মিনেইট করার জন্য ৬০ দিনের মূল মজুরী প্রদান করতে হবে অথবা ৬০ দিনের নোটিশ প্রদান করতে হবে।
২২ ধারা অনুযায়ী কোন স্থায়ী কর্মীকে অব্যাহতি প্রদান করলে তাকে ২২(৩) ধারা অনুযায়ী প্রতি বছর কাজের জন্য এক মাসের মূল মজুরী প্রদান করতে হবে। যা শুধুমাত্র একজন স্থায়ী কর্মী পাবেন এবং ইহা অন্য কর্মীর জন্য প্রযোজ্য নয়।
⛔মাস্টার রোল কি: ইপিজেডের জন্য
মাস্টার রোল একটা সাধারন খাতা।
খাতাটির অসাধারন কিছু গুরুত্ব আছে।
ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-১৬ তে মাস্টার রোল নামক পদার্থের সাথে পরিচিত হবেন।
ইপিজেড শ্রম আইনের অধীন লে-অফ নামক যে বিষয়টি আছে তার সাথে মাস্টার রোল বিষয়টি বিস্তৃতভাবে জড়িত।
লক্ষ্য করে থাকবেন যে যখন কোন প্রতিষ্ঠান লে-অফ থাকে, তখন কিন্তু প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা কর্মী বা রক্ষনাবেক্ষন বিভাগের কর্মীদেরকে সম্পদ দেখাশোনার জন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত কাজ করতে হয়।
ধারা-১৭ অনুযায়ী লে-অফ চলাকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানের কর্মী এবং লে-অফকালীন সময়ে প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মীদের হাজিরা সংরক্ষনের জন্য যে খাতা সংরক্ষন করা হয় তাকেই মাস্টার রোল বলে।
⛔উৎসব বোনাস : ইপিজেডের জন্য
বাংলাদেশ শ্রম আইনের মত ইপিজেড শ্রম আইনে উৎসব বোনাসের ব্যবস্থা আছে।
ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৫৩ অনুযায়ী একজন কর্মী স্থায়ী হলে উৎসব বোনাস পাবেন।
যেহেতু ইপিজেড শ্রম আইনে বলা আছে স্থায়ী কর্মীগন উৎসব বোনাস পাবেন, তার অর্থ হল যেহেতু কোন কর্মী ৩ মাসের মধ্যে স্থায়ী হওয়া সম্ভব,
তাই ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী ৩ মাস কাজ করেও উৎসব বোনাস পাওয়া যাবে।
প্রতি বছরে একজন কর্মী দুইবার তার নিজ ধর্মের অনুষ্ঠানের প্রাক্কালে দুটি উৎসব বোনাস পাবেন।
বোনাসের পরিমান হবে বেসিকের সমান, কোন অবস্থাতেই এটা বেসিকের বেশি বা কম হবে না।
⛔ বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমা: ইপিজেডের জন্য
বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা-৩৬ অনুযায়ী যদি কোন প্রতিষ্ঠানে ২৫ জন স্থায়ী কর্মী নিয়োজিত থাকেন তবে উক্ত প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমা চালু করতে হবে।
গ্রুপ বীমা চালু করার পূর্বে কিছু বিষয়ে লক্ষ্য করতে হবে।
১. গ্রুপ বীমার পরিমান কত টাকা হবে।
বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনে বাধ্যতামূলকভাবে গ্রুপ বীমা চালু করার কথা বলা হয়েছে কিন্তু কত টাকা ক্ষতিপূরণ বীমা থেকে পাওয়া যাবে তা নিদিষ্ট করা নেই।
এটা হতে পারে ১০,০০০/-, ৫০,০০০/- বা ১,০০,০০০/-, যে কোন পরিমান।
২. কোন বিষয়গুলো বীমার আওতায় আসবে।
মৃত্যু এবং স্থায়ী অক্ষমতার ক্ষেত্রে বীমার টাকা পরিশোধ করতে হবে।
স্থায়ী অক্ষমতা বলতে কি বুঝায়?
স্থায়ী অক্ষমতা বুঝাতে ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-২(৫৩) অনুসরণ করতে হবে।
ধারা-২(৫৩) তে বলা হয়েছে প্রথম তফসিলের ১০০% ক্ষতিপূরণ প্রদানকারী বিষয়গুলোকে শতভাগ স্থায়ী অক্ষমতা হিসাবে বিবেচিত হবে।
তাই নিন্মের ৬টি বিষয়কে বীমার আওতায় আনতে হবে স্থায়ী অক্ষমতা হিসাবে।
১. উভয় হাত হারানো বা উপরের অংশ হইতে কাটিয়া ফেলা।
২. এক হাত বা পা হারানো।
৩. উভয় চোখের দৃষ্টি শক্তি হারানো।
৪. উভয় পা বা উরু কাটিয়া ফেলা,এক পা বা উরু কাটিয়া ফেলা বা যেকোন পা হারানো।
৫. মুখাবয়বের মারাত্মক বিকৃতি।
৬. সম্পূর্ণ বধিরতা।
এছাড়াও মৃত্যু আলাদাভাবে এর সাথে যুক্ত হবে।
সর্বমোট সাতটি বিষয়কে বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমার আওতায় আনতে হবে।
⛔মৃত্যুজনিত সুবিধা : ইপিজেডের জন্য
বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম অধ্যাদেশ ২০১৯ এর ধারা-১৮ অনুযায়ী কোন কর্মীকে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে।
মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ খুব ভাল ভাবে বুঝতে হলে আপনাকে চারটি জিনিস ভাল ভাবে লক্ষ্য করতে হবে।
১। কর্মীর চাকুরীর বয়স ১ বছরের বেশি হতে হবে।
২। চাকুরীরত থাকাকালীন অবস্থায় মৃত্যুবরন।
৩। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরন।
৪। কর্মকালীন দুর্ঘটনার কারনে পরর্বতীতে মৃত্যুবরন।
প্রথমত, আপনাকে বুঝতে হবে, কে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ পাবে এবং কে পাবে না?
যে ব্যক্তির চাকুরীর বয়স অবিচ্ছিন্নভাবে অন্তত ১ বছরের অধিকাল হয়েছে তিনিই শ্রম অধ্যাদেশের ১৮ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণ পাইবার অধিকারী হইবেন।
চাকুরীর বয়স যদি কোন কারনে ১ বছরের বেশি না হয়, কোন ভাবেই ১৮ ধারার ক্ষতিপূরণ পাবে না।
প্রথম শর্তপূরন হলে, আপনাকে অন্য তিনটি শর্ত বিবেচনায় আনতে হবে।
১। চাকুরীরত থাকা অবস্থায়।
চাকুরীরত ব্যপারটা কি আসলে?
আপনি একটা প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন কিন্তু আপনি কর্মঘন্টার বাহিরে বা ছুটিতে থাকাকালীন সময়ে যে কোন ভাবে মারা গেলে।
প্রতিবছর বা ছয় মাসের অধিক সময়ের কাজের জন্য ১ টি করে বেসিক পাবে আপনার পোষ্য।
২। কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরন।
আপনি একজন কর্মী কর্ম ঘন্টার মধ্যে কর্মস্থালে বা কর্মস্থলের বাহিরে অফিসের কাজে থাকা অবস্থায় যে কোন ভাবে মৃত্যুবরন করলে।
আপনার পোষ্যরা প্রতিবছর বা ছয় মাসের অধিক সময় কাজের জন্য ৪৫ দিন করে মজুরি পাবেন।
৩। কর্মকালীন দুর্ঘটনা কারনে পরর্বতীতে মৃত্যুবরন।
আপনি একজন কর্মী কাজ করতে গিয়ে আহত হলেন এবং পরর্বতীতে ১ বা ২ মাস পরে মারা গেলেন।
আপনার পোষ্য ৬ মাস বা ১ বছর কাজের জন্য ৪৫ দিন করে মজুরী পাবেন।
সবার শেষে আপনাকে লক্ষ্য করতে হবে এই লাইনটি
"এই অর্থ মৃত শ্রমিক চাকুরী হইতে অবসর গ্রহন করিলে যে অবসরজনিত সুবিধা প্রাপ্ত হইতেন, তাহার অতিরিক্ত হিসাবে প্রদেয় হইবে।"
তার অর্থ হল একজন মৃত শ্রমিকের পোষ্য ১৮ ধারার ক্ষতিপূরণ পাইবেন এবং তার অতিরিক্ত হিসাবে শ্রম অধ্যাদেশের ধারা-২৪ অনুযায়ী প্রতিবছর কাজের জন্য ১টি করে বেসিক পাইবেন।
⛔ অর্জিত ছুটি গণনা: ইপিজেডের জন্য
বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৫২ অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে কোন কর্মী অবিচ্ছিন্নভাবে ১ বছর কাজের জন্য পরবর্তী বছরে অর্জিত ছুটি ভোগ করিতে পারিবেন।
প্রতি ১৮ দিন কাজের জন্য ১ দিন হারে অর্জিত ছুটি ভোগ করিতে পারবেন।
ধারা-৫২ তে একটা বিষয় লক্ষ্য করতে হবে আর তা হল
"১৮ দিন কাজের জন্য ১ দিন"কথাটা হল কাজের জন্য।
অনেকে ৩৬৫ দিনকে ১৮ দিয়ে ভাগ দিয়ে অর্জিত ছুটির দিন বের করবেন এটা আইন সম্মত নয় কারন আইনে বলা হয়েছে কাজের দিন গুলোকে ১৮ দিয়ে ভাগ করতে হবে।
তবে কেউ ইতিপূর্বে থেকে ৩৬৫ দিনকে ১৮ দিয়ে ভাগ করে সুবিধা প্রদান করে থাকলে ধারা-১৯২ অনুযায়ী তাহা বন্ধ করা যাবে না।
অর্জিত ছুটি মজুরীসহ হবে এবং ধারা-৫২(২) অনুযায়ী কোন পঞ্জিকা বছরে কোন কর্মী তার অর্জিত ছুটি নগদায়ন করিতে পারিবে।
অর্জিত ছুটি নগদায়নের পদ্ধতি বেপজা দ্বারা নির্ধারিত হবে।
কোন অর্জিত ছুটি জমানোর বিষয়ে ইতিপূর্বে ৩০ দিনের একটি সংখ্যার বিষয়ে বলা ছিল এবং বর্তমান আইনে ছুটি জমানোর বিষয়ে কোন কিছুই নিদিষ্ট করে বলা হয়নি।
তবে কোন প্রতিষ্ঠান ইতিপূর্বে যদি ছুটি জমানোর সুবিধা প্রদান করে থাকেন তবে তাহা ধারা-১৯২ অনুযায়ী বন্ধ করা যাবে না।
যেহেতু ছুটি জমানোর সুবিধাটি অধিক সুবিধা প্রদান করে কর্মীকে তবে সেক্ষেত্রে কর্মী কি পরিমান ছুটি জমাতে পারবে তা বলা নেই।
তাই ঝামেলা এড়ানোর জন্য কর্মীকে ছুটি ভোগ করানো বা প্রতি বছরেরটা প্রত্যেক বছরে নগদায়ন করানো উচিত হবে।
⛔ ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি : ইপিজেডের জন্য
বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী দুটি ধারাতে ক্ষতিপূরনমূলক ছুটির কথা বলা আছে।
ইপিজেড শ্রম আইনের ৪১ ধারাতে বলা আছে ক্ষতিপূরণমূলক সাপ্তাহিক ছুটির বিষয়ে।
কোন কর্মী যদি তার প্রাপ্য ১ দিন সাপ্তাহিক ছুটি থেকে বঞ্চিত হন তবে তাকে পরবর্তী ৬ দিনের মধ্যে ১ দিনের ছুটি প্রদান করতে হবে।
অন্য দিকে, ৫৩ ধারাতে উৎসব ছুটির বিষয়ে বলা আছে, উৎসব ছুটির দিনে কোন কর্মীকে কাজ করতে বলা হলে তাকে মজুরীসহ ২ দিনের ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি প্রদান করতে হবে।
তবে উৎসব ছুটির বিনিময়ে ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে প্রদানের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
ইতিপূর্বে ইপিজেড নির্দেশিনাতে বলা ছিল, যদি কোন কর্মী ক্ষতিপূরণমূলক ছুটি ভোগ না করে,
তাকে তার ছুটির বিনিময়ে অর্থ প্রদান করা হলে,উক্ত কর্মীকে ক্ষতিপূরণমূলক উৎসব ছুটি প্রদান প্রয়োজন হবে না।
কিন্তু ২০১৯ সালের ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী ক্ষতিপূরণমূলক ছুটির বিনিময়ে শুধু অর্থ প্রদান করলে তা বে-আইনি হবে।
মজুরী এবং ছুটি দুটিই প্রদান বাধ্যতামূলক, তাই ছুটির বিনিময়ে শুধু মাএ অর্থ প্রদান গ্রহনযোগ্য নয়।
⛔ নতুন কর্মী নিয়োগ প্রদানে করনীয় বিষয়গুলো : ইপিজেডের জন্য
প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে কম বেশি নতুন কর্মী নিয়োগ প্রদান করা হয় এবং এই নতুন শ্রমিক নিয়োগের ক্ষেএে কিছু একান্ত পালনীয় বিষয় রয়েছে।
১। নিয়োগপএ প্রদান:
বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৬ অনুযায়ী কোন প্রতিষ্ঠান কোন কর্মীকে নিয়োগপএ ছাড়া নিয়োগ প্রদান করতে পারবেন না।
প্রতিষ্ঠানের সাথে কর্মীর সম্পর্ক নির্ধারিত হবে কেবল মাএ নিয়োগ পএের মাধ্যমে অন্য কোন কিছুর মাধ্যমে নয়।
তাই নিয়োগপএ ছাড়া কোন কর্মীকে নিয়োগ প্রদান করা অবৈধ হবে।
২। পরিচয়পএ প্রদান:
নিয়োগপএের পরে অতি গুরুত্বপূর্ন বিষয় হল পরিচয়পএ প্রদান।
ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৬ অনুযায়ী পরিচয়পএ প্রদান বাধ্যতামূলক এবং উক্ত পরিচয়পএে কর্মীর ছবি যুক্ত থাকবে।
৩। সার্ভিস বহি প্রদান:
প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে নিযুক্ত শ্রমিকের জন্য মালিক তার নিজ খরচে ধারা-৭ অনুযায়ী সার্ভিস বহির ব্যবস্থা করিবেন।
সার্ভিস বুকের বহির মাপ এবং সংরক্ষণ পদ্ধতি কতৃপক্ষ দ্বারা নির্ধারিত হবে।
৪। শ্রমিক রেজিস্টারে নাম অন্তর্ভূক্তি:
প্রতিষ্ঠানে কোন কর্মী নিয়োগ করা হলে,ধারা-৮ অনুযায়ী তার নাম শ্রমিক রেজিস্টারে অন্তর্ভূক্ত করতে হবে।
শ্রমিক রেজিস্টারে শ্রমিকের নাম অন্তর্ভূক্ত না করলে কর্মী নিয়োগ যথাযথ হবে না।
⛔ চাকুরীর বয়স গননার নিয়ম : ইপিজেডের জন্য
কোন কর্মীকে বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ২য় অধ্যায় অনুযায়ী কোন ক্ষতিপূরণ বা সুবিধা প্রদানের ক্ষেএে উক্ত কর্মীর চাকুরীর বয়স গননা করা একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয়।
চাকুরীর বয়স গননার ক্ষেএে কিছু ভুল ধারনা আছে।
অনেকের ভুল ধারনা বাস্তবে ২৪০ দিন উপস্থিত থাকলেই তা ১ বছর হিসাবে গননা করা হবে।
বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-১৩(১) এ বলা আছে
"কোন শ্রমিক কোন প্রতিষ্ঠানে পূর্ববর্তী (১২) বার পজ্ঞিকা মাসে বাস্তবে অন্তত ২৪০ দিন বা ১২০ দিন কাজ করিয়া থাকেন,তা হলে তিনি যথাক্রমে ১ বছর বা ৬ মাস প্রতিষ্ঠানে অবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করিয়াছেন বলিয়া গন্য হবে"
এখানে দুটি শর্ত লক্ষ্য করতে হবে,
১। পূর্ববর্তী ১২ পুঞ্জিকা মাসে।
২। বাস্তবে অন্তত ২৪০ দিন কাজ করিয়া থাকেন।
দিপ্তি XYZ কোম্পানিতে ৪ বছর ১০ মাস ২৫ দিন কাজ করেন।তারপরে তিনি ব্যক্তিগত কারন দেখিয়ে চাকুরী থেকে পদত্যাগ করে।
এখন প্রশ্ন হল ধারা ১৩ অনুযায়ী দিপ্তির চাকুরীর বয়স ৫ বছর হবে কি না?
উত্তর হল না।
কারন ধারা-১৩(১) অনুযায়ী দুটি শর্ত পূরন হতে হবে।
১। পূর্ববর্তী ১২ পুঞ্জিকা মাসে।
২। বাস্তবে অন্তত ২৪০ দিন কাজ করিয়া থাকেন।
দিপ্তির ক্ষেএে লক্ষ্যনীয় বিষয় হল।তিনি ২য় শর্তটি পূরন করেছে ২৪০ দিনে উপস্থিত ছিলেন কিন্তু যে দিনে চাকুরী ছাড়ছেন।
তার ১২ পুঞ্জিকা মাস পূর্ন হয়নি।
অনেকে ভুল ধরতে চেষ্টা করবেন কিন্তু লক্ষ্য করুন যোগদানের তারিখ থেকে যোগদানের তারিখ ১২ পুঞ্জিকা মাস হিসাব করে তার মধ্যে ২৪০ দিন কাজের দিন হিসাব করুন।
তবে আর আমার কথাগুলো ভুল মনে হবে না।
অনেকের কাছে মনে হবে ৬ মাসের বেশি কাজ করলে এক বছর বিবেচনা করতে হবে, আইনে বলা আছে।
হ্যা,শুধুমাত্র তা ধারা-১৮ এর ক্ষেএে অন্য কোন ক্ষেএে না।
আর বাস্তবিক কাজের দিনের জন্য ধারা-১৩(২) এ উল্লেখিত দিনগুলোকে গননায় আনতে হবে।
⛔ কর্মীর চুড়ান্ত পাওনার নিষ্পত্তি :ইপিজেডের জন্য
যেকোন কর্মী চাকুরী থেকে অবসর গ্রহণের কারনে অথবা মালিক কতৃক ছাঁটাই,ডিসচার্জ,অপসারণ,
বরখাস্ত অথবা শ্রমিক কতৃক অব্যাহতি গ্রহনের কারনে বা অন্য কোন কারনে যদি কোন শ্রমিকের চাকুরীর ছেদ ঘটে সেক্ষেএে কর্মীদের চুড়ান্ত পাওনার নিষ্পত্তি করতে হয়।
ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-৫৬ অনুযায়ী পরবর্তী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে যাবতীয় পাওনাদি পরিশোধ করতে হবে।
কিন্তু ইপিজেড শ্রম আইন-২০১৯ এর ধারা-২৬ অনুযায়ী চাকুরী ছেদ ঘটিবার তারিখ হইতে পরবর্তী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে প্রাপ্য মজুরী পরিশোধের বিষয়ে বলা হয়েছে।
এছাড়া ধারা-৫৬ তে আরও বলা হয়েছে যে ক্ষতিপূরণ ও অন্যান্য পাওনাদি চাকুরী ছেদ হইবার পরবর্তী ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে পরিশোধ করতে হবে।
কিন্তু মজুরী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে দেয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবে খুব কম প্রতিষ্ঠান আছে যারা মজুরী ৭ কর্মদিবসের পরিশোধ করে থাকে।
⛔ বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমা : ইপিজেডের জন্য
বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা-৩৬ অনুযায়ী যদি কোন প্রতিষ্ঠানে ২৫ জন স্থায়ী কর্মী নিয়োজিত থাকেন তবে উক্ত প্রতিষ্ঠানে বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমা চালু করতে হবে।
গ্রুপ বীমা চালু করার পূর্বে কিছু বিষয়ে লক্ষ্য করতে হবে।
১. গ্রুপ বীমার পরিমান কত টাকা হবে।
বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনে বাধ্যতামূলকভাবে গ্রুপ বীমা চালু করার কথা বলা হয়েছে কিন্তু কত টাকা ক্ষতিপূরণ বীমা থেকে পাওয়া যাবে তা নিদিষ্ট করা নেই।
এটা হতে পারে ১০,০০০/-, ৫০,০০০/- বা ১,০০,০০০/-, যে কোন পরিমান।
২. কোন বিষয়গুলো বীমার আওতায় আসবে।
মৃত্যু এবং স্থায়ী অক্ষমতার ক্ষেত্রে বীমার টাকা পরিশোধ করতে হবে।
স্থায়ী অক্ষমতা বলতে কি বুঝায়?
স্থায়ী অক্ষমতা বুঝাতে ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-২(৫৩) অনুসরণ করতে হবে।
ধারা-২(৫৩) তে বলা হয়েছে প্রথম তফসিলের ১০০% ক্ষতিপূরণ প্রদানকারী বিষয়গুলোকে শতভাগ স্থায়ী অক্ষমতা হিসাবে বিবেচিত হবে।
তাই নিন্মের ৬টি বিষয়কে বীমার আওতায় আনতে হবে স্থায়ী অক্ষমতা হিসাবে।
১. উভয় হাত হারানো বা উপরের অংশ হইতে কাটিয়া ফেলা।
২. এক হাত বা পা হারানো।
৩. উভয় চোখের দৃষ্টি শক্তি হারানো।
৪. উভয় পা বা উরু কাটিয়া ফেলা,এক পা বা উরু কাটিয়া ফেলা বা যেকোন পা হারানো।
৫. মুখাবয়বের মারাত্মক বিকৃতি।
৬. সম্পূর্ণ বধিরতা।
এছাড়াও মৃত্যু আলাদাভাবে এর সাথে যুক্ত হবে।
সর্বমোট সাতটি বিষয়কে বাধ্যতামূলক গ্রুপ বীমার আওতায় আনতে হবে।
⛔ সার্ভিস বেনিফিট: ইপিজেডের জন্য
বেপজা নির্দেশনা অনুযায়ী ইপিজেডের মধ্যে কোন প্রকার সার্ভিস বেনিফিটের ব্যবস্থা ছিল না।
বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা-২৩ (৪) অনুযায়ী সকল স্থায়ী শ্রমিকে সার্ভিস বেনিফিট প্রদান করতে হবে।
কেবল মাএ স্থায়ী শ্রমিকগন সার্ভিস বেনিফিট প্রাপ্য হবেন কিন্তু কোন অস্থায়ী শ্রমিক সার্ভিস বেনিফিট প্রাপ্য হবেন না।
কোন স্থায়ী শ্রমিক কোন প্রতিষ্ঠানে ৫ বছর বা বেশি এবং ১০ বছরের কম সময় কাজ করলে প্রতি বছর কাজের জন্য ১৫ দিন করে মূল মজুরী প্রাপ্য হবেন।
এছাড়াও ১০ বছর বা বেশি সময় স্থায়ী ভাবে কাজ করলে প্রতিবছর কাজের জন্য ৩০ দিনের মূল মজুরী প্রাপ্য হবেন।
ইপিজেডের শ্রম আইনের নিয়ম অনুযায়ী গ্রাচুয়িটি প্রদানের কোন প্রকার ব্যবস্থা নেই।
আর যে সকল প্রতিষ্ঠানে গ্রাচুয়িটি চালু আছে তাদেরকে গ্রাচুয়িটি এবং সার্ভিস বেনিফিট দুটিই দিতে হবে আলাদাভাবে।
যেহেতু ২৩(৫) ধারাতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, ২৩ ধারাতে প্রাপ্ত সকল সুযোগ সুবিধা অন্যান্য সুযোগ সুবিধার অতিরিক্ত হবে।
⛔ কত ভাবে প্রতিষ্ঠানের সাথে কর্মীর সম্পর্ক ছিন্ন হতে পারে :ইপিজেডের জন্য
একটা প্রতিষ্টানের সাথে যখন কোন কর্মীর সম্পর্ক শুরু হয় সেটা খুব সুন্দরভাবে হয় কিন্ত শেষটা কেমন হয় তা নিয়ে কেউ খুব একটা বেশি মাথা গামায় না।
৭ ভাবে ইপিজেডের একজন কর্মীর সাথে প্রতিষ্ঠানের সম্পর্ক ছিন্ন হতে পারে:
১। "ছাটাই" শ্রম আইনের ১৯ ধারা অনুযায়ী একজন কর্মীকে ছাটাই করে এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠান তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে পারে।
২।"ডিসচার্জ" শ্রম আইনের ২০ ধারা অনুযায়ী একজন কর্মীকে অব্যাহত শারীরিক সমস্যার কারনে চাকুরী হতে ডিসচার্জ করতে পারেন।
৩। "বরখাস্ত" শ্রম আইনের ২১(১) ধারা অনুযায়ী অসাদচারনের কারনে যে কোন কর্মীকে বরখাস্ত যাবে।
৪।"টার্মিনেশন" শ্রম আইনের ২২ ধারা অনুযায়ী কোন কর্মীকে কোন কারন ব্যাখ্যা করা ছাড়া সরাসরি চাকুরী থেকে অব্যাহতি প্রদান করা সম্ভব।
৫।"পদত্যাগ" কোন কর্মী নিজ ইচ্ছায় ২৩ ধারা অনুযায়ী চাকুরী থেকে ইস্তফা প্রদান করতে পারেন।
৬। "অবসর" একজন কর্মী ৬০ বছর পূর্ন করার পরে চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করতে হবে অথবা চাকুরীর বয়স ২৫ বছর পূর্ন করার পরে সেচ্ছায় চাকুরী থেকে অবসর গ্রহন করতে পারবেন ৩০ দিনের পূর্ববতী নোটিশ প্রদান করে।
৭। "মৃত্যু" কোন কর্মীর মৃত্যুর ফলে ধারা-১৮ অনুযায়ী তার প্রতিষ্ঠানের সাথে যাবতীয় সম্পর্ক ছিন্ন হয়।
⛔ কর্মীকে অতিরিক্ত সুবিধা প্রদান করে তা কমানো যাবে কি না: ইপিজেডের জন্য
বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইনের ধারা-১৯২ অনুযায়ী কোন কর্মীকে ইতিপূর্বে প্রদত্ত অধিক কোন সুবিধা কমানো যাবে না।
ধারা-১৯২ এ বলা আছে "এই আইন প্রবর্তনের সময় কোন শ্রমিক যে মালিকের অধীন যে সকল অধিকার বা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করিতেছিলেন সেই মালিকের অধীন যতদিন কর্মরত থাকিবেন ততদিন সেই সকল অধিকার বা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করিবেন,যদি না তাহার উক্ত অধিকার বা সুযোগ-সুবিধা এই আইন বা তদধীন প্রনীত বিধি বা প্রবিধানের অধীন প্রদত্ত অধিকার ও সুযোগ সুবিধা হইতে অধিকতর অনুকূল হয়।"
উক্ত ধারাতে স্পষ্ট করে বলা আছে যে কোন বর্তমান কর্মীর অধিক সুযোগ-সুবিধা কমানো যাবে না।
অনেক প্রতিষ্ঠান প্রায়ই সুবিধা কমিয়ে দিয়ে থাকেন।উক্ত ক্ষেএে কর্মী আদালতে অভিযোগ করতে পারবে।
⛔ কর্মী মারা গেলে কেন অবসর সুবিধা পাবেন
বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১৮ এবং ১৯ অনুযায়ী যদি কোন কর্মী মারা যায় তবে তার পোষ্যগন মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরনের অতিরিক্ত হিসাবে অবসর সুবিধা পেয়ে থাকেন।
কারন কি?
ইপিজেড শ্রম আইনে কোন মালিকের সাথে শ্রমিকের সম্পর্ক বিছিন্ন হতে পারে ৭ ভাবে এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী হতে পারে ৯ ভাবে।
মৃত্যু তার মধ্যে একটি,কোন কর্মী মারা গেলে তার সাথে প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন হয় অবসর হিসাবে কারন মৃত্যুর পরে কোন কর্মী আর কাজ করতে পারে না।
উক্ত কারনে একজন কর্মী মৃত্যুর পরে অবসর সুবিধা পেয়ে থাকেন।
কি পরিমাণ অর্থ পাবেন?
ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতি বছর কাজের জন্য পাবেন ৪৫ দিনের মূল মজুরী এবং বাংলাদেশ শ্রম আইন অনুযায়ী প্রতি বছর কাজের জন্য পাবেন ৩০ দিনের মজুরী।
আইনে সুস্পষ্টভাবে বলা আছে প্রতি বছর কাজের জন্য বিষয়টি এমন নয় যে অবসর সুবিধা পেতে হলে নিজের বয়স ৬০ বছর হতে হবে বা চাকুরী বয়স ২৫ বছর হতে হবে।
একজন কর্মী তার মালিকের অধীন যত দিন কাজ করবে তত দিনের অবসর সুবিধা পাবেন এবং এই জন্যই প্রতি বছর কথাটি লেখা আছে।
⛔ ডাক্তার এবং নার্স:ইপিজেডের জন্য
ইপিজেডের প্রত্যেকটি কারখানার জন্য নিজস্ব ডাক্তার বা নার্স প্রয়োজন আছে কি না?
বাংলাদেশ ইপিজেড শ্রম আইন ২০১৯ এর ধারা-৩৭ অনুযায়ী প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে ইপিজেডের হাসপাতালের সদস্যপদ গ্রহণ করতে হবে।
এছাড়া ইপিজেড শ্রম আইনের অন্য কোথাও ডাক্তার বা নার্সের বিষয়ে কোন কিছু উল্লেখ নেই।
তাই এটা বলা যায়, যে সকল প্রতিষ্ঠানসমূহ ইপিজেডের হাসপাতালের সদস্যপদ গ্রহণ করবেন, তাদের জন্য নিজস্ব মেডিকেল রুম বা ডাক্তার বা নার্সের প্রয়োজন নেই।
তবে যদি বেপজা কর্তৃপক্ষ কোন নোটিশ বা গেজেটের বা বিধিমালার মাধ্যমে পরবর্তীতে কোন ডাক্তার বা নার্সের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে জানান তবে সেক্ষেত্রে ডাক্তার বা নার্সের প্রয়োজন হতে পারে।
কিন্তু বর্তমান ইপিজেড শ্রম আইন অনুযায়ী কোন আলাদা ডাক্তার বা নার্সের প্রয়োজন নেই।
এছাড়া কোন প্রতিষ্ঠান যদি চায় তাদের নিজস্ব সুবিধার জন্য আলাদা ডাক্তার বা নার্স রাখবেন সেক্ষেত্রে রাখতে পারবেন কিন্তু তাহা আইন অনুযায়ী বাধ্যতামূলক নয়।
তাই প্রত্যেকটা প্রতিষ্ঠানকে ইপিজেড হাসপাতালের সদস্যপদ নিতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে কিন্তু তাদের নিজস্ব ডাক্তার বা নার্স রাখার প্রয়োজন নেই।
সংগৃহীতঃ-
1 টি মন্তব্য:
Appreciated for these useful post.
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন