পোশাকশিল্পে কেনো বিদেশী বিশেষজ্ঞ বা ফরেন এক্সপার্টিজ দরকার হয় - Textile Lab | Textile Learning Blog
" পোশাকশিল্পে কেন বিদেশী বিশেষজ্ঞ বা ফরেন এক্সপার্টিজ দরকার হয়"


অনেকেই ফরেন এক্সপার্টিজদের এদেশে কাজ করা দেখিয়া কষ্টে বিহ্বল ও শোকে মুহ্যমান হইয়া পড়েন। ভারতীয়রা প্রতিবছর এ দেশ থেকে কত হাজার কোটি টাকা লইয়া যাচ্ছে; পাকিস্থান, ফিলিপিনো আর তার্কিশরা হাজার হাজার টাকা লইয়া যাচ্ছে বলিয়া মাতম তোলেন। কিন্তু তাহারা কি তাহাদের/আমাদের সীমাবদ্ধতা কখনও ভাবিয়া দেখিয়াছেন?! যাহারা শিল্প-প্রতিষ্ঠানের মালিক তাহারা কি বোকার মত শুধু শুধু লক্ষ লক্ষ ডলার দিয়া ফরেন এক্সপার্টিজ রাখিতেছে? বিগত ৯ বছর এই খাতে যুক্ত থাকিবার অভিজ্ঞতা হইতে আমার মনে হইয়াছে শিল্পপতিরা প্রায় শতভাগ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়াছেন, নিচ্ছেন। শিল্পের বর্তমান অবস্থায় উহাদের গুরুত্ব অনেক এবং ভূমিকা অনসবীকার্য।

(" পোশাকশিল্পে কেন বিদেশী বিশেষজ্ঞ বা ফরেন এক্সপার্টিজ দরকার হয়" )

১। দেশের গ্র্যাজুয়েটদের মান অতিশয় নাজুক। উহাদের অধিকাংশ (আনুমানিক ৯০%) কমুউনিকেটিভ ইংরেজী দূরে থাক, মাতৃভাষা বাংলা ঠিকমত লিখিতে, পড়িতে ও বলিতে পারে না। সিলেটের মার্চেন্ডাইজার, নোয়াখালীর ওয়াস-টেক, কুমিল্লার কোয়ালিটি অফিসার, চট্রগ্রামের প্যাটার্ন মাস্টার, বরিশালের অপারেশন ম্যানেজার পি,পি মিটিং এ পরস্পরের কথোপকথন ও বৈঠক সিদ্ধান্ত নিজেরাও বোঝে না আর শোষক শ্রেণীকে (মালিককে) অথবা ক্রেতাকে কোনক্রমেই জানাইতে বা বোঝাইতে পারেনা।

২। যে বিষয়েই পড়ালেখা করুক না কেন দেশের যেকোন বিশ্ববিদ্যালয় হইতে
পরিশেষে সবাই দার্শনিক হইয়া বের হয়। দার্শনিকরা চাকরী পছন্দ করেন না। না পছন্দ করা কোন কিছু ভালবাসা যায় না, ফলে উহাদের চাকরী করিতে মোটেই ভাল লাগে না। শর্তমতে ভাল না লাগা কোন বিষয়ে কেউ বিশেষজ্ঞ বা এক্সপার্ট হইতে পারে না।

৩। একজন এক্সপার্টজকে অবশ্যই গনিতে ভাল হইতে হয়; এদেশে আলোচনার মাধ্যমে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা হয়। দেখা গিয়াছে ক্রেতারা উক্ত গণিত (আলোচিত গণিত) বুঝিতে পারেনা বিধায় মালিক পক্ষ (তথা শোষক শ্রেণী) বিদেশী এক্সপার্টিজ  নিয়োগ দেয়।

৪। প্রোফেশনালিজম বা পেশাদারিত্ব কি জিনিস, উহা খায় না মাথায় নেয় তা এ অঞ্চলের মানুষ আজও জানে না, বোঝে না। পরিবার বা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান হইতে উহারা নার্সারি লেভেলের পেশাদারিত্বের শিক্ষাও পায় না, ফলে বিপদে পড়িয়া উহারা গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ভালমানুষী গুনাবলি ক্রয় করিয়া থাকে। দেশের সরকারী চাকুরীতে উহার উচ্চ সামাজিক মূল্য থাকিলেও সামাজ্যবাদী বুর্জুয়া ইউরোপের কাছে ভালমানুষী পেশাদারিত্বের কাছে মারা খায়!

৫। টেকনিক্যাল স্কিলঃ
 এটি আয়ত্ত করিতে যুগতপত ভাবে মাথার র‍্যাম ও প্রসেসর ভাল হওয়া লাগে। পাশাপাশি উহা শিখিতে টেকনিক্যাল এডুকেশন অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং শিখিতে হয়, খুব ধৈর্য্য ও আগ্রহের প্রয়োজন হয়। এরপর ঐ ব্যক্তিকে ডিটেল ওরিয়েন্টেড বা যেকোন বিষয়ের গভীরে ঢুকার মানসিকতা ও প্রবনতা থাকিতে হয়। বাংলায় এমন মানুষের সংখ্যা বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের ন্যায় অতীব কম।

৬। ম্যানেজমেন্ট স্কিলঃ
ম্যানেজমেন্ট বলিতে ইহারা পারিবারিক ম্যানেজমেন্ট বুঝিয়া থাকে। পরিবার (বর/বউ, সন্তান, মা-বাবা) ম্যানেজ (সামলাতে) করতে করতে এদের জানের দফা রফা; এরপর আবার অফিস ম্যানেজমেন্ট! উহাদের অনেকেই শুধুমাত্র একজন গার্লফেন্ড/বয়ফ্রেন্ড ম্যানেজ করিতে শিক্ষা জীবনের পুরোটা এবং শুধুমাত্র একজন বউ/বর ম্যানেজ করিতে পুরো জীবন অতিবাহিত করিয়া থাকে। 

৭। মাল্টিস্কিল ও মাল্টিটাস্কিং –
এই গুনটি মালিক তথা শোষক শ্রেণীর অতিশয় পছন্দনীয়। একই ব্যক্তির দশাননের ন্যায় বহুবিধ বিষয়ে দক্ষতা থাকিলে এবং দশভুজার ন্যায় একইসাথে সেগুলো করিতে পারিলে ঐ ব্যক্তি কোম্পানীর পক্ষে খুবই হিতকর বলিয়া ধরা হয়। অজ্ঞাত কারনে এ অঞ্চলে এমন মানুষ জন্মায় না; অজানা কারনে তাহারা কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করিতে চাহে না; অত্যন্ত বিপদে পড়িলে উহারা কদাচিৎ দু-একটি স্কিল তৈরী করিয়া থাকে।

৮। জাত যাওয়ার ভয়ঃ
জাতিগতভাবে আমরা শিল্প-কারখানা এবং মাঠ পর্যায়ে কাজ করিতে অনিচ্ছুক; উহাতে আমাদের সামাজিক সম্মান কমিয়া যায়। আমাদের সকলের ইচ্ছা আমরা সবাই অফিসার হইব, এসি রুমে ডেস্ক জব করিব। সবাই বিনা পরিশ্রমে বা খুব কম পরিশ্রমে অল্প সময়ে চাকরীতে ভাল করিতে চাই; তৎসঙ্গে আজীবন চাকরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত দেখিতে চাই। কিন্তু শর্তমতে কারখানায় কাজের অভিজ্ঞতা ব্যতীত কেউ বিশেষজ্ঞ হইতে পারেনা, ফলে শোষকেরা কাংখিত দেশী এক্সপার্টিজ পায়না।


Written By: 
Shukdev Biswas
Bangladesh University of Textiles

পোশাকশিল্পে কেনো বিদেশী বিশেষজ্ঞ বা ফরেন এক্সপার্টিজ দরকার হয়

" পোশাকশিল্পে কেন বিদেশী বিশেষজ্ঞ বা ফরেন এক্সপার্টিজ দরকার হয়"


অনেকেই ফরেন এক্সপার্টিজদের এদেশে কাজ করা দেখিয়া কষ্টে বিহ্বল ও শোকে মুহ্যমান হইয়া পড়েন। ভারতীয়রা প্রতিবছর এ দেশ থেকে কত হাজার কোটি টাকা লইয়া যাচ্ছে; পাকিস্থান, ফিলিপিনো আর তার্কিশরা হাজার হাজার টাকা লইয়া যাচ্ছে বলিয়া মাতম তোলেন। কিন্তু তাহারা কি তাহাদের/আমাদের সীমাবদ্ধতা কখনও ভাবিয়া দেখিয়াছেন?! যাহারা শিল্প-প্রতিষ্ঠানের মালিক তাহারা কি বোকার মত শুধু শুধু লক্ষ লক্ষ ডলার দিয়া ফরেন এক্সপার্টিজ রাখিতেছে? বিগত ৯ বছর এই খাতে যুক্ত থাকিবার অভিজ্ঞতা হইতে আমার মনে হইয়াছে শিল্পপতিরা প্রায় শতভাগ সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়াছেন, নিচ্ছেন। শিল্পের বর্তমান অবস্থায় উহাদের গুরুত্ব অনেক এবং ভূমিকা অনসবীকার্য।

(" পোশাকশিল্পে কেন বিদেশী বিশেষজ্ঞ বা ফরেন এক্সপার্টিজ দরকার হয়" )

১। দেশের গ্র্যাজুয়েটদের মান অতিশয় নাজুক। উহাদের অধিকাংশ (আনুমানিক ৯০%) কমুউনিকেটিভ ইংরেজী দূরে থাক, মাতৃভাষা বাংলা ঠিকমত লিখিতে, পড়িতে ও বলিতে পারে না। সিলেটের মার্চেন্ডাইজার, নোয়াখালীর ওয়াস-টেক, কুমিল্লার কোয়ালিটি অফিসার, চট্রগ্রামের প্যাটার্ন মাস্টার, বরিশালের অপারেশন ম্যানেজার পি,পি মিটিং এ পরস্পরের কথোপকথন ও বৈঠক সিদ্ধান্ত নিজেরাও বোঝে না আর শোষক শ্রেণীকে (মালিককে) অথবা ক্রেতাকে কোনক্রমেই জানাইতে বা বোঝাইতে পারেনা।

২। যে বিষয়েই পড়ালেখা করুক না কেন দেশের যেকোন বিশ্ববিদ্যালয় হইতে
পরিশেষে সবাই দার্শনিক হইয়া বের হয়। দার্শনিকরা চাকরী পছন্দ করেন না। না পছন্দ করা কোন কিছু ভালবাসা যায় না, ফলে উহাদের চাকরী করিতে মোটেই ভাল লাগে না। শর্তমতে ভাল না লাগা কোন বিষয়ে কেউ বিশেষজ্ঞ বা এক্সপার্ট হইতে পারে না।

৩। একজন এক্সপার্টজকে অবশ্যই গনিতে ভাল হইতে হয়; এদেশে আলোচনার মাধ্যমে গাণিতিক সমস্যার সমাধান করা হয়। দেখা গিয়াছে ক্রেতারা উক্ত গণিত (আলোচিত গণিত) বুঝিতে পারেনা বিধায় মালিক পক্ষ (তথা শোষক শ্রেণী) বিদেশী এক্সপার্টিজ  নিয়োগ দেয়।

৪। প্রোফেশনালিজম বা পেশাদারিত্ব কি জিনিস, উহা খায় না মাথায় নেয় তা এ অঞ্চলের মানুষ আজও জানে না, বোঝে না। পরিবার বা শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান হইতে উহারা নার্সারি লেভেলের পেশাদারিত্বের শিক্ষাও পায় না, ফলে বিপদে পড়িয়া উহারা গ্রাম-বাংলার বিভিন্ন হাট-বাজারে ভালমানুষী গুনাবলি ক্রয় করিয়া থাকে। দেশের সরকারী চাকুরীতে উহার উচ্চ সামাজিক মূল্য থাকিলেও সামাজ্যবাদী বুর্জুয়া ইউরোপের কাছে ভালমানুষী পেশাদারিত্বের কাছে মারা খায়!

৫। টেকনিক্যাল স্কিলঃ
 এটি আয়ত্ত করিতে যুগতপত ভাবে মাথার র‍্যাম ও প্রসেসর ভাল হওয়া লাগে। পাশাপাশি উহা শিখিতে টেকনিক্যাল এডুকেশন অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং শিখিতে হয়, খুব ধৈর্য্য ও আগ্রহের প্রয়োজন হয়। এরপর ঐ ব্যক্তিকে ডিটেল ওরিয়েন্টেড বা যেকোন বিষয়ের গভীরে ঢুকার মানসিকতা ও প্রবনতা থাকিতে হয়। বাংলায় এমন মানুষের সংখ্যা বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীদের ন্যায় অতীব কম।

৬। ম্যানেজমেন্ট স্কিলঃ
ম্যানেজমেন্ট বলিতে ইহারা পারিবারিক ম্যানেজমেন্ট বুঝিয়া থাকে। পরিবার (বর/বউ, সন্তান, মা-বাবা) ম্যানেজ (সামলাতে) করতে করতে এদের জানের দফা রফা; এরপর আবার অফিস ম্যানেজমেন্ট! উহাদের অনেকেই শুধুমাত্র একজন গার্লফেন্ড/বয়ফ্রেন্ড ম্যানেজ করিতে শিক্ষা জীবনের পুরোটা এবং শুধুমাত্র একজন বউ/বর ম্যানেজ করিতে পুরো জীবন অতিবাহিত করিয়া থাকে। 

৭। মাল্টিস্কিল ও মাল্টিটাস্কিং –
এই গুনটি মালিক তথা শোষক শ্রেণীর অতিশয় পছন্দনীয়। একই ব্যক্তির দশাননের ন্যায় বহুবিধ বিষয়ে দক্ষতা থাকিলে এবং দশভুজার ন্যায় একইসাথে সেগুলো করিতে পারিলে ঐ ব্যক্তি কোম্পানীর পক্ষে খুবই হিতকর বলিয়া ধরা হয়। অজ্ঞাত কারনে এ অঞ্চলে এমন মানুষ জন্মায় না; অজানা কারনে তাহারা কোন বিষয়ে দক্ষতা অর্জন করিতে চাহে না; অত্যন্ত বিপদে পড়িলে উহারা কদাচিৎ দু-একটি স্কিল তৈরী করিয়া থাকে।

৮। জাত যাওয়ার ভয়ঃ
জাতিগতভাবে আমরা শিল্প-কারখানা এবং মাঠ পর্যায়ে কাজ করিতে অনিচ্ছুক; উহাতে আমাদের সামাজিক সম্মান কমিয়া যায়। আমাদের সকলের ইচ্ছা আমরা সবাই অফিসার হইব, এসি রুমে ডেস্ক জব করিব। সবাই বিনা পরিশ্রমে বা খুব কম পরিশ্রমে অল্প সময়ে চাকরীতে ভাল করিতে চাই; তৎসঙ্গে আজীবন চাকরীর নিরাপত্তা নিশ্চিত দেখিতে চাই। কিন্তু শর্তমতে কারখানায় কাজের অভিজ্ঞতা ব্যতীত কেউ বিশেষজ্ঞ হইতে পারেনা, ফলে শোষকেরা কাংখিত দেশী এক্সপার্টিজ পায়না।


Written By: 
Shukdev Biswas
Bangladesh University of Textiles

কোন মন্তব্য নেই: