কালার কটন কি l| Colour Cotton Cultivation - Textile Lab | Textile Learning Blog
রঙিন তুলা 

তুলা শব্দটি উচ্চারন করলে প্রথমেই আমাদের চোখে ভেশে ওঠে সাদা রঙের ফাইবার। কিন্তু তুলা কিন্তু শুধু সাদাই হয় না,বাদামি,কাল,খাকি রঙেরও হতে পারে । সেই তিক রঙিন তুলাই আজকের আলোচনার বিষয়  মান বা গুনাগুনের দিক দিয়ে তুলার ফাইবারকে অন্যান্য প্রাকৃতিক ফাইবার যেমন সিল্ক,উল বা অন্যান্য ক্রিত্তিম ফাইবারের তুলনায় উৎকৃষ্ট মানের মনে করা হয় । এছাড়া প্রাকৃতিক ফাইবারের মধ্যে শুধু তুলার মধ্যেই  অনেক রকম রঙের সমাবেশ লক্ষ্য করা যায় । যদিও বর্তমানে আমরা তুলা বলতে স্বভাবত সাদা তুলাকেই বুঝি ।





তুলার মোট চারটি প্রজাতি রয়েছে যাদের বৈজ্ঞানিক নামঃ-

১।  গসিপিয়াম হারবেসিয়াম (Gossypium hirsutum)

২।  গসিপিয়াম বারবাডেন্স (Gossypium barbadense)

৩। গসিপিয়াম আরবারেয়াম (Gossypium arboreum) 

৪।  গসিপিয়াম হারবেসিয়াম(Gossypium herbaceum)







প্রজাতির ভিন্নতার জন্য এদের রঙ বাদামি,ময়লা সাদা,কালো ,লাল,খাকি হতে পারে । এদের মধ্যে দুটি প্রজাতি Arboreum ও Herbaceum মধ্য ও দক্ষিন এশিয়াতে চাষ হয় ,অপর দুটি প্রজাতি এসিয়া ও আফ্রিকাতে । এছাড়া Gossypium এর আরও কিছু বন্য প্রজাতি রঙিন তুলা উৎপন্ন করে । সিনথেটিক কটন ডাইং পদ্ধতি উদ্ভাবিত হওয়ার আগ পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে এই প্রাকৃতিক রঙিন তুলার চাষ হত । রঙিন তুলার মান নতুন আধুনিক জাতের সাদা তুলার তুলনায় নিন্ম মানের হয় যা সহজে স্পিনিং যোগ্য নয় । শিল্প বিপ্লবের পর পাউয়ার লুম , মডার্ন জিনিং ম্যাশিন ও সিনথেটিক ডাইং এর মত প্রযুক্তি আসার পর তুলা ও তুলাজাত পোশাকের উৎপাদন বাড়লেও রঙিন তুলার উৎপাদন কমেছে । উচ্চ উৎপাদনশীল G.Hirsutum ও G.barbadense এর সাদা রঙের তুলা প্রজাতি সেই জায়গা দখল করেছে । ফলশ্রুতিতে ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রঙিন তুলার চাষ প্রায় বন্ধ হয়ে যায় । এর কারন কম উৎপাদন,নিন্ম মান ও রঙের অল্প স্থায়িত্ব ।তবে পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে আবারো প্রাকৃতিক রঙিন তুলার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে ।



প্রাকৃতিক রঙিন তুলার চাষ প্রথম শুরু হয় প্রায় ৫০০০ বছর আগে ।

G.Hirsutum ও G.Barbadense এই দুটি প্রজাতি খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০ আগে থেকে দক্ষিন আমেরিকায় চাষ হত এবং খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দ থেকে G.harbeceumave ও G.Arboreum এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অংশে উৎপন্ন হত । প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ভারত,চিন,মধ্য এশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নে বিভিন্ন রঙের বৈচিত্র্যময় ডিপ্লয়েড তুলার প্রজাতি চাষ হয়ে আসছে । বিশ্ববিখ্যাত মসলিন শাড়ি তৈরিতে ব্যাবহার হত ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার তীরে উৎপন্ন রঙিন তুলা থেকে ।

বহুকাল ধরে বাংলাদেশের তিনটি পাহাড়ি জেলায় বসবাসকারী উপজাতিদের জুম চাষে খাকী রঙের G.arboreum জাতটি চাষ হয়ে আসছে । কিন্তু সাদা তুলার অধিক উৎপাদনশীলতা ও উচ্চমান তথা সর্বোপরি আধুনিক যন্ত্রে এর সহজ ব্যাবহার্জতার কারনে এই অঞ্চলের তুলার বাণিজ্যিকিকরন কখনই সম্ভব হয় নি এবং চাষিদের সুযোগ সুবিধাও তেমন না বাড়ায় পরবর্তীতে এই তুলার চাষ বন্ধ হয়ে যায় পরিবেশ দুশনের কথা মাথায় রেখে সারাবিশ্বে যখন অরগানিক তুলার চাষ বারছে তারই প্রভাবে বাংলাদেশেও এই রঙিন অরগানিক তুলার দিকে নজর দেয়া হয়েছে । তুলা উন্নয়ন বোর্ড এই তুলার গুনাগুন ও রঙ উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেছে ফলশ্রুতিতে ইতোমধ্যে কিছু নতুন উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবিত হয়েছে তারই একটি HC-2 । ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে খাকী রঙের কো কানাডা-১ ও কো কানাডা-২ নামের দুটি প্রজাতি চাষ হচ্ছে অন্যদিকে  আসাম ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে কাল,বাদামি ও ক্রিম কালারের অরগানিক তুলার চাষ হচ্ছে । এসমস্ত তুলার বেশীরভাগ জাপানে রপ্তানি হয় । ১৬০০ শতাব্দীর মানুষের মধ্যে রঙিন তুলার পোশাকে একটি ঐতিহ্যবাহী দিক ছিল এসময়ে অতিথি আপ্যায়নে রঙিন তুলার পোশাক উপহার দেয়া হত ।এই ঐতিহ্য কিছুদিন আগেও চাকমা মারমাদের মধ্যে টিকে ছিল । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন সিনথেটিক ডাইং করার কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছিল তখন সেনাবাহিনীর ইউনিফর্মের চাহিদা মেটাতে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে বিস্তর আকারে রঙিন অরগানিক তুলার চাষ শুরু হয়েছিল ।




রঙিন তুলার চাষ কমার আরেকটি কারন হিসেবে মনে করা হয় উন্নত ম্যাশিনারিজ ও উন্নত স্পিনিং ও ডাইং ব্যাবস্থার আগমন । কারন এসব উন্নত প্রযুক্তি শুধু নরম,লম্বা ও শক্তিশালী ফাইবারের জন্যই উপযোগী কিন্তু অরগানিক তুলাতে এসব গুণাবলীর অভাব রয়েছে । রঙিন অরগানিক তুলাকে স্পিনিং যোগ্য করার ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্থানের বিজ্ঞানীদের অবদান উল্লেখযোগ্য । ভারতে উচ্চমান দিতে সক্ষম G.hirsutum G.Arboreum ও অনান্য পুরাতন জাতের তুলার মোট ১২ টি জিনোটাইপ তৈরি হয়েছে । এছাড়া আরও ৫০ টির মত নতুন রঙিন তুলা উৎপাদনকারী জাত উদ্ভাবিত হয়েছে যেগুলোর বেহিরভাগ ভারতীয় উপমহাদেশের পরিবেশের জন্য চাষযোগ্য ।


Collected post

কালার কটন কি l| Colour Cotton Cultivation

রঙিন তুলা 

তুলা শব্দটি উচ্চারন করলে প্রথমেই আমাদের চোখে ভেশে ওঠে সাদা রঙের ফাইবার। কিন্তু তুলা কিন্তু শুধু সাদাই হয় না,বাদামি,কাল,খাকি রঙেরও হতে পারে । সেই তিক রঙিন তুলাই আজকের আলোচনার বিষয়  মান বা গুনাগুনের দিক দিয়ে তুলার ফাইবারকে অন্যান্য প্রাকৃতিক ফাইবার যেমন সিল্ক,উল বা অন্যান্য ক্রিত্তিম ফাইবারের তুলনায় উৎকৃষ্ট মানের মনে করা হয় । এছাড়া প্রাকৃতিক ফাইবারের মধ্যে শুধু তুলার মধ্যেই  অনেক রকম রঙের সমাবেশ লক্ষ্য করা যায় । যদিও বর্তমানে আমরা তুলা বলতে স্বভাবত সাদা তুলাকেই বুঝি ।





তুলার মোট চারটি প্রজাতি রয়েছে যাদের বৈজ্ঞানিক নামঃ-

১।  গসিপিয়াম হারবেসিয়াম (Gossypium hirsutum)

২।  গসিপিয়াম বারবাডেন্স (Gossypium barbadense)

৩। গসিপিয়াম আরবারেয়াম (Gossypium arboreum) 

৪।  গসিপিয়াম হারবেসিয়াম(Gossypium herbaceum)







প্রজাতির ভিন্নতার জন্য এদের রঙ বাদামি,ময়লা সাদা,কালো ,লাল,খাকি হতে পারে । এদের মধ্যে দুটি প্রজাতি Arboreum ও Herbaceum মধ্য ও দক্ষিন এশিয়াতে চাষ হয় ,অপর দুটি প্রজাতি এসিয়া ও আফ্রিকাতে । এছাড়া Gossypium এর আরও কিছু বন্য প্রজাতি রঙিন তুলা উৎপন্ন করে । সিনথেটিক কটন ডাইং পদ্ধতি উদ্ভাবিত হওয়ার আগ পর্যন্ত পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে এই প্রাকৃতিক রঙিন তুলার চাষ হত । রঙিন তুলার মান নতুন আধুনিক জাতের সাদা তুলার তুলনায় নিন্ম মানের হয় যা সহজে স্পিনিং যোগ্য নয় । শিল্প বিপ্লবের পর পাউয়ার লুম , মডার্ন জিনিং ম্যাশিন ও সিনথেটিক ডাইং এর মত প্রযুক্তি আসার পর তুলা ও তুলাজাত পোশাকের উৎপাদন বাড়লেও রঙিন তুলার উৎপাদন কমেছে । উচ্চ উৎপাদনশীল G.Hirsutum ও G.barbadense এর সাদা রঙের তুলা প্রজাতি সেই জায়গা দখল করেছে । ফলশ্রুতিতে ১৯ শতকের মাঝামাঝি সময়ে রঙিন তুলার চাষ প্রায় বন্ধ হয়ে যায় । এর কারন কম উৎপাদন,নিন্ম মান ও রঙের অল্প স্থায়িত্ব ।তবে পরিবেশ বান্ধব হওয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে আবারো প্রাকৃতিক রঙিন তুলার গুরুত্ব বৃদ্ধি পাচ্ছে ।



প্রাকৃতিক রঙিন তুলার চাষ প্রথম শুরু হয় প্রায় ৫০০০ বছর আগে ।

G.Hirsutum ও G.Barbadense এই দুটি প্রজাতি খ্রিস্টপূর্ব ২৩০০ আগে থেকে দক্ষিন আমেরিকায় চাষ হত এবং খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দ থেকে G.harbeceumave ও G.Arboreum এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের বিভিন্ন অংশে উৎপন্ন হত । প্রাগৈতিহাসিক যুগ থেকে ভারত,চিন,মধ্য এশিয়া ও সোভিয়েত ইউনিয়নে বিভিন্ন রঙের বৈচিত্র্যময় ডিপ্লয়েড তুলার প্রজাতি চাষ হয়ে আসছে । বিশ্ববিখ্যাত মসলিন শাড়ি তৈরিতে ব্যাবহার হত ঢাকা ও ঢাকার পার্শ্ববর্তী মেঘনা ও ব্রহ্মপুত্র অববাহিকার তীরে উৎপন্ন রঙিন তুলা থেকে ।

বহুকাল ধরে বাংলাদেশের তিনটি পাহাড়ি জেলায় বসবাসকারী উপজাতিদের জুম চাষে খাকী রঙের G.arboreum জাতটি চাষ হয়ে আসছে । কিন্তু সাদা তুলার অধিক উৎপাদনশীলতা ও উচ্চমান তথা সর্বোপরি আধুনিক যন্ত্রে এর সহজ ব্যাবহার্জতার কারনে এই অঞ্চলের তুলার বাণিজ্যিকিকরন কখনই সম্ভব হয় নি এবং চাষিদের সুযোগ সুবিধাও তেমন না বাড়ায় পরবর্তীতে এই তুলার চাষ বন্ধ হয়ে যায় পরিবেশ দুশনের কথা মাথায় রেখে সারাবিশ্বে যখন অরগানিক তুলার চাষ বারছে তারই প্রভাবে বাংলাদেশেও এই রঙিন অরগানিক তুলার দিকে নজর দেয়া হয়েছে । তুলা উন্নয়ন বোর্ড এই তুলার গুনাগুন ও রঙ উন্নয়নে কিছু পদক্ষেপ গ্রহন করেছে ফলশ্রুতিতে ইতোমধ্যে কিছু নতুন উচ্চ ফলনশীল জাত উদ্ভাবিত হয়েছে তারই একটি HC-2 । ভারতের অন্ধ্র প্রদেশে খাকী রঙের কো কানাডা-১ ও কো কানাডা-২ নামের দুটি প্রজাতি চাষ হচ্ছে অন্যদিকে  আসাম ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকাগুলোতে কাল,বাদামি ও ক্রিম কালারের অরগানিক তুলার চাষ হচ্ছে । এসমস্ত তুলার বেশীরভাগ জাপানে রপ্তানি হয় । ১৬০০ শতাব্দীর মানুষের মধ্যে রঙিন তুলার পোশাকে একটি ঐতিহ্যবাহী দিক ছিল এসময়ে অতিথি আপ্যায়নে রঙিন তুলার পোশাক উপহার দেয়া হত ।এই ঐতিহ্য কিছুদিন আগেও চাকমা মারমাদের মধ্যে টিকে ছিল । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় যখন সিনথেটিক ডাইং করার কাজ বাধাগ্রস্থ হচ্ছিল তখন সেনাবাহিনীর ইউনিফর্মের চাহিদা মেটাতে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নে বিস্তর আকারে রঙিন অরগানিক তুলার চাষ শুরু হয়েছিল ।




রঙিন তুলার চাষ কমার আরেকটি কারন হিসেবে মনে করা হয় উন্নত ম্যাশিনারিজ ও উন্নত স্পিনিং ও ডাইং ব্যাবস্থার আগমন । কারন এসব উন্নত প্রযুক্তি শুধু নরম,লম্বা ও শক্তিশালী ফাইবারের জন্যই উপযোগী কিন্তু অরগানিক তুলাতে এসব গুণাবলীর অভাব রয়েছে । রঙিন অরগানিক তুলাকে স্পিনিং যোগ্য করার ক্ষেত্রে ভারত ও পাকিস্থানের বিজ্ঞানীদের অবদান উল্লেখযোগ্য । ভারতে উচ্চমান দিতে সক্ষম G.hirsutum G.Arboreum ও অনান্য পুরাতন জাতের তুলার মোট ১২ টি জিনোটাইপ তৈরি হয়েছে । এছাড়া আরও ৫০ টির মত নতুন রঙিন তুলা উৎপাদনকারী জাত উদ্ভাবিত হয়েছে যেগুলোর বেহিরভাগ ভারতীয় উপমহাদেশের পরিবেশের জন্য চাষযোগ্য ।


Collected post

কোন মন্তব্য নেই: