সময়ের দাবি টেক্সটাইল ক্যাডার | Textile Cadres Service | Textile BCS Quota - Textile Lab | Textile Learning Blog
সময়ের দাবি টেক্সটাইল ক্যাডার

আমরা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা টেক্সটাইল সেক্টরের বিশেষজ্ঞ হিসেবে বহুদিন ধরে দেশের অর্থনীতি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে আসছি। দেশের বর্তমান অর্থনীতিতে টেক্সটাইল খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশে বর্তমানে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাত একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে প্রায় 7,000 গার্মেন্টস এবং 4,000 এর মত বস্ত্র শিল্প কারখানা তথা ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ রয়েছে। গার্মেন্টস বা তৈরী পোশাক কারখানার মূল উপাদান কাপড় তৈরী ও সেলাই উপযোগী করণটাই প্রযুক্তির মূল জায়গা। বাংলাদেশে 4,000 এর মত সুতা উৎপাদন ও রং রসায়ন (Dyeing) কারখানা রয়েছে। উক্ত কারখানাগুলোতে প্রতি বছর 7,000 গার্মেন্টসের প্রধান কাঁচামাল কাপড় তৈরী করছে। আর এ কাপড় প্রক্রিয়াকরণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারগণ। গার্মেন্টস কারখানায় কর্মরত 40,00,000 শ্রমিকের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখে বলা যায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার না থাকলে দেশের গার্মেন্টস খাত েএ পর্যায়ে আসতে পারত না। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারগণ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ কারখানা গুলোতে ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক মান সম্পন্ন কাপড় উৎপাদন করে একদিকে যেমন কাপড় আমদানী সাশ্রয় তথা বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করছে অন্যদিকে বিদেশী প্রকৌশলীর অভাব পূরণ করে দেশীয় মুদ্রার পাচার রোধ করছে। প্রসংগত উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় নীট কাপড়ের 90% এবং ওভেন কাপড়ের 40% চাহিদা দেশেই মেটানো সম্ভব হচ্ছে। এর মূল কারিগর হচ্ছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা।

বাংলাদেশে বস্ত্র প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিল্পের জন্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় হতে 410 জন ও বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত কলেজ হতে 610 জন এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হতে 3245 জন বস্ত্র প্রকৌশলী বের হচ্ছে। প্রতি বছর এ সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই 4265 জন বস্ত্র প্রকৌশলীদের একটি বড় অংশ ব্যক্তিগত মালিকানাধীন টেক্সটাইল, গার্মেন্টস কারখানা, ট্রেডিং ও বায়িং হাউসগুলোতে কাজ করছে। সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এর একটি ক্ষুদ্র অংশ কর্মরত।
বিশ্বে গার্মেন্টস রপ্তানিকারক হিসাবে বাংলাদেশ বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার শতকরা 84.00 ভাগ গার্মেন্টস খাত থেকে অর্জিত হয়। বাংলাদেশের একটি অন্যতম থ্রাষ্ট সেক্টর হিসাবে টেক্সটাইল খাত কাজ করে আসছে। অথচ এত নির্ভর যোগ্য সেক্টর হিসাবে কাজ করলেও এই টেক্সটাইল এর জন্য কোন বিসিএস ক্যাডার পদের সংস্থান বাংলাদেশের সরকারি চাকুরী ব্যবস্থায় নেই। বস্ত্র শিল্পের উন্নয়ন বিকাশে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যেমন; বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় (কাস্টমস), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় সহ বিভিন্ন সরকারী সংস্থায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের পদ রয়েছে এবং ঐ সমস্ত পদে নন-কারিগরি সাধারণ কর্মকর্তারা নিয়োজিত থেকে টেক্সটাইল বিষয়ে কাজ কর্ম সম্পাদন করছে। ফলে কারিগরি দিক থেকে যথাযথ সেবা ও দিক নির্দেশনা সহ এ সেক্টরে সরকারের উন্নয়ন নীতিমালা যথাযথ ভাবে বিঘ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। যদিও সরকার প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দিচ্ছে, অনেক মেধাবী টেক্সটাইল প্রযুক্তিবিদ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে টেক্সটাইল ক্যাডার পদ না থাকায় নন-ক্যাডার পদে যোগ দান করছে। অথচ টেক্সটাইল ক্যাডার ভুক্ত পদ থাকলে এই সকল মেধাবী কর্মকর্তা যেমন আরও গতিশীল হতো তেমনি কর্ম তৎপরতাও অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতো বেগবান হতো।

কেন টেক্সটাইল ক্যাডার প্রয়োজন:

1। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রথম শ্রেণীর পদ সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু তা ক্যাডার ভুক্ত না হওয়ায় অনেক মেধাবী টেক্সটাইল প্রযুক্তিবিদ উক্ত পদ সমূহে যোগ দান করছে না। বাংলাদেশে টেক্সটাইল সংশ্লিষ্ট একমাত্র সরকারী সংস্থা হলো “বস্ত্র পরিদপ্তর (Directorate of Textiles)’’ যা শীঘ্রই অধিদপ্তরে (Directorate of Textiles) উন্নীত হয়েছে। এই অধিদপ্তরের আওতায় 9টি (6টি’তে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান ও 3টি’র কাজ প্রকল্পের মাধ্যমে চলমান) টেক্সটাইল বি.এস সি. ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, 8টি (6টি’তে শিক্ষা কাযক্রম চলমান ও 4টি’র কাজ প্রকল্পের মাধ্যমে চলমান) টেক্সটাইর ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউট এবং 40টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট রয়েছে।

বস্ত্র পরিদপ্তরের অধীনে প্রশাসনিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রায় 227 জন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার পদ রয়েছে। এছাড়া অধিদপ্তর এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য আরো প্রায় দুই শতাধিক পদ সৃষ্টির কাজ প্রক্রিয়াধীন। অথচ টেক্সটাইল গ্র্যাজুয়েটদের এই সকল পদ বিসিএস ক্যাডার ভুক্ত না হওয়ায় এদের দক্ষতার সম্প্রসারণ হচ্ছে না। ক্যাডারভুক্ত পদ না হওয়ার কারনে অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাগণ এ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসাবে থাকছেন। ফলে টেক্সটাইল কারিগরি কর্মকর্তাগণ শুধুমাত্র নন-ক্যাডার হওয়ার কারণে যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও উপরের কোন পদে আসীন হতে পারছে না। যেমন বর্তমানে বস্ত্র পরিদপ্তরে টেক্সটাইল কারিগরি কর্মকর্তাদের সর্ব্বোচ্চ সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার উপ-পরিচাল পদ পর্যন্ত পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে। কাগজে কলমে দপ্তরের পরিচালক পদোন্নতি  যোগ্য পদ হলেও ঐ পদে আজ পর্যন্ত  কোন পদোন্নতি হয়নি, তাও পদটি উপ-সচিব মর্যাদার যেখানে সাধারণ বিষয়ে লেখাপড়া করে একজন বিসিএস কর্মকর্তা গ্রেড-১ জ্যেষ্ঠ সচিব পদে আসীন হচ্ছেন সেখানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা সারা জীবনে একটি মাত্র পদোন্নতি এবং গ্রেড-6 পর্যন্ত ওঠার সুযোগ পাচ্ছেন। এধরনের বৈষম্য শুধু মেধার চরম অপচয়। আর একারনেই বিসিএস টেক্সটাইল ক্যাডার সার্ভিস চালু হওয়া অতিব জরুরী। টেক্সটাইল ক্যাডার নামক নতুন ক্যাডার সার্ভিস চালু করে এ সকল পদ সমূহ টেক্সটাইল ক্যাডারে অর্ন্তভূক্ত করা হলে নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তারা যেমন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং মধ্যম আয়ের দেশের যে লক্ষ্য বর্তমান সরকার নির্ধারণ করেছে তাতে সরাসরি অবদান রাখতে পারবে।

2। বাংলাদেশ সরকার 2013 সাল হতে বস্ত্র খাতের পোষক কর্তৃপক্ষের কাজ দায়িত্ব বস্ত্র পরিদপ্তরে (বর্তমানে অধিদপ্তর) ন্যস্ত করেছেন। বস্ত্র শিল্প খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে এ দপ্তর হতে মিল-কারখানার মালিকদের 18 ধরনের সেবা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে প্রদান করে থাকে। এই অধিদপ্তরে পোষক কর্তৃপক্ষের কাজের জন্য 1ম শ্রেণীর গেজেটেড পদ রয়েছে প্রায় 40 টি। এ সকল পদে বি.এসসি পাশ করা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে অথচ এই সকল পদই নন-ক্যাডার। আর এই  নন-ক্যাডার পদগুলোতে বস্ত্র প্রকৌশলীর আসতে চান না বা আসলেও থাকতে চান না। যেহেতু বস্ত্র পরিদপ্তর বর্তমানে বস্ত্র খাতের পোষক কর্তৃপক্ষের কাজের দায়িত্ব পালন করছে সেহেতু টেক্সটাইল ক্যাডার চালু হলে সামাজিকভাবে সম্মানিত ছাড়াও অনেক মেধাবী সদ্য পাশকৃত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা উক্ত পদে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে আসতে পারবে।

3। বস্ত্র পরিদপ্তরের 9টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াং কলেজ, 9টি টেক্সটাইল ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউট ও 40টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট এর জন্য বিদ্যমান ও সৃষ্টিতব্য চারশতের উপর প্রথম শ্রেণীর পদ এবং এ সকল পদের জন্য টেক্সটাইল গ্র্যাজুয়েট প্রয়োজন। এ সকল পদ সমূহও নন-ক্যাডার পদ, পদগুলো নন-ক্যাডার হওয়ার কারণে এ পদে আসতে চাচ্ছেন না। ফলে পদগুলো শূণ্য থাছে। অর্থাৎ সরকার যে পদগুলো সৃষ্টি করছে সে লক্ষ্যই অর্জিত হচ্ছে না। যদি টেক্সটাইল ক্যাডার সার্ভিস চালু হয় তাহলে মেধাবী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা এ সকল পদে যোগদানের জন্য আরও বেশী আগ্রহী হবে।

4। বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় বস্ত্র শিল্প ও শিক্ষা প্রসার ও নিয়ন্ত্রনে নিবেদিত। কিন্তু এ মন্ত্রণালয়ে কোন বস্ত্র প্রকৌশলী কর্মকর্তা নেই। অথচ দেশের বস্ত্র শিল্প ও শিক্ষার প্রসারে এ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন রকম বস্ত্র বিষয়ক নীতি-নির্ধারণী কাজ করে যাচ্ছে। টেক্সটাইল ক্যাডার সৃষ্টি করা হলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে বস্ত্র প্রকৌশলীরা কাজ করতে পারবে। ফলে দেশের বস্ত্র খাত আরও বেশী সমৃদ্ধিশালী হবে।

5। বাংলাদেশ প্রকৌশল ক্যাডার, কৃষি ক্যাডার, চিকিৎসা ক্যাডার রয়েছে। হোম ইকোনমিক্সেও রয়েছে গার্হস্থ ক্যাডার। অথচ দেশের 84.00% বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন কারী টেক্সটাইল সেক্টরের জন্য নেই কোন ক্যাডার সার্ভিস। গত 2013-2014 অর্থ বছরে 24.50 বিলিয়ন ডলার শুধু এই টেক্সটাইল ক্যাডার সার্ভিস চালু না করার ফলে সামাজিক ভাবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা অবমূল্যায়িত। বর্তমানে দেশের জিডিপি’তে টেক্সটািইল খাতের অবদান হচ্ছে 7.81%। তাই এই দেশের সবচেয়ে মূল্যবান এবং থ্রাস্ট সেক্টরের জন্য ক্যাডার সার্ভিস চালু করাটা যথেষ্ট যৌক্তিক এবং সময়োপযোগী।

6।   বর্তমানে সকল 1ম শ্রেণীর টেক্সটাইল কারিগরি পদে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা নন-ক্যাডার পদে কর্মরত। ক্যাডার এর সাথে নন-ক্যাডার পদের বেতন স্কেল এক হলেও রয়েছে সামাজিক বৈষম্য। কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি স্তরে ক্যাডার পদের কর্মকর্তাদের হতে নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে। এমতাবস্থায়, টেক্সটাইল ক্যাডার সার্ভিস চালু করাটা এখন সময়ের দাবি।

7।  আই ই বি’তে রয়েছে টেক্সটাইল উইং। বর্তমানে টেক্সটাইল উইং ছাড়া আর সকল প্রকৌশলী উইং এ রয়েছে ক্যাডার সার্ভিস। ফলে আই ই বি’তে যথাযথ সম্মান পেতে হলে টেক্সটাইল ক্যাডার চালু করা ছাড়া আর কোন গতি নেই।

বর্তমান সরকার দেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সুখী ও সমৃদ্ধ একটি দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারগণ সরকারের টেক্সটাইল খাতে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে। দেশকে 2021 সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে লক্ষ্যে পৌছাতে হলে, জাতীয় উন্নয়ন আরোও গতিশীল করার লক্ষ্যে আমাদের আলোচ্য দাবী তথা টেক্সটাইল ক্যাডার বাস্তবায়ন হলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা আরোও বেগবান হবে।
(সমাপ্ত)

Written By :Ali Azom Rokon 

--

সময়ের দাবি টেক্সটাইল ক্যাডার | Textile Cadres Service | Textile BCS Quota

সময়ের দাবি টেক্সটাইল ক্যাডার

আমরা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা টেক্সটাইল সেক্টরের বিশেষজ্ঞ হিসেবে বহুদিন ধরে দেশের অর্থনীতি সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখে আসছি। দেশের বর্তমান অর্থনীতিতে টেক্সটাইল খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। বাংলাদেশে বর্তমানে টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস খাত একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে রয়েছে। বর্তমানে প্রায় 7,000 গার্মেন্টস এবং 4,000 এর মত বস্ত্র শিল্প কারখানা তথা ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ রয়েছে। গার্মেন্টস বা তৈরী পোশাক কারখানার মূল উপাদান কাপড় তৈরী ও সেলাই উপযোগী করণটাই প্রযুক্তির মূল জায়গা। বাংলাদেশে 4,000 এর মত সুতা উৎপাদন ও রং রসায়ন (Dyeing) কারখানা রয়েছে। উক্ত কারখানাগুলোতে প্রতি বছর 7,000 গার্মেন্টসের প্রধান কাঁচামাল কাপড় তৈরী করছে। আর এ কাপড় প্রক্রিয়াকরণে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারগণ। গার্মেন্টস কারখানায় কর্মরত 40,00,000 শ্রমিকের প্রতি যথাযথ শ্রদ্ধা রেখে বলা যায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার না থাকলে দেশের গার্মেন্টস খাত েএ পর্যায়ে আসতে পারত না। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারগণ ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ কারখানা গুলোতে ক্রেতাদের চাহিদা মোতাবেক মান সম্পন্ন কাপড় উৎপাদন করে একদিকে যেমন কাপড় আমদানী সাশ্রয় তথা বিপুল বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় করছে অন্যদিকে বিদেশী প্রকৌশলীর অভাব পূরণ করে দেশীয় মুদ্রার পাচার রোধ করছে। প্রসংগত উল্লেখ্য যে, বাংলাদেশের গার্মেন্টস কারখানার জন্য প্রয়োজনীয় নীট কাপড়ের 90% এবং ওভেন কাপড়ের 40% চাহিদা দেশেই মেটানো সম্ভব হচ্ছে। এর মূল কারিগর হচ্ছে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা।

বাংলাদেশে বস্ত্র প্রকৌশল ও প্রযুক্তি শিল্পের জন্য বাংলাদেশ টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় হতে 410 জন ও বিশ্ববিদ্যালয় অধিভূক্ত কলেজ হতে 610 জন এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় হতে 3245 জন বস্ত্র প্রকৌশলী বের হচ্ছে। প্রতি বছর এ সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই 4265 জন বস্ত্র প্রকৌশলীদের একটি বড় অংশ ব্যক্তিগত মালিকানাধীন টেক্সটাইল, গার্মেন্টস কারখানা, ট্রেডিং ও বায়িং হাউসগুলোতে কাজ করছে। সরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে এর একটি ক্ষুদ্র অংশ কর্মরত।
বিশ্বে গার্মেন্টস রপ্তানিকারক হিসাবে বাংলাদেশ বর্তমানে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে। দেশের বৈদেশিক মুদ্রার শতকরা 84.00 ভাগ গার্মেন্টস খাত থেকে অর্জিত হয়। বাংলাদেশের একটি অন্যতম থ্রাষ্ট সেক্টর হিসাবে টেক্সটাইল খাত কাজ করে আসছে। অথচ এত নির্ভর যোগ্য সেক্টর হিসাবে কাজ করলেও এই টেক্সটাইল এর জন্য কোন বিসিএস ক্যাডার পদের সংস্থান বাংলাদেশের সরকারি চাকুরী ব্যবস্থায় নেই। বস্ত্র শিল্পের উন্নয়ন বিকাশে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় যেমন; বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় (কাস্টমস), বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয় সহ বিভিন্ন সরকারী সংস্থায় টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের পদ রয়েছে এবং ঐ সমস্ত পদে নন-কারিগরি সাধারণ কর্মকর্তারা নিয়োজিত থেকে টেক্সটাইল বিষয়ে কাজ কর্ম সম্পাদন করছে। ফলে কারিগরি দিক থেকে যথাযথ সেবা ও দিক নির্দেশনা সহ এ সেক্টরে সরকারের উন্নয়ন নীতিমালা যথাযথ ভাবে বিঘ্নের সম্মুখীন হচ্ছেন। যদিও সরকার প্রথম শ্রেণীর নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দিচ্ছে, অনেক মেধাবী টেক্সটাইল প্রযুক্তিবিদ বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে টেক্সটাইল ক্যাডার পদ না থাকায় নন-ক্যাডার পদে যোগ দান করছে। অথচ টেক্সটাইল ক্যাডার ভুক্ত পদ থাকলে এই সকল মেধাবী কর্মকর্তা যেমন আরও গতিশীল হতো তেমনি কর্ম তৎপরতাও অন্যান্য ক্যাডার কর্মকর্তাদের মতো বেগবান হতো।

কেন টেক্সটাইল ক্যাডার প্রয়োজন:

1। বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন সরকারী প্রতিষ্ঠানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রথম শ্রেণীর পদ সৃষ্টি হয়েছে, কিন্তু তা ক্যাডার ভুক্ত না হওয়ায় অনেক মেধাবী টেক্সটাইল প্রযুক্তিবিদ উক্ত পদ সমূহে যোগ দান করছে না। বাংলাদেশে টেক্সটাইল সংশ্লিষ্ট একমাত্র সরকারী সংস্থা হলো “বস্ত্র পরিদপ্তর (Directorate of Textiles)’’ যা শীঘ্রই অধিদপ্তরে (Directorate of Textiles) উন্নীত হয়েছে। এই অধিদপ্তরের আওতায় 9টি (6টি’তে শিক্ষা কার্যক্রম চলমান ও 3টি’র কাজ প্রকল্পের মাধ্যমে চলমান) টেক্সটাইল বি.এস সি. ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, 8টি (6টি’তে শিক্ষা কাযক্রম চলমান ও 4টি’র কাজ প্রকল্পের মাধ্যমে চলমান) টেক্সটাইর ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউট এবং 40টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট রয়েছে।

বস্ত্র পরিদপ্তরের অধীনে প্রশাসনিক ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের প্রায় 227 জন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তার পদ রয়েছে। এছাড়া অধিদপ্তর এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য আরো প্রায় দুই শতাধিক পদ সৃষ্টির কাজ প্রক্রিয়াধীন। অথচ টেক্সটাইল গ্র্যাজুয়েটদের এই সকল পদ বিসিএস ক্যাডার ভুক্ত না হওয়ায় এদের দক্ষতার সম্প্রসারণ হচ্ছে না। ক্যাডারভুক্ত পদ না হওয়ার কারনে অন্য ক্যাডার কর্মকর্তাগণ এ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার হিসাবে থাকছেন। ফলে টেক্সটাইল কারিগরি কর্মকর্তাগণ শুধুমাত্র নন-ক্যাডার হওয়ার কারণে যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও উপরের কোন পদে আসীন হতে পারছে না। যেমন বর্তমানে বস্ত্র পরিদপ্তরে টেক্সটাইল কারিগরি কর্মকর্তাদের সর্ব্বোচ্চ সরকারের সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার উপ-পরিচাল পদ পর্যন্ত পদোন্নতির সুযোগ রয়েছে। কাগজে কলমে দপ্তরের পরিচালক পদোন্নতি  যোগ্য পদ হলেও ঐ পদে আজ পর্যন্ত  কোন পদোন্নতি হয়নি, তাও পদটি উপ-সচিব মর্যাদার যেখানে সাধারণ বিষয়ে লেখাপড়া করে একজন বিসিএস কর্মকর্তা গ্রেড-১ জ্যেষ্ঠ সচিব পদে আসীন হচ্ছেন সেখানে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা সারা জীবনে একটি মাত্র পদোন্নতি এবং গ্রেড-6 পর্যন্ত ওঠার সুযোগ পাচ্ছেন। এধরনের বৈষম্য শুধু মেধার চরম অপচয়। আর একারনেই বিসিএস টেক্সটাইল ক্যাডার সার্ভিস চালু হওয়া অতিব জরুরী। টেক্সটাইল ক্যাডার নামক নতুন ক্যাডার সার্ভিস চালু করে এ সকল পদ সমূহ টেক্সটাইল ক্যাডারে অর্ন্তভূক্ত করা হলে নন-ক্যাডার প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তারা যেমন আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন এবং মধ্যম আয়ের দেশের যে লক্ষ্য বর্তমান সরকার নির্ধারণ করেছে তাতে সরাসরি অবদান রাখতে পারবে।

2। বাংলাদেশ সরকার 2013 সাল হতে বস্ত্র খাতের পোষক কর্তৃপক্ষের কাজ দায়িত্ব বস্ত্র পরিদপ্তরে (বর্তমানে অধিদপ্তর) ন্যস্ত করেছেন। বস্ত্র শিল্প খাতে বিনিয়োগ বৃদ্ধি করতে এ দপ্তর হতে মিল-কারখানার মালিকদের 18 ধরনের সেবা অত্যন্ত দ্রুতগতিতে প্রদান করে থাকে। এই অধিদপ্তরে পোষক কর্তৃপক্ষের কাজের জন্য 1ম শ্রেণীর গেজেটেড পদ রয়েছে প্রায় 40 টি। এ সকল পদে বি.এসসি পাশ করা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার রয়েছে অথচ এই সকল পদই নন-ক্যাডার। আর এই  নন-ক্যাডার পদগুলোতে বস্ত্র প্রকৌশলীর আসতে চান না বা আসলেও থাকতে চান না। যেহেতু বস্ত্র পরিদপ্তর বর্তমানে বস্ত্র খাতের পোষক কর্তৃপক্ষের কাজের দায়িত্ব পালন করছে সেহেতু টেক্সটাইল ক্যাডার চালু হলে সামাজিকভাবে সম্মানিত ছাড়াও অনেক মেধাবী সদ্য পাশকৃত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা উক্ত পদে বিসিএস পরীক্ষার মাধ্যমে আসতে পারবে।

3। বস্ত্র পরিদপ্তরের 9টি টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াং কলেজ, 9টি টেক্সটাইল ডিপ্লোমা ইন্সটিটিউট ও 40টি টেক্সটাইল ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট এর জন্য বিদ্যমান ও সৃষ্টিতব্য চারশতের উপর প্রথম শ্রেণীর পদ এবং এ সকল পদের জন্য টেক্সটাইল গ্র্যাজুয়েট প্রয়োজন। এ সকল পদ সমূহও নন-ক্যাডার পদ, পদগুলো নন-ক্যাডার হওয়ার কারণে এ পদে আসতে চাচ্ছেন না। ফলে পদগুলো শূণ্য থাছে। অর্থাৎ সরকার যে পদগুলো সৃষ্টি করছে সে লক্ষ্যই অর্জিত হচ্ছে না। যদি টেক্সটাইল ক্যাডার সার্ভিস চালু হয় তাহলে মেধাবী টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা এ সকল পদে যোগদানের জন্য আরও বেশী আগ্রহী হবে।

4। বর্তমানে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয় বস্ত্র শিল্প ও শিক্ষা প্রসার ও নিয়ন্ত্রনে নিবেদিত। কিন্তু এ মন্ত্রণালয়ে কোন বস্ত্র প্রকৌশলী কর্মকর্তা নেই। অথচ দেশের বস্ত্র শিল্প ও শিক্ষার প্রসারে এ মন্ত্রণালয় বিভিন্ন রকম বস্ত্র বিষয়ক নীতি-নির্ধারণী কাজ করে যাচ্ছে। টেক্সটাইল ক্যাডার সৃষ্টি করা হলে বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ে বস্ত্র প্রকৌশলীরা কাজ করতে পারবে। ফলে দেশের বস্ত্র খাত আরও বেশী সমৃদ্ধিশালী হবে।

5। বাংলাদেশ প্রকৌশল ক্যাডার, কৃষি ক্যাডার, চিকিৎসা ক্যাডার রয়েছে। হোম ইকোনমিক্সেও রয়েছে গার্হস্থ ক্যাডার। অথচ দেশের 84.00% বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন কারী টেক্সটাইল সেক্টরের জন্য নেই কোন ক্যাডার সার্ভিস। গত 2013-2014 অর্থ বছরে 24.50 বিলিয়ন ডলার শুধু এই টেক্সটাইল ক্যাডার সার্ভিস চালু না করার ফলে সামাজিক ভাবে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা অবমূল্যায়িত। বর্তমানে দেশের জিডিপি’তে টেক্সটািইল খাতের অবদান হচ্ছে 7.81%। তাই এই দেশের সবচেয়ে মূল্যবান এবং থ্রাস্ট সেক্টরের জন্য ক্যাডার সার্ভিস চালু করাটা যথেষ্ট যৌক্তিক এবং সময়োপযোগী।

6।   বর্তমানে সকল 1ম শ্রেণীর টেক্সটাইল কারিগরি পদে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়াররা নন-ক্যাডার পদে কর্মরত। ক্যাডার এর সাথে নন-ক্যাডার পদের বেতন স্কেল এক হলেও রয়েছে সামাজিক বৈষম্য। কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি স্তরে ক্যাডার পদের কর্মকর্তাদের হতে নন-ক্যাডার কর্মকর্তারা বিভিন্ন ধরনের বৈষম্যের স্বীকার হচ্ছে। এমতাবস্থায়, টেক্সটাইল ক্যাডার সার্ভিস চালু করাটা এখন সময়ের দাবি।

7।  আই ই বি’তে রয়েছে টেক্সটাইল উইং। বর্তমানে টেক্সটাইল উইং ছাড়া আর সকল প্রকৌশলী উইং এ রয়েছে ক্যাডার সার্ভিস। ফলে আই ই বি’তে যথাযথ সম্মান পেতে হলে টেক্সটাইল ক্যাডার চালু করা ছাড়া আর কোন গতি নেই।

বর্তমান সরকার দেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর আদর্শে সুখী ও সমৃদ্ধ একটি দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছে। টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারগণ সরকারের টেক্সটাইল খাতে পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে আসছে। দেশকে 2021 সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হিসাবে লক্ষ্যে পৌছাতে হলে, জাতীয় উন্নয়ন আরোও গতিশীল করার লক্ষ্যে আমাদের আলোচ্য দাবী তথা টেক্সটাইল ক্যাডার বাস্তবায়ন হলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ভূমিকা আরোও বেগবান হবে।
(সমাপ্ত)

Written By :Ali Azom Rokon 

--

কোন মন্তব্য নেই: