যারা স্টুডেন্ট লাইফে টেক্সটাইল জবকে সহজ মনে করছেন টেক্সটাইল জব এতোটা সহজ নয় এখানে প্রডাকশনে বসার জন্য চেয়ার পাবেন না পেলেও সে সুযোগ হবেনা বসার । গরম ডাস্ট পলিউশন তো ফ্রি । টার্গেট এচিভ করতে শ্রমিকদের পেছনে দৌড়াদৌড়ি করতে করতে কখন লান্স এর সময় হবে কখন বিকাল ৫ টা বাজবে বুঝতে পারবেন না । তার উপর দিনে ২-৩ বার মিটিং প্রডাকশন রিপোর্ট তো কমন । ১০ মেশিনের আপডেট থাকতে তো হবে, ৯ নাম্বার মেশিনের অপারেটর কাপড়ে দাগ লাগাইসে সেটাও আপনার দোষ । পান থেকে চুন খসছে খাও শো কজ, হাজিরা নাই ৩ দিন ।
নাইট ডিউটি বাসায় গিয়ে দিলেন ঘুম আরামে আর সে সময় ফোন অমুক আপনি কোথায় আসেন এই মুহুর্তে গিয়ে দেখলেন কাপড়ে এক ছিদ্র থাকার কথা সেখানে ২ টা ।
এক সময় আপনি অফিসার নাকি অপারেটর নাকি হেল্পার নাকি লোডার নিজেই ভুলে যাবেন আপনি কি । হাতে যদি স্মার্ট ঘড়ি থাকে দিন শেষে স্টেপ ক্যালকুলেট করে দেখবেন একই ফ্লোরে আপনার ৫-৬ কিলো হাটা শেষ ।
কাম কম গিবত বেশী , সারাদিন থাকবেন অন্যের বদনাম নিয়ে ব্যাস্ত । ডিপার্টমেন্ট Vs ডিপার্টমেন্ট আক্রমন পাল্টা আক্রমণ চলতে থাকবে ।
ডাইংয়ে কাজ করে পাশের মেশিন এ যাবারি সময় হবেনা। ভাবছেন এক ফ্লোরে থেকে সব শিখে ফেলবেন।
চেয়ারে এসে বসবেন কাজ তখনি চেপে বসবে জ্বিনের মতো । এখানে যান ওখানে যান এটা নিয়ে আসেন ওটা নিয়ে আসেন 😥। তার উপরে পিঠ পেছনে বদনাম। এতো কস্ট করে তীর্থের কাকের মতো ইনক্রিমেন্ট এর অপেক্ষায় থাকবেন সেখানেও দেখবেন গ্রেড বি আপনার পাশের জন্য হয়ে গেছে প্রোমোশন ।
স্টুডেন্ট লাইফে সিট বই এর এর সাথে নতুন জগতের মিল নাই তখন মাথার চুল ছিড়তে মন চাইবে নরমাল হেল্পার ও ফাফড় নিতে চাইবে ।
কথা গুলি নবিন ইঞ্জিনিয়ারদের বলা যারা টেক্সটাইল জব এসি রুমে মনে করে । এতো সমস্যার পরো মানুষ কি করে জব করে ? করে করতে করতে সবাই অভ্যস্ত হয়ে যায় ।
এসাইনমেন্ট অন্য জন লিখে দেয় কতো রিপোর্ট কতো মেইল নিজে করা লাগবে ইয়াত্তা নেই । ক্লাসের ফাকে ধোঁয়া ওড়ানো ছেলেটা বাইরে যেয়ে এক কাপ চা খাবে এর হবেনা সুযোগ । ১০ মিনিটের জন্য বাইরে গেলে মনে হবে সব ডিজাস্টার হয়ে গেলো বুঝি । এই ১০ মিনিটেই খুজবে সবাই আপনাকে মনে করবে কাম বাদ দিয়া বুঝি সারাক্ষণ বাইরে ঘুরে বেড়ান ।
দিন শেষে বাসায় গিয়ে ঘুম ছাড়া আর কিছু করতে মনে চাইবেনা । ৫-৬ মাসের পর ক্লাস মেট ফ্রেন্ড দের নাম ভুলতে শুরু করবেন । আড্ডা চাইলেও সম্ভব না। ছুটি নিবেন একটু রিলাক্স এর জন্য নিতেও ভয় করবে ছুটির ভেতর ১০০ ফোন এটা কই ওটা কই তার উপর সব আপনার মাথায় জমে থাকবে আপনার ই করা লাগবে সব , এই ভয়ে ছুটি নেয়া ভুলে যাবেন ।
জিএম আপনাকে ডাকে !!! এই কথা শুনলে মনে হবে এই যা চাকুরী বুঝি আজ গেলো !!! আমি কি ভুল আবার করলাম এই ভেবে ফ্লাশ ব্যাক করতে থাকবেন ।
মার্চেন্ডাইজিং সুখের ভাবছেন ? আপনি তাহলে বোকা
এমন কোন কাজ নেই যা না করা লাগবে নিজেকে মার্চেন্ডাইজার মনে না হয়ে পিয়ন মনে হবে। স্যাম্পল সাবমিট মেইল চেক থেকে শুরু করে এহেন কোন কাজ নেই যা আপনার করা না লাগবে । শান্তি এতোটাই যে আপনি মার্চেন্ডাইজার আপনাকে সবাই সম্মান করবে এতোটাই । মিটিং এ বেম্বো রেডি থাকবে সব সময় ।
R&D তে জব ভাবছেন রিসার্চ করবেন ইউনিভার্সিটির ল্যাবের মতো তা হলে আপনি বোকা, টেক্সটাইল R&D জবে রিসার্চের র ও নেই । সারাদিন ব্যাস্ত থাকবেন ডাটা এন্ট্রি নিয়ে ।
ল্যাব এর জব এসি রুম খুব মজা - সাজা হবে তখন যখন এক স্রিংকেজ টেস্ট করতে করতে বেলা যাবে, স্যাম্পল ডাইং করতে করতে বেলা যাবে খাবারের সময়টুকু যা আরাম ।
ড্রিম জব গার্মেন্টস ওয়াসে ঢুকলেন । আপনাকে কি করতে হবে প্রথমে জানেন, এক কথায় মেশিনে হেল্পারি । নিজে মেশিন চালাতে হবে নিজে কালার ক্যামিকেল দিতে হবে । এটা করলে আপনি ওয়াসিংয়ে জব করতে পারবেন না ।
টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার ঢুকলেন কোয়ালিটিতে যতোই হন অফিসার ইঞ্জিনিয়ার স্টাফ ডাইংয়ের,নীটিং উইভিং এর লোকজন আপনাকে মানুষ মনে করবেনা !!!
ঢুকলেন প্লানিং এ ভাবছেন উনেক মজাদার কাজ প্লানিং করা, থামেন কম্পিউটারে এক এক্সেল সিটের সামনে বসে সারা বছর কেটে যাবে । তার পরো কাজ শেষ করে যেতে পারবেন।
আপনি তেল মারতে রাজি না , এটা কে লয়ালিটি বলে আপনার কলিগ চালিয়ে যাবে এবং আপনার চেয়ে এক কিলো আগে থাকবে ক্যারিয়ারে ।
ডাইং প্রডাকশন এর লোক মিটিং এ যাবেন মার্চেন্ডাইজার মার্কেটিং এর সামনে প্যান্ট টেনে খুললেও আপনি কিছু বলতে পারবেন না ।
মার্কেটিং করবেন আপনার উপর সব বেচার দায় চাপিয়ে দিবে সিনিয়র গন , তাও না হয় যোগাড় করলেন দেখবেন সেটাও নিয়ে যাচ্ছে আপনার সিনিয়র গন।
মাসের একদিন এমডি স্যার মিটিং ডাকবে তার রুমে ইজ্জত লুটে রেখে রেখে দেয়া হবে । গালির ব্রাশ ফায়ার করা হবে আপনাদের উপর ।
আপনি বেগুনবাড়ি নাবিস্কো তিব্বত বনানী এরিয়ায় নোয়াখালী পাবনা বরিশাল টাংগাইলে ইন্সটিটিউট এগুলির এলাকার কিং ত্রাস হন না কেন । আপনি টেক্সটাইল মিল গার্মেন্টসে এর রাজনীতির গুটিবাজির কাছে আপনি নাদান শিশু । নতুন পাইলে ফ্লোরে এডাল্ট টিজিংয়ের স্বিকার হবেন মানে প্রশ্ন করে টিজ করবেন । আপনার ক্যাপাসিটি দিয়ে মোকাবিলা করতে পারলে কিং না পারলে বোকা হবেন তাদের কাছে ।
মাসের বেতন এর ঠিক ঠিকানা নাই কবে হবে বেতন এক উপরের বিধাতা জানবে আর মালিক বা এমডি জানবে । কতো প্রডাকশন দিলেন কতো রেভিনিউ হলো তা মোটেই জিজ্ঞেস করতে পারবেন না ।
হায়ার স্টাডি করবেন প্রডাকশন জবে ৩-৫ বছরেও ভুলেও ঠিক মতো করতে পারবেন না ।
জব ছেড়ে দিলেন বসের উপর রাগ করে লাভ নাই ৮০% ফেক্টরি ম্যানেজমেন্ট বস প্রসেস এমনি।
বইয়ের পাতায় টেক্সটাইল এর রিয়েল সিনারিও বুঝবেন না এর জন্য মিল ভিজিট এবং ইন্টার্নিতে ডে লং ডিউটি করতে হবে । তখন টেক্সটাইল নিয়ে আমাদের ভ্রম ভেংগে যায় ।
টেক্সটাইল জবে সারভাইভাল টেকনিক গুলি আপনাদের শিখাতে পারে আপনাদের সিনিয়র গন।যারা নিয়মিত ফেইস করেন এসব তাদের সাথে প্রোগ্রাম করে তাদের কাজ কথা অভিজ্ঞতা গুলি শুনতে জানতে পারেন ।
ভালো যদি আপনি ফরেইন বাইং হাউসে জব পান বা ফেকাল্টি হন তবে যদি আপনার আরাম এর সুযোগ হয় ।
বাংলাদেশ স্টুডেন্টদের ফেক্টরির ব্যাপারে খুব কম আইডিয়া থাকে এটা তাদের জন্য যাতে করে তারা পরিস্থিতি ফিল করতে পারে।
- ছবি কালেকটেড
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন