বায়ুদূষণে সৃষ্ট ধুলাবালি, জীবাণু, ভাইরাস থেকে সুরক্ষার জন্য নাক ও মুখের উপর পরিধেয় সুক্ষ ফাইবার থেকে তৈরি একখন্ড কাপড়ের আবরন। ১০০% কটন ফাইবারের তৈরি মাস্ক সব থেকে বেশি আরামদায়ক, প্রায় সব ধরনের ফেব্রিক থেকে মাস্ক প্রস্তুত করা গেলে ও সুক্ষ গজ কাপড়ের মাস্ক বেশি সুরক্ষা প্রদান করে। সুরক্ষা ছাড়া ও ছদ্মবেশ, অভিনয় ও বিনোদনের জন্য প্রাচীনকাল থেকে মাস্ক ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মাস্কের প্রধান কাজই হলো ধুলাবালি, ফুলের রেণু, ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া ইত্যাদি যেন আমাদের শ্বাসযন্ত্রের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করতে না পারে, তা নিশ্চিত করা। সম্প্রতি করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সারা বিশ্বে মাস্কের ব্যবহার বেড়েছে।
বাজারে বিভিন্ন ধরনের মাস্ক পাওয়া যায়। তবে সব ধরনের মাস্কই সমানভাবে সব ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, ধুলাবালি প্রভৃতি থেকে রক্ষা করতে পারে না। উল্লেখযোগ্য কিছু মাস্ক হলো-
সার্জিক্যাল মাস্ক
সার্জিক্যাল মাস্কগুলো লুজ ফিটিং ডিসপোজেবল মাস্ক, যা মুখ ও নাকের মধ্যে বাধা তৈরি করার জন্য কাজ করে। অপারেশন থিয়েটার বা বিজ্ঞানাগারে যাঁরা কাজ করেন, তাঁদের জন্য এ জাতীয় মাস্ক সুপারিশ করা হয়। এ ধরনের মাস্ক ব্যবহার করা হয় যাতে তাঁর নাক ও মুখ থেকে জীবাণু বের হয়ে কন্টামিনেশন ঘটাতে না পারে। আলগা-ফিটিং থাকার কারণে সার্জিক্যাল মাস্কগুলো হাঁচি-কাশি থেকে বের হওয়া ছোট ছোট বায়ুবাহিত কণা বা জীবাণুকে আটকাতে পারে না। এগুলো পুনরায় ব্যবহার বা একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করা যাবে না। ১/২ প্লাই নন-ওভেন ফেব্রিকের সাথে ১ প্লাই ফিল্টার ক্লথ ব্যবহার করে ২/৩ প্লাই সার্জিক্যাল মাস্ক প্রস্তুত করা হয়।
N95 রেসপাইরেটর বা মাস্ক
N95 মাস্ক বায়ুবাহিত কণা ও দূষিত তরল থেকে রক্ষা করতে ব্যবহৃত হয়। সব ধুলাবালি, ফুলের রেণু, ব্যাক্টেরিয়া থেকে এটি শতভাগ এবং ভাইরাস থেকে ৯৫ ভাগ সুরক্ষা দেয়।স্বাস্থ্যকর্মী, বিশেষ করে যাঁরা সংক্রামক রোগ বা করোনা চিকিৎসাসেবা দিচ্ছেন, তাঁদের জন্য N95 মাস্ক তৈরি। নন ওভেন ফেব্রিক, ইলেকট্রোস্টেটিক ফিল্টার কটন ও স্প্রে ক্লথ প্লাই করে N95 মাস্ক প্রস্তুত করা হয়।
PPF মাস্ক
এফএফপি মাস্ক সাসপেন্ডেড পার্টিকেল আলাদা করে। এ ধরনের মাস্কই ব্যাক্টেরিয়া, ধুলাবালি, ফুলের রেণু থেকে ৮০ ভাগ এবং ভাইরাস থেকে প্রায় ৯৫ ভাগ সুরক্ষা দিতে পারে। পলি প্রোফাইলিন নন-ওভেন ফেব্রিক PPF মাস্কের প্রধান র ম্যাটেরিয়াল।
অ্যাক্টিভেটেড কার্বন মাস্ক
অ্যাক্টিভেটেড কার্বন মাস্ক প্রধানত দুর্গন্ধ ফিল্টার করে, পাশাপাশি ব্যাক্টেরিয়া ও ফুলের রেণু থেকে প্রায় ৫০ ভাগ এবং ভাইরাস, ধুলাবালি থেকে ১০ ভাগ সুরক্ষা দেয়। অ্যাক্টিভেটেড কার্বন মাস্ক সাধারণত এন্টি স্টিক ক্লথ, ফিল্টার ক্লথ, অ্যাক্টিভেটেড কার্বনের ৫টি ফ্লাই করে প্রস্তুত করা হয়।
পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড়ের মাস্ক
সাধারণ কাপড়ের মাস্কগুলো ভাইরাস ও ধুলাবালি থেকে কোনরকম সুরক্ষা না দিলেও ব্যাক্টেরিয়া ও ফুলের রেণু থেকে প্রায় ৫০ ভাগ সুরক্ষা দেয়। এগুলো সাধারণত ঠান্ডা পরিবেশ থেকে নাক-মুখকে সুরক্ষিত রেখে উষ্ণতা দেয়। এগুলোকে ডাস্ট বা ধূলি-মাস্ক বলা হয়। এ জাতীয় মাস্ক করোনাভাইরাস বা অন্য ক্ষুদ্র জীবাণু থেকে সুরক্ষা দিতে পারে না। এ জাতীয় মাস্ক বাতাসের ধূলিকণা থেকে হয়তো রক্ষা করতে সক্ষম, তবে পুনর্ব্যবহারযোগ্য কাপড়ের মাস্ক ঠিকমতো পরিষ্কার না করলে এটির মাধ্যমে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি থেকে যায়।
ফ্যাশনেবল কটন স্পঞ্জ মাস্ক
স্পঞ্জ মাস্কগুলো প্রধানত ফ্যাশনে ব্যবহৃত হয়, যেটা ব্যাক্টেরিয়া ও ফুলের রেণু থেকে মাত্র ৫ ভাগ সুরক্ষা দিলেও কোনো ভাইরাস বা ধুলাবালি প্রতিরোধ করতে পারে না।
থার্মোপ্লাস্টিক মাস্ক
নন-উভেন থার্মোপ্লাস্টিক কাপড় হচ্ছে বর্তমান বাজারের সবচেয়ে সস্তা প্লাস্টিক। এ জাতীয় কাপড়কে বলা হয় পিপি-ফেব্রিক্স, অর্থাৎ এটি প্রোপিলিনের পলিমার দিয়ে তৈরি। ফলে নন-উভেন কাপড় তৈরিতে কোনো সুতা ব্যবহার করা হয় না; এটি সরাসরি তাপ-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় উৎপাদিত হয়।কাপড়টির উভয় পাশে (ওপরে ও নিচে) প্রচুর পরিমাণ আলগা আঁশ থাকে; এই আলগা তন্তুগুলোকে বলা হয় মাইক্রো-প্লাস্টিক। মাস্ক যদি শপিং ব্যাগের কাপড়ের বদলে ভালো মানের নন-উভেন কাপড়েও বানানো হয়, তবুও তা দীর্ঘক্ষণ ব্যবহার করা অনুচিত।
করোনাভাইরাসের কারণে অনেকেই বেশ আতঙ্কিত হয়ে পরেছেন। বাজারে মাস্কের জন্য না ঘুরে চাইলে নিজেই তৈরি করে নিতে পারেন মাস্ক।
জেনে নিন কীভাবে তৈরি করবেন:
• চার ইঞ্চি করে দুই টুকরো সুতি কাপড় নিন
• একটির সঙ্গে আরেকটি সেলাই করুন
• সেলাই দেওয়ার সময় কয়েকটা ভাঁজ করে নিন
• এবার দুই পাশে রাবার লাগিয়ে নিন কান পর্যন্ত
• তৈরি হয়ে গেল আপনার মাস্ক।
পরিবারের সবার ব্যবহারের জন্য বেশি করে তৈরি করে রাখুন। সব সময় মাস্ক ব্যবহার জীবাণুর আক্রমণ থেকে নিরাপদ রাখবে সবাইকে।
বিশ্ব সেরা ৫টি মাস্ক ম্যানুফ্যাকচারার
১।Honeywell
২।Kimberley-Clark Corporation
৩। Foss Performance Materials
৪। Prestige Ameritech
৫।Louis M. Gerson Company, Inc.
বিশ্বের অন্যতম মাস্ক ব্রান্ড
১। 3M Mask
২। Alpha Protech mask
৩। Cardinal Health mask
৪। Halyard Health mask
৫। Crosstex International mask
৬। Medline Industries mask
বর্তমান বিশ্ববাজারে মাস্ক :
২০১৯ এর শেষের দিক পর্যন্ত মাস্কের মার্কেট ভৌগলিক অবস্থান অনুযায়ী মাস্কের প্রকৃতি, ধরন ও মূল্যের ভিত্তিতে আমদানি রপ্তানি পরিবর্তন হত। সম্প্রতি সারাবিশ্বে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে N95 মাস্ক ও সার্জিক্যাল মাস্কের ব্যবহার, চাহিদা ও মূল্য বেড়েছে। ২০২০ সালে সারা বিশ্বে করোনা মহামারী আকার ধারণ করলে এককভাবে সার্জিক্যাল মাস্ক বর্তমান বিশ্ব বাজারে আধিপত্য বিস্তার করে। পাশাপাশি বিভিন্ন রাষ্ট্র তাদের নিজেদের চাহিদা মেটাতে রপ্তানি বন্ধ করলে সারা বিশ্বে মাস্কের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি হয়েছে। মাস্ক প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের ওয়েবসাইটের বিক্রয় তথ্য বলছে ২০২০ সালে মাস্কের বাজার দ্বিগুন হয়েছে এবং ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।
-মোহাম্মদ জায়েদ
B.Sc in Textile Engineering
Port City International University , Chattogram.
1 টি মন্তব্য:
সময়োপযোগী পোস্ট, অসংখ্য ধন্যবাদ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন