বাংলাদেশ রেডিমেড পোশাক রপ্তানিতে বিশ্বে দ্বিতীয়। ইহাতে আমাদের গর্বের অন্ত নাই, গর্ব হইবারই কথা কারন এই পোশাক বাদে বাকি যেইসকল বিষয়ে আমরা পৃথিবীতে প্রথম কিংবা দ্বিতীয় তাহা হইল দূষিত বায়ু কিংবা সড়ক দুর্ঘটনা অথবা বজ্রপাত।
তবে পোশাক শিল্পে দ্বিতীয় হইবার গর্ব করিবার পাশাপাশি চন্দ্রের অপর পৃষ্ঠের অন্ধকার জগতের মত এক সত্যি কথা কেহ বলিয়াছে শুনি নাই। তাহা হইল বাংলাদেশ বস্ত্র আমদানিতে বিশ্বে চতুর্থ। অর্থাৎ বঙ্গদেশ বিদেশ হইতে বস্ত্র আনিয়া তাহা সেলাই করিয়া পোশাক বানাইয়া বিদেশ রপ্তানি করে , সুতরাং মোটা দাগে কোন প্রকার তথ্য ছাড়াই বলা যায় বাংলাদেশ কাপড় সেলাইয়ে বিশ্বে প্রথম। কি অদ্ভুত!!শুধু কাপড় সেলাই করিয়াই বাংলাদেশ তাহার আাশিভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করিতেছে!! আরও অদ্ভুত হইলো বিদেশি কোম্পানিগুলো এখন এদেশে তাহাদের শোরুম স্থাপন করিতেছে, সিরাজুদ্দৌলার আমল হইলে বলিতাম কুঠি স্থাপন করিতেছে। শোরুম স্থাপন করিবার উদ্দেশ্য হইল এদেশ হইতে পোশাক কিনিয়া এইদেশের মানুষের কাছেই বিক্রি করিয়া একটি নির্দিষ্ট শ্রেণিকে লাভবান করাইয়া আমজনতাকে ঠকাইয়া চলিয়া যাওয়া। ইহাকে বলাহয় উদার অর্থনীতি, মুক্ত বাজার, ইহার বিপরীতে কথা বলিলেই বলিবে রক্ষণশীল, কিন্তু প্রাণ রক্ষার ক্ষেত্রে রক্ষণশীলতো হইতেই হইবে!! যাহাইহোক, এই কাপড় সেলাই করিতেছে গার্মেন্টসের অদক্ষ শ্রমিকরা।
তাহারা কেবলমাত্র অদক্ষ হইবার কারনেই বাংলাদেশে গার্মেন্টস শিল্প বিস্তার লাভ করিয়াছে। শুনিতে অবাক মনে হইতে পারে, কিন্তু ইহাই সত্যি। তাহারা অদক্ষ বলিয়াই শ্রমিক হিসেবে পৃথিবীর সবচেয়ে কম মজুরি নিয়া থাকে। কম মজুরি নিয়া থাকে বলিয়াই পৃথিবীর তাবত্ কোম্পানিগুলো এইদেশে আসিয়া ভিড় করিয়াছে। এবং এই অদক্ষ শ্রমিকদেরই বোকা বানাইয়া দক্ষ শ্রমিক বানাইবার উদ্দেশ্যে সরকারি বেসরকারি টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো গড়িয়া উঠিয়াছে। এই সকল দক্ষ শ্রমিকদের কাজ হইল বিশ্ববিদ্যালয় হইতে বাহির হইয়া অদক্ষ শ্রমিকদের সফলতাকে নিজের বলিয়া গলাবাজি করা৷ এই কথা বলিয়াছি কারন বিশ্বের তাবত্ যে কোম্পানিগুলো এদেশে আসিয়াছে তাহারা কেহ দক্ষ শ্রমিকদের দক্ষতার গুণমুগ্ধ হইয়া কিংবা দক্ষ কারিগর বানাইবার সরকারি কিংবা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম শুনিয়া আসে নাই, আসিয়াছে অদক্ষ শ্রমিকদের কম মজুরি দেবার লোভে। সকল দক্ষ শ্রমিক এবং কারখানার মালিক বুর্জুয়া শ্রেণী মিলিয়া এই অদক্ষ শ্রমিকদের জন্য এ যাবত্কালে কি করিয়াছে? তাহাদের মজুরি কিভাবে পৃথিবীর সর্বনিম্ন রাখা যায় তাহার জন্য ছলচাতুরী করিয়াছে। অদক্ষ শ্রমিকদের আজীবন অদক্ষ রাখাই বর্তমান দক্ষ প্রকৌশলীদের কাজ।
বিশ্ববিদ্যালয়গুলো ছাত্রছাত্রীদের কিভাবে ব্রিটিশ আমলের মেশিনগুলো আরও ভালো করিয়া চালাইতে পারিবে তাহা শিখাইতেছে। শুনিতে অবাক লাগে এখনো পর্যন্ত বাংলাদেশ ব্স্ত্র তৈরির কাঁচামাল তুলাই উত্পাদন করিতে পারে না,এবং ইহা কি করিয়া উত্পাদন করিবে তাহার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের নাই কোনো গবেষণা, চীন এবং ভারত পেঁয়াজের মতো তুলার দাম বাড়াইয়া কমাইয়া এদেশকে নিয়ন্ত্রণ করিয়া থাকে যাহা আমজনতা বুঝিতেও পারে না। শুধু মাত্র সেলাই নির্ভর শিল্পকে কেন্দ্র করিয়া দেশে গোটা বিশেক সরকারি বেসরকারি টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় গড়িয়া উঠিয়াছে!!! যদি কাঁচামাল উত্পাদনের উপরই নজর না দেওয়া হয় তাহা হইলে এই সেলাই শিল্প কখনোই টেকসই হইবার কথা নহে। এই শিল্প টেকসই হইবে কি হইবে না তাহা লইয়া সরকারেও কোন মাথা ব্যাথা থাকিবার কথা নহে।
কারন বর্তমান বাংলাদেশ কোনভাবেই কলাবেচা অর্থনীতির দেশ হইতে চাহিবে না। যেইসকল দেশের অর্থনীতি কেবল একটি পণ্যের উপর নির্ভরশীল সেইসকল দেশকে বলা হইয়া থাকে "বেনানা রিপাবলিক" অথবা বাংলায় "কলা রাষ্ট্র"। বাংলাদেশ ঘোষণা দিয়াছে আগামী দশ বছরের মধ্যে সফটওয়্যার রপ্তানি করিবে ৪০-৫০ বিলিয়ন ডলারের, বর্তমানে ৫ বিলিয়ন ডলার করিতেছে, ভবিষ্যতে ইহাই গার্মেন্টসের জায়গা দখল করিবে। অন্য দিকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হইয়া উঠিতেছে। পুরোপুরি উন্নয়নশীল হইয়া উঠিলে ২০২৪ সাল হইতে বিশ্বের ৩৮ টি দেশের জিএসপি সুবিধা বাতিল হইবে, এবং সকল প্রকার শুল্ক সুবিধাও বাতিল হইবে। তখনো পর্যন্ত দেশ বস্ত্র আমদানিতে চতুর্থ থাকিলে অর্থাৎ সুতা, একসেসরিস আর ওভেন বিদেশ হইতে আমদানি চলিতে থাকলে কেবল ছোট ফেক্টরি নয় গ্রিন ফেক্টরিও বন্ধ হইয়া যাইবে বিনা নোটিশে।
ইহাতে সরকারের আসিবেওনা যাইবেও না, কারন, কি করিয়া গার্মেন্টসের বিকল্প অর্থনীতি দাঁড় করানো যায় তাহার পদক্ষেপ শুরু হইয়াছে। সুতরাং এই সেলাই শিল্পকে কি করিয়া সত্যিকার বস্ত্র শিল্পে পরিনত করা যাইবে তাহার দায় ভার দক্ষ শ্রমিক এবং এই দক্ষ শ্রমিক গড়িবারর কারিগর টেক্সটাইল বিশ্ববিদ্যালয় গুলোরই নিতে হইবে। তাহা না করিলে অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এভিডেভিড করিয়া নিজের জন্য অন্য কোন নাম ঠিক করিতে হইতে পারে।
কপিডঃ
ফয়সাল রিসাদ ভাইয়ের ওয়াল থেকে
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন