ট্রেইনি মার্চেন্ডাইজারের কাজ এবং তাদের জন্য কিছু টিপস | Tips For Merchandiser - Textile Lab | Textile Learning Blog



ট্রেইনি মার্চেন্ডাইজারের কাজ এবং কিছু টিপস

এবারের পর্বে আমরা ট্রেইনি মার্চেন্ডাইজারের কাজ এবং সেই সাথে সাথে তাদের জন্য কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করবো।

মার্চেন্ডাইজিং জগতের শুরুর পদবি হচ্ছে ট্রেইনি মার্চেন্ডাইজার। অনেক জায়গায় ট্রেইনি পোস্ট থাকে না, সেখানে সরাসরি এসিস্ট্যান্ট মার্চেন্ডাইজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ট্রেইনি  মার্চেন্ডাইজারকে আপনারা বাসার ছোট ছেলের সাথেও কল্পনা করতে পারেন :p । যত ছুটা কাজ আছে সব তাদের করতে হয়  ;) । তবে এইভেবে নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। কেননা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে কিছু না কিছু শেখার আছে। তাছাড়া আজকে যারা মার্চেন্ডাইজিং এ বড় বড় পদে আসীন আছেন তারা এগুলো পার করেই এই পদে এসেছেন।

ট্রেইনি মার্চেন্ডাইজারের প্রথম এবং অত্যাবশ্যকীয় কাজ হচ্ছে স্যাম্পল ফলো আপ। শুরুতে একজন ট্রেইনি মার্চেন্ডাইজারের ধ্যান জ্ঞান হওয়া উচিত এই কাজটি।বায়ারের কাছ থেকে একটি স্যাম্পল রিকুয়েস্ট আসার পর থেকে স্যাম্পল পাঠানো পর্যন্ত সবকিছুর দায়িত্ব একজন ট্রেইনি মার্চেন্ডাইজারের উপর বর্তায়। এখন আসুন ব্যাপারটা ধাপে ধাপে কিভাবে হতে পারে সেইদিকে আমরা একটু লক্ষ্য করি। বায়ার একটি স্টাইল কিংবা অর্ডার যাই বলি না কেনো তার শুরুতে সাধারণত সেই সংশ্লিষ্ট অর্ডার কিংবা স্টাইলের Techpack & Trimsheet পাঠায়। Techpack এ সাধারণত সংশ্লিষ্ট স্টাইলের Sketch, Construction Details, Measurement Sheet etc থাকে। আর Trimsheet এ সেই স্টাইলের স্যাম্পল বানানোর জন্য যেসব ট্রিমস প্রয়োজন হয় তা Mention করা থাকে। এক্ষেত্রে এখানে কোন ফেব্রিক, কি কি কালারের এবং সেই কালারগুলোর জন্য কি কি কালারের ট্রিমস Use হবে তা উল্লেখ থাকে। এখন কথা হচ্ছে নতুন একটা স্টাইলের ডেভেলপমেন্ট আসার পর একজন ট্রেইনির প্রথমেই কি কি করা উচিত?

যদিও দেখা যায় ডেভেলপমেন্ট টিমের সিনিয়র যিনি থাকেন তিনি সেই নতুন স্টাইলের স্যাম্পল বানানোর জন্য ফেব্রিক মিলের কাছে স্যাম্পল ফেব্রিক পাঠানোর জন্য মেইল পাঠান। এক্ষেত্রে ট্রেইনির প্রথম কাজ হবে পুরো Techpack & Trimsheet সময় নিয়ে ভালো করে এক নজর দেখা যাতে এটা মাথায় থাকে যে এই স্টাইলের স্টাইল নং এটা, এটা টপ না বটম, লং না শর্ট,  কোন কোন ট্রিমস আছে, কি কি কালার আছে ইত্যাদি। এরফলে পরবর্তীতে সিনিয়র জিজ্ঞেস করলে কিংবা স্যাম্পল সেকশনের লোকজন জিজ্ঞেস করলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে না। পাশাপাশি কোন অপারেশনের জন্য কি ধরনের Construction, কি ধরনের Seam Type /Stitch Type ফলো করতে বলা হয়েছে তা যদি সময় নিয়ে দেখা যায় তবে Basic Knowledge  অনেক স্ট্রং হবে। সাথে এটাও জানা লাগবে এই স্যাম্পল কি ওয়াশড হবে নাকি নন ওয়াশড। যদি ওয়াশড হয় তবে সেক্ষেত্রে বায়ারের কাছ থেকে ওয়াশ স্টান্ডার্ড কালেক্ট করতে হবে অথবা না থাকলে ওয়াশ রেসিপি জেনে নিতে হবে এবং এটাও জেনে নিতে হবে যে এই স্যাম্পল কবে নাগাদ বায়ারের কাছে পাঠাতে হবে। স্যাম্পল পাঠানোর ডেডলাইন জানা থাকলে কাজ গুছিয়ে সময়মতো করা যায়।

এরপর ট্রেইনির কাজ হবে নিজে নিজে ডায়রিতে একটা লিস্ট করা যে এই স্যাম্পল বানানোর জন্য ঠিক কোন কোন ট্রিমস লাগবে। সেই অনুযায়ী সাপ্লায়ারের কাছে মেইল পাঠাতে হবে এবং ট্র্যাকে রাখা লাগবে যে সেগুলো ঠিকমতো আসছে কিনা। এর পাশাপাশি লক্ষ্য রাখা লাগবে যে সিনিয়র যে ফেব্রিক সাপ্লায়ারের কাছে মেইল পাঠিয়েছে তাতে তারা ঠিকমতো রিপ্লাই দিচ্ছে কিনা। রিপ্লাই দিলে কবে এবং কোন কুরিয়ারে কোন Airway Bill No. (প্রতিটি পার্সেলের বিপরীতে কুরিয়ারের একটি ইউনিক নাম্বার থাকে)  এ পাঠাচ্ছে। এটা খুব Strongly & carefully follow up করতে হবে। ডেভেলপমেন্ট স্যাম্পলের ক্ষেত্রে ট্রিমস এদিক ওদিক করে ম্যানেজ করা যায় কিন্তু ফেব্রিকটা সবচেয়ে জরুরী। অনেকসময় এমনও হতে পারে যে আপনার সব ট্রিমস রেডি কিন্তু আপনার সঠিক ফলো আপ না করার কারনে ফেব্রিক এখনো আপনার ফ্যাক্টরিতে এসে পৌছায়নি। ধরেন আপনার ফেব্রিক এবং ট্রিমস সবই রেডি এখন আপনার কাজ কি? আপনার কাজ হবে অতি দ্রুত Requisition  সহ এগুলো স্যাম্পল টিমের কাছে Handover করা। আরেকটি কথা বলে নেই, Techpack পাওয়ার পর পরই এটা প্যাটার্ন টিমের কাছে Forward করতে হবে যাতে প্যাটার্ন মাস্টার Fabric Consumption Calculation এর কাজ করতে পারে এবং একই সাথে সেই স্টাইল রিলেটেড কোন Technical Clarification দরকার হলে আপনাদের শুরুতেই জানাতে পারে। এরপর আপনার কাজ হবে স্যাম্পল ঠিকমতো কাটিং, সুয়িং হলো কিনা সেটা ফলো আপ করা এবং সুয়িং হলে ওয়াশ স্ট্যান্ডার্ড সহ ওয়াশে পাঠানো এবং ওয়াশ থেকে আসলে ফিনিশিং ট্রিমসসহ স্যাম্পলের ফিনিশিং টিমের কাছে Handover  করা। এরপর ফিনিশিং হয়ে গেলে ঠিকমতো ট্যাগ এটাচ করে বায়িং অফিসের মার্চেন্ডাইজারের কাছে Review সাপেক্ষে যথাযথ Concerned person এর কাছে কুরিয়ারে পাঠানো এবং সেই কুরিয়ারের Airway bill no. বায়িং মার্চেন্ডাইজারকে জানিয়ে দেওয়া এবং নিজেও সেটা কিপিং করা।
এতক্ষন বললাম স্যাম্পল রিলেটেড কথাবার্তা। এটা ছাড়াও একজন ট্রেইনিকে নিজের টিমের ফটোকপি করা, স্ক্যান করা, গার্মেন্টের ইমেজ তোলা,ট্রিম কার্ড বানানো, প্রোডাকশন ফাইল রেডি করা,  কমার্শিয়াল ডিপার্টমেন্টে ডকুমেন্টস Handover করা সহ আরো নানাবিধ কাজ করতে হবে যেগুলোর কোনটাকেই ছোট মনে করা যাবে না।


টিপস : 

১) ট্রেইনিদের উচিত নিয়মিত দুইটি ডায়রি Maintain করা। একটি দৈনন্দিন নতুন নতুন যেই কাজগুলো জমা হচ্ছে এবং আগামীদিনের জন্য  To Do List করার জন্য। এই ডায়রিতে যে কাজই আপনাকে করতে বলা হবে তা নোট করে রাখবেন। এমনও হতে পারে সেটা দুইদিন পর করা লাগতে পারে। এরপর যেই কাজগু‌লো‌ করা হবে সেগুলোতে একটি করে সোজা দাগ দিয়ে কেটে দিবেন। দিনের শেষে যেই কাজগুলো বাকি থাকবে সেগুলো পরের পাতায় পরের দিনের জন্য To Do List হিসেবে আলাদা করে লিখে রাখবেন। এই প্র্যাকটিসটা অবশ্যই করার চেষ্টা করবেন। আপনার কাজ শেষ করতে রাত যতোটাই বেজে যাক না কেনো দিনশেষে আপনি সবগুলো মিলিয়ে দেখবেন আর পরের দিনের জন্য লিস্ট করবেন। পাশাপাশি পরের দিনের Most Important কাজগু‌লো‌ হাইলাইটার দিয়ে কিংবা পাশে Importance অনুযায়ী ★ মার্ক দিয়ে রাখবেন। পরেরদিন সকালে এসেই সবার আগে এই ডায়রি খুলে দেখবেন কি কি কাজ আপনার আজকের দিনের জন্য করা লাগবে। তাহলে দেখবেন দিনশেষে আপনি ফ্রেশ একটা মাইন্ড নিয়ে বাসায় যেতে পারবেন এবং পরের দিনও ঠান্ডা মাথায় কাজ শুরু করতে পারবেন।

পরের ডায়রিটা আপনি Randomly Use করবেন না। এটা হবে শুধুমাত্র আপনি নতুন যেই জিনিসগুলো শিখবেন তা টুকে রাখার জন্য। এখন সেটা হতে পারে মার্চেন্ডাইজিং সংক্রান্ত কোন জ্ঞান অথবা স্পেসিফিক আপনার বায়ারের  কাজ সংক্রান্ত জানা নতুন কিছু।

২) প্রতিদিন আপনি নতুন অনেক কিছুর সাথেই পরিচিত হবেন। সবকিছুর ব্যাপারে তৎক্ষনাত আপনি নাও জানতে পারেন। নতুন যেটা জানবেন না সেটা আগে সিনিয়রের কাছ থেকে বিনয়ের সাথে জেনে নিন। তার কাছ থেকে হেল্প না পেলে অন্য টিমমেটদের কাছ থেকে জেনে নিন। তাও সম্ভব না হলে গুগল বন্ধুর সাহায্য নিন  । আশা করি হতাশ হবেন না 

৩) আপনি টেক্সটাইলের গ্র্যাজুয়েট আর আপনার সিনিয়র নন টেক্সটাইল ব্যাকগ্রাউন্ডের হলে নাক উচু করে চলার কিছু নেই। আপনার পুঁথিগত বিদ্যার থেকে তাদের দীর্ঘদিনের কর্ম অভিজ্ঞতার দাম বেশি।এই নন টেক্সটাইলের নিবেদিতপ্রাণ লোকেরাই তাদের শ্রম, মেধার মাধ্যমে এই সেক্টরকে আজকের এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।  তাই সবসময় তাদের যথাযথ সম্মান দিয়ে চলার চেষ্টা করুন। তাদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পেলে অন্তত বেয়াদবি করবেন না।

৪) স্যাম্পল ট্র্যাকিংয়ের জন্য excel sheet এ আলাদা ট্র্যাকার তৈরি করুন যাতে কবে আপনি Query পেলেন, কবে স্যাম্পল ফেব্রিক এবং ট্রিমস পেলেন, কবে স্যাম্পল সুয়িং হলো, কবে ওয়াশে পাঠালেন, কবে ওয়াশ থেকে আসলো, কবে ফিনিশিং করে বায়ারের কাছে পাঠালেন, কোন Airway Bill No. এ পাঠালেন ইত্যাদি Information নিজের মতো করে সাজিয়ে নিন। এতে করে সবকিছু একটি Single chart এ পাওয়া যাবে।



৫) যেসব স্যাম্পল ফেব্রিকস এবং ট্রিমস দেশের বাহিরে থেকে আসে সেগুলো ফলো আপ করার জন্য আলাদা একটা এক্সেল শিট Maintain করতে পারেন যেখানে সাপ্লায়ার কবে পাঠাচ্ছে, কোন সাপ্লায়ার পাঠাচ্ছে, কোন Airway Bill No. এ পাঠাচ্ছে, কোন স্টাইলের জন্য পাঠাচ্ছে, কি পাঠাচ্ছে, কতটুকু পাঠাচ্ছে, কবে কমার্শিয়াল ডকুমেন্টস আপনি পাচ্ছেন, কবে আপনার কমার্শিয়াল ডিপার্টমেন্টে সাবমিট করছেন এবং ফাইনালি আপনি কবে গুডস হাতে পাচ্ছেন সেগুলোর তথ্য আপডেট করতে পারেন।

৬) Mail Communication গুলো ভালো করে পড়ার এবং নিজে থেকে বুঝার চেষ্টা করুন। অন্ধের মতো কোন কিছুর পিছনে দৌড়াবেন না। যদি শুরুর দিকে সারাদিন স্যাম্পলে সময় দেওয়া লাগে তাহলে চেষ্টা করুন দিনশেষে মেইল পড়ার। এতে কিছুটা সময় লাগলেও পরবর্তী Investment হিসেবে এটা  দেখুন। 

৭) এই টিপসটি নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত। এটাকে ভিন্নভাবে না নিলেই ভালো হবে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই এমবিএ কিংবা মাস্টার্সে ভর্তি হবেন না। তাহলে দেখবেন আপনি আপনার জবে Properly Concentrate করতে পারবেন না। শুরুর প্রথম এক-দেড় বছর আপনার লার্নিং পিরিয়ড। তাই এই সময়টাকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। নচেৎ দেখা যাবে হয়তোবা বছর পার হবে ঠিকই কিন্তু আপনার কাজ শেখার জায়গায় আপনি নিজেকে নিজেই ফাঁকি দিয়ে ফেলেছেন।

সবশেষে একটি কথা বলবো, ট্রেইনি লাইফ কখনো আপনার কাছে বিষাদময় মনে হবে, কখনো কাজের চাপে নিজেকে নিঃশেষ মনে হবে। কিন্তু হতাশ হবেন না। মহান আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা রাখুন আর নিজের উপর আস্থা রাখুন। মনে রাখবেন এই লাইফ একইসাথে আপনার শেখার এবং আগামী দিনগুলোর উপরে উঠার দিক নির্দেশনা দিবে। তাই নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ শেখার চেষ্টা করুন। আজকের ট্রেইনি আগামীদিনের ম্যানেজার, জিএম, কান্ট্রি ডিরেক্টর  । সবার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।




আসিফ বিন আসগর
এক্স টেক্সটাইল স্টুডেন্ট,
 মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়



ট্রেইনি মার্চেন্ডাইজারের কাজ এবং তাদের জন্য কিছু টিপস | Tips For Merchandiser




ট্রেইনি মার্চেন্ডাইজারের কাজ এবং কিছু টিপস

এবারের পর্বে আমরা ট্রেইনি মার্চেন্ডাইজারের কাজ এবং সেই সাথে সাথে তাদের জন্য কিছু টিপস নিয়ে আলোচনা করবো।

মার্চেন্ডাইজিং জগতের শুরুর পদবি হচ্ছে ট্রেইনি মার্চেন্ডাইজার। অনেক জায়গায় ট্রেইনি পোস্ট থাকে না, সেখানে সরাসরি এসিস্ট্যান্ট মার্চেন্ডাইজার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। ট্রেইনি  মার্চেন্ডাইজারকে আপনারা বাসার ছোট ছেলের সাথেও কল্পনা করতে পারেন :p । যত ছুটা কাজ আছে সব তাদের করতে হয়  ;) । তবে এইভেবে নিরাশ হওয়ার কিছু নেই। কেননা জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্র থেকে কিছু না কিছু শেখার আছে। তাছাড়া আজকে যারা মার্চেন্ডাইজিং এ বড় বড় পদে আসীন আছেন তারা এগুলো পার করেই এই পদে এসেছেন।

ট্রেইনি মার্চেন্ডাইজারের প্রথম এবং অত্যাবশ্যকীয় কাজ হচ্ছে স্যাম্পল ফলো আপ। শুরুতে একজন ট্রেইনি মার্চেন্ডাইজারের ধ্যান জ্ঞান হওয়া উচিত এই কাজটি।বায়ারের কাছ থেকে একটি স্যাম্পল রিকুয়েস্ট আসার পর থেকে স্যাম্পল পাঠানো পর্যন্ত সবকিছুর দায়িত্ব একজন ট্রেইনি মার্চেন্ডাইজারের উপর বর্তায়। এখন আসুন ব্যাপারটা ধাপে ধাপে কিভাবে হতে পারে সেইদিকে আমরা একটু লক্ষ্য করি। বায়ার একটি স্টাইল কিংবা অর্ডার যাই বলি না কেনো তার শুরুতে সাধারণত সেই সংশ্লিষ্ট অর্ডার কিংবা স্টাইলের Techpack & Trimsheet পাঠায়। Techpack এ সাধারণত সংশ্লিষ্ট স্টাইলের Sketch, Construction Details, Measurement Sheet etc থাকে। আর Trimsheet এ সেই স্টাইলের স্যাম্পল বানানোর জন্য যেসব ট্রিমস প্রয়োজন হয় তা Mention করা থাকে। এক্ষেত্রে এখানে কোন ফেব্রিক, কি কি কালারের এবং সেই কালারগুলোর জন্য কি কি কালারের ট্রিমস Use হবে তা উল্লেখ থাকে। এখন কথা হচ্ছে নতুন একটা স্টাইলের ডেভেলপমেন্ট আসার পর একজন ট্রেইনির প্রথমেই কি কি করা উচিত?

যদিও দেখা যায় ডেভেলপমেন্ট টিমের সিনিয়র যিনি থাকেন তিনি সেই নতুন স্টাইলের স্যাম্পল বানানোর জন্য ফেব্রিক মিলের কাছে স্যাম্পল ফেব্রিক পাঠানোর জন্য মেইল পাঠান। এক্ষেত্রে ট্রেইনির প্রথম কাজ হবে পুরো Techpack & Trimsheet সময় নিয়ে ভালো করে এক নজর দেখা যাতে এটা মাথায় থাকে যে এই স্টাইলের স্টাইল নং এটা, এটা টপ না বটম, লং না শর্ট,  কোন কোন ট্রিমস আছে, কি কি কালার আছে ইত্যাদি। এরফলে পরবর্তীতে সিনিয়র জিজ্ঞেস করলে কিংবা স্যাম্পল সেকশনের লোকজন জিজ্ঞেস করলে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হবে না। পাশাপাশি কোন অপারেশনের জন্য কি ধরনের Construction, কি ধরনের Seam Type /Stitch Type ফলো করতে বলা হয়েছে তা যদি সময় নিয়ে দেখা যায় তবে Basic Knowledge  অনেক স্ট্রং হবে। সাথে এটাও জানা লাগবে এই স্যাম্পল কি ওয়াশড হবে নাকি নন ওয়াশড। যদি ওয়াশড হয় তবে সেক্ষেত্রে বায়ারের কাছ থেকে ওয়াশ স্টান্ডার্ড কালেক্ট করতে হবে অথবা না থাকলে ওয়াশ রেসিপি জেনে নিতে হবে এবং এটাও জেনে নিতে হবে যে এই স্যাম্পল কবে নাগাদ বায়ারের কাছে পাঠাতে হবে। স্যাম্পল পাঠানোর ডেডলাইন জানা থাকলে কাজ গুছিয়ে সময়মতো করা যায়।

এরপর ট্রেইনির কাজ হবে নিজে নিজে ডায়রিতে একটা লিস্ট করা যে এই স্যাম্পল বানানোর জন্য ঠিক কোন কোন ট্রিমস লাগবে। সেই অনুযায়ী সাপ্লায়ারের কাছে মেইল পাঠাতে হবে এবং ট্র্যাকে রাখা লাগবে যে সেগুলো ঠিকমতো আসছে কিনা। এর পাশাপাশি লক্ষ্য রাখা লাগবে যে সিনিয়র যে ফেব্রিক সাপ্লায়ারের কাছে মেইল পাঠিয়েছে তাতে তারা ঠিকমতো রিপ্লাই দিচ্ছে কিনা। রিপ্লাই দিলে কবে এবং কোন কুরিয়ারে কোন Airway Bill No. (প্রতিটি পার্সেলের বিপরীতে কুরিয়ারের একটি ইউনিক নাম্বার থাকে)  এ পাঠাচ্ছে। এটা খুব Strongly & carefully follow up করতে হবে। ডেভেলপমেন্ট স্যাম্পলের ক্ষেত্রে ট্রিমস এদিক ওদিক করে ম্যানেজ করা যায় কিন্তু ফেব্রিকটা সবচেয়ে জরুরী। অনেকসময় এমনও হতে পারে যে আপনার সব ট্রিমস রেডি কিন্তু আপনার সঠিক ফলো আপ না করার কারনে ফেব্রিক এখনো আপনার ফ্যাক্টরিতে এসে পৌছায়নি। ধরেন আপনার ফেব্রিক এবং ট্রিমস সবই রেডি এখন আপনার কাজ কি? আপনার কাজ হবে অতি দ্রুত Requisition  সহ এগুলো স্যাম্পল টিমের কাছে Handover করা। আরেকটি কথা বলে নেই, Techpack পাওয়ার পর পরই এটা প্যাটার্ন টিমের কাছে Forward করতে হবে যাতে প্যাটার্ন মাস্টার Fabric Consumption Calculation এর কাজ করতে পারে এবং একই সাথে সেই স্টাইল রিলেটেড কোন Technical Clarification দরকার হলে আপনাদের শুরুতেই জানাতে পারে। এরপর আপনার কাজ হবে স্যাম্পল ঠিকমতো কাটিং, সুয়িং হলো কিনা সেটা ফলো আপ করা এবং সুয়িং হলে ওয়াশ স্ট্যান্ডার্ড সহ ওয়াশে পাঠানো এবং ওয়াশ থেকে আসলে ফিনিশিং ট্রিমসসহ স্যাম্পলের ফিনিশিং টিমের কাছে Handover  করা। এরপর ফিনিশিং হয়ে গেলে ঠিকমতো ট্যাগ এটাচ করে বায়িং অফিসের মার্চেন্ডাইজারের কাছে Review সাপেক্ষে যথাযথ Concerned person এর কাছে কুরিয়ারে পাঠানো এবং সেই কুরিয়ারের Airway bill no. বায়িং মার্চেন্ডাইজারকে জানিয়ে দেওয়া এবং নিজেও সেটা কিপিং করা।
এতক্ষন বললাম স্যাম্পল রিলেটেড কথাবার্তা। এটা ছাড়াও একজন ট্রেইনিকে নিজের টিমের ফটোকপি করা, স্ক্যান করা, গার্মেন্টের ইমেজ তোলা,ট্রিম কার্ড বানানো, প্রোডাকশন ফাইল রেডি করা,  কমার্শিয়াল ডিপার্টমেন্টে ডকুমেন্টস Handover করা সহ আরো নানাবিধ কাজ করতে হবে যেগুলোর কোনটাকেই ছোট মনে করা যাবে না।


টিপস : 

১) ট্রেইনিদের উচিত নিয়মিত দুইটি ডায়রি Maintain করা। একটি দৈনন্দিন নতুন নতুন যেই কাজগুলো জমা হচ্ছে এবং আগামীদিনের জন্য  To Do List করার জন্য। এই ডায়রিতে যে কাজই আপনাকে করতে বলা হবে তা নোট করে রাখবেন। এমনও হতে পারে সেটা দুইদিন পর করা লাগতে পারে। এরপর যেই কাজগু‌লো‌ করা হবে সেগুলোতে একটি করে সোজা দাগ দিয়ে কেটে দিবেন। দিনের শেষে যেই কাজগুলো বাকি থাকবে সেগুলো পরের পাতায় পরের দিনের জন্য To Do List হিসেবে আলাদা করে লিখে রাখবেন। এই প্র্যাকটিসটা অবশ্যই করার চেষ্টা করবেন। আপনার কাজ শেষ করতে রাত যতোটাই বেজে যাক না কেনো দিনশেষে আপনি সবগুলো মিলিয়ে দেখবেন আর পরের দিনের জন্য লিস্ট করবেন। পাশাপাশি পরের দিনের Most Important কাজগু‌লো‌ হাইলাইটার দিয়ে কিংবা পাশে Importance অনুযায়ী ★ মার্ক দিয়ে রাখবেন। পরেরদিন সকালে এসেই সবার আগে এই ডায়রি খুলে দেখবেন কি কি কাজ আপনার আজকের দিনের জন্য করা লাগবে। তাহলে দেখবেন দিনশেষে আপনি ফ্রেশ একটা মাইন্ড নিয়ে বাসায় যেতে পারবেন এবং পরের দিনও ঠান্ডা মাথায় কাজ শুরু করতে পারবেন।

পরের ডায়রিটা আপনি Randomly Use করবেন না। এটা হবে শুধুমাত্র আপনি নতুন যেই জিনিসগুলো শিখবেন তা টুকে রাখার জন্য। এখন সেটা হতে পারে মার্চেন্ডাইজিং সংক্রান্ত কোন জ্ঞান অথবা স্পেসিফিক আপনার বায়ারের  কাজ সংক্রান্ত জানা নতুন কিছু।

২) প্রতিদিন আপনি নতুন অনেক কিছুর সাথেই পরিচিত হবেন। সবকিছুর ব্যাপারে তৎক্ষনাত আপনি নাও জানতে পারেন। নতুন যেটা জানবেন না সেটা আগে সিনিয়রের কাছ থেকে বিনয়ের সাথে জেনে নিন। তার কাছ থেকে হেল্প না পেলে অন্য টিমমেটদের কাছ থেকে জেনে নিন। তাও সম্ভব না হলে গুগল বন্ধুর সাহায্য নিন  । আশা করি হতাশ হবেন না 

৩) আপনি টেক্সটাইলের গ্র্যাজুয়েট আর আপনার সিনিয়র নন টেক্সটাইল ব্যাকগ্রাউন্ডের হলে নাক উচু করে চলার কিছু নেই। আপনার পুঁথিগত বিদ্যার থেকে তাদের দীর্ঘদিনের কর্ম অভিজ্ঞতার দাম বেশি।এই নন টেক্সটাইলের নিবেদিতপ্রাণ লোকেরাই তাদের শ্রম, মেধার মাধ্যমে এই সেক্টরকে আজকের এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।  তাই সবসময় তাদের যথাযথ সম্মান দিয়ে চলার চেষ্টা করুন। তাদের কাছ থেকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা না পেলে অন্তত বেয়াদবি করবেন না।

৪) স্যাম্পল ট্র্যাকিংয়ের জন্য excel sheet এ আলাদা ট্র্যাকার তৈরি করুন যাতে কবে আপনি Query পেলেন, কবে স্যাম্পল ফেব্রিক এবং ট্রিমস পেলেন, কবে স্যাম্পল সুয়িং হলো, কবে ওয়াশে পাঠালেন, কবে ওয়াশ থেকে আসলো, কবে ফিনিশিং করে বায়ারের কাছে পাঠালেন, কোন Airway Bill No. এ পাঠালেন ইত্যাদি Information নিজের মতো করে সাজিয়ে নিন। এতে করে সবকিছু একটি Single chart এ পাওয়া যাবে।



৫) যেসব স্যাম্পল ফেব্রিকস এবং ট্রিমস দেশের বাহিরে থেকে আসে সেগুলো ফলো আপ করার জন্য আলাদা একটা এক্সেল শিট Maintain করতে পারেন যেখানে সাপ্লায়ার কবে পাঠাচ্ছে, কোন সাপ্লায়ার পাঠাচ্ছে, কোন Airway Bill No. এ পাঠাচ্ছে, কোন স্টাইলের জন্য পাঠাচ্ছে, কি পাঠাচ্ছে, কতটুকু পাঠাচ্ছে, কবে কমার্শিয়াল ডকুমেন্টস আপনি পাচ্ছেন, কবে আপনার কমার্শিয়াল ডিপার্টমেন্টে সাবমিট করছেন এবং ফাইনালি আপনি কবে গুডস হাতে পাচ্ছেন সেগুলোর তথ্য আপডেট করতে পারেন।

৬) Mail Communication গুলো ভালো করে পড়ার এবং নিজে থেকে বুঝার চেষ্টা করুন। অন্ধের মতো কোন কিছুর পিছনে দৌড়াবেন না। যদি শুরুর দিকে সারাদিন স্যাম্পলে সময় দেওয়া লাগে তাহলে চেষ্টা করুন দিনশেষে মেইল পড়ার। এতে কিছুটা সময় লাগলেও পরবর্তী Investment হিসেবে এটা  দেখুন। 

৭) এই টিপসটি নিতান্তই আমার ব্যক্তিগত। এটাকে ভিন্নভাবে না নিলেই ভালো হবে। ক্যারিয়ারের শুরুতেই এমবিএ কিংবা মাস্টার্সে ভর্তি হবেন না। তাহলে দেখবেন আপনি আপনার জবে Properly Concentrate করতে পারবেন না। শুরুর প্রথম এক-দেড় বছর আপনার লার্নিং পিরিয়ড। তাই এই সময়টাকে পুরোপুরি কাজে লাগানোর চেষ্টা করুন। নচেৎ দেখা যাবে হয়তোবা বছর পার হবে ঠিকই কিন্তু আপনার কাজ শেখার জায়গায় আপনি নিজেকে নিজেই ফাঁকি দিয়ে ফেলেছেন।

সবশেষে একটি কথা বলবো, ট্রেইনি লাইফ কখনো আপনার কাছে বিষাদময় মনে হবে, কখনো কাজের চাপে নিজেকে নিঃশেষ মনে হবে। কিন্তু হতাশ হবেন না। মহান আল্লাহ তায়ালার উপর ভরসা রাখুন আর নিজের উপর আস্থা রাখুন। মনে রাখবেন এই লাইফ একইসাথে আপনার শেখার এবং আগামী দিনগুলোর উপরে উঠার দিক নির্দেশনা দিবে। তাই নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে কাজ শেখার চেষ্টা করুন। আজকের ট্রেইনি আগামীদিনের ম্যানেজার, জিএম, কান্ট্রি ডিরেক্টর  । সবার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।




আসিফ বিন আসগর
এক্স টেক্সটাইল স্টুডেন্ট,
 মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়



৬টি মন্তব্য:

Unknown বলেছেন...

Very helpful post, I will continue to read. I am starting an ass. merchandising job. Thanks a lot, sir


ashik বলেছেন...
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
ashik বলেছেন...

ভাই আপনার ফোন নং টা দেওয়া যাবে কী

ashik বলেছেন...

ভাই আপনার ফোন নং টা দেওয়া যাবে কী

Mohammed Sajjad Hossen বলেছেন...

Thanks

নামহীন বলেছেন...

This post is out of the world. Worth of printing.