টেক্সটাইল শিল্পে বাস্তবতা বনাম আফসোস | Textile Industry of Bangladesh - Textile Lab | Textile Learning Blog
বাস্তবতা বনাম আফসোস

একটা কথা টেক্সটাইল ট্রেডে  খুব শোনা যায় যে, বিদেশীরা কোন কাজ না করেই লাখ লাখ ডলার তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে আর আমাদের দেশের লোকেরা বেকার পড়ে আছে নতুবা হাড়ভাঙা খাটুনি করেও স্বল্প বেতনে চাকরি করছে। আচ্ছা!কথাটা কি পুরোটাই সত্য নাকি সবাই বলছে দেখে আমরাও কোন কিছু যাচাই বাছাই না করে একই সুরে সুর মিলাচ্ছি? আসুন নিজের যুক্তিতে একটু মিলানোর চেষ্টা করি।


বাংলাদেশের অর্থনীতির আজকের এই অবস্থানের পিছনে যে টেক্সটাইল সেক্টরের অবদান সবচেয়ে বেশি এটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি এটাও সত্য যে এই অবদান এই পর্যায় লাভ করেছে মালিক পক্ষের শোষক মনোভাবের কারনে। একটু সহজ ভাষায় বলি। এই সেক্টরটা লক্ষ শ্রমিকের শ্রমের উপর নির্ভরশীল। শুরু থেকে বাংলাদেশের নিম্ন মজুরি কাঠামোর কারনে একদিকে যেমন বাংলাদেশে প্রচুর পরিমানে গার্মেন্টসের অর্ডার এসেছে ঠিক তেমনি  মালিকরাও সেই প্রফিটের টাকা নতুন করে বিনিয়োগ করে নতুন এবং ব্যাকলিংকড ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার মাধ্যমে আরো লক্ষ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। আগে একটা সময় গ্লোবাল মার্কেটে কম্পিটিশন কম ছিলো। 

কিন্তু এখন দিনকে দিন সেটা বেড়েই চলেছে। এখন একটা গার্মেন্টসের অর্ডার শুধুমাত্র Low CM (Cost of Making) কিংবা কমপ্লায়েন্সের উপর নির্ভর করে না। এর সাথে আনুষঙ্গিক অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। ধরুন জিওগ্রাফিকাল ফ্যাক্টরের কথাই বলি। আগে ইন্ডিয়ার গার্মেন্টস সেক্টর এতো বেশি বড় ছিলো না যার দরুন দেখা যেতো হয় আমরা ডিরেক্ট বিভিন্ন বায়ারের সাথে যোগাযোগ করতাম অথবা আমাদের দেশে থাকা বিভিন্ন লিয়াজো অফিস কিংবা ট্রেডিং অফিসের সাথে যোগাযোগ করে অর্ডার কালেক্ট করতাম। কিন্তু এখন যেহেতু ইন্ডিয়াতে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বাড়ছে পাশাপাশি তাদের দক্ষ ম্যানেজমেন্ট এবং মার্কেটিং পলিসি আছে সেহেতু তারা বিভিন্ন লিয়াজো এবং ট্রেডিং এর সাউথ এশিয়ান জোনাল অফিসগুলো তাদের দেশে ইস্টাবলিশ করার জন্য বায়ারদের কনভেন্স করেছে। যার ফলে এখন বাংলাদেশে থাকা লিয়াজো কিংবা ট্রেডিং অফিসগুলো অনেকটাই ইন্ডিয়ার জোনাল অফিসের মুখাপেক্ষী হয়ে গেছে। কেননা ক্ষেত্রবিশেষে  ইন্ডিয়ায় প্রডাকশন কস্ট বাংলাদেশ থেকে খানিকটা বেশি হওয়া স্বত্ত্বেও তারা তাদের মার্কেটিং পলিসির কারনে অর্ডারগুলো নিয়ে নিচ্ছে।

আপনি মানেন কিংবা নাই মানেন ইন্ডিয়া এখন ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে বড় CEO প্রডিউসার। আপনি ওয়ার্ল্ডের সব বড় বড় কোম্পানির দিকে তাকান দেখবেন ইন্ডিয়ানদের আধিপত্য। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং অধিক জনসংখ্যা তাদের আজকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তারা আর কিছু পারুক কিংবা নাই পারুক তাদের ইংলিশের ফ্লুয়েন্সি,ম্যানেজারিয়াল স্কিল আর কমিউনিকেশন স্কিল কম্পারেটিভলি আমাদের ম্যাক্সিমামের থেকে ভালো। আর পাশাপাশি দেখা যায় যে অধিক জনসংখ্যার কারনে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ইন্ডিয়ানরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাই যখন বাংলাদেশে বিভিন্ন কোম্পানিতে তারা যখন মার্চেন্ডাইজিং এর হেড হিসেবে আসে তখন মালিকদের অর্ডার সোর্সিং নিয়ে কিছুটা কম চিন্তা করতে হয়।

 তারা মূলত কাজই করে অর্ডার সোর্সিং নিয়ে। যেহেতু তাদের নেটওয়ার্কিং আর নেগোসিয়েশন স্কিল ভালো তাই মালিক হাজার হাজার ডলার স্যালারি দিয়ে তাদের নিয়োগ দেয়। দুইটা কথা মনে রাখবেন আপনার যতোই প্রডাকশন ক্যাপাসিটি থাকুক হোক না কেনো আপনার আগে অর্ডার লাগবে। অর্ডার না থাকলে কোন কিছুই কাজে আসবে না। দ্বিতীয়ত যেই মালিক আপনার আমার দুই চার পাচ হাজার টাকা বেতন বাড়ানোর জন্য এতো কার্পন্য করে তাকে এতোটা ভোদাই ভাববেন না যে তিনি বিদেশীদের জন্য উদারহস্ত হয়ে এমনি এমনি লাখ লাখ টাকা স্যালারি দিবেন। তিনি আপনার আমার থেকে ভালো বুঝেন দেখেই আজকে এই পর্যায়ে এসেছেন। 

তাই বলে কি আমাদের দেশে যোগ্য কেউ নাই? নাই যে তা না,আছে। বিদেশীদের কাজের দক্ষতার থেকে বাহিরের দক্ষতা ভালো কিন্তু আমাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাজের দক্ষতা থাকা নিয়েই আফসোস করা লাগে। তার উপর মোটামুটি শিক্ষিত বাংলাদেশী অনেকেই একটু উপরের পোস্টে চলে গেলে ধরাকে সরা জ্ঞান করা শুরু করে দেন।তবে বাস্তবিক অর্থে আমাদের ইংলিশ ফ্লুয়েন্সি, কমিউনিকেশন স্কিল, প্রেজেন্টেশন স্কিল এবং ম্যানেজারিয়াল স্কিলে যথেষ্ট দূর্বলতা আছে।  এগুলো ছাড়াও অনেকের সব যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও বিভিন্ন অফিস পলিটিকসের কারনে এগুতে পারেন না। তবে এটাও আস্তে আস্তে চেঞ্জ হবে যদি এই সেক্টরে উচ্চ শিক্ষিতরা আসতে শুরু করেন। এখনও অধিকাংশ কোম্পানিতে গতানুগতিক ধারার মোটামুটি  শিক্ষিত লোক দিয়ে কোম্পানি চলছে যেখানে কোন নতুনত্ব নেই, বৈচিত্র্য নেই। তারা পুরাতনকে ধারন করে এখনও আকড়ে পড়ে আছেন।

তাই এই সেক্টরে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য একদিকে যেমন আরো অধিক হারে বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের উচ্চ শিক্ষিত লোকের প্রয়োজন আছে ঠিক তেমনি তাদের প্রবেশের জন্য সেই সহায়ক বেতন কাঠামো এবং কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত  করতে হবে।

লেখাগুলো বাস্তবতা নিরিখে আমার জব লাইফের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছি। আপনাদের কোন মতামত থাকলে জানাতে পারেন।

লিখেছেনঃ 
আসিফ বিন আসগর
মার্চেন্ডাইজিং ডিপার্টমেন্ট, হামীম গ্রুপ
এক্স টেক্সটাইল স্টুডেন্ট, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

টেক্সটাইল শিল্পে বাস্তবতা বনাম আফসোস | Textile Industry of Bangladesh

বাস্তবতা বনাম আফসোস

একটা কথা টেক্সটাইল ট্রেডে  খুব শোনা যায় যে, বিদেশীরা কোন কাজ না করেই লাখ লাখ ডলার তাদের দেশে নিয়ে যাচ্ছে আর আমাদের দেশের লোকেরা বেকার পড়ে আছে নতুবা হাড়ভাঙা খাটুনি করেও স্বল্প বেতনে চাকরি করছে। আচ্ছা!কথাটা কি পুরোটাই সত্য নাকি সবাই বলছে দেখে আমরাও কোন কিছু যাচাই বাছাই না করে একই সুরে সুর মিলাচ্ছি? আসুন নিজের যুক্তিতে একটু মিলানোর চেষ্টা করি।


বাংলাদেশের অর্থনীতির আজকের এই অবস্থানের পিছনে যে টেক্সটাইল সেক্টরের অবদান সবচেয়ে বেশি এটা যেমন সত্য ঠিক তেমনি এটাও সত্য যে এই অবদান এই পর্যায় লাভ করেছে মালিক পক্ষের শোষক মনোভাবের কারনে। একটু সহজ ভাষায় বলি। এই সেক্টরটা লক্ষ শ্রমিকের শ্রমের উপর নির্ভরশীল। শুরু থেকে বাংলাদেশের নিম্ন মজুরি কাঠামোর কারনে একদিকে যেমন বাংলাদেশে প্রচুর পরিমানে গার্মেন্টসের অর্ডার এসেছে ঠিক তেমনি  মালিকরাও সেই প্রফিটের টাকা নতুন করে বিনিয়োগ করে নতুন এবং ব্যাকলিংকড ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার মাধ্যমে আরো লক্ষ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করেছেন। আগে একটা সময় গ্লোবাল মার্কেটে কম্পিটিশন কম ছিলো। 

কিন্তু এখন দিনকে দিন সেটা বেড়েই চলেছে। এখন একটা গার্মেন্টসের অর্ডার শুধুমাত্র Low CM (Cost of Making) কিংবা কমপ্লায়েন্সের উপর নির্ভর করে না। এর সাথে আনুষঙ্গিক অনেক কিছুর উপর নির্ভর করে। ধরুন জিওগ্রাফিকাল ফ্যাক্টরের কথাই বলি। আগে ইন্ডিয়ার গার্মেন্টস সেক্টর এতো বেশি বড় ছিলো না যার দরুন দেখা যেতো হয় আমরা ডিরেক্ট বিভিন্ন বায়ারের সাথে যোগাযোগ করতাম অথবা আমাদের দেশে থাকা বিভিন্ন লিয়াজো অফিস কিংবা ট্রেডিং অফিসের সাথে যোগাযোগ করে অর্ডার কালেক্ট করতাম। কিন্তু এখন যেহেতু ইন্ডিয়াতে গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বাড়ছে পাশাপাশি তাদের দক্ষ ম্যানেজমেন্ট এবং মার্কেটিং পলিসি আছে সেহেতু তারা বিভিন্ন লিয়াজো এবং ট্রেডিং এর সাউথ এশিয়ান জোনাল অফিসগুলো তাদের দেশে ইস্টাবলিশ করার জন্য বায়ারদের কনভেন্স করেছে। যার ফলে এখন বাংলাদেশে থাকা লিয়াজো কিংবা ট্রেডিং অফিসগুলো অনেকটাই ইন্ডিয়ার জোনাল অফিসের মুখাপেক্ষী হয়ে গেছে। কেননা ক্ষেত্রবিশেষে  ইন্ডিয়ায় প্রডাকশন কস্ট বাংলাদেশ থেকে খানিকটা বেশি হওয়া স্বত্ত্বেও তারা তাদের মার্কেটিং পলিসির কারনে অর্ডারগুলো নিয়ে নিচ্ছে।

আপনি মানেন কিংবা নাই মানেন ইন্ডিয়া এখন ওয়ার্ল্ডের সবচেয়ে বড় CEO প্রডিউসার। আপনি ওয়ার্ল্ডের সব বড় বড় কোম্পানির দিকে তাকান দেখবেন ইন্ডিয়ানদের আধিপত্য। তাদের শিক্ষা ব্যবস্থা এবং অধিক জনসংখ্যা তাদের আজকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে। তারা আর কিছু পারুক কিংবা নাই পারুক তাদের ইংলিশের ফ্লুয়েন্সি,ম্যানেজারিয়াল স্কিল আর কমিউনিকেশন স্কিল কম্পারেটিভলি আমাদের ম্যাক্সিমামের থেকে ভালো। আর পাশাপাশি দেখা যায় যে অধিক জনসংখ্যার কারনে পৃথিবীর নানা প্রান্তে ইন্ডিয়ানরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। তাই যখন বাংলাদেশে বিভিন্ন কোম্পানিতে তারা যখন মার্চেন্ডাইজিং এর হেড হিসেবে আসে তখন মালিকদের অর্ডার সোর্সিং নিয়ে কিছুটা কম চিন্তা করতে হয়।

 তারা মূলত কাজই করে অর্ডার সোর্সিং নিয়ে। যেহেতু তাদের নেটওয়ার্কিং আর নেগোসিয়েশন স্কিল ভালো তাই মালিক হাজার হাজার ডলার স্যালারি দিয়ে তাদের নিয়োগ দেয়। দুইটা কথা মনে রাখবেন আপনার যতোই প্রডাকশন ক্যাপাসিটি থাকুক হোক না কেনো আপনার আগে অর্ডার লাগবে। অর্ডার না থাকলে কোন কিছুই কাজে আসবে না। দ্বিতীয়ত যেই মালিক আপনার আমার দুই চার পাচ হাজার টাকা বেতন বাড়ানোর জন্য এতো কার্পন্য করে তাকে এতোটা ভোদাই ভাববেন না যে তিনি বিদেশীদের জন্য উদারহস্ত হয়ে এমনি এমনি লাখ লাখ টাকা স্যালারি দিবেন। তিনি আপনার আমার থেকে ভালো বুঝেন দেখেই আজকে এই পর্যায়ে এসেছেন। 

তাই বলে কি আমাদের দেশে যোগ্য কেউ নাই? নাই যে তা না,আছে। বিদেশীদের কাজের দক্ষতার থেকে বাহিরের দক্ষতা ভালো কিন্তু আমাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রে কাজের দক্ষতা থাকা নিয়েই আফসোস করা লাগে। তার উপর মোটামুটি শিক্ষিত বাংলাদেশী অনেকেই একটু উপরের পোস্টে চলে গেলে ধরাকে সরা জ্ঞান করা শুরু করে দেন।তবে বাস্তবিক অর্থে আমাদের ইংলিশ ফ্লুয়েন্সি, কমিউনিকেশন স্কিল, প্রেজেন্টেশন স্কিল এবং ম্যানেজারিয়াল স্কিলে যথেষ্ট দূর্বলতা আছে।  এগুলো ছাড়াও অনেকের সব যোগ্যতা থাকা স্বত্ত্বেও বিভিন্ন অফিস পলিটিকসের কারনে এগুতে পারেন না। তবে এটাও আস্তে আস্তে চেঞ্জ হবে যদি এই সেক্টরে উচ্চ শিক্ষিতরা আসতে শুরু করেন। এখনও অধিকাংশ কোম্পানিতে গতানুগতিক ধারার মোটামুটি  শিক্ষিত লোক দিয়ে কোম্পানি চলছে যেখানে কোন নতুনত্ব নেই, বৈচিত্র্য নেই। তারা পুরাতনকে ধারন করে এখনও আকড়ে পড়ে আছেন।

তাই এই সেক্টরে নিজেদের আধিপত্য ধরে রাখার জন্য একদিকে যেমন আরো অধিক হারে বিভিন্ন ব্যাকগ্রাউন্ডের উচ্চ শিক্ষিত লোকের প্রয়োজন আছে ঠিক তেমনি তাদের প্রবেশের জন্য সেই সহায়ক বেতন কাঠামো এবং কর্ম পরিবেশ নিশ্চিত  করতে হবে।

লেখাগুলো বাস্তবতা নিরিখে আমার জব লাইফের অভিজ্ঞতা থেকে লিখেছি। আপনাদের কোন মতামত থাকলে জানাতে পারেন।

লিখেছেনঃ 
আসিফ বিন আসগর
মার্চেন্ডাইজিং ডিপার্টমেন্ট, হামীম গ্রুপ
এক্স টেক্সটাইল স্টুডেন্ট, মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

1 টি মন্তব্য:

Unknown বলেছেন...

Ei desh e garments sector e maximumn Indian Sri lonkan i operation & production level e kaj kore except kisu buying house jekhane indian management ase . Ami emon onk besh koek jon malik dekhesi jara sref tader foreigner tag r karone job e recruit kore ebong din sheshe kompany khotir sommukhin hoi.