বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের শীর্ষ ১০ ক্রেতা
১. এইচঅ্যান্ডএম H&M (Sweden)
২. ইন্ডিটেক্স Inditex (Spain)
৩. প্রাইমার্ক Primark ( Ireland )
৪. বেস্টসেলার Bestseller (Denmark)
5. M&S এমঅ্যান্ডএস (UK)
6. সিঅ্যান্ডএর C&A (Netherlands)
7. ইউনিক্লো Uniqlo (Japan)
8. LPP এলপিপি (Poland)
9. নেক্সট NEXT (UK)
10. পেপকো PEPCO (Poland)
1. H&M এইচঅ্যান্ডএম (সুইডেন)
বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা এইচঅ্যান্ডএম। গত ২০২৪ অর্থবছরে বিশ্বের ৪৪টি দেশের সহস্রাধিক আউটলেটে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ পোশাক তুলেছে এই কোম্পানি। যদিও অনলাইনে তাদের পোশাক কিনতে পারে ৬০টি দেশের মানুষ। বাংলাদেশে তৈরি এইচঅ্যান্ডএমের পোশাক বেশি বিক্রি হচ্ছে পোল্যান্ড, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রে।
গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২৫৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক কিনেছে এইচঅ্যান্ডএম। বাংলাদেশের দুই শতাধিক কারখানা থেকে এই পোশাক কিনেছে তারা। বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি হওয়া প্রতিদিনের চালানে থাকছে এইচঅ্যান্ডএমের পোশাক। গড়ে প্রতিদিন প্রতিষ্ঠানটির ২ হাজার ৪২টি চালান জাহাজ বা উড়োজাহাজে তোলা হচ্ছে। তাতে নবজাতক থেকে শুরু করে সব বয়সী মানুষের পোশাক রয়েছে এইচঅ্যান্ডএম এর কালেকশনে।
১৯৪৭ সালে একটি স্টোর দিয়ে যাত্রা শুরু করা এইচঅ্যান্ডএমের বিক্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা এখন ৪ হাজার ২৯৮টি। গত বছর ২০২৩ সালে কোম্পানিটি ২১ দশমিক ৩২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য বিক্রি করেছে। নাসডাক নর্ডিক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত কোম্পানিটির প্রধান ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে এইচঅ্যান্ডএম, কজ, উইকডে, মানকি, চিফ মানডে, এফাউন্ড, অ্যান্ড আদার স্টোরিজ।
এইচঅ্যান্ডএমের প্রকাশিত তালিকা অনুযায়ী, বিশ্বের ৪১ দেশের ৯১৬ সাপ্লায়ার থেকে পোশাক, হোম টেক্সটাইল, জুতা ও কসমেটিক পণ্য নেয় তারা। বাংলাদেশে থেকে তিন দশক ধরে তৈরি পোশাক নিচ্ছে তারা। এমনকি অনেক দিন ধরে কোম্পানিটি বাংলাদেশি পোশাকের শীর্ষস্থানীয় ক্রেতা। গত ২০২১-২২ অর্থবছর সবচেয়ে বেশি ২৯০ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে। এরপর কিছুটা কমলেও সেরার তালিকায় রয়েছে।
যোগাযোগ করা হলে এইচঅ্যান্ডএম গ্লোবাল কমিউনিকেশনের প্রেস অফিসার অ্যান্ড কমিউনিকেশনস স্পেশালিস্ট অলবিন নরডিন ই–মেইলে প্রথম আলোকে বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পোশাক উৎপাদনকারী দেশ। ১৯৮৩ সাল থেকে বাংলাদেশে নিজস্ব প্রোডাকশন অফিসসহ উপস্থিতি আছে এইচএন্ডএম গ্রুপের। আমাদের শীর্ষস্থানীয় পণ্য উৎপাদনকারী দেশে নিজস্ব টিম থাকা সব সময়ই সুবিধার বিষয়।’ ভবিষ্যতে বাংলাদেশে ব্যবসা বাড়ানো হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে সরাসরি উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ বাজার।’
২. ইন্ডিটেক্স Inditex (Spain)
বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের দ্বিতীয় শীর্ষ ক্রেতা ইন্ডিটেক্স। স্পেনের বহুজাতিক এই কোম্পানি প্রতিবছরই বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনা বাড়াচ্ছে । গত ২০২২-২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ২১৮ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে ইন্ডিটেক্স। এর আগে তারা বাংলাদেশ থেকে এক অর্থবছরে দুই বিলিয়ন বা ২০০ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক কেনেনি।
বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের ১৩টি দেশের আউটলেটে পোশাক পাঠায় ইন্ডিটেক্স। তবে সবচেয়ে বেশি গেছে স্পেনে—১৮৭ কোটি ডলারের পোশাক। কোম্পানির প্রধান ব্র্যান্ড জারা, পুল অ্যান্ড বিয়ার, বারস্কা, স্ট্র্যাডিভারিয়াস, ওইশো, ম্যাসিমো দত্তি। বাংলাদেশ থেকে কেনা এই কোম্পানির পোশাকের তালিকায় অন্তর্বাস থেকে শুরু করে ওভারকোট—সবই আছে। আর পোশাক সরবরাহ করেছে বাংলাদেশের ২৫০টি কারখানা।
3. প্রাইমার্ক Primark ( Ireland )
বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের শতকোটি ডলারের ক্রেতার তালিকায় রয়েছে আয়ারল্যান্ডের মাল্টিন্যাশানা রিটেইল কোম্পানি প্রাইমার্ক। গত ২০২২-২৩ অর্থবছর বাংলাদেশ থেকে তৃতীয় সর্বোচ্চ ১১২ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে কোম্পানিটি।
বিশ্বের ১৭টি দেশে প্রাইমার্কের ৪৫১টি আউটলেট আছে । চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে শেষ হওয়া অর্থবছরে কোম্পানির রেভিনিউ দাঁড়ায় ৯৪৪ কোটি ইউরো। প্রাইমার্কের মূল বাজার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে। বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক যুক্তরাজ্যের বাজারের জন্য বেশি নিচ্ছে তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রাইমার্ক বাংলাদেশের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে ব্যবসা বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে তাঁদের কোম্পানি।
4. বেস্টসেলার Bestseller (Denmark)
ডেনমার্কের বহুজাতিক কোম্পানি বেস্টসেলার বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের চতুর্থ শীর্ষ ক্রেতা। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭৯ কোটি ডলারের পোশাক কিনেছে তারা। প্রতি পিস পোশাকের গড় দাম ৪ দশমিক ৬৬ ডলার, যা শীর্ষ ১০ ক্রেতার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। বাংলাদেশের ৯৫টি কারখানায় তৈরি হওয়ায় পোশাক বেস্টসেলারের ১১ দেশের বিক্রয়কেন্দ্রে যায়।
5. M&S এমঅ্যান্ডএস (UK)
ব্রিটিশ বহুজাতিক কোম্পানি মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার (এমঅ্যান্ডএস) বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের পঞ্চম শীর্ষ ক্রেতা। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭৮ কোটি ডলারে ২১ কোটি পিস পোশাক কিনেছে কোম্পানিটি। তাতে প্রতি পিস পোশাকের গড় দাম দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৭৪ ডলার।
কোম্পানিটির প্রধান ব্র্যান্ড এমঅ্যান্ডএস ও অটোগ্রাফ। বাংলাদেশ থেকে কেনা পোশাকের ৯১ শতাংশই তাদের যুক্তরাজ্যের বিক্রয়কেন্দ্রে যাচ্ছে। বিদায়ী অর্থবছর বাংলাদেশের ৫১টি কারখানা থেকে পোশাক কিনেছে প্রতিষ্ঠানটি। অন্যান্য ব্রিটিশ ব্র্যান্ডের মতো এমঅ্যান্ডএসও বাংলাদেশ থেকে তৈরি পোশাক কেনা বাড়াচ্ছে বলে জানান ক্রেতা প্রতিষ্ঠানটির একজন কর্মকর্তা।
6. সিঅ্যান্ডএর C&A (Netherlands)
বাংলাদেশ থেকে পোশাক কেনায় অংশীদারি বাড়িয়েছে সিঅ্যান্ডএ। ২০২০ সালে তাদের মোট তৈরি পোশাকের ৩৬ শতাংশের উৎস ছিল বাংলাদেশ। ২০২২ সালে সেটি বেড়ে ৫১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। কোম্পানির টেকসই প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের পর চীন থেকে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১৩ শতাংশ তৈরি পোশাক কেনে সিঅ্যান্ডএ।
১৮৪১ সালে নেদারল্যান্ডসের দুই ভাইয়ের হাত ধরে যাত্রা শুরু হয় সিঅ্যান্ডএর। এই খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশি তৈরি পোশাকের ষষ্ঠ শীর্ষ ক্রেতা। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৭২ কোটি ডলারে ২০ কোটি পিস পোশাক কিনেছে তারা। তাদের কেনা প্রতি পিস পোশাকের গড় মূল্য ৩ দশমিক ৬২ ডলার। বাংলাদেশের অন্তত ৫০ কারখানা থেকে পোশাক কেনে সিঅ্যান্ডএ।
7. ইউনিক্লো Uniqlo (Japan)
জাপানের বহুজাতিক কোম্পানি ইউনিক্লো গত অর্থবছরে প্রায় সাড়ে ৭১ কোটি ডলারের ১৩ কোটি ২১ লাখ পিস পোশাক কিনেছে। তাদের কেনা প্রতি পিস পোশাকের গড় মূল্য ছিল ৫ দশমিক ৪১ ডলার, যা শীর্ষ ১০ ক্রেতার মধ্যে সর্বোচ্চ।
ইউনিক্লোর মূল গ্রুপ ফাস্ট রিটেইলিং। তাদের ইউনিক্লো ছাড়াও জিইউ, থিওরি, জে ব্র্যান্ডসহ মোট সাতটি ব্র্যান্ডের ৩ হাজার ৫৯৫টি বিক্রয়কেন্দ্র আছে বিভিন্ন দেশে। বাংলাদেশের তৈরি পোশাক বিশ্বের ২৪ দেশের বিক্রয়কেন্দ্রে বিক্রি করে ইউনিক্লো। গত অর্থবছর ২৬টি পোশাক কারখানা তাদের পোশাক সরবরাহ করে। এর মধ্যে ৩২ শতাংশ করেছে প্যাসিফিক জিনস গ্রুপ।
8. LPP এলপিপি (Poland)
পোল্যান্ডের বহুজাতিক কোম্পানি এলপিপি বিদায়ী অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৬৫ কোটি ৪৪ লাখ ডলারের পোশাক নিয়েছে। বাংলাদেশের প্রায় ২৫০টি কারখানা এই পোশাক সরবরাহ করেছে। ২০১৫ সালে ঢাকায় শাখা অফিস চালু করে বহুজাতিক এই প্রতিষ্ঠান।
এলপিপির ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ৪০টি দেশে বিক্রি হচ্ছে এলপিপির পাঁচ ব্র্যান্ডের পোশাক। ব্র্যান্ডগুলো হচ্ছে রিজার্ভড, ক্রপ, মোহিতো, হাউস, সিনসে।
9. নেক্সট NEXT (UK)
১৬০ বছরের পুরোনো যুক্তরাজ্যের বহুজাতিক কোম্পানি নেক্সট প্রতিবছর বাংলাদেশ থেকে অর্ধবিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক নিচ্ছে। গত অর্থবছরে ৫৩ কোটি ডলারে ১৬ কোটি পিস তৈরি পোশাক কিনেছে। অর্থাৎ নেক্সট গড়ে ৩ দশমিক ২৪ ডলারে প্রতি পিস পোশাক কিনেছে।
10. পেপকো PEPCO (Poland)
পোল্যান্ডের বহুজাতিক এই খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান পেপকো বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে কম দামে পোশাক কিনছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ৪৬ কোটি ডলারে ২৬ কোটি পিস পোশাক নিয়েছে। তাতে প্রতি পিস পোশাকের গড় দাম দাঁড়িয়েছে পৌনে দুই ডলার, যা শীর্ষ ১০ ক্রেতার মধ্যে সর্বনিম্ন।
ইউরোপের ২১ দেশে সাড়ে চার হাজারের বেশি বিক্রয়কেন্দ্র আছে পেপকোর। তাদের পোশাক সংগ্রহের বড় তিনটি উৎস দেশ—বাংলাদেশ, চীন ও ভারত। চারটি ব্র্যান্ড—পেপকো, পাউন্ডল্যান্ড, পিজিএস, ডিলজ নামে পোশাক বাজারজাত করছে পেপকো।
জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ছোটো বড় এক হাজারের বেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের জন্য তৈরি পোশাক উৎপাদন করে। এটিই আমাদের পোশাক খাতকে শক্তিশালী করছে। যেহেতু হাতেগোনা কয়েকটি ছাড়া অধিকাংশ ক্রেতা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ থেকে পোশাক কিনে ফলে এটিকে ব্র্যান্ডিং করা যেতে পারে। তৈরি পোশাকের পাশাপাশি এই ক্রেতাদের কাছে বাংলাদেশের অন্যান্য পণ্যও বিক্রি করার বড় সুযোগ রয়েছে।
সুত্রঃ প্রথম আলো
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন