কটন ফাইবারের ইতিহাস জেনে নিন - Textile Lab | Textile Learning Blog
কাপড় তৈরির জন্য সুতা প্রয়োজন। আর সুতা তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে যে সব তন্তু বা আঁশ ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে টেক্সটাইল ফাইবার বলে। বর্তমানে বস্ত্র শিল্পে অনেক ধরনের ফাইবার ব্যাবহার করা হচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু ফাইবার প্রকৃতিগত ভাবে পাওয়া যায় এবং কাপড় আবিষ্কারের প্রথম থেকেই সেগুলো ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রাকৃতিক ফাইবার গুলোর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত ফাইবার হচ্ছে কটন বা তুলা।এটিকে প্রাকৃতিক সেলুলোজ ফাইবারও বলা হয়।

আরবি শব্দ থেকে কটন (cotton) শব্দের আবির্ভাব। ইতিহাসের পাতা উল্টালে কটন ফাইবারের যে ঐতিহ্য চোখে পড়ে তা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও প্রাচীন। তুলা চাষের সর্বপ্রথম সময় সম্পর্কে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মিলিত মত থেকে ধারনা নেয়া যায় যে, খৃষ্টপূর্ব ৩,০০০ বছর পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম তুলা চাষ শুরু হয়। এছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকার মেক্সিকোতে খৃস্টপূর্ব ৩,৫০০ বছর এবং খৃষ্টপূর্ব ৫০০ বছর হতে আমেরিকায় তুলার চাষ প্রচলিত ছিল।

ঐতিহাসিকদের মতে তুলার ব্যাবহার প্রথমে শুরু হয়েছিল ভূমধ্যসাগরীয় তথা আরবদেশ গুলোতে। মিশর হয়তো এক্ষেত্রে প্রথম স্থান অর্জন করেছিল। আধুনিক সভ্যতার তীর্থভূমি বলে পরিচিত ব্রিটেন কিন্তু এ ব্যাপারে পিছিয়ে ছিল। পরবর্তীতে শিল্প বিপ্লবের পর ১,৩০০ শতাব্দীর গোঁড়া থেকে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছর পূর্বে   ব্রিটেনে প্রথম তুলার ব্যাবহার শুরু হয়। আমেরিকাতে তুলার ব্যাবহার শুরু হয় আরও পরে, ১,৬০০ শতাব্দীর শেষের দিকে। বিশ্বব্যাপী তুলার ব্যাপক ব্যাবহার শুরু হয় আঁশ থেকে যান্ত্রিক ভাবে সুতা তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কারের পর থেকে। শুধু তাই নয় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুতা ও কাপড় তৈরির উত্তরোত্তর উন্নত প্রযুক্তিসহ কাপড়ের রং, ছাপা ও ফিনিশিং প্রক্রিয়াগুলোর আধুনিক পদ্ধতি উদ্ভাবনের ফলে কাপড়ের সর্বমুখী ব্যাবহার এতোই অবধারিত হয়ে পড়েছে যে, আজকের উন্নত বিশ্বে তুলার ব্যাবহার ব্যতিরেকে মানব কল্যাণের কোন দিককে বিচ্ছিন্ন করে ভাবা যায় না।ফলে বর্তমানে   পৃথিবীর সকল দেশের, সকল শ্রেণীর মানুষ তুলা দিয়ে তৈরি কাপড় ও তুলাজাত অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করে আসছেন।

বাংলাদেশে তুলার চাষ:

মসলিনের সূক্ষ্ম আঁশ ছাড়া আর যে প্রকার তুলা বাংলাদেশে আগে থেকে উৎপন্ন হত তা “গোসিপিয়াম-আরবোরিয়াম” শ্রেণিভুক্ত। সাধারণত একে কুমিল্লা কটন নামে অভিহিত করা হতো। এই তুলার তিনটি বাণিজ্যিক নাম প্রচলিত যথা, লাংগুনিয়া, দোলা ও চাকুরিয়া। এই কুমিল্লা কটনের চাষ এখনো কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকায় প্রচলিত আছে। এই উৎপাদিত তুলার গুনগত মান খুবই নিন্ম শ্রেণীর এবং আঁশের দৈর্ঘ্য আধা ইঞ্চির উপরে নয়। ফলে এগুলো থেকে মিল পদ্ধতিতে কোন সুতা তৈরি হত না। দেশীয় প্রথায় চরকায় সুতা কাটা ও লেপ-তোষকের জন্য এগুলো বেশি ব্যবহৃত হতো।
বাংলাদেশে বর্তমানে বাণিজ্যিক পর্যায়ে যে তুলা উৎপাদিত হচ্ছে তা মূলত: আমেরিকান। শুরুতে আমেরিকা থেকে বীজ আমদানি করে আমাদের দেশে নিয়মিত তুলা চাষ পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশে তুলা উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন দেশের তুলার বীজ এনে স্থানীয়ভাবে শংকরিত করে বিভিন্ন জাতের তুলা বীজ উৎপন্ন করেছে। দেশে উৎপাদিত তুলা বর্তমানে ফলন ও গুনগত মানের দিক থেকে বেশ উন্নতি সাধন করেছে। এসব তুলার আঁশের দৈর্ঘ্য, রং এবং পরিপক্বতা বেশ ভাল। মেহেরপুর, জীবন নগর প্রভৃতি কেন্দ্রের দীর্ঘ আঁশের তুলা ব্যবহার করে অন্য কোন সংমিশ্রণ ছাড়াই ৬০স কাউন্ট পর্যন্ত সুতা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে তুলা উৎপাদনের পরিমাণ দিন দিন বেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কটন বা তুলা সম্মন্ধে কিছু তথ্যঃ

★ চায়না, ভারত এবং আমেরিকা কটনের বৃহত্তর উৎপাদনকারী দেশ।

★প্রতি বছর পৃথিবীর প্রায় ১০০ টি দেশে ৫ কোটি টনেরও বেশি তুলা উৎপাদিত হয়।

★ মিশর এবং অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে ভাল মানের তুলা উৎপাদনকারী দেশ।

★ আমেরিকা সবচেয়ে বড় কটন রপ্তানীকারক দেশ।

★ বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় কটন আমদানীকারক দেশ।

★গার্মেন্টস সেক্টরের যত সূতা ব্যবহৃত হয় তার ৬০ ভাগই কটন।

Refarance (মুল লেখার রেফারেন্স টেক্সটাইল ফাইবার, এম. এ. সাইম)



কটন ফাইবারের ইতিহাস জেনে নিন

কাপড় তৈরির জন্য সুতা প্রয়োজন। আর সুতা তৈরিতে কাঁচামাল হিসেবে যে সব তন্তু বা আঁশ ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে টেক্সটাইল ফাইবার বলে। বর্তমানে বস্ত্র শিল্পে অনেক ধরনের ফাইবার ব্যাবহার করা হচ্ছে। এদের মধ্যে কিছু ফাইবার প্রকৃতিগত ভাবে পাওয়া যায় এবং কাপড় আবিষ্কারের প্রথম থেকেই সেগুলো ব্যবহার হয়ে আসছে। প্রাকৃতিক ফাইবার গুলোর মধ্যে সর্বাধিক ব্যবহৃত ফাইবার হচ্ছে কটন বা তুলা।এটিকে প্রাকৃতিক সেলুলোজ ফাইবারও বলা হয়।

আরবি শব্দ থেকে কটন (cotton) শব্দের আবির্ভাব। ইতিহাসের পাতা উল্টালে কটন ফাইবারের যে ঐতিহ্য চোখে পড়ে তা অত্যন্ত সমৃদ্ধ ও প্রাচীন। তুলা চাষের সর্বপ্রথম সময় সম্পর্কে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও উদ্ভিদবিজ্ঞানীদের মিলিত মত থেকে ধারনা নেয়া যায় যে, খৃষ্টপূর্ব ৩,০০০ বছর পূর্বে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রথম তুলা চাষ শুরু হয়। এছাড়াও দক্ষিণ আমেরিকার মেক্সিকোতে খৃস্টপূর্ব ৩,৫০০ বছর এবং খৃষ্টপূর্ব ৫০০ বছর হতে আমেরিকায় তুলার চাষ প্রচলিত ছিল।

ঐতিহাসিকদের মতে তুলার ব্যাবহার প্রথমে শুরু হয়েছিল ভূমধ্যসাগরীয় তথা আরবদেশ গুলোতে। মিশর হয়তো এক্ষেত্রে প্রথম স্থান অর্জন করেছিল। আধুনিক সভ্যতার তীর্থভূমি বলে পরিচিত ব্রিটেন কিন্তু এ ব্যাপারে পিছিয়ে ছিল। পরবর্তীতে শিল্প বিপ্লবের পর ১,৩০০ শতাব্দীর গোঁড়া থেকে অর্থাৎ আজ থেকে প্রায় ৭০০ বছর পূর্বে   ব্রিটেনে প্রথম তুলার ব্যাবহার শুরু হয়। আমেরিকাতে তুলার ব্যাবহার শুরু হয় আরও পরে, ১,৬০০ শতাব্দীর শেষের দিকে। বিশ্বব্যাপী তুলার ব্যাপক ব্যাবহার শুরু হয় আঁশ থেকে যান্ত্রিক ভাবে সুতা তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কারের পর থেকে। শুধু তাই নয় যান্ত্রিক পদ্ধতিতে সুতা ও কাপড় তৈরির উত্তরোত্তর উন্নত প্রযুক্তিসহ কাপড়ের রং, ছাপা ও ফিনিশিং প্রক্রিয়াগুলোর আধুনিক পদ্ধতি উদ্ভাবনের ফলে কাপড়ের সর্বমুখী ব্যাবহার এতোই অবধারিত হয়ে পড়েছে যে, আজকের উন্নত বিশ্বে তুলার ব্যাবহার ব্যতিরেকে মানব কল্যাণের কোন দিককে বিচ্ছিন্ন করে ভাবা যায় না।ফলে বর্তমানে   পৃথিবীর সকল দেশের, সকল শ্রেণীর মানুষ তুলা দিয়ে তৈরি কাপড় ও তুলাজাত অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করে আসছেন।

বাংলাদেশে তুলার চাষ:

মসলিনের সূক্ষ্ম আঁশ ছাড়া আর যে প্রকার তুলা বাংলাদেশে আগে থেকে উৎপন্ন হত তা “গোসিপিয়াম-আরবোরিয়াম” শ্রেণিভুক্ত। সাধারণত একে কুমিল্লা কটন নামে অভিহিত করা হতো। এই তুলার তিনটি বাণিজ্যিক নাম প্রচলিত যথা, লাংগুনিয়া, দোলা ও চাকুরিয়া। এই কুমিল্লা কটনের চাষ এখনো কুমিল্লা ও চট্টগ্রামের পার্বত্য এলাকায় প্রচলিত আছে। এই উৎপাদিত তুলার গুনগত মান খুবই নিন্ম শ্রেণীর এবং আঁশের দৈর্ঘ্য আধা ইঞ্চির উপরে নয়। ফলে এগুলো থেকে মিল পদ্ধতিতে কোন সুতা তৈরি হত না। দেশীয় প্রথায় চরকায় সুতা কাটা ও লেপ-তোষকের জন্য এগুলো বেশি ব্যবহৃত হতো।
বাংলাদেশে বর্তমানে বাণিজ্যিক পর্যায়ে যে তুলা উৎপাদিত হচ্ছে তা মূলত: আমেরিকান। শুরুতে আমেরিকা থেকে বীজ আমদানি করে আমাদের দেশে নিয়মিত তুলা চাষ পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। পরবর্তীতে বাংলাদেশে তুলা উন্নয়ন বোর্ড বিভিন্ন দেশের তুলার বীজ এনে স্থানীয়ভাবে শংকরিত করে বিভিন্ন জাতের তুলা বীজ উৎপন্ন করেছে। দেশে উৎপাদিত তুলা বর্তমানে ফলন ও গুনগত মানের দিক থেকে বেশ উন্নতি সাধন করেছে। এসব তুলার আঁশের দৈর্ঘ্য, রং এবং পরিপক্বতা বেশ ভাল। মেহেরপুর, জীবন নগর প্রভৃতি কেন্দ্রের দীর্ঘ আঁশের তুলা ব্যবহার করে অন্য কোন সংমিশ্রণ ছাড়াই ৬০স কাউন্ট পর্যন্ত সুতা তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। ফলে বাংলাদেশে তুলা উৎপাদনের পরিমাণ দিন দিন বেশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কটন বা তুলা সম্মন্ধে কিছু তথ্যঃ

★ চায়না, ভারত এবং আমেরিকা কটনের বৃহত্তর উৎপাদনকারী দেশ।

★প্রতি বছর পৃথিবীর প্রায় ১০০ টি দেশে ৫ কোটি টনেরও বেশি তুলা উৎপাদিত হয়।

★ মিশর এবং অস্ট্রেলিয়া সবচেয়ে ভাল মানের তুলা উৎপাদনকারী দেশ।

★ আমেরিকা সবচেয়ে বড় কটন রপ্তানীকারক দেশ।

★ বাংলাদেশ সবচেয়ে বড় কটন আমদানীকারক দেশ।

★গার্মেন্টস সেক্টরের যত সূতা ব্যবহৃত হয় তার ৬০ ভাগই কটন।

Refarance (মুল লেখার রেফারেন্স টেক্সটাইল ফাইবার, এম. এ. সাইম)



কোন মন্তব্য নেই: