এনভয় টেক্সটাইলস শীর্ষস্থানীয় ডেনিম প্রস্তুতকারক
বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ডেনিম পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এনভয় টেক্সটাইলস। প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন দিক নিয়ে আজকের করপোরেট টক।
ডেনিমশিল্পের বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এনভয় টেক্সটাইলস। বছরে প্রায় ৫০ মিলিয়ন গজ ডেনিম কাপড় উৎপাদন করে প্রতিষ্ঠানটি। ছয় দশমিক পাঁচ থেকে ১৫ আউন্স ডেনিম ফেব্রিকস উৎপাদন করে তারা। শতভাগ সুতির তৈরি সব ধরনের ডেনিম। প্রতিদিন প্রায় ৬২ টন সুতা উৎপাদনে সক্ষমতা রয়েছে এ টেক্সটাইলসের।
২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এনভয় টেক্সটাইলস। বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে ২০০৮ সালে। দেশের পোশাকশিল্পে একটি অগ্রগামী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর সুনাম রয়েছে। অল্প সময়ের মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় ডেনিম কাপড় প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়। এ গ্রুপের একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেড (ইটিএল)। এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রতিষ্ঠাতা কুতুবউদ্দিন আহমেদ।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রফতানি হয় প্রতিষ্ঠানটির পণ্য। দেশগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কম্বোডিয়া, মিসর, জার্মানি, ভারত, ইতালি, কেনিয়া, নেপাল, শ্রীলঙ্কা, তুরস্ক, যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইন্দোনেশিয়া ও ভিয়েতনাম। বৈশ্বিক নামকরা কয়েকটি ব্র্যান্ডের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয় প্রতিষ্ঠার শুরুতেই। এসব ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে হংকংয়ের লি অ্যান্ড ফাং, যুক্তরাষ্ট্রের জর্ডাসি, ওয়ালমার্ট, ক্যালভিন ক্লেইন, ডিজনি ইন্টারন্যাশনাল, ভিএফ, বেল্ক, কোলস, কেনেথ কোল ও রাসেল ব্র্যান্ডস, যুক্তরাজ্যের মার্কস অ্যান্ড স্পেনসার, ডেভেনহ্যামস, নেক্সট ও রিগাটা, ফ্রান্সের সেলিও ও ক্যারিফুর, সুইডেনের এইচঅ্যান্ডএম, বেলজিয়ামের সিঅ্যান্ডএ, স্পেনের জারা ও তুরস্কের টেমা তুরকিয়ে।
এনভয় টেক্সটাইলস শতভাগ কমপ্লায়েন্স।
প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের প্রথম লিড প্লাটিনাম সার্টিফায়েড টেক্সটাইল কোম্পানি। অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে উৎপাদন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয় এখানে। উন্নত মানের যন্ত্রাংশ ব্যবহার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিফিন ও মরিসন থেকে মেশিনারিজ আমদানি করে প্রতিষ্ঠানটি। পাশাপাশি জাপানের সুদাকোমা, যুক্তরাজ্যের জেমস এইচ হাল, বেলজিয়ামে অ্যাটলাস কপকো প্রভৃতি বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান থেকেও মেশিনারিজ সরবরাহ করে। উল্লেখ্য, রোপ ডায়িং টেকনোলজিতে বাংলাদেশে এনভয় টেক্সটাইলসই প্রথম।
জ্বালানি ও পরিবেশ পরিকল্পনায় এনভয় টেক্সটাইলস বিশ্বমান অর্জন করেছে। ডেনিম প্রস্তুতকারক কারখানা হিসেবে প্লাটিনাম লিড সনদ পায় এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেড। অর্থাৎ ডেনিম কারখানা হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে পরিবেশসম্মত স্থাপনা হচ্ছে এনভয় টেক্সটাইলস। বাংলাদেশে টেক্সটাইল কারখানাগুলোর মধ্যে প্রথম এ সনদ পেয়েছে তারা। পরিবেশ ও জ্বালানি সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক মান রক্ষা স্থাপনাগুলোর সর্বোচ্চ সনদ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) এ সনদ দিয়েছে। এ লিড সনদপ্রাপ্তির অর্থ বেশি উৎপাদনশীলতা, পরিবেশের ওপর চাপ কম ও কাঁচামালের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করার স্থাপনা তৈরি এবং এর ব্যবহার। এ বিশ্বমান ধরে রাখতে প্রতিষ্ঠানটি সব সময় তাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। একই সঙ্গে পণ্য উদ্ভাবনকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে চলেছে তারা।
পরিবেশ-প্রতিবেশসচেতন প্রতিষ্ঠান এনভয়। শ্রমিকবান্ধব। জ্বালানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে জেনারেটর ওয়েস্ট হিটকে কাজে লাগিয়ে বাষ্প পরিচালনা করা হয় এনভয় টেক্সটাইলসে। দিনের আলো ব্যবহারের মাধ্যমে চাহিদার চেয়ে প্রায় ৩০ শতাংশ কম জ্বালানিতে কারখানা পরিচালনা করা হয়। ময়মনসিংহের ভালুকায় প্রতিষ্ঠিত এনভয় টেক্সটাইলস চত্বরে পরিকল্পিতভাবে বনায়ন করা হয়েছে। ফলে অভ্যন্তরীণ তাপমাত্রা সব সময় সহনীয় থাকে। এছাড়া বনায়নের সঙ্গে প্রাকৃতিক সার ব্যবহার করা হচ্ছে। পানিরও সঠিক ব্যবহার করে প্রতিষ্ঠানটি। পানিচক্রকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে বছরে প্রায় ৪০ হাজার কিলো গ্যালন পানির অপচয় কমাচ্ছে। পানি শোধনাগারের পানি ও বৃষ্টির পানি পুনর্ব্যবহার করার জন্য একটি বড় লেক তৈরি করেছে তারা। এখানে মাছ চাষসহ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন কৃষি সেচ ও অগ্নিনির্বাপণের জন্য একটি সমন্বিত ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলেছে।
দুই হাজারের বেশি মানুষ এনভয়ে কর্মরত। সুস্থ-সুন্দর জীবনযাপনের জন্য কর্মীদের অনুপ্রেরণা দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। শ্রমিকদের জন্য বিভিন্ন কল্যাণমূলক কর্মসূচি গ্রহণ করে তারা। পাশাপাশি সব কর্মীর জন্মদিন পালন করা হয় এখানে। কোনো কর্মীর বিয়ে উপলক্ষে তাদের উপহারসামগ্রী দেওয়ার চল রয়েছে। সদ্যজাত সন্তানের জন্য নানা উপহার তো আছেই। প্রতি মাসে সেরা কর্মী নির্বাচন করা হয়। কর্মীদের জন্য বিনোদনমূলক কার্যক্রমের আয়োজনও করা হয়। এখানে তাদের জন্য থ্রিডি মুভি থিয়েটার স্থাপন করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটিতে মেডিক্যাল কেয়ার সেন্টার রয়েছে। সেখানে ইন-হাউস ডাক্তার রয়েছেন। রয়েছে ডে-কেয়ার সেন্টার। ২৪ ঘণ্টা অ্যাম্বুলেন্স সেবা রয়েছে। মেডিক্যাল চেক-আপের সুযোগও রয়েছে। কর্মদিবসে বিনামূল্যে খাবার সরবরাহ করে কর্তৃপক্ষ। ১০ কিংবা তার অধিক বছর চাকরি করার পর একজন কর্মীকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়। বিভিন্ন ধরনের খেলাধুলার আয়োজন করা হয়।
প্রতি বছর সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ঈদ ভাতা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, মাসের শেষ কর্মদিবসে বেতন প্রদান, কর্মীদের সঙ্গে লভ্যাংশ ভাগাভাগি করে নেওয়া, শিক্ষাবৃত্তি (এইচএসসি ও স্নাতক পর্যায়ে), জিমনেসিয়াম, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দোকান, কম্পিউটার কোর্স, কর্মীদের জন্য ডরমিটরি।
কারখানার সংস্কারকাজ শতভাগ সম্পন্ন করায় এনভয় টেক্সটাইলসে স্বীকৃতি প্রদান করেছে উত্তর আমেরিকার ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি। ফলে উত্তর আমেরিকার দেশগুলোয় অবাধে ব্যবসা করছে প্রতিষ্ঠানটি।
একনজরে এনভয় টেক্সটাইল
২০০৫ সালে ডেনিম কারখানা নির্মাণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। ২০০৮ সালে বার্ষিক ১৬ লাখ মিলিয়ন গজ উৎপাদনক্ষমতা নিয়ে এটি বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে আসে। ২০১৮ সালের জুন শেষে যা তিনগুণ বেড়ে ৫০ মিলিয়ন গজ ছাড়িয়েছে।
উৎপাদিত পণ্য: ডেনিম কাপড় ও সুতা
উৎপাদন ক্ষমতা: বার্ষিক ৫০ মিলিয়ন গজ ডেনিম
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তি: ২০১২ সাল
পরিশোধিত মূলধন: ১৬৭ কোটি ৭৩ লাখ টাকা
মোট সম্পদ: এক হাজার ৭৪৬ কোটি ৪৬ লাখ টাকা (জুন ২০১৮)
শেয়ারসংখ্যা: ১৬ কোটি ৭৭ লাখ ৩৪ হাজার ৭৬৮টি
কর-পরবর্তী মুনাফা: ৩২ কোটি ৯৯ লাখ টাকা, প্রবৃদ্ধি দুই দশমিক ৭৪ শতাংশ (জুন ২০১৮)।
অর্জনঃ
শিল্প খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে এনভয় টেক্সটাইলস। প্রতিষ্ঠানটি এর স্বীকৃতিও পেয়েছে বহুবার। বিশেষ করে বৃহৎ শিল্প ক্যাটেগরিতে অনেক পুরস্কার পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
১. ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) লিড সার্টিফায়েড প্লাটিনাম
২. রাষ্ট্রপতি শিল্প উন্নয়ন পুরস্কার (ছয়বার)
৩. ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ (আইসিএসবি) প্রণীত জাতীয় পুরস্কার (তিনবার)
৪. ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্টস অব বাংলাদেশের বেস্ট করপোরেট অ্যাওয়ার্ড
৫. এইচএসবিসি ব্যাংক এক্সপোর্ট এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড
৬. জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেরা করদাতা প্রতিষ্ঠান
৭. কার্বন পারফরম্যান্স ইমপ্রুভমেন্ট ইনিশিয়েটিভ (সিপিআই২) ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড
৮. বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) লিড গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড।
‘স্বপ্নপূরণের পথেই এগোচ্ছে এনভয় টেক্সটাইলস’
প্রকৌশলী কুতুবউদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) পড়ালেখা সম্পন্ন করে প্রথম জীবনে কিছুদিন একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকে চাকরি করেন। এরপর নতুন কিছু করার প্রত্যয় নিয়ে গার্মেন্ট ব্যবসায় নাম লেখান। সময়ের পরিক্রমায় তার হাত ধরে গড়ে উঠেছে আজকের শীর্ষস্থানীয় ও ব্যবসাসফল এনভয় গ্রুপ। তিনি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের প্রতিষ্ঠান এনভয় টেক্সটাইলসের চেয়ারম্যান। একান্ত সাক্ষাৎকারে এনভয় টেক্সটাইলসের সফলতার গল্প শুনিয়েছেন তিনি
এনভয় টেক্সটাইলসের শুরুর গল্পটা শুনতে চাই…
প্রকৌশলী কুতুবউদ্দিন আহমেদ: গার্মেন্ট ব্যবসার পাশাপাশি ২০০৫ সালে টেক্সটাইল মিল প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা হয়। আমরা একটি অত্যাধুনিক মানের টেক্সটাইল মিল নির্মাণের জন্য কাজ শুরু করি। এর মূল লক্ষ্য ছিল, বাংলাদেশে বিশ্বমানের টেক্সটাইল কারখানা প্রতিষ্ঠা করা, যেখানে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার থাকবে, উৎপাদিত পণ্যের মান গ্রাহকের সন্তুষ্টি অর্জনে সক্ষম হবে এবং প্রতিষ্ঠানটি শ্রমিক ও পরিবেশবান্ধব হবে। পরবর্তীকালে পোশাকশিল্পে ‘শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠান’ হিসেবে সবার কাছে যেন অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে, সেই লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করা হয় এনভয় টেক্সটাইলস। প্রায় তিন বছর পর ২০০৮ সালে এনভয় টেক্সটাইলস বাণিজ্যিকভাবে পথচলা শুরু করে।
যে লক্ষ্য নিয়ে পথচলা শুরু, এক দশকে তার কতটুকু পূরণ হয়েছে?
কুতুবউদ্দিন আহমেদ: এক দশক খুব বেশি সময় নয়। বিশেষ করে যখন এ সময়ের মধ্যেই তাজরীন ফ্যাশন ও রানা প্লাজার মতো দুর্ঘটনা ঘটেছে। তার পরও সব প্রতিকূলতা ছাপিয়ে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। সময়ের সঙ্গে এনভয় টেক্সটাইলসও এগিয়ে যাচ্ছে। স্বপ্নপূরণের অংশ হিসেবে আমরা একটি অত্যাধুনিক কারখানা গড়তে পেরেছি। বিশ্বের প্রথম প্রতিষ্ঠান হিসেবে এরই মধ্যে ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলের (ইউএসজিবিসি) ‘লিড প্লাটিনাম’ স্বীকৃতি পেয়েছে আমাদের প্রতিষ্ঠানটি। ব্যবসায়িকভাবেও ভালো করছে। সেইসঙ্গে রফতানি আয়ে ভূমিকা রাখছে। পরিবেশবান্ধব প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা ও দেশের অর্থনীতিতে বিশেষ অবদানের জন্য দেশ-বিদেশের সম্মান ও পুরস্কার পাচ্ছি। এসব দিক বিবেচনা করলে এনভয় টেক্সটাইলস স্বপ্নপূরণের জন্য সঠিক পথেই রয়েছে।
এনভয় টেক্সটাইলসের এগিয়ে চলার মূল শক্তি কী?
কুতুবউদ্দিন আহমেদ: উৎপাদিত পণ্যের মান, ক্রেতাদের আস্থা, বাজার নিয়ে গবেষণা ও অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার এনভয় টেক্সটাইলসকে এগিয়ে নিচ্ছে। কারখানার কর্মপরিবেশ ও শ্রমিকের সন্তুষ্টিও সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করছে। আমি মনে করি, পণ্যের মান ধরে রাখা ও ব্যবসায়ী হিসেবে পণ্যের ক্রেতা-শ্রমিক-সরবরাহকারীদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ দিকগুলো ঠিক থাকলে ব্যবসায় সাফল্য আসবে। সততা, নৈতিকতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির কারণে এনভয় টেক্সটাইলস বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ডেনিম পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের তালিকায় নাম লিখিয়েছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোও এখন অনেক ক্ষেত্রে এনভয়কে অনুসরণ করছে। আমরা পথ দেখাতে চাই, যে পথ ধরে দেশের পোশাকশিল্পে উল্লেখ্যযোগ্য গুণগত পরিবর্তন আসবে।
ফুটবল আইকন থেকে এনভয় গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা!
সালাম মুর্শেদী সফল ব্যবসায়ী। রপ্তানিমুখী বস্ত্র ও পোশাকখাতে অগ্রগণ্য এক ব্যক্তিত্ব তিনি। দেশের পোশাকখাতের সর্বোচ্চ সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন। এক্সপোর্টার অ্যাসোশিয়েশন অব বাংলাদেশ-ইএবির প্রেসিডেন্ট পদে আছেন । বস্ত্র ও পোশাকখাত ছাড়াও রকমারি ব্যবসায় যুক্ত হয়েছেন। উদ্যোক্তা ও রপ্তানিকারক হিসেবে রাষ্ট্রের শীর্ষ পদক ও স্বীকৃতি পেয়েছেন। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন- বাফুফের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেশের ফুটবল উন্নয়নে কাজ করছেন। মানুষের বেশি ভালোবাসা পেয়ে চলেছেন ফুটবলের কারণেই। সালাম মুশের্দী বলেন,“এখনো সবাই আসলে ফুটবলার সালামই বলেন”
একজন ফুটবলার থেকে সফল ব্যবসায়ী সালাম মুর্শেদী গড়ার পেছনের কারিগর দু’জন। এদের একজন হচ্ছেন (যিনি আমার বড় ভাইয়ের মতো) দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও এনভয় গ্রুপের চেয়ারম্যান ইঞ্জিনিয়ার কুতুবউদ্দিন আহমেদ এবং আমার স্ত্রী শারমিন সালাম। সেই সঙ্গে রয়েছে আমার বাবা-মায়ের দোয়া ও অনুপ্রেরণা। এনভয় গ্রুপের যাত্রা শুরু ১৯৮৪ সালে হলেও পরের বছর ১৯৮৫ সালে রাজধানীর ৪০০/বি খিলগাঁওয়ে ‘এনভয়’ গার্মেন্ট নামে কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে ব্যবসা শুরু করি।
নভয় গ্রুপের কেবল গার্মেন্ট ফ্যাক্টরিই রয়েছে মোট ১৫টি। এই কারখানাগুলো হচ্ছে এনভয় গার্মেন্টস লিমিটেড, এস্ট্রাস গার্মেন্টস, ইপোচ গার্মেন্টস, আরমোয়ার গার্মেন্টস, পাস্তেল অ্যাপারেলস, মানতা অ্যাপারেলস, এনভয় ডিজাইন, নাদিয়া গার্মেন্টস, রিগাল গার্মেন্টস, সুপ্রিম অ্যাপারেলস, ডর্নিক অ্যাপারেলস, ফন্টিনা ফ্যাশন, এনভয় ফ্যাশন এবং ওলিও অ্যাপারেলস। এসব কারখানা থেকে বিশ্বের নামিদামি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান পোশাক কিনে থাকে। বড় বড় কয়েকটি বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ওয়ালমার্ট, জারা, রিগাটা, ওকায়দি, নেক্সট, এমঅ্যান্ডএস প্রভৃতি।
এনভয় টেক্সটাইল মিল গড়ে তোলা হয়েছে ৪৮ একর জায়গার ওপর, যেটি বাংলাদেশের প্রথম রোপ ডায়িং প্ল্যান্ট। এ কারখানার ডেনিম ব্র্যান্ডের কাপড় ইউরোপ, তুরস্ক, ভারত এবং শ্রীলঙ্কায় রফতানি করা হয়। ২০০১ সালে পোশাক শিল্পের বাইরে গড়ে তোলা হয় আইটি কনসালটেন্ট সেন্টার। এই প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন ব্যাংকের এটিএম কার্ডের কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করে। ন্যাশনাল সিস্টেম সলিউশন নামের প্রযুক্তি খাতের আরেকটি প্রতিষ্ঠান গড়ে এনভয় গ্রুপ। এই গ্রুপের আরেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠান শেলটেক।
১৯৮৮ সালে প্রতিষ্ঠিত এই আবাসন খাতের শিল্প প্রতিষ্ঠানটি রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অসংখ্য আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণ করেছে। প্লাটিনাম স্যুইট নামের এই শিল্প গ্রুপের রয়েছে হোটেল ব্যবসা। প্রতিষ্ঠানটি গড়ে ওঠে ২০০৯ সালে। ট্রেডিং ডিভিশনে রয়েছে লুনার ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড এবং ইমারেল্ড ট্রেডিং লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। ১৯৯৮ সালে গড়ে তোলা হয় পিনাতা এয়ার ইন্টারন্যাশনাল এবং ওআইএ গ্লোবাল লজিস্টিক্স (বিডি) লিমিটেড নামের প্রতিষ্ঠান দুটি। এই গ্রুপেরই আরেক শীর্ষ প্রতিষ্ঠান প্রিমিয়ার ব্যাংক লিমিটেড। যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানটির বর্তমানে ৩০টি ব্রাঞ্চ রয়েছে।
সালাম মুর্শেদী বলেন, আমি যখন বিজনেস করি তখন অনেক সমালোচনা শুনেছি। আমার ফ্রেন্ড সার্কেল অনেক সমালোচনা করেছে। আমার শুভাকাঙ্খীরাও বলেছে, আপনি অনেক ঝুঁকি নিচ্ছেন। আমি বলেছি, “ঝুঁকি না নিলে তো মানুষ কখনো সফল হতে পারে না।” সালাম মুর্শেদীর প্রিয় ফুটবলার মেসি, ম্যারাডোনা। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ থাকলে রাত জেগে খেলা দেখেন। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড দলের খেলা তাঁর ভালো লাগে।সালাম মুর্শেদীর পোশাক স্ত্রীই পছন্দ করে কিনে দেন। টি-শার্ট, প্যান্ট প্রিয় তাঁর।
খেলোয়াড়ি জীবনটা মিস করলেও এখনকার ব্যস্ততাও তাঁর ভালো লাগে। এত মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ করতে পেরেছেন। প্রায় ২০ হাজার কর্মী আছেন তাঁদের প্রতিষ্ঠানে। সালাম মুর্শেদীর মতে,‘কাজ ছাড়া থাকতে পারি না। কাজ না থাকলে কী হবে, ভাবতে পারি না। কাজই আমার জীবন।’
তথ্যসূত্র: দি প্রোফাইলস ডট ইনফো সালাম মুর্শেদী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন