বিজনেস আইডিয়া: গার্মেন্টস ঝুট বিজনেস | Grements Business - Textile Lab | Textile Learning Blog
বিজনেস আইডিয়া: গার্মেন্টস ঝুট বিজনেস 
নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে আপনাকে উদ্যোগী হতে হবে। আর উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ঠিক করতে হবে কী দিয়ে শুরু করবেন। এজন্য দরকার অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায়Ñএমন ব্যবসা। এ ধরনের উদ্যোক্তার পাশে দাঁড়াতে শেয়ার বিজের সাপ্তাহিক আয়োজন

পোশাক শিল্প এখন একটি সম্ভাবনার নাম। পোশাক তৈরির পর টুকরা কাপড় এখন আর ফেলে দেওয়ার বস্তু নয়। এগুলো ঝুট নামে পরিচিত। এর যথেষ্ট চাহিদা এবং বাজারদর রয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারিক পণ্য টুকরা কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। এই ব্যবসায় কম পুঁজিতে লাভ বেশি। আপনিও শুরু করতে পারেন এই ব্যবসা।

সাশ্রয়ী, সহজ, ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন ডিজাইনের প্রভৃতি পোশাক তৈরি করা হয়। ফেলে দেওয়া টুকড়া কাপড় খুলে দেয় সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। টুকরা কাপড়ের পুরোনো এ পণ্যগুলো নতুন রূপে আমাদের কাছে ঘুরেফিরে আসে। বর্তমানে আমাদের দেশে গার্মেন্টনির্ভর অনেক শিল্প গড়ে উঠেছে। এরই একটি ঝুট ব্যবসা।

 

গার্মেন্টস ঝুট বিজনেসের সুবিধাঃ

১. তুলনামুলকভাবে কম পুঁজি লাগে
২.লাভ বেশি
৩.তুলনামূলকভাবে জায়গা
৪.একটু বেশি লাগে
৫.বাজার সম্ভাবনা

ঝুট দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তুলা, সুতা, দড়ি, বালিশ, লেপ, ট্রাউজার, শর্টস, জ্যাকেট, টিশার্ট, ক্যাপ, ম্যাট্রেস, কম্বল, ছোটদের খেলনা ও বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করা হয়।

 

গার্মেন্টস ঝুট বিজনেস কোথায় কিনতে পাবেনঃ

ঢাকার মিরপুর, কালীগঞ্জ, সাভারসহ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানের পোশাক কারখানাগুলো থেকে ঝুট কাপড় কেনা যায়। ঝুট কাপড় ও উপকরণগুলো কেনা হয় কেজি হিসেবে। এর মধ্যে প্রতি কেজি ব্লেজারের ঝুট ৫০ থেকে ১৫০, জ্যাকেট তৈরির ঝুট ১০০ থেকে ১৫০, গ্যাবার্ডিন প্যান্টের ঝুট ৮০ থেকে ১৫০, জিনসের ঝুট ৭০ থেকে ১৫০, জিপার ৮০ থেকে ১০০ ও সুতা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে কেনা হয়। এছাড়া বোতাম, ইলাস্টিক, প্যান্টের পকেট বানানোর স্টিকার ও পুরোনো সেলাই মেশিনও সংগ্রহ করতে পারেন।

 

গার্মেন্টস ঝুট বিজনেসের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজিঃ

এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন।

গার্মেন্টস ঝুট বিজনেসের লাভঃ

সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়। ব্যবসাভেদে লাভের পরিমাণ অনেক।

 

গার্মেন্টস ঝুট বিজনেসের জন্য যোগাযোগঃ

এই খাতের লোকজনের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রাখা জরুরি। ব্যবসাটা নির্ভর করে যোগাযোগ দক্ষতার ওপর। যার যোগাযোগ যত ভালো তার জন্য এ ব্যবসা করাটা তত সহজ ও লাভজনক।

 

গার্মেন্টস ঝুট বিজনেসের অভিজ্ঞতাঃ

ব্যবসা শুরুর আগে এর ওপর বাস্তব জ্ঞান থাকতে হবে। যারা ব্যবসাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চান তারা কিছুদিন কাজ করে নিন। এটা হতে পারে কারখানায় চাকরি কিংবা এই ব্যবসায় জড়িত অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে শিখে নেওয়া। তাই সঠিক পরিকল্পনা ও সুষ্ট ধারণা নিতে পারলে ব্যবসায় সফল হওয়া সম্ভব।

 

ঝুট বিজনেস নিয়ে কিছু স্টাডি এবং স্টেটিকটিক্সঃ 

✅ ছোট টুকরা এক কেজি দুটাকায় কেনেন । টুকরো বড়ে হলে ১০ টাকার মতো ।  পোশাক শিল্পের বর্জ্যের বেশ বড় গন্তব্য তুলার মিল। প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দিনে ২০ কন্টেইনারের মতো পোশাক শিল্পের বর্জ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্রতি কন্টেইনার পণ্যের দাম ১৫ হাজার ডলারের মতো অর্থাৎ দিনে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আয় হচ্ছে । 
 

✅ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৫শ’ টনের মত পোশাক শিল্পের বর্জ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে । 

✅  ‘কারখানায় কাপড়গুলো রোল আকারে আসে। আসার পরে মার্কার অনুযায়ী আমরা প্যাটান্টগুলো বসাই। তারপরে প্রয়োজনীয় অংশ রেখে বাকি অংশ ফেলে দেয়া হয় । ফেলে দেওয়া অংশ আমরা জমা করি। পরে স্থানীয় লোকজন এটা সংগ্রহ করে নিয়ে যায় । সেক্ষেত্রে কোন কোন করাখানা কিছু টাকা পায় আবার কোন কারখানা টাকা পায় না । এই ঝুট বস্তা হিসাবে বিক্রি করা হয়। এক বস্তা ১শ’ টাকারমত বিক্রি হয়’। এসব ঝুট কয়েক হাত ঘুরে পৌঁছায় নানা দোকানে। 

✅ বাংলাদেশে ঝুট ব্যবসায়ের জন্য সবচেয়ে বড় এলাকা ঢাকার মিরপুরের ঝুট পট্টি। 

 ✅ ‘ঝুটের দুইটা ক্যাটাগরি আছে একটা হল ওভেন আরেকটা হল নিট। ওভেন ঝুঁটের দাম কম, নিট ঝুটের দাম তুলনামুলকভাবে বেশি । কারণ নিটের ঝুট রিপ্রোসেস করে তুলার পর্যায়ে নিয়ে আসে। সেগুলো স্থানীয় বাজারে তুলার বিকল্প হিসাবে বিক্রি হয়। এর সুবিধা হল তুলার দাম বেশি কিন্তু এর দাম কম। যারা স্বল্প আয়ের মানুষ তারা এ থেকে সুবিধা লাভ করেন’।

✅ ঝুট ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই ব্যবসায়ের সাথে প্রায় ৫০ লাখেরমত মানুষের জীবিকা চলে। দোকানগুলোতে নারী কর্মীর সংখ্যাই বেশি। নতুনরা এখানে কাজ করে মাসে ৩ হাজার টাকার মত পায়। বেশি পুরান মানুষ হলে ৪ হাজার টাকা পায়’।

✅ ঝুট দিয়ে তৈরি হচ্ছে সুতা। মিরপুরে কয়েকটি দোকানে পুরনো দিনের স্পিনিং মেশিন দিয়ে তৈরি করা হয় সুতা। সেখানে রিসাইকেল করা সুতা স্থানীয় দর্জিরা নিচ্ছেন সেগুলো আবার কখনও কখনও গার্মেন্টেসেই ফেরত যাচ্ছে। ঝুট দিয়ে বানানো হচ্ছে ম্যাট্রেস।

  

 ✅ ঝুট আমরা রিসাইকেল করে এটাকে ফাইবার বানাই । ফাইবার বানিয়ে এটাকে ইউরোপে রপ্তানি করা হয় । ঝুট পৃথিবীর প্রায় ৪০ টা দেশে যায় । কিন্তু বাংলাদেশে ঝুটকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর কোন পন্থা নেই। 

✅ বিশ্বব্যাপী  রিসাইকেল করা পণ্যের রয়েছে আলাদা মর্যাদা। সেই মর্যাদা পেতে পারে বাংলাদেশর ঝুট দিয়ে তৈরি পণ্যও। শুধু দরকার বড় কোন ব্রান্ডের এর সাথে যুক্ত হওয়া।

 ✅ মিরপুর ১১ নম্বরের ঝুটপল্লী হচ্ছে সবচেয়ে বড় ঝুট পল্লী । 

✅ দোকানের মালিক  প্রতিদিনই এমন ১০ থেকে ২০ বস্তা ঝুট কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে কেনেন তিনি। 

✅ দামঃ বাছাই করা সবচেয়ে নিম্নমানের ঝুটগুলো পাঠিয়ে দেয়া হয় লেপ তোষকের দোকানে। দাম পান কেজি প্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা ।  বাছাই করা ভাল মানের ঝুট বড় ব্যবসায়ীদের কাছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।  সেগুলো বিদেশে রফতানি করেন। 

 
✅ এইসব ঝুট ব্যবহার করে মোটা সুতা তৈরি করা হয়। যে সূতা দিয়ে তৈরি করা হয় টাওয়েল, হোমটেক্সটাইল, মোজা বা ডেনিমের মতো পণ্য।

✅ বিটিএমএ এবং বিটিটিএলএমইএ’র দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে কটন ওয়েস্ট ও গার্মেন্টস ওয়েস্ট বা নন কটন থেকে সুতা তৈরির জন্য ১৭৬টি স্পিনিং মিল রয়েছে। যাদের তৈরি বিভিন্ন মানের সুতা ৩২টি ডেনিম ফেব্রিক, ২২টি হোম টেক্সটাইল এবং শতাধিক টেরিটাওয়েল কারখানার প্রধান কাঁচামাল। এসব কারখানায় বছরে ২ লাখ ৩৪ হাজার টন কটন ওয়েস্ট ও গার্মেন্টস ওয়েস্টের চাহিদা আছে। 

✅  দেশে সব ধরনের ওয়েস্ট মিলিয়ে বছরে উৎপাদন হচ্ছে ২ লাখ ১৫ হাজার টন। ফলে ওয়েস্টেজের (ঝুট) সঙ্গে বেশি পরিমাণে ফ্রেশ কটন ব্যবহারের কারণে উৎপাদন খরচ বাড়ছে।

✅  বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে ওয়েস্টেজ কটনের ন্যূনতম রফতানি মূল্য কেজি প্রতি সাড়ে চার মার্কিন ডলার ঠিক করে দেয়।

 
✅  সর্টেড গার্মেন্টস ওয়েস্ট কেজি প্রতি দশমিক ৬ ডলার এবং ননসরটেড গার্মেন্টস ওয়েস্টের ন্যূনতম রফতানি মূল্য কেজি প্রতি দশমিক ২৩ ডলার নির্ধারণ করে সরকার। তবে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এরপরও এসব ওয়েস্টেজ রফতানি বেড়েছে।

 

✅ এই ঝুটপল্লীর ক্যাপিটাল সাপ্লাইয়ের স্বত্তাধিকারী মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরবরাহ করলে দাম ভাল পাওয়া যায় না, টাকাও বাকি পড়ে থাকে দীর্ঘদিন। কিন্তু রফতানি করতে পারলে ভাল দামের পাশাপাশি টাকাও পাওয়া যায় অগ্রিম।

✅ এজন্য বিটিএমএ ২০১৭ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনে আবেদন করে, যাতে কটন ওয়েস্টেজকে ইয়ার্ন ওয়েস্ট ও থ্রেড ওয়েস্ট উল্লেখ করে রফতানির নামে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই মূল্যবান এই কাঁচামালের পাচার ঠেকাতে কটন ওয়েস্ট ও গার্মেন্টস ওয়েস্টের মতো ইয়ার্ন ওয়েস্ট ও থ্রেড ওয়েস্টেরও নূন্যতম রফতানি মূল্য বেঁধে দেয়ার আবেদন জানানো হয়।

✅ গার্মেন্টস ওয়েস্টেজের ক্ষেত্রেও একই ধরনের কারসাজির অভিযোগ তুলেছে বিটিটিএমএলইএ। সংগঠনটির সভাপতি মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, কটনক্লিপ, ওয়েস্ট কটনক্লিপ, কটনওয়েস্ট হোয়াইট ক্লিপ ইত্যাদি নামে এসব কাঁচামাল রফতানির নামে পাচার হচ্ছে।  কিন্তু ভিন্ন মত এসব বর্জ্য রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস ওয়েস্ট প্রসেসরস ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। 

✅ ২০১৬ সালে এস্তোনিয়া ভিত্তিক সফটওয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রিভার রিসোর্সের এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস ওয়েস্ট সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বছরে চার বিলিয়ন ডলার বাড়তি মূল্য সংযোজন সম্ভব। পাশাপাশি সর্টেড গার্মেন্টস ওয়েস্ট থেকে সুতা তৈরির পর নতুন করে রঙ করার কোনো প্রয়োজন হয় না। ফলে এ ক্ষেত্রে পানির অপচয় হয় না, যেখানে পোশাক শিল্পের পানি দূষণ বিশ্ব জুড়েই উদ্বেগের বিষয়।

মেশিন প্রাইসঃ
চাইনিজ ওয়েস্ট রিসাইকেল মেশিন প্রায় ৩১ লক্ষ টাকার মতো পড়বে বা ৩৫ হাজার ডলার । এই দাম একটি গ্রুপ ফেক্টরির জন্য তেমন বড় কিছুনা ।

বিজনেস আইডিয়া: গার্মেন্টস ঝুট বিজনেস | Grements Business

বিজনেস আইডিয়া: গার্মেন্টস ঝুট বিজনেস 
নিজের পায়ে দাঁড়াতে হলে আপনাকে উদ্যোগী হতে হবে। আর উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য ঠিক করতে হবে কী দিয়ে শুরু করবেন। এজন্য দরকার অল্প পুঁজিতে শুরু করা যায়Ñএমন ব্যবসা। এ ধরনের উদ্যোক্তার পাশে দাঁড়াতে শেয়ার বিজের সাপ্তাহিক আয়োজন

পোশাক শিল্প এখন একটি সম্ভাবনার নাম। পোশাক তৈরির পর টুকরা কাপড় এখন আর ফেলে দেওয়ার বস্তু নয়। এগুলো ঝুট নামে পরিচিত। এর যথেষ্ট চাহিদা এবং বাজারদর রয়েছে। আমাদের দৈনন্দিন জীবনে বিভিন্ন ধরনের ব্যবহারিক পণ্য টুকরা কাপড় দিয়ে তৈরি করা হয়। এই ব্যবসায় কম পুঁজিতে লাভ বেশি। আপনিও শুরু করতে পারেন এই ব্যবসা।

সাশ্রয়ী, সহজ, ব্যবহারযোগ্য বিভিন্ন ডিজাইনের প্রভৃতি পোশাক তৈরি করা হয়। ফেলে দেওয়া টুকড়া কাপড় খুলে দেয় সম্ভাবনার নতুন দুয়ার। টুকরা কাপড়ের পুরোনো এ পণ্যগুলো নতুন রূপে আমাদের কাছে ঘুরেফিরে আসে। বর্তমানে আমাদের দেশে গার্মেন্টনির্ভর অনেক শিল্প গড়ে উঠেছে। এরই একটি ঝুট ব্যবসা।

 

গার্মেন্টস ঝুট বিজনেসের সুবিধাঃ

১. তুলনামুলকভাবে কম পুঁজি লাগে
২.লাভ বেশি
৩.তুলনামূলকভাবে জায়গা
৪.একটু বেশি লাগে
৫.বাজার সম্ভাবনা

ঝুট দিয়ে বিভিন্ন ধরনের পণ্য তুলা, সুতা, দড়ি, বালিশ, লেপ, ট্রাউজার, শর্টস, জ্যাকেট, টিশার্ট, ক্যাপ, ম্যাট্রেস, কম্বল, ছোটদের খেলনা ও বিভিন্ন ধরনের পোশাক তৈরি করা হয়।

 

গার্মেন্টস ঝুট বিজনেস কোথায় কিনতে পাবেনঃ

ঢাকার মিরপুর, কালীগঞ্জ, সাভারসহ গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানের পোশাক কারখানাগুলো থেকে ঝুট কাপড় কেনা যায়। ঝুট কাপড় ও উপকরণগুলো কেনা হয় কেজি হিসেবে। এর মধ্যে প্রতি কেজি ব্লেজারের ঝুট ৫০ থেকে ১৫০, জ্যাকেট তৈরির ঝুট ১০০ থেকে ১৫০, গ্যাবার্ডিন প্যান্টের ঝুট ৮০ থেকে ১৫০, জিনসের ঝুট ৭০ থেকে ১৫০, জিপার ৮০ থেকে ১০০ ও সুতা ১৮০ থেকে ২০০ টাকা দরে কেনা হয়। এছাড়া বোতাম, ইলাস্টিক, প্যান্টের পকেট বানানোর স্টিকার ও পুরোনো সেলাই মেশিনও সংগ্রহ করতে পারেন।

 

গার্মেন্টস ঝুট বিজনেসের জন্য প্রয়োজনীয় পুঁজিঃ

এক লাখ থেকে দুই লাখ টাকা দিয়ে শুরু করতে পারেন।

গার্মেন্টস ঝুট বিজনেসের লাভঃ

সব খরচ বাদ দিয়ে মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার মতো লাভ হয়। ব্যবসাভেদে লাভের পরিমাণ অনেক।

 

গার্মেন্টস ঝুট বিজনেসের জন্য যোগাযোগঃ

এই খাতের লোকজনের সঙ্গে ভালো যোগাযোগ রাখা জরুরি। ব্যবসাটা নির্ভর করে যোগাযোগ দক্ষতার ওপর। যার যোগাযোগ যত ভালো তার জন্য এ ব্যবসা করাটা তত সহজ ও লাভজনক।

 

গার্মেন্টস ঝুট বিজনেসের অভিজ্ঞতাঃ

ব্যবসা শুরুর আগে এর ওপর বাস্তব জ্ঞান থাকতে হবে। যারা ব্যবসাটির সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে চান তারা কিছুদিন কাজ করে নিন। এটা হতে পারে কারখানায় চাকরি কিংবা এই ব্যবসায় জড়িত অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে শিখে নেওয়া। তাই সঠিক পরিকল্পনা ও সুষ্ট ধারণা নিতে পারলে ব্যবসায় সফল হওয়া সম্ভব।

 

ঝুট বিজনেস নিয়ে কিছু স্টাডি এবং স্টেটিকটিক্সঃ 

✅ ছোট টুকরা এক কেজি দুটাকায় কেনেন । টুকরো বড়ে হলে ১০ টাকার মতো ।  পোশাক শিল্পের বর্জ্যের বেশ বড় গন্তব্য তুলার মিল। প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দিনে ২০ কন্টেইনারের মতো পোশাক শিল্পের বর্জ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে। প্রতি কন্টেইনার পণ্যের দাম ১৫ হাজার ডলারের মতো অর্থাৎ দিনে প্রায় আড়াই কোটি টাকা আয় হচ্ছে । 
 

✅ চট্টগ্রাম বন্দর থেকে প্রতিদিন প্রায় সাড়ে ৫শ’ টনের মত পোশাক শিল্পের বর্জ্য বিদেশে রপ্তানি হচ্ছে । 

✅  ‘কারখানায় কাপড়গুলো রোল আকারে আসে। আসার পরে মার্কার অনুযায়ী আমরা প্যাটান্টগুলো বসাই। তারপরে প্রয়োজনীয় অংশ রেখে বাকি অংশ ফেলে দেয়া হয় । ফেলে দেওয়া অংশ আমরা জমা করি। পরে স্থানীয় লোকজন এটা সংগ্রহ করে নিয়ে যায় । সেক্ষেত্রে কোন কোন করাখানা কিছু টাকা পায় আবার কোন কারখানা টাকা পায় না । এই ঝুট বস্তা হিসাবে বিক্রি করা হয়। এক বস্তা ১শ’ টাকারমত বিক্রি হয়’। এসব ঝুট কয়েক হাত ঘুরে পৌঁছায় নানা দোকানে। 

✅ বাংলাদেশে ঝুট ব্যবসায়ের জন্য সবচেয়ে বড় এলাকা ঢাকার মিরপুরের ঝুট পট্টি। 

 ✅ ‘ঝুটের দুইটা ক্যাটাগরি আছে একটা হল ওভেন আরেকটা হল নিট। ওভেন ঝুঁটের দাম কম, নিট ঝুটের দাম তুলনামুলকভাবে বেশি । কারণ নিটের ঝুট রিপ্রোসেস করে তুলার পর্যায়ে নিয়ে আসে। সেগুলো স্থানীয় বাজারে তুলার বিকল্প হিসাবে বিক্রি হয়। এর সুবিধা হল তুলার দাম বেশি কিন্তু এর দাম কম। যারা স্বল্প আয়ের মানুষ তারা এ থেকে সুবিধা লাভ করেন’।

✅ ঝুট ব্যবসায়ীরা বলছেন, এই ব্যবসায়ের সাথে প্রায় ৫০ লাখেরমত মানুষের জীবিকা চলে। দোকানগুলোতে নারী কর্মীর সংখ্যাই বেশি। নতুনরা এখানে কাজ করে মাসে ৩ হাজার টাকার মত পায়। বেশি পুরান মানুষ হলে ৪ হাজার টাকা পায়’।

✅ ঝুট দিয়ে তৈরি হচ্ছে সুতা। মিরপুরে কয়েকটি দোকানে পুরনো দিনের স্পিনিং মেশিন দিয়ে তৈরি করা হয় সুতা। সেখানে রিসাইকেল করা সুতা স্থানীয় দর্জিরা নিচ্ছেন সেগুলো আবার কখনও কখনও গার্মেন্টেসেই ফেরত যাচ্ছে। ঝুট দিয়ে বানানো হচ্ছে ম্যাট্রেস।

  

 ✅ ঝুট আমরা রিসাইকেল করে এটাকে ফাইবার বানাই । ফাইবার বানিয়ে এটাকে ইউরোপে রপ্তানি করা হয় । ঝুট পৃথিবীর প্রায় ৪০ টা দেশে যায় । কিন্তু বাংলাদেশে ঝুটকে সঠিকভাবে কাজে লাগানোর কোন পন্থা নেই। 

✅ বিশ্বব্যাপী  রিসাইকেল করা পণ্যের রয়েছে আলাদা মর্যাদা। সেই মর্যাদা পেতে পারে বাংলাদেশর ঝুট দিয়ে তৈরি পণ্যও। শুধু দরকার বড় কোন ব্রান্ডের এর সাথে যুক্ত হওয়া।

 ✅ মিরপুর ১১ নম্বরের ঝুটপল্লী হচ্ছে সবচেয়ে বড় ঝুট পল্লী । 

✅ দোকানের মালিক  প্রতিদিনই এমন ১০ থেকে ২০ বস্তা ঝুট কেজিপ্রতি ২০ থেকে ২৫ টাকা দরে কেনেন তিনি। 

✅ দামঃ বাছাই করা সবচেয়ে নিম্নমানের ঝুটগুলো পাঠিয়ে দেয়া হয় লেপ তোষকের দোকানে। দাম পান কেজি প্রতি ৩ থেকে ৪ টাকা ।  বাছাই করা ভাল মানের ঝুট বড় ব্যবসায়ীদের কাছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি করা হয়।  সেগুলো বিদেশে রফতানি করেন। 

 
✅ এইসব ঝুট ব্যবহার করে মোটা সুতা তৈরি করা হয়। যে সূতা দিয়ে তৈরি করা হয় টাওয়েল, হোমটেক্সটাইল, মোজা বা ডেনিমের মতো পণ্য।

✅ বিটিএমএ এবং বিটিটিএলএমইএ’র দেয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে কটন ওয়েস্ট ও গার্মেন্টস ওয়েস্ট বা নন কটন থেকে সুতা তৈরির জন্য ১৭৬টি স্পিনিং মিল রয়েছে। যাদের তৈরি বিভিন্ন মানের সুতা ৩২টি ডেনিম ফেব্রিক, ২২টি হোম টেক্সটাইল এবং শতাধিক টেরিটাওয়েল কারখানার প্রধান কাঁচামাল। এসব কারখানায় বছরে ২ লাখ ৩৪ হাজার টন কটন ওয়েস্ট ও গার্মেন্টস ওয়েস্টের চাহিদা আছে। 

✅  দেশে সব ধরনের ওয়েস্ট মিলিয়ে বছরে উৎপাদন হচ্ছে ২ লাখ ১৫ হাজার টন। ফলে ওয়েস্টেজের (ঝুট) সঙ্গে বেশি পরিমাণে ফ্রেশ কটন ব্যবহারের কারণে উৎপাদন খরচ বাড়ছে।

✅  বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ২০১১ সালে ওয়েস্টেজ কটনের ন্যূনতম রফতানি মূল্য কেজি প্রতি সাড়ে চার মার্কিন ডলার ঠিক করে দেয়।

 
✅  সর্টেড গার্মেন্টস ওয়েস্ট কেজি প্রতি দশমিক ৬ ডলার এবং ননসরটেড গার্মেন্টস ওয়েস্টের ন্যূনতম রফতানি মূল্য কেজি প্রতি দশমিক ২৩ ডলার নির্ধারণ করে সরকার। তবে রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, এরপরও এসব ওয়েস্টেজ রফতানি বেড়েছে।

 

✅ এই ঝুটপল্লীর ক্যাপিটাল সাপ্লাইয়ের স্বত্তাধিকারী মো. মমিনুল ইসলাম বলেন, দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে সরবরাহ করলে দাম ভাল পাওয়া যায় না, টাকাও বাকি পড়ে থাকে দীর্ঘদিন। কিন্তু রফতানি করতে পারলে ভাল দামের পাশাপাশি টাকাও পাওয়া যায় অগ্রিম।

✅ এজন্য বিটিএমএ ২০১৭ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও ট্যারিফ কমিশনে আবেদন করে, যাতে কটন ওয়েস্টেজকে ইয়ার্ন ওয়েস্ট ও থ্রেড ওয়েস্ট উল্লেখ করে রফতানির নামে পাচার করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই মূল্যবান এই কাঁচামালের পাচার ঠেকাতে কটন ওয়েস্ট ও গার্মেন্টস ওয়েস্টের মতো ইয়ার্ন ওয়েস্ট ও থ্রেড ওয়েস্টেরও নূন্যতম রফতানি মূল্য বেঁধে দেয়ার আবেদন জানানো হয়।

✅ গার্মেন্টস ওয়েস্টেজের ক্ষেত্রেও একই ধরনের কারসাজির অভিযোগ তুলেছে বিটিটিএমএলইএ। সংগঠনটির সভাপতি মো. শাহাদাত হোসেন বলেন, কটনক্লিপ, ওয়েস্ট কটনক্লিপ, কটনওয়েস্ট হোয়াইট ক্লিপ ইত্যাদি নামে এসব কাঁচামাল রফতানির নামে পাচার হচ্ছে।  কিন্তু ভিন্ন মত এসব বর্জ্য রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ টেক্সটাইল অ্যান্ড গার্মেন্টস ওয়েস্ট প্রসেসরস ও এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন। 

✅ ২০১৬ সালে এস্তোনিয়া ভিত্তিক সফটওয়ার নির্মাতা প্রতিষ্ঠান রিভার রিসোর্সের এক গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের টেক্সটাইল ও গার্মেন্টস ওয়েস্ট সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারলে বছরে চার বিলিয়ন ডলার বাড়তি মূল্য সংযোজন সম্ভব। পাশাপাশি সর্টেড গার্মেন্টস ওয়েস্ট থেকে সুতা তৈরির পর নতুন করে রঙ করার কোনো প্রয়োজন হয় না। ফলে এ ক্ষেত্রে পানির অপচয় হয় না, যেখানে পোশাক শিল্পের পানি দূষণ বিশ্ব জুড়েই উদ্বেগের বিষয়।

মেশিন প্রাইসঃ
চাইনিজ ওয়েস্ট রিসাইকেল মেশিন প্রায় ৩১ লক্ষ টাকার মতো পড়বে বা ৩৫ হাজার ডলার । এই দাম একটি গ্রুপ ফেক্টরির জন্য তেমন বড় কিছুনা ।

কোন মন্তব্য নেই: