এলসি একাউন্ট খোলার আগে ও পরে যা যা অবশ্য করণীয় | Letter Of Credit- লেটার অফ ক্রেডিট - Textile Lab | Textile Learning Blog

এলসি একাউন্ট খোলার আগে ও পরে যা যা অবশ্য করণীয় | Letter Of Credit- লেটার অফ ক্রেডিট

এলসি একাউন্ট খোলার আগে ও পরে যা যা অবশ্য করণীয়


রপ্তানি বাণিজ্যে একজন এক্সপোর্টার হিসেবে আপনি নিশ্চই দ্রুত পেমেন্ট পাওয়া নিয়ে নিশ্চিত হতে চাইবেন, এটাই তো স্বাভাবিক। আর এক্ষেত্রে রপ্তানিকারক ও আমদানিকারককের মধ্যবর্তী বিশ্বাসের ভিত্তি হিসেব কাজ করে থাকে ব্যাংক। এলসি (Letter Of Credit- লেটার অফ ক্রেডিট)  ডকুমেন্টসের মাধ্যমে পেমেন্টের এই নিশ্চয়তা প্রদান করে থাকে ব্যাংক। এলসি অ্যাকাউন্ট খোলার প্রক্রিয়া এবং এই সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ অন্যান্য তথ্যাদি নিয়েই আজকের এই লেখাটি।

এলসি বা লেটার অব ক্রেডিট কী?

আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে যে ডকুমেন্টটি না থাকলে বাণিজ্য করা সম্ভবপর নয়, সেটি হলো লেটার অব ক্রেডিট বা এলসি। তাই একে ইন্টারন্যাশনাল ট্রানজেকশন পেয়িং ডকুমেন্টও বলা হয়। সাধারণত, আমদানিকারকের ব্যাংক পেমেন্টের নিশ্চয়তা হিসেবে রপ্তানিকারকের ব্যাংককে লেটার অফ ক্রেডিট প্রদান করেন। কোন ব্যাংক থেকে লেটার অফ ক্রেডিট পাওয়ার ক্ষেত্রে আমদানিকারককে সেই ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা জমা রাখতে হয়। তবে ব্যবসায়িক পরিচিত ব্যক্তিত্ব, অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল ব্যক্তি কিংবা ব্যক্তির ব্যবসায়িক ইতিহাস ইত্যাদির উপরে ভিত্তি করে অনেক ব্যাংক গচ্ছিত টাকা ছাড়াই আমদানিকারককে লেটার অব ক্রেডিট প্রদান করেন।

এলসি কার্যক্রম

লেটার অব ক্রেডিটের অন্তর্ভূক্ত পেমেন্টের শর্তাদিতে বর্ণিত সেলস/পারচেজ কন্ট্রাক্ট অনুসারে লেটার অব ক্রেডিটের কার্যক্রম শুরু হয়। এক্ষেত্রে পেমেন্ট ট্রানজেকশন সম্পূর্ণ করতে বেশ কয়েকটি ধাপ অতিক্রম করতে হয়। এই প্রক্রিয়ায় কয়েকটি পার্টি সংযুক্ত থাকেন। রপ্তানি বাণিজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ হওয়ায় এলসি তৈরির আগে এ সম্পর্কে ভালোভাবে জানা প্রয়োজন।

এলসি একাউন্টের ৪ টি পার্টি

সাধারণত, এলসি খোলার প্রক্রিয়ায় কয়েকটি (৪ টি) পার্টি জড়িত থাকেন। পার্টিগুলো হলো-

১। আমদানিকারক

২। আমদানিকারকের ব্যাংক (ইস্যুকৃত ব্যাংক)

৩। রপ্তানিকারক

৪। রতানিকারকের ব্যাংক (ইস্যুকৃত ব্যাংক)

সংক্ষেপে এলসি-র সম্পূর্ণ কার্যক্রম

১। বায়ারের সাথে সেলস কন্ট্রাক্ট শুরু করা করা

২। আমদানিকারকের পক্ষ থেকে লেটার অফ ক্রেডিট আবেদন

৩। আমদানিকারনের ইস্যুকৃত ব্যাংক থেকে লেটার অফ ক্রেডিট ইস্যু করা

৪। রপ্তানিকারকের ব্যাংক থেকে লেটার অফ ক্রেডিট অ্যাডভাইজ করা

৫। রপ্তানিকারক দ্বারা শিপমেন্টের ব্যবস্থা করা

৬। রপ্তানিকারক দ্বারা ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা

৭। রপ্তানিকারক দ্বারা ডকুমেন্ট প্রদান

৮। আমদানিকারকের ব্যাংক থেকে ডকুমেন্টস গ্রহণ এবং পেমেন্ট প্রদান

একাউন্ট খোলার পূর্ববর্তী ধাপগুলো

এলসি খোলার পূর্বে বেশ কয়েকটি ধাপে কিছু কার্যক্রম পরিচালনা করার প্রয়োজন হয়। সেগুলো হলোঃ

১। কন্ট্রাক্ট বা চুক্তি

এলসি খোলার পূর্বে ক্রেতা (আমদানিকারক) এবং বিক্রেতার (রপ্তানিকারক) মধ্যবর্তী চুক্তি সম্পন্ন হতে হবে। এই চুক্তিতে পণ্যের বিবরণ, শিপিং-এর কন্ডিশন, পেমেন্ট পদ্ধতি, শিপিং-এর তারিখ ইত্যাদি লিখিত থাকবে। জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নয়, চুক্তির সংক্ষিপ্ত রূপ প্রোফর্মা ইনভয়েসে লিখিত থাকবে।

২। অ্যাপ্লিকেশন বা আবেদন

কন্ট্রাক্ট সম্পন্ন হওয়ার পর ক্রেতা/বায়ার ইস্যুকৃত ব্যাংকে লেটার অফ ক্রেডিট এর জন্য আবেদন করবেন। এক্ষেত্রে মর্টগেজের পরিমাণ আমদানিকারকের সাথে ব্যাংকের সম্পর্কের উপরে নির্ভর করবে। ব্যাংক এছাড়াও গ্রাহকের ব্যাংকে এসময় প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট স্বাক্ষর এবং জমা প্রদান করবে।

৩। এলসি ইস্যু

পরবর্তী ধাপে ব্যাংক লেটার অফ ক্রেডিট ইস্যু করবে। ইউসিপি এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নীতিমালা অনুযায়ী শর্তাদি প্রদান করা হবে। সাধারণত, এক্ষেত্রে ইস্যুকৃত ব্যাংক বিদেশের নির্ধারিত ব্যাংকে এসডব্লিউআইএফটি বা সুইফটসহ প্রদান করে। এই পরিস্থিতিতে বৈদেশিক বা রপ্তানিকারকের/এক্সপোর্টারের ব্যাংককে অ্যাডভাইজিং ব্যাংক বলা হয়।

একাউন্ট খোলার পরবর্তী কার্যক্রম

১। এলসি অ্যাডভাইজিং

ইস্যুকৃত ব্যাংক থেকে লেটার অফ ক্রেডিট গ্রহণ করার পর, এক্সপোর্টারের অ্যাডভাইজিং ব্যাংক এলসি সম্পর্কে রপ্তানিকারককে বা এক্সপোর্টারকে জানায়। এই কাজ বাবদ ব্যাংক কিছু অ্যাডভাইজিং চার্জ কেটে রাখে। এক্ষেত্রে অ্যাডিভাইজিং ব্যাংক, অ্যাডভাইজিং ব্যাংক লোন বা পেমেন্ট প্রদানের কোনরকম দায়িত্ব গ্রহণ করে না। তবে লেটার অফ ক্রেডিট অ্যাডভাইজর, ইমপোর্টারের ইস্যুকৃত ব্যাংক থেকে যে এলসি পাঠানো হয়েছে এবং নকল নয় তা রপ্তানিকারককে নিশ্চিত করেন। 

২। শিপিং অ্যারেঞ্জমেন্ট

নিজের অ্যাডভাইজিং ব্যাংক থেকে পাওয়া এলসির উপর আস্থা রেখে, রপ্তানিকারক পণ্যের শিপমেন্ট করার প্রস্তুতি শুরু করেন। এলসি-তে ইমপোর্টারের উল্লিখিত পোর্টে পণ্য পৌঁছানোর লক্ষ্যে রপ্তানিকারক, শিপমেন্ট কোম্পানির সাথে যোগাযোগ করেন এবং জাহাজ, বাস বা প্লেনে পণ্য পাঠান।

৩। ডকুমেন্ট প্রস্তুত করা

পণ্যের রপ্তানি নিশ্চিত করতে রপ্তানিকারক নিজস্ব কিছু ডকুমেন্টস তৈরি করেন এবং অন্যান্য সংস্থার কাছ থেকে কিছু ডকুমেন্টস সংগ্রহ করেন। এই ডকুমেন্টসের মধ্যে কমার্শিয়াল ইনভয়েস, প্যাকিং লিস্ট, বিল অব ল্যাডিং/এয়ারওয়ে বিল/ ট্রাক রিসিপ্ট, বিল অব অরিজিন ইত্যাদি অন্তর্ভূক্ত থাকে।

৪। ডকুমেন্টস প্রদান করা

সমস্ত ডকুমেন্টস প্রস্তুত করা শেষে রপ্তানিকারক উপরোক্ত ডকুমেন্টসগুলো অ্যাডভাইজিং ব্যাংকে প্রদান করেন। অ্যাডভাইজিং ব্যাংক কাগজগুলো যাচাই করে আমদানিকারকের ব্যাংকে এলসি পেমেন্ট গ্রহণের জন্য প্রদান করে।

৫। ডকুমেন্টের সত্যতা যাচাই ও ব্যাংক পেমেন্ট

লেটার অব ক্রেডিটের সাথে প্রদানকৃত কাগজাদি, এই যেমন- কমার্শিয়াল ইনভয়েস, প্যাকিং লিস্ট, বিল অব ল্যাডিং, ইন্সপেকশন সার্টিফিকেট, সার্টিফিকেট অব অরিজিন ইত্যাদি মিলিয়ে এবং সত্যতা যাচাইয়ের মাধ্যমে  ইমপোর্টারের ইস্যুকৃত ব্যাংক ডকুমেন্টসগুলো গ্রহণ করে। ডকুমেন্টস সঠিক হলে এলসি পেমেন্ট প্রদান করা হয়। আমদানিকারক ব্যাংকের কাছ থেকে সমস্ত চার্জ, ইন্টারেস্ট ইত্যাদির ডকুমেন্টস বুঝে পাবেন। অন্যদিকে, ডকুমেন্টসে কোন ভুল থেকে থাকলে সেক্ষেত্রে তা আমদানিকারককে জানানো হবে এবং সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। পোর্ট থেকে পণ্য গ্রহণের পর বৈদেশিক ব্যাংক পণ্যের মূল্য প্রদান করবে।

লেটার অফ ক্রেডিট রপ্তানি ও আমদানি বাণিজ্যে অসম্ভব প্রয়োজনীয় একটি ব্যাপার। তাই একজন রপ্তানিকারক হিসেবে এলসি করার পূর্বে ইস্যুকৃত ব্যাংক এবং লেটার অব ক্রেডিট সংক্রান্ত তথ্যাদি যথাযথভাবে জেনে নিন।

কোন মন্তব্য নেই: