বিশ্বসেরা ৭ ফ্যাশন ব্র্যান্ড
ফ্যাশন ব্র্যান্ড মূলতঃ ফ্যাশনকে কেন্দ্র করেই ভেতর-বাইর তুলে ধরেন ক্রেতাদের মাঝে। তাই বলা যায়, ব্র্যান্ডের প্রতি দুর্বলতা ট্রেন্ডি ও ফ্যাশনেবল ভোক্তার সাধারণ একটি বৈশিষ্ট্য। যার ওপর ভিত্তি করে বিশ্বব্যাপী গড়ে উঠেছে সুবিশাল পণ্যসম্ভার।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলো অভিজাত রুচির যেসব পণ্য নিয়ে হাজির হয়, সেগুলো নিজের সংগ্রহে রাখার আগ্রহ প্রায় সব ফ্যাশনপ্রেমীরই থাকে কমবেশি। তবে পণ্যের ভিন্নতা, মান, দামের দিক থেকেও যাচাই করা হয় আসলে কোন ব্র্যান্ড চাহিদায় এগিয়ে। বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় অভিজাত ব্র্যান্ডগুলো থেকে নির্বাচিত ৭টির জনপ্রিয়তা নিয়েই এবার থাকছে কিছু তথ্য
1. Luis Vuitton
দামে, মানে আর চমকে এগিয়ে থাকা বিশ্বমানের ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে সবার পরিচিত একটি হচ্ছে লুই ভিতোঁ। ফ্যাশন দুনিয়ায় এখন পর্যন্ত সেরা দাম হাঁকানোর রেকর্ডটাও তাদের। ১৬৭ বছর পেরিয়ে আসা এই ব্র্যান্ডটির পরিচয় তার বয়সের মতোই লম্বা।
সংক্ষেপে Luis Vuitton কে এলভি বলেই লোকে চেনে। প্রতিষ্ঠাতা লুই ভিতোঁ নিজের নামেই নামকরণ করেন ব্র্যান্ডটির। দুই পুরুষ ধরে ফ্যাশন বিশ্বে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করে আসছে এলভি। ১৮২১ সালে ফ্রান্সের জুরা প্রদেশে জন্ম ভিতোঁর। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে তিনি পাড়ি জমান প্যারিসে। সেখানে গিয়ে ট্রানক (রঙ মেকার) হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি। কয়েক দিনের মধ্যেই ভুইটন বিভিন্ন লাগেজ ও ব্যাগের ওপর তাক লাগানো সব ডিজাইনে রঙ করে নজরে পড়ে যান সবার। এরই সুবাদে নেপোলিয়ন তার ব্যক্তিগত হাউসহোল্ডে কাজের জন্য ভুইটনকে ডাকেন। সেখানে তিনি ব্যাগ, ড্রেস, জুয়েলারি, চামড়ার সামগ্রী তৈরিতে ব্যাপক পারদর্শিতা অর্জন করেন এবং সেগুলোর ওপরে করতে শেখেন দারুণ সব ডিজাইন। এরপর নিজের প্রতিভা জানান দিতে ১৮৫৪ সালে প্যারিসে উদ্বোধন করেন তার নিজের শোরুম। নিজের নামে শোরুমের নাম রাখেন লুইস ভুইটন। ডিসপ্লেতে আনেন নিজের ডিজাইন করা ফ্যাশনেবল ড্রেস, ব্যাগ, লেদার শু,সানগ্লাস আর জুয়েলারি সামগ্রী। দিন দিন প্যারিসে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে হাউজ ভিতোঁ।
১৮৬৭ সালে এলবি প্রথমবারের মতো ইউনিভার্সাল এক্সিবিশনে অংশহণ করেন। এক্সিবিশনে এলবি পণ্যের ব্যাপক জনপ্রিয়তা পেলে ভুইটনের চোখ যায় তখন দেশের বাইরে। ২০০৬ থেকে ২০১২ পর্যন্ত ছয় বছরে এলভি সবচেয়ে দামী পণ্যের ব্র্যান্ড হিসেবে রেকর্ড করে। বিশ্বের জনপ্রিয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে শীর্ষে থাকা এ ব্র্যান্ডের আয় প্রায় ২৫ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার। লুই ভিতোঁর সমৃদ্ধ সংগ্রহে রয়েছে হ্যান্ডব্যাগ, ট্রাভেলব্যাগ, স্কার্ফ, ঘড়ি, বেল্ট, সানগ্লাস এবং নারী-পুরুষ উভয়ের জন্য পোশাক ও সুগন্ধি।
Website: https://www.louisvuitton.com
2. Hermès
প্যারিসের আরমেস ইন্টারন্যাশনাল এসএ স্থাপিত হয় ১৮৩৭ সালে। মূলত ঐতিহ্যবাহী নকশার কারণে আরমেস বিশ্বব্যাপী খ্যাতি অর্জন করেছে।
উন্নত মানের বিলাসবহুল পণ্য, ফার্নিচার, জীবনযাপনের অনুষঙ্গ, সুগন্ধি ও বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরিতেই এটি বিশেষত্ব অর্জন করেছে। এ ব্র্যান্ডের বিখ্যাত পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে আরমেস স্কার্ফ, যা পরেছিলেন রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ, প্রিন্সেস গ্রেস কেলিসহ আরো অনেক স্বনামধন্য নারী ব্যক্তিত্ব।
এ ব্র্যান্ডেও বিখ্যাত সুগন্ধির তালিকায় রয়েছে রুশ আরমেস, বেল অ্যামি, টেরে ডি’আরমেসসহ আরো অনেক সুগন্ধি।
Website: https://www.hermes.com
3. Oscar de la Renta
বর্তমানে অস্কার ডে লা রেন্টা শীর্ষস্থানীয় ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ব্যয়বহুল। মূলত দামি বিয়ের পোশাক ও অনুষঙ্গ তৈরির জন্য এ ব্র্যান্ডের খ্যাতি রয়েছে।
কান চলচ্চিত্র উৎসবেও অস্কার ডে লা রেন্টার নকশা করা পোশাকে সেজেছেন অনেক বলিউড, হলিউড তারকা অভিনেত্রী। মার্কিন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও অভিনেতা জর্জ ক্লুনির স্ত্রী আমাল ক্লুনিও নিজের বিয়েতে পরেছিলেন এই ডিজাইনারের ব্রাইডাল কালেকশন।
২০১৯ সালের স্প্রিং-সামার সংগ্রহে এ ব্র্যান্ড রেখেছে আরো অনেক অভিজাত ও এক্সক্লুসিভ বিয়ের পোশাক, যা নিঃসন্দেহে ফ্যাশনপ্রেমীদের মন জয় করবে। খ্যাত ফ্যাশন ডিজাইনার অস্কার ডে লা রেন্টা মারা গেছেন। উল্লেখ্য ২০১৪ সালে ক্যানসারে আক্রান্ত ডে লা রেন্টা ৮২ বছর বয়সে কানেক্টিকাটের কেন্টের বাসায় মারা যান।
Website: https://www.oscardelarenta.com
4. H&ম
সুইডিশ বহুজাতিক কাপড়ের এ ব্যান্ড সাশ্রয়ী দামে পোশাক তৈরি করছে নারী, পুরুষ, টিনএজার সবার জন্য। ২০১৬ তে বিশ্বখ্যাত ম্যাগাজিন ফোর্বস-এর তথ্য অনুযায়ী সুইডেনের H&M মের মালিক স্টেফানের মোট সম্পদের মূল্য ২ হাজার ২০ কোটি ডলার হবার বদৌলতে তিনি তখন সারা বিশ্বের সেরা ধনীদের তালিকায় ৩২তম স্থান পান।
স্টেফান পারসনের পিতা ১৯৪৭ সালে H&M নামের পারিবারিক ব্যবসাটি শুরু করেন। ব্র্যান্ডটি নিত্যনতুন নকশার পোশাক নিয়ে আসে এবং বিক্রিও করে থাকে তুলনামূলক কম দামে। ফলে বাজারের প্রতিযোগিতায় তারা অনায়াসেই এগিয়ে যায়। এ ছাড়া তারা পোশাক আমদানি করে সেই সব দেশ থেকে, যেখানে শ্রমিকের মজুরি খুবই নগণ্য।
বিশ্বব্যাপী রিটেইলারদের মধ্যে H&M হচ্ছে দ্বিতীয়। বিশ্বের ৬২টি দেশে তাদের সাড়ে চার হাজারের বেশি স্টোর রয়েছে, যেখানে ১ লাখ ৩২ হাজার কর্মী কাজ করেন। আর এইচঅ্যান্ডএমের উপচে পড়া বাজার ব্র্যান্ডের মালিক স্টিফান পারসনের মোট আয়ের খাতে বর্তমানে যোগ হয়েছে ২২ বিলিয়ন ডলার!
Website: https://m.hm.com
5. GUCCI®
১৯২১ সালে স্থাপিত হয় ইতালিয়ান এ ব্র্যান্ড। ফ্যাশনেবল কাপড় ও চামড়ার পণ্যের জন্য গুচি ইতালিয়ান ব্র্যান্ডের মধ্যেও সবচেয়ে বেশি সুনাম অর্জন করেছে।
গুচি প্রথমে চামড়াজাত পণ্যই তৈরি করছিল। পরবর্তীতে তারা রেডিমেট পোশাক, অভিনব নকশার ঘড়ি, মনোরম জুয়েলারি ও অন্যান্য অনুষঙ্গ তৈরি করতে শুরু করে। এ ব্র্যান্ডের বর্তমান আয় ১২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার।
Website: https://www.gucci.com
6. PRADA
শীর্ষস্থানীয় বিলাসবহুল ফ্যাশন ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে ইতালিয়ান ফ্যাশন ব্র্যান্ড প্রাডা অন্যতম। বলা যায়, ইতালির জনপ্রিয় দুই ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘প্রাডা’ ও ‘মিউ মিউ’। এই দুটি ব্র্যান্ডের নকশা করা পোশাক আর অন্যান্য পণ্য শুধু ইতালিতেই নয় গোটা দুনিয়াতেই জনপ্রিয়। এই দুই প্রতিষ্ঠানের প্রধান ডিজাইনার ও উদ্যোক্তা মিউসিয়া প্রাডা।
২০১৩ সালে গার্ডিয়ান-এর করা সেরা ৫০ নকশার পোশাকের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছিল প্রাডার পোশাক। পারিবারিকভাবেই ব্যবসার সঙ্গে জড়িত প্রাডার জন্ম ইতালির মিলানে ১৯৪৯ সালে। প্রাডা ব্র্যান্ডের প্রতিষ্ঠাতা মারিও প্রাডার নাতনি তিনি।
পারিবারিক প্রাডা ব্র্যান্ডকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এখন। পাশাপাশি?১৯৯৩ সালে মিউসিয়া প্রাডার উদ্যোগে চালু হয় মিউ মিউ ব্র্যান্ড। ১৯৮৫ সালে নারীদের জন্য বিশেষ একটি হাতব্যাগ নকশার মাধ্যমে ফ্যাশন ডিজাইনে যুক্ত হন প্রাডা। পরবর্তী সময়ে নতুন নতুন নকশা আর পোশাক তৈরি করা শুরু করেন।
এ ব্র্যান্ডের বর্তমান আয় ৯ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার। স্টাইলিশ লেদার পার্স, হ্যান্ডব্যাগ, ঘড়ি ও সুগন্ধি দিয়ে ইতালিয়ান এ ব্র্যান্ড মন জয় করেছে বিশ্বের নানা প্রান্তের ফ্যাশনপ্রেমীদের।
Website: https://www.prada.com
7. Ralph Lauren
আমেরিকান ব্র্যান্ড রালফ লরেন বহুমূল্যবান পোশাক, জুতা ও সুগন্ধির জন্য বিখ্যাত। সারা বিশ্বে এ ব্র্যান্ডের ৫৮৩টি স্টোর রয়েছে। পোলো ব্র্যান্ডের নাম শোনেননি এমন ফ্যাশন সচেতন মানুষ বোধ হয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। রালফ লরেনের খ্যাতির পেছনেও পোলো ব্র্যান্ডের আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তাকেই সবচেয়ে বড় ফ্যাক্টর হিসেবে দেখে থাকেন অনেকে। তবে আসল বিষয়টি কিন্তু আরও অনেক গভীরেই রয়ে গেছে। একজন ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে রালফ লরেনের পথচলা শুরু হওয়ার পর থেকে শুধু সাফল্য এসেই যেন তার সঙ্গী হয়েছে।
একে একে তার উত্তরণের পথেও ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ের নতুনত্ব আরও সহায়ক ভূমিকা রেখেছে। তার রালফকে বলা হয় ফ্যাশনের আরেক বিস্ময়। আমেরিকার বিশ্ববরেণ্য এ ডিজাইনার জন্ম নিয়েছেন ১৯৩৯ সালে।
পোলো ব্র্যান্ডের প্রধান ডিজাইনার হিসেবে তাকে এক নামে চেনে সারা বিশ্ব। ফ্যাশন ডিজাইনিংয়ে তাকে গুরু হিসেবে পেতে শিক্ষার্থীর সংখ্যা অসংখ্য। বিশ্বের যেসব তারকা এবং ভিআইপির কাছে টি-শার্ট বা পোলে শার্ট পছন্দ তাদের কাছে সবচেয়ে আকর্ষণীয় হলো পোলো রালফ লরেন ব্র্যান্ডের পোলো শার্ট।
এ ব্র্যান্ডের আরেকটি বিখ্যাত লেভেল হচ্ছে ক্লাব মোনাকো। আর ক্লাব মোনাকোতে লরেন ডিজাইন করেছেন ছেলেদের ফর্মাল, পার্টি এবং রেগুলার শার্টস, বেøজার, টাই ও লেদারের জ্যাকেট। পাশাপাশি মেয়েরা মোনাকোতে পাবেন আকর্ষণীয় সব ওয়েডিং গাউন, পার্টি ড্রেস এবং বিভিন্ন ওয়েস্টার্ন ড্রেসেস।
তবে মেয়েদের জন্য তার ব্র্যান্ড নতুন কিছু এনে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে।
Website: https://www.ralphlauren.com
সূত্র: ফোর্বস, ভোগ ও দ্য ডেইলি রেকর্ডস
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন