টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীদের নানান ধরনের প্রশ্ন ও উত্তরঃ
প্রশ্ন : টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়াশোনা করে কোথায় জব করা যায়?
উত্তর: টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করা গ্রাজুয়েটদের বিভিন্ন সেক্টরে জবের সুযোগ রয়েছে ।
১) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারগন পাশ করে স্পিনিং মিল (যেখানে সুতা প্রস্তুত করা হয়), ফেব্রিক মিল ( নিট/ওভেন/ডেনিম - যেখানে কাপড় প্রস্তুত করা হয়), ডাইং মিল (যেখানে কাপড় রং ও ফিনিশিং করা হয়) এ জুনিয়র প্রোডাকশন অফিসার অথবা শিফট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে জয়েন করে থাকেন । এ সময় শিফটিং ডিউটি করা লাগে । কোনো কোনো মিল এ ৮ ঘন্টা শিফট (এ, বি, সি), কোনো কোনো মিল এ ১২ ঘন্টা শিফট (এ, বি) । কয়েক বছর প্রোডাকশন অফিসার হিসেবে জবের পর যোগ্যতা ও পারফরমেন্স এর উপর ভিত্তি করে সিনিয়র অফিসার, প্রোডাকশন ম্যানেজার, জিএম, ইডি ইত্যাদি পদে উন্নতি লাভের সুযোগ পান।
২) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে গার্মেন্টস মার্চেন্ডাইজিং এ জবের সুযোগ পান ইঞ্জিনিয়াররা । ফ্যাক্টরিতে কয়েক বছর জবের পর অনেকে বায়িং হাউজে মার্চেন্ডাইজিং এ জয়েন এর সুযোগ পান । অবশ্য ডেকাথলন, ইউনিক্লো, এইচ এন্ড এম সহ অনেক স্বনামধন্য বায়িং হাউজ ফ্রেশারদের (সদ্য পাশ করা অনভিজ্ঞ) মার্চেন্ডাইজিং এ নিয়োগ করেন ।
৩) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের বাংলাদেশে অবস্থিত আন্তার্জাতিক ল্যাবরেটরি যেমন SGS, ITS, Bureau Veritas, UL এ ল্যাব কো-অর্ডিনেটর এবং ইন্সপেক্টর হিসেবে জয়েন করে থাকেন ।
৪) টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারগন টেক্সটাইল-গার্মেন্টস-বায়িং হাউজে রিসার্চ এন্ড ডেভেলপমেন্ট, কোয়ালিটি কন্ট্রোল, ফেব্রিক টেকনোলজিস্ট, ক্যাড, প্রোডাক্ট ডিজাইন এন্ড ডেভেলপমেন্ট ইত্যাদি ডিপার্টমেন্ট এ জয়ন করার সুযোগ পান ।
৫) গার্মেন্টস ওয়াশিং, অল ওভার প্রিন্ট ফ্যাক্টরি, ডাইস-ক্যামিকেলস মার্কেটিং, ফেব্রিক মার্কেটিং এ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারদের ডিমান্ড বেশি ।
প্রশ্ন: টেক্সটাইল ইঞ্জিইনিয়ারিং এ বিএসসি পাশের পর এমএসসি করা যায় কিনা?
প্রশ্ন: টেক্সটাইল ইঞ্জিইনিয়ারিং এ বিএসসি পাশের পর এমএসসি করা যায় কিনা?
উত্তর: টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ বিএসসি পাশের পর বুটেক্সে এমএসসি করা যায় । তবে এমএসসি'র জন্য বুটেক্সে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে হয় । প্রয়োজনীয় সিজিপিএ থাকলে সরকারি-বেসরকারি স্বীকৃত টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও ইউনিভার্সিটি হতে পাশ করা সকলেই এডমিশন টেষ্ট দিতে পারে । বুটেক্সের পাশাপাশি মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়েও এমএসসি করার সু্যোগ আছে।
এছাড়া আমেরিকা, ইংল্যান্ড সহ উন্নত দেশগুলোতেও এমএসসি করার সুযোগ আছে । বর্তমানে অনেকেই বিএসসি শেষ করে আমেরিকা, ইংল্যান্ড, জার্মানি, চীন, তুরষ্কে স্কলারশিপ নিয়ে মাস্টার্স করতে যাচ্ছেন । তবে সেক্ষেত্রে স্ট্যান্ডার্ড সিজিপিএ এর সাথে আইএলটিএস, জিআরই ইত্যাদিতে প্রয়োজনীয় স্কোর অর্জন করতে হবে ।
প্রশ্ন : টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ কোন কোন সাবজেক্ট পড়ানো হয় এবং কোন সাবজেক্টের ডিমান্ড বেশি ?
উত্তর: টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ প্রথম দিকে ফিজিক্স, কেমিস্ট্রির উচ্চতর বিষয়গুলো পড়ানোর পাশাপাশি টেক্সটাইলের বেসিক সাবজেক্টগুলো পড়ানো হয় । পরবর্তীতে সাবজেক্ট আলাদা করা হয় যেমন – ইয়ার্ন ইঞ্জিনিয়ারিং, ফেব্রিক ইঞ্জিনিয়ারিং, ওয়েট প্রসেসিং ইঞ্জিনিয়ারিং (ডাইং এন্ড ফিনিশিং), এপারেল ইঞ্জিনিয়ারিং, টেক্সটাইল ম্যানেজমেন্ট এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, ফ্যাশন ডিজাইন ইত্যাদি ।
উল্লেখিত বিষয়গুলোর মধ্যে কোনোটিই খারাপ নয় । তবে নির্ভর করে একজন টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার কোন সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়বেন তার উপর ভিত্তি করে সাবজেক্ট নির্ধারণ করাই ভালো । যদি কেউ প্রোডাকশন সেক্টরে ক্যারিয়ার গড়তে চান তার জন্য ইয়ার্ন, ফেব্রিক, ওয়েট প্রসেসিং এ পড়া ভালো । যিনি গার্মেন্টস-বায়িং হাউজে মার্চেন্ডাইজিং এবং মার্কেটিং এ ক্যারিয়ার গড়তে চান তার জন্য ফেব্রিক, এপারেল ইত্যাদিতে পড়লে সুবিধা হয় । জবের ক্ষেত্রে সাবজেক্ট সবসময় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে না । ইয়ার্নে পড়ে অনেকে মার্চেন্ডাইজিং এ ক্যারিয়ার গড়ছেন । আবার এপারেলে পড়ে অনেকে ডাইং এ ক্যারিয়ার গড়ছেন । তবে প্রতিযোগিতার এই সময়ে প্রথম থেকেই প্ল্যান করে এগুনোই ভালো ।
প্রশ্নঃ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ পড়ে সরকারী চাকুরী করা যায় কিনা?
উত্তরঃ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ে বিসিএস সহ গুরুত্বপূর্ন সরকারি চাকুরীতে জয়েন করার সুযোগ আছে । গত কয়েক বছরে বুটেক্স থেকে পাশ করে বহু টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পুলিশের সহকারী এসপি, ম্যাজিস্ট্রেট, এসিল্যান্ড ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ পদে চাকুরী করছেন । পাশাপাশি বস্ত্র ও পাট মন্ত্রনালয়ের অধীনে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সরকারি টেক্সটাইল কলেজ ও ইনিস্টিটিউটগুলোয় নন-ক্যাডার শিক্ষক হিসেবে জয়েন করার সুযোগ আছে ।
প্রশ্নঃ টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং এ ভালো সিজিপিএ এর গুরুত্ব কতটুকু?
উত্তরঃ ভালো সিজিপিএ থাকলে যে কোনো জবের জন্য এপ্লাই করলে কিছুটা পজিটিভ ইম্প্রেশন হয় । পাশাপাশি দেশের বাহিরে উচ্চতর ডিগ্রীর জন্য এপ্লাইয়ে ভালো সিজিপিএ থাকা ভালো । এছাড়া শিক্ষকতার জন্য বিশেষত সরকারি-বেসরকারি টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটি, কলেজগুলোয় ভালো সিজিপিএ থাকা লাগে । ভালো সিজিপিএ এর পাশাপাশি ব্যক্তিগত দক্ষতা ও কোয়ালিটি থাকা আবশ্যক । তবে যাদের সিজিপিএ খুব ভালো নয় তাদের হতাশার কারন নেই, তাদর অবশ্যই নিজেদের দক্ষতাকে আরো অধিক উন্নয়ন করে সিজিপিএ এর ঘাটতি পুষিয়ে নিতে হবে ।
লিখেছেনঃ
Mohammad Iqbal Hossain
বুটেক্স ৩৩ তম ব্যাচের প্রকৌশলী
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন