প্রিয় গারমেন্টস মালিকেরা; শ্রমিকদের বেতন বাড়াতে চান না?তাহলে এগুলো করে দেখতে পারেন।
কি করতে পারেন:
১. দুপুরবেলা প্রতি কাজের দিন গারমেন্টসের কর্মীদের জন্য লাঞ্চের ব্যবস্থা করা।
২. মাসে একবার মেডিকেল ক্যাম্প করা [হোক সেটা সাপ্তাহিক ছুটির দিনে]।
৩. শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্য বীমার ব্যবস্থা করা [চাইলে শ্রমিকদের বেতন থেকে ছোট্ট একটা অংশ কেটে নিয়ে]
৪. শ্রমিকদের জন্য রেশনের [দরকারী জিনিসের] ব্যবস্থা করে যেখান থেকে শ্রমিকেরা অপেক্ষাকৃত কম মূল্যে প্রাত্যহিক বাজার করতে পারবে।
৫. গারমেন্টসের আশে পাশে যে সব এলাকায় কর্মীরা থাকে বা থাকতে পারে সেখানে বাসস্থানের ব্যবস্থা করা বা বাড়ির মালিকদের সাথে কালেকটিভ বারগেইনিংয়ের মাধ্যমে কম ভাড়ায় কিংবা নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
৬. কর্মীদের সন্তানদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করা বা যাতে তারা শিক্ষা পেতে পারে সে ব্যপারে সাহায্য করা।
৭. ডে কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা করা যাতে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে কর্মী মায়েদের চিন্তা না করতে হয়।
৮. গারমেন্টসে যথাযথভাবে জীবন রক্ষাকারী সরঞ্জামের ব্যবস্থা করা যাতে কোন কর্মী আর অপঘাতে মারা না যায়।
৯. গারমেন্টস কর্মীদের জন্য বিনা সূদে বা স্বল্প সূদে ঋণের ব্যবস্থা করা।
১০. কর্মীদের ডাটাবেসের ব্যাকআপ রাখা আর তা নিয়মিতভাবে আপডেট করা।
কিভাবে করতে পারেন খরচ না করে কিংবা কম খরচে?
১. প্রায় প্রতিটি বায়িং হাউজে এবং কিছু কিছু গারমেন্টসে দুপুরে খাওয়ার ব্যবস্থা এখনই আছে। এটা করতে খুব বেশী খরচ লাগবে না আশা করি। কর্মী প্রতি প্রতিদিন ৭০টাকা করে মাসে সর্বোচ্চ ১৬৮০(৭০X২৪) টাকা লাগবে।কর্মীর সংখ্যা বেশী হলে এই খরচ কর্মী প্রতি ৬০টাকা যা মাসে ১৫০০ টাকার মত হতে পারে। দরকার হলে ক্যাটারিং সার্ভিস বা অন্যান্য খাদ্য সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে আলাপ করে এই রেট কমানো সম্ভব।আর যদি গারমেন্টস কতৃপক্ষ নিজেরা রান্নার ব্যবস্থা করতে পারেন তবে এই খরচ ৫০ টাকায় আনা সম্ভব হতে পারে।
২ ও ৩. বিভিন্ন এনজিও যেমন ব্র্যাক কিংবা মেরী স্টোপস ক্লিনিক বা আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা আছে যারা অনেক কম খরচে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে থাকে বা দিতে আগ্রহী।বিজিএমইএ চাইলে এই রকম সংস্থাগুলোর সাথে আলাপ এবং দর কষাকষি করে মাসিক চিকিতসা সেবার ব্যবস্থা করতে পারে। এমনকি বিজিএমইএ কম খরচে এই কর্মীদের জন্য স্বল্প খরচে হাসপাতালে সেবা গ্রহনের ব্যবস্থা করতে পারে এই সংস্থাগুলোর সাহায্যে। বিজিএমইএ বাংলাদেশের বীমা সংস্থাগুলোর সাথে আলাপ আলোচনা করে কর্মীদের জন্যে সীমিত পরিসরে স্বাস্থ্য বীমার ব্যবস্থা করতে পারে। চাইলে এমনকি রাষ্ট্রীয় জীবন বীমার সাহায্য চাইতে পারে বিজিএমইএ।
৪. বিজিএমইএ নিজেদের কালেকটিভ বারগেইনিং পাওয়ার ব্যবহার করে কর্মীদের জন্য কম দামে প্রয়োজনীয় নিত্যপ্রয়োজনীয় বা ভোগ্য পণ্যের সরবরাহ বা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে পারে। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিস যেমন চাল, ডাল, তেল, চিনি, আটা, গুড়াদুধ এগুলো সরবরাহের ব্যবস্থা করা বা পাইকারী বিক্রেতা বা আমদানী কারকদের থেকে কেনার ব্যবস্থা করতে পারে যাতে কর্মীরা কম খরচে এগুলো কিনতে পারে এবং সামান্য কিছু সঞ্চয় করতে পারে। এক্ষেত্রে বিজিএমইএ বা এককভাবে গার্মেন্টস মালিকের কোন খরচ না বরং কর্মীদের কিছু সঞ্চয় হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে কোন কোন মালিকের জন্যে বা বিজিএমইএ সদস্যদের জন্য তাদের বর্তমান ব্যবসা কিংবা নতুন ব্যবসা প্রসারের ব্যবস্থা হতে পারে।
৫. কর্মীদের জন্য কম খরচে বাসা ভাড়ার সুযোগ করে দেয়া কিংবা বাড়ির মালিকদের সাথে কথা বলে নিরাপত্তার ব্যবস্থা করার ক্ষেত্রে মালিকদের বা বিজিএমইএ এর আন্তরিকতাই যথেষ্ট।
৬. কর্মীদের সন্তানদের জন্য বা কর্মীদের জন্য শিক্ষার ব্যবস্থা করার জন্য বিজিএমইএ কিংবা মালিকদের নতুন স্কুল খোলার কথা এখানে বলা হচ্ছে না। বরং বিজিএমইএ বা মালিকেরা চাইলে ব্র্যাক কিংবা অন্যান্য এনজিও বা সাহায্য সংস্থা বা সরকারের সাথে কথা বলে কর্মীদের সন্তানদের জন্য বিদ্যমান স্কুল বা অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে বা বিদ্যমান যে সুবিধা বা কাঠামো রয়েছে তার ব্যবহার করতে পারে। এক্ষেত্রে বিদেশী ক্রেতাদেরও অবদান রাখার ব্যাপারে আগ্রহী করানো যেতে পারে।
৭. সব গারমেন্টসে হয়তোবা ডেকেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থা করা নাও যেতে পারে। তবুও লাভবান বা বড় আকারের গারমেন্টসের ক্ষেত্রে এটা খুব বেশী আশা করা নয়।
৮. এটা করা এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিজিএমইএ এবং বাংলাদেশের গারমেন্টস সেক্টরকে টিকিয়ে রাখার জন্যে।
৯. স্বপ্ল সূদে ঋণ এর ব্যবস্থা করার জন্য বিজিএমইএ বা আগ্রহী মালিকেরা ফান্ড গড়ে তুলতে পারেন। এটা যদি সম্ভব না হয় তবে গারমেন্টস মালিকেরা বিস্বস্ত কর্মীদের জন্য কাস্টোডিয়ান হিসেবে দায়িত্ব নিতে পারেন যে ক্ষেত্রে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী সংস্থা থেকে ঋণের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। বিজিএমইএ এক্ষেত্র্র প্রধান ভূমিকা পালন করতে পারে।
১০. এক্ষেত্র্রে বিজিএমইএ প্রধার নিয়ন্ত্রণকারী বা সেন্ট্রাল ডাটাবেসের দায়িত্ব পালন করতে পারে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন