শিল্পমালিকদের আবারও বড় কর-সুবিধা
• গত সেপ্টেম্বরেই উৎসে কর কমিয়ে দিয়েছিল সরকার
• চার মাসের মাথায় আবার কর কমল অর্ধেকের বেশি
• কর-সুবিধা আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত থাকবে
• কর-সুবিধা আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত থাকবে
নতুন সরকার শপথ নেওয়ার আগেই শিল্পমালিকদের বড় কর-সুবিধা দেওয়া হলো। এখন থেকে পাট ছাড়া যেকোনো পণ্য রপ্তানি করলে উৎসে কর দশমিক ২৫ শতাংশ দিলেই চলবে। গত সেপ্টেম্বরে এই হার আগের চেয়ে কমিয়ে দশমিক ৬০ শতাংশ করা হয়েছিল। এখন সেই উৎসে কর অর্ধেকের বেশি কমিয়ে দেওয়া হলো।
গত বুধবার অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি) এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করেছে। এই কর-সুবিধা আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত থাকবে। এরপর আগের অবস্থায় মানে, ১ শতাংশ হারে উৎসে কর দিতে হবে। দেশ থেকে যত পণ্য রপ্তানি হয়, এর ৮৩ শতাংশের বেশি হয় তৈরি পোশাক। ফলে নতুন কর-সুবিধা সবচেয়ে বেশি পাবেন পোশাকমালিকেরাই।
উৎসে কর ছাড়া পোশাক উৎপাদক ও রপ্তানিকারকদের বার্ষিক আয়ের ওপর ১২ শতাংশ হারে করপোরেট কর দিতে হবে। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সবুজ কারখানা হলে ওই মালিককে ১০ শতাংশ হারে কর দিলেই হবে। এ দুটি সুবিধাই আগামী বছরের জুন মাস পর্যন্ত থাকবে।
সরকারের হঠাৎ দেওয়া এই কর-সুবিধার ফলে পোশাকসহ রপ্তানি খাতের শিল্পমালিকদের মুনাফার হার বাড়বে। আর শিল্পমালিকেরা বলছেন, এতে রপ্তানি খাত উৎসাহিত হবে, তাতে রপ্তানির পরিমাণও বাড়বে। তবে অর্থবছরের মাঝখানে এভাবে বাড়তি সুবিধা দেওয়ায় সরকারের রাজস্ব আদায় কিছুটা কমবে।
উৎসে কর কমানো প্রসঙ্গে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, তৈরি পোশাক খাত ভালো করছে, রপ্তানি প্রবৃদ্ধিও বাড়ছে। অন্য অনেক খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তাই পোশাক খাতকে নতুন করে কর প্রণোদনা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। তিনি আরও বলেন, ‘গত চার দশকে পোশাক খাতে যথেষ্ট অগ্রগতি হয়েছে। এত বছর পরও যদি এই খাতকে কর-সুবিধা দিয়ে বাঁচিয়ে রাখতে হয়, তবে তা দুঃখজনক। আমি মনে করি, সরকার ব্যবসায়ীদের চাপের মুখে নতি স্বীকার করে কর কমিয়েছে।’
বছর ধরে তৈরি পোশাকসহ বিভিন্ন খাতের রপ্তানিকারকদের উৎসে কর দিতে হচ্ছে। এনবিআরে আয়কর অধ্যাদেশে তৈরি পোশাক খাতে উৎসে কর ১ শতাংশ। কিন্তু তিন বছর ধরে প্রতিবছর প্রজ্ঞাপন দিয়ে তৈরি পোশাক রপ্তানিকারকের উৎসে করহার দশমিক ৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হতো। এক বছর করে অর্থাৎ জুলাই থেকে জুন মাস পর্যন্ত এই সুবিধা দেওয়া হতো।
চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে নতুন করে আর এ সুবিধা দেওয়া হয়নি। ফলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই মাস থেকে উৎসে করহার ১ শতাংশ হয়ে যায়। বাজেটের পর প্রতিক্রিয়ায় তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক ও উৎপাদকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান সংবাদ সম্মেলনে ঘোষণা দেন, ‘সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে কথা বলে করপোরেট কর ও উৎসে কর কমিয়ে আনব।’ আর এ কথার তিন মাস পরে সরকার ঠিকই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেছিল। আর চার মাস পরে আরক দফা পরিবর্তন করা হলো।
গত সেপ্টেম্বর মাসে ব্যবসায়ীদের দাবি অনুযায়ী উৎসে কর কমিয়ে দশমিক ৬ শতাংশ করা হয়। তাতেও মন ভরেনি ব্যবসায়ীদের। তাঁরা উৎসে কর পুরোপুরি প্রত্যাহারের দাবি জানান। শেষ পর্যন্ত তৈরি পোশাকসহ অন্য রপ্তানি পণ্যের উৎসে কর কমিয়ে দশমিক ২৫ শতাংশ করা হয়।
বিজিএমইএর সহসভাপতি মোহাম্মদ নাছির প্রথম আলোকে বলেন, রপ্তানি পোশাকের দাম ধারাবাহিকভাবে কমে যাচ্ছে। এই অবস্থায় টিকে থাকতে হলে উৎপাদনদক্ষতা বাড়াতে হবে। আবার চলতি মাসে শ্রমিকদের মজুরি বেড়েছে। এই সময়ে কিছুটা কর-সুবিধা পেলে এই খাত ঘুরে দাঁড়াতে পারবে।
মোহাম্মদ নাছির আরও বলেন, সবাই (সব রপ্তানিকারক) সুবিধা চায়, কিন্তু সাফল্য দেখাতে পারে না। যেহেতু তৈরি পোশাক খাতটি রপ্তানিতে বড় ভূমিকা পালন করছে, আবার আর্থ সামাজিক উন্নয়নে অবদান রাখছে-তাই এই খাতটি বাড়তি সুবিধা পেতেই পারে।
চলতি অর্থবছরে ৩ হাজার ২৬৮ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, চলতি অর্থবছরে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর হিসেবে ২ হাজার কোটি টাকা কর আদায়ের লক্ষ্য রয়েছে। উৎসে কর কমানোর ফলে ৪০০-৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব কমতে পারে।
প্রথম আলো
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
০৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:৪২
আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৯
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
০৪ জানুয়ারি ২০১৯, ১৩:৪২
আপডেট: ০৪ জানুয়ারি ২০১৯
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন