গার্মেন্টস শিল্পের কালপুরুষ নুরুল কাদের | Nurul Quader - Textile Lab | Textile Learning Blog
গার্মেন্টস শিল্পের কালপুরুষ নুরুল কাদের

গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত রফতানি খাতে পোশাক শিল্পের নাম ছিল না। এ দশকেই রিয়াজ গার্মেন্টস ও জুয়েল গার্মেন্টস পোশাক শিল্পে আসে। রিয়াজ গার্মেন্টস ষাটের দশকেই পোশাক শিল্প কারখানা গড়ে তোলে, তবে তা ছিল স্থানীয় বাজারভিত্তিক। ১৯৭৭ সালে রিয়াজ গার্মেন্টস ফ্রান্সে পোশাক রফতানি শুরু করে। ১৯৭৮ সালে নুরুল কাদের, একজন সাবেক সরকারি আমলা, কোরিয়ার দাইয়ু কোম্পানির সহায়তায় পোশাক রফতানি শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯ সালে আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। তবে ১৯৮০-৮১ সালের আগ পর্যন্ত এ শিল্পের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। ১৯৭৭-৭৮ সালে ২২টি প্রতিষ্ঠান পোশাক রফতানি করে ৪০ হাজার ডলার আয় করে এবং এর দুই বছর পর থেকেই রফতানি আয় ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে।

রফতানিমুখী পোশাক শিল্প শুরু থেকেই ছিল আমদানিনির্ভর। পোশাক তৈরিতে ব্যবহূত তুলা, সুতা, কাপড়, বোতাম, জিপার থেকে শুরু করে সবকিছুই আমদানি করে আনতে হতো। বাংলাদেশে শ্রমিকরা শুধু পোশাক সেলাইয়ের কাজটি করতেন। এমনকি রফতানির আগে চূড়ান্ত পোশাক পণ্যটির পলিথিনের মোড়কও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। শিল্পের শুরুতেই সবচেয়ে বেশি মোকাবেলা করতে হয় আমদানি-সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতার। কারণ দেশের তত্কালীন অর্থনৈতিক অবস্থায় ছিল না প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার পর্যাপ্ত সংরক্ষণ। রফতানিমুখী পোশাক শিল্পের অন্যতম পথিকৃত প্রতিষ্ঠান দেশ গার্মেন্টসকেও পড়তে হয় আমদানি প্রতিবন্ধকতার মধ্যে।

বার্ষিক ১৮ কোটি টাকার আমদানির প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা ছিল দেশ গার্মেন্টেসের। বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে মাত্র ২৪ লাখ টাকার আমদানি লাইসেন্স পান প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা মোহাম্মদ নুরুল কাদের। এত প্রতিকূল পরিবেশেও দেশ গার্মেন্টসকে সচল রেখেছিলেন তিনি। চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করা সাবেক এ আমলা তখন সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসংখ্যবার আলোচনায় বসেন আমদানির সংকট নিরসনের আশায়। একদিন মোহাম্মদ নুরুল কাদের সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্কালীন গভর্নর নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তার সঙ্গেই ব্যাক টু ব্যাক এলসি পদ্ধতি প্রণয়ন নিয়ে আলোচনার শুরু।
সাবেক আমলা হিসেবেই নুরুল ইসলামের সঙ্গে ছিল পূর্বপরিচয়। তাঁকে তিনি বিদেশী ক্রেতার দেয়া মাস্টার এলসি বন্ধক রেখে এর বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলে আমদানি করার পন্থা সম্পর্কে অবহিত করেন। পোশাক রফতানির পর ক্রেতা অর্থ পরিশোধ করলে আমদানির অর্থও পরিশোধ হয়ে যাবে। এতে করে দেশে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের সংকট দূর করা যাবে, সংরক্ষিত অপর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ সৃষ্টি না করেই। রফতানিমুখী পোশাক কারখানার আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হবে না।

এ প্রক্রিয়া ব্যাখ্যার পর বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর নুরুল ইসলাম বিষয়টি সম্ভব বলে মত দিলেন। আর লিখিত প্রস্তাব দেয়ার পরামর্শ দেন মোহাম্মদ নুরুল কাদেরকে। কিন্তু নিজে আমলা ছিলেন বলেই এ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা অনুধাবন করেছিলেন মোহাম্মদ নুরুল কাদের। আর তার অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাক টু ব্যাক প্রক্রিয়াটি সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর অনুমোদন নিয়ে প্রণয়ন করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় দুই বছর দেশ গার্মেন্টসকে কাঁচামালের অভাবে বিশাল লোকসান পোহাতে হয়। যদিও তৈরি পোশাক রফতানির জন্য যথেষ্ট সংখ্যক বিদেশী ক্রেতার নিশ্চিত ঋণপত্র (এলসি) ছিল দেশ গার্মেন্টেসের কাছে।

তবে আরো সমস্যা ছিল আমদানি-নির্ভরতার কারণেই। আমদানি করা কাপড়ের জন্য শুল্ক পরিশোধ করতে হতো, কিন্তু রফতানির জন্য হওয়ায় এ শুল্ক দেয়ার পক্ষে যৌক্তিকতা দেখছিলেন না মোহাম্মদ নুরুল কাদের। পোশাক শিল্পে না থাকলেও ‘বন্ডেড ওয়্যার হাউজ’ নামের শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধার প্রচলন তখন ছিল। শুল্ক বিভাগ স্বীকৃত একটি নির্ধারিত স্থান বা কামরা থাকবে, যেখানে আমদানি হওয়া পণ্য মজুদ করা হবে। এর তত্ত্বাবধানে থাকবে আমদানিকারকের বেতনভুক সরকারি শুল্ক কর্মচারী। এ ব্যবস্থায় শুল্ক সুবিধার প্রচলন তখন থাকলেও পোশাক খাত তার আওতাধীন ছিল না। এ পরিপ্রেক্ষিতে আবারো সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন তিনি। এক পর্যায়ে নিজস্ব প্রভাব, পরিচিতি ও কর্মদক্ষতার বিনিময়েই পোশাক খাতে বন্ডেড ওয়্যার হাউজ সুবিধা চালু করারও অনুমোদন পান মোহাম্মদ নুরুল কাদের। কিন্তু বেতনভুক্ত সরকারি কর্মচারী নিয়েও ছিল সমস্যা। কারণ কাজের সময় বন্ডেড ওয়্যার হাউজ কর্মচারীদের খুঁজে পাওয়া যেত না। এ প্রতিবন্ধকতাও দূর করতে সক্ষম হন নুরুল কাদের। তার দক্ষতার বলেই পুরোপুরি গার্মেন্টস কারখানা মালিক নিয়ন্ত্রিত বন্ডেড ওয়্যার হাউজ ব্যবস্থার প্রচলন হয়।
বলা বাহুল্য, আমলাতন্ত্রের কর্মজীবনেই মোহাম্মদ নুরুল কাদের বুঝতে পেরেছিলেন ব্যবসা-বাণিজ্যে সরকারের নীতিগত সহায়তা থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা যায়। যার বাস্তব প্রয়োগ দেখিয়েছেন আমলাতন্ত্র ছেড়ে নিজে শুরু করা ব্যবসায় সরকারি নীতিসহায়তা আদায় করে। আর এ কাজে রাজনৈতিক ও আমলা জীবনে তাঁর পরিচিতি ও প্রভাব প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে। তার শিক্ষা ও সরকারি কর্মজীবনের তথ্য-পরিক্রমাই উদ্যোক্তা মনোভাবের শতভাগ প্রতিফলনের প্রমাণ হিসেবে দাবি রাখে; যা নিশ্চিতভাবেই শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে কাজে লাগাতে সফল হয়েছিলেন নুরুল কাদের।

মোহাম্মদ নুরুল কাদের ১৯৩৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবদুল লতিফ খানও ছিলেন সরকারি চাকুরে। ঢাকার আরমানীটোলা হাইস্কুলে তাঁর ছাত্রজীবন কাটে। ১৯৫০ সালে মেট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। কলেজ পাট চুকিয়ে ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ছাত্রজীবনে যুক্ত ছিলেন সক্রিয় রাজনীতিতে।

মোহাম্মদ নুরুল কাদের ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। প্রথম চাঁদপুরের মহকুমা প্রশাসক বা এসডিও হিসেবে প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭০ সালে তিনি পাবনার জেলা প্রশাসক পদে যোগদান করেন।   

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইটের পাশাপাশি রাজশাহী থেকে পাবনায় ৩৫০ জন সুসজ্জিত সৈন্য সমন্বয়ে দুই কোম্পানি পাকিস্তানি সৈন্য আসে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরুল কাদের নিজস্ব পরিকল্পনা অনুয়ায়ী স্থানীয় পুলিশ, আনসার ও মুক্তিসংগ্রামী ছাত্র-জনতাকে সংগঠিত করেন। স্থানীয় পুলিশ লাইনে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ২৭ মার্চ রাত ১টার দিকে পাকিস্তানি বাহিনী পুলিশ লাইনসে আক্রমণ করলে ২১ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। পুলিশ লাইনসের এ সম্মুখ যুদ্ধে বীর-দেশপ্রেমিকের ভূমিকা রাখেন পাবনার তদানীন্তন সহকারী পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম। ওই সময় থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত সময়কালে রাজশাহী থেকে আগত  পাকিস্তানি বাহিনী জেলা প্রশাসকের বাসভবন, যেখানে ১১ জন পাকসেনা নিহত হয়েছিল, ১১টি স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়েছিল। এর মধ্যে সাতটি যুদ্ধে নুরুল কাদের সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সংস্থাপন সচিব হিসেবে তিনি মুজিবনগর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় আসেন। শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সচিবালয়ে প্রশাসনিক ক্রিয়াকর্ম আরম্ভ করেন।

১৯৭৪ সালে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে ব্যবসায়ী জীবন শুরু করেন। প্রথমে ওই সময় বঙ্গোপসাগরে তেল অনুসন্ধানে নিয়োজিত একটি বিদেশী তেল কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেন। কালক্রমে তিনি কয়েকটি বৃহৎ বিদেশী কোম্পানির স্থানীয় এজেন্সিশিপ গ্রহণ করেন। এ ব্যবসা তাঁকে প্রচুর লাভ এনে দিয়েছিল। এ সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে তৈরি পোশাক শিল্পের ধারণা লাভ করেন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ার দাইয়ু করপোরেশনের সঙ্গে টেকনিক্যাল ও মার্কেটিং কলাবোরেশন চুক্তি করে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের প্রথম প্রসেস টেকনোলজিভিত্তিক শতভাগ রফতনিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প-কারখানা দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড স্থাপন করে। তত্কালীন বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ ঝুঁকি নিয়ে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করে। এ প্রতিষ্ঠানের তদানীন্তন মহাব্যবস্থাপক সেকেন্দার আলী এই অর্থায়নে উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছিলেন। আর দাইয়ু করপোরেশনের সঙ্গে কলাবোরেশন চুক্তিটি ছিল বাংলাদেশের বেসরকারি সেক্টরে সর্বপ্রথম অনুরূপ চুক্তি।

নুরুল কাদের দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১৩০ জন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে রফতানিমুখী পোশাক তৈরির উত্পাদন ব্যবস্থাপনার কারিগরি জ্ঞান বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। ব্যাক টু ব্যাক এলসি পদ্ধতি চালু করে, বন্ডেড ওয়্যার হাউজিং পদ্ধতি চালু করে এবং আমেরিকার সঙ্গে দরকষাকষি করে কোটাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে এ শিল্পকে শক্ত ভিত্তি প্রদান করেন। কালক্রমে এ শিল্প বিকশিত হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং ৪০ লাখ কর্মসংস্থানের দাবি করছে।

পোশাক শিল্পের রফতানি আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যয় হয় কাপড় আমদানিতে। তাই মূল্য সংযোজন বাড়ানোর লক্ষ্যে রফতানি মানের কাপড় দেশে উত্পাদনের জন্য ১৯৮৬ সালের দিক থেকেই নুরুল কাদের কম্পোজিট টেক্সটাইল মিল স্থাপনের ধারণা নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা করেন। নুরুল কাদের স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলেন যে, কোটা পদ্ধতির অবলুপ্তি ঘটলে ভারত, পাকিস্তান বা eদক্ষিণ কোরিয়া থেকে কাপড় পাওয়া দুষ্কর হবে। কারণ তখন ওইসব দেশ কাপড় রফতানি করার চেয়ে কোটার অবর্তমানে পোশাক তৈরি করে রফতানিতেই বেশি আগ্রহী হবে। এক পর্যায়ে বিশ্বব্যাংকের তাগিদে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সম্ভাব্যতা জরিপ করা হয় এবং তাতে দেশে কমপক্ষে ২৫টি কম্পোজিট টেক্সটাইল প্রকল্প স্থাপন করার সুপারিশ করা হয়েছিল বলে জানা যায়।

এসব তথ্য বিশ্লেষণে এটা খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, আজকের বিকশিত রফতানিমুখী পোশাক শিল্পে বীজ বপনে ভূমিকা রেখেছিলেন একজন দক্ষ সাবেক আমলা। এ খাতের বর্তমান কর্ণধারদের মতে, এখনো সরকারের সুবিধা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে পোশাক খাত। কিন্তু এখন পর্যন্ত মৌলিক কোনো নীতিমালার তেমন পরিবর্তন হয়নি। আবার নতুন কোনো নীতিমালার উদ্ভাবন দেখা যায়নি, যা রফতানি পণ্যের অর্থায়ন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক প্রক্রিয়াকে আরো সহজতর করে। আর সরকারের সুবিধা আদায়ে নুরুল কাদেরের মতো নতুন নীতির উদ্ভাবনী দক্ষতাও দেখাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে সুবিধা আদায়ের যৌক্তিকতায় সরকারের সঙ্গে দরকষাকষিতেও বেগ পেতে হয় খাতকে। অনেক সময়ই চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের কারণে ভুক্তভোগীও হতে হয়। নুরুল কাদেরের ব্যবসা শুরুর সময়কালে অনেকের মতে, একজন নুরুল কাদের ব্যবসা শুরুর পর তার সরকারি কর্মজীবনের পরিচয়েই বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে অনেক গতিশীল করতে সফলতা দেখাতে পেরেছিলেন। তখনকার ও বর্তমান কোনো সময়েই একজন নতুন উদ্যোক্তার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। এখনো রেড টেপইজমই ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। আর এ ইজম ভাঙতে কি তাহলে ব্যবসায় আরো সাবেক আমলার প্রয়োজন?

[নুরুল কাদেরের বলা কাহিনী নিয়ে ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত ‘একাত্তর আমার’ ও দেশ গ্রুপের ইনডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর রনজীত চক্রবর্তীর সহযোগিতায়]







লেখক
মো. বদরুল আলম
লেখক: সাংবাদিক
বনিক বার্তা 
সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৬

গার্মেন্টস শিল্পের কালপুরুষ নুরুল কাদের | Nurul Quader

গার্মেন্টস শিল্পের কালপুরুষ নুরুল কাদের

গত শতাব্দীর সত্তরের দশকের দ্বিতীয়ার্ধ পর্যন্ত রফতানি খাতে পোশাক শিল্পের নাম ছিল না। এ দশকেই রিয়াজ গার্মেন্টস ও জুয়েল গার্মেন্টস পোশাক শিল্পে আসে। রিয়াজ গার্মেন্টস ষাটের দশকেই পোশাক শিল্প কারখানা গড়ে তোলে, তবে তা ছিল স্থানীয় বাজারভিত্তিক। ১৯৭৭ সালে রিয়াজ গার্মেন্টস ফ্রান্সে পোশাক রফতানি শুরু করে। ১৯৭৮ সালে নুরুল কাদের, একজন সাবেক সরকারি আমলা, কোরিয়ার দাইয়ু কোম্পানির সহায়তায় পোশাক রফতানি শুরু করে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৯ সালে আরো কয়েকটি প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। তবে ১৯৮০-৮১ সালের আগ পর্যন্ত এ শিল্পের সংখ্যা ছিল হাতেগোনা। ১৯৭৭-৭৮ সালে ২২টি প্রতিষ্ঠান পোশাক রফতানি করে ৪০ হাজার ডলার আয় করে এবং এর দুই বছর পর থেকেই রফতানি আয় ও প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ক্রমেই বাড়তে থাকে।

রফতানিমুখী পোশাক শিল্প শুরু থেকেই ছিল আমদানিনির্ভর। পোশাক তৈরিতে ব্যবহূত তুলা, সুতা, কাপড়, বোতাম, জিপার থেকে শুরু করে সবকিছুই আমদানি করে আনতে হতো। বাংলাদেশে শ্রমিকরা শুধু পোশাক সেলাইয়ের কাজটি করতেন। এমনকি রফতানির আগে চূড়ান্ত পোশাক পণ্যটির পলিথিনের মোড়কও বিদেশ থেকে আমদানি করতে হতো। শিল্পের শুরুতেই সবচেয়ে বেশি মোকাবেলা করতে হয় আমদানি-সংক্রান্ত প্রতিবন্ধকতার। কারণ দেশের তত্কালীন অর্থনৈতিক অবস্থায় ছিল না প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রার পর্যাপ্ত সংরক্ষণ। রফতানিমুখী পোশাক শিল্পের অন্যতম পথিকৃত প্রতিষ্ঠান দেশ গার্মেন্টসকেও পড়তে হয় আমদানি প্রতিবন্ধকতার মধ্যে।

বার্ষিক ১৮ কোটি টাকার আমদানির প্রাতিষ্ঠানিক যোগ্যতা ছিল দেশ গার্মেন্টেসের। বৈদেশিক মুদ্রা সংকটের কারণে মাত্র ২৪ লাখ টাকার আমদানি লাইসেন্স পান প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা মোহাম্মদ নুরুল কাদের। এত প্রতিকূল পরিবেশেও দেশ গার্মেন্টসকে সচল রেখেছিলেন তিনি। চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করা সাবেক এ আমলা তখন সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে অসংখ্যবার আলোচনায় বসেন আমদানির সংকট নিরসনের আশায়। একদিন মোহাম্মদ নুরুল কাদের সাক্ষাৎ করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্কালীন গভর্নর নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তার সঙ্গেই ব্যাক টু ব্যাক এলসি পদ্ধতি প্রণয়ন নিয়ে আলোচনার শুরু।
সাবেক আমলা হিসেবেই নুরুল ইসলামের সঙ্গে ছিল পূর্বপরিচয়। তাঁকে তিনি বিদেশী ক্রেতার দেয়া মাস্টার এলসি বন্ধক রেখে এর বিপরীতে ব্যাক টু ব্যাক এলসি খুলে আমদানি করার পন্থা সম্পর্কে অবহিত করেন। পোশাক রফতানির পর ক্রেতা অর্থ পরিশোধ করলে আমদানির অর্থও পরিশোধ হয়ে যাবে। এতে করে দেশে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের সংকট দূর করা যাবে, সংরক্ষিত অপর্যাপ্ত বৈদেশিক মুদ্রার ওপর চাপ সৃষ্টি না করেই। রফতানিমুখী পোশাক কারখানার আমদানি-রফতানি কার্যক্রম ব্যাহত হবে না।

এ প্রক্রিয়া ব্যাখ্যার পর বাংলাদেশ ব্যাংক গভর্নর নুরুল ইসলাম বিষয়টি সম্ভব বলে মত দিলেন। আর লিখিত প্রস্তাব দেয়ার পরামর্শ দেন মোহাম্মদ নুরুল কাদেরকে। কিন্তু নিজে আমলা ছিলেন বলেই এ প্রক্রিয়ার দীর্ঘসূত্রতা অনুধাবন করেছিলেন মোহাম্মদ নুরুল কাদের। আর তার অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাক টু ব্যাক প্রক্রিয়াটি সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয় ও রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর অনুমোদন নিয়ে প্রণয়ন করে। এ পরিপ্রেক্ষিতে প্রায় দুই বছর দেশ গার্মেন্টসকে কাঁচামালের অভাবে বিশাল লোকসান পোহাতে হয়। যদিও তৈরি পোশাক রফতানির জন্য যথেষ্ট সংখ্যক বিদেশী ক্রেতার নিশ্চিত ঋণপত্র (এলসি) ছিল দেশ গার্মেন্টেসের কাছে।

তবে আরো সমস্যা ছিল আমদানি-নির্ভরতার কারণেই। আমদানি করা কাপড়ের জন্য শুল্ক পরিশোধ করতে হতো, কিন্তু রফতানির জন্য হওয়ায় এ শুল্ক দেয়ার পক্ষে যৌক্তিকতা দেখছিলেন না মোহাম্মদ নুরুল কাদের। পোশাক শিল্পে না থাকলেও ‘বন্ডেড ওয়্যার হাউজ’ নামের শুল্কমুক্ত আমদানি সুবিধার প্রচলন তখন ছিল। শুল্ক বিভাগ স্বীকৃত একটি নির্ধারিত স্থান বা কামরা থাকবে, যেখানে আমদানি হওয়া পণ্য মজুদ করা হবে। এর তত্ত্বাবধানে থাকবে আমদানিকারকের বেতনভুক সরকারি শুল্ক কর্মচারী। এ ব্যবস্থায় শুল্ক সুবিধার প্রচলন তখন থাকলেও পোশাক খাত তার আওতাধীন ছিল না। এ পরিপ্রেক্ষিতে আবারো সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু করেন তিনি। এক পর্যায়ে নিজস্ব প্রভাব, পরিচিতি ও কর্মদক্ষতার বিনিময়েই পোশাক খাতে বন্ডেড ওয়্যার হাউজ সুবিধা চালু করারও অনুমোদন পান মোহাম্মদ নুরুল কাদের। কিন্তু বেতনভুক্ত সরকারি কর্মচারী নিয়েও ছিল সমস্যা। কারণ কাজের সময় বন্ডেড ওয়্যার হাউজ কর্মচারীদের খুঁজে পাওয়া যেত না। এ প্রতিবন্ধকতাও দূর করতে সক্ষম হন নুরুল কাদের। তার দক্ষতার বলেই পুরোপুরি গার্মেন্টস কারখানা মালিক নিয়ন্ত্রিত বন্ডেড ওয়্যার হাউজ ব্যবস্থার প্রচলন হয়।
বলা বাহুল্য, আমলাতন্ত্রের কর্মজীবনেই মোহাম্মদ নুরুল কাদের বুঝতে পেরেছিলেন ব্যবসা-বাণিজ্যে সরকারের নীতিগত সহায়তা থাকলে অর্থনৈতিক উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করা যায়। যার বাস্তব প্রয়োগ দেখিয়েছেন আমলাতন্ত্র ছেড়ে নিজে শুরু করা ব্যবসায় সরকারি নীতিসহায়তা আদায় করে। আর এ কাজে রাজনৈতিক ও আমলা জীবনে তাঁর পরিচিতি ও প্রভাব প্রত্যক্ষ ভূমিকা রেখেছে। তার শিক্ষা ও সরকারি কর্মজীবনের তথ্য-পরিক্রমাই উদ্যোক্তা মনোভাবের শতভাগ প্রতিফলনের প্রমাণ হিসেবে দাবি রাখে; যা নিশ্চিতভাবেই শিল্পায়ন ও ব্যবসা-বাণিজ্যে কাজে লাগাতে সফল হয়েছিলেন নুরুল কাদের।

মোহাম্মদ নুরুল কাদের ১৯৩৫ সালের ৩ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। বাবা আবদুল লতিফ খানও ছিলেন সরকারি চাকুরে। ঢাকার আরমানীটোলা হাইস্কুলে তাঁর ছাত্রজীবন কাটে। ১৯৫০ সালে মেট্রিক পাস করে ভর্তি হন ঢাকা কলেজে। কলেজ পাট চুকিয়ে ১৯৫৪ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ছাত্রজীবনে যুক্ত ছিলেন সক্রিয় রাজনীতিতে।

মোহাম্মদ নুরুল কাদের ১৯৬১ সালে পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে যোগদান করেন। প্রথম চাঁদপুরের মহকুমা প্রশাসক বা এসডিও হিসেবে প্রথম কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৭০ সালে তিনি পাবনার জেলা প্রশাসক পদে যোগদান করেন।   

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ ঢাকায় অপারেশন সার্চলাইটের পাশাপাশি রাজশাহী থেকে পাবনায় ৩৫০ জন সুসজ্জিত সৈন্য সমন্বয়ে দুই কোম্পানি পাকিস্তানি সৈন্য আসে। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ নুরুল কাদের নিজস্ব পরিকল্পনা অনুয়ায়ী স্থানীয় পুলিশ, আনসার ও মুক্তিসংগ্রামী ছাত্র-জনতাকে সংগঠিত করেন। স্থানীয় পুলিশ লাইনে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ২৭ মার্চ রাত ১টার দিকে পাকিস্তানি বাহিনী পুলিশ লাইনসে আক্রমণ করলে ২১ জন পাকিস্তানি সৈন্য নিহত হয়। পুলিশ লাইনসের এ সম্মুখ যুদ্ধে বীর-দেশপ্রেমিকের ভূমিকা রাখেন পাবনার তদানীন্তন সহকারী পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম। ওই সময় থেকে ৩০ মার্চ পর্যন্ত সময়কালে রাজশাহী থেকে আগত  পাকিস্তানি বাহিনী জেলা প্রশাসকের বাসভবন, যেখানে ১১ জন পাকসেনা নিহত হয়েছিল, ১১টি স্থানে সম্মুখ যুদ্ধে সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত হয়েছিল। এর মধ্যে সাতটি যুদ্ধে নুরুল কাদের সরাসরি অংশগ্রহণ করেছিলেন।

১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর আত্মসমর্পণের পর ১৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সংস্থাপন সচিব হিসেবে তিনি মুজিবনগর থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ঢাকায় আসেন। শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর সচিবালয়ে প্রশাসনিক ক্রিয়াকর্ম আরম্ভ করেন।

১৯৭৪ সালে তিনি সরকারি চাকরি ছেড়ে ব্যবসায়ী জীবন শুরু করেন। প্রথমে ওই সময় বঙ্গোপসাগরে তেল অনুসন্ধানে নিয়োজিত একটি বিদেশী তেল কোম্পানির স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে কার্যক্রম শুরু করেন। কালক্রমে তিনি কয়েকটি বৃহৎ বিদেশী কোম্পানির স্থানীয় এজেন্সিশিপ গ্রহণ করেন। এ ব্যবসা তাঁকে প্রচুর লাভ এনে দিয়েছিল। এ সময় আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডল থেকে তৈরি পোশাক শিল্পের ধারণা লাভ করেন তিনি। দক্ষিণ কোরিয়ার দাইয়ু করপোরেশনের সঙ্গে টেকনিক্যাল ও মার্কেটিং কলাবোরেশন চুক্তি করে ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশের প্রথম প্রসেস টেকনোলজিভিত্তিক শতভাগ রফতনিমুখী তৈরি পোশাক শিল্প-কারখানা দেশ গার্মেন্টস লিমিটেড স্থাপন করে। তত্কালীন বাংলাদেশ শিল্প ঋণ সংস্থা ও ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ ঝুঁকি নিয়ে এ প্রকল্পে অর্থায়ন করে। এ প্রতিষ্ঠানের তদানীন্তন মহাব্যবস্থাপক সেকেন্দার আলী এই অর্থায়নে উদ্যোগী ভূমিকা নিয়েছিলেন। আর দাইয়ু করপোরেশনের সঙ্গে কলাবোরেশন চুক্তিটি ছিল বাংলাদেশের বেসরকারি সেক্টরে সর্বপ্রথম অনুরূপ চুক্তি।

নুরুল কাদের দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১৩০ জন কর্মীকে প্রশিক্ষণ দিয়ে রফতানিমুখী পোশাক তৈরির উত্পাদন ব্যবস্থাপনার কারিগরি জ্ঞান বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। ব্যাক টু ব্যাক এলসি পদ্ধতি চালু করে, বন্ডেড ওয়্যার হাউজিং পদ্ধতি চালু করে এবং আমেরিকার সঙ্গে দরকষাকষি করে কোটাপ্রাপ্তি নিশ্চিত করে এ শিল্পকে শক্ত ভিত্তি প্রদান করেন। কালক্রমে এ শিল্প বিকশিত হয়ে বর্তমানে বাংলাদেশের প্রায় ৮৫ শতাংশ বৈদেশিক মুদ্রা আয় এবং ৪০ লাখ কর্মসংস্থানের দাবি করছে।

পোশাক শিল্পের রফতানি আয়ের প্রায় ৬০ শতাংশ ব্যয় হয় কাপড় আমদানিতে। তাই মূল্য সংযোজন বাড়ানোর লক্ষ্যে রফতানি মানের কাপড় দেশে উত্পাদনের জন্য ১৯৮৬ সালের দিক থেকেই নুরুল কাদের কম্পোজিট টেক্সটাইল মিল স্থাপনের ধারণা নিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা করেন। নুরুল কাদের স্পষ্ট দেখতে পেয়েছিলেন যে, কোটা পদ্ধতির অবলুপ্তি ঘটলে ভারত, পাকিস্তান বা eদক্ষিণ কোরিয়া থেকে কাপড় পাওয়া দুষ্কর হবে। কারণ তখন ওইসব দেশ কাপড় রফতানি করার চেয়ে কোটার অবর্তমানে পোশাক তৈরি করে রফতানিতেই বেশি আগ্রহী হবে। এক পর্যায়ে বিশ্বব্যাংকের তাগিদে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সম্ভাব্যতা জরিপ করা হয় এবং তাতে দেশে কমপক্ষে ২৫টি কম্পোজিট টেক্সটাইল প্রকল্প স্থাপন করার সুপারিশ করা হয়েছিল বলে জানা যায়।

এসব তথ্য বিশ্লেষণে এটা খুব স্পষ্ট হয়ে ওঠে যে, আজকের বিকশিত রফতানিমুখী পোশাক শিল্পে বীজ বপনে ভূমিকা রেখেছিলেন একজন দক্ষ সাবেক আমলা। এ খাতের বর্তমান কর্ণধারদের মতে, এখনো সরকারের সুবিধা নিয়েই এগিয়ে যাচ্ছে পোশাক খাত। কিন্তু এখন পর্যন্ত মৌলিক কোনো নীতিমালার তেমন পরিবর্তন হয়নি। আবার নতুন কোনো নীতিমালার উদ্ভাবন দেখা যায়নি, যা রফতানি পণ্যের অর্থায়ন থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক প্রক্রিয়াকে আরো সহজতর করে। আর সরকারের সুবিধা আদায়ে নুরুল কাদেরের মতো নতুন নীতির উদ্ভাবনী দক্ষতাও দেখাতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। ফলে সুবিধা আদায়ের যৌক্তিকতায় সরকারের সঙ্গে দরকষাকষিতেও বেগ পেতে হয় খাতকে। অনেক সময়ই চাপিয়ে দেয়া সিদ্ধান্তের কারণে ভুক্তভোগীও হতে হয়। নুরুল কাদেরের ব্যবসা শুরুর সময়কালে অনেকের মতে, একজন নুরুল কাদের ব্যবসা শুরুর পর তার সরকারি কর্মজীবনের পরিচয়েই বাণিজ্যিক কার্যক্রমকে অনেক গতিশীল করতে সফলতা দেখাতে পেরেছিলেন। তখনকার ও বর্তমান কোনো সময়েই একজন নতুন উদ্যোক্তার পক্ষে সেটা সম্ভব নয়। এখনো রেড টেপইজমই ব্যবসা-বাণিজ্য বিকাশের অন্যতম প্রধান অন্তরায়। আর এ ইজম ভাঙতে কি তাহলে ব্যবসায় আরো সাবেক আমলার প্রয়োজন?

[নুরুল কাদেরের বলা কাহিনী নিয়ে ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত ‘একাত্তর আমার’ ও দেশ গ্রুপের ইনডিপেনডেন্ট ডিরেক্টর রনজীত চক্রবর্তীর সহযোগিতায়]







লেখক
মো. বদরুল আলম
লেখক: সাংবাদিক
বনিক বার্তা 
সেপ্টেম্বর ০৪, ২০১৬

কোন মন্তব্য নেই: