“জেনারেল ম্যানেজার” শ্রম আইনের সুবিধা পাবেন কি? - Textile Lab | Textile Learning Blog
আইনী-বিশ্লেষণঃ 

“জেনারেল ম্যানেজার” শ্রম আইনের সুবিধা পাবেন কি ?

ড. উত্তম কুমার দাস, এডভোকেটঃ

আমার আগের একাধিক লেখায় এ নিয়ে লিখেছি। তবে এই বিষয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রশ্ন পাওয়ায় আবারও লিখছি।

আমাদের দেশে বেসরকারী পর্যায়ে নিয়োগ ও চাকরীর শর্তাবলী বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর বিধানাবলী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত। এই আইনে ২০১৩ সনে কিছু সংশোধনী আনা হলেও ২০০৬ সনের মূল আইন বহাল রয়েছে। এছাড়া আইনকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করার জন্য ২০১৫ সনের ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ গ্রহণ করা হয়েছে।

এবার আসুন দেখা যাক, শ্রম আইন কেন ? 

আইনের শুরুতেই তার উত্তর রয়েছে। যে যে বিষয় শ্রম আইনের আওতাধীন তা হ’ল-

(১) শ্রমিক নিয়োগ;

(২) মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্ক;

(৩) সর্বনিম্ন মজুরীর হার নির্ধারণ;

(৪) মজুরীর পরিশোধ;

(৫) কার্যকালে দুর্ঘটনাজনিত কারণে ক্ষতিপূরণ;

(৬) ট্রেড ইউনিয়ন গঠন;

(৭) শিল্প-বিরোধ;

(৮) শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা;

(৯) কল্যাণ;

(১০) চাকরীর অবস্থা;

(১১) পরিবেশ;

(১২) শিক্ষাধীনতা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়।

কয়েকটি জায়গায় শ্রমিক শব্দটি নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে। তাই দেখা যাক শ্রমিকের সংজ্ঞা কি?

শ্রম আইনের অন্ততঃ
দু’ জায়গায় শ্রমিকের সংজ্ঞা রয়েছে। প্রথমটি ২(৬৫) ধারায়- যা শ্রমিকের সাধারণ সংজ্ঞা। দ্বিতীয়টি ১৭৫ ধারায়- যা ট্রেড ইউনিয়ন এবং শিল্প-সম্পর্ক সম্পর্কিত কাজের জন্য।

২(৬৫) ধারায় শ্রমিকের সংজ্ঞার মূল উপাদানসমূহ হ’ল-

(১) শিক্ষাধীনসহ কোন ব্যক্তি;

(২) যার চাকরীর শর্ত প্রকাশ্য বা উহ্য;

(৩) যিনি সরাসরি বা ঠিকাদারের মাধ্যমে নিযুক্ত;

(৪) যিনি অর্থের বিনিময়ে কাজ করেন;

(৫) যিনি দক্ষ, অদক্ষ, কায়িক; কারিগরি, ব্যবসা উন্নয়নমূলক অথবা কেরানীগিরির কাজ করেন।

তবে যিনি প্রধানতঃ প্রশাসনিক, তদারকি কর্মকর্তা বা ব্যবস্থাপনা দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনি শ্রমিক হবেন না বলে একই ধারায় শর্ত রয়েছে।

একই বিষয়ে, আমাদের মাননীয় সুপ্রীম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগ এবং আপীলেট বিভাগ একাধিক মামলার রায়ে ভিন্ন কথা বলেছেন। ঐ সকল সিদ্ধান্তের মোদ্দা কথা হ’ল-

(১) তত্বাবধানমূলক দায়িত্বে থাকলেই কেউ যে শ্রমিক হবেন না তা নয়।

(২) শুধুমাত্র পদবী দেখেই বলা যাবে না যে কে শ্রমিক আর কে নয়।

(৩) শুধুমাত্রও উৎপাদনমূলক কাজে যুক্ত থাকলেই কেউ শ্রমিক হবেন তা নয়; বরং নিযুক্ত হয়ে এবং পারিশ্রমিকের বিনিময়ে দক্ষ, অদক্ষ, কায়িক, কারিগরি, ব্যবসা উন্নয়নমূলক অথবা কেরানিগিরির কাজ করলেই তিনি শ্রমিক [Rupali Bank vs. Nazrul Islam Patwary, 62 DLR (AD)]

আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ড এবং এতদসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের একাধিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, তত্বাবধানমূলক কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিসহ সকলের (শ্রমিক) তার নিজ পছন্দমত সংগঠন করার এবং তার নিয়োগ ও চাকরীর শর্তাবলী সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দর-কষাকষি করার অধিকার রয়েছে।

তাহলে প্রশ্ন আসবে জেনারেল ম্যানেজারসহ যারা তত্বাবধানমূলক বা ব্যবস্থাপনামূলক কাজে নিয়োজিত তাদের অবস্থান ও অধিকার কি।

আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় তাদেরকে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেওয়া হয়নি। শ্রম আইন সেভাবেই তৈরি। তবে তাদের নিয়োগ ও চাকরীর শর্ত এবং আনুসাঙ্গিক অধিকার ও সুবিধার কি হবে?

শ্রম আইনের ৩ ধারা অনুসারে উক্ত আইনের বিধি-বিধান হ’ল নুন্যতম মানদণ্ড অর্থাৎ তার চেয়ে কম কোন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে না।

যেমন- কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক বা নিয়োগকারী তার সুবিধমত কোন শ্রমিককে তার চাকরী থেকে অব্যাহতি দিতে চাইলে ১২০ দিনের নোটিশ বা তার বদলে নোটিশ- সময়ের মজুরী দিতে হবে (২৬ ধারা)।

একইভাবে বলা যায়, একই বিধান পদবী নির্বিশেষে নিযুক্ত সকলের জন্য প্রযোজ্য। শ্রম আইন কারখানা, প্রতিষ্ঠান, শিল্প-প্রতিষ্ঠান সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ব্যাংক, বীমা সকল প্রতিষ্ঠান এর আওতায়।

আরেকটি বিষয়, শ্রম আইন কতিপয় ধরণের প্রতিষ্ঠানকে এর প্রয়োগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে [ধারা ১(৪)]। তবে প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের নিয়োগ ও চাকরীর শর্তাবলীর নুন্যতম মানদণ্ড প্রশ্নে এই অব্যাহতি কার্যকরী হবে না। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তার কোন কর্মীকে ছাঁটাই, বরখাস্ত, অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষেত্রে শ্রম আইন প্রদত্ত বিধান অপেক্ষা কম অনুকূল কিছু করলে তা আইনসিদ্ধ হবে না।

আর কোন কারখানা, প্রতিষ্ঠান বা শিল্প- প্রতিষ্ঠান কি কি অবস্থায় শ্রমিক নিয়োগ করতে পারবেন তা শ্রম আইনে বলা হয়েছে (৪ ধারা)। এর একটি শর্ত হ’ল স্থায়ী পদে অস্থায়ী নিয়োগ চলবে না। কেউ কোন পদে ছয় মাস কাজ করলেই তিনি স্থায়ী হবেন (শিক্ষানবিসকাল শেষে); আর এই ছয় মাসের হিসাব হবে ১২০ দিন ধরে (১৪ ধারা)। 

অনেকে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের কথা বললেও শ্রম আইনে তার সুযোগ সীমিত। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মূল শর্ত হ’ল তা স্বল্প সময়ের জন্য এবং নির্দিষ্ট কাজ ভিত্তিক হবে। যিনি বছরের পর বছর একই নিয়োগপত্রে ও পদে কাজ করেন তা চুক্তিভিত্তিক হয় কি করে? একমাত্র অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সম্ভব [২৭(৪) ধারা]।  আর কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শ্রম আইন অগ্যগন্য হবে।

আরেকটি বিষয়- শ্রম আইন কিন্তু শুধুমাত্র শ্রমিকের (Worker) জন্য কোন আইন নয়। খেয়াল করুন- এর নাম শ্রম (Labour) আইন। শ্রমিক (Worker) আইন নয়। শ্রম আইন শ্রমিক ও মালিক দু’পক্ষের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ, অধিকার ও দায়-দায়িত্বের বিধান দিয়েছে।

তা হলে কি দাঁড়াল?

শ্রম আইনের আওতায় পদবী নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি তার অধিকার ও সুবিধা দাবী করতে পারেন। আমাদের শ্রম আদালতগুলোতে প্রতিনিয়ত তা করাও হচ্ছে এবং প্রতিকার মিলছে।

তাই আপনার কোন সমস্যা থাকলে শ্রম আইনে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কোন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করুন।

নোটঃ এটি আইনজীবী হিসেবে লেখকের ব্যক্তিগত মতামত। এর সঙ্গে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক সংশ্লিষ্টতার কোন সম্পর্ক নেই। উল্লেখিতি বিষয়ে যে কারও ভিন্নমত ও ব্যাখা থাকা স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে একমাত্র উপযুক্ত আদালত তার উপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।

ড. উত্তম কুমার দাসঃ
এডভোকেট, সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ।
তিনি শ্রম আইনে বিশেষজ্ঞ আইনজীবী।
ই-মেইলঃ advocateudas@gmail.com


সৌজন্যঃ দি ল’ইয়ার্স,
 ই-মেইল- thelawyersbd@gmail.com,
ফোন- ০১১৪ ০৪৪৬১০।

“জেনারেল ম্যানেজার” শ্রম আইনের সুবিধা পাবেন কি?

আইনী-বিশ্লেষণঃ 

“জেনারেল ম্যানেজার” শ্রম আইনের সুবিধা পাবেন কি ?

ড. উত্তম কুমার দাস, এডভোকেটঃ

আমার আগের একাধিক লেখায় এ নিয়ে লিখেছি। তবে এই বিষয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে প্রশ্ন পাওয়ায় আবারও লিখছি।

আমাদের দেশে বেসরকারী পর্যায়ে নিয়োগ ও চাকরীর শর্তাবলী বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ এর বিধানাবলী দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত। এই আইনে ২০১৩ সনে কিছু সংশোধনী আনা হলেও ২০০৬ সনের মূল আইন বহাল রয়েছে। এছাড়া আইনকে যথাযথভাবে প্রয়োগ করার জন্য ২০১৫ সনের ১৫ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ গ্রহণ করা হয়েছে।

এবার আসুন দেখা যাক, শ্রম আইন কেন ? 

আইনের শুরুতেই তার উত্তর রয়েছে। যে যে বিষয় শ্রম আইনের আওতাধীন তা হ’ল-

(১) শ্রমিক নিয়োগ;

(২) মালিক ও শ্রমিকের মধ্যে সম্পর্ক;

(৩) সর্বনিম্ন মজুরীর হার নির্ধারণ;

(৪) মজুরীর পরিশোধ;

(৫) কার্যকালে দুর্ঘটনাজনিত কারণে ক্ষতিপূরণ;

(৬) ট্রেড ইউনিয়ন গঠন;

(৭) শিল্প-বিরোধ;

(৮) শ্রমিকের স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা;

(৯) কল্যাণ;

(১০) চাকরীর অবস্থা;

(১১) পরিবেশ;

(১২) শিক্ষাধীনতা ও সংশ্লিষ্ট বিষয়।

কয়েকটি জায়গায় শ্রমিক শব্দটি নির্দিষ্ট করে বলা হয়েছে। তাই দেখা যাক শ্রমিকের সংজ্ঞা কি?

শ্রম আইনের অন্ততঃ
দু’ জায়গায় শ্রমিকের সংজ্ঞা রয়েছে। প্রথমটি ২(৬৫) ধারায়- যা শ্রমিকের সাধারণ সংজ্ঞা। দ্বিতীয়টি ১৭৫ ধারায়- যা ট্রেড ইউনিয়ন এবং শিল্প-সম্পর্ক সম্পর্কিত কাজের জন্য।

২(৬৫) ধারায় শ্রমিকের সংজ্ঞার মূল উপাদানসমূহ হ’ল-

(১) শিক্ষাধীনসহ কোন ব্যক্তি;

(২) যার চাকরীর শর্ত প্রকাশ্য বা উহ্য;

(৩) যিনি সরাসরি বা ঠিকাদারের মাধ্যমে নিযুক্ত;

(৪) যিনি অর্থের বিনিময়ে কাজ করেন;

(৫) যিনি দক্ষ, অদক্ষ, কায়িক; কারিগরি, ব্যবসা উন্নয়নমূলক অথবা কেরানীগিরির কাজ করেন।

তবে যিনি প্রধানতঃ প্রশাসনিক, তদারকি কর্মকর্তা বা ব্যবস্থাপনা দায়িত্বপ্রাপ্ত তিনি শ্রমিক হবেন না বলে একই ধারায় শর্ত রয়েছে।

একই বিষয়ে, আমাদের মাননীয় সুপ্রীম কোর্টের হাই কোর্ট বিভাগ এবং আপীলেট বিভাগ একাধিক মামলার রায়ে ভিন্ন কথা বলেছেন। ঐ সকল সিদ্ধান্তের মোদ্দা কথা হ’ল-

(১) তত্বাবধানমূলক দায়িত্বে থাকলেই কেউ যে শ্রমিক হবেন না তা নয়।

(২) শুধুমাত্র পদবী দেখেই বলা যাবে না যে কে শ্রমিক আর কে নয়।

(৩) শুধুমাত্রও উৎপাদনমূলক কাজে যুক্ত থাকলেই কেউ শ্রমিক হবেন তা নয়; বরং নিযুক্ত হয়ে এবং পারিশ্রমিকের বিনিময়ে দক্ষ, অদক্ষ, কায়িক, কারিগরি, ব্যবসা উন্নয়নমূলক অথবা কেরানিগিরির কাজ করলেই তিনি শ্রমিক [Rupali Bank vs. Nazrul Islam Patwary, 62 DLR (AD)]

আন্তর্জাতিক শ্রম মানদণ্ড এবং এতদসংক্রান্ত বিশেষজ্ঞ কমিটি তাদের একাধিক পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, তত্বাবধানমূলক কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তিসহ সকলের (শ্রমিক) তার নিজ পছন্দমত সংগঠন করার এবং তার নিয়োগ ও চাকরীর শর্তাবলী সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে দর-কষাকষি করার অধিকার রয়েছে।

তাহলে প্রশ্ন আসবে জেনারেল ম্যানেজারসহ যারা তত্বাবধানমূলক বা ব্যবস্থাপনামূলক কাজে নিয়োজিত তাদের অবস্থান ও অধিকার কি।

আমাদের দেশের আর্থ-সামাজিক বাস্তবতায় তাদেরকে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেওয়া হয়নি। শ্রম আইন সেভাবেই তৈরি। তবে তাদের নিয়োগ ও চাকরীর শর্ত এবং আনুসাঙ্গিক অধিকার ও সুবিধার কি হবে?

শ্রম আইনের ৩ ধারা অনুসারে উক্ত আইনের বিধি-বিধান হ’ল নুন্যতম মানদণ্ড অর্থাৎ তার চেয়ে কম কোন সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যাবে না।

যেমন- কোন প্রতিষ্ঠানের মালিক বা নিয়োগকারী তার সুবিধমত কোন শ্রমিককে তার চাকরী থেকে অব্যাহতি দিতে চাইলে ১২০ দিনের নোটিশ বা তার বদলে নোটিশ- সময়ের মজুরী দিতে হবে (২৬ ধারা)।

একইভাবে বলা যায়, একই বিধান পদবী নির্বিশেষে নিযুক্ত সকলের জন্য প্রযোজ্য। শ্রম আইন কারখানা, প্রতিষ্ঠান, শিল্প-প্রতিষ্ঠান সকলের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য। ব্যাংক, বীমা সকল প্রতিষ্ঠান এর আওতায়।

আরেকটি বিষয়, শ্রম আইন কতিপয় ধরণের প্রতিষ্ঠানকে এর প্রয়োগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছে [ধারা ১(৪)]। তবে প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের নিয়োগ ও চাকরীর শর্তাবলীর নুন্যতম মানদণ্ড প্রশ্নে এই অব্যাহতি কার্যকরী হবে না। অর্থাৎ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান তার কোন কর্মীকে ছাঁটাই, বরখাস্ত, অব্যাহতি দেওয়ার ক্ষেত্রে শ্রম আইন প্রদত্ত বিধান অপেক্ষা কম অনুকূল কিছু করলে তা আইনসিদ্ধ হবে না।

আর কোন কারখানা, প্রতিষ্ঠান বা শিল্প- প্রতিষ্ঠান কি কি অবস্থায় শ্রমিক নিয়োগ করতে পারবেন তা শ্রম আইনে বলা হয়েছে (৪ ধারা)। এর একটি শর্ত হ’ল স্থায়ী পদে অস্থায়ী নিয়োগ চলবে না। কেউ কোন পদে ছয় মাস কাজ করলেই তিনি স্থায়ী হবেন (শিক্ষানবিসকাল শেষে); আর এই ছয় মাসের হিসাব হবে ১২০ দিন ধরে (১৪ ধারা)। 

অনেকে চুক্তি ভিত্তিক নিয়োগের কথা বললেও শ্রম আইনে তার সুযোগ সীমিত। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মূল শর্ত হ’ল তা স্বল্প সময়ের জন্য এবং নির্দিষ্ট কাজ ভিত্তিক হবে। যিনি বছরের পর বছর একই নিয়োগপত্রে ও পদে কাজ করেন তা চুক্তিভিত্তিক হয় কি করে? একমাত্র অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ সম্ভব [২৭(৪) ধারা]।  আর কারখানা ও প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে শ্রম আইন অগ্যগন্য হবে।

আরেকটি বিষয়- শ্রম আইন কিন্তু শুধুমাত্র শ্রমিকের (Worker) জন্য কোন আইন নয়। খেয়াল করুন- এর নাম শ্রম (Labour) আইন। শ্রমিক (Worker) আইন নয়। শ্রম আইন শ্রমিক ও মালিক দু’পক্ষের পারস্পরিক সম্পর্ক নিয়ন্ত্রণ, অধিকার ও দায়-দায়িত্বের বিধান দিয়েছে।

তা হলে কি দাঁড়াল?

শ্রম আইনের আওতায় পদবী নির্বিশেষে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তি তার অধিকার ও সুবিধা দাবী করতে পারেন। আমাদের শ্রম আদালতগুলোতে প্রতিনিয়ত তা করাও হচ্ছে এবং প্রতিকার মিলছে।

তাই আপনার কোন সমস্যা থাকলে শ্রম আইনে দক্ষ ও অভিজ্ঞ কোন আইনজীবীর সঙ্গে পরামর্শ করুন।

নোটঃ এটি আইনজীবী হিসেবে লেখকের ব্যক্তিগত মতামত। এর সঙ্গে তাঁর প্রাতিষ্ঠানিক সংশ্লিষ্টতার কোন সম্পর্ক নেই। উল্লেখিতি বিষয়ে যে কারও ভিন্নমত ও ব্যাখা থাকা স্বাভাবিক। সেক্ষেত্রে একমাত্র উপযুক্ত আদালত তার উপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত দিতে পারেন।

ড. উত্তম কুমার দাসঃ
এডভোকেট, সুপ্রীম কোর্ট অব বাংলাদেশ।
তিনি শ্রম আইনে বিশেষজ্ঞ আইনজীবী।
ই-মেইলঃ advocateudas@gmail.com


সৌজন্যঃ দি ল’ইয়ার্স,
 ই-মেইল- thelawyersbd@gmail.com,
ফোন- ০১১৪ ০৪৪৬১০।

কোন মন্তব্য নেই: