ভিসকোস রেয়ন
একটি সময় ছিল যখন সিল্ক তার গুনে মানে এবং সৌন্দর্যে অন্যন্য ছিল। সিল্কের পোষাক পড়া আভিজাত্য হিসেবে গণ্য হত। কিন্তু দাম বেশি হওয়ায় তা সকলের কাছে সহজলভ্য ছিল না, তাই তখন প্রয়োজন ছিল এমন কিছুর যা গুনে মানে এবং সৌন্দর্যে সিল্কের মত হবে আবার দামেও সাশ্রয়ী হবে।
১৮৮৫ সালে আবিষ্কার হল এমন কিছু 'ভিসকোস রেয়ন'
সমস্ত ফাইবারের মাঝে রেয়নকেই বুঝতে সবচেয়ে বেশি ধোকা খেতে হয়। এটি প্রাকৃতিক ফাইবার নয় এমনকি এটি সিনথেটিক ফাইবারও নয়। এটিকে সেমি-সিনথেটিক বলা যেতে পারে। এটি একটি ফাইবার যা রিজেনারেটিং প্রাকৃতিক ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি। যদিও এটি দেখতে কটন, সিল্ক, লিলেন কিংবা উলের মত এবং যদিও এর প্রস্তুত প্রণালী পলিয়েষ্টার এর মত, তার মানে এই নয় যে এর আচরণ ও বৈশিষ্ট্য এই সমস্ত ফাইবার সমূহের মত হবে। রেয়ন এর নিজস্ব কিছু বৈচিত্রময় বৈশিষ্ট্য রয়েছে। তবে এটি রিজেনারেট সেলুলোজ ফাইবার হওয়ায় এর গঠন অনেকটা কটনের মত। এটিকে আর্টিফেসিয়াল সিল্কও বলা হয়।
প্রায়ই 'রেয়ন' আর 'ভিসকোস' কে আলাদা করার প্রশ্নে ঘাম ঝড়াতে হয়, এ বিষয়ে কিছুটা পরিষ্কার ধারণা থাকাটা দরকার:
যদিও রেয়ন এবং ভিসকোস রেয়ন এর প্রস্তুত প্রণালী একই তবে এর কাচাঁমাল এর ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। বিভিন্ন ধরণের গাছ-পালার যেমন বাশঁ,সুগার ক্যান ইত্যাদির সেলুলোজ হতে রেয়ন তৈরি হলেও ভিসকোস রেয়ন তৈরি হয় গাছের নরম কাঠের মন্ড এবং কটন লিন্টার্স হতে।
ভিসকোস রেয়ন এর প্রস্তুত প্রণালীতে অধিক পরিমাণে কষ্টিক সোডা (NaOH) ব্যবহৃত হওয়ায় এটি অন্যান্য রেয়নের তুলনায় কম স্থায়ী।
রেগুলার কিংবা ভিসকোস রেয়ন সবচেয়ে প্রচলিত, বহুমুখী এবং সফলতম রেয়ন। এটিকে প্রাকৃতিক অথবা ম্যান-মেইড ফাইবারের সাথে একত্রিত করে বিভিন্ন ধরণের কাপড় তৈরি করা সম্ভব।
ভিসকোস রেয়ন এর কিছু অন্যন্য বৈশিষ্ট্যঃ
১. এটি একটি নরম ফাইবার।
২. এটি পোষাকের কাপড় হিসেবে বহুল ব্যবহৃত হয়।
৩. এটি দেখতে সিল্কের মত , অনুভবে কটনের মত।
৪. শোষণ ক্ষমতা ভাল হওয়ায় (কটনের থেকেও ভাল) সহজেই ডাই পার্টিকেল গ্রহণ করতে পারে এবং গাঢ় ও উজ্জ্বল কালারের কাপড়ের জন্য বেশ উপযোগী। একই সাথে পরিধানে আরামদায়ক।
৫. প্রকৃতি থেকে কাচাঁমাল আসায় এর দাম অনেক কম।
৬. ঝুলে পড়ার ক্ষমতা দারুণ এবং এর পিলিং সমস্যা নেই।
৭. এটি স্থির বিদ্যুৎ উৎপন্ন করে না।
৮. অন্যান্য সেলুলোজ ফাইবারের থেকেও ( এমনকি কটন, লিলেন) রেয়ন এর শোষণ ক্ষমতা অনেক ভাল, তাই সহজেই শরীর থেকে ঘাম শোষণ করে তা বাষ্পে পরিণত করে। আর এ জন্য সামার ফ্যাব্রিক ( Summer Fabric) হিসেবে রেয়ন বেশ উপযোগী।
৯. রেয়ন এর শক্তি শুষ্ক অবস্থায় মাঝামাঝি হলেও ভিজা অবস্থায় এটি প্রচুর পরিমাণে শক্তি হারায়।
ভিসকোস রেয়ন এর কিছু অসুবিধাঃ
১. এটিতে সহজেই ভাজঁ পড়ে।
২. যদিও রেয়ন তৈরির কাচাঁমাল প্রকৃতি থেকে আসে তবে এর প্রস্তুত প্রণালীতে প্রচুর পরিমাণে পানি এবং এনার্জি ব্যয় হয়। ইহা বাতাস ও পানি দূষণে ভূমিকা রাখে।
৩. ভিজা কিংবা অতিরিক্ত আলোর প্রভাবে এটি শক্তি হারায়। অন্যান্য সেলুলোজ ফাইবারের তুলনায় এর শক্তি কম।
৪. ওয়াশিং এ সংকোচন হওয়ার প্রবণতা আছে।
৫. ছত্রাক, এসিড এবং অধিক তাপমাত্রায় এর ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা আছে।
অন্য একদিন 'ভিসকোস রেয়ন' এর ব্যবহার নিয়ে বিশদ আলোচনা করা যাবে। আবার এটি বাড়ির কাজ হিসেবেও রাখা যেতে পারে।
সিল্কের বিকল্প হিসেবে এর আবিষ্কার হলেও এর জনপ্রিয়তাতে দিন দিন ভাটা পড়ছে পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব থাকার কারণে। আর বিকল্প হিসেবে আসছে লাইওসেল প্রসেস যা এটির তুলনায় অধিক পরিবেশ বান্ধব, কম পরিমাণ ওয়েস্ট উৎপন্ন করে। প্রযুক্তি কল্যাণে এ ধরায় নতুন নতুন ফাইবারের সাক্ষাত মিলবে এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
কার্টেসি: 'বি,টুইস্ট'
1 টি মন্তব্য:
"এর পিলিং সমস্যা নেই"
আপনার অবগতির জন্য এক দুইটা information দিলাম।
viscose এর twill weave গুলোর ক্ষেত্রে maximum সময় পিলিং সমস্যা হয় আর plain weave এর ক্ষেত্রে maximum ক্ষেত্রে ভালো হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন