LEED Certification বা গ্রীন ফেক্টরীর সার্টিফিকেশন এর প্রসেস - Textile Lab | Textile Learning Blog
বুঝে নিন সবুজ (LEED Certification-এর আদ্যোপান্ত)-১

সবুজ কারখানা বা গ্রিন ফ্যাক্টরি মোটামুটি এখন বাংলাদেশে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। গড়ে উঠছে বেশ কিছু সবুজ ভবন বা গ্রিন বিল্ডিংও। বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব গ্রিন ফ্যাক্টরি বা বিল্ডিং বলতে আমরা মূলত লীড (LEED) সার্টিফিকেশনকেই বুঝি। মজার এবং একই সাথে আশার ব্যাপার হলো ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৩৩ টি প্রজেক্ট LEED Certification প্রদানকারী সংস্থা USGBC (US Green Building Council)-এ নাম লিখিয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি বিভিন্ন সার্টিফিকেট পেয়েও গেছে। অনেক পত্রিকায় ফলাও করে সেই সব প্রজেক্টের খবর ছাপাও হয়েছে।

গতবছর LEED Certificate এর একেবারে মুল ধারনা দেবার জন্য একটা লেখা লিখেছিলাম। যারা এখনও LEED Certification সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না তারা এই লেখাটা পড়ে দেখতে পারেন।

গত এক বছরে LEED Certification সম্পর্কে আমরা অনেকটাই জেনেছি, আবার অনেক নতুন কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এখন মানুষজানতে চায় আচ্ছা LEED Certification কিসের জন্য দেয়? কি কি করতে হয়? আসলেই এই কাজ গুলো করতে কি অনেক খরচ?

আমি নিজেও যে LEED Certification নিয়ে খুব ভালো কিছু বুঝি তাও না, কিন্তু অল্প বিস্তর যাই বুঝি তাই একটু সবার সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করবো কয়েকটি কিস্তিতে।

এই লেখা গুলোতে আমি যেই যেই বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে একটা স্থাপনাকে LEED Certified করা হয় তা সহজ ভাষায় বলার চেষ্টা করবো। তো শুরু হোক পাঁচালি!

শুরুতেই বলে রাখা ভালো এখন LEED এর 2009 ভার্শনটি দিয়ে সার্টিফিকেট দিতে প্রকল্পগুলোকে USGBC তে রেজিস্টার করা হয়। এই ভার্শনটি দিয়ে আগামি ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। এই ভার্শনটিকে ভার্শন 3 ও বলা হয়। ভার্শন 3 এবং ভার্শন 4 এর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য আছে। আমি এইখানে মূলত ভার্শন 3 নিয়েই মূলত আলোচনা করবো।

ভার্শন 3 তে যেই ছয়টি ভাগে নম্বর প্রদান করা হয় তার প্রথমটা হলো টেকসই সাইট বা সাস্টেনেবল সাইট (Sustainable Site). এই ভাগে মোট নম্বর ২৬। এই ভাগের মুল উদ্দেশ্য হলো এইটা দেখা যে আপনি যেই জায়গায় আপনার প্রকল্পটি নির্মাণ করেছেন সেটা কতটা টেকসই উন্নয়নকে সমর্থন করে। সোজা কথা LEED চায় না আপনি এমন কোথাও গিয়ে একটা কারখানা বানিয়ে বসেন যেটা আসলে পরিবেশের উপর ঋণাত্মক কোন প্রভাব রাখুক বা কার্বন ফুটপ্রিন্ট বাড়াক। তো চলুন দেখি পয়েন্ট গুলো কিসে কিসে।

LEED Certification এর পয়েন্টগুলোকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। একটি অবশ্য করনীয় বা প্রি-রিকুইজিট এবং অন্যটি ঐচ্ছিক পয়েন্ট, মানে আপনি ঠিক করতে পারেন কোনটি আপনি নিবেন আপনার কোন ধরনের সার্টিফিকেটের জন্য।


Sustainable Site এর ভাগে Pre-requisite  একটি। আর তা হলো Construction Activity Pollution Control. অর্থাৎ আপনার কন্সট্রাকশন কাজ চালানোর সময় এমন ব্যাবস্থা নেয়া যাতে করে পরিবেশের ক্ষতি না হয় বা হলেও কম হয়। যেমন ধরুন আপনার কন্সট্রাকশন সাইটের গাছগুলোর চারপাশে কোন আবরণ দিয়ে ওগুলোর গোড়ার চারপাশে ঘিরে দেয়া, Sedimentation tank বানানো যাতে কন্সট্রাকশন সাইটের ব্যাবহার করা পানি পরিবেশ দূষণ না করে, Materiel Storage এবং Wastage Storage রাখা, এবং এদের হিসেব রাখা যাতে করে ট্র্যাক করা যায় কতটুকু বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এরকম আরো কিছু আছে।

ঐচ্ছিক পয়েন্ট গুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে Site Selection. বাংলা ভাষায় NOC বলি আমরা যাকে। অর্থাৎ এইখানে কোন কিছু করতে কারু কুনু বাধা নাই। এটা বাংলাদেশে কারখানা করতে গেলে এমনিতেই স্থানীয় সরকার থেকে নিতে হয়। অতএব সহজ একটি পয়েন্ট।

বাংলাদেশের প্রকল্পগুলোর জন্য এরকম আরো কয়েকটি সহজ পয়েন্ট পাবার ব্যাবস্থা আছে। যেমন প্রকল্প এলাকার আধা মাইল এলাকার মধ্যে স্কুল ফার্মেসি সেলুন বা আবাসনের মতো দশটি অত্যাবশ্যকীয় সেবা থাকতে হবে। এই একটা জায়গায় বাংলাদেশ অন্যদেশগুলো থেকে বেশি সুবিধা পায়। একই রকম আরেকটি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো কাছে ধারে BUS Stop থাকা এবং সেই রুটে পাবলিক বাসের চলাচল থাকা। যেই পয়েন্টগুলো পাওয়াও তেমন কোন বিষয় না এই দেশে।

এরকম আরেকটি পয়েন্ট পাওয়া যাবে বাইসাইকেল পারকিং আর কার পারকিং এর জন্য। সঙ্গে যদি কার পুলের ব্যাবস্থা থাকে মানে অফিসের কর্মচারীরা একটি মাইক্রবাসে করে অফিস করে যদি তাহলে আরো এক পয়েন্ট। বাংলাদেশের যেকোনো কারখানায় গেলেই দেখবেন কি পরিমান শ্রমিকেরা বাইসাইকেল চেপে আসে আর ম্যানেজমেন্ট স্টাফরা মাইক্রবাস বা বাসে চেপে আসে। অতএব বাংলাদেশের জন্য এগুলো মোটামুটি সহজে পাওয়া পয়েন্ট।

আরেকটি পয়েন্ট আছে যার নাম Brownfield Development. এই পয়েন্টের জন্য সরকার দ্বারা পরিত্যাক্ত কোন জমিতে যদি আপনি আপনার স্থাপনাটি তৈরি করেন তাহলে একটি পয়েন্ট পাবেন।

এছাড়াও Heat Island Effect আর Light Pollution Control করার জন্য রয়েছে কয়েকটি পয়েন্ট, এগুলো পাওয়াও তেমন কঠিন কিছু না। প্রকল্পে থাকতে হবে গাছপালা, বৃষ্টির পানি যাবার সুব্যাবস্থা, ল্যাম্পপোষ্ট এমনভাবে থাকতে হবে যাতে তাতে রাতে অন্য প্রাণীদের অসুবিধা না হয় বা আপনার ছাদে যাতে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে কম উত্তপ্ত করে ঘরকে এবং এরকম অল্প বিস্তর কিন্তু যথেষ্ট Effective কিছু কাজ করেই আপনি পরিবেশের উপর বেশ কিছু বিরুপ প্রভাব কমাতে পারবেন। সঙ্গে পাবেন সহজ কিছু পয়েন্ট।


মূলত LEED মোটেও চায় না আপনি পরিবেশবান্ধব হতে গিয়ে ঘাবড়ে উল্টো দিকে হাঁটা ধরেন। তাই খুব সহজ কিছু কাজ আর কিছু কমন সেন্সের প্রয়োগ দিয়েই আপনাকে সে Environmental Friendly করতে চায়।






Written By & Copyright :
সাঈদ তাসনিম মাহমুদ
Please send a mail to info@greenbudbd.com
TASNEM MAHMOOD BLOG

LEED Certification বা গ্রীন ফেক্টরীর সার্টিফিকেশন এর প্রসেস

বুঝে নিন সবুজ (LEED Certification-এর আদ্যোপান্ত)-১

সবুজ কারখানা বা গ্রিন ফ্যাক্টরি মোটামুটি এখন বাংলাদেশে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেছে। গড়ে উঠছে বেশ কিছু সবুজ ভবন বা গ্রিন বিল্ডিংও। বাংলাদেশে পরিবেশবান্ধব গ্রিন ফ্যাক্টরি বা বিল্ডিং বলতে আমরা মূলত লীড (LEED) সার্টিফিকেশনকেই বুঝি। মজার এবং একই সাথে আশার ব্যাপার হলো ইতোমধ্যে বাংলাদেশ থেকে প্রায় ১৩৩ টি প্রজেক্ট LEED Certification প্রদানকারী সংস্থা USGBC (US Green Building Council)-এ নাম লিখিয়েছে। এদের মধ্যে কয়েকটি বিভিন্ন সার্টিফিকেট পেয়েও গেছে। অনেক পত্রিকায় ফলাও করে সেই সব প্রজেক্টের খবর ছাপাও হয়েছে।

গতবছর LEED Certificate এর একেবারে মুল ধারনা দেবার জন্য একটা লেখা লিখেছিলাম। যারা এখনও LEED Certification সম্পর্কে তেমন কিছুই জানেন না তারা এই লেখাটা পড়ে দেখতে পারেন।

গত এক বছরে LEED Certification সম্পর্কে আমরা অনেকটাই জেনেছি, আবার অনেক নতুন কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। এখন মানুষজানতে চায় আচ্ছা LEED Certification কিসের জন্য দেয়? কি কি করতে হয়? আসলেই এই কাজ গুলো করতে কি অনেক খরচ?

আমি নিজেও যে LEED Certification নিয়ে খুব ভালো কিছু বুঝি তাও না, কিন্তু অল্প বিস্তর যাই বুঝি তাই একটু সবার সাথে শেয়ার করার চেষ্টা করবো কয়েকটি কিস্তিতে।

এই লেখা গুলোতে আমি যেই যেই বিষয়গুলোর উপর ভিত্তি করে একটা স্থাপনাকে LEED Certified করা হয় তা সহজ ভাষায় বলার চেষ্টা করবো। তো শুরু হোক পাঁচালি!

শুরুতেই বলে রাখা ভালো এখন LEED এর 2009 ভার্শনটি দিয়ে সার্টিফিকেট দিতে প্রকল্পগুলোকে USGBC তে রেজিস্টার করা হয়। এই ভার্শনটি দিয়ে আগামি ২০১৬ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত রেজিস্ট্রেশন করা যাবে। এই ভার্শনটিকে ভার্শন 3 ও বলা হয়। ভার্শন 3 এবং ভার্শন 4 এর মধ্যে বেশ কিছু পার্থক্য আছে। আমি এইখানে মূলত ভার্শন 3 নিয়েই মূলত আলোচনা করবো।

ভার্শন 3 তে যেই ছয়টি ভাগে নম্বর প্রদান করা হয় তার প্রথমটা হলো টেকসই সাইট বা সাস্টেনেবল সাইট (Sustainable Site). এই ভাগে মোট নম্বর ২৬। এই ভাগের মুল উদ্দেশ্য হলো এইটা দেখা যে আপনি যেই জায়গায় আপনার প্রকল্পটি নির্মাণ করেছেন সেটা কতটা টেকসই উন্নয়নকে সমর্থন করে। সোজা কথা LEED চায় না আপনি এমন কোথাও গিয়ে একটা কারখানা বানিয়ে বসেন যেটা আসলে পরিবেশের উপর ঋণাত্মক কোন প্রভাব রাখুক বা কার্বন ফুটপ্রিন্ট বাড়াক। তো চলুন দেখি পয়েন্ট গুলো কিসে কিসে।

LEED Certification এর পয়েন্টগুলোকে দুইভাগে ভাগ করা যায়। একটি অবশ্য করনীয় বা প্রি-রিকুইজিট এবং অন্যটি ঐচ্ছিক পয়েন্ট, মানে আপনি ঠিক করতে পারেন কোনটি আপনি নিবেন আপনার কোন ধরনের সার্টিফিকেটের জন্য।


Sustainable Site এর ভাগে Pre-requisite  একটি। আর তা হলো Construction Activity Pollution Control. অর্থাৎ আপনার কন্সট্রাকশন কাজ চালানোর সময় এমন ব্যাবস্থা নেয়া যাতে করে পরিবেশের ক্ষতি না হয় বা হলেও কম হয়। যেমন ধরুন আপনার কন্সট্রাকশন সাইটের গাছগুলোর চারপাশে কোন আবরণ দিয়ে ওগুলোর গোড়ার চারপাশে ঘিরে দেয়া, Sedimentation tank বানানো যাতে কন্সট্রাকশন সাইটের ব্যাবহার করা পানি পরিবেশ দূষণ না করে, Materiel Storage এবং Wastage Storage রাখা, এবং এদের হিসেব রাখা যাতে করে ট্র্যাক করা যায় কতটুকু বর্জ্য তৈরি হচ্ছে। এরকম আরো কিছু আছে।

ঐচ্ছিক পয়েন্ট গুলোর মধ্যে প্রথমেই আসে Site Selection. বাংলা ভাষায় NOC বলি আমরা যাকে। অর্থাৎ এইখানে কোন কিছু করতে কারু কুনু বাধা নাই। এটা বাংলাদেশে কারখানা করতে গেলে এমনিতেই স্থানীয় সরকার থেকে নিতে হয়। অতএব সহজ একটি পয়েন্ট।

বাংলাদেশের প্রকল্পগুলোর জন্য এরকম আরো কয়েকটি সহজ পয়েন্ট পাবার ব্যাবস্থা আছে। যেমন প্রকল্প এলাকার আধা মাইল এলাকার মধ্যে স্কুল ফার্মেসি সেলুন বা আবাসনের মতো দশটি অত্যাবশ্যকীয় সেবা থাকতে হবে। এই একটা জায়গায় বাংলাদেশ অন্যদেশগুলো থেকে বেশি সুবিধা পায়। একই রকম আরেকটি প্রয়োজনীয় উপাদান হলো কাছে ধারে BUS Stop থাকা এবং সেই রুটে পাবলিক বাসের চলাচল থাকা। যেই পয়েন্টগুলো পাওয়াও তেমন কোন বিষয় না এই দেশে।

এরকম আরেকটি পয়েন্ট পাওয়া যাবে বাইসাইকেল পারকিং আর কার পারকিং এর জন্য। সঙ্গে যদি কার পুলের ব্যাবস্থা থাকে মানে অফিসের কর্মচারীরা একটি মাইক্রবাসে করে অফিস করে যদি তাহলে আরো এক পয়েন্ট। বাংলাদেশের যেকোনো কারখানায় গেলেই দেখবেন কি পরিমান শ্রমিকেরা বাইসাইকেল চেপে আসে আর ম্যানেজমেন্ট স্টাফরা মাইক্রবাস বা বাসে চেপে আসে। অতএব বাংলাদেশের জন্য এগুলো মোটামুটি সহজে পাওয়া পয়েন্ট।

আরেকটি পয়েন্ট আছে যার নাম Brownfield Development. এই পয়েন্টের জন্য সরকার দ্বারা পরিত্যাক্ত কোন জমিতে যদি আপনি আপনার স্থাপনাটি তৈরি করেন তাহলে একটি পয়েন্ট পাবেন।

এছাড়াও Heat Island Effect আর Light Pollution Control করার জন্য রয়েছে কয়েকটি পয়েন্ট, এগুলো পাওয়াও তেমন কঠিন কিছু না। প্রকল্পে থাকতে হবে গাছপালা, বৃষ্টির পানি যাবার সুব্যাবস্থা, ল্যাম্পপোষ্ট এমনভাবে থাকতে হবে যাতে তাতে রাতে অন্য প্রাণীদের অসুবিধা না হয় বা আপনার ছাদে যাতে সূর্যের আলো প্রতিফলিত হয়ে কম উত্তপ্ত করে ঘরকে এবং এরকম অল্প বিস্তর কিন্তু যথেষ্ট Effective কিছু কাজ করেই আপনি পরিবেশের উপর বেশ কিছু বিরুপ প্রভাব কমাতে পারবেন। সঙ্গে পাবেন সহজ কিছু পয়েন্ট।


মূলত LEED মোটেও চায় না আপনি পরিবেশবান্ধব হতে গিয়ে ঘাবড়ে উল্টো দিকে হাঁটা ধরেন। তাই খুব সহজ কিছু কাজ আর কিছু কমন সেন্সের প্রয়োগ দিয়েই আপনাকে সে Environmental Friendly করতে চায়।






Written By & Copyright :
সাঈদ তাসনিম মাহমুদ
Please send a mail to info@greenbudbd.com
TASNEM MAHMOOD BLOG

কোন মন্তব্য নেই: