গ্রীন ফেক্টরি - পরিবেশ বান্ধব কারখনা | Green Factory | Green Textile | Green Garments - Textile Lab | Textile Learning Blog
গ্রীন টেক্সটাইল / গার্মেন্টস ফেক্টরি

পরিবেশ বান্ধব সবুজ কারখানায় আসলে কী ?

পরিবেশ বান্ধব সবুজ কারখানায় আসলে এমন একটি কারখানা যেখানে আন্তর্জাতিক সকল নিয়ম মেনে করা হয়। যে পরিমাণ জমির ওপর কারখানা হবে তার অর্ধেকটাই ছেড়ে দিতে হবে সবুজায়নের জন্য। সবুজ বাগান থাকবে। কারখানার চারপাশে খোলা জায়গা থাকবে। আর কারখানার ভেতরেও থাকবে খোলা জায়গা। শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ থাকবে সুন্দর। এক শ্রমিক থেকে অন্য শ্রমিকের দূরত্বও থাকবে বেশ। এছাড়া সব কিছুই অটোমেশনে হবে। মেশিনারিজ হবে অত্যাধুনিক। ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবে। থাকবে সোলার প্যানেল, এলইডি লাইট। এছাড়া পানি রি-সাইকিন হবে।


শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা : 

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। কারখানার ভেতরে আবাসন ব্যবস্থা থাকবে। শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য থাকবে বিশেষ সুবিধা। চিকিৎসা ভাতাসহ রেশনিংয়েরও ব্যবস্থা থাকবে।

সবুজ কারখানা নিয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, গ্রিন ফ্যাক্টরি দেশের অর্থনীতিতে নতুনমাত্রা যোগ করবে। এতে বিদেশি ক্রেতারা আকৃষ্ট হবেন। রপ্তানি বাড়বে কয়েকগুণ।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা স্থাপনে সাধারণ কারখানা থেকে খরচ বেশি হয়, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে তা কারখানার মালিক ও শ্রমিক উভয়ের জন্য লাভজনক। এতে শতকরা ২৪ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় হয়। আবার ৫০ শতাংশ পানির অপচয়ও রোধ হয়। এর পাশাপাশি কারখানার পরিবেশ সুন্দর হয়, এর সঙ্গে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া গেলে, নিরাপত্তা বজায় থাকলে পোশাক উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়।

গ্রিন পোশাক কারখানায় শীর্ষে বাংলাদেশ বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি সংখ্যক পরিবেশবান্ধব (গ্রিন ফ্যাক্টরি) পোশাক কারখানা রয়েছে৷ সংখ্যার হিসেবে, এ রকম ৬৭টি পোশাক কারখানা রয়েছে বাংলাদেশে৷ ভারতে এ ধরনের কারখানা রয়েছে মাত্র পাঁচটি৷ পরিবেশবান্ধব এ ধরনের কারখানার সনদ দেয় যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল 
(ইউএসজিবিসি)৷ তারা লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (এলইইডি) সনদ দেয়৷ ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সনদ পাওয়া বাংলাদেশি কারখানার সংখ্যা ৬৭৷ বাংলাদেশের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫০টি পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়৷ অন্যদিকে, ভারতে এ ধরনের কারখানা রয়েছে মাত্র পাঁচটি৷ ঢাকায় ইউএসজিবিসি-র এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপালকৃষ্ণ পি জানান, অচিরেই বাংলাদেশের আরও ২৮০টি পোশাক কারখানা এলইইডি সনদ পেতে পারে৷ বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা পরিবেশ-বান্ধব উৎপাদনে বিনিয়োগ করেছেন বলেই এই সাফল্য এসেছে৷ বৃহস্পতিবার তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবনে গ্রিন প্ল্যাটিনাম রেটেড তৈরি পোশাক কারখানাগুলোকে সনদ প্রদানের এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে গোপালকৃষ্ণ জানান, ‘যে কোনো বিবেচনায় বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পরিবেশ-বান্ধব কারখানা রয়েছে৷' এলইইডি সনদ পাওয়া ৬৭টি বাংলাদেশি কারখানার মধ্যে ১৩টি প্রথম ক্যাটাগরি, অর্থাৎ প্ল্যাটিনাম ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছে৷ বাকিগুলো স্থান পেয়েছে গোল্ড, সিলভার কিংবা সাধারণ ক্যাটাগরিতে৷ কেবল সর্বোচ্চ সংখ্যক পরিবেশ-বান্ধব কারখানাই নয়, বিশ্বের পরিবেশবান্ধব কারখানাগুলোর মধ্যে সেরাদের তালিকায়ও বাংলাদেশের অবস্থান সংহত৷ সনদপ্রাপ্ত কারখানাগুলোর শীর্ষস্থানীয় ১০টির সাতটিই বাংলাদেশে৷সেই কারখানাগুলোকেই পরিবেশবান্ধব স্বীকৃতি দেওয়া হয় যেগুলো ২৫ থেকে ৩০ ভাগ পানি ও জ্বালানি সাশ্রয় করতে সক্ষম, যেখানে আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনা কম হয় এবং যে কারখানা ভবনের স্থাপত্যকাঠামোর কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও কম সংখ্যক মানুষ হতাহত হয়৷ গোপালকৃষ্ণ জানান, ইউএসজিবিসি-তে নিবন্ধিত বাংলাদেশের ৬৫০টি কারখানা-ভবন পরিবেশবান্ধব৷ এগুলোর মধ্যে ৩০৩টি তৈরি পোশাক কারখানার বাইরে৷ সেগুলোর কোনোটি বাণিজ্যিক ভবন, কোনোটি আবার চামড়াজাত পণ্য কিংবা জুতা-স্যান্ডেল তৈরির কারখানা৷ বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতে পরিবেশবান্ধব ভবনের সংখ্যা ৩০, যেগুলোর মধ্যে কার্যকর রয়েছে মাত্র পাঁচটি ভবন৷ ভারতকে কারখানা নির্মাণে আরও পরিবেশবান্ধব হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন গোপালকৃষ্ণ৷ তিনি জানান, ‘বিশ্বজুড়ে ২০ মিলিয়ন বর্গফুটের ৯০,০০০ সবুজ-প্রকল্প ওয়াশিংটন ভিত্তিক ইউএসজিবিসি-র আওতাধীন৷’ প্ল্যাটিনাম সনদপ্রাপ্ত

সবুজ পোশাক শিল্প স্থাপনে একসঙ্গে কাজ করছে সরকার, তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও উদ্যোক্তারা। আমেরিকা থেকে ‘ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল(ইউএসজিবিসি)’ থেকে ধারণা নিয়ে দেশে গ্রিন ফ্যাক্টরি বা সবুজ কারখানা নির্মাণ করছেন উদোক্তারা। এসব কারখানা ওই কাউন্সিল থেকেই সার্টিফিকেট নিয়ে কাজ শুরু করেছে। সূত্র মতে, গ্রিন ফ্যাক্টরি করতে প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন। বিনিয়োগের এ পরিমাণ কারখানার আকার অনুযায়ী সর্বনিন্ম ৩০০ কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ দেড় হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বিজিএমইএ সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে প্রায় ২৮টি গ্রিন ফ্যাক্টরি উৎপাদনে আছে। সার্টিফিকেট পেয়েছে ২৬টি ফ্যাক্টরি। এছাড়া আরও ১৭০টি পাইপলাইনে আছে। এর মধ্যে কিছু কিছু ফ্যাক্টরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। চলতি বছরের শেষে কয়েকটি ফ্যাক্টরি উৎপাদনে যেতে পারবে। আর ২০১৮ সালের মধ্যে প্রায় ২০০টি ফ্যাক্টরি উৎপাদনে আসতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পরিবেশবান্ধব কারখানার বিচারে বিশ্বের শীর্ষ দশটির মধ্যে সেরা সাতটি গড়ে উঠেছে বাংলাদেশে।



ইউএসজিবিসি চার ধাপে সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে। প্লাটিনাম, সিলভার, গোল্ড ও অনুমোদিত। এ সার্টিফিকেট নিয়ে অন্য উদ্যোক্তারাও আস্তে আস্তে গ্রিন ফ্যাক্টরির দিকে ঝুঁকছে। ফ্যাক্টরি স্থাপন করা হচ্ছে ক্রেতা এবং ইউএসজিবিসির সব ধরনের শর্ত মেনে।

বাংলাদেশি ১৩টি কারখানা হলো –

১. রেমি হোল্ডিং লিমিটেড, 

২. তারাসিমা অ্যাপারেলস লিমিটেড, 

৩. প্লামি ফ্যাশন লিমিটেড,

৪.  ভিন্টেজ ডেনিম স্টুডিও লিমিটেড, 

৫. কলম্বিয়া ওয়াশিং প্ল্যান্ট লিমিটেড,

৬.ইকোটেক্স লিমিটেড,

৭.এনকিউ সেলসিয়াস ইউনিট টু লিমিটেড  

৮. কানিজ ফ্যাশন লিমিটেড, 

৯.জেনেসিস ওয়াশিং লিমিটেড, 

১০. জেনেসিস ফ্যাশন লিমিটেড, 

১১. এসকিউ বিডি-চায়না লিমিটেড, 

১২.এসকিউ কোল ব্ল্যাঙ্ক লিমিটেড 

১৩. এনভয় টেক্সটাইল৷



প্লামি ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তৈরি পোশাক উৎপাদক দেশগুলোর মধ্যে সবার থেকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ৷ তবে আমাদের ইতিবাচক অর্জনগুলো বিশ্ব-মিডিয়ায় তেমন গুরুত্ব পায় না৷’ রেমি হোল্ডিং লিমিটেডের মিরান আলী বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে শ্রীলঙ্কার পরিবেশবান্ধব কারখানা কথা শুনে আসছি৷ তবে মাত্র কয়েক বছর আগে আমাদের উদ্যোক্তাদের একাংশ ব্যাপারটি নিয়ে ভাবতে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত আমরা সফলতা পাই৷ এখন বিশ্বে আমাদের পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি৷’ পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে ‘ব্যাক টু ব্যাক লেটার অফ ক্রেডিট'-এর সূচনা খুবই কাজের হয়েছে৷ সেই পথ ধরেই এসেছে আজকের সাফল্য৷ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘বিশ্বের সেরা ১০টি পোশাক কারখানার ১০টিই বাংলাদেশে৷ বাংলাদেশের আরো ২৮০টি কারখানা অচিরেই গ্রিন ফ্যাক্টরির সনদ পাবে৷ এগুলো বড় ফ্যাক্টরি৷ প্রতিটি কারখানায় আড়াই থেকে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন৷


আরএমজি এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

৬৭টি পরিবেশ বান্ধব সবুজ তৈরী পোশাক কারখানা নিয়ে বিশ্বে প্রথম স্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।

৪০টি কারখানা নিয়ে এই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে ইন্দোনেশিয়া,

৩০টি কারখানা নিয়ে তৃতীয় স্থানে ইন্ডিয়া ও

১০টি কারখানা নিয়ে চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছে শ্রীলংকা।





ব্যাংকিং সুবিধা

পরিবেশবান্ধব সবুজ শিল্প স্থাপন করলে স্বল্পসুদে ২০ কোটি টাকার ঋণ

নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব অর্থায়নযোগ্য খাতের আওতা বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনর্অর্থায়ন তহবিলে নতুন করে তিনটি পণ্য অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ৪৭টিতে দাঁড়িয়েছে। এতে সবুজ শিল্প (গ্রীন ইন্ডাস্ট্রি) স্থাপনে নয় শতাংশ সুদহারে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যাবে। এ শিল্পে প্রাকৃতিক আলো, বাতাস, পানি ও জ্বালানি সাশ্রয়ী বা দক্ষ প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হয়। নয় মাসের গ্রেস পিরিয়ডে ছয় বছরের মধ্যে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রীন ব্যাংকিং এ্যান্ড সিএসআর ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া অন্য দুটি পণ্য হলো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে 'সোলার পাম্পের মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানি উত্তোলন করত পরিশোধনপূর্বক সরবরাহ প্রকল্প' এবং কারখানার কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ খাতে 'বস্ত্র ও পোশাক শিল্প কারখানায় কর্মরতদের কর্মপরিবেশ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রথমটিতে ঋণসীমা তিন কোটি টাকা এবং দ্বিতীয়টিতে এক কোটি টাকা। নতুন এ ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো গ্রাহকপর্যায়ে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ আদায় করতে পারবে। যদিও ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনর্অর্থায়ন তহবিল থেকে অর্থ প্রাপ্তিতে ৫ শতাংশ সুদ পরিশোধ করতে হয়। পরিবেশবান্ধব খাতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক দুই শ' কোটি টাকার পুনর্অর্থায়ন তহবিল গঠন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংক রেটে (৫ শতাংশ সুদে) পুনর্অর্থায়ন নিয়ে ব্যাংকগুলো প্রকল্প ভেদে গ্রাহকপর্যায়ে সর্বোচ্চ ৯ থেকে ১১ শতাংশে ঋণ বিতরণ করতে পারবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নবায়ণযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব অর্থায়নযোগ্য খাতে পুনর্অর্থায়ন তহবিলের নীতিমালায় ৯টি খাতে ৪৪টি পণ্যে পুনরায় অর্থায়ন সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এই তহবিলের আওতা বাড়িয়ে ৪৪টি পণ্যের পাশাপাশি নবায়ণযোগ্য জ্বালানি, গ্রীন ইন্ডাস্ট্রি এবং কারখানার পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ খাতে যথাক্রমে ৩ কোটি, ২০ কোটি ও ১ কোটি টাকার পুনর্অর্থায়ন তহবিলে অন্তর্ভুক্ত করা হলো। উপকারভোগীদের সমন্বয়ে গঠিত সমবায় সমিতি, যৌথ বা একক ভিত্তিতে ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি) ও এমআরএ থেকে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান সৌর প্যানেলের ক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত নবায়ণযোগ্য জ্বালানি খাতে ঋণগ্রহণ করতে পারবে। এ খাতে পণ্য হলো সোলারের মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানি উত্তোলন ও পরিশোধনপূর্বক সরবরাহ প্রকল্প।
গ্রীন ইন্ডাস্ট্রি স্থাপনের ক্ষেত্রে আরজেএসসি থেকে নিবন্ধিত একক বা যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আবেদন করতে পারবে। কারখানার পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ খাতে বিজেএমইএ, বিকেএমএইএ ও বিটিএমএ সদস্যভুক্ত তৈরি পোশাক শিল্প, নিটওয়্যার ও টেক্সটাইল শিল্প প্রতিষ্ঠান যাদের নিজস্ব কারখানা রয়েছে তাদের কারখানা নিরাপদ কর্মপরিবেশ তথা অগ্নিনির্বাপক সামগ্রী, অগ্নিপ্রতিরক্ষামূলক সামগ্রী, ছাদ ও ভূগর্তে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাম্পসহ পানি সংরক্ষণাগার নির্মাণসহ সংস্কার কাজের জন্য পুনর্অর্থায়ন সুবিধা প্রদান করা হবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে ব্যাংক রেটে (৫ শতাংশ সুদে) পুনর্অর্থায়ন দেবে, তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ সুদ হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ঋণ আদায়ের সকল দায়দায়িত্ব ঋণ বিতরণকারী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিতে হবে। প্রকল্প ঋণের ক্ষেত্রে প্রকল্প চালু হওয়ার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে পুনর্অর্থায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। অন্য সকল ঋণের ক্ষেত্রে ত্রৈমাসিক শেষে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। ব্যাংকের বিনিয়োগের ১০০ শতাংশ পুনর্অর্থায়ন দেয়া হবে আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে।

মেহেরুনের হাত ধরে সবুজ কারখানা বা গ্রীন ফেক্টরি 

 যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলরের লিড সনদে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার পুরস্কার জিতে নেয় বাংলাদেশের প্লামি ফ্যাশন লিমিটেড। সনদের মোট ১১০ নম্বরের মধ্যে ৯২ নম্বর পায় প্রতিষ্ঠানটি। পোশাক শিল্প খাতে এটি সবচেয়ে বড় সম্মান। এই সবুজ কারখানার স্থাপত্য নকশা করেছেন বাংলাদেশের স্থপতি মেহেরুন ফারজানা


পোশাক শিল্প খাতে এটিই সবচেয়ে বড় সম্মান। আর এই সবুজ কারখানার স্থাপত্য নকশার পেছনে আছেন বাংলাদেশের স্থপতি মেহেরুন ফারজানা।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর নরসিংহপুরে প্রায় সাড়ে পাঁচ একর জায়গা নিয়ে শুরু হয় প্লামি ফ্যাশন লিমিটেডের কাজ। কারখানাটির নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন স্থপতি মেহেরুন ফারজানা। তাঁর নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের নাম আর্কভিজ। প্লামি ফ্যাশন লিমিটেডের কাজের অভিজ্ঞতাটা একেবারেই নতুন ছিল মেহেরুনের কাছে। সঙ্গে ছিল প্লাটিনাম সনদ অর্জনের চ্যালেঞ্জ। তাঁর নেতৃত্বে ছয়জনের একটি দল নিয়ে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্লামি ফ্যাশনের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের মে মাসে শেষ হয় নির্মাণকাজ। কারখানার স্থাপনা থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি বিষয় যাতে পরিবেশবান্ধব হয়, এটা প্লাটিনাম সনদ জেতার পূর্বশর্ত। তাই সাড়ে পাঁচ একর জায়গার এই প্রতিষ্ঠানটিতে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল থেকেই ৬৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হয়। ফাঁকা রাখা হয় কারখানার ৫২ ভাগ জমি। দিনের আলোর ব্যবহারেই যাতে কাজ সম্পন্ন করা যায়, এভাবেই নির্মাণ করা হয়েছে ভবনের ওপরের অংশ। ‘রিসাইক্লিং’ পদ্ধতিতে করা হচ্ছে কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ভবনজুড়ে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা তো রাখা আছেই, তার পাশাপাশি আছে পুকুর। আরও আছে লাইফস্টাইল সেন্টার, যেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণকক্ষ, চিকিৎসা সহায়তাকেন্দ্র, পাশাপাশি ডে কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাও থাকছে বলে জানালেন মেহেরুন।

মেহেরুন ফারজানার ছোটবেলা কেটেছে ময়মনসিংহ শহরে। ভালোবাসতেন ছবি আঁকতে। ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ১৯৯৬ সাল থেকে এসএসসি এবং ১৯৯৮ সালে সরকারি মমিনুন্নেছা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যায়।  স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর স্থপতি হিসেবে কাজ করেন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে। সব সময় ভেতর থেকে দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন। যেখানে তাঁর নিজস্ব কল্পনা ডানা মেলে ছড়াবে সৃষ্টির গৌরব। এই ভাবনা থেকেই আর্কভিজের যাত্রা শুরু।

মেহেরুনের স্বামী কম্পিউটার প্রকৌশলী শামসুল আরেফীনের অনুপ্রেরণা ছিল অসামান্য। ‘যেহেতু এই ধরনের কাজের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাই ছিল না আমাদের, তাই আর্কভিজ দলের কাছে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি প্লামি ফ্যাশন এক স্বপ্নের বাস্তবায়ন।’ প্লামি ফ্যাশনের সফলতার পর নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও বর্তমানে সাভার, নরসিংদী আর চট্টগ্রামে সাতটি ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি’ বা সবুজ কারখানার কাজ শুরু   করেছে আর্কভিজ।

প্লামি ফ্যাশন কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক জানালেন, যেদিন রানা প্লাজা ভেঙে পড়ল, ঠিক সেই সময়ে তিনি কাঠমান্ডু যাচ্ছিলেন। যখন কাঠমান্ডু পৌঁছালেন, তখন উড়োজাহাজের এক যাত্রী জানালেন, এই মুহূর্তে দেশে থাকাটাই তাঁর সবচেয়ে বড় কাজ হতো। বিষয়টি খুব ভাবাল ফজলুল হককে। দেশে ফিরে তিনি এমন একটি কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা নেন, যেটা বিশ্বব্যাপী পাল্টে দিতে পারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। এভাবেই শুরু হয় প্লামি ফ্যাশন কারখানার কাজ। এদিকে এই ধরনের প্রকল্পে কাজের কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা  ছিল না স্থপতি মেহেরুন ফারজানার, তাই প্রথম দিকে একটু দ্বিধান্বিতই ছিলেন ফজলুল হক। তবে ফজলুল হকই জানালেন, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি নির্মাণে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে হয়তো গৎবাঁধা নির্মাণেই স্থান পেত প্লামি ফ্যাশন। আর এই কাজ না করার অভিজ্ঞতাই মেহেরুনকে একটি বিশ্ব মানের প্রকল্প নির্মাণে সহায়তা করেছে।




ভালো নেই গ্রীন ফ্যাক্টরির উদ্যোক্তারা

ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ে ৩৯ বিঘা জমির ওপর পরিবেশবান্ধব  গ্রিন কারখানা স্থাপন করেছে একেএইচ ইকো অ্যাপারেলস। ৪ লাখ ৮০ হাজার বর্গফুটের কারখানাটিতে রয়েছে শ্রমিকদের জন্য আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় কারখানাটির কার্বন নিঃসরণ কম। পানি-বিদ্যুতের দক্ষ ব্যবহার করে পরিচালিত হচ্ছে কারখানাটি। তবে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। কোম্পানির প্রচলিত কারখানায় যে মুনাফা, গ্রিন কারখানায় হচ্ছে তার ১০ ভাগের ১ ভাগ।

একেএইচ ইকো অ্যাপারেলসের মতো দেশের পরিবেশবান্ধব আরেকটি কারখানা প্লামি ফ্যাশনস। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর নরসিংপুরে সাড়ে পাঁচ একর জমির ওপর প্ল্যামি ফ্যাশনসের এ কারখানা। বিশ্বের প্রথম পরিবেশবান্ধব নিট পোশাক কারখানার স্বীকৃতিও প্লামি ফ্যাশনসের। যদিও প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসা করতে না পারার কথা বলছে প্লামি ফ্যাশনস কর্তৃপক্ষও।

প্লামি ফ্যাশনসের উদ্যোক্তা ফজলুল হক। নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক এ সভাপতি বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা একটি খারাপ সময়ে পরিবেশবান্ধব গ্রিন কারখানা গড়ে তোলা শুরু করেছি। আমার একার কথা বলছি না, সবারই প্রত্যাশা ছিল বড়। কারখানাগুলো ব্যবসা একেবারে খারাপ করছে বলব না, তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। এর একটি বড় কারণ বৈশ্বিক বাজারের শ্লথগতি। সার্বিকভাবে বাজারের অবস্থা খারাপ থাকলে গ্রিন হোক আর যা-ই হোক, ব্যবসা ভালো হওয়ার কথা নয়।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যমতে, সর্বোচ্চ পরিবেশবান্ধব হিসেবে লিড প্লাটিনাম স্বীকৃতি পেয়েছে মোট ১৩টি কারখানা। আরো ৬৭টি কারখানা এ স্বীকৃতির অপেক্ষায় আছে। গ্রিন হিসেবে গড়ে উঠছে আরো ২০০টির মতো কারখানা। একেএইচ ইকো অ্যাপারেলস ও প্লামি ফ্যাশনসের মতোই বাকি গ্রিন কারখানার উদ্যোক্তারাও বলছেন, ব্যবসার প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় পরিবেশবান্ধব স্বীকৃতি কাজে আসছে না। ব্যবসায় ভালো করতে পারছে না বেশির ভাগ গ্রিন কারখানা।


গ্রিন কারখানায় বিনিয়োগের সময় ক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্যের ভালো দাম পাওয়ার আশা করেছিলেন উদ্যোক্তারা। গ্রিন কারখানা স্থাপনের পর স্বীকৃতি আদায়ে তাদেরকে যে পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে, রিটার্নটা সে অনুপাতে হচ্ছে না। তাই শুধু মুনাফার অংক বিবেচনায় নিয়ে যারা গ্রিন উদ্যোগ নিয়েছেন, তাদের হতাশ হতে হচ্ছে।
একেএইচ গ্রুপের ডিএমডি আবুল কাশেম বলেন, গ্রিন কারখানার যেসব মানদণ্ড, তার সবই আমরা পূরণ করেছি। কিন্তু ক্রেতারা পণ্যের মূল্য দিচ্ছেন না। দু-তিন বছর ধরে ব্যবসা নেই বললেই চলে। গ্রিন কারখানা করে  অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ আমাদের হয়নি। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার আগে একেএইচ গ্রুপ ১০ কোটি টাকা মুনাফা করলেও এখন করছে ১ কোটি টাকা।
গ্রিন কারখানার উদ্যোক্তারা বলছেন, একটি সাধারণ কারখানা করতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়, গ্রিন কারখানায় তার চেয়ে ১৫-২০ শতাংশ বেশি করতে হচ্ছে। অতিরিক্ত এ বিনিয়োগের রিটার্ন পেতে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়তি ক্রয়াদেশ প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ব্যাংকঋণের যৌক্তিক সুদহার ও কর সুবিধাও প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু তা না হওয়ায় গ্রিন কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ ধরে রাখতে সরকারি প্রণোদনার বিকল্প নেই।

গ্রিন কারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়ায় আছে ওয়েল গ্রুপ। গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, রাতারাতি কেউ গ্রিন কারখানা করতে চাইলে তাকে নিরুৎসাহিত করা উচিত। বরং ধাপে ধাপে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। কারণ আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর গ্রিন কারখানা নেই। তারা এখন কম মূল্যে পণ্য সরবরাহ করছে। ক্রেতারাও তাদের পেছনে ছুটছে। আর আমাদের গ্রিন কারখানার উদ্যোক্তাদের ক্রেতারা শুধু বাহবা দিচ্ছে।


গ্রিন কারখানা করেও ক্রেতাদের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতে না পারার জন্য মালিকদের ব্যর্থতাকেও দায়ী করছেন শিল্প বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ক্রেতারা কম দামে পণ্য কিনতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। পণ্যের মূল্য নিয়ে সমঝোতায় মালিকদের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। দরকষাকষির দক্ষতা কাজে লাগাতে না পারায় এই মুহূর্তে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। তবে দীর্ঘমেয়াদে এ বিনিয়োগের সুফল আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, স্বল্পমেয়াদে না হলেও দীর্ঘমেয়াদে এ বিনিয়োগের সুফল পাওয়া যাবে। গ্রিন হওয়ার পরও হয়তো ভালো মূল্য বা বেশি ক্রয়াদেশ আসছে না। কিন্তু এ কারখানাই ভবিষ্যতে ভালো ব্যবসা দেবে উদ্যোক্তাদের। তাত্ক্ষণিক হতাশা থেকে কোনো শিল্পোদ্যোক্তার নিরুৎসাহিত হলে চলবে না। কারণ গ্রিন না হলে তাদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে না।

এখন পর্যন্ত লিড গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ১৩টি কারখানা। কারখানাগুলো হলো— রেমি হোল্ডিংস, তারাসিমা অ্যাপারেলস, প্লামি ফ্যাশনস, ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও, কলাম্বিয়া ওয়াশিং প্লান্ট, ইকোটেক্স, এসকিউ সেলসিয়াস ইউনিট-২, কানিজ ফ্যাশনস, জেনেসিস ওয়াশিং, জেনেসিস ফ্যাশনস, এসকিউ বিরিকিনা, এসকিউ কোলব্লাংক ও এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেড। এসব গ্রিন কারখানা গড়ে তুলতে ব্যাংকঋণের শরণাপন্ন হয়েছেন উদ্যোক্তারা। গ্রিন কারখানাগুলোর ব্যবসা যে ভালো যাচ্ছে না, তা বলছেন ব্যাংকাররাও।

গ্রিন কারখানা স্থাপনে বিনিয়োগ আছে, এমন একটি ব্যাংকের একজন শীর্ষ নির্বাহী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেকগুলো প্রকল্পেই ব্যাংক দেনা বেড়েছে। দেনা বেড়ে যাওয়া ব্যবসা ভালো না হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে।

একাধিক গ্রিন কারখানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতানুগতিক পদ্ধতির একটি কারখানাকে সক্ষমতা অনুযায়ী এক লাখ পিস টি-শার্টের ক্রয়াদেশ ধরতে অনেক বেগ পেতে হতো। একই সক্ষমতার একটি গ্রিন কারখানা ওই পরিমাণ ক্রয়াদেশ নিশ্চিত করতে পারছে। তবে পণ্যের বাড়তি কোনো মূল্য পাচ্ছে না। আবার চাহিদা কম থাকায় অতিরিক্ত ক্রয়াদেশও ধরা সম্ভব হচ্ছে না।
তার পরও খাতটিকে টেকসই করতে এ ধরনের কারখানা স্থাপন অব্যাহত রাখতে হবে বলে মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, গ্রিন কারখানাগুলো ব্যবসা ভালো করছে বলব না, কারণ বৈশ্বিক বাজারেই এখন চাহিদা কম। একেবারেই ব্যবসা করছে না এটা বলা যাবে না। তবে বিনিয়োগ অনুযায়ী হচ্ছে না। গ্রিন কারখানাগুলো যে সুনাম অর্জন করছে, ভবিষ্যৎ ব্যবসায় তা কাজে লাগবে।



প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেড

জ্বালানির কম ব্যবহার ও পরিবেশগত উচ্চ মান রক্ষা করে কারখানা গড়ে তুললে ইউএসজিবিসির (ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল) লিড সনদ পাওয়া যায়। লিড সনদ হলো 'লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন'। এ পর্যন্ত পৃথিবীর মোটে চারটি পোশাক কারখানা প্লাটিনাম লিড পেয়েছে, দুটিই বাংলাদেশে। উপরন্তু প্লামি পেতে যাচ্ছে সর্বোচ্চ নম্বর। লিড সনদের মোট নম্বর ১১০। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ নম্বর উঠেছে ৯০। প্লামি আশা করছে, তারা পাবে ৯২।

প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেড পোশাক তৈরির কারখানা। নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে চার কিলোমিটার পেরোলে কাশীপুর ইউনিয়নের উত্তর নরসিংপুর। গেদ্দের বাজারের কাছে কারখানাটি। সাদামাটা গেট পেরোলে বাম পাশে দেখা যায় বাইসাইকেল রাখার ছাউনি। ছাউনির সামনেই গোসলখানা। শ্রমিকরা সাইকেল চালিয়ে এলে ঘেমে যায়, তখন এই গোসলখানা কাজে লাগে। আরো কিছুটা পথ গেলে মূল কারখানার সামনে একটা প্রাকৃতিক লেক। ডান পাশে কর্মকর্তাদের কার্যালয়। কার্যালয়ের ভেতরে যতটা সম্ভব সবুজ রাখা হয়েছে। প্লামির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হকের দেখা পেতে একটু সময় লাগল। তিনি কারখানাটি ঘুরিয়ে দেখাতে দেখাতে বিস্তারিত জানালেন। মোট ছয় একর জমির ওপর এ কারখানা। গত বছরের এপ্রিলে নির্মাণকাজ শুরু হয়। অবকাঠামো তৈরি হয়ে গেছে, এখন চলছে সাজানো-গোছানোর কাজ। বললেন, 'আমরা ৫২ শতাংশ খোলা জায়গা রেখেছি। এটি পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরির অন্যতম শর্ত। দোতলা ভবনটি ৫৮ হাজার বর্গফুটের। ইস্পাতের তৈরি। ৯০ শতাংশ নির্মাণ উপকরণ দেশীয়। ভবনটির তিন পাশে লম্বা বারান্দা। আলো-বাতাস চলাচল সুবিধার জন্য আছে ২৪৭টি কুলার ও ৬০টি একজস্টার। তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। ওঠানামার সিঁড়ি পাঁচটি হলেও বের হওয়ার দরজা ১১টি। যেন দুর্ঘটনা ঘটলে সহজেই শ্রমিকরা কারখানা ত্যাগ করতে পারে।' ফজলুল হক জানালেন, কারখানার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। কারখানার মাসিক উৎপাদন ক্ষমতা ৯ লাখ ২০ হাজার পিস পোশাক। ভবনের ওপরতলায় কাজ চলবে দিনের আলোতে, এতে সাশ্রয় হবে প্রায় ৭০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ। কারখানায় বসানো হয়েছে সর্বশেষ প্রযুক্তির সেলাই মেশিন যা বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। এক হাজার ২০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। ভবনটিকে ঘিরে রয়েছে বড় বড় পাইপ। বৃষ্টির পানি ভবনের ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে জমা হবে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংকিতে। এই পানি ব্যবহৃত হবে বাথরুমের ফ্ল্যাশিং ও অগ্নিনির্বাপণ কাজে। ইউএসজিবিসির পর্যবেক্ষণে থাকে-কত কম বিদ্যুৎ খরচ করা হয় এবং কত কম পানি খরচ করা হয়। সব মিলিয়ে পরিবেশ কত কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

লিড শর্তপূরণে প্লামি

বিদেশি ক্রেতারা এবং দেশি শ্রমিকরা বাংলাদেশের পোশাক কারখানার পরিবেশ নিয়ে নানা অভিযোগ তোলে। দুর্ঘটনার পেছনে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ত্রুটিই প্রধান কারণ। সেদিক থেকে প্লামি ফ্যাশন নমুনাই বটে। ইউএসজিবিসির সনদ পেতে একটি প্রকল্পকে ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে পণ্য উৎপাদন পর্যন্ত সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ফজলুল হকের দাবি, তাঁরা ইউএসজিবিসির নিয়ম-কানুন শুরু থেকেই মেনে চলছেন। তিনি বলেন, 'লিড সনদের ১১০ নম্বরের মধ্যে ১২ নম্বর-কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ওপর হুমকি তৈরি না করার জন্য। যেমন ধরুন বাংলাদেশে যদি সোনারগাঁর পানাম নগরে ফ্যাক্টরি করা হয় এবং ভবনগুলোর ওপর কোনো হুমকি না তৈরি হয় তবে পাবেন ১২। এ ১২ নম্বর প্লামির আওতার বাইরে। বাকি থাকছে ৯৮। এর মধ্যে প্লাটিনাম পাওয়ার জন্য দরকার ৮০ নম্বর। আমরা পেতে যাচ্ছি ৯২। এটি ওয়ার্ল্ড রেকর্ড। সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে পৃথিবীর প্রথম প্লাটিনাম সার্টিফিকেটধারী কারখানা হতে যাচ্ছে আমাদের প্লামি ফ্যাশন লিমিটেড।' তিনি আরো বলেন, 'লিড প্লাটিনামের শর্ত হচ্ছে এমন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হবে, যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। ইট, বালি, সিমেন্ট এগুলো রি-সাইকেলড 'র' মেটেরিয়াল হতে হবে। আমরা সেগুলো করেছি। এমনকি সব উপকরণ কারখানার সবচেয়ে কাছের প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করেছি। এতে পরিবহনের জ্বালানি খরচও কম হয়েছে। তাদের শর্ত অনুযায়ী নির্মাণ উপকরণের ৯০ শতাংশই দেশীয় ব্যবহার করেছি। এ ছাড়া প্লাটিনাম পাওয়ার অন্যতম মূল শর্ত হলো ৫০০ বর্গমিটারের মধ্যে শ্রমিকদের থাকার জায়গা বাসস্থান, স্কুল, বাজার, বাস বা টেম্পো স্ট্যান্ড থাকতে হবে। কারণ দূরে হলেই শ্রমিকদের কারখানায় আসতে গাড়ির প্রয়োজন হবে। এতে জ্বালানি খরচের পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ হবে। এ ছাড়া আমাদের রয়েছে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল-মোট বিদ্যুতের ১৩ শতাংশ এখান থেকে।' মূল কারখানা ভবনের সামনেই লাগানো হয়েছে দেশীয় গাছপালা। আছে প্রাকৃতিক লেক ও ফোয়ারা। ফোয়ারার আরেক পাশে আছে অত্যাধুনিক গুদাম ঘর। শ্রমিকদের গুদামে মাথায় করে বস্তা নিতে হবে না, লিফটে করে বস্তা উঠবে, নামানোর সময় স্লাইডে ছেড়ে দেবে। ৩৩ হাজার বর্গফুটের এই গুদামটি তিন তলাবিশিষ্ট।

বিশ্বসেরা ২ পোশাক কারখানা কারখানার মোট বিদ্যুতের ১৩ শতাংশ আসবে এই সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল থেকে

পরিবেশবান্ধব কারখানা শ্রমিকবান্ধবও

সব মিলিয়ে প্লামিতে দুই হাজার লোকের কাজের সুযোগ হবে। কারখানার বাইরে বিশাল জায়গাজুড়ে রয়েছে শ্রমিকদের জন্য দুই তলাবিশিষ্ট লাইফস্টাইল সেন্টার। এখানে শ্রমিকদের জন্য আছে ডাইনিং ও শিশুদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার। ফলে মা-শ্রমিকরা বাড়িতে রেখে আসা শিশুর জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না। আছে চিকিৎসাকেন্দ্রও। লাইফস্টাইল বিল্ডিংয়ের ওপরের তলায় নামাজঘর ও প্রশিক্ষণ কক্ষ। একসঙ্গে ২০০ শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে। শ্রমিকের বেতন-ভাতা সম্পর্কে ফজলুল হক বলেন, 'আমাদের এই এলাকায় যত গার্মেন্ট আছে এবং প্রচলিত যে বেতন কাঠামো রয়েছে, তার চেয়ে বেশি। শ্রমিকদের জন্য ডাইনিং ফ্যাসিলিটি দিয়েছি-যেটা বাংলাদেশের অনেক ফ্যাক্টরিতেই নেই। একটা বিনোদনকক্ষ আছে, সেটা এখনো চালু করিনি, দ্রুতই চালু করব, টেলিভিশনসহ বেশ কিছু খেলার সামগ্রী থাকবে-মোটকথা ক্লাবের মতো থাকবে, শ্রমিকরা টিভি দেখবে, ক্যারম বোর্ড খেলবে, লুডু খেলবে।'

ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও

১১০ নম্বরের মধ্যে ভিনটেজ ডেনিম পেয়েছে ৯০। ২০১২ সালে ইউএসজিবিসি কারখানাটিকে প্লাটিনাম সনদ দেয়। বাংলাদেশের এবা গ্রুপের এ কারখানা ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় (ইপিজেডে)। ৯.২ একর জমির ওপর গাছগাছালি ঘেরা ভিনটেজ ডেনিম। ১৯টি প্লটে চার লাখ ৭১ হাজার বর্গফুটের মধ্যে দুই লাখ ৯৮ হাজার বর্গফুটজুড়ে নির্মিত স্টিল কাঠামোর ভবন। ৩০ শতাংশ জায়গা বিনোদন, খেলার মাঠ, চলাচলের করিডর ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য ছেড়ে দেওয়া। সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে গড়ে তোলা কারখানাটিতে স্থায়ী বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার বা ১৪০ কোটি টাকা।


কারখানার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রীলঙ্কান দুমিন্দা মালগালা শুরু থেকেই সচেতন ছিলেন। তিনি ঝামেলামুক্ত জমি খুঁজে বের করেছেন। চাইছিলেন যেন নির্মাণের ৩০ শতাংশ উপকরণ স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায়। ঈশ্বরদী ইপিজেড কর্তৃপক্ষ তাঁর চাহিদা পূরণে এগিয়ে আসে। এরপর ইউএসজিসিবির পরামর্শকের তত্ত্বাবধানে ২০১০ সালে এটি যাত্রা শুরু করে।

একতলা কারখানা ভবনটির নকশা এমনভাবে করা হয়, যেন দিনের বেলায় শতভাগ সূর্যের আলো ব্যবহার করা যায়। স্টিলের কাঠামোর ভবনটির ছাদ তাপ শোষণ না করে বিকিরণ ঘটায়। ছাদের কোথাও কোথাও আলো প্রবেশের জন্য স্বচ্ছ উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে কারখানার ভেতরভাগ অপেক্ষাকৃত শীতল। এ ছাড়া বিদ্যুৎসাশ্রয়ী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ব্যবহার কারখানার ভেতরে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা বজায় রাখে। কারখানার দেয়ালেও বড় বড় কাচের জানালা রয়েছে। এখানে স্থাপন করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সোলার প্যানেল। যার মাধ্যমে বছরে প্রায় দেড় লাখ কিলো ভোল্ট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এই বিদ্যুৎ ইনভেন্টরের মাধ্যমে নিজেদের গ্রিডে যোগ করা যায়। ১৩ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে সোলার প্যানেল থেকে। ভবন ধসার শঙ্কা নেই, আগুন লাগলে শ্রমিকদের বের হওয়ার পথও উন্মুক্ত।

প্রতিটি সেলাই মেশিনে আছে একটি ছোট এলইডি টেক্সট বাল্ব। যেটি শুধু মেশিনের সুঁইয়ের ওপর আলো ফেলে। কারখানাটির বর্জ্য শোধনের জন্য যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে প্রতি ঘণ্টায় ৭০ হাজার লিটার পানি পরিশোধন করা যায়। কারখানাটি পানি বিশুদ্ধ করার জন্য সর্বোচ্চ মান অনুসরণ করে। প্রতিষ্ঠানটি নানাভাবে ৫৩ শতাংশ পানি সাশ্রয় করে।
কারখানার দেয়ালে অর্গানিক রং ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে সব জায়গা থেকেই সবুজ দেখার সুযোগ আছে শ্রমিকদের।

প্লাটিনাম নম্বরপ্রাপ্তি
জমির ভৌগোলিক অবস্থানে ২৬-এর মধ্যে ২৩, পানির পর্যাপ্ততা দশে দশ, বিদ্যুৎপ্রাপ্তির নিশ্চয়তায় ৩৫-এ ২৮, নির্মাণসামগ্রীকে ১৪-এর মধ্যে ৬, অভ্যন্তরীণ পরিবেশগত অবস্থা ১৫-এর মধ্যে ১৩, অতি সাম্প্রতিক উদ্ভাবিত যন্ত্রের ব্যবহারে ৬-এ ৬, এলাকাভিত্তিক প্রাধ্যান্যতা ৪-এ ৪। কারখানাটি ৪৬ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে, ৫৩ শতাংশ পানি। কারখানার বর্জ্য নিজ খরচে নিরাপদ স্থানে ফেলার ব্যবস্থা রয়েছে।


উৎপাদন কার্যক্রম
এখানে দুই হাজার ৫৬৬ জন শ্রমিক। ৮৫ শতাংশই নারী। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজের সময়। দুই ঘণ্টা ওভারটাইম করার সুযোগ আছে। প্রতিদিন ২০ হাজার পিস পণ্য উৎপাদন হয়। বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ছয় লাখ পিস। ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিওর প্রধান গ্রাহক আমেরিকার ঈগল, বেস্টসেলার, চিবো, জুল, প্রমোদ ইত্যাদি। ঈশ্বরদীর সাহাপুরের নারী শ্রমিক নিপা বলেন, 'তিন বছর ধরে এখানে কাজ করছি। পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা ভালো। আগে অন্য কারখানায় কাজ করেছি, কিন্তু সেগুলোর পরিবেশ অত ভালো নয়। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যেতাম। প্রতিটি কারখানা এ রকম পরিবেশবান্ধব হওয়া খুবই জরুরি। এতে শ্রমিক ও পরিবেশ ভালো থাকে; বিদ্যুৎ, পানিও সাশ্রয় হয়।'

শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি ও সুযোগ-সুবিধা

কারখানাটির বেশির ভাগ শ্রমিক আশপাশের এলাকার। শ্রমিকরা মাসিক চুক্তির পরিবহনে কারখানায় আসে। তাদের মজুরি দেওয়া হয় ইপিজেডের ঘোষিত নীতিমালা অনুযায়ী। একজন অপারেটর মাসে সাত থেকে আট হাজার টাকা আয় করে। কিছু সঞ্চয়ও করতে পারে। কারণ শ্রমিকরা নিজের বাড়িতে থাকে বলে বাসা ভাড়ার প্রয়োজন হয় না। নিজের জমির ধান, বাড়ির সবজি, পুকুরের মাছ খেয়ে তাদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। কারখানাটিতে নিয়মিত কাজ করলে শ্রমিকরা ৪০০ টাকা হাজিরা বোনাস পায়। ১১ দিনের জায়গায় শ্রমিকদের বছরে ১৫ দিন উৎসব ছুটি দেওয়া হয়। অসুস্থ থাকলেও পূর্ণ বেতন দেওয়া হয়।

গ্রীন ফেক্টরি - পরিবেশ বান্ধব কারখনা | Green Factory | Green Textile | Green Garments

গ্রীন টেক্সটাইল / গার্মেন্টস ফেক্টরি

পরিবেশ বান্ধব সবুজ কারখানায় আসলে কী ?

পরিবেশ বান্ধব সবুজ কারখানায় আসলে এমন একটি কারখানা যেখানে আন্তর্জাতিক সকল নিয়ম মেনে করা হয়। যে পরিমাণ জমির ওপর কারখানা হবে তার অর্ধেকটাই ছেড়ে দিতে হবে সবুজায়নের জন্য। সবুজ বাগান থাকবে। কারখানার চারপাশে খোলা জায়গা থাকবে। আর কারখানার ভেতরেও থাকবে খোলা জায়গা। শ্রমিকদের কাজের পরিবেশ থাকবে সুন্দর। এক শ্রমিক থেকে অন্য শ্রমিকের দূরত্বও থাকবে বেশ। এছাড়া সব কিছুই অটোমেশনে হবে। মেশিনারিজ হবে অত্যাধুনিক। ৭০ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী হবে। থাকবে সোলার প্যানেল, এলইডি লাইট। এছাড়া পানি রি-সাইকিন হবে।


শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা : 

আন্তর্জাতিক নিয়ম অনুযায়ী শ্রমিকরা সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা পাবেন। কারখানার ভেতরে আবাসন ব্যবস্থা থাকবে। শ্রমিকদের যাতায়াতের জন্য থাকবে বিশেষ সুবিধা। চিকিৎসা ভাতাসহ রেশনিংয়েরও ব্যবস্থা থাকবে।

সবুজ কারখানা নিয়ে তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান জানান, গ্রিন ফ্যাক্টরি দেশের অর্থনীতিতে নতুনমাত্রা যোগ করবে। এতে বিদেশি ক্রেতারা আকৃষ্ট হবেন। রপ্তানি বাড়বে কয়েকগুণ।

পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেন, পরিবেশবান্ধব সবুজ কারখানা স্থাপনে সাধারণ কারখানা থেকে খরচ বেশি হয়, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদে তা কারখানার মালিক ও শ্রমিক উভয়ের জন্য লাভজনক। এতে শতকরা ২৪ শতাংশ জ্বালানি সাশ্রয় হয়। আবার ৫০ শতাংশ পানির অপচয়ও রোধ হয়। এর পাশাপাশি কারখানার পরিবেশ সুন্দর হয়, এর সঙ্গে শ্রমিকদের স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া গেলে, নিরাপত্তা বজায় থাকলে পোশাক উৎপাদনও বৃদ্ধি পায়।

গ্রিন পোশাক কারখানায় শীর্ষে বাংলাদেশ বিশ্বের যে কোনো দেশের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি সংখ্যক পরিবেশবান্ধব (গ্রিন ফ্যাক্টরি) পোশাক কারখানা রয়েছে৷ সংখ্যার হিসেবে, এ রকম ৬৭টি পোশাক কারখানা রয়েছে বাংলাদেশে৷ ভারতে এ ধরনের কারখানা রয়েছে মাত্র পাঁচটি৷ পরিবেশবান্ধব এ ধরনের কারখানার সনদ দেয় যুক্তরাষ্ট্রের গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল 
(ইউএসজিবিসি)৷ তারা লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ডিজাইন (এলইইডি) সনদ দেয়৷ ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই সনদ পাওয়া বাংলাদেশি কারখানার সংখ্যা ৬৭৷ বাংলাদেশের পর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংখ্যক ৫০টি পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে ইন্দোনেশিয়ায়৷ অন্যদিকে, ভারতে এ ধরনের কারখানা রয়েছে মাত্র পাঁচটি৷ ঢাকায় ইউএসজিবিসি-র এশিয়া প্রশান্ত মহাসাগর ও মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোপালকৃষ্ণ পি জানান, অচিরেই বাংলাদেশের আরও ২৮০টি পোশাক কারখানা এলইইডি সনদ পেতে পারে৷ বিশ্বমানের পণ্য উৎপাদনে বাংলাদেশের উদ্যোক্তারা পরিবেশ-বান্ধব উৎপাদনে বিনিয়োগ করেছেন বলেই এই সাফল্য এসেছে৷ বৃহস্পতিবার তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ ভবনে গ্রিন প্ল্যাটিনাম রেটেড তৈরি পোশাক কারখানাগুলোকে সনদ প্রদানের এক অনুষ্ঠানের ফাঁকে গোপালকৃষ্ণ জানান, ‘যে কোনো বিবেচনায় বাংলাদেশে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সংখ্যক পরিবেশ-বান্ধব কারখানা রয়েছে৷' এলইইডি সনদ পাওয়া ৬৭টি বাংলাদেশি কারখানার মধ্যে ১৩টি প্রথম ক্যাটাগরি, অর্থাৎ প্ল্যাটিনাম ক্যাটাগরিতে স্থান পেয়েছে৷ বাকিগুলো স্থান পেয়েছে গোল্ড, সিলভার কিংবা সাধারণ ক্যাটাগরিতে৷ কেবল সর্বোচ্চ সংখ্যক পরিবেশ-বান্ধব কারখানাই নয়, বিশ্বের পরিবেশবান্ধব কারখানাগুলোর মধ্যে সেরাদের তালিকায়ও বাংলাদেশের অবস্থান সংহত৷ সনদপ্রাপ্ত কারখানাগুলোর শীর্ষস্থানীয় ১০টির সাতটিই বাংলাদেশে৷সেই কারখানাগুলোকেই পরিবেশবান্ধব স্বীকৃতি দেওয়া হয় যেগুলো ২৫ থেকে ৩০ ভাগ পানি ও জ্বালানি সাশ্রয় করতে সক্ষম, যেখানে আগুন লাগার মতো দুর্ঘটনা কম হয় এবং যে কারখানা ভবনের স্থাপত্যকাঠামোর কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটলেও কম সংখ্যক মানুষ হতাহত হয়৷ গোপালকৃষ্ণ জানান, ইউএসজিবিসি-তে নিবন্ধিত বাংলাদেশের ৬৫০টি কারখানা-ভবন পরিবেশবান্ধব৷ এগুলোর মধ্যে ৩০৩টি তৈরি পোশাক কারখানার বাইরে৷ সেগুলোর কোনোটি বাণিজ্যিক ভবন, কোনোটি আবার চামড়াজাত পণ্য কিংবা জুতা-স্যান্ডেল তৈরির কারখানা৷ বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দ্বী ভারতে পরিবেশবান্ধব ভবনের সংখ্যা ৩০, যেগুলোর মধ্যে কার্যকর রয়েছে মাত্র পাঁচটি ভবন৷ ভারতকে কারখানা নির্মাণে আরও পরিবেশবান্ধব হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন গোপালকৃষ্ণ৷ তিনি জানান, ‘বিশ্বজুড়ে ২০ মিলিয়ন বর্গফুটের ৯০,০০০ সবুজ-প্রকল্প ওয়াশিংটন ভিত্তিক ইউএসজিবিসি-র আওতাধীন৷’ প্ল্যাটিনাম সনদপ্রাপ্ত

সবুজ পোশাক শিল্প স্থাপনে একসঙ্গে কাজ করছে সরকার, তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমএ ও উদ্যোক্তারা। আমেরিকা থেকে ‘ইউনাইটেড স্টেটস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল(ইউএসজিবিসি)’ থেকে ধারণা নিয়ে দেশে গ্রিন ফ্যাক্টরি বা সবুজ কারখানা নির্মাণ করছেন উদোক্তারা। এসব কারখানা ওই কাউন্সিল থেকেই সার্টিফিকেট নিয়ে কাজ শুরু করেছে। সূত্র মতে, গ্রিন ফ্যাক্টরি করতে প্রচুর বিনিয়োগের প্রয়োজন। বিনিয়োগের এ পরিমাণ কারখানার আকার অনুযায়ী সর্বনিন্ম ৩০০ কোটি টাকা থেকে সর্বোচ্চ দেড় হাজার কোটি টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

বিজিএমইএ সূত্র জানায়, দেশে বর্তমানে প্রায় ২৮টি গ্রিন ফ্যাক্টরি উৎপাদনে আছে। সার্টিফিকেট পেয়েছে ২৬টি ফ্যাক্টরি। এছাড়া আরও ১৭০টি পাইপলাইনে আছে। এর মধ্যে কিছু কিছু ফ্যাক্টরির কাজ প্রায় শেষের দিকে। চলতি বছরের শেষে কয়েকটি ফ্যাক্টরি উৎপাদনে যেতে পারবে। আর ২০১৮ সালের মধ্যে প্রায় ২০০টি ফ্যাক্টরি উৎপাদনে আসতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে পরিবেশবান্ধব কারখানার বিচারে বিশ্বের শীর্ষ দশটির মধ্যে সেরা সাতটি গড়ে উঠেছে বাংলাদেশে।



ইউএসজিবিসি চার ধাপে সার্টিফিকেট দিয়ে থাকে। প্লাটিনাম, সিলভার, গোল্ড ও অনুমোদিত। এ সার্টিফিকেট নিয়ে অন্য উদ্যোক্তারাও আস্তে আস্তে গ্রিন ফ্যাক্টরির দিকে ঝুঁকছে। ফ্যাক্টরি স্থাপন করা হচ্ছে ক্রেতা এবং ইউএসজিবিসির সব ধরনের শর্ত মেনে।

বাংলাদেশি ১৩টি কারখানা হলো –

১. রেমি হোল্ডিং লিমিটেড, 

২. তারাসিমা অ্যাপারেলস লিমিটেড, 

৩. প্লামি ফ্যাশন লিমিটেড,

৪.  ভিন্টেজ ডেনিম স্টুডিও লিমিটেড, 

৫. কলম্বিয়া ওয়াশিং প্ল্যান্ট লিমিটেড,

৬.ইকোটেক্স লিমিটেড,

৭.এনকিউ সেলসিয়াস ইউনিট টু লিমিটেড  

৮. কানিজ ফ্যাশন লিমিটেড, 

৯.জেনেসিস ওয়াশিং লিমিটেড, 

১০. জেনেসিস ফ্যাশন লিমিটেড, 

১১. এসকিউ বিডি-চায়না লিমিটেড, 

১২.এসকিউ কোল ব্ল্যাঙ্ক লিমিটেড 

১৩. এনভয় টেক্সটাইল৷



প্লামি ফ্যাশন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হক দ্য ডেইলি স্টারকে বলেন, ‘তৈরি পোশাক উৎপাদক দেশগুলোর মধ্যে সবার থেকে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ৷ তবে আমাদের ইতিবাচক অর্জনগুলো বিশ্ব-মিডিয়ায় তেমন গুরুত্ব পায় না৷’ রেমি হোল্ডিং লিমিটেডের মিরান আলী বলেন, ‘বছরের পর বছর ধরে শ্রীলঙ্কার পরিবেশবান্ধব কারখানা কথা শুনে আসছি৷ তবে মাত্র কয়েক বছর আগে আমাদের উদ্যোক্তাদের একাংশ ব্যাপারটি নিয়ে ভাবতে শুরু করে এবং শেষ পর্যন্ত আমরা সফলতা পাই৷ এখন বিশ্বে আমাদের পরিবেশবান্ধব কারখানার সংখ্যাই সবচেয়ে বেশি৷’ পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, ‘প্রাথমিক পর্যায়ে ‘ব্যাক টু ব্যাক লেটার অফ ক্রেডিট'-এর সূচনা খুবই কাজের হয়েছে৷ সেই পথ ধরেই এসেছে আজকের সাফল্য৷ বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ-র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘বিশ্বের সেরা ১০টি পোশাক কারখানার ১০টিই বাংলাদেশে৷ বাংলাদেশের আরো ২৮০টি কারখানা অচিরেই গ্রিন ফ্যাক্টরির সনদ পাবে৷ এগুলো বড় ফ্যাক্টরি৷ প্রতিটি কারখানায় আড়াই থেকে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন৷


আরএমজি এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ

৬৭টি পরিবেশ বান্ধব সবুজ তৈরী পোশাক কারখানা নিয়ে বিশ্বে প্রথম স্থানে অবস্থান করছে বাংলাদেশ।

৪০টি কারখানা নিয়ে এই তালিকার দ্বিতীয় স্থানে আছে ইন্দোনেশিয়া,

৩০টি কারখানা নিয়ে তৃতীয় স্থানে ইন্ডিয়া ও

১০টি কারখানা নিয়ে চতুর্থ স্থানে অবস্থান করছে শ্রীলংকা।





ব্যাংকিং সুবিধা

পরিবেশবান্ধব সবুজ শিল্প স্থাপন করলে স্বল্পসুদে ২০ কোটি টাকার ঋণ

নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব অর্থায়নযোগ্য খাতের আওতা বাড়ানো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনর্অর্থায়ন তহবিলে নতুন করে তিনটি পণ্য অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ৪৭টিতে দাঁড়িয়েছে। এতে সবুজ শিল্প (গ্রীন ইন্ডাস্ট্রি) স্থাপনে নয় শতাংশ সুদহারে ২০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ পাওয়া যাবে। এ শিল্পে প্রাকৃতিক আলো, বাতাস, পানি ও জ্বালানি সাশ্রয়ী বা দক্ষ প্রযুক্তি ব্যবহারের পাশাপাশি শ্রমিকদের কর্মপরিবেশ সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হয়। নয় মাসের গ্রেস পিরিয়ডে ছয় বছরের মধ্যে ঋণের সুদাসল পরিশোধ করতে হয়। মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গ্রীন ব্যাংকিং এ্যান্ড সিএসআর ডিপার্টমেন্ট এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করেছে।

নতুন অন্তর্ভুক্ত হওয়া অন্য দুটি পণ্য হলো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে 'সোলার পাম্পের মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানি উত্তোলন করত পরিশোধনপূর্বক সরবরাহ প্রকল্প' এবং কারখানার কর্মপরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ খাতে 'বস্ত্র ও পোশাক শিল্প কারখানায় কর্মরতদের কর্মপরিবেশ এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। প্রথমটিতে ঋণসীমা তিন কোটি টাকা এবং দ্বিতীয়টিতে এক কোটি টাকা। নতুন এ ঋণ বিতরণে ব্যাংকগুলো গ্রাহকপর্যায়ে সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সুদ আদায় করতে পারবে। যদিও ব্যাংকগুলোকে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পুনর্অর্থায়ন তহবিল থেকে অর্থ প্রাপ্তিতে ৫ শতাংশ সুদ পরিশোধ করতে হয়। পরিবেশবান্ধব খাতে বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক দুই শ' কোটি টাকার পুনর্অর্থায়ন তহবিল গঠন করে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছ থেকে ব্যাংক রেটে (৫ শতাংশ সুদে) পুনর্অর্থায়ন নিয়ে ব্যাংকগুলো প্রকল্প ভেদে গ্রাহকপর্যায়ে সর্বোচ্চ ৯ থেকে ১১ শতাংশে ঋণ বিতরণ করতে পারবে।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, নবায়ণযোগ্য জ্বালানি ও পরিবেশবান্ধব অর্থায়নযোগ্য খাতে পুনর্অর্থায়ন তহবিলের নীতিমালায় ৯টি খাতে ৪৪টি পণ্যে পুনরায় অর্থায়ন সুবিধা প্রদান করা হচ্ছে। এই তহবিলের আওতা বাড়িয়ে ৪৪টি পণ্যের পাশাপাশি নবায়ণযোগ্য জ্বালানি, গ্রীন ইন্ডাস্ট্রি এবং কারখানার পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ খাতে যথাক্রমে ৩ কোটি, ২০ কোটি ও ১ কোটি টাকার পুনর্অর্থায়ন তহবিলে অন্তর্ভুক্ত করা হলো। উপকারভোগীদের সমন্বয়ে গঠিত সমবায় সমিতি, যৌথ বা একক ভিত্তিতে ব্যবহারকারী প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ এ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি) ও এমআরএ থেকে নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান সৌর প্যানেলের ক্ষমতা অনুযায়ী সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা পর্যন্ত নবায়ণযোগ্য জ্বালানি খাতে ঋণগ্রহণ করতে পারবে। এ খাতে পণ্য হলো সোলারের মাধ্যমে ভূ-উপরিস্থ পানি উত্তোলন ও পরিশোধনপূর্বক সরবরাহ প্রকল্প।
গ্রীন ইন্ডাস্ট্রি স্থাপনের ক্ষেত্রে আরজেএসসি থেকে নিবন্ধিত একক বা যৌথ মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান আবেদন করতে পারবে। কারখানার পরিবেশ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ খাতে বিজেএমইএ, বিকেএমএইএ ও বিটিএমএ সদস্যভুক্ত তৈরি পোশাক শিল্প, নিটওয়্যার ও টেক্সটাইল শিল্প প্রতিষ্ঠান যাদের নিজস্ব কারখানা রয়েছে তাদের কারখানা নিরাপদ কর্মপরিবেশ তথা অগ্নিনির্বাপক সামগ্রী, অগ্নিপ্রতিরক্ষামূলক সামগ্রী, ছাদ ও ভূগর্তে প্রয়োজনীয় সংখ্যক পাম্পসহ পানি সংরক্ষণাগার নির্মাণসহ সংস্কার কাজের জন্য পুনর্অর্থায়ন সুবিধা প্রদান করা হবে।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকগুলোকে ব্যাংক রেটে (৫ শতাংশ সুদে) পুনর্অর্থায়ন দেবে, তবে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর জন্য খাতভিত্তিক সর্বোচ্চ সুদ হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে। ঋণ আদায়ের সকল দায়দায়িত্ব ঋণ বিতরণকারী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহকে নিতে হবে। প্রকল্প ঋণের ক্ষেত্রে প্রকল্প চালু হওয়ার পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের বিতরণ করা ঋণের বিপরীতে পুনর্অর্থায়নের জন্য আবেদন করতে হবে। অন্য সকল ঋণের ক্ষেত্রে ত্রৈমাসিক শেষে পরবর্তী ১৫ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। ব্যাংকের বিনিয়োগের ১০০ শতাংশ পুনর্অর্থায়ন দেয়া হবে আগে এলে আগে পাবেন ভিত্তিতে।

মেহেরুনের হাত ধরে সবুজ কারখানা বা গ্রীন ফেক্টরি 

 যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিলরের লিড সনদে বিশ্বের সবচেয়ে বড় পরিবেশবান্ধব পোশাক কারখানার পুরস্কার জিতে নেয় বাংলাদেশের প্লামি ফ্যাশন লিমিটেড। সনদের মোট ১১০ নম্বরের মধ্যে ৯২ নম্বর পায় প্রতিষ্ঠানটি। পোশাক শিল্প খাতে এটি সবচেয়ে বড় সম্মান। এই সবুজ কারখানার স্থাপত্য নকশা করেছেন বাংলাদেশের স্থপতি মেহেরুন ফারজানা


পোশাক শিল্প খাতে এটিই সবচেয়ে বড় সম্মান। আর এই সবুজ কারখানার স্থাপত্য নকশার পেছনে আছেন বাংলাদেশের স্থপতি মেহেরুন ফারজানা।

নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর নরসিংহপুরে প্রায় সাড়ে পাঁচ একর জায়গা নিয়ে শুরু হয় প্লামি ফ্যাশন লিমিটেডের কাজ। কারখানাটির নির্মাণের দায়িত্বে ছিলেন স্থপতি মেহেরুন ফারজানা। তাঁর নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের নাম আর্কভিজ। প্লামি ফ্যাশন লিমিটেডের কাজের অভিজ্ঞতাটা একেবারেই নতুন ছিল মেহেরুনের কাছে। সঙ্গে ছিল প্লাটিনাম সনদ অর্জনের চ্যালেঞ্জ। তাঁর নেতৃত্বে ছয়জনের একটি দল নিয়ে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্লামি ফ্যাশনের কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের মে মাসে শেষ হয় নির্মাণকাজ। কারখানার স্থাপনা থেকে শুরু করে উৎপাদন পর্যন্ত প্রতিটি বিষয় যাতে পরিবেশবান্ধব হয়, এটা প্লাটিনাম সনদ জেতার পূর্বশর্ত। তাই সাড়ে পাঁচ একর জায়গার এই প্রতিষ্ঠানটিতে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল থেকেই ৬৫ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা রাখা হয়। ফাঁকা রাখা হয় কারখানার ৫২ ভাগ জমি। দিনের আলোর ব্যবহারেই যাতে কাজ সম্পন্ন করা যায়, এভাবেই নির্মাণ করা হয়েছে ভবনের ওপরের অংশ। ‘রিসাইক্লিং’ পদ্ধতিতে করা হচ্ছে কারখানার বর্জ্য ব্যবস্থাপনা। ভবনজুড়ে অগ্নিনির্বাপণব্যবস্থা তো রাখা আছেই, তার পাশাপাশি আছে পুকুর। আরও আছে লাইফস্টাইল সেন্টার, যেখানে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণকক্ষ, চিকিৎসা সহায়তাকেন্দ্র, পাশাপাশি ডে কেয়ার সেন্টারের ব্যবস্থাও থাকছে বলে জানালেন মেহেরুন।

মেহেরুন ফারজানার ছোটবেলা কেটেছে ময়মনসিংহ শহরে। ভালোবাসতেন ছবি আঁকতে। ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ১৯৯৬ সাল থেকে এসএসসি এবং ১৯৯৮ সালে সরকারি মমিনুন্নেছা কলেজ থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন। এরপর ভর্তি হন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে স্থাপত্যবিদ্যায়।  স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর স্থপতি হিসেবে কাজ করেন বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে। সব সময় ভেতর থেকে দেশের জন্য কিছু করার তাগিদ অনুভব করেন। যেখানে তাঁর নিজস্ব কল্পনা ডানা মেলে ছড়াবে সৃষ্টির গৌরব। এই ভাবনা থেকেই আর্কভিজের যাত্রা শুরু।

মেহেরুনের স্বামী কম্পিউটার প্রকৌশলী শামসুল আরেফীনের অনুপ্রেরণা ছিল অসামান্য। ‘যেহেতু এই ধরনের কাজের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতাই ছিল না আমাদের, তাই আর্কভিজ দলের কাছে চ্যালেঞ্জের পাশাপাশি প্লামি ফ্যাশন এক স্বপ্নের বাস্তবায়ন।’ প্লামি ফ্যাশনের সফলতার পর নারায়ণগঞ্জ ছাড়াও বর্তমানে সাভার, নরসিংদী আর চট্টগ্রামে সাতটি ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি’ বা সবুজ কারখানার কাজ শুরু   করেছে আর্কভিজ।

প্লামি ফ্যাশন কারখানাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক জানালেন, যেদিন রানা প্লাজা ভেঙে পড়ল, ঠিক সেই সময়ে তিনি কাঠমান্ডু যাচ্ছিলেন। যখন কাঠমান্ডু পৌঁছালেন, তখন উড়োজাহাজের এক যাত্রী জানালেন, এই মুহূর্তে দেশে থাকাটাই তাঁর সবচেয়ে বড় কাজ হতো। বিষয়টি খুব ভাবাল ফজলুল হককে। দেশে ফিরে তিনি এমন একটি কারখানা নির্মাণের পরিকল্পনা নেন, যেটা বিশ্বব্যাপী পাল্টে দিতে পারে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি। এভাবেই শুরু হয় প্লামি ফ্যাশন কারখানার কাজ। এদিকে এই ধরনের প্রকল্পে কাজের কোনো বাস্তব অভিজ্ঞতা  ছিল না স্থপতি মেহেরুন ফারজানার, তাই প্রথম দিকে একটু দ্বিধান্বিতই ছিলেন ফজলুল হক। তবে ফজলুল হকই জানালেন, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি নির্মাণে পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে হয়তো গৎবাঁধা নির্মাণেই স্থান পেত প্লামি ফ্যাশন। আর এই কাজ না করার অভিজ্ঞতাই মেহেরুনকে একটি বিশ্ব মানের প্রকল্প নির্মাণে সহায়তা করেছে।




ভালো নেই গ্রীন ফ্যাক্টরির উদ্যোক্তারা

ঢাকার অদূরে ধামরাইয়ে ৩৯ বিঘা জমির ওপর পরিবেশবান্ধব  গ্রিন কারখানা স্থাপন করেছে একেএইচ ইকো অ্যাপারেলস। ৪ লাখ ৮০ হাজার বর্গফুটের কারখানাটিতে রয়েছে শ্রমিকদের জন্য আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা। পরিবেশবান্ধব হওয়ায় কারখানাটির কার্বন নিঃসরণ কম। পানি-বিদ্যুতের দক্ষ ব্যবহার করে পরিচালিত হচ্ছে কারখানাটি। তবে ব্যবসা ভালো যাচ্ছে না। কোম্পানির প্রচলিত কারখানায় যে মুনাফা, গ্রিন কারখানায় হচ্ছে তার ১০ ভাগের ১ ভাগ।

একেএইচ ইকো অ্যাপারেলসের মতো দেশের পরিবেশবান্ধব আরেকটি কারখানা প্লামি ফ্যাশনস। নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের উত্তর নরসিংপুরে সাড়ে পাঁচ একর জমির ওপর প্ল্যামি ফ্যাশনসের এ কারখানা। বিশ্বের প্রথম পরিবেশবান্ধব নিট পোশাক কারখানার স্বীকৃতিও প্লামি ফ্যাশনসের। যদিও প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবসা করতে না পারার কথা বলছে প্লামি ফ্যাশনস কর্তৃপক্ষও।

প্লামি ফ্যাশনসের উদ্যোক্তা ফজলুল হক। নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক এ সভাপতি বণিক বার্তাকে বলেন, আমরা একটি খারাপ সময়ে পরিবেশবান্ধব গ্রিন কারখানা গড়ে তোলা শুরু করেছি। আমার একার কথা বলছি না, সবারই প্রত্যাশা ছিল বড়। কারখানাগুলো ব্যবসা একেবারে খারাপ করছে বলব না, তবে প্রত্যাশা অনুযায়ী হচ্ছে না। এর একটি বড় কারণ বৈশ্বিক বাজারের শ্লথগতি। সার্বিকভাবে বাজারের অবস্থা খারাপ থাকলে গ্রিন হোক আর যা-ই হোক, ব্যবসা ভালো হওয়ার কথা নয়।

তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর তথ্যমতে, সর্বোচ্চ পরিবেশবান্ধব হিসেবে লিড প্লাটিনাম স্বীকৃতি পেয়েছে মোট ১৩টি কারখানা। আরো ৬৭টি কারখানা এ স্বীকৃতির অপেক্ষায় আছে। গ্রিন হিসেবে গড়ে উঠছে আরো ২০০টির মতো কারখানা। একেএইচ ইকো অ্যাপারেলস ও প্লামি ফ্যাশনসের মতোই বাকি গ্রিন কারখানার উদ্যোক্তারাও বলছেন, ব্যবসার প্রবৃদ্ধি বিবেচনায় পরিবেশবান্ধব স্বীকৃতি কাজে আসছে না। ব্যবসায় ভালো করতে পারছে না বেশির ভাগ গ্রিন কারখানা।


গ্রিন কারখানায় বিনিয়োগের সময় ক্রেতাদের কাছ থেকে পণ্যের ভালো দাম পাওয়ার আশা করেছিলেন উদ্যোক্তারা। গ্রিন কারখানা স্থাপনের পর স্বীকৃতি আদায়ে তাদেরকে যে পরিমাণ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে হয়েছে, রিটার্নটা সে অনুপাতে হচ্ছে না। তাই শুধু মুনাফার অংক বিবেচনায় নিয়ে যারা গ্রিন উদ্যোগ নিয়েছেন, তাদের হতাশ হতে হচ্ছে।
একেএইচ গ্রুপের ডিএমডি আবুল কাশেম বলেন, গ্রিন কারখানার যেসব মানদণ্ড, তার সবই আমরা পূরণ করেছি। কিন্তু ক্রেতারা পণ্যের মূল্য দিচ্ছেন না। দু-তিন বছর ধরে ব্যবসা নেই বললেই চলে। গ্রিন কারখানা করে  অতিরিক্ত মুনাফার সুযোগ আমাদের হয়নি। রানা প্লাজা দুর্ঘটনার আগে একেএইচ গ্রুপ ১০ কোটি টাকা মুনাফা করলেও এখন করছে ১ কোটি টাকা।
গ্রিন কারখানার উদ্যোক্তারা বলছেন, একটি সাধারণ কারখানা করতে যে পরিমাণ বিনিয়োগ প্রয়োজন হয়, গ্রিন কারখানায় তার চেয়ে ১৫-২০ শতাংশ বেশি করতে হচ্ছে। অতিরিক্ত এ বিনিয়োগের রিটার্ন পেতে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি বাড়তি ক্রয়াদেশ প্রয়োজন। সেই সঙ্গে ব্যাংকঋণের যৌক্তিক সুদহার ও কর সুবিধাও প্রয়োজন পড়ে। কিন্তু তা না হওয়ায় গ্রিন কারখানা স্থাপনের উদ্যোগ ধরে রাখতে সরকারি প্রণোদনার বিকল্প নেই।

গ্রিন কারখানা স্থাপনের প্রক্রিয়ায় আছে ওয়েল গ্রুপ। গ্রুপটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নুরুল ইসলাম বণিক বার্তাকে বলেন, রাতারাতি কেউ গ্রিন কারখানা করতে চাইলে তাকে নিরুৎসাহিত করা উচিত। বরং ধাপে ধাপে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে মনোযোগী হওয়া প্রয়োজন। কারণ আমাদের প্রতিযোগী দেশগুলোর গ্রিন কারখানা নেই। তারা এখন কম মূল্যে পণ্য সরবরাহ করছে। ক্রেতারাও তাদের পেছনে ছুটছে। আর আমাদের গ্রিন কারখানার উদ্যোক্তাদের ক্রেতারা শুধু বাহবা দিচ্ছে।


গ্রিন কারখানা করেও ক্রেতাদের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করতে না পারার জন্য মালিকদের ব্যর্থতাকেও দায়ী করছেন শিল্প বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, ক্রেতারা কম দামে পণ্য কিনতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। পণ্যের মূল্য নিয়ে সমঝোতায় মালিকদের দক্ষতার ঘাটতি রয়েছে। দরকষাকষির দক্ষতা কাজে লাগাতে না পারায় এই মুহূর্তে কাঙ্ক্ষিত মুনাফা পাচ্ছেন না উদ্যোক্তারা। তবে দীর্ঘমেয়াদে এ বিনিয়োগের সুফল আসবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, স্বল্পমেয়াদে না হলেও দীর্ঘমেয়াদে এ বিনিয়োগের সুফল পাওয়া যাবে। গ্রিন হওয়ার পরও হয়তো ভালো মূল্য বা বেশি ক্রয়াদেশ আসছে না। কিন্তু এ কারখানাই ভবিষ্যতে ভালো ব্যবসা দেবে উদ্যোক্তাদের। তাত্ক্ষণিক হতাশা থেকে কোনো শিল্পোদ্যোক্তার নিরুৎসাহিত হলে চলবে না। কারণ গ্রিন না হলে তাদের ভবিষ্যৎ ভালো হবে না।

এখন পর্যন্ত লিড গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে ১৩টি কারখানা। কারখানাগুলো হলো— রেমি হোল্ডিংস, তারাসিমা অ্যাপারেলস, প্লামি ফ্যাশনস, ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও, কলাম্বিয়া ওয়াশিং প্লান্ট, ইকোটেক্স, এসকিউ সেলসিয়াস ইউনিট-২, কানিজ ফ্যাশনস, জেনেসিস ওয়াশিং, জেনেসিস ফ্যাশনস, এসকিউ বিরিকিনা, এসকিউ কোলব্লাংক ও এনভয় টেক্সটাইলস লিমিটেড। এসব গ্রিন কারখানা গড়ে তুলতে ব্যাংকঋণের শরণাপন্ন হয়েছেন উদ্যোক্তারা। গ্রিন কারখানাগুলোর ব্যবসা যে ভালো যাচ্ছে না, তা বলছেন ব্যাংকাররাও।

গ্রিন কারখানা স্থাপনে বিনিয়োগ আছে, এমন একটি ব্যাংকের একজন শীর্ষ নির্বাহী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, অনেকগুলো প্রকল্পেই ব্যাংক দেনা বেড়েছে। দেনা বেড়ে যাওয়া ব্যবসা ভালো না হওয়ার ইঙ্গিত বহন করে।

একাধিক গ্রিন কারখানায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতানুগতিক পদ্ধতির একটি কারখানাকে সক্ষমতা অনুযায়ী এক লাখ পিস টি-শার্টের ক্রয়াদেশ ধরতে অনেক বেগ পেতে হতো। একই সক্ষমতার একটি গ্রিন কারখানা ওই পরিমাণ ক্রয়াদেশ নিশ্চিত করতে পারছে। তবে পণ্যের বাড়তি কোনো মূল্য পাচ্ছে না। আবার চাহিদা কম থাকায় অতিরিক্ত ক্রয়াদেশও ধরা সম্ভব হচ্ছে না।
তার পরও খাতটিকে টেকসই করতে এ ধরনের কারখানা স্থাপন অব্যাহত রাখতে হবে বলে মনে করেন বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। তিনি বলেন, গ্রিন কারখানাগুলো ব্যবসা ভালো করছে বলব না, কারণ বৈশ্বিক বাজারেই এখন চাহিদা কম। একেবারেই ব্যবসা করছে না এটা বলা যাবে না। তবে বিনিয়োগ অনুযায়ী হচ্ছে না। গ্রিন কারখানাগুলো যে সুনাম অর্জন করছে, ভবিষ্যৎ ব্যবসায় তা কাজে লাগবে।



প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেড

জ্বালানির কম ব্যবহার ও পরিবেশগত উচ্চ মান রক্ষা করে কারখানা গড়ে তুললে ইউএসজিবিসির (ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল) লিড সনদ পাওয়া যায়। লিড সনদ হলো 'লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন'। এ পর্যন্ত পৃথিবীর মোটে চারটি পোশাক কারখানা প্লাটিনাম লিড পেয়েছে, দুটিই বাংলাদেশে। উপরন্তু প্লামি পেতে যাচ্ছে সর্বোচ্চ নম্বর। লিড সনদের মোট নম্বর ১১০। এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ নম্বর উঠেছে ৯০। প্লামি আশা করছে, তারা পাবে ৯২।

প্লামি ফ্যাশনস লিমিটেড পোশাক তৈরির কারখানা। নারায়ণগঞ্জ শহর থেকে চার কিলোমিটার পেরোলে কাশীপুর ইউনিয়নের উত্তর নরসিংপুর। গেদ্দের বাজারের কাছে কারখানাটি। সাদামাটা গেট পেরোলে বাম পাশে দেখা যায় বাইসাইকেল রাখার ছাউনি। ছাউনির সামনেই গোসলখানা। শ্রমিকরা সাইকেল চালিয়ে এলে ঘেমে যায়, তখন এই গোসলখানা কাজে লাগে। আরো কিছুটা পথ গেলে মূল কারখানার সামনে একটা প্রাকৃতিক লেক। ডান পাশে কর্মকর্তাদের কার্যালয়। কার্যালয়ের ভেতরে যতটা সম্ভব সবুজ রাখা হয়েছে। প্লামির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফজলুল হকের দেখা পেতে একটু সময় লাগল। তিনি কারখানাটি ঘুরিয়ে দেখাতে দেখাতে বিস্তারিত জানালেন। মোট ছয় একর জমির ওপর এ কারখানা। গত বছরের এপ্রিলে নির্মাণকাজ শুরু হয়। অবকাঠামো তৈরি হয়ে গেছে, এখন চলছে সাজানো-গোছানোর কাজ। বললেন, 'আমরা ৫২ শতাংশ খোলা জায়গা রেখেছি। এটি পরিবেশবান্ধব কারখানা তৈরির অন্যতম শর্ত। দোতলা ভবনটি ৫৮ হাজার বর্গফুটের। ইস্পাতের তৈরি। ৯০ শতাংশ নির্মাণ উপকরণ দেশীয়। ভবনটির তিন পাশে লম্বা বারান্দা। আলো-বাতাস চলাচল সুবিধার জন্য আছে ২৪৭টি কুলার ও ৬০টি একজস্টার। তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে রাখার ব্যবস্থা রয়েছে। ওঠানামার সিঁড়ি পাঁচটি হলেও বের হওয়ার দরজা ১১টি। যেন দুর্ঘটনা ঘটলে সহজেই শ্রমিকরা কারখানা ত্যাগ করতে পারে।' ফজলুল হক জানালেন, কারখানার বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন কার্যক্রম চলছে। কারখানার মাসিক উৎপাদন ক্ষমতা ৯ লাখ ২০ হাজার পিস পোশাক। ভবনের ওপরতলায় কাজ চলবে দিনের আলোতে, এতে সাশ্রয় হবে প্রায় ৭০ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ। কারখানায় বসানো হয়েছে সর্বশেষ প্রযুক্তির সেলাই মেশিন যা বিদ্যুৎসাশ্রয়ী। এক হাজার ২০০ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। ভবনটিকে ঘিরে রয়েছে বড় বড় পাইপ। বৃষ্টির পানি ভবনের ছাদ থেকে পাইপ বেয়ে জমা হবে আন্ডারগ্রাউন্ড ট্যাংকিতে। এই পানি ব্যবহৃত হবে বাথরুমের ফ্ল্যাশিং ও অগ্নিনির্বাপণ কাজে। ইউএসজিবিসির পর্যবেক্ষণে থাকে-কত কম বিদ্যুৎ খরচ করা হয় এবং কত কম পানি খরচ করা হয়। সব মিলিয়ে পরিবেশ কত কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

লিড শর্তপূরণে প্লামি

বিদেশি ক্রেতারা এবং দেশি শ্রমিকরা বাংলাদেশের পোশাক কারখানার পরিবেশ নিয়ে নানা অভিযোগ তোলে। দুর্ঘটনার পেছনে অপরিকল্পিত ভবন নির্মাণ ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার ত্রুটিই প্রধান কারণ। সেদিক থেকে প্লামি ফ্যাশন নমুনাই বটে। ইউএসজিবিসির সনদ পেতে একটি প্রকল্পকে ভবন নির্মাণ থেকে শুরু করে পণ্য উৎপাদন পর্যন্ত সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ফজলুল হকের দাবি, তাঁরা ইউএসজিবিসির নিয়ম-কানুন শুরু থেকেই মেনে চলছেন। তিনি বলেন, 'লিড সনদের ১১০ নম্বরের মধ্যে ১২ নম্বর-কোনো প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনের ওপর হুমকি তৈরি না করার জন্য। যেমন ধরুন বাংলাদেশে যদি সোনারগাঁর পানাম নগরে ফ্যাক্টরি করা হয় এবং ভবনগুলোর ওপর কোনো হুমকি না তৈরি হয় তবে পাবেন ১২। এ ১২ নম্বর প্লামির আওতার বাইরে। বাকি থাকছে ৯৮। এর মধ্যে প্লাটিনাম পাওয়ার জন্য দরকার ৮০ নম্বর। আমরা পেতে যাচ্ছি ৯২। এটি ওয়ার্ল্ড রেকর্ড। সর্বোচ্চ নম্বর নিয়ে পৃথিবীর প্রথম প্লাটিনাম সার্টিফিকেটধারী কারখানা হতে যাচ্ছে আমাদের প্লামি ফ্যাশন লিমিটেড।' তিনি আরো বলেন, 'লিড প্লাটিনামের শর্ত হচ্ছে এমন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হবে, যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। ইট, বালি, সিমেন্ট এগুলো রি-সাইকেলড 'র' মেটেরিয়াল হতে হবে। আমরা সেগুলো করেছি। এমনকি সব উপকরণ কারখানার সবচেয়ে কাছের প্রতিষ্ঠান থেকে ক্রয় করেছি। এতে পরিবহনের জ্বালানি খরচও কম হয়েছে। তাদের শর্ত অনুযায়ী নির্মাণ উপকরণের ৯০ শতাংশই দেশীয় ব্যবহার করেছি। এ ছাড়া প্লাটিনাম পাওয়ার অন্যতম মূল শর্ত হলো ৫০০ বর্গমিটারের মধ্যে শ্রমিকদের থাকার জায়গা বাসস্থান, স্কুল, বাজার, বাস বা টেম্পো স্ট্যান্ড থাকতে হবে। কারণ দূরে হলেই শ্রমিকদের কারখানায় আসতে গাড়ির প্রয়োজন হবে। এতে জ্বালানি খরচের পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ হবে। এ ছাড়া আমাদের রয়েছে সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল-মোট বিদ্যুতের ১৩ শতাংশ এখান থেকে।' মূল কারখানা ভবনের সামনেই লাগানো হয়েছে দেশীয় গাছপালা। আছে প্রাকৃতিক লেক ও ফোয়ারা। ফোয়ারার আরেক পাশে আছে অত্যাধুনিক গুদাম ঘর। শ্রমিকদের গুদামে মাথায় করে বস্তা নিতে হবে না, লিফটে করে বস্তা উঠবে, নামানোর সময় স্লাইডে ছেড়ে দেবে। ৩৩ হাজার বর্গফুটের এই গুদামটি তিন তলাবিশিষ্ট।

বিশ্বসেরা ২ পোশাক কারখানা কারখানার মোট বিদ্যুতের ১৩ শতাংশ আসবে এই সৌরবিদ্যুৎ প্যানেল থেকে

পরিবেশবান্ধব কারখানা শ্রমিকবান্ধবও

সব মিলিয়ে প্লামিতে দুই হাজার লোকের কাজের সুযোগ হবে। কারখানার বাইরে বিশাল জায়গাজুড়ে রয়েছে শ্রমিকদের জন্য দুই তলাবিশিষ্ট লাইফস্টাইল সেন্টার। এখানে শ্রমিকদের জন্য আছে ডাইনিং ও শিশুদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টার। ফলে মা-শ্রমিকরা বাড়িতে রেখে আসা শিশুর জন্য দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হবে না। আছে চিকিৎসাকেন্দ্রও। লাইফস্টাইল বিল্ডিংয়ের ওপরের তলায় নামাজঘর ও প্রশিক্ষণ কক্ষ। একসঙ্গে ২০০ শ্রমিককে প্রশিক্ষণ দেওয়া যাবে। শ্রমিকের বেতন-ভাতা সম্পর্কে ফজলুল হক বলেন, 'আমাদের এই এলাকায় যত গার্মেন্ট আছে এবং প্রচলিত যে বেতন কাঠামো রয়েছে, তার চেয়ে বেশি। শ্রমিকদের জন্য ডাইনিং ফ্যাসিলিটি দিয়েছি-যেটা বাংলাদেশের অনেক ফ্যাক্টরিতেই নেই। একটা বিনোদনকক্ষ আছে, সেটা এখনো চালু করিনি, দ্রুতই চালু করব, টেলিভিশনসহ বেশ কিছু খেলার সামগ্রী থাকবে-মোটকথা ক্লাবের মতো থাকবে, শ্রমিকরা টিভি দেখবে, ক্যারম বোর্ড খেলবে, লুডু খেলবে।'

ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও

১১০ নম্বরের মধ্যে ভিনটেজ ডেনিম পেয়েছে ৯০। ২০১২ সালে ইউএসজিবিসি কারখানাটিকে প্লাটিনাম সনদ দেয়। বাংলাদেশের এবা গ্রুপের এ কারখানা ঈশ্বরদী রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ এলাকায় (ইপিজেডে)। ৯.২ একর জমির ওপর গাছগাছালি ঘেরা ভিনটেজ ডেনিম। ১৯টি প্লটে চার লাখ ৭১ হাজার বর্গফুটের মধ্যে দুই লাখ ৯৮ হাজার বর্গফুটজুড়ে নির্মিত স্টিল কাঠামোর ভবন। ৩০ শতাংশ জায়গা বিনোদন, খেলার মাঠ, চলাচলের করিডর ও অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থার জন্য ছেড়ে দেওয়া। সর্বোচ্চ মান বজায় রেখে গড়ে তোলা কারখানাটিতে স্থায়ী বিনিয়োগের পরিমাণ প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার বা ১৪০ কোটি টাকা।


কারখানার ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কামরুল ইসলাম জানান, প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শ্রীলঙ্কান দুমিন্দা মালগালা শুরু থেকেই সচেতন ছিলেন। তিনি ঝামেলামুক্ত জমি খুঁজে বের করেছেন। চাইছিলেন যেন নির্মাণের ৩০ শতাংশ উপকরণ স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায়। ঈশ্বরদী ইপিজেড কর্তৃপক্ষ তাঁর চাহিদা পূরণে এগিয়ে আসে। এরপর ইউএসজিসিবির পরামর্শকের তত্ত্বাবধানে ২০১০ সালে এটি যাত্রা শুরু করে।

একতলা কারখানা ভবনটির নকশা এমনভাবে করা হয়, যেন দিনের বেলায় শতভাগ সূর্যের আলো ব্যবহার করা যায়। স্টিলের কাঠামোর ভবনটির ছাদ তাপ শোষণ না করে বিকিরণ ঘটায়। ছাদের কোথাও কোথাও আলো প্রবেশের জন্য স্বচ্ছ উপকরণ ব্যবহার করা হয়েছে। ফলে কারখানার ভেতরভাগ অপেক্ষাকৃত শীতল। এ ছাড়া বিদ্যুৎসাশ্রয়ী শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত যন্ত্র ব্যবহার কারখানার ভেতরে প্রয়োজনীয় তাপমাত্রা বজায় রাখে। কারখানার দেয়ালেও বড় বড় কাচের জানালা রয়েছে। এখানে স্থাপন করা হয়েছে দেশের সবচেয়ে বড় সোলার প্যানেল। যার মাধ্যমে বছরে প্রায় দেড় লাখ কিলো ভোল্ট বিদ্যুৎ পাওয়া যায়। এই বিদ্যুৎ ইনভেন্টরের মাধ্যমে নিজেদের গ্রিডে যোগ করা যায়। ১৩ শতাংশ বিদ্যুৎ আসে সোলার প্যানেল থেকে। ভবন ধসার শঙ্কা নেই, আগুন লাগলে শ্রমিকদের বের হওয়ার পথও উন্মুক্ত।

প্রতিটি সেলাই মেশিনে আছে একটি ছোট এলইডি টেক্সট বাল্ব। যেটি শুধু মেশিনের সুঁইয়ের ওপর আলো ফেলে। কারখানাটির বর্জ্য শোধনের জন্য যে প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে, তাতে প্রতি ঘণ্টায় ৭০ হাজার লিটার পানি পরিশোধন করা যায়। কারখানাটি পানি বিশুদ্ধ করার জন্য সর্বোচ্চ মান অনুসরণ করে। প্রতিষ্ঠানটি নানাভাবে ৫৩ শতাংশ পানি সাশ্রয় করে।
কারখানার দেয়ালে অর্গানিক রং ব্যবহার করা হয়েছে। এখানে সব জায়গা থেকেই সবুজ দেখার সুযোগ আছে শ্রমিকদের।

প্লাটিনাম নম্বরপ্রাপ্তি
জমির ভৌগোলিক অবস্থানে ২৬-এর মধ্যে ২৩, পানির পর্যাপ্ততা দশে দশ, বিদ্যুৎপ্রাপ্তির নিশ্চয়তায় ৩৫-এ ২৮, নির্মাণসামগ্রীকে ১৪-এর মধ্যে ৬, অভ্যন্তরীণ পরিবেশগত অবস্থা ১৫-এর মধ্যে ১৩, অতি সাম্প্রতিক উদ্ভাবিত যন্ত্রের ব্যবহারে ৬-এ ৬, এলাকাভিত্তিক প্রাধ্যান্যতা ৪-এ ৪। কারখানাটি ৪৬ শতাংশ বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে, ৫৩ শতাংশ পানি। কারখানার বর্জ্য নিজ খরচে নিরাপদ স্থানে ফেলার ব্যবস্থা রয়েছে।


উৎপাদন কার্যক্রম
এখানে দুই হাজার ৫৬৬ জন শ্রমিক। ৮৫ শতাংশই নারী। সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কাজের সময়। দুই ঘণ্টা ওভারটাইম করার সুযোগ আছে। প্রতিদিন ২০ হাজার পিস পণ্য উৎপাদন হয়। বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা ছয় লাখ পিস। ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিওর প্রধান গ্রাহক আমেরিকার ঈগল, বেস্টসেলার, চিবো, জুল, প্রমোদ ইত্যাদি। ঈশ্বরদীর সাহাপুরের নারী শ্রমিক নিপা বলেন, 'তিন বছর ধরে এখানে কাজ করছি। পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধা ভালো। আগে অন্য কারখানায় কাজ করেছি, কিন্তু সেগুলোর পরিবেশ অত ভালো নয়। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যেতাম। প্রতিটি কারখানা এ রকম পরিবেশবান্ধব হওয়া খুবই জরুরি। এতে শ্রমিক ও পরিবেশ ভালো থাকে; বিদ্যুৎ, পানিও সাশ্রয় হয়।'

শ্রমিকদের বেতন-ভাতাদি ও সুযোগ-সুবিধা

কারখানাটির বেশির ভাগ শ্রমিক আশপাশের এলাকার। শ্রমিকরা মাসিক চুক্তির পরিবহনে কারখানায় আসে। তাদের মজুরি দেওয়া হয় ইপিজেডের ঘোষিত নীতিমালা অনুযায়ী। একজন অপারেটর মাসে সাত থেকে আট হাজার টাকা আয় করে। কিছু সঞ্চয়ও করতে পারে। কারণ শ্রমিকরা নিজের বাড়িতে থাকে বলে বাসা ভাড়ার প্রয়োজন হয় না। নিজের জমির ধান, বাড়ির সবজি, পুকুরের মাছ খেয়ে তাদের স্বাস্থ্যও ভালো থাকে। কারখানাটিতে নিয়মিত কাজ করলে শ্রমিকরা ৪০০ টাকা হাজিরা বোনাস পায়। ১১ দিনের জায়গায় শ্রমিকদের বছরে ১৫ দিন উৎসব ছুটি দেওয়া হয়। অসুস্থ থাকলেও পূর্ণ বেতন দেওয়া হয়।

কোন মন্তব্য নেই: