একটি লাইনের কোয়ালিটি এনসেওর না হওয়ার রুটকজ গুলো এক নজরে।
আচ্ছা কখনো কী ভেবে দেখেছেন একজন মানুষ হিসেবে কোয়ালিটি ফুল হওয়ার জন্য আপনার কী কী গুণাবলী আছে? অবশ্যই কোয়ালিটি বলতে আমি বুঝি ভালগুণ, হোক সেটা মানুষ কিংবা কোন বস্তু। নিশ্চয়ই আপনি হয়ত আঁচ করে ফেলতে পেরেছেন একজন কোয়ালিটি ফূল মানুষ হতে গেলে আপনার কী কী গুণ বা যোগ্যতা থাকতে হবে। তবে সেটা পোশাকের বেলায় কেন নয়।
চলুন জেনে নেই পোশাক কারখানায় কোয়ালিটি কেন দরকার?
আপনি কী একজন পোশাক কারখানার মালিক হিসেবে সুনাম অর্জন করতে আগ্রহী তাহলে কী এমন লাগবে আপনার সুনাম অর্জন করতে? কিসের মাধ্যমে আপনার পোশাক কারখানাটি এক নামে সবাই চিনবে? একটি পোশাক কারখানার সুনাম অর্জন করার সব থেকে বড় হাতিয়ার হল তার পণ্যের কোয়ালিটি। হতে পারে সেটা নিজস্ব ব্রান্ড কিংবা অন্যান্য। একজন পোশাক কারখানার মালিক হিসেবে কেন অন্যকে বলার সুযোগ দেবেন অমুক কোম্পানির কোয়ালিটি ভাল না আমরা আর তার কাছ থেকে পোশাক নিতে চাইনা। তাহলে এই কথা গুলো না শুনতে হলে অনেক কিছুই করণীয় আছে।
আমি মনে করি কোয়ালিটি হচ্ছে আস্থা অর্জনের একটি পথ। নিশ্চয়ই আপনি বাজারে গেলে টাকা দিয়ে খারাপ কোয়ালিটির কিছু কিনতে চাইবেন না তাহলে অন্যকেউ আপনার কাছ থেকে কেন কিনবে ?
বায়াররা তাদের কাজ কোন কোম্পানিতে দেওয়ার আগে সর্বপ্রথম এবং সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটি গুরুত্ব দেয় তা হচ্ছে গার্মেন্টসের কোয়ালিটি বা গুণগত মান। তাই কোন কোম্পানির ভাল ও বড় মাপের বায়ারের কাজ পাওয়া না পাওয়ার ক্ষেত্রে পণ্যের কোয়ালিটি বা গুণগত মাণ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শুধু তাই নয়, কোম্পানির খরচ রাইট ফার্স্ট টাইম কোয়ালিটির উপর অনেকটা নির্ভর করে। কারণ একটি ফিনিশ গারমেণ্ট রিওয়ার্ক বা রিজেক্ট হওয়া মানে মোট খরচের সাথে বাড়তি খরচ যোগ হওয়া কাজেই কাজ শুরু হওয়ার আগেই এ ব্যাপারে সচেতন হতে হবে। তাই ভাল মানের গার্মেন্টস তৈরির জন্য ম্যানেজমেন্টের সকল পর্যায়ের স্টাফদের কার্যকর ভূমিকা থাকতে হবে। কারণ পণ্যের কোয়ালিটি শুরু হয় তার সোর্স থেকে। আমরা আরও বলতে পারি কোয়ালিটি হচ্ছে একটা মাইন্ডসেট যে আমরা আমাদের তৈরি কৃত পোশাককে কেমন রুপে দেখতে চাই। আমরা যেমন মাইন্ড সেট করবো পোশাকের কোয়ালিটি ও ঠিক তেমনি হবে।
আমাদের পোশাক কারখানার লাইন গুলোতে কোয়ালিটি নিশ্চিত না হওয়ার রুটকজ সম্পর্কে আলোচনা করার চেষ্টা করছি ।
আমরা কাজ গুলোকে নিজস্ব কাজ মনে করিনাঃ পোশাক কারখানা গুলোতে কোয়ালিটি এ্যাচিভ করতে না পারার বড় কারণ হল কাজ নিজের মনে করিনা। আমরা করি চাকরি বাঁচানোর তাগিদে। ছোট একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা ক্লিয়ার হয়ে যাবে। যখন আমরা আমাদের কাপড় একটি দর্জির কাছ থেকে বানাই তখন তাকে কতইনা ডিরেকশন দেই। আবার হুশিয়ারি ও করি খারাপ হলে কিন্তু নিবনা। আবার আমরাই যখন পোশাক কারখানায় কাজ করি তখন কিন্তু আমাদের এই রূপটি আর থাকেনা কারন সেটা আমাদের নিজস্ব কাজ না।
আমরা কাজের শুরুতেই মাইন্ড সেট করিনা আমরা কোন টাইপের কোয়ালিটিতে কাজ করবঃ আসলে আমরা তাই অর্জন করতে পারি যা আমরা বিশ্বাস করি । দেখা যাবে আমরা কখনোই কোন স্টাইলের শুরুতে এমন কখনো বলিনা যে এই স্টাইলের আমরা সব প্রসেস এর কোয়ালিটি ভাল করব। যখন একটা বডির অল পার্টস কোয়ালিটি ফুল হয় তখন একটা সম্পূর্ণ বডির কোয়ালিটি অবশ্যই ভাল হবে ।এটা আপনি নিজের শরীর এর সাথে তুলনা করে দেখেন ভাল বুঝতে পারবেন।
আমরা অপারেটর সিলেকশনে ভুল করিঃ
কোন একটি স্টাইল শুরু হবার সময় আমরা যখন এক একটি প্রসেস এর অপারেটর চুজ করি তখন সঠিক প্রসেস এর জন্য সঠিক অপারেটর বসাতে ব্যর্থ হই যার প্রভাব কাজের কোয়ালিটির উপর পরে।
অপারেটর নিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা ব্যর্থ হইঃ আমাদের বোঝা দরকার, লাইনের মেইন কাজটা করে অপারেটর। একজন অপারেটর যদি দক্ষ হয় হয়। তবে তাকে কোয়ালিটি খুব একটা বেশি বুঝিয়ে দিতে হয়না। সে দ্রুত বুঝে ফেলে এবং কাজে ভুল কম করে। কিন্তু আমরা অপারেটর নিয়োগের ক্ষেত্রে কি করি সে কত টুকু কাজে পারদর্শী সেটা খেয়াল করিনা। যার প্রভাব সরাসরি লাইনে গিয়ে পরে।
কোন একটি স্টাইল এর শুরুতেই প্রতিটি প্রসেস এ অপারেটরদের সঠিক ভাবে কোয়ালিটি বুঝিয়ে দিতে হবে যাতে সামনে গিয়ে কোয়ালিটি নিয়ে আর ভেজাল না হয়। রুট কজ মানেই তো শুরু থেকে সমাধান তাহলে আমরা অযথা কি কারণে শুরু থেকে শুরু করবোনা।
কোন একটি স্টাইলের শুরুতেই একজন দক্ষ টেকনিশিয়ান এর মাধ্যমে প্রসেস গুলো সঠিক ভাবে বুঝিয়ে দিতে হবে। কারন অপারেটররা সঠিক ভাবে কাজ না বুঝলে বার বার ভুল করে ,আর ভুল করলে কাজের কোয়ালিটি খারাপ হবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের পোশাক কারখানাগুলোতে দক্ষ টেকনিশিয়ানের বড়ই অভাব।
গার্মেন্টস কোয়ালিটি বৃদ্ধির কিছু টিপসঃ
1. কোয়ালিটির সুফল ও কুফল সম্পর্কে সকলকে অবগত করতে হবে।
2. সকল ‘ড়’ মেটেরিয়াল এর ১০০% কোয়ালিটি ইন্সপেকশন নিশ্চিত করতে হবে।
3. কোন একটি স্টাইলের ক্রিটিক্যাল প্রসেস এর অপারেটরদের ভাল ভাবে ঐ প্রসেস বুঝিয়ে দিতে হবে।
4. কোন একটি স্টাইলের শুরুতেই প্ল্যান করতে হবে ঐ স্টাইলের কোয়ালিটিতে কি ধরণের চ্যালেঞ্জ আসতে পারে ঐ অনুপাতে প্রিপারেশন নিয়ে থাকতে হবে।
5. ডীফেক্ট ও কোয়ালিটি স্ট্যান্ডার্ডসম্পর্কে ভাল জ্ঞান আছে সে রকম কোয়ালিটি ইনস্পেক্টর দিয়ে গার্মেন্টস চেক করাতে হবে।
কাজের জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।
6. কাজের জন্য সঠিক যন্ত্রপাতি ব্যাবহার কোরতে হবে।
7. কোন ডীফেক্ট বারবার পেলে দ্রুত তা সমাধান করতে হবে।
8. আমরা বলতে পারি, গারমেণ্ট কোয়ালিটি ফুল তখনই আশা করতে পাড়বো যখন আমাদের মাইন্ড কে আমরা কোয়ালিটি ফুল করতে পারব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন