Textile বা পোশাক শিল্পে ফরমাল্ডিহাইড/ফরমালিন যৌগটি ইউরিয়া-ফরমাল্ডিহাইড রেসিন-যৌগ হিসেবে ওয়েট প্রসেসিং এ বহুল ব্যবহৃত হয়, বিশেষ করে সুতি কাপড় ও পলেস্টার-সুতি কাপড়ের স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধির জন্য এই রেসিন ব্যবহৃত হয়। ফরমাল্ডিহাইড রেসিন যৌগটি ব্যবহার করার কারণে ভোক্তার দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত ঐ কাপড়ে স্থায়ী ভাঁজ সৃষ্টি হয় না। কিন্তু এখানে কথা আছে, পোশাক থেকে নি:সৃত ফর্মাল্ডিহাইড বা ফরমালিন ত্বকের মাধ্যমে শোষিত হয়ে মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে, যা ক্যান্সারের সূচনা করতে পারে। তাই ফিনিশ প্রোডাক্টের ব্যাপারে ফরমাল্ডিহাইড কতটুকু মাত্রায় থাকতে পারবে সে ব্যাপারে বায়ারদের সুনির্দিষ্ট কিছু প্যারামিটার থাকে।
পোশাক তৈরির প্রক্রিয়ায় প্রয়োজনীয় যে ফরমাল্ডিহাইড রেসিন ব্যবহার করা হয় তা ফিনিশ প্রোডাক্টে গ্রহণযোগ্য মাত্রায় থাকতে পারবে।
যেমন: ফেব্রিকে 100ppm এর বেশি ফরমাল্ডিহাইড থাকা যাবে না, H&M ব্র্যান্ডের পোশাকের ক্ষেত্রে এই মাত্রা 75ppm, আবার, ফিনিশ প্রোডাক্টের যে ফেব্রিক সরাসরি স্কিন-কন্টাক্ট নয়, তা 300ppm পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য। সেজন্য দেখবেন, H&M নিয়ে কাজ করার সময় অভ্যন্তরীণ পকেটিং ফেব্রিকের টেস্ট বাধ্যতামূলকভাবে করতে হয় এবং তার লিমিট 75ppm এর নিচে থাকতে হয়, কারণ এটি স্কিনের সাথে লেগে থাকে। পোশাকের বাইরের দিকে কোনো ফেব্রিক স্টিকার থাকলে বা নন স্কিন কন্টাক্ট ফেব্রিক ডিজাইন থাকলে আপনাকে এত চিন্তিত হতে হবে না কারণ সেক্ষেত্রে লিমিট 300ppm।
ফরমাল্ডিহাইড টেস্ট করার জন্য ফ্যাক্টরী থেকে থার্ড পার্টি ল্যাবগুলিতে যে স্যাম্পল দেয়া হয়, সেখানে ডিটেকশন দেখানো হয় 16ppm থেকে, মানে হচ্ছে 16ppm এর নিচে ’নট ডিটেক্টেড, 16ppm থেকে <75ppm পর্যন্ত 'ডিটেকটেড' এবং 75ppm বা এর উপরে গেলে ফেইল রিপোর্ট দেয়া হয় (বড়দের পোশাকের ক্ষেত্রে)।
রপ্তানির জন্য বিভিন্ন টেস্টের সার্টিফিকেশন নেয়ার জন্য থার্ড পার্টি ল্যাবগুলিতে বার বার স্যাম্পল পাঠানো অত্যন্ত ব্যয়বহুল এবং সময়সাপেক্ষ। এই হিসেবে আপনি চাইলে আপনার ফ্যাক্টরিতে ইন-হাউস একটি ল্যাব করতে পারেন, এতে কিন্তু লাভ আছে। যেমন ধরুন, আপনি ইন হাউজ ল্যাবে টেস্ট করে দেখলেন ফিনিশ প্রোডাক্টে/ফেব্রিকে ফরমাল্ডিহাইড টেস্ট ফেইল করেছে, এই অবস্থায় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে pH এবং APEO টেস্ট দুটিও ফেইল করার জোর সম্ভাবনা থাকবে। কারণ, ফরমাল্ডিহাইড রিপোর্ট ফেইল করা মানে ওয়াশিং ভাল হয় নি।
APEO টেস্ট টি এক্সপেন্সিভ, সোফিস্টিকেটেড সিস্টেমে করতে হয় (LCMS/MS), কাজেই ফ্যাক্টরীতে ফরমাল্ডিহাইড টেস্টের ব্যবস্থার মাধ্যমে আপনি কিন্তু একইসাথে তিনটি টেস্টের ব্যাপারে আগাম ধারণা করে নিতে পারছেন। এতে প্রোডাকশন খরচও কমে আসবে।
একটি ইন-হাউস ল্যাবে ফরমাল্ডিহাইড টেস্ট করার জন্য আপনাকে 20 থেকে 25 লাখ টাকা পর্যন্ত স্থায়ী ইনভেস্টম্যান্ট করতে হবে। প্রয়োজনীয় গ্লাসওয়ার, চার ডিজিট ব্যালেন্স, একটি #UV_Spectrophotomer, Shaking machine, water bath এবং প্রয়োজনীয় ক্যামিকেল সংগ্রহ করে আপনিও পোশাক কারখানায় স্থাপন করতে পারেন ফরমাল্ডিহাইড টেস্ট করার সুবিধা। এতে আপনার সময় ও খরচ দুটোই বেঁচে যাবে।
সাধারণত ৩৭-৫০% ফরমালডিহাইডের সঙ্গে ১৫% মিথাইল অ্যালকোহল মেশালে ফরমালিন তৈরি হয়। কাজেই ফরমালডিহাইডের উপস্থিতিই ফরমালিনের অস্তিত্ব প্রমাণ করে। ফরমালডিহাইডের পরীক্ষার জন্য কিছু কমপ্লেক্স কেমিক্যাল-এর প্রয়োজন।
এগুলো হলো-
১। ফরমালডিহাইডের দ্রবণের সঙ্গে ২ সিসি ফিনাইল হাইড্রোজাইন হাইড্রোকোরাইড (১%) এবং ১ সিসি ৫% পটাসিয়াম ফেরিসায়ানাড দিয়ে তারপর ৫ সিসি ঘনীভূত হাইড্রোকোরিক অ্যাসিড মেশালে পুরো দ্রবণ গাঢ় গোলাপী রঙ হয়ে থাকে। একে বলা হয় সেরিভারস্ টেস্ট।
২। ফরমালডিহাইডের হালকা দ্রবণ যেমন মাছে ফরমালিন দেয়া আছে তা ধুয়ে তার পানিতে ১ সিসি সোডিয়াম নাইট্রোপ্রোসাইড মেশালে গাঢ় সবুজ নীল রঙ ধারণ করে। এতে ফরমালডিহাইড তথা ফরমালিনের অস্তিত্ব প্রমাণ করে। এ সমস্ত কেমিক্যাল এবং রি-এজেন্ট পাওয়া খুব কঠিন এবং দামও অনেক বেশী।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন