শ্রম আইন ২০০৬ এর ধারা ১৪ নিয়ে কিছু কথা –
বেশ কিছুদিন থেকে এই ধারা ১৪ নিয়ে বিভিন্ন জন বিভিন্ন ধরণের প্রশ্ন রাখছেন, কখনো ফোনে কখনো বিভিন্ন ম্যাসেঞ্জার গ্রুপের মাধ্যমে আবার বিভিন্ন জন বিভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করতে চান, তাই সকলের জন্য সংক্ষেপে সহজ ভাষায়।
ধারা ১৪ – কতিপয় ক্ষেত্রে “এক বৎসর”, “ছয় মাস” এবং মজুরি গণনা -
(১) এই অধ্যায়ের প্রয়োজনে, কোন শ্রমিক কোন প্রতিষ্ঠানে পূর্ববর্তী বার পঞ্জিকা মাসে বাস্তবে অন্ততঃ দুইশত চল্লিশ দিন বা একশত বিশ দিন কাজ করিয়া থাকেন, তাহা হইলে তিনি যথাক্রমে “এক বৎসর” বা “ছয়মাস” প্রতিষ্ঠানে অবিচ্ছিন্নভাবে কাজ করিয়াছেন বলিয়া গণ্য হইবেন।
এখন যারা এখানে শুধু দুইশত চল্লিশ দিন বা একশত বিশ দিন খুঁজেন তাদের জন্য –
লক্ষ্য করুন এখানে চারটি শর্ত জুড়ে দেয়া হয়েছে –
১) এই অধ্যায়ের প্রয়োজনে অর্থাৎ ধারা ৩ থেকে ৩৩ এই ৩৩ টি ধারার সমন্বয়ে দ্বিতীয় অধ্যায়ের বাইরে কোনো ধারার জন্য আপনি এটি ব্যবহার করতে পারবেন না।
২) পূর্ববর্তী বার পঞ্জিকা মাসে অর্থাৎ হিসেব টি হবে বার মাস ধরে।
৩) অন্ততঃ দুইশত চল্লিশ দিন বা একশত বিশ দিন হতে হবে।
৪) কাজ করিয়া থাকেন অর্থাৎ কাজের দিনগুলি (শারীরিক ভাবে উপস্থিতি) সেখানে সাপ্তাহিক ছুটির দিন, উৎসব ছুটির দিন এগুলো এই দিনের সাথে যোগ হবেনা শুধুমাত্র লে-অফ, অসুস্থতা বৈধ ধর্মঘট বা লক-আউট এবং প্রসূতি ছুটি এগুলো এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত হবে।
এখন খেয়াল করুন একজন শ্রমিক ৫ বছর ৪ মাস কাজ করেছেন সে পাঁচ বছরের সুবিধা পাবেন কিন্তু কেউ কেউ বলে থাকেন ৪ মাস সমান ১২০ দিন তাহলে তো সে আরো ছয়মাস পাওয়ার কথা কিন্তু খেয়াল করুন সে কিন্তু এখানের চারটি শর্তের তিনটি শর্তই পূরণ করতে পারেন নি, যেমন পূর্ববর্তী বার পঞ্জিকা মাস সেখানে তার হিসাব হচ্ছে চার মাসের আবার ১২০ দিনের মধ্যে নিশ্চয়ই সাপ্তাহিক ছুটি বা অন্যকোন ছুটি ছিলো তাহলে সে ১২০ দিন কাজ করেন নি যেটাকে আমরা শারীরিক ভাবে উপস্থিতি বলি, এর মানে হচ্ছে তার হিসাব হবে পাঁচ বছরের।
আবার কেউ যদি বলেন যে, একজন শ্রমিক ৫ বছর ১১ মাস চাকরি করেছেন সে অবশ্যই ৬ বছরের সুবিধা পাবেন কিন্তু খেয়াল করুন সে হয়তো শর্ত এক, তিন ও চার পূর্ণ করেছেন অর্থাৎ হিসেবটি এই অধ্যায়ের, ২৪০ দিন পূর্ণ করেছেন এবং কাজ করেছেন (শারীরিক ভাবে উপস্থিত ছিলেন) কিন্তু শর্ত দুই পূরণ করতে পারেন নি কেননা তার শেষ বছর বার পঞ্জিকা মাস পূরণ করেনি, তাই তার হিসেবটিও হবে ৫ বছরের।
যদি উদাহরণ সহ বলি, ধরুন একজন শ্রমিক ০১/১০/২০১৪ ইং তারিখে যোগদান করেছেন এবং ০১/০৯/২০১৯ তারিখে চাকুরী থেকে ইস্তফা দিয়েছেন বা চলে গিয়েছেন বা মালিক কর্তৃক অবসান হয়েছে, তার বছর হিসাব হবে এমন – ০১/১০/২০১৪ থেকে ৩০/০৯/২০১৫ এক বছর, ০১/১০/২০১৫ থেকে ৩০/০৯/২০১৬ এক বছর, ০১/১০/২০১৬ থেকে ৩০/০৯/২০১৭ এক বছর, ০১/১০/২০১৭ থেকে ৩০/০৯/২০১৮ এক বছর, মোট ৫ বছর, ০১/১০/২০১৮ থেকে ০১/০৯/২০১৯ = ১১ মাস অর্থাৎ সর্বশেষ তার বার পঞ্জিকা মাস পূরণ হয়নি তাই তার হিসেব ৫ বছরের।
অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন তাহলে কেন এই ধারাটি সংযোজন করা হয়েছে এবং কেন এই দুইশত চল্লিশ/একশত বিশ দিনের কথা বলা হয়েছে?
এর কারণ হচ্ছে কোন মালিক যেন বৎসরের কোন দিন বা কয়েকদিন অনুপুস্থিত থাকলে শ্রমিককে তার এধরণের যেকোনো সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত করতে না পারেন। বেশ কিছুদিন আগে একটি স্বনামধন্য গ্রুপ কারখানার কথা শুনেছিলাম যারা কিছু শ্রমিককে বাৎসরিক ছুটির নগদ অর্থ প্রদান করেননি এই অযুহাতে যে তাদের ৩৬৫ দিন উপস্থিতি ছিলোনা যেহেতু তারা অসুস্থ্যতা/নৈমিত্তিক ছুটি কাটিয়েছিলেন (যদিও এটি কোন আইনের আওতায়ই পরেনা)। আবার যেমন ধরুন মালিক কারখানা বেশ কিছুদিন লে-অফ রেখেছেন কাজ না থাকা বা অন্য কোন কারণে সে ক্ষেত্রেও তিনি একথা বলে সুবিধা নাও দিতে পারেন অথবা একজন শ্রমিক প্রসূতিজনিত অনুপস্থিতি ছিলেন তার ক্ষেত্রেও এমন কথা বলতে পারেন, তাই এই ধারাটি সংযোজন করা হয়েছে মাঝখানে যা কিছুই থাকুক না কেন যদি বছর পূর্ণ হয় আর ২৪০/১২০ দিন কাজের দিন হয় তাহলেই সে এক বছর/ছয়মাস কাজ করেছেন বলে গণ্য হবেন।
বিঃদ্রঃ – ধারা ১৯ এর ক্ষেত্রে এই ধারা প্রযোজ্য নয় কেননা সেটি আলাদা হিসাব এবং নির্দিষ্ট করে ছয়মাসের কথা বলা আছে।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন