টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি পরিচিতি - কাট্টলী টেক্সটাইল লিমিটেড Kattali Textile Limited - Textile Lab | Textile Learning Blog
কাট্টলী টেক্সটাইল লিমিটেড
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। দেশভাগের ঠিক একদিন আগে চট্টগ্রামে ছোট্ট একটি দোকানের মাধ্যমে কয়েকজন উদ্যোক্তা পোশাক ব্যবসা শুরু করেন। তখনকার শহরের নামকরা চারটি দোকানের মধ্যে একটি ছিল লাকি কর্নার। এরপর ১৯৬৫ সালে চট্টগ্রামে নিউমার্কেট সিডিএ বিপণিবিতান চালু হয়; সেখানে একটি পোশাক বিক্রয়কেন্দ্র চালু হয়। তৎকালীন সরকার দোকানটি বরাদ্দ দেয়, যা লাকি কর্নার নামে এখনও বেশ পরিচিত নগরবাসীর কাছে। এখানে তারা বৈচিত্র্যময় পোশাকের খোঁজে আসত।

 কারণ, বিয়ে কিংবা পার্বণে এ দোকানের কাপড়ের কদর ছিল বেশি। নগরবাসীর আগ্রহ ও নিজেদের এগিয়ে যাওয়া প্রচেষ্টায় ১৯৯৫ সালে পৈতৃক নিবাস কাট্টলীতে ওভেন কারখানা চালু করেন উদ্যোক্তা এমদাদুল হক চৌধুরী। পরে তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কাট্টলী টেক্সটাইল লিমিটেড নামে পরিচিত হয়। সাম্প্রতি কাট্টলী টেক্সটাইল লিমিটেড প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

২০০২ সালে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরুর পর ২০০৪ সালের মার্চে বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসে কাট্টলী টেক্সটাইল। ২০১৬ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর হয় রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে নিট ও ওভেন মিলিয়ে কাট্টলী টেক্সটাইলের বার্ষিক তৈরি পোশাক উৎপাদন সক্ষমতা ৪৭ লাখ পিস। এ উৎপাদনের চাকা সচল রেখেছেন প্রায় এক হাজার ৬০০ কর্মী।
পোশাক খাতে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ। এ খাতের সম্ভাবনা বাড়ছে।

 এছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুঁজিবাজারের অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোকে সমাদৃত করা হয়, যা আমাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধি ও পোশাক খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। তাই সম্প্রতি কাট্টলী টেক্সটাইল প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩৪ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলন করেছে। এ উত্তোলিত অর্থ দিয়ে কারখানা নির্মাণ, কর্মচারীদের জন্য ডরমেটরি তৈরি, বর্ধিত ইউনিটের জন্য নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও জেনারেটর স্থাপন, ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও আইপিও খাতে খরচ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ভবিষ্যতে কম্পোজিট মিল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। চট্টগ্রামভিত্তিক লাকি গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এই কাট্টলী টেক্সটাইল। এ গ্রুপের পোশাক খাতের একাধিক কারখানা, শিপিং, ইন্স্যুরেন্স, শেয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটিজ হাউজ ও ট্রেডিং ব্যবসা রয়েছে। ব্যবসা পরিচালনায় গ্রুপটির অভিজ্ঞতা ৭১ বছরের।

কাট্টলী টেক্সটাইলের প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালকরা বলেন, চট্টগ্রামকে বলা হয়ে থাকে বাণিজ্যিক রাজধানী। অথচ ছোটখাটো কাজ থেকে শুরু করে বড় যে কোনো কাজের জন্য ঢাকামুখী হতে হয়। এতে সময় ও খরচ বৃদ্ধি পায়, যা শিল্পোন্নয়নের অন্তরায়। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির প্রাণখ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও ব্যবসাবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলুন। এখানে জাহাজজট, কনটেইনারজট স্থায়ীভাবে রোধ করতে হবে। কারণ আমদানি করা শিল্পের কাঁচামাল বা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতে ৩০ থেকে ৪৫ দিন লাগে। এ অপ্রত্যাশিত ক্ষতির দায় তো আমাদেরই বহন করতে হচ্ছে। দেশ যেখানে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে গ্যাস, পানি, ভ্যাট তল্লাশি কেন্দ্র, ওজন পরিমাপক যন্ত্র প্রভৃতির কারণে কেন চট্টগ্রাম পিছিয়ে থাকবে? আমাদের মনে রাখতে হবে, চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে জাতীয় অর্জন সম্ভব নয়। ফলে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। আর বাজার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য বাজারে এসেছি। বর্তমানে আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে আমাদের অবস্থান ভালো। এছাড়া আমরা জাপানে পোশাক রফতানির জন্য কাজ করছি। সব ঠিক থাকলে আমরা সফল হব।

লাকি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন এমদাদুল হক চৌধুরী। পাশাপাশি বিমা কোম্পানি তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান তিনি। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদেও ছিলেন তিনি।

‘বাংলাদেশে পণ্য রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাকশিল্প খাত থেকে। এ খাতের আরও উন্নতি প্রয়োজন। একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, বিশ্ববাজারে ক্রেতার পছন্দের পোশাক সরবরাহকারী দেশের মধ্যে পরিবর্তন আসছে। তবে বাংলাদেশের ওপর ক্রেতার দৃষ্টি বেশ ভালোভাবেই আছে। ফলে চীন থেকে সরে আসা ক্রয়াদেশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন আমাদের উদ্যোক্তারা। তৈরি পোশাকশিল্পের এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।

 আন্তর্জাতিক পোশাক বাজারের ক্রেতাদের ধরে রাখতে কয়েকটি কাজ জরুরিভাবে করা দরকার। এজন্য গভীর সমুদ্রবন্দর যত দ্রুত সম্ভব নির্মাণ করা দরকার। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান, বিদেশি কর্র্মীনির্ভরতা হ্রাস, রেলে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করাসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট দূর করতে হবে। পাশাপাশি প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগাতে হলে পোশাকশিল্প উদ্যোক্তাদের উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে হবে। এছাড়া রফতানির তালিকায় নতুন পোশাকপণ্য যুক্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, তৈরি পোশাকশিল্প তথা আমাদের বস্ত্রশিল্প সম্ভাবনাময় ও রফতানিমুখী খাত।’


এমদাদুল হক চৌধুরী
ব্যবস্থাপনা পরিচালক

সাইফুল আলম

টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি পরিচিতি - কাট্টলী টেক্সটাইল লিমিটেড Kattali Textile Limited

কাট্টলী টেক্সটাইল লিমিটেড
১৯৪৭ সালের ১৪ আগস্ট। দেশভাগের ঠিক একদিন আগে চট্টগ্রামে ছোট্ট একটি দোকানের মাধ্যমে কয়েকজন উদ্যোক্তা পোশাক ব্যবসা শুরু করেন। তখনকার শহরের নামকরা চারটি দোকানের মধ্যে একটি ছিল লাকি কর্নার। এরপর ১৯৬৫ সালে চট্টগ্রামে নিউমার্কেট সিডিএ বিপণিবিতান চালু হয়; সেখানে একটি পোশাক বিক্রয়কেন্দ্র চালু হয়। তৎকালীন সরকার দোকানটি বরাদ্দ দেয়, যা লাকি কর্নার নামে এখনও বেশ পরিচিত নগরবাসীর কাছে। এখানে তারা বৈচিত্র্যময় পোশাকের খোঁজে আসত।

 কারণ, বিয়ে কিংবা পার্বণে এ দোকানের কাপড়ের কদর ছিল বেশি। নগরবাসীর আগ্রহ ও নিজেদের এগিয়ে যাওয়া প্রচেষ্টায় ১৯৯৫ সালে পৈতৃক নিবাস কাট্টলীতে ওভেন কারখানা চালু করেন উদ্যোক্তা এমদাদুল হক চৌধুরী। পরে তার মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান কাট্টলী টেক্সটাইল লিমিটেড নামে পরিচিত হয়। সাম্প্রতি কাট্টলী টেক্সটাইল লিমিটেড প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েছে।

২০০২ সালে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে যাত্রা শুরুর পর ২০০৪ সালের মার্চে বাণিজ্যিক উৎপাদনে আসে কাট্টলী টেক্সটাইল। ২০১৬ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর হয় রফতানিমুখী প্রতিষ্ঠানটি। বর্তমানে নিট ও ওভেন মিলিয়ে কাট্টলী টেক্সটাইলের বার্ষিক তৈরি পোশাক উৎপাদন সক্ষমতা ৪৭ লাখ পিস। এ উৎপাদনের চাকা সচল রেখেছেন প্রায় এক হাজার ৬০০ কর্মী।
পোশাক খাতে বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানিকারক দেশ। এ খাতের সম্ভাবনা বাড়ছে।

 এছাড়া আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পুঁজিবাজারের অন্তর্ভুক্ত কোম্পানিগুলোকে সমাদৃত করা হয়, যা আমাদের ব্র্যান্ড ভ্যালু বৃদ্ধি ও পোশাক খাতের সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখছে। তাই সম্প্রতি কাট্টলী টেক্সটাইল প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩৪ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলন করেছে। এ উত্তোলিত অর্থ দিয়ে কারখানা নির্মাণ, কর্মচারীদের জন্য ডরমেটরি তৈরি, বর্ধিত ইউনিটের জন্য নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয়, বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার ও জেনারেটর স্থাপন, ব্যাংকঋণ পরিশোধ ও আইপিও খাতে খরচ করছে প্রতিষ্ঠানটি। ভবিষ্যতে কম্পোজিট মিল নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। চট্টগ্রামভিত্তিক লাকি গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এই কাট্টলী টেক্সটাইল। এ গ্রুপের পোশাক খাতের একাধিক কারখানা, শিপিং, ইন্স্যুরেন্স, শেয়ার অ্যান্ড সিকিউরিটিজ হাউজ ও ট্রেডিং ব্যবসা রয়েছে। ব্যবসা পরিচালনায় গ্রুপটির অভিজ্ঞতা ৭১ বছরের।

কাট্টলী টেক্সটাইলের প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালকরা বলেন, চট্টগ্রামকে বলা হয়ে থাকে বাণিজ্যিক রাজধানী। অথচ ছোটখাটো কাজ থেকে শুরু করে বড় যে কোনো কাজের জন্য ঢাকামুখী হতে হয়। এতে সময় ও খরচ বৃদ্ধি পায়, যা শিল্পোন্নয়নের অন্তরায়। পাশাপাশি দেশের অর্থনীতির প্রাণখ্যাত চট্টগ্রাম বন্দরকে আরও ব্যবসাবান্ধব হিসেবে গড়ে তুলুন। এখানে জাহাজজট, কনটেইনারজট স্থায়ীভাবে রোধ করতে হবে। কারণ আমদানি করা শিল্পের কাঁচামাল বা যন্ত্রাংশ সরবরাহ করতে ৩০ থেকে ৪৫ দিন লাগে। এ অপ্রত্যাশিত ক্ষতির দায় তো আমাদেরই বহন করতে হচ্ছে। দেশ যেখানে দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে, সেখানে গ্যাস, পানি, ভ্যাট তল্লাশি কেন্দ্র, ওজন পরিমাপক যন্ত্র প্রভৃতির কারণে কেন চট্টগ্রাম পিছিয়ে থাকবে? আমাদের মনে রাখতে হবে, চট্টগ্রামকে বাদ দিয়ে জাতীয় অর্জন সম্ভব নয়। ফলে দেশকে এগিয়ে নিতে হলে যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে আসতে হবে। আর বাজার সম্ভাবনাকে কাজে লাগানোর জন্য বাজারে এসেছি। বর্তমানে আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে আমাদের অবস্থান ভালো। এছাড়া আমরা জাপানে পোশাক রফতানির জন্য কাজ করছি। সব ঠিক থাকলে আমরা সফল হব।

লাকি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন এমদাদুল হক চৌধুরী। পাশাপাশি বিমা কোম্পানি তাকাফুল ইসলামী ইন্স্যুরেন্স লিমিটেডের ভাইস চেয়ারম্যান তিনি। চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ও বিজিএমইএর পরিচালনা পর্ষদেও ছিলেন তিনি।

‘বাংলাদেশে পণ্য রফতানি আয়ের ৮০ শতাংশের বেশি আসে তৈরি পোশাকশিল্প খাত থেকে। এ খাতের আরও উন্নতি প্রয়োজন। একটি বিষয় বিশেষভাবে লক্ষণীয় যে, বিশ্ববাজারে ক্রেতার পছন্দের পোশাক সরবরাহকারী দেশের মধ্যে পরিবর্তন আসছে। তবে বাংলাদেশের ওপর ক্রেতার দৃষ্টি বেশ ভালোভাবেই আছে। ফলে চীন থেকে সরে আসা ক্রয়াদেশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন আমাদের উদ্যোক্তারা। তৈরি পোশাকশিল্পের এ সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।

 আন্তর্জাতিক পোশাক বাজারের ক্রেতাদের ধরে রাখতে কয়েকটি কাজ জরুরিভাবে করা দরকার। এজন্য গভীর সমুদ্রবন্দর যত দ্রুত সম্ভব নির্মাণ করা দরকার। একই সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধি, গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের সমাধান, বিদেশি কর্র্মীনির্ভরতা হ্রাস, রেলে পণ্য পরিবহন নিশ্চিত করাসহ ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট দূর করতে হবে। পাশাপাশি প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগাতে হলে পোশাকশিল্প উদ্যোক্তাদের উৎপাদনক্ষমতা বাড়াতে হবে। এছাড়া রফতানির তালিকায় নতুন পোশাকপণ্য যুক্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, তৈরি পোশাকশিল্প তথা আমাদের বস্ত্রশিল্প সম্ভাবনাময় ও রফতানিমুখী খাত।’


এমদাদুল হক চৌধুরী
ব্যবস্থাপনা পরিচালক

সাইফুল আলম

কোন মন্তব্য নেই: