গার্মেন্টস স্টক লট ব্যবসার সকল আইডিয়া | Garments Stocklot Business A To Z - Textile Lab | Textile Learning Blog
গার্মেন্টস স্টক লট ব্যবসার সকল আইডিয়া
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পের উপর নির্ভরশীল। তাই আমাদের জন্য এই গার্মেন্টস স্টক লট ব্যবসা করতে পারলে ভাল লাভ করতে পারেন। কিন্তু কিভাবে করবেন এই গার্মেন্টস স্টক লট ব্যবসা তা অনেকেরেই ধারনা নেই বললেই চলে। আজ আমি আপনাদের ধারনা দিব স্টক লট কি ও কিভাবে কোথায় থেকে কিনে তা বিক্রি করবেন। গার্মেন্টস কাপড়ের ব্যবসা এছাড়া স্টক ব্যবসার আইডিয়া, গার্মেন্টস রিজেক্ট মাল ও স্টক লট থেকে কাপড়ের শোরুম ব্যবসা কিভাবে করবেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

স্টকলট কি ?

আমাদের দেশ গার্মেন্টস শিল্পে রপ্তানিকারক দেশ। এই শিল্পে হাজার হাজার পোষাক শ্রমিক কাজ করে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত করতেছে। রপ্তানি নির্ভর এই বাংলাদেশে কিছু কিছু সময়ে বিভিন্ন কারনে অনেক ফ্যাক্টরিতে শিপম্যান্ট বাতিল হয়ে যায়। আর এসব বাতিল হওয়া সকল পণ্যই হয়ে যায় স্টক। যে কারনে গার্মেন্টস পোষাক বাতিল হয় তার মধ্যে অন্যতম কারন হলো শিপম্যান্ট লেট, শিপমেন্ট ডিলে কন্টিনুয়াস রি-চেক, গার্মেন্ট প্রিন্ট সমস্যা, গার্মেন্টস রিজেক্ট সহ নানা রকম গার্মেন্টসে সমস্যার কারনে বায়ার শিপমেন্ট বাতিল করে দেয়। এছাড়া অনেক বায়ার ইচ্ছাকৃতভাবে গার্মেন্টস কম দামে কেনার জন্যও শিপমেন্ট বাতিল করে দেয়। মোট কথা গার্মেন্টস বাতিল হওয়া কাপড় গুলোই স্টক লট এ পরিনত হয়।

স্টকলট ব্যবসার বাজার সম্ভাবনাঃ

বর্তমানে স্টক লট এর ব্যবসার বাজার সম্ভবনা অনেক বেশি। এখন শুধু বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা স্টক লট ব্যবসার সাথে ঝুকে পড়ছে না। বিশ্বের অনেক দেশে স্টকলটের ব্যবসা করতেছে অনেকেই। তার কারন হল কম দামে একসাথে অনেক পণ্য পায় এবং লাভ করা যায় বেশি করে। তাই বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি তরুণ সমাজও স্টক লটের ব্যবসার দিকে ঝুকে পড়তেছে।

কোথায় পাওয়া যায় স্টকলটের কাপড়
বিশেষ করে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়নগঞ্জে স্টক লটের কাপড় বেশি পাওয়া যায়। মোটকথা গার্মেন্টস এলাকাগুলোতে স্টকলটের ব্যবসা করে স্থানীয় অনেক লোক। তাদের মাধ্যমে আপনি খুচরা হিসেবে কিনে ভাল লাভ করতে পারবেন। চলুন দেখে নেই বাংলাদেশের সব থেকে বড় স্টক লট ব্যবসার গুদাম গুলো কোথায় অবস্থিত…..

1. ঢাকার মধ্যে উত্তরা ৬, ৭, ৮ নং সেক্টর।

2. গাজীপুরের কোনাবাড়ীর নতুন বাজারে।

3. সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকায়।

4. নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায়।

5. ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায়।

6. গাজীপুর টঙ্গিতে।

7. গাজিপুরের ভালুকায়।

8. মিরপুর শ্যাওরা পাড়ায়।

9. নিউ মার্কেট ও ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের এড়িয়াতে।

10. সাভারের আশুলিয়া অঞ্চলে।

এছাড়া আরও অনেক জায়গায় গার্মেন্টস স্টক লট ব্যবসার সাথে জড়িত অনেক ব্যবসায়ি রয়েছে। আপনি তাদের মাধ্যমে ভাল কিছু গার্মেন্টস পেতে পারেন। আপনি যেখানেই স্টক লট গার্মেন্ট কিনুন না কেন দেখে শুনে ক্রয় করবেন।

স্টক লট কাপড় কত প্রকারঃ

আসলে স্টক লট কাপড়ের রয়েছে বিভিন্নরকম প্রকার। কেউ ব্যবসা করে ডেনিম ও ওভেন গার্মেন্ট নিয়ে, কেউ ব্যবসা করে সুয়েটার নিয়ে আবার কেউ ব্যবসা করে নীট গার্মেন্ট নিয়ে। ডেনিম ও ওভেন গার্মেন্ট হল জিন্স ও গ্যাভার্ডিন প্যান্ট। সুয়েটার হলো ঠান্ডার পোষাক বা সুয়েটার জাতীয় গার্মেন্ট আর নীট হল গেঞ্জী ও টি – শার্ট এর। এগুলো হল গার্মেন্টস কাপড়ের প্রকার। আবার অনেকেই সব নিয়ে স্টক ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন।

কিভাবে কিনবেন স্টক লট গার্মেন্টসঃ

আপনি যদি একদম বড় মাপের করে স্টক লট ব্যবসা করতে চান তাহলে গার্মেন্টস থেকে কিনলে ভাল হবে। এর জন্য আপনাকে অনেক পূঁজি এ স্থানীয় ভোল্ট থাকতে হবে। এছাড়া আপনি যে গার্মেন্ট থেকে স্টক লট মাল নামাবেন তাদের আগে টাকা পেইড করে মাল নামাতে হবে। এমনকি জামানতও দিতে হবে। আর যদি আপনি কম পূঁজি নিয়ে স্টক লট ব্যবসা করতে চান তাহলে যারা গার্মেন্টস থেকে স্টক লট এ মাল নামিয়ে গুদামে রাখে তাদের কাছ থেকে কিনে ব্যবসা করতে পারেন। আর তাদের ঠিকানা পেতে হলে উপরের জায়গাগুলোতে গিয়ে আসতে পারেন। তবে সব সময় কম কম করে আপনার চাহিদা মত স্টক লট কাপড় কিনলে আপনি ভাল করতে পারবেন।

স্টক লট ব্যবসার ঝুকিঃ

স্টক লট ব্যবসা এক ধরনের হাওয়ায় ভাসানো ব্যবসার মত। কপাল ভাল হলে ভাল আর খারাপ হলে পুরোই লস। কারন অনেক সময় স্টক লটের মধ্যে এমনকিছু গার্মেন্টস থাকে যেগুলো রিজেক্ট, ছেঁড়া,ফাটা ও আমাদের এশিয়ান সাইজের থেকে বড় হয়। আপনি যখন গার্মেন্ট কিনবেন তখন যদি এগুলো কোয়ালিটি চেক করে না নিতে পারেন তাহলে আপনার জন্য বড় বিপদ আনবে। তাই আপনাকে স্টক লটের মাল নিতে হলে সব কিছু কোয়ালিটি চেক করে নিবেন। এছাড়া অনেকেই আবার এগুলো নিয়ে আলাদা সুইং মেশিনে কাজ করিয়ে তা রিপেয়ার করে বিক্রি করে।

স্টকলট কিনায় সাবধানতাঃ

আপনি যাদের কাছ থেকে স্টক লট কিনেন না কেন আপনাকে অবশ্যই নিজে দারিয়ে থেকে কিনতে হবে। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা আপনাকে ভাল মালের সাথে খারাপ মাল ঢুকিয়ে দিতে পারে। এছাড়া আর একটা মুল সমস্যা হল অনেক ব্যবসায়ি এখন বিদেশের কাপড়ের প্রিন্ট ডিজাইন কপি করে তা নিজেস্ব ফ্যাক্টরিতে তৈরি করে স্টক লট এর মধ্যে রেখে তা অর্জিনাল নামি দামি ব্রান্ড বলে চালিয়ে দেয়। আসলে সেগুলো গার্মেন্ট দেখতে চক চক করে। আপনি যদি দেখেন এমন গার্মেন্টস বস্তার মধ্যে রয়েছে তাহলে বুঝে নিবেন এখানে কিছু ঘাপলা আছে। স্টক লট মানেই স্টক লট এখানে ৪০% থেকে ৬০% সমস্যা পাবেন। তাহলে বুঝবেন এগুলো অর্জিনাল স্টক লট। ভাল মাল কখনও স্টক হয় না এটা অবশ্যই মাথায় রাখবেন। এর সাথে আরও একটি বিষয় দেখবেন আপনি আমাদের দেশের কালচার অনুযায়ী স্টক লটের মাল কিনুন। আবার এমন কিছু মাল স্টক লটে পাওয়া যায় যাহা বাংলাদেশের মার্কেটের সাথে চলে না ও কালচারের সাথে যায় না যেমন লিঞ্জারি, বিকিনি, সুইম সুট, সেক্সি সর্টস এমন প্রডাক্ট গুলি না কেনাই ভালো। আপনি সব সময় বাংলাদেশের লোকাল মার্কেটে চলার মতো লট কিনুন যেমন: ডেনিম, প্যান্ট শার্ট, পোলো শার্ট, টি শার্ট।

স্টক লটের ধারনাঃ

প্রথমে আপনি স্টক লটের ধারণা নিয়ে, জেনে ও বুঝে তারপর ছোট গার্মেন্ট বা গোডাউন থেকে স্টক কিনে লোকাল মার্কেটে বিক্রি শুরু করুন। ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারবেন। গার্মেন্ট স্টক লট ব্যবসা শুরুর আগে যারা পুরাতন তাদের সাথে থেকে কিছু দিন ব্যবসা শিখতে হবে হুট করে কিছুই করা ঠিক নয়। এছাড়া ফেব্রিকস চিনুন, সুতা চিনুন, কাপরের নাম ও ধরন চিনুন এবং প্রিন্ট সমন্ধেও ধারনা নিয়ে মাঠে নামুন। আবার রিজেক্ট গার্মেন্টস কিনে তা কিভাবে আবার নতুন সুইং করে রিপেয়ার করতে হয় সেই কৌশলগুলোও ভাল করে জেনে নিন।

স্টক লটের স্থানঃ

আপনি যদি পাইকরি স্টকলট ব্যবসা করতে চান তাহলে ভাল একটি নির্ধারিত স্থান দেখুন। যেখানে আপনার ক্লাইন্ডরা আসা যাওয়া করতে পারবে । এছাড়া আপনি সব জায়গায় সঠিক সময়ে গার্মেন্টস পৌছে দিতে পারবেন। এছাড়া আপনি এই ব্যবসা বাড়ি থেকেই করতে পারবে। এর জন্য তেমন কিছু লাগবে না। আপনি একটি অফিস ও দুটি টেবিল আর চেয়ার নিয়ে বসতে পারেন। তাছাড়া একটা পিসি রাখুন এ প্রয়োজনীয় স্যামপোল ও কাগজপত্র রাখুন।

স্টক লট এর ব্যবসার পূঁজিঃ

আপনি যদি সরাসরি গার্মেন্টস থেকে স্টক লট এর গার্মেন্টস নামাতে চান তাহলে ২০ থেকে ৭০ লক্ষ টাকা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। আর যদি কোন গোডাউন থেকে সরাসরি নামাতে চান তাহলে ১ থেকে ৫ লক্ষ টাকার মধ্যেই এই ব্যবসা করতে পারেন। সব থেকে ভাল হয় আপনি আপাতত গোডাউন থেকে কিনতে থাকুন এর ফাঁকে ফাঁকে গার্মেন্টস থেকে কিভাবে স্টক লট মাল নামাতে হয় তার কৌশলগুলোও জেনে নিয়ে নামতে পারেন।

স্টক লট এর লাভ কেমন ও হিসাবঃ

স্টক লটের লাভ খুব বেশি না আবার খুব বেশি। এটা নির্ভর করে কাপড়ের মানের উপর ও চাহিদার উপর। এছাড়া নির্ভর করে আপনি কি হোলসেল বিক্রি করবেন নাকি শো-রুমে বিক্রি করবেন। তবে আমরা এখানে হিসেব করব হোলসেল নিয়ে- ধরুন আপনি ১ হাজার পিছ টি শার্ট ক্রয় করেছেন ৭০ টাকা করে। সব খরচ বাদ দিয়ে আপনার ৮০ টাকা পড়ল। তাহলে ৮০×১০০০= ৮০০০/- টাকা। এবার আপনি যদি ১ হাজার টি-শার্ট বিক্রি করেন ১১০/- টাকা করে তাহলে ১১০×১০০০/- ১২০০০/- টাকা। তাহলে আপনার ১ হাজার টি-শার্টের মধ্যে লাভ হল ৪ হাজার টাকা। এটা মনে রাখবেন এখানে মূখিকভাবে আপনাদের জন্য ক্যালকুলেশন করে দিয়েছি মাত্র, এর থেকে আপনার লাভ বেশিও হতে পারে আবার কম হতে পারে। এছাড়া লসও করতে পারেন। তবে সব ঠিক থাকলে আপনার ভাল লাভ হবে।

কিভাবে বিক্রি করবেনঃ

আপনি স্টক লট কিনে ৪ ধরনে বিক্রি করতে পারবেন। আপনি যদি একদম পাইকারি গার্মেন্ট বিক্রি করতে চান তাহলে আপনি আপনার গুদাম থেকে পাইকারি দামে বিক্রি করুন। আবার যদি আপনি শো-রুমে পাইকারি বিক্রি করতে চান তাহলে আপনি শো-রুমে মার্কেটিং করে বিক্রি করতে পারেন। আপনি ঢাকা সহ সারাদেশের বড় বড় মার্কেট এর কাপড়ের দোকানগুলোতে ভাল বিক্রি করতে পারবেন যদি আপনার কাপড়ের গুনগত মান ভাল থাকে। এছাড়া আপনি আপনার নিজের শো-রুমে তা বিক্রি করতে পারেন। ইদানিং ফুটপাতের মধ্যে এই স্টক লটের ব্যবসা মোট জমজমাট হচ্ছে। একটি ভ্যানের মধ্যে করে অনেকেই এই ব্যবসা করে যাচ্ছে ভালই। তাই আপনার যদি পূঁজি একদম কম থাকে তাহলে ভ্যানের মধ্যেই এই ব্যবসা করতে পারেন অনায়োসে। এভাবে বিক্রি করে আপনি ভালো আয় করতে থাকুন।

স্টক পন্য কেনা বেচায়  কি কি সতর্কতা অবলম্বন করেবেন 


আপনাদের স্টক পন্য কেনা বেচার ক্ষত্রে কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে :

১. মালামাল এর পেমেন্ট এর ক্ষত্রে Bank LC  মাধ্যমে করুন।

২. বায়ার পেয়ে আবেগী হওয়া যাবে না,  ভালো করে তার ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে নিন। কোথা থেকে নেয়,  কি পরিমান নেয়,  কাদের সাথে লেনদেন করে তাদের খোজ খবর নিন।

৩. অনেকেই প্রডাকশন এর নাম করে স্যাম্পল করিয়ে বিদায় নেয়,  এদের কাছ থেকে দুরে থাকুন।

৪. যেহেতু টাকা পয়সার বিষয় আছে তাই প্রাইজ এর ব্যাপারে Straight Forward হওয়া ভালো।

৫. মেক্সিমাম লট রিজেক্টশন এর কারন হলো লিড টাইম বা টাইমলি দিতে না পারা,  এর সাথে অনেক সময় ডাইং এবং গার্মেন্টস ফল্টস থাকতে পারে তাই নেয়ার আগে দেখে নিতে হবে কারন।

৬. প্রাইস ফেক্ট হলো হতাস হোয়া যাবে না। 
থিউরি হলো যা কিনার সময়  লাভ হয় না তা বেচার সময় ও লাভ হয় না

৭. এই ব্যাবসার মুল বিষয় হলো প্রোডাক্ট প্রাইজ  তাই ব্যাবসা করার আগে প্রাইস আর কোয়ালিটি নিয়ে ভাবুন।

৮. লটের রিজেক্টশন এর কারন জেনে নিন কি কারনে লট হলো জেনে নিন।

৯. বড় ভলিউম এর লট কেনার পর জন্য সাথে হায়ার করা এক্সপার্ট রাখতে পারেন,  এতে আপনার রিক্স মিনিমাইজ হবে।

১০. কিছু কিছু  বায়ার প্রথমে টাকা লেন দেন ভালো করে লেও পর বড় লটের মাল নিয়ে কাপড় নিয়ে টাকা আর দেয় না,  তাই সাবধানে কাজ করুন।

১১. বাকিতে মাল বেচা যাবে না। কারন মুলধন একবার হারালে আর পাবেন না।

১২. স্টক লট কেনার আগে এর বেচার জন্য পার্টি ও হাতে রাখুন। এতে রিস্ক কপমে যাবে আপনার।

১৩. প্রডাক্ট দেখে কিনুন যেমন যেমন বাংলাদেশ এর লোকাল মার্কেটে চলার মতো লট কিনুন যেমন : ডেনিম, প্যান্ট শার্ট,  পোলো,  টি শার্ট

গার্মেন্টস স্টক লট ব্যবসার সকল আইডিয়া | Garments Stocklot Business A To Z

গার্মেন্টস স্টক লট ব্যবসার সকল আইডিয়া
বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পের উপর নির্ভরশীল। তাই আমাদের জন্য এই গার্মেন্টস স্টক লট ব্যবসা করতে পারলে ভাল লাভ করতে পারেন। কিন্তু কিভাবে করবেন এই গার্মেন্টস স্টক লট ব্যবসা তা অনেকেরেই ধারনা নেই বললেই চলে। আজ আমি আপনাদের ধারনা দিব স্টক লট কি ও কিভাবে কোথায় থেকে কিনে তা বিক্রি করবেন। গার্মেন্টস কাপড়ের ব্যবসা এছাড়া স্টক ব্যবসার আইডিয়া, গার্মেন্টস রিজেক্ট মাল ও স্টক লট থেকে কাপড়ের শোরুম ব্যবসা কিভাবে করবেন। তাহলে চলুন শুরু করা যাক।

স্টকলট কি ?

আমাদের দেশ গার্মেন্টস শিল্পে রপ্তানিকারক দেশ। এই শিল্পে হাজার হাজার পোষাক শ্রমিক কাজ করে দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত করতেছে। রপ্তানি নির্ভর এই বাংলাদেশে কিছু কিছু সময়ে বিভিন্ন কারনে অনেক ফ্যাক্টরিতে শিপম্যান্ট বাতিল হয়ে যায়। আর এসব বাতিল হওয়া সকল পণ্যই হয়ে যায় স্টক। যে কারনে গার্মেন্টস পোষাক বাতিল হয় তার মধ্যে অন্যতম কারন হলো শিপম্যান্ট লেট, শিপমেন্ট ডিলে কন্টিনুয়াস রি-চেক, গার্মেন্ট প্রিন্ট সমস্যা, গার্মেন্টস রিজেক্ট সহ নানা রকম গার্মেন্টসে সমস্যার কারনে বায়ার শিপমেন্ট বাতিল করে দেয়। এছাড়া অনেক বায়ার ইচ্ছাকৃতভাবে গার্মেন্টস কম দামে কেনার জন্যও শিপমেন্ট বাতিল করে দেয়। মোট কথা গার্মেন্টস বাতিল হওয়া কাপড় গুলোই স্টক লট এ পরিনত হয়।

স্টকলট ব্যবসার বাজার সম্ভাবনাঃ

বর্তমানে স্টক লট এর ব্যবসার বাজার সম্ভবনা অনেক বেশি। এখন শুধু বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা স্টক লট ব্যবসার সাথে ঝুকে পড়ছে না। বিশ্বের অনেক দেশে স্টকলটের ব্যবসা করতেছে অনেকেই। তার কারন হল কম দামে একসাথে অনেক পণ্য পায় এবং লাভ করা যায় বেশি করে। তাই বর্তমানে অনেক বাংলাদেশি তরুণ সমাজও স্টক লটের ব্যবসার দিকে ঝুকে পড়তেছে।

কোথায় পাওয়া যায় স্টকলটের কাপড়
বিশেষ করে ঢাকা, গাজীপুর ও নারায়নগঞ্জে স্টক লটের কাপড় বেশি পাওয়া যায়। মোটকথা গার্মেন্টস এলাকাগুলোতে স্টকলটের ব্যবসা করে স্থানীয় অনেক লোক। তাদের মাধ্যমে আপনি খুচরা হিসেবে কিনে ভাল লাভ করতে পারবেন। চলুন দেখে নেই বাংলাদেশের সব থেকে বড় স্টক লট ব্যবসার গুদাম গুলো কোথায় অবস্থিত…..

1. ঢাকার মধ্যে উত্তরা ৬, ৭, ৮ নং সেক্টর।

2. গাজীপুরের কোনাবাড়ীর নতুন বাজারে।

3. সাভারের ব্যাংক টাউন এলাকায়।

4. নারায়নগঞ্জের ফতুল্লায়।

5. ঢাকার মোহাম্মদপুর এলাকায়।

6. গাজীপুর টঙ্গিতে।

7. গাজিপুরের ভালুকায়।

8. মিরপুর শ্যাওরা পাড়ায়।

9. নিউ মার্কেট ও ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয়ের এড়িয়াতে।

10. সাভারের আশুলিয়া অঞ্চলে।

এছাড়া আরও অনেক জায়গায় গার্মেন্টস স্টক লট ব্যবসার সাথে জড়িত অনেক ব্যবসায়ি রয়েছে। আপনি তাদের মাধ্যমে ভাল কিছু গার্মেন্টস পেতে পারেন। আপনি যেখানেই স্টক লট গার্মেন্ট কিনুন না কেন দেখে শুনে ক্রয় করবেন।

স্টক লট কাপড় কত প্রকারঃ

আসলে স্টক লট কাপড়ের রয়েছে বিভিন্নরকম প্রকার। কেউ ব্যবসা করে ডেনিম ও ওভেন গার্মেন্ট নিয়ে, কেউ ব্যবসা করে সুয়েটার নিয়ে আবার কেউ ব্যবসা করে নীট গার্মেন্ট নিয়ে। ডেনিম ও ওভেন গার্মেন্ট হল জিন্স ও গ্যাভার্ডিন প্যান্ট। সুয়েটার হলো ঠান্ডার পোষাক বা সুয়েটার জাতীয় গার্মেন্ট আর নীট হল গেঞ্জী ও টি – শার্ট এর। এগুলো হল গার্মেন্টস কাপড়ের প্রকার। আবার অনেকেই সব নিয়ে স্টক ব্যবসা শুরু করে দিয়েছেন।

কিভাবে কিনবেন স্টক লট গার্মেন্টসঃ

আপনি যদি একদম বড় মাপের করে স্টক লট ব্যবসা করতে চান তাহলে গার্মেন্টস থেকে কিনলে ভাল হবে। এর জন্য আপনাকে অনেক পূঁজি এ স্থানীয় ভোল্ট থাকতে হবে। এছাড়া আপনি যে গার্মেন্ট থেকে স্টক লট মাল নামাবেন তাদের আগে টাকা পেইড করে মাল নামাতে হবে। এমনকি জামানতও দিতে হবে। আর যদি আপনি কম পূঁজি নিয়ে স্টক লট ব্যবসা করতে চান তাহলে যারা গার্মেন্টস থেকে স্টক লট এ মাল নামিয়ে গুদামে রাখে তাদের কাছ থেকে কিনে ব্যবসা করতে পারেন। আর তাদের ঠিকানা পেতে হলে উপরের জায়গাগুলোতে গিয়ে আসতে পারেন। তবে সব সময় কম কম করে আপনার চাহিদা মত স্টক লট কাপড় কিনলে আপনি ভাল করতে পারবেন।

স্টক লট ব্যবসার ঝুকিঃ

স্টক লট ব্যবসা এক ধরনের হাওয়ায় ভাসানো ব্যবসার মত। কপাল ভাল হলে ভাল আর খারাপ হলে পুরোই লস। কারন অনেক সময় স্টক লটের মধ্যে এমনকিছু গার্মেন্টস থাকে যেগুলো রিজেক্ট, ছেঁড়া,ফাটা ও আমাদের এশিয়ান সাইজের থেকে বড় হয়। আপনি যখন গার্মেন্ট কিনবেন তখন যদি এগুলো কোয়ালিটি চেক করে না নিতে পারেন তাহলে আপনার জন্য বড় বিপদ আনবে। তাই আপনাকে স্টক লটের মাল নিতে হলে সব কিছু কোয়ালিটি চেক করে নিবেন। এছাড়া অনেকেই আবার এগুলো নিয়ে আলাদা সুইং মেশিনে কাজ করিয়ে তা রিপেয়ার করে বিক্রি করে।

স্টকলট কিনায় সাবধানতাঃ

আপনি যাদের কাছ থেকে স্টক লট কিনেন না কেন আপনাকে অবশ্যই নিজে দারিয়ে থেকে কিনতে হবে। অনেক সময় ব্যবসায়ীরা আপনাকে ভাল মালের সাথে খারাপ মাল ঢুকিয়ে দিতে পারে। এছাড়া আর একটা মুল সমস্যা হল অনেক ব্যবসায়ি এখন বিদেশের কাপড়ের প্রিন্ট ডিজাইন কপি করে তা নিজেস্ব ফ্যাক্টরিতে তৈরি করে স্টক লট এর মধ্যে রেখে তা অর্জিনাল নামি দামি ব্রান্ড বলে চালিয়ে দেয়। আসলে সেগুলো গার্মেন্ট দেখতে চক চক করে। আপনি যদি দেখেন এমন গার্মেন্টস বস্তার মধ্যে রয়েছে তাহলে বুঝে নিবেন এখানে কিছু ঘাপলা আছে। স্টক লট মানেই স্টক লট এখানে ৪০% থেকে ৬০% সমস্যা পাবেন। তাহলে বুঝবেন এগুলো অর্জিনাল স্টক লট। ভাল মাল কখনও স্টক হয় না এটা অবশ্যই মাথায় রাখবেন। এর সাথে আরও একটি বিষয় দেখবেন আপনি আমাদের দেশের কালচার অনুযায়ী স্টক লটের মাল কিনুন। আবার এমন কিছু মাল স্টক লটে পাওয়া যায় যাহা বাংলাদেশের মার্কেটের সাথে চলে না ও কালচারের সাথে যায় না যেমন লিঞ্জারি, বিকিনি, সুইম সুট, সেক্সি সর্টস এমন প্রডাক্ট গুলি না কেনাই ভালো। আপনি সব সময় বাংলাদেশের লোকাল মার্কেটে চলার মতো লট কিনুন যেমন: ডেনিম, প্যান্ট শার্ট, পোলো শার্ট, টি শার্ট।

স্টক লটের ধারনাঃ

প্রথমে আপনি স্টক লটের ধারণা নিয়ে, জেনে ও বুঝে তারপর ছোট গার্মেন্ট বা গোডাউন থেকে স্টক কিনে লোকাল মার্কেটে বিক্রি শুরু করুন। ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বাড়াতে পারবেন। গার্মেন্ট স্টক লট ব্যবসা শুরুর আগে যারা পুরাতন তাদের সাথে থেকে কিছু দিন ব্যবসা শিখতে হবে হুট করে কিছুই করা ঠিক নয়। এছাড়া ফেব্রিকস চিনুন, সুতা চিনুন, কাপরের নাম ও ধরন চিনুন এবং প্রিন্ট সমন্ধেও ধারনা নিয়ে মাঠে নামুন। আবার রিজেক্ট গার্মেন্টস কিনে তা কিভাবে আবার নতুন সুইং করে রিপেয়ার করতে হয় সেই কৌশলগুলোও ভাল করে জেনে নিন।

স্টক লটের স্থানঃ

আপনি যদি পাইকরি স্টকলট ব্যবসা করতে চান তাহলে ভাল একটি নির্ধারিত স্থান দেখুন। যেখানে আপনার ক্লাইন্ডরা আসা যাওয়া করতে পারবে । এছাড়া আপনি সব জায়গায় সঠিক সময়ে গার্মেন্টস পৌছে দিতে পারবেন। এছাড়া আপনি এই ব্যবসা বাড়ি থেকেই করতে পারবে। এর জন্য তেমন কিছু লাগবে না। আপনি একটি অফিস ও দুটি টেবিল আর চেয়ার নিয়ে বসতে পারেন। তাছাড়া একটা পিসি রাখুন এ প্রয়োজনীয় স্যামপোল ও কাগজপত্র রাখুন।

স্টক লট এর ব্যবসার পূঁজিঃ

আপনি যদি সরাসরি গার্মেন্টস থেকে স্টক লট এর গার্মেন্টস নামাতে চান তাহলে ২০ থেকে ৭০ লক্ষ টাকা নিয়ে মাঠে নামতে হবে। আর যদি কোন গোডাউন থেকে সরাসরি নামাতে চান তাহলে ১ থেকে ৫ লক্ষ টাকার মধ্যেই এই ব্যবসা করতে পারেন। সব থেকে ভাল হয় আপনি আপাতত গোডাউন থেকে কিনতে থাকুন এর ফাঁকে ফাঁকে গার্মেন্টস থেকে কিভাবে স্টক লট মাল নামাতে হয় তার কৌশলগুলোও জেনে নিয়ে নামতে পারেন।

স্টক লট এর লাভ কেমন ও হিসাবঃ

স্টক লটের লাভ খুব বেশি না আবার খুব বেশি। এটা নির্ভর করে কাপড়ের মানের উপর ও চাহিদার উপর। এছাড়া নির্ভর করে আপনি কি হোলসেল বিক্রি করবেন নাকি শো-রুমে বিক্রি করবেন। তবে আমরা এখানে হিসেব করব হোলসেল নিয়ে- ধরুন আপনি ১ হাজার পিছ টি শার্ট ক্রয় করেছেন ৭০ টাকা করে। সব খরচ বাদ দিয়ে আপনার ৮০ টাকা পড়ল। তাহলে ৮০×১০০০= ৮০০০/- টাকা। এবার আপনি যদি ১ হাজার টি-শার্ট বিক্রি করেন ১১০/- টাকা করে তাহলে ১১০×১০০০/- ১২০০০/- টাকা। তাহলে আপনার ১ হাজার টি-শার্টের মধ্যে লাভ হল ৪ হাজার টাকা। এটা মনে রাখবেন এখানে মূখিকভাবে আপনাদের জন্য ক্যালকুলেশন করে দিয়েছি মাত্র, এর থেকে আপনার লাভ বেশিও হতে পারে আবার কম হতে পারে। এছাড়া লসও করতে পারেন। তবে সব ঠিক থাকলে আপনার ভাল লাভ হবে।

কিভাবে বিক্রি করবেনঃ

আপনি স্টক লট কিনে ৪ ধরনে বিক্রি করতে পারবেন। আপনি যদি একদম পাইকারি গার্মেন্ট বিক্রি করতে চান তাহলে আপনি আপনার গুদাম থেকে পাইকারি দামে বিক্রি করুন। আবার যদি আপনি শো-রুমে পাইকারি বিক্রি করতে চান তাহলে আপনি শো-রুমে মার্কেটিং করে বিক্রি করতে পারেন। আপনি ঢাকা সহ সারাদেশের বড় বড় মার্কেট এর কাপড়ের দোকানগুলোতে ভাল বিক্রি করতে পারবেন যদি আপনার কাপড়ের গুনগত মান ভাল থাকে। এছাড়া আপনি আপনার নিজের শো-রুমে তা বিক্রি করতে পারেন। ইদানিং ফুটপাতের মধ্যে এই স্টক লটের ব্যবসা মোট জমজমাট হচ্ছে। একটি ভ্যানের মধ্যে করে অনেকেই এই ব্যবসা করে যাচ্ছে ভালই। তাই আপনার যদি পূঁজি একদম কম থাকে তাহলে ভ্যানের মধ্যেই এই ব্যবসা করতে পারেন অনায়োসে। এভাবে বিক্রি করে আপনি ভালো আয় করতে থাকুন।

স্টক পন্য কেনা বেচায়  কি কি সতর্কতা অবলম্বন করেবেন 


আপনাদের স্টক পন্য কেনা বেচার ক্ষত্রে কিছু বিষয় লক্ষ রাখতে হবে :

১. মালামাল এর পেমেন্ট এর ক্ষত্রে Bank LC  মাধ্যমে করুন।

২. বায়ার পেয়ে আবেগী হওয়া যাবে না,  ভালো করে তার ব্যাকগ্রাউন্ড জেনে নিন। কোথা থেকে নেয়,  কি পরিমান নেয়,  কাদের সাথে লেনদেন করে তাদের খোজ খবর নিন।

৩. অনেকেই প্রডাকশন এর নাম করে স্যাম্পল করিয়ে বিদায় নেয়,  এদের কাছ থেকে দুরে থাকুন।

৪. যেহেতু টাকা পয়সার বিষয় আছে তাই প্রাইজ এর ব্যাপারে Straight Forward হওয়া ভালো।

৫. মেক্সিমাম লট রিজেক্টশন এর কারন হলো লিড টাইম বা টাইমলি দিতে না পারা,  এর সাথে অনেক সময় ডাইং এবং গার্মেন্টস ফল্টস থাকতে পারে তাই নেয়ার আগে দেখে নিতে হবে কারন।

৬. প্রাইস ফেক্ট হলো হতাস হোয়া যাবে না। 
থিউরি হলো যা কিনার সময়  লাভ হয় না তা বেচার সময় ও লাভ হয় না

৭. এই ব্যাবসার মুল বিষয় হলো প্রোডাক্ট প্রাইজ  তাই ব্যাবসা করার আগে প্রাইস আর কোয়ালিটি নিয়ে ভাবুন।

৮. লটের রিজেক্টশন এর কারন জেনে নিন কি কারনে লট হলো জেনে নিন।

৯. বড় ভলিউম এর লট কেনার পর জন্য সাথে হায়ার করা এক্সপার্ট রাখতে পারেন,  এতে আপনার রিক্স মিনিমাইজ হবে।

১০. কিছু কিছু  বায়ার প্রথমে টাকা লেন দেন ভালো করে লেও পর বড় লটের মাল নিয়ে কাপড় নিয়ে টাকা আর দেয় না,  তাই সাবধানে কাজ করুন।

১১. বাকিতে মাল বেচা যাবে না। কারন মুলধন একবার হারালে আর পাবেন না।

১২. স্টক লট কেনার আগে এর বেচার জন্য পার্টি ও হাতে রাখুন। এতে রিস্ক কপমে যাবে আপনার।

১৩. প্রডাক্ট দেখে কিনুন যেমন যেমন বাংলাদেশ এর লোকাল মার্কেটে চলার মতো লট কিনুন যেমন : ডেনিম, প্যান্ট শার্ট,  পোলো,  টি শার্ট

1 টি মন্তব্য:

নামহীন বলেছেন...

thank you....so much