শান্তা গ্রুপ
শান্তা গ্রুপের ইতিহাস ও কার্যক্রম জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে ৯০ দশকে। ১৯৮৭ সালে দেশের পোশাক খাতের উন্নয়নে ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড শুরু করে গ্রুপটি। অল্প সময়ের মধ্যে তৈরি পোশাক খাতে সুনাম অর্জন করে শান্তা গ্রুপ । তাদের তৈরি পণ্যের সুনাম দেশের গণ্ডি ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়ে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি দেশের নামকরা ব্র্যান্ডের পোশাক তৈরি শুরু করে তারা। তাদের নামকরা ব্র্যান্ডের মধ্যে রয়েছে টমি হিলফিগার, অ্যাসসেন্ড, এস অলিভার, রেমন্ড, ম্যাকগ্রেগর, পার্ক্স প্রভৃতি।
শান্তা গ্রুপের অ্যাপারেল ডিভিশনে রয়েছে শান্তা গার্মেন্ট লিমিটেড, শান্তা ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, শান্তা ওয়াশ ওয়ার্কস লিমিটেড, শিংগন ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড ও শান্তা ডেনিমস লিমিটেড। গ্রুপটির অ্যাপারেল ডিভিশনে কর্মরত জনশক্তির ৭৪ শতাংশই নারী। অ্যাপারেল ডিভিশনে তিন হাজার লোকবল রয়েছে। প্রতি মাসে তিন দশমিক ৭৫ মিলিয়ন পোশাক প্রস্তুত করে এ ডিভিশন। ১৯৯১ সাল থেকে নির্মাণ খাতে বিনিয়োগ করে আসছে শান্তা গ্রুপ ।
শান্তা গ্রুপ প্রসঙ্গে চলে এসটিএস গ্রুপের নাম। শান্তা গ্রুপ, ট্রপিকা গ্রুপ ও সেপাল গ্রæপ মিলে ১৯৯৭ সালে তৈরি করে এসটিএস গ্রুপ । শান্তা গ্রুপের ‘এস’, ট্রপিকা গ্রুপের ‘টি’ ও সেপাল গ্রুপের ‘স’ নিয়ে এ গ্রুপটির নাম রাখা হয়। এসটিএস গ্রুপের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য আলোচ্য শান্তা গ্রুপ। এ গ্রুপের মাধ্যমে এ্যাপোলো হসপিটালস-ঢাকা, ইন্টারন্যাশনাল স্কুল-ঢাকা (আইএসডি) ও দিল্লি পাবলিক স্কুল-ঢাকা প্রতিষ্ঠায় বিনিয়োগ করে শান্তা গ্রুপ। উল্লিখিত প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য দিয়ে শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতে প্রবেশ করে গ্রুপটি। ১৯৯৯ সালে আইএসডি প্রতিষ্ঠা করে তারা। এটি দেশের একমাত্র ইন্টারন্যাশনাল ব্যাচেলরেট (আইবি) শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এটি কাউন্সিল অব ইন্টারন্যাশনাল স্কুলস (সিআইএস) অনুমোদিত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। ২০০৫ সালে বিনিয়োগ করে এ্যাপোলো হসপিটালসে। জয়েন্ট কমিশন ইন্টারন্যাশনাল (জেসিআই) স্বীকৃত দেশের একমাত্র হাসপাতাল এটি। বাংলাদেশের জনসাধারণকে আন্তর্জাতিক মানের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করাই ৪৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটির লক্ষ্য। একই বছর শান্তা হোল্ডিংস লিমিটেড (এসএইচএল) প্রতিষ্ঠা করে শান্তা গ্রুপ। গ্রুপটিতে আরও সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে রয়েছে জিডিএস কেমিক্যাল, রয়েল পার্ক হোটেল ও গ্রিন ফিল্ড টি এস্টেট লিমিটেড।
১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় জিডিএস গ্রুপ। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, চীন, তুরস্ক প্রভৃতি দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানের জন্য পণ্য তৈরি করে গ্রুপটি। বাংলাদেশের একটি নামকরা হোটেলের তকমা পেয়েছে শান্তা গ্রুপের সহযোগী রয়েল পার্ক হোটেল। আগতদের সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে থাকে হোটেলটি। বিশ্বমানের সেবা দিয়ে আসছে এ হোটেল। এখানে অন্যান্য সেবার পাশাপাশি রয়েছে উন্নত মানের হোটেল বিজনেস সেন্টার, সুইমিংপুল, উন্নত মানের জিম, পরিবহন সুবিধা প্রভৃতি। বাংলাদেশের আর্থসামাজিক পরিস্থিতি বিবেচনায় চা-শিল্পে বিনিয়োগ করেছে শান্তা গ্রুপ।
শান্তা গ্রুপের সর্বশেষ উদ্যোগ শান্তা সিকিউরিটিজ লিমিটেড (এসএসএল)। ২০১৫ সালে যাত্রা করে প্রতিষ্ঠানটি। খুব অল্প সময়ের মধ্যে দেশের শীর্ষস্থানীয় সিকিউরিটিজ হাউজে পরিণত হয় এটি। আর্থিক খাতের এ প্রতিষ্ঠান সততার সঙ্গে কাজ করে চলেছে। শেয়ারবাজারে ভালো ব্রোকারেজ হাউজের চাহিদা রয়েছে। কেননা বিনিয়োগের জন্য শেয়ারবাজারে সুনাম রয়েছে এমন হাউজ খোঁজেন বিনিয়োগকারীরা।
এমনই একটি ব্রোকারেজ হাউজ এসএসএল। গ্রাহকসেবায় তারা অনন্য। অতি অল্প সময়ে তাদের সেবার মান গ্রাহককে আকৃষ্ট করেছে। গ্রাহকের বিনিয়োগে নানা ধরনের পরামর্শ দিয়ে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। বিশেষ করে ফান্ডামেন্টাল, টেকনিক্যাল ও সাইকোলজিক্যাল অ্যানালাইসিসের মাধ্যমে তারা বিনিয়োগকারীদের সচেতন করে তুলছে। গ্রাহকের বিনিয়োগের পথ উন্মুক্ত করে দিয়েছে। প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে প্রতিষ্ঠানটি। গ্রাহকরা যেন সুবিধাজনক অবস্থানে থেকে ট্রেড করতে পারেন, সে ব্যবস্থা চালু রয়েছে এখানে। তাদের আইপিও সিস্টেম অত্যন্ত গ্রাহকবান্ধব। কমিশন রেটও অন্যদের তুলনায় ভালো। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকেই গ্রাহককে চিন্তামুক্ত রাখতে সক্ষম হয়েছে এসএসএল। সঙ্গত কারণে গ্রাহক ও প্রতিযোগী প্রতিষ্ঠানের কাছে আইকন হয়ে উঠেছে প্রতিষ্ঠানটি। পরিণত হয়েছে দেশের আলোচিত ব্র্যান্ডে। গ্রাহকের কাছে বিশ্বস্ত ও নির্ভরতার প্রতীক এসএসএল। এ বছরের মার্চে দেশের শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজগুলোর তালিকা প্রকাশ করে ঢাকা স্টক একচেঞ্জ (ডিএসই)। এ তালিকায় ১৪তম অবস্থানে রয়েছে শান্তা সিকিউরিটিজ লিমিটেড। এ সাফল্য ধরে রাখার ব্যাপারে ভীষণ আন্তরিক তারা। আগামী বছরের মধ্যে শীর্ষ ১০-এ উঠে আসার ইচ্ছা রয়েছে তাদের। ভবিষ্যতে শীর্ষস্থানটি ধরে রাখতে চায় শান্তা সিকিউরিটিজ লিমিটেড। প্রতিষ্ঠানটিতে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন খন্দকার মনির উদ্দিন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগ থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। শান্তা গ্রুপের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি।
সব কর্মীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করে থাকে শান্তা গ্রুপ। গ্রুপটির প্রায় সব প্রতিষ্ঠানে রয়েছে ডে-কেয়ার ফ্যাসিলিটি। কর্মীদের দক্ষ করে গড়ে তুলতে প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয় তারা। উন্নত ও স্বাস্থ্যকর কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করেছে শান্তা গ্রুপ।
শান্তা গ্রুপে চেয়্যারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন খন্দকার জামিল উদ্দিন।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন