বন্ড ব্যবস্থাপনা নিয়ে কিছু প্রশ্ন ও উত্তরঃ
পড়ে দেখুন ভালো লাগতে পারে। এমন প্রশ্ন ও উত্তর আগে কোন বইতে দেখেছেন কি? মন্তব্য করবেন।
১) প্রশ্নঃ বন্ডেড ওয়্যারহাউজ কি? কত প্রকার? কাস্টমস আইনের কোন ধারায় ওয়্যারহাউজর প্রকারভেদ সম্পর্কে উল্লেখ করা হয়েছে?
উত্তরঃ কাস্টমস এক্ট ১৯৬৯ এর ধারা ১২ ও ১৩ অনুযায়ী লাইসেন্স প্রাপ্ত কোন সুরক্ষিত স্থান বা ওয়্যারহাউজই যেখানে শুল্কযুক্ত পন্য শুল্কমুক্ত ভাবে পরবর্তীতে রপ্তানি ও দেশীয় ভোগের জন্য রক্ষিত হয় এমন স্থানই বন্ডেড ওয়্যারহাউজ।
বন্ডেড ওয়্যারহাউজ প্রথমত দু প্রকার;
(ক) পাবলিক বন্ডেড ওয়্যারহাউজ
(২) প্রাইভেট বন্ডেড ওয়্যারহাউজ
কাস্টমস এক্ট ১৯৬৯ এর ধারা ১২ অনুযায়ী পাবলিক বা সরকারি বন্ডেড ওয়্যারহাউজ লাইসেন্স প্রদানের কথা উল্লেখ আছে। একি ভাবে ধারা ১৩ প্রাইভেট বা বেসরকারি বন্ডেড ওয়্যারহাউজ লাইসেন্স প্রদানের কথা উল্লেখ আছে।
(২) প্রশ্নঃ বন্ডিং মেয়াদ বলতে কি বুঝায়? আইনের কোন ধারায় কোন শিল্পের জন্য কতদিনের বন্ডিং মেয়াদ প্রদান করা হয়েছে?
উত্তরঃ কাস্টমস এক্ট ১৯৬৯ এর ধারা ৯৮ অনুযায়ী বন্ডিংকৃত পন্য যে নিদিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বন্ডে রক্ষিত থাকে সেটাই হলো পন্যের বন্ডিং মেয়াদ।
ধারা ৯৮ অনুযায়ী
(১) রপ্তানীমুখী জাহাজ শিল্পের পন্যের বন্ডিং মেয়াদ ৪৮ মাস।
(২) রপ্তানীমুখী অন্যান্য শিল্পের পন্যের বন্ডিং মেয়াদ ২৪ মাস।
(৩) ডিপ্লোমেটিক ওয়্যারহাউজ রক্ষিত পন্যের বন্ডিং মেয়াদ ১২ মাস।
(৪) অন্যান্য ক্ষেত্রে পন্যের বন্ডিং মেয়াদ ৬ মাস।(এটি মূলত হোম কনজামশন বন্ড)
(৩) প্রশ্নঃ বন্ডেড ওয়্যারহাউজ লাইসেন্সিং বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে লাইসেন্স প্রদান করা যায়?
উত্তরঃ
বন্ডেড ওয়্যারহাউজ লাইসেন্সিং বিধিমালা ২০০৮ অনুযায়ী বন্ড লাইসেন্স পাবেন ;
(১) সরাসরি রপ্তানীমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান;
(২) প্রচ্ছন্ন রপ্তানীমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠান;
(৩) ডিপ্লোমেটিক, ডিউটি ফ্রি,ডিউটি পেইড শিল্প প্রতিষ্ঠান;
(৪) সরকারি বেসরকারি ইপিজেড এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠান;
(৫) বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠান;
(৬) হাইটেক পার্ক এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠান;
(৪) প্রশ্নঃ জেনারেল বন্ড কি? কোন প্রকৃতির প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে জেনারেল বন্ড মেয়াদ কতদিন?
উত্তরঃ শুল্কযুক্ত পন্য শুল্কবিহীন ভাবে বন্ডে প্রবেশের পূর্বে কাস্টমস এক্ট ১৯৬৯ এর ধারা ৮৬ অনুযায়ী ২০০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে বন্ডার যে অংগীকার সম্বলিত যে বন্ড দেন তাহাই জেনারেল বন্ড। এটিতে বন্ডার ও লিয়েন ব্যংক উভয়ের স্বাক্ষর থাকে।
(১) সরাসরি রপ্তানীমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ৩(তিন) কোটি টাকার জেনারেল বন্ড তিন বছরের জন্য দাখিল করতে হয়।
(২) রপ্তানীমুখী প্রচ্ছন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ১(এক) কোটি টাকার জেনারেল বন্ড এক বছরের জন্য দাখিল করতে হয়।
(৩) প্রচ্ছন্ন ও সরাসরি যুগপৎ রপ্তানীমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে ২(দুই) কোটি টাকার জেনারেল বন্ড দুই বছরের জন্য দাখিল করতে হয়।
(৫) প্রশ্নঃ HS Code? HS Code সংযোজনের পদ্ধতি কি?
উত্তরঃ আন্তর্জাতিক ভাবে পন্য নিদিষ্টকরনের জন্য নির্ধারিত স্বীকৃত ইউনিক কোডই হলো HS Code, এ কোডের মাধ্যমে পৃথিবীর সকল দেশের লোকজন বুঝতে পারে ঘোষিত পন্য আসলে কি? ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অরগনাইজেশান ব্রাসেলস থেকে এটি প্রতি বছর আপডেট করা হয়।
কোন বন্ড প্রতিষ্ঠান তার লাইসেন্স নতুন কাচামাল (HS Code) সংযোজন করতে চাইলে তাকে তার প্রতিষ্ঠানের প্যাডে বন্ড কমিশনারেটের সংশ্লিষ্ট বিভাগীয় কর্মকর্তার বরাবরে আবেদন করতে হয়। একি সাথে আবেদনে কাচামাল কেন প্রয়োজন তা ব্যাখ্যা করতে হয়। একি সাথে সংশ্লিষ্ট সমিতির সুপারিশ থাকলে ভালো হয়।
আবেদন দাখিলের পর কাচামালের ব্যবহার বিষয় সংশ্লিষ্ট বন্ড অফিসার ও রাজস্ব কর্মকর্তা সরেজমিনে যাচাই পূর্বক সুপারিশ করা হলে অতপর সুপারিশ কমিশনার মহোদয় কর্তৃক অনুমোদন হলেই ঐ কাচামাল ও কাচামালের এইচ,এস,কোড বন্ড লাইসেন্সে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
(৬) প্রশ্নঃ বার্ষিক আমদানি প্রাপ্যতা কি? বার্ষিক আমদানি প্রাপ্যতা কি পদ্ধতিতে প্রদান করা হয়?
উত্তরঃ জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আদেশ নং ১৪/২০০৮ অনুযায়ী বন্ড লাইসেন্স প্রাপ্ত প্রচ্ছন্ন রপ্তানীমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানকে তার মেশিনের ক্ষমতা অনুযায়ী বার্ষিক পন্য উৎপাদনের নিমিত্তে কাচামাল আমদানির যে হিস্যা দেওয়া হয় সেটি হলো বার্ষিক আমদানি প্রাপ্যতা।
এটি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানে সরেজমিনে উপস্থিত হয়ে মেশিন স্বাভাবিক ভাবে চালিয়ে উৎপাদন পর্যবেক্ষন করতে হয়। অতপর নিম্নোক্ত ভাবে প্রয়োগ করতে হয়;
বার্ষিক উৎপাদন ক্ষমতা = বার্ষিক ৩০০ দিন X প্রতিদিন ২০ ঘন্টা X প্রতি ঘন্টা উৎপাদন।
নতুন লাইসেন্স প্রদান কালে প্রথম বছর মোট উৎপাদনের ৩০% আমদানি প্রাপ্যতা দেয়া হয়।
পুরনো লাইসেন্সের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পূর্ববতী বছরের মোট রপ্তানির সাথে ২০% যোগ করে বার্ষিক আমদানি প্রাপ্যতা দেয়া হয়।
(৭) প্রশ্নঃ বার্ষিক অডিটের জন্য দাখিলযোগ্য দলিলাদি কি কি?
উত্তরঃ
বার্ষিক অডিটের জন্য দাখিলি দলিলাদি নিম্নরুপঃ
(১) নির্ধারিত ছকে আমদানি রপ্তানি বিবরন যা লিয়েন ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যায়িত।
(২) বাংলাদেশ ব্যংক থেকে নিরধারিত ছকে অডিট মেয়াদের পি,আর,সি যা লিয়েন ব্যাংক কর্তৃক প্রত্যায়িত।
(৩) পাস বই তথ্য।
(৪) অডিট মেয়াদের এলসি, বি/ই, ইনভয়েস, বি এল।
(৫) অডিট মেয়াদের এলসি, বিল অব এক্সপোর্ট, ইনভয়েস, বি এল, ইজিএম, রপ্তানি আদেশ, ইউডি আদেশ সমূহের মুল কপি।
(৬) বিজিএমইএ / বিকেএমইএ কর্তৃক ইউডি স্টেটমেন্ট।
(৭) বন্ড ট্রান্সফার বিবরণ (যদি থাকে)
(৮) প্রশ্নঃ বন্ড রেজিস্ট্রার কি? কয়টি? এতে কি তথ্য লিপিবদ্ধ থাকে?
উত্তরঃ কাস্টমস এক্ট ১৯৬৯ এর ধারা ১১৪ অনুযায়ী প্রতিটি বন্ড প্রতিষ্ঠান তার বন্ডে কি কি পন্য আছে তার বিবরণ সম্বলিত রেজিস্ট্রারই হলো বন্ড রেজিস্ট্রার।
রেজিস্ট্রার ২ টি থাকে একটি মুল কপি যা বন্ড কমিশনারেটে থাকবে। ২য় কপি বন্ডারের কাছে থাকবে।
প্রতিটি রেজিস্টারে প্রথমে বাম দিকে বি/ই নং আমদানি পন্যের কমারশিয়াল ডেস্ক্রিপশন, পরিমাণ, ভ্যালু, ইত্যাদি উল্লেখ থাকতে হয়। অতপর ইউপি নিয়ে উৎপাদিত পন্য রপ্তানি সময় রপ্তানীর সমস্ত বিবরণ ডান দিকে থাকতে হয়।
(৯) কন্টিনিউয়াস বন্ড কি? কোন কোন প্রতিষ্ঠানকে কন্টিনিউয়াস বন্ড লাইসেন্স প্রদান করা হয়?
উত্তরঃ রপ্তানিমূখী বন্ডেড শিল্প প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম গতিশীল করার জন্য একই মালিকানাধীন একই প্রতিষ্ঠানের আওতায় একাধিক স্থানে প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন স্তরের উৎপাদন ইউনিটের কার্যক্রমকে মুল বন্ডের প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ করার অনুমতি হলো Continuation / Continues Bond.
কন্টিনিউয়াস বন্ড লাইসেন্স পাবেন ;
(ক) নীট
(খ) ওভেন
(গ) ডায়িং ও প্রিন্টিং
(ঘ) টাওয়েল
(ঙ) লিলেন
(চ) হোম টেক্সটাইল
(১০) প্রশ্নঃ লিয়েন ব্যাংক কি? লিয়েন ব্যাংক সংযোজন ও বিয়োজন পদ্ধতি কি? একটি প্রতিষ্ঠানের কয়টি লিয়েন ব্যাংক তালিকাভুক্ত করতে পারে?
উত্তরঃ বন্ড প্রতিষ্ঠান লাইসেন্সে অন্তর্ভুক্ত যে ব্যংকের মাধ্যমে তার ব্যবসা বানিজ্য পরিচালনা করে সেটি হলো লিয়েন।
লিয়েন ব্যাংক সংযোজনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ব্যংকের CIB credit information bereau রিপোর্ট ও পূর্বের লিয়েন ব্যংকের অনাপত্তিপত্র সহ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্যাডে আবেদন করতে হবে।
লিয়েন ব্যংকের পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বিদ্যমান লিয়েন ব্যংকের অনাপত্তিপত্র সহ প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব প্যাডে আবেদন করতে হবে।
লিয়েন ব্যংকের শাখা পরিবর্তনের ক্ষেত্রে শাখার নাম উল্লেখ পূর্বক নিজস্ব প্যাডে আবেদন করতে হবে।
একটি বন্ড প্রতিষ্ঠান সরবোচ্চ তিনটি লিয়েন ব্যাংক তালিকাভুক্ত করতে পারবে।
(১১) প্রশ্নঃ সরকারি বকেয়া আদায়ের ধাপ গুলো কি কি?
উত্তরঃ কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের নিকট সরকারি পাওনা আদায়ে কাস্টমস এক্ট ১৯৬৯ এর ধারা ২০২ অনুযায়ী ধাপ গুলো মোটামুটি নিম্নরুপঃ-
(১) পাওনা প্রতিষ্ঠানকে দাবীনামা জারী করতে হবে;
(২) উক্ত প্রতিষ্ঠানের কোন অর্থ কোন ব্যংক হিসাবে থাকলে তা থেকে কর্তন করার জন্য ওই ব্যংকে পত্র দিয়ে তা কর্তন করাতে হবে। প্রতিষ্ঠানের ব্যংক একাউন্ট ফ্রিজ করতে হবে।
(৩) উক্ত প্রতিষ্ঠানের অন্য কোন পন্য কোন কাস্টমস স্টেশনে থাকলে তা আটক করে সরকারি পাওনা আদায়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
(৪) উক্ত প্রতিষ্ঠান যেন কোন আমদানি রপ্তানি করতে না পারে সেজন্য প্রতিষ্ঠানের BIN LOCK করে দিতে হবে।
(৫) উক্ত প্রতিষ্ঠানের কোন সহযোগী প্রতিষ্ঠান থাকলে তা তালাবদ্ধ করে কায্যক্রম বন্ধ রাখা বা তথায় রক্ষিত মালামাল আটক করে বিক্রয়ের ব্যবস্থা করে সরকারি পাওনা আদায় করতে হবে।
(৬) উক্ত সকল প্রক্রিয়া অনুসরণ করেও যদি সরকারি পাওনা আদায় করা না যায়। উক্ত ব্যক্তি যে স্থানে বাসস্থান সে স্থানের স্থাবর সম্পত্তি নিলাম করে পাওনা আদায়ের জন্য সার্টিফিকেট মামলা দাখিল করা।
ibrahim hossain Revenue officer Bangladesh customs training Academy Chattogram
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন